Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ২ জন
আজকের পাঠক ৩৬ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩২৬৪৩৭ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৪০৫০ বার
+ - R Print

সূরা কাফেরুণ


সূরা কাফেরুণ বা ঈমান প্রত্যাখানকারী - ১০৯

৬ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এটি আর একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা। যারা আল্লাহকে প্রত্যাখান করে তাদের প্রতি কিরূপ ব্যবহার করা হবে তারই আদেশ এই সূরাতে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কথা ঠিক যে, আল্লাহ্‌র সত্যকে গ্রহণের ব্যাপারে কোনও সমঝোতা নাই, তবে কারও বিশ্বাস প্রত্যাখানের জন্য বা কুফরীর জন্য তার প্রতি নির্যাতন বা অত্যাচার করার প্রয়োজন নাই।


সূরা কাফেরুণ বা ঈমান প্রত্যাখানকারী - ১০৯

৬ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

১। বল; হে ঈমান প্রত্যাখানকারী। ৬২৮৯

৬২৮৯। এই সূরার পটভূমি হচ্ছে কিছু কাফের রাসুলুল্লাহ্‌র (সা ) নিকট একটি আপোষ প্রস্তাব উত্থাপন করে যে, " আমরা আপনার মাবুদের এবাদত করি এবং আপনি আমাদের দেবতার এবাদত করুণ পর্যায়ক্রমে। এই ভাবে একটি মিশ্রিত দ্বীন কায়েম হোক।" তারই জবাবে এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়।

কাফের ও বিশ্বাসীদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে ঈমান বা বিশ্বাস। কাফেরদের আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস বা ঈমান নাই; বিশ্বাসীরা আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাসী। বিশ্বাস হচ্ছে হৃদয়ের একধরণের দৃঢ় প্রত্যয় যা পার্থিব সম্পদ প্রভাব প্রতিপত্তি বা জাগতিক কোনও কিছুর উপরেই নির্ভরশীল নয়। সুতারাং এবাদত হতে হবে প্রকৃত পবিত্র এবং বিশ্বস্ত হৃদয়ের প্রকাশ। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায় এবাদতের ধ্যান ধারণার সাথে পার্থিব লাভ লোকসান, পূর্বপূরুষদের রীতিনীতি, সামাজিক চলিত রীতি অথবা অনুকরণ করার স্বাভাবিক প্রবণতা,অথবা প্রকৃত বিশ্বাস বা ঈমানের জন্য পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকার প্রবণতা বা অলসতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধারণা জড়িত থাকে। ফলে মানুষ প্রকৃত এবাদতের পরিবর্তে পাপ, স্বার্থপরতা অথবা তুচ্ছ জিনিষের এবাদতে লিপ্ত হয়। সেক্ষেত্রে পূঁজার জন্য যে মূর্তিকে উপস্থাপন করা হয়, সে মূর্তি হচ্ছে সুবিধাবাদী যাজক সম্প্রদায়ের সৃষ্টি, যার দ্বারা তাদের স্বার্থ, সুযোগ, সুবিধা, উচ্চাশা, লোভ লালসা, অথবা ব্যক্তিগত কামনা বাসনার চরিতার্থ হতে পারে। মানুষের এই ব্যক্তিস্বার্থের প্রতিবাদে ইসলাম জেহাদ ঘোষণা করে এবং এক আল্লাহ্‌র এবাদতের জন্য দৃঢ়তা প্রকাশ করে। রাসুল (সা) এক আল্লাহ্‌র এবাদত প্রতিষ্ঠার জন্য ছিলেন অনমনীয় ; এবং তিনি দৃঢ়তার সাথে জাগতিক লাভের সকল উদ্দেশ্য অস্বীকার করেন এবং আল্লাহ্‌র একত্বের বাণীর প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

২। তোমরা যার উপাসনা কর, আমি তার উপাসনা করি না,

৩। আমি যার এবাদত করি, তোমরা তাঁর এবাদত কর না। ৬২৯০

৬২৯০। [ ২ - ৩ ] নং আয়াত দ্বারা সূরাটির অবতরণ কালের চিত্র আঁকা হয়েছে যা নিম্নোক্ত ভাবে বর্ণনা করা যায়, " আমি তোমাদের ও আমার সকলের প্রভু এক আল্লাহ্‌র এবাদত করি। কিন্তু তোমরা তোমাদের কায়েমী স্বার্থের জন্য মিথ্যা উপাস্যের উপাসনা ত্যাগ করবে না।" কিন্তু [ ৪ - ৫ ] নং আয়াতে মনঃস্তাত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে যা নিম্নোক্ত ভাবে বর্ণনা করা যায়; " যেহেতু আমি আল্লাহ্‌র রাসুল,সেহেতু আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের মিথ্যার অনুসরণ করতে পারি না - যা সর্বৈব পাপ। তোমাদের অবস্থান হচ্ছে, যেহেতু তোমরা এ সব মূর্তির তত্বাবধায়ক, তোমরা এ সবের দ্বারা সুযোগ সুবিধা ভোগ কর, সুতারাং তোমরা এসব মিথ্যা উপাসনা ত্যাগের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা প্রকাশ করবে না - যা অন্যায় ও পাপ।" ৪নং আয়াতে " তোমরা করে আসছো " বাক্যটি দ্বারা মনের ইচ্ছা বা সংকল্পকেই বুঝানো হয়েছে, যে রীতি নীতিতে তারা অভ্যস্ত, যা তাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

৪। আর তোমরা যার পূঁজা করে আসছো, আমি কখনও তার পূঁজা করবো না।

৫। তোমরাও তাঁর এবাদতকারী হবে না যার এবাদত আমি করি।

৬। তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আমার দ্বীন আমার ৬২৯১।

৬২৯১। সূরাটির প্রথমে শুরু করা হয়েছে, "বল" শব্দটি দ্বারা যার দ্বারা রাসুলকে (সা) সম্বোধন করা হয়েছে। রাসুলকে বলতে বলা হয়েছে, " আমাকে সত্য দান করা হয়েছে, আমি কখনও মিথ্যার উপাসনা করতে পারি না। তোমরা তোমাদের কায়েমী স্বার্থ রক্ষার জন্য মিথ্যার উপাসনা ত্যাগ করবে না। এ ক্ষেত্রে তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের। আমি তোমাদের সত্য পথ প্রদর্শন করেছি। আমার দায়িত্ব আমার। তোমাদের কোনও অধিকার নাই আমাকে সত্য ত্যাগ করার অনুরোধ করার। তোমাদের অত্যাচার ও নির্যাতন সত্যের প্রচারের পথকে রুদ্ধ করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত সত্য জয়ী হবেই।"

রাসুলের (সা ) প্রতি আদেশের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বিশ্ববাসীদের সম্মুখে প্রকৃত মোমেন বা বিশ্বাসীদের মানসিক অবস্থা ও কর্মপন্থাকে তুলে ধরেছেন। সকল যুগের সকল মোমেন বান্দাদের এই-ই হবে প্রকৃত ঈমানের ভিত্তি যে জীবনের কোন অবস্থাতেই সে সত্য ত্যাগ করবে না।