Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ২ জন
আজকের পাঠক ৭৫ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩৩০৫০৭ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৬১৯৪ বার
+ - R Print

সূরা নাস্‌র


সূরা নাস্‌র বা সাহায্য - ১১০

৩ আয়াত, ১ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এই সুন্দর সূরাটি সামগ্রিক ভাবেই সর্বশেষ সূরা হিসেবে ধরা হয়, যদিও [৫ : ৩ ] আয়াতটি যেখানে বলা হয়েছে, " আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।" বাক্যটি হচ্ছে কোরাণ শরীফের সর্বশেষ আয়াত।

এই সূরাটির অবতীর্ণ কাল রাসুলের (সা) মহা প্রয়াণের অল্প কয়েক মাস পূর্বে। প্রিয় নবী এই ধরাধাম ত্যাগ করেন ১১ ই হিজরী ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে। সম্ভবতঃ সূরাটি ১০ই জুলহজ্ব মাসে হজ্বের সময়ে অবতীর্ন হয় যখন রাসুল বিদায় হজ্বের ভাষণ দান করেন; অথবা বিদায় হজ্ব সমাপান্তে মদীনাতে প্রত্যাবর্তনের পরে অবতীর্ন হয়।

বিজয়ের মুকুট হচ্ছে পরিশ্রমের সাফল্য। বিজয়ীদের মহোল্লাসিত হওয়ার কারণ নাই। মনে রাখতে হবে সকল বিজয় ও সাফল্য আল্লাহ্‌র দান।


সূরা নাস্‌র বা সাহায্য - ১১০

৩ আয়াত, ১ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

১। যখন আল্লাহ্‌র সাহায্য ও বিজয় আসবে,

২। তুমি মানুষদের দলে দলে আল্লাহ্‌র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে ৬২৯২।

৬২৯২। অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে, রাসুল (সা) মক্কা থেকে মদীনাতে হিজরত করেন। রাসুলের সাহায্যার্থে মদিনার লোকেরা এগিয়ে আসে। তারা সত্য ও ন্যায়কে রক্ষার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। মক্কাবাসীদের এবং তাদের মিত্রদের সমন্বিত চেষ্টা ছিলো রাসুলের প্রচারিত দ্বীনের অস্তিত্বকে ধ্বংস করা। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা তাদেরই ধ্বংস ডেকে আনে। ধীরে ধীরে ইসলামের প্রসার মদিনার সীমান্ত অতিক্রম করে আরবের অন্যান্য স্থানেও প্রসার লাভ করে এবং রক্তপাতহীন বিজয়ের মাধ্যমে মক্কার পতন ঘটে। মক্কা বিজয় হচ্ছে ইসলামের বিজয়ের মুকুট যা রাসুলের (সা) ধৈর্য্য, অধ্যাবসায় ও দৃঢ়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মক্কা বিজয়ের পরে বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত ইসলামের পতাকা তলে সমবেত হতে থাকে। এ ভাবেই রাসুলের (সা) আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পূর্বেই তিনি ইসলামের অগ্রযাত্রার সকল ব্যবস্থা পরিপূর্ণ করে যান। পৃথিবীর ইতিহাসের এই সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের উপদেশ কি ? বিজয় কোন আত্ম-গৌরব নয় বরং তা হবে বিনয়ের প্রকাশ। ক্ষমতা নয় বরং সেবার প্রকাশ। এই সূরার মাধ্যমে মানুষের স্বার্থপরতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রতি আবেদন করা হয়েছে, যেনো তারা আল্লাহ্‌র মাহাত্ব্য ও করুণাকে আত্মার মাঝে অনুভব করতে পারে। সেটাই হচ্ছে প্রকৃষ্ট সময় কথায় ও কাজে আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য প্রকাশের।

এই আয়াতে মক্কা বিজয়ের পর বির্ধমীরা যে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছে তারই উল্লেখ করা হয়েছে।

৩। তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি বারে বারে ক্ষমাশীল [ দয়ালু ও মহিমান্বিত ]।

৬২৯৩। "মক্কা বিজয়" হচ্ছে ইসলামের বিজয়ের প্রতীক। রাসুল (সা) তাঁর জীবদ্দশায় ইসলামকে শক্ত মজবুত ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত করে যান। মহামানবের সকল কর্ম প্রচেষ্টার সফল পরিণতি ছিলো মক্কা বিজয়। এত বড় বিজয় অধ্যাবধি পৃথিবীর কোথাও কখনও ঘটে নাই। এত বড় সাফল্য ও বিজয়ের মুকুট লাভের পরেও কিরূপ আচরণ হওয়া প্রয়োজন সেই উপদেশ আল্লাহ্‌ বিশ্ব নবীর মাধ্যমে সকল মানব সম্প্রদায়কে দান করেছেন।

বিজয়ে মহা উল্লাসিত না হয়ে, বা সর্ব সাফল্য কোনও নিজস্ব প্রচেষ্টার ফল মনে না করে বিজয়ীদের মনোভাব কি হওয়া উচিত তা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষ সেই মহাশক্তিধর মহান আল্লাহ্‌র সম্মুখে বিনয়ে বিগলিত হয়ে নিজস্ব দোষত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে। এই সত্যকে হৃদয়ের মাঝে অনুধাবন করবে যে, সর্ব সাফল্য আল্লাহ্‌র দান। এই আয়াতে রাসুলকে "ক্ষমা প্রার্থনার " কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি ছিলেন নিষ্পাপ ও সকল পাপের উর্দ্ধে। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাঁকে সুযোগ দিয়েছেন তাঁর উম্ম্‌তদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার। হয়তো মক্কা বিজয়ের পরে তার কোন কোন উম্মত বিজয়ের নেশায় সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছেন। সাধারণ মানুষ কেহই দোষত্রুটির উর্দ্ধে নয়। যদি কেউ বিজয়ল্লাসে সেরূপ করে থাকেন তাদের সকলের জন্য রাসুলকে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ আল্লাহ্‌ দান করেছেন।

সাধারণ উপদেশ হচ্ছে - মানুষের যে কোন সফলতার জন্য গর্ব বা অহংকার করা উচিত নয়। বরং বিনম্র হৃদয়ে অনুভব করা উচিত, যে সব মানসিক দক্ষতার বলে সে এই বিজয় অর্জন করেছে তা মহান আল্লাহ্‌র করুণা ও অনুগ্রহ বই আর কিছু নয়। অনিচ্ছাকৃত দোষত্রুটির জন্য আল্লাহ্‌র ক্ষমা ভিক্ষা করতে হবে। দেখুন [ ২ : ৫৮ ] ও টিকা ৭২।