Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ০ জন
আজকের পাঠক ৬০ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩৩০৪৯২ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৬১৮৬ বার
+ - R Print

সূরা মার্ইয়াম


সূরা মার্ইয়াম - ১৯

৯৮ আয়াত, ৬ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা : সূরা ১৭ তে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে প্রতিটি মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির মূল নীতিমালা হচ্ছে, নৈতিক চরিত্র, এবং সূরা ১৮ তে বলা হয়েছে, অনুধাবন করতে জীবনের রহস্য ও এর স্বল্পস্থায়িতা এবং জুলকারনাইনের কাহিনীর মাধ্যমে উদাহরণ স্থাপন করা হয়েছে কিভাবে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ক্ষমতাকে সদ্ব্যবহার করতে হয়। এই সূরা শুরু হয়েছে পরিবেশের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাসুলদের কাহিনীর মাধ্যমে ইয়াহিয়া ও তাঁর পিতা জাকারিয়া, যীশু ও তার মা মরিয়ম, ইব্রাহীম ও তাঁর অবিশ্বাসী পিতা, মুসা ও তাঁর ভাই হারূন, ইসমাঈল ও তাঁর পরিবার, এবং ইদরীস ও তাঁর উচ্চ অবস্থান। এসব মহামানবদের জীবনের ছবি চিত্রিত করে, মানুষকে বিশ্বাসহীনতার জন্য নিন্দা করা হয়েছে। নিন্দা করা হয়েছে কুসংস্কারের দ্বারা আত্মার অবনতি ঘটানোর জন্য এবং সাবধান করা হয়েছে পরকালের জন্য।

আবিসিনিয়াতে প্রথম মুসলিম অভিযাত্রীদল যখন আশ্রয় গ্রহণ করেন এই সূরা তারও পূর্বে মক্কাতে অবতীর্ণ হয়। মোটামুটিভাবে এই সূরার অবতীর্ণ হওয়ার সময়কাল হচ্ছে হিজরতের প্রায় সাত বৎসর পূর্বে।

সারসংক্ষেপ : পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে আল্লাহ্‌র বাণী প্রচারের জন্য জাকারিয়া উদ্বিগ্ন হন এবং সে জন্য তিনি উত্তরাধিকার কামনা করেন। আল্লাহ্‌ তাঁকে ইয়াহিয়াকে দান করেন [ ১৯: ১- ১৫ ]

হযরত ঈসার মা মেরীর সম্বন্ধে তাঁর লোকেরা কুৎসা রটনা করে। কিন্তু যীশু তাঁকে সান্তনা দান করেন ও ভালো ব্যবহার করেন। [ ১৯: ১৬-৪০ ]

হযরত ইব্রাহীমকে লোকেরা তাঁর বিশ্বাসের কারণে নির্যাতন করে। এসব লোকের মধ্যে তাঁর পিতাও ছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের ত্যাগ করেন ও আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভ করেন। হযরত মুসাকে তাঁর ভাই হারুন সাহায্য করেন। হযরত ইসমাঈল তাঁর পরিবারকে পূণ্যাত্মারূপে শিক্ষা দান করেন। হযরত ইদরীস ছিলেন উচ্চমানের পূণ্যাত্মা ও সত্যবাদী। তাঁর মানুষদের তিনি পথ নির্দ্দেশ দান করেছেন , কিন্তু মানুষ সেই সুন্দর জীবনের প্রত্যাশী নয় [ ১৯: ৪১ - ৬৫ ]

মানুষের পরকাল সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আল্লাহ্‌র ধারণাকে মিথ্যা দ্বারা নোংরা করবে না। [ ১৯ : ৬৬ - ৯৮ ]

সূরা মার্ইয়াম - ১৯

৯৮ আয়াত, ৬ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

০১। কাফ্‌ - হা - ইয়া - আয়ান - সাদ্‌ ২৪৫৫।

২৪৫৫। এটাই একমাত্র সূরা যা পাঁচটি সংক্ষিপ্ত বর্ণমালা দিয়ে শুরু।

০২। ইহা তোমার প্রভুর অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি ২৪৫৬।

২৪৫৬। যাকারিয়ার প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বিভিন্ন ভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে : ১) তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুরের মাধ্যমে , ২) ইয়াহিয়ার মত সন্তান দানের মাধ্যমে, ৩) পিতা ও পুত্রের মধ্যে স্নেহের বন্ধনের মাধ্যমে, উপরন্তু,আল্লাহ্‌র নবী হিসেবে পৃথিবীতে ইয়াহিয়ার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে [ দেখুন ( ৩: ৩৮ - ৪১ ) ও টিকা ]। সূরা ৩ নং এ ধর্ম যাজক হিসেবে তাঁর কর্তব্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, এই সূরাতে পিতা ও পুত্রের মধুর সম্পর্কের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

০৩। স্মরণ কর! যখন সে নিভৃতে তাঁর প্রভুকে আহ্বান করেছিলো ২৪৫৭।

২৪৫৭। " নিভৃতে " - অর্থাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে , গোপনে। কারণ জাকারিয়া আশঙ্কা করেন যে, তাঁর নিজ পরিবার ও আত্নীয় স্বজনেরা ভুল পথে পরিচালিত হতে যাচ্ছে। আল্লাহ্‌র বাণীকে সমুন্নত রাখাই ছিলো তাঁর একান্ত ইচ্ছা। এখানে অবশ্য পরিষ্কারভাবে বলা হয় নাই যে তাঁর আত্মীয়রাই ছিলো তাঁর সহকর্মী।

০৪। প্রার্থনা করেছিলো, "হে আমার প্রভু ! আমার অস্থি দুর্বল হয়ে পড়েছে, আমার মাথার চুল ধূসর চক্‌চকে হয়েছে। হে আমার প্রভু! আমার প্রার্থনায় আমি কখনও ব্যর্থকাম হই নাই। ২৪৫৮

২৪৫৮। এই আয়াতগুলি প্রমাণ করে জাকারিয়ার আল্লাহ্‌র প্রতি ঐকান্তিক বিশ্বাস। জাকারিয়া ছিলেন আল্লাহ্‌র নিকট অত্যন্ত উচ্চমানের নবী। মসজিদই ছিলো তাঁর কাজের স্থান। তাঁর আত্মীয়রা ছিলেন তাঁর সহকর্মী। কিন্তু তিনি আশঙ্কা করেন যে তাদের চরিত্রে প্রকৃত ধর্মীয় বিশ্বাসের উদ্দীপনা বা তেজ অনুপস্থিত। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন - কারণ কে আল্লাহ্‌র পতাকাকে সমুন্নত রাখবে তাঁর পরে ?

০৫। " [কিন্তু ] এখন আমি আশংকা করি, আমার পরে আমার আত্মীয় [ এবং সহকর্মীরা কি করবে ] ? কিন্তু আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতারাং তুমি তোমার নিকট থেকে আমাকে উত্তরাধিকারী দান কর ; ২৪৫৯

২৪৫৯। জাকারিয়া শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের জন্য প্রার্থনা করেন নাই। যদি তিনি শুধুমাত্র বংশ রক্ষার জন্য পুত্র সন্তানের কামনা করতেন, তবে তিনি বহুপূর্বে তাঁর যৌবন কালেই তা করতেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত ধার্মিক , সুতারাং তাঁর প্রার্থনায় ব্যক্তি স্বার্থ স্থান পেতে পারে না। তিনি যখন দেখলেন যে, আল্লাহ্‌র কাজের জন্য প্রকৃত যোগ্য লোকের ভবিষ্যতে প্রয়োজন হবে তখনই তিনি সকলের মঙ্গলের জন্য পূণ্যবান এক পুত্র সন্তানের কামনা করেন।

০৬। [ এমন একজন ] যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে এবং প্রতিনিধিত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের। এবং হে আমার প্রভু ! তুমি তাঁকে তোমার সন্তোষজনক বানিও ২৪৬০। "

২৪৬০। উত্তরাধিকার কথাটির সাথে সম্পত্তির অংশীদারিত্ব জড়িত। আল্লাহ্‌র মোমেন বান্দা হিসেবে জাকারিয়ার পার্থিব সম্পদ না থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার ছিলো অমূল্য চারিত্রিক গুণরাজি। তিনি সেই অমূল্য চারিত্রিক সম্পদ সমূহ তাঁর পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে প্রবাহিত করতে চেয়েছিলেন। নবী রসুলদের বংশ হিসেবে হযরত ইয়াকুবের বংশধরেরা এই সব অমূল্য নৈতিক ও চারিত্রিক গুণে সমৃদ্ধ ছিলেন। সুতারাং এই আয়াতে 'প্রতিনিধিত্ব' শব্দটি বৃহত্তর কর্তব্যের প্রতি দায়িত্বের আহ্বান। জাকারিয়া বৃদ্ধ বয়েসে অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, তাঁর চারিপার্শ্বের লোকেরা আল্লাহ্‌র রাস্তা থেকে বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। তাঁর উত্তরাধিকারী কি তাঁর মত তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারবে ?

০৭। [ তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েছিলো ] " হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিতেছি। তার নাম হবে ইয়াহিয়া। এই নামে পূর্বে আমি কারও নামকরণ করি নাই ২৪৬১।

২৪৬১। ইয়াহিয়া হচ্ছেন "John the Baptist" , যাকে যীশু খৃষ্টের আগমনের অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর পিতার প্রার্থনার সাথে তাঁর কাজের সমন্বয় ঘটেছিলো। সে সময়ে ইহুদীরা আল্লাহ্‌র বাণীকে বিকৃত করে ফেলেছিলো। যীশুর আগমনের অগ্রদূত ইয়াহিয়া ও যীশু খৃষ্ট আল্লাহ্‌র বাণীকে পুণঃ প্রতিষ্ঠা করেন।

আরবীতে ইয়াহিয়া অর্থ ' জীবন'। হিব্রু ভাষাতে ইয়াহিয়াকে বলা হয় Johanan যার অর্থ "জোহাবার অনুগ্রহশীল। ইহুদীরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে ' জোহাবা ' শব্দটি ব্যবহার করে।

০৮। সে বলেছিলো, "হে আমার প্রভু ! কি ভাবে আমার পুত্র হবে, যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা ও আমি বার্দ্ধক্যের শেষ সীমাতে উপণীত হয়েছি?

০৯। তিনি বললেন, " এরূপে [ তা হবে ] " ২৪৬২। তোমার প্রভু বলেছিলেন, " এটা আমার জন্য সহজ। আমি তো তোমাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না।" ২৪৬৩

২৪৬২। "তিনি বললেন" - এই বাক্যটির "তিনি" বলতে কাক বোঝানো হয়েছে ? এখানে অধিকাংশ তফসীরকারের মত অনুসরণ করা হয়েছে। এখানে " তিনি " হচ্ছেন দেবদূত যিনি আল্লাহ্‌র বার্তা জাকারিয়ার কাছে বহন করে আনেন। দেখুন নীচের আয়াত [ ১৯: ২১ ]। কোন কোন তফসীরকারের মতে এই " তিনি " শব্দটি জাকারিয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষ অত্যাধিক আশ্চর্য হয়ে গেলে " সত্যিই তাই হবে " এরূপ বাক্য ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ জাকারিয়া আশ্চর্যান্বিত ভাবে উপরোক্ত বাক্য উচ্চারণ করেন যার অর্থ হবে " সত্যিই কি এরূপ ঘটবে যে বৃদ্ধ বয়েসে আমার সন্তান লাভ ঘটবে। " পরের লাইনে বলা হয়েছে যে "তোমার প্রতিপালক বলিলেন ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে হবে দেবদূতের বার্তা।

২৪৬৩। এই পৃথিবীতে জন্মের পূর্বে মানুষের কোনও অস্তিত্বই ছিলো না। তাঁর সত্তা বা আত্মার অস্তিত্ব ছিলো শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র নিকট। যদিও মানুষের জন্ম ঘটে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী। সৃষ্টির নিয়ম অনুযায়ী জীবের দেহের গঠন প্রকৃতি গঠিত হয়। তবুও সকল সৃষ্টির পিছনে কাজ করে আল্লাহ্‌র শক্তি। এই সাধারণ অর্থ ব্যতীতও এই আয়াটিতে পরোক্ষভাবে অন্য আর এক বিশেষ ভাবের অবতারণা করেছে। জন বা ইয়াহিয়া ছিলেন যীশুর আগমনের বার্তাবাহী অগ্রদূত। তিনি যীশুর আগমনের পথ প্রশস্ত করেন। " যখন তুমি কিছুই ছিলে না " বাক্যটি দ্বারা পরোক্ষভাবে যীশুর অত্যাচার্য জন্ম ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। দেখুন আয়াত [ ১৯ : ২১ ]। আল্লাহ্‌র পক্ষে সবই সম্ভব তিনি সর্বশক্তিমান।

১০। যাকারিয়া বলেছিলো, " হে আমার প্রভু ! আমাকে একটি নিদর্শন দাও।" ২৪৬৪। উত্তর হলো, " তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি বোবা না হওয়া সত্বেও কারও সাথে তিন রাত্রি বাক্যলাপ করবে না " ২৪৬৫।

২৪৬৪। এখানে " নিদর্শন " অর্থ আল্লাহ্‌র অঙ্গীকার সত্য হবেই। এই বিশ্বাস জাকারিয়ার অন্তরে উৎপন্ন করার জন্য নিদর্শন।
২৪৬৫। [৩: ৪১] আয়াতটি এই [ ১৯ : ১০ ] আয়াতের সাথে তুলনা করুন। পার্থক্যটি কৌতুহল উদ্দীপক। এই আয়াতে বলা হয়েছে তিন রাত্রির কথা পূর্বেও আয়াতে অনুরূপ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে তিন দিনের কথা। অবশ্য এর জন্য আয়াতের অর্থের কোন পরিবর্তন ঘটে না। কারণ 'দিন' বলতে আমরা শুধুমাত্র দিবাভাগকে বুঝি না। 'দিন' বলতে দিন ও রাত্রির সমন্বয়ে ২৪ ঘণ্টাকে বুঝায়। কিন্তু এই দুই আয়াতে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য লক্ষণীয় যেখানে দিনের উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানের উল্লেখ্য সময় হচ্ছে উম্মত বা জনসাধারণের সাথে যে সময় তিনি কাটাতেন। 'রাত' বলতে সেই সময়কে বোঝানো হয়েছে, যখন তিনি প্রার্থনা ও এবাদতে নিজের মধ্যে আত্মনিমগ্ন থাকতেন। লক্ষ্য করুণ পরবর্তী আয়াতে আছে " সকাল ও সন্ধ্যায়" বাক্যটি।আবার আয়াতে [ ৩:৪১] আছে " সন্ধ্যা ও সকালে " বাক্যটি। এই বাক্য গুলিতে একই বিষয়কে বিপরীতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

১১। অতঃপর যাকারিয়া তার কক্ষ থেকে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট এলো এবং ইঙ্গিতে তাদের সকাল - সন্ধ্যায় আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বললো।

১২। [ তাঁর পুত্রের নিকট এই আদেশ এলো ] ২৪৬৬ " হে ইয়াহিয়া ! এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গহণ কর। " আমি তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ২৪৬৭;-

২৪৬৬। সময়ের পরিক্রমায় একদিন পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সূরাটির এই অধ্যায়ে প্রধানতঃ ইয়াহিয়ার কথা আলোচনা করা হয়েছে। এখন আল্লাহ্‌ তাকেঁ হুকুম দিলেন। আদেশ হলো, " এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর।" কিতাব অর্থ এখানে ইহুদীদের নিকট আল্লাহ্‌র প্রেরিত প্রত্যাদেশ তাওরাত। ইহুদীরা তাওরাতের বাণীকে বিকৃত করে ফেলেছিল। ইয়াহিয়ার [John the Bartist] উপরে দায়িত্ব হলো যীশুর জন্য ক্ষেত্র তৈরী করা , যিনি আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশের বিকৃতিকে সংশোধন ও সংস্কার সাধন করবেন ও নূতনভাবে ব্যাখ্যা দান করবেন।

২৪৬৭। "Hukm" শব্দটিকে অনুবাদ করা হয়েছে জ্ঞান কথাটির দ্বারা। তবে শব্দটির প্রকৃত অর্থ শুধুমাত্র জ্ঞান দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ হচ্ছে সেই জ্ঞান বা বিচার বুদ্ধি যা চেতনার মাঝে সত্য ও ন্যায়কে চেনার ক্ষমতা দান করে। ভালো ও মন্দকে সনাক্ত করার অন্তর্দৃষ্টি দান করে, ফলে পাপকে সনাক্ত করে তা পরিত্যাগ করার আদেশ দান করতে পারে।

১৩। এবং পরদুঃখকাতরতা ও পবিত্রতা। সে ছিলো আন্তরিক ধর্মনিষ্ঠ ২৪৬৮।

২৪৬৮। এই আয়াতে ইয়াহিয়ার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যা আল্লাহ্‌ তাঁকে দান করেছিলেন তা তুলে ধরা হয়েছে। ইয়াহিয়া বেশীদিন বাঁচেন নাই। রোমান সম্রাটের প্রাদেশিক শাসন কর্তা হেরোডের [Herod] দ্বারা তিনি বন্দী হন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর শিরচ্ছেদ করা হয় কিন্তু তাঁর অল্প বয়স সত্বেও আল্লাহ্‌ তাঁকে দান করেন নিম্নলিখিত চারিত্রিক মাধুর্য : ১) আল্লাহ্‌ প্রদত্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেন, যার দরুণ তিনি নির্ভয়ে পাপকে অস্বীকার করেন। ২) কোমল হৃদয়, যা পরের দুঃখে কাতর হয়, আল্লাহ্‌র সৃষ্ট জীবের জন্য যে হৃদয় অনুভূতিশীল। তিনি গরীব , দুঃখীদের মধ্যেই তাঁর কাজকে সীমাবদ্ধ রাখতেন। তিনি বিলাস ব্যসনকে ঘৃণা করতেন। ৩) তিনি ছিলেন পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী। তিনি মনুষ্য সমাজ পরিত্যাগ করে জনবসতিহীন প্রান্তরে থাকতেন। এগুলি ছিলো তাঁর বৈশিষ্ট্য। তিনি তাঁর সমস্ত কাজই যৌবনেই শেষ করেন। আল্লাহ্‌র এই বিশেষ অনুগ্রহ তার চরিত্রে, তাঁর কাজের মাধ্যমে পরিষ্ফুট হয়। তিনি ছিলেন আল্লাহ্‌র প্রতি একান্ত অনুগত, আল্লাহ্‌র সৃষ্ট জীবের প্রতি দুঃখে কাতর ও দয়াশীল। তিনি জীবনের কোনও অবস্থাতেই হিংসার বা উগ্রতার আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই, তিনি ছিলেন করুণার প্রতীক। বিশেষ ভাবে তিনি তাঁর পিতামাতার প্রতি ছিলেন অত্যন্ত নম্র ও করুণাময়।

১৪। এবং পিতামাতার প্রতি দয়ালু। সে উদ্ধত বা বিদ্রোহী ছিলো না।

১৫। যেদিন সে জন্ম লাভ করে, যেদিন সে মৃত্যু বরণ করে, যেদিন সে পুণরুত্থিত হবে, তাঁর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক ২৪৬৯।

২৪৬৯। এই আয়াতের কথাগুলি আল্লাহ্‌ ইয়াহিয়াকে বলেছেন। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, আর্শীবাদ ও শান্তি তাঁর উপরে বর্ষিত হয় যখন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। আল্লাহ্‌র এই বিশেষ অনুগ্রহ তাঁর জীবনের শেষ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এমনকি অত্যাচারীরা তাঁকে যখন অন্যায়ভাবে হত্যা করে তখনও তার মানসিক শান্তি অটুট ছিলো।।আল্লাহ্‌ এখানে বলছেন তাঁর এই মানসিক অবস্থা পুনরুত্থানের দিনেও অটুট থাকবে।

রুকু - ২

১৬। বর্ণনা কর এই কিতাবের মরিয়মের [ কাহিনীর ] কথা ২৪৭০। যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে [নিরালায় ] পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল ২৪৭১।

২৪৭০। দেখুন মরিয়মের কাহিনীর জন্য সূরা [ ৩ : ৪২- ৫১ ] আয়াত। এখানে ঘটনাটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে উত্থাপন করা হয়েছে। এখানে মেরীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার, পরিবার ও পরিবেশের আলোকে ঘটনাকে উত্থাপন করা হয়েছে।

২৪৭১। " নিরালায় পূর্বদিকে এক স্থানে " - এই বাক্যটির অর্থ সম্ভবতঃ মেরী তাঁর পরিবারবর্গ থেকে আলাদা হয়ে মসজিদের পূর্বদিকের নির্জন প্রকোষ্ঠে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে নির্জনে তিনি আল্লাহ্‌র এবাদতে মশগুল হয়ে যান। একান্ত প্রার্থনা ও এবাদতের মাধ্যমে তিনি পবিত্রতার এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হন যে, তাঁর সামনে ফেরেশতার উপস্থিতি ধরা পড়ে। ফেরেশতা তাঁর সামনে মানুষের আকৃতিতে ধরা দেয়। মেরীর ধারণা হলো , তিনি একজন মানুষ। সুতারাং মেরী আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে তাঁকে অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত করেন।

১৭। সে তাদের নিকট থেকে [ আড়াল করার উদ্দেশ্যে ] পর্দ্দা স্থাপন করলো। অতঃপর আমি আমার ফেরেশতাকে প্রেরণ করলাম, এবং সে তার সম্মুখে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলো।

১৮। মারইয়াম বলেছিলো, " আমি তোমা থেকে দয়াময় [আল্লাহ্‌র ] আশ্রয় প্রার্থনা করছি: যদি তুমি আল্লাহ্‌কে ভয় কর [ তবে আমার নিকটবর্তী হয়ো না ]।"

১৯। সে বলেছিলো, " আমি তো তোমার প্রভুর প্রেরিত দূত, তোমার কাছে [ ঘোষণা করতে ] এসেছি এক পবিত্র পুত্র সন্তান উপহারের [ বার্তা ] ২৪৭২।

২৪৭২। আল্লাহ্‌ মেরীকে যীশু খৃষ্টের 'মা' হওয়ার সৌভাগ্যে গৌরবান্বিত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এখন সময় হয়েছে মেরীর সে খবর জানার।

২০। মারইয়াম বলেছিলো, "যেখানে আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করে নাই , সেখানে কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? আমি তো ব্যভিচারিণী নই।"

২১। সে বলেছিলো, " এরূপেই [ হবে] "। তোমার প্রভু বলেছেন, " ইহা আমার জন্য সহজ , [ আমার ইচ্ছা ] সে যেনো হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন এবং আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ ২৪৭৩। ব্যাপারটি এ ভাবেই স্থির করা হয়েছে। " ২৪৭৪

২৪৭৩। যীশুকে এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বলেছেন তাঁর নিদর্শন ও অনুগ্রহ। আল্লাহ্‌ কর্তৃক যীশু খৃষ্টের প্রতি নির্দ্দিষ্ট কাজকে এখানে দুইভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ১) সাধারণ মানুষের কাছে তিনি হবেন এক অলৌকিক নিদর্শন তাঁর আশ্চর্যজনক জন্ম , জীবন ও আল্লাহ্‌র নিকট তাঁর প্রত্যাবর্তন। ২) যীশু খৃষ্টের প্রতি আল্লাহ্‌ প্রদত্ত নির্দ্দিষ্ট কাজ ছিলো অন্যান্য রাসুলদের মত। তিনি ইসরাঈলীদের নিকট প্রেরিত হন। কিন্তু ইসরাঈলীরা ছিল কঠিন হৃদয় বিশিষ্ট। তাই এদের জন্য যীশুর খৃষ্টের বাণী ছিলো অপরের প্রতি দয়া ও করুণার উপদেশ।

২৪৭৪। আল্লাহ্‌ কোনও কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে শুধু বলেন 'হও' আর তা হয়ে যায়। অনুরূপ আয়াত দেখুন [ ৩: ৪৭]। তার হুকুম সাথে সাথেই পালিত হয়। তিনি যদি ইচ্ছা করেন শুধু মাত্র তখনই তা দেরী হয়। সময় সম্বন্ধে আমাদের যে ধারণা সে তো শুধুমাত্র আপেক্ষিক ধারণা সময়ের প্রকৃত ধারণা আল্লাহ্‌ই জানেন।

২২। সুতারাং সে তাঁকে গর্ভে ধারণ করলো; এবং সেই অবস্থায় সে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল ২৪৭৫।

২৪৭৫। যে দিন জিব্রাইল কুমারী মেরীকে যীশুর আগমন বার্তা ঘোষণা করেন এবং মেরী যীশুকে গর্ভে ধারণ করেন, ধারণা করা হয় যে , স্থানটি ছিলো জেরুজালেম থেকে ৬৫ মাইল উত্তরে নাজেরা [Nazareth] নামক স্থান। মেরী সন্তান প্রসব করেন জেরুজালেম থেকে ৬ মাইল দক্ষিণে বেথেলহামে। স্থানটি শুধু যে নাজেরা থেকে ৭১ মাইল দূরে ছিলো তাই নয়, যেখানে যীশু জন্মগ্রহণ করেন তা ছিলো বেথেলহামের এক নির্জন অজ্ঞাত স্থান। যীশু জন্ম গ্রহণ করেন খেজুর গাছের নীচে, পরে তাঁকে আস্তাবলের জাবনা পাত্রে স্থানান্তরিত করা হয়।

২৩। প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করলো। [ তীব্র দৈহিক যাতনায় ] সে কেঁদে বলেছিলো, " হায়! এর আগে যদি আমি মরে যেতাম ! তবে লোকের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম " ২৪৭৬।

২৪৭৬। প্রসব বেদনার তীব্রতায় মেরী উপরের উক্তি করেন। সব কিছুর উর্দ্ধে মেরীও ছিলেন মানুষ। মানুষের শারীরিক যন্ত্রনাও তাঁকে ভোগ করতে হয়। পরিবেশটি ছিলো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। আত্মীয়-স্বজন থেকে সূদূর বেথেলহামে প্রসব বেদনায় তীব্র যন্ত্রণাতে কুমারী মাতা ছ্টফট করছেন সম্পূর্ণ একা।

২৪। কিন্তু [ একটি স্বর ] তাকে [ খেজুর গাছের ] নীচ থেকে আহ্বান করে বললো, " দুঃখ করো না! তোমার প্রভু তোমার [ পিপাসা নিবারণের ] জন্য নীচে একটি ছোট্ট নদী সৃষ্টি করেছেন ; -

২৫। " এবং খেজুর গাছের কান্ডকে তোমার দিকে নাড়া দাও ; উহা তোমার জন্য তাজা পাকা খেজুর পতিত করবে। ২৪৭৭

২৪৭৭। দয়াময় আল্লাহ্‌র অদৃশ্য করুণার ধারা মেরীর জন্য খাদ্য ও পানীয়ের সুবন্দোবস্ত করেন। পানীয়ের জন্য আল্লাহ্‌ মেরীর জন্য ক্ষুদ্র নদীর সৃষ্টি করেন যাতে তিনি নিজেকে ধৌত করতে পারবেন।

২৬। " সুতারাং আহার কর এবং পান কর এবং [ তোমার সন্তানকে দেখে ] চক্ষু জুড়াও ২৪৭৮। এবং তুমি যদি কোন লোককে দেখ,তাহলে বলো, ' আমি পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] জন্য রোজার মানত করেছি, [ সুতারাং ] এই দিনে আমি কোন মানুষের সাথে বাক্যলাপ করবো না ২৪৭৯।"

২৪৭৮। "চক্ষু জুড়াও " এটা একটা প্রবাদ বাক্য যার অর্থ শান্তি পাওয়া। আক্ষরিকভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় ছোট নদীর ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে তাঁর চক্ষুকে ঠাণ্ডা করা ও যে অত্যাশ্চার্য শিশু সে লাভ করেছে তা দেখে তাঁর নয়ন জুড়ানো। তাঁকে চারিদিকে লক্ষ্য করতে বলা হলো, এবং নির্দ্দেশ দান করা হলো, যদি কেউ কাছে আসে মেরী যেনো মৌনতা অবলম্বন করে। এবং মেরী সেই অনুযায়ী প্রতিজ্ঞা করেন।

২৪৭৯। মেরী সকল পুরুষ ও মেয়েকে আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে বললেন যে তিনি মৌনতা অবলম্বন করেছেন।

২৭। শেষ পর্যন্ত সে সন্তানকে [ বাহুতে ] বহন করে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হলো। তারা বলেছিলো, "হে মারইয়াম ! তুমি তো এক আশ্চর্য জিনিষ এনেছ! ২৪৮০

২৪৮০। মেরী শিশুকে নিয়ে তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গমন করলো। মেরীকে দেখে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা আশ্চর্যে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। মেরীর অর্ন্তধানে তারা মেরীর সম্বন্ধে সম্পূর্ণ খারাপ ধারণা পোষণ করেছিলো। কিন্তু এখন সেই মেরী নির্লজ্জ্বের মত শিশুকে বক্ষে ধারণ করে তাদের সামনে হাজির। হারুনের পরিবারের জন্য তা কত বড় লজ্জ্বা। যে পরিবার ইহুদীদের মধ্যে প্রধান যাজক পরিবার বলে গণ্য সেখানে এরূপ ঘটনার কল্পনাও করা যায় না। আমরা পুরো দৃশ্যটি কল্পনা করতে পারি , যা ঘটেছিলো জেরুজালেমের অথবা নাজেরার উপসানালয়ে।

২৮। " হে হারূনের ভগ্নী! ২৪৮১। তোমার পিতা তো অসৎ ব্যক্তি ছিলো না এবং তোমার মাতাও ব্যভিচারিণী ছিলো না ! "

২৪৮১। মুসার ভাই হারুন ইসরাঈল সম্প্রদায়ের যাজকদের মধ্যে প্রথম ছিলেন। হারুনের বংশকে যাজক বংশরূপে অভিহিত করা হতো। মেরী এবং এলিজাবেথ [ ইয়াহিয়ার মা ] ছিলেন জ্ঞাতি বোন। তারাও যাজক বংশ থেকে আগত। এই যাজক বংশকে হারুনের বংশ বলা হতো। সে কারণে মেরীকে সম্ভোধন করা হয়েছে হারুনের বোন বলে। মেরীর পিতা ইমরান ও মাতা ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার এবং মোমেন বান্দা। শুধু যে তারা মোমেন বান্দা ছিলেন তাই নয় তারা এমন এক সম্মানজনক ও আল্লাহ্‌র নেয়ামত প্রাপ্ত বংশ থেকে আগত সেখানে মেরীর এরকম তথাকথিত অধঃপতন তাঁর পূর্বপুরুষদের জন্যও সম্মান হানিকর।

২৯। কিন্তু মারইয়াম শিশুর প্রতি ইঙ্গিত করলো ২৪৮২। তারা বললো, " কিভাবে আমরা দোলনাতে শায়িত শিশুর সাথে কথা বলবো ? "

২৪৮২। তাদের এই অভিযোগের উত্তরে মেরী কি বলতে পারতেন ? সমস্ত ঘটনার কি ব্যাখ্যা তিনি দান করতে পারতেন যা ইসরাঈলীদের মনঃপুত হতো ? মেরীর ব্যাখ্যা কি ইহুদীদের আক্রমণাত্মক মনোভাবকে শান্ত করতে পারতো , যুগ ও সমাজের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে এ কথাই বলা যায় যে, মেরী তাদের যে ব্যাখ্যাই দান করুন না কেন তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতো না। মেরী যা করতে পারতেন , তিনি তাইই করলেন। তিনি জানতেন কোলের শিশুটি সাধারণ শিশু নয়। তাই তিনি নিজে নিঃশ্চুপ থেকে শিশুটির প্রতি অঙ্গুলি প্রদর্শন করেন। কোলের শিশুই তার মাতার উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। শিশুটি অলৌকিক ভাবে মাতার পক্ষে কথা বলে ও যুক্তির অবতারণা করে এবং অবিশ্বাসী শ্রোতাদের মাঝে আল্লাহ্‌র মহিমা ঘোষণা করে।

৩০। সে [ শিশুটি ] বলেছিলো, " প্রকৃতই আমি একজন আল্লাহ্‌র [ অনুগত ] দাস। তিনি আমাকে প্রত্যাদেশ দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন।

৩১। " এবং আমি যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে তাঁর আর্শীবাদ ধন্য করেছেন। এবং আমাকে আদেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন সালাত আদায় করতে এবং দান করতে ২৪৮৩।

২৪৮৩। যীশু খৃষ্ট ও ইয়াহিয়াকে কোরাণ শরীফে দু - একটি ব্যতিক্রম বাদে সমান্তরাল ভাবে তুলনা করা হয়েছে। এসব তুলনা ও ব্যতিক্রম উভয়ই আর্কষণীয়। যেমন যীশু খৃষ্টের জীবনের আরম্ভ সূচিত হয়, এই ঘোষণার মাধ্যমে যে যীশু আল্লাহ্‌র দাস, আল্লাহ্‌র ছেলে নন। আল্লাহ্‌র একান্ত অনুগত দাস হিসেবেই তিনি নিজেকে পরিচিত করেছেন, এখানেই তার মহানুভবতা। ইয়াহিয়ার বৈশিষ্ট্য বা মহৎহৃদয় যা বর্ণনা করা হয়েছে আয়াত [ ১৯:১২ - ১৩ ] , যা যীশুর জন্য প্রযোজ্য নয়। এটা ছিলো যীশু ও ইয়াহিয়ার মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী তুলনা। কিন্তু আয়াত [ ১৯ : ১৩ - ১৫ ] ছিলো ইয়াহিয়ার বর্ণনা যার সমান্তরাল বর্ণনা আছে যীশুর জন্য এই আয়াতে [ ১৯ : ৩১ - ৩৩ ] প্রার্থনায়, আল্লাহ্‌র একান্ত অনুগত থাকা, সালাত ও যাকাতের [ দান ] প্রযোজ্য হয়েছে যীশুর ক্ষেত্রে ; এবং ইয়াহিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে দয়া, পবিত্রতা এবং আনুগত্যের। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, চরিত্রের বিশেষ গুণাবলী যথা দয়া, পবিত্রতা ও আনুগত্য [ যা ইয়াহিয়ার বৈশিষ্ট্য ] থাকলেই বিশ্বস্ত ও অনুগতভাবে সালাত বা প্রার্থনা ও যাকাত বা দান করা সম্ভব [ যা যীশু খৃষ্টের বৈশিষ্ট্য ] অর্থাৎ দয়া , আত্মার পবিত্রতা ও আনুগত্য হৃদয়ে থাকলেই প্রার্থনা ও জীবে দয়া সম্পূর্ণতা লাভ করে। ঠিক যে ভাবে ইয়াহিয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যীশু খৃষ্টের আগমনের অগ্রগামী পথিক।

৩২। " [আল্লাহ্‌ ] আমাকে আমার মাতার প্রতি দয়ালু করেছেন। তিনি আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেন নাই। ২৪৮৪

২৪৮৪। উদ্ধত,বিদ্রোহী ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ অন্যায় ও ক্ষতিকর। যাদের প্রতি উদ্ধত ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা হয়, তাদের প্রতি অন্যায় করা হয়, আর যে উদ্ধত ও স্বেচ্ছাচারী তার জন্যও এই আচরণ ক্ষতিকর। সম্ভবতঃ যে এরূপ আচরণ করে সে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ। কারণ তাঁর এই আচরণের দ্বারা সে তার আত্মার পবিত্রতা হারায়। তাঁর আত্মার অবস্থা হয়ে পড়ে অপবিত্র, বিশৃঙ্খল, অস্থির এবং এসবের শেষ পরিণতিতে সে হয় অসুখী, চরম দুর্দ্দশাগ্রস্থ ও হতভাগ্য ব্যক্তি। আত্মার এই অবস্থাকেই বলা যায় দোযখের পূর্ব অবস্থা। উদ্ধত, বিদ্রোহী ও স্বেচ্ছাচারী আত্মার বিপরীত অবস্থা হচ্ছে শান্তি। ইয়াহিয়ার শেষ দিনগুলির মাধ্যমে আত্মার এই অবস্থাকে বর্ণনা করা সম্ভব। ইয়াহিয়া তাঁর প্রতি অন্যায় শাস্তিকে ধীর স্থির প্রশান্তভাবে গ্রহণ করেন। কোন অস্থিরতা বা শঙ্কা তাঁর ছিলো না।

৩৩। " সুতারাং আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি, যেদিন আমি মারা যাব, এবং যেদিন আমি পুনরুত্থিত হব।" ২৪৮৫

২৪৮৫। দেখুন [ ১৯ : ১৫ ] এবং টিকা ২৪৬৯। যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় নাই। দেখুন [ ৪:১৫৭ ] আয়াত।

৩৪। এই -ই হচ্ছে মারইয়াম পুত্র ঈসা। [ এটা হচ্ছে ] সত্যের বিবরণ যার সম্বন্ধে তারা [ বৃথা ] তর্ক করছে ২৪৮৬।

২৪৮৬। যীশু খৃষ্ট সম্বন্ধে বিভিন্ন মতবাদের রক্তাক্ত সংগ্রাম ও বির্তক বৃথা। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন গীর্জা এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না , তবে তাদের অযৌক্তিক মতবাদও সম্পূর্ণ ত্যাগ করা উচিত।

৩৫। আল্লাহ্‌র [ মর্যাদার ] সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় যে, তিনি সন্তান গ্রহণ করবেন। তিনি পবিত্র মহিমাময় ! তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন শুধু বলেন, " হও " এবং তা হয়ে যায় ২৪৮৭।

২৪৮৭। সন্তানের জন্মদান করা জৈবিক ব্যাপার যা সমস্ত প্রাণীকূলের মধ্যে বর্তমান। আল্লাহ্‌ পবিত্র ও মহিমাময়। তাঁকে এই সাধারণ প্রাণীকূলের সমগোত্রীয় কল্পনা করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র মহিমাকেই খর্ব করা হয়। তিনি অভাবমুক্ত। তাঁর মাঝে যৌনক্ষুধা বর্তমান এ ধারণা দ্বারা তাঁর মর্যদাকে হানি করা হয়। আল্লাহ্‌ সন্তান ধারণ করেন এ অপবাদ তারাই দেয় , যারা এই পার্থিব জীবনের বাইরে চিন্তা করতে অক্ষম। মোশরেকদের কুসংস্কার ও মানুষকে দেবত্ব আরোপের অভ্যাস থেকে উপরোক্ত ধারণার উদ্ভব।

৩৬। অবশ্যই আল্লাহ্‌ আমার প্রভু এবং তোমার প্রভু! সুতারাং তার সেবা কর। ইহাই সরল পথ ২৪৮৮।

২৪৮৮। যারা নিজেদের কুটতর্কের ধূম্রজালে কুসংস্কার ও অধিবিদ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে তারাই একের ভিতরে তিন অথবা তিনের ভিতরে এক, এসব অবান্তর যুক্তির অবতারণা করে। কোরাণে সরল পথের নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে প্রাঞ্জল ভাষাতে। কোন ঘোর প্যাঁচ বা বক্রতার অবকাশ নাই [ ১৮:১]। খৃষ্টের ধর্মোপদেশ সহজ সরল তার জীবনাদর্শের মত। কিন্তু খৃষ্টানেরা তাঁকে বক্র করেছে বিভিন্ন মতবাদের অবতারণার মাধ্যমে। হযরত ঈসা (আঃ) বা খৃষ্টের সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি করে খৃষ্টানগণ নিজেরাই বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

৩৭। কিন্তু দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করলো। সুতারাং অনাগত গুরুত্বপূর্ণ শেষ বিচার দিবসে অবিশ্বাসীদের জন্য দুর্ভোগ ২৪৮৯।

২৪৮৯। Mash – ad শব্দটিকে অনুবাদ করা হয়েছে শেষ বিচার দিবস। এই শব্দটি যে ভাবকে বহন করে তা নিম্নরূপ : ১) যেখানে ও যে সময়ে সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করা হয়, যেমন বিচারালয়। ২) সেই সময় যখন কাহাকেও বিচারের জন্য উপস্থিত করা হয়। ৩) সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য কোন ঘটনাকে উপস্থিত করা হয়। শেষ বিচারের দিনকে ভাষায় প্রকাশের জন্য উপযুক্ত শব্দ চয়ন বৈকি।

৩৮। যেদিন তারা আমার নিকট উপস্থিত হবে, সেদিন তারা কত সহজভাবে দেখতে ও শুনতে পারবে। কিন্তু অন্যায়কারীরা আজকে সুস্পষ্ট ভুলের মাঝে রয়েছে ২৪৯০।

২৪৯০। পুনরুত্থানের দিনে মানুষের অনুভব ও চেতনার বর্ণনা এই আয়াতে আছে। দেখুন [ ৫০ : ২২] আয়াত যেখানে পুনরুত্থানের বর্ণনা আছে।

৩৯। অত্যন্ত ক্লেশকর দিবস সম্বন্ধে তাদের সর্তক কর ২৪৯১ , যেদিন সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। [ সাবধান ] এখন তারা অমনোযোগী এবং বিশ্বাসও করে না।

২৪৯১। "Hasrat" অনুবাদ করা হয়েছে ক্লেশকর দিবস। এর অন্যান্য অর্থ হচ্ছে দীর্ঘশ্বাস ,দীর্ঘশ্বাস ফেলা, ভুলত্রুটির জন্য দুঃখ, নিদারুণ মর্মপীড়া।

৪০। নিশ্চয়ই পৃথিবী এবং এর উপরে সকল কিছুর মালিক আমি ২৪৯২। তারা সকলেই আমারই নিকট ফিরে আসবে।

২৪৯২। দেখুন আয়াত [ ৩ : ১৮০ ] ও টিকা ৪৮৫; আয়াত [ ১৫ : ২৩ ] ও টিকা ১৯৬৪। পৃথিবীতে যে ধন- সম্পদ ব্যক্তি অর্জন করে মৃত্যুর পরে তার বংশধরেরা তা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। এই-ই পৃথিবীর নিয়ম। সমস্ত পৃথিবীর মালিক আল্লাহ্‌। তিনিই জীবন ও মৃত্যুর মালিক। দৈহিক মৃত্যুর পরে যে চিরঞ্জীব আত্মার অবস্থান , তারও মালিক সেই সর্বশক্তিমান। মুত্যুর পরে আত্মা আল্লাহ্‌র নিকট ফিরে যায় যিনি সব কিছুর মালিক ও উৎস।

রুকু - ৩

৪১। কিতাবে [আরও ] উল্লেখ করা হয়েছে ইব্রাহিমের [ কাহিনী ]। সে ছিলো একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষ, একজন নবী।

৪২। স্মরণ কর, সে তাঁর পিতাকে বলেছিলো ২৪৯৩: " হে আমার পিতা ! কেন তুমি তার এবাদত কর, যে শুনতে পারে না , দেখতে পারে না এবং তোমার কোন কাজে আসে না ?

২৪৯৩। এই আয়াতে হযরত ইব্রাহীমের তাঁর পিতার প্রতি সহৃদয় , সনির্বন্ধ মিনতিকে তুলে ধরা হয়েছে। ইব্রাহীমের পিতা ছিলেন পৌত্তলিক। তিনি একত্ববাদের আলো গ্রহণ করেন নাই, ইব্রাহীম তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন ও পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন।

৪৩। " হে আমার পিতা ! আমার নিকট [ সত্যের ] জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে পৌঁছায় নাই ২৪৯৪। সুতারাং আমাকে অনুসরণ কর। আমি তোমাকে সহজ সরল পথে পরিচালিত করবো।২৪৯৫
" আমার নিকট [সত্যের] জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে পৌঁছায় নাই।"

২৪৯৪। "আমার নিকট সত্যের জ্ঞা যা তোমার নিকট আসে নাই।" ইব্রাহীমের এই উক্তির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ এই সত্যের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, সত্যের আলো সবার অন্তরে সমভাবে প্রবেশ লাভ করে না। অনেকের সত্যের আলোকে ধারণ করার ক্ষমতা অন্যদের অপেক্ষা বেশী। এটা তাদের জন্য এক বিশেষ সুবিধা বা অধিকার যা আল্লাহ্‌ তাদের দান করেছেন। সুতারাং অন্যকে সেই পথের সন্ধান দান করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আয়াতটির অর্থ সার্বজনীন।

২৪৯৫। "Sawiyan" সঠিক মসৃণ,সমতল , পরিপূর্ণ, সম্পূর্ণ। সুতারাং এই শব্দটির বিভিন্ন অর্থ বিভিন্ন আয়াতে প্রযোজ্য হয়েছে। যেমন [ ১৯ : ১০ ] সম্পূর্ণ ক্ষমতা থাকা সত্বেও কাহারও সাথে "বাক্যালাপ করবে না" অর্থে। আয়াত [ ১৯ : ১৭ ] এ বর্ণনা আছে ফেরেশতা যাকে " পূর্ণ মানব আকৃতিতে" প্রেরণ করা হয়। এখানে উপরের শব্দটির দ্বারা "পূর্ণ" ভাবকে প্রকাশ করা হয়েছে।

৪৪। " হে আমার পিতা ! শয়তানের দাসত্ব করো না। শয়তান তো পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] অবাধ্য ২৪৯৬।

২৪৯৬। যেখানে আল্লাহ্‌ পরম করুণাময়, ন্যায়বান ও মহান তাঁর বান্দার প্রতি, সেখানে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধাচারণ করা জঘন্য পাপ যা ক্ষমার অযোগ্য যা শয়তানের কাজ।

৪৫। " হে আমার পিতা! আমি তো আশংকা করি যে পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] শাস্তি তোমাকে স্পর্শ করবে। ফলে, তুমি শয়তানের বন্ধুতে রূপান্তরিত হবে ২৪৯৭। "

২৪৯৭। যা অন্যায় , পাপ, বেআইনী তাই-ই শয়তানের প্রতীক। এই আয়াতের সার্বজনীন উপদেশ হচ্চে যদি অন্তরের মাঝে পাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে না তুলে , যদি পাপের প্রতি আসক্তি জন্মে, তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহ্‌র সত্যকে প্রত্যাখানের ফলে দয়াময়ের শাস্তি আমাদের জন্য অবধারিত হয়ে দাঁড়ায়। হযরত ইব্রাহীমের তাঁর পিতার জন্য এই আশঙ্কা সার্বজনীন যা সকল যুগের সকল ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। পাপের প্রতি আসক্তিকে শয়তানকে বন্ধুরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ শয়তান আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধাচারণ করার ফলে অপরাধী বলে সনাক্ত। আর যে কোনও পাপই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধাচারণ করা।

৪৬। [পিতা] উত্তর দিয়েছিলো, " হে ইব্রাহীম ! তুমি কি আমার দেব-দেবীকে ঘৃণা কর ? যদি তুমি নিবৃত্ত না হও, তবে আমি প্রস্তরঘাতে তোমার প্রাণনাশ করবই। এখন চিরদিনের জন্য আমার নিকট থেকে দূর হয়ে যাও।" ২৪৯৮

২৪৯৮। নিম্নের আয়াতগুলিতে [ ১৯ : ৪২ - ৪৫ ] এবং [ ১৯ : ৪৭ - ৪৮ ] ইব্রাহীম ও তাঁর পিতার বাক্‌ বিতন্ডা তুলে ধরা হয়েছে। মনে করতে পারি যে, তুমুল বাকবিতন্ডাকে এই কয়েকটি আয়াতের মাধ্যমে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়েছে। আয়াত [১৯ : ৪২ - ৪৫] হচ্ছে হযরত ইব্রাহীমের আন্তরিক প্রচেষ্টা তাঁর পিতাকে প্ররোচিত করার জন্য সত্য ধর্মের প্রতি এবং আয়াত [ ১৯ : ৪৭ - ৪৮ ] হচ্ছে পিতার রূঢ় ও বিরক্তিকর প্রত্যাখানের উত্তরে হযরত ইব্রাহীমের ভদ্র, নম্র, কোমল উত্তর দান। এই আয়াতগুলি এই সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে যে, হযরত ইব্রাহীমের চরিত্রের মাধুর্য্য ছিলো সত্য ধর্মের অনুশীলন ও এক আল্লাহ্‌র এবাদতের পরিণতি ও তাঁর পিতার গর্বিত ও উদ্ধত ব্যবহার ছিলো তাঁর অশুভ শক্তির পূজার ফল। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে যে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দান করা হয়েছে সেগুলিকে ব্যাখ্যা চারভাগে ভাগ করা যায়। ১ ) পূণ্যবান সন্তানেরা সব সময়ে পিতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হয় এবং পিতার পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি যত্নশীল। ২) যদি পিতা সত্যের আলোকে প্রত্যাখান করে, সন্তান তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে পিতাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য। ৩) যে একবার সত্যের আলোকে হৃদয়ে অনুভব করেছে, তাঁর পক্ষে কোনও অবস্থায় সম্ভব হবে না তা প্রত্যাখান করা এমন কি এর জন্য যদি তাঁকে তার স্নেহময় পিতার স্নেহচ্যুত হতে হয় এবং স্নেহমতয় পিতা যদি স্নেহহীন হয়ে পড়ে , নিষ্ঠুর ভাবে তাকে বাড়ী থেকে বিতাড়ণ করেন, সন্তান তবুও পিতার প্রতি কঠোর হবে না , সন্তানের আবেদন হবে নম্র, কোমল ভালোবাসাতে পূর্ণ। পিতার সমস্ত অসম্পূর্ণতাকে সন্তান ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে কিন্তু সেই সাথে সে তাঁর বিশ্বাসের প্রতি থাকবে অটল , সত্যের প্রতি থাকবে অবিচলিত।

এই হচ্ছে এই আয়াতগুলির সার্বজনীন আবেদন।

উপদেশ : যেভাবে বড়দের নসিহত করতে হবে।

৪৭। ইব্রাহীম বলেছিলো, " তোমার প্রতি শান্তি। আমি আমার প্রভুর নিকট তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো ২৪৯৯। অবশ্যই তিনি আমার প্রতি পরম করুণাময়।

২৪৯৯। দেখুন আয়াত [ ৯ : ১১৪ ] যেখানে ইব্রাহীমকে তাঁর পিতার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে।

৪৮। আমি তোমাদের থেকে এবং আল্লাহ্‌ ব্যতীত যাদের এবাদত কর, তাদের [ সকলের ] থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমি আমার প্রভুকে আহ্বান করি। সম্ভবতঃ আমার প্রার্থনা দ্বারা আমি আমার প্রভুর নিকট অভিশপ্ত হব না ২৫০০।

২৫০০। ইব্রাহীম তাঁর পিতা এবং পিতৃগৃহ ত্যাগ করেন এবং আর কোনও দিনই সেখানে ফিরে আসেন নাই। তিনি আজন্ম পরিচিত গৃহ ত্যাগ করে অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ান , কারণ মিথ্যা ধর্ম ও অনাচারের সাথে আপোষ-মিমাংসা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অন্যায় অত্যাচারের পরিবর্তে হযরত ইব্রাহীমের ব্যবহার ছিলো কোমলতায়, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। তিনি মধুর ভাবে তাঁর পিতার রূঢ় ব্যবহারের উত্তর দান করেন। হযরত ইব্রাহীমের একমাত্র আশা ছিলো পরম করুণাময়ের আর্শীবাদ।

এই আয়াতের মাধ্যমে হযরত ইব্রাহীমের বহু শতাব্দী পরে আল্লাহ্‌র হুকুম, সত্যের আলোকে সমুন্নত রাখার জন্য যে হিজরত হযরত মুহম্মদের (সা) দ্বারা সংঘটিত হবে তারই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

৪৯। অতঃপর সে যখন তাদের থেকে এবং আল্লাহ্‌ ব্যতীত যাদের তারা এবাদত করতো, তাদের [ সকলের ] থেকে দুরে সরে গেলো, আমি তাকে দান করলাম, ইসাহাক ও ইয়াকুব। এবং তাদের প্রত্যেককে নবী করলাম ২৫০১।

২৫০১। ইসাহাক ও ইসাহাকের পুত্র ইয়াকুবের কথা এখানে শুধু উল্লেখ করা হয়েছে , কারণ ইব্রাহীমের বংশের দুই শাখার এটা হচ্ছে এক শাখা। হযরত ইব্রাহীমের বংশের দুই শাখাই পয়গম্বরদের আগমনে ধন্য। ইসাহাকের শাখার উল্লেখ এখানে করা হয়েছে, এই শাখাতে আগমন করেন হযরত মুসা, হযরত ঈসা বা যীশু খ্রীষ্ট। অপর শাখা হচ্ছে হযরত ইসমাঈলের বংশধর যার কথা পরবর্তী পাঁচটি আয়াতে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বিশেষ সম্মানের সাথে। এই শাখাতে জন্ম গ্রহণ করেন শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা)। সে কারণেই তাঁর উল্লেখ হযরত মুসার পরে করা হয়েছে। দেখুন [ ২১ : ৭২ ]।

৫০। এবং তাদেরকে আমার অনুগ্রহ দান করলাম। সত্যের বাণীতে তাদের জন্য সুউচ্চ সম্মান মঞ্জুর করলাম ২৫০২।

২৫০২। ইব্রাহীম এবং তাঁর ছেলে ইসাহাক ও নাতি ইয়াকুব এবং তাঁদের বংশধরেরা পয়গম্বরদের আগমনের ধারা অব্যাহত রাখেন। তাঁর সকলেই সত্য প্রচারের পতাকা সমুন্নত রাখেন। এ সব নবী ও রাসুলেরা যুগ যুগ ধরে মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র, সত্যের উপাসক রূপে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত। হযরত ইব্রাহীম আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে, পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে যারা সত্য ধর্মে বিশ্বাসী তাদের দ্বারা তিনি যেনো প্রশংসিত হতে পারেন। দেখুন আয়াত [ ২৬ : ৮৪ ] যেখানেও হযরত ইব্রাহীম অনুরূপ প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্‌ তাঁকে অনুগ্রহ ও যশ দানে ধন্য করেন।

রুকু - ৪

৫১। এই কিতাবের উল্লেখ করা হয়েছে মুসার [ কাহিনী ]। তাঁকে বিশেষভাবে মনোনীত করা হয়েছিলো , এবং সে ছিলো রাসুল [ এবং ] একজন নবী ২৫০৩।

২৫০৩। এখানে হযরত মুসা সম্বন্ধে তিনটি বিশেষণ প্রয়োগ করা হয়েছে। ১) তিনি ছিলেন বিশুদ্ধ চিত্ত অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তাঁকে বিশেষ ভাবে নির্বাচিত করেন সে কারণে তাঁর অন্তকরণকে পরিশুদ্ধ ও বিশুদ্ধ করা হয় যেনো তিনি ইহুদীদের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেন। হযরত মুসার আর একটি উপাধি ছিলো " কলিমউল্লাহ্‌ " অর্থাৎ যে [ ফেরেশতা ব্যতীত ] সরাসরি আল্লাহ্‌ যার সাথে কথা বলেছেন। দেখুন [ ৪ : ১৬৪ ] ও টিকা ৬৭০। ২) তিনি ছিলেন রাসুল , অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তাঁকে কিতাব দান করেন এবং তাঁর ছিলো উম্মত বা সংগঠিত সম্প্রদায় , যেখানে তিনি আল্লাহ্‌র হুকুম বা আইন সমূহ প্রবর্তন করেন। ৩) তিনি ছিলেন নবী অর্থাৎ যিনি আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ লাভ করে থাকেন।

৫২। এবং আমি তাকে [ সিনাই ] পর্বতের দক্ষিণ দিক থেকে ডেকেছিলাম ২৫০৪, এবং তাঁকে আমার দিকে আকর্ষণ করেছিলাম অতীন্দ্রিয়[ কথোপকথনের ] জন্য।

২৫০৪। এই আয়াতে যে ঘটনার ইঙ্গিত করা হয়েছে , তাঁর পূর্ণ বিবরণ আছে আয়াতে [ ২০ : ৯ - ৩৬ ]। এখানে [Exod iii , 1 – 18 এবং iv : 1- 17] এর অনুরূপ বিবরণের উল্লেখ করা যায়। সময়টা ছিলো মুসার নবুয়ত প্রাপ্তি বা আল্লাহ্‌র নিকট থেকে তাঁর দায়িত্ব প্রাপ্তির পূর্বে। সে সময়ে মুসা তাঁর শ্বশুরের মেষ পালকে চারণভূমিতে পরিচালনা করছিলেন এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিভ্রমন করছিলেন। ঘটনাটি সেই সময়কার, স্থানটি ছিলো সিনাই পর্বতের [Jabal Musa] পাদদেশে। মুসা দূরে আলো দেখতে পেলেন। কিন্তু যখন আলোর নিকটবর্তী হলেন, তিনি একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। তিনি যখন স্বরটির আরও নিকটবর্তী হলেন , তাঁর জন্য অপার রহস্যের দূয়ার উম্মুক্ত হলো। আল্লাহ্‌ তাঁকে তাঁর যুতা খুলে আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আদেশ দান করেন, হযরত মুসাকে তাঁর দায়িত্ব অপর্ণ করা হয় , এবং তাঁর ভাই হারুনকে তাঁর সাহায্যে নিযুক্ত করা হয় ও নবীর পদে উন্নীত করা হয়। এর পরেই মুসা এবং হারুন ফেরাউনের সাথে সাক্ষাত করেন যার বিবরণ আছে [ ৭ : ১০৩ - ১০৪ ] আয়াতে। "দক্ষিণ দিক থেকে" বাক্যটির অর্থ মুসা তুর পর্বতের দিকে মুখ করে দাঁড়ানোর পরে পর্বতের ডান দিক থেকে স্বর শুনতে পেলেন। আবার আক্ষরিক অর্থে না নিয়ে আরবী অনুবাদকে যদি আলঙ্করিক অর্থে নেওয়া হয় , তবে "ডান দিকে " বাক্যটির অর্থ দাঁড়াবে সেই দিক যে দিক আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে ধন্য।

৫৩। আমি আমার অনুগ্রহ স্বরূপ তার ভাই হারূনকে [-ও ] নবী রূপে তাকে দিলাম ২৫০৫।

২৫০৫। মুসার জিহ্বার জড়তার জন্য তার তোতলামি ছিলো। সেই কারণে কর্তব্য সম্বন্ধে তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিলো না। তিনি আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর ভাই হারুনকে সহকারী হিসেবে প্রার্থনা করেন। পরম করুণাময় তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর করেন [ ২০ : ২৫ - ৩৬ ]।

৫৪। কিতাবে ইস্‌মাঈলের [ কাহিনীও ] উল্লেখ আছে। সে তাঁর প্রতিশ্রুতি পালনে ছিলো [ কঠোর ] সত্যাশ্রয়ী ২৫০৬। এবং সে ছিলো রাসুল ও নবী।

২৫০৬। হযরত ইসমাঈল ছিলেন 'Az-zabih' বা আল্লাহ্‌র জন্য উৎসর্গ করা বলি। যখন হযরত ইব্রাহীমকে বলা হলো তাঁকে উৎসর্গ বা কোরবাণী দেবার জন্য, ইসমাঈল স্বতঃস্ফুর্তভাবে আত্মোৎসর্গ করেন, এবং শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞায় অটল ছিলেন। ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসেন নাই। অবশ্য শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্‌র হুকুমে ইসমাঈলের পরিবর্তে ভেড়া কোরবাণী হয়ে যায়। তিনি ছিলেন আরব সম্প্রদায়ের আদি উৎস পুরুষ। তারই পরবর্তী বংশধরের মধ্যে জন্ম গ্রহণ করেন আল্লাহ্‌র রাসুল নবী করিম হযরত মুহম্মদ (সা)। ইসলামিক উম্মত এবং কিতাব হযরত ইসমাঈলের নবুয়ত্বের ধারাবাহিকতার ফসল। তিনি ছিলেন " রাসুল, নবী "।

৫৫। সে তার লোকদের সালাত ও দানের নির্দ্দেশ দিত। এবং সে ছিলো তার প্রভুর সন্তোষভাজন ২৫০৭।

২৫০৭। "প্রতিপালকের সন্তোষভাজন" অর্থাৎ আল্লাহ্‌র জন্য মনোনীত উৎসর্গ করা জীবন। দেখুন উপরের টিকা।

৫৬। কিতাবে আরও উল্লেখ আছে ইদরীসের কাহিনী ২৫০৮। সে ছিলো সত্যবাদী [ বিশ্বস্ত এবং ] একজন নবী।

৫৭। এবং আমি তাঁকে উন্নীত করেছিলাম উচ্চ মর্যাদায়।

২৫০৮। কোরাণ শরীফে দুইবার হযরত ইদরীসের উল্লেখ আছে। এই সূরাতে ও সূরা [ ২১ : ৮৫ ] আয়াতে। যেখানে তাঁকে ধৈর্য্যশীল রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বাইবেলে [Gen . V. 21 – 24] তাঁর পরিচিতি হচ্ছে যিনি "Walked with God." এ কথা সত্য হতেও পারে নাও হতে পারে। বাইবেলের [Gen. V. 24] বর্ণিত ভাষ্য [God took him] অনুযায়ী এই আয়াতকে [ ১৯ : ৫৭ ] ব্যাখ্যা করা যায় না। " উচ্চ মর্যদায় উন্নীত করার " অর্থ এই নয় যে, তিনি মৃত্যুর তোরণ অতিক্রম না করেই আল্লাহ্‌র নিকট উন্নীত হন। কোরাণ শরীফের বর্ণনা থেকে আমরা যেটুকু বুঝতে পারি তা হচ্ছে তিনি ছিলেন সত্যাশ্রয়ী, বিশ্বস্ত এবং তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট তাঁর ছিলো উচ্চ মর্যদা। এই সব গুণাবলীতে তিনি যাদের সমকক্ষ ছিলেন , তাদের উল্লেখ করা হয়েছে তার উল্লেখের সম্বন্ধে। তিনি সর্বদা জনসাধারণের সংস্পর্শে থাকতেন এবং তিনি ছিলেন তাদের সম্মানের পাত্র। হযরত ইদ্রিসের উল্লেখের মাধ্যমে এই উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য আমাদের জনসংযোগ বিচ্যুত হওয়ার আবশ্যক নাই। আল্লাহ্‌কে পাওয়ার জন্য লোকালয় ত্যাগ করে বনে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। কারণ যিনি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহভাজন হবেন তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে অপরজনকে পথ দেখানো।

৫৮। নবীদের মধ্য এরাই তারা যাদের উপর আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ বর্ষণ করেছেন - আদমের বংশধরদের মধ্য ,এবং যাদের আমি নূহের সাথে [ নৌকায় ] আরোহন করিয়েছিলাম তাদের মধ্য , এবং ইব্রাহীম ও ইস্‌মাঈলের বংশধরদের ২৫০৯ মধ্য যাদের আমি পথ নির্দ্দেশ দিয়েছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম। যখন তাদের নিকট করুণাময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হয়, তারা চোখের পানিতে আপ্লুত হয়ে সেজ্‌দায় লুটিয়ে পড়ে ২৫১০।

২৫০৯। এই আয়াতে পূর্ববর্তী নবীদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিভক্ত করা হয়েছে : ১ ) আদম থেকে নূহ্‌ ; ২ ) নূহ্‌ থেকে ইব্রাহীম; এবং ৩) ইব্রাহীম থেকে পরবর্তী সীমাহীন সময় পর্যন্ত অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে " যাদের আমি [আল্লাহ্‌ ] পথ নির্দ্দেশ দিয়েছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম।" হয়তো এই সময় সীমা ছিলো আল্লাহ্‌র বাণী যতদিন বিকৃত হয়ে না যায় ও রসুলদের আগমন অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। হযরত ইয়াকুবের অন্য নাম ছিলো ইসরাঈল।

২৫১০। " তাহারা " অর্থাৎ তারাই যারা আল্লাহ্‌র বাণীকে সমুন্নত রাখে, আল্লাহ্‌র পথ নির্দ্দেশের অনুসারী তাহারা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র নবী ও রাসুল নয়।

৫৯। কিন্তু তাদের পরের বংশধরেরা সালাত বাদ দিত, এবং কাম-প্রবৃত্তির অনুসরণ করতো। শীঘ্রই তারা [তাদের ] ধ্বংস প্রত্যক্ষ করবে; ২৫১১

২৫১১। পৃথিবীতে উত্থান ও পতন সময়ের ধর্ম। কখনও কখনও অন্যায়, অসত্য ,অধর্ম , পৃথিবীকে সাময়িকভাবে গ্রাস করে। কিন্তু তখনও একদল লোক থাকে যারা অন্যায়, অসত্য, অধর্মের কাছে আত্মসমর্পন করে না। যদিও তাঁরা সংখ্যায় হয় স্বল্প। তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে; অনুতাপ করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। এদের আল্লাহ্‌ পরলোকে শাস্তি দান করবেন না, কারণ পৃথিবীতে তাঁরা সৎজীবন যাপন করেছেন, তারা অসৎ জীবনের প্রভাবে আল্লাহ্‌র মনোনীত জীবন ব্যবস্থা ভুলে যায় নাই। পরের আয়াতে আল্লাহ্‌ এদের ঈমান ও সৎকর্মের পূর্ণ পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি দান করেছেন।

৬০। [অবশ্য ] যারা অনুতাপ করে , ঈমান আনে, সৎকাজ করে তারা ব্যতীত। তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের প্রতি এতটুকু যুলুম করা হবে না।

৬১। অনন্ত [ সুখের ] বাগান, যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] তাঁর বান্দাদের দিয়েছেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সফল হবে।

৬২। তারা সেখানে শন্তির সম্ভাষণ ব্যতীত অন্য কোন অসার বাক্য শুনবে না ২৫১২। সেখানে সকাল - সন্ধ্যায় তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ ২৫১৩।

২৫১২। "Salam" যার বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে শান্তি। সালাম শব্দটির সঙ্কীনার্থে ব্যবহার হয় না। এর অর্থ ব্যপক; নিম্নলিখিত ভাবগুলি "সালাম" শব্দটি দ্বারা প্রকাশ করা হয় : ১) স্থায়ী নিরাপত্তার অনুভূতি; যে অনুভূতি এই পৃথিবীতে অনুভব করা সম্ভব নয়। ২) নির্ভরযোগ্য ,মুক্ত, ত্রুটিহীন, সম্পূর্ণ ইত্যাদি যা "Salam" শব্দটি থেকে উদ্ভুত। ৩) নিরাপদ রাখা, পাপ থেকে মুক্ত করা উদ্ধার করা, ইত্যাদি যা "Salam" শব্দটি থেকে উদ্ভুত, ৪) সামঞ্জস্য রক্ষা করে অভিবাদন করা ৫) সন্তুষ্টভাবে পরিত্যাগ করা; ৬) শান্তির সকল সাধারণ অর্থে যেমনঃ কোনও রকম পীড়াদায়ক অবস্থা থেকে মুক্ত থাকা। উপরের অর্থগুলি সব কিছুই "সালাম" শব্দটি দ্বারা প্রকাশ করা যায়।

২৫১৩। "Rizq" জীবনোপকরণ অর্থ অস্তিত্বেও জন্য যা প্রয়োজন সবই। এই শব্দটি ব্যপক অর্থে ব্যবহৃত যেমন : শরীর, মন, আত্মার সম্পূর্ণ প্রশান্তির জন্য যা প্রয়োজন। " সকাল - সন্ধ্যা" শব্দটি দ্বারা প্রারম্ভ ও শেষ কে বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ ব্যাপক সময় বোঝানো হয়েছে।

৬৩। এই সেই বেহেশত্‌, আমার বান্দাদের মধ্যে আমি তাদের এর উত্তরাধিকার করবো যারা মন্দ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।

৬৪। [ ফেরেশতারা বলবে ] ২৫১৪, " আপনার প্রভুর আদেশ ব্যতীত আমরা অবতরণ করি না। আমাদের সম্মুখে যা আছে, পশ্চাতে যা আছে এবং দুই এর মধ্যবর্তী যা আছে সবই আল্লাহ্‌র অধিকারে এবং আপনার প্রভু কখনও ভুলে যান না ; -

২৫১৪। এই বাক্যটি জিব্রাঈলের (আঃ) কথা। কিছুকালের জন্য ওহী প্রেরণ বন্ধ ছিলো। ইহাতে রাসুর (সা) অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে জিব্রাঈল উপস্থিত হলে রাসুল (সা) তাঁকে বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তদুত্তরে জিব্রাঈল যা বলেন তাই এখানে বিবৃত করা হয়েছে। বিনয় প্রকাশের জন্য জিব্রাঈল " আমরা " শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সার্বজনীন উপদেশ হচ্ছে : আমরা অনেক সময়েই আমাদের চারিপার্শ্বে অসৎ ও পাপীদের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখে অধৈর্য্য হয়ে পড়ি। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহ্‌র রাস্তায় কাজ করার পরেও অনেক সময়ে তার কোনও প্রতিদান না পেলে আমরা অস্থির হয়ে পড়ি। সাধারণ মানুষের জ্ঞান ও দূরদৃষ্টি সীমাবদ্ধ সে কারণেই আমরা অনেক সময়ে প্রকৃত মঙ্গল বুঝতে না পেরে অভিযোগ করে থাকি। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বহনকারী ফেরেশতার আগমন কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। তাঁর আগমন ঘটে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র হুকুমে নির্দ্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। সুতারাং কোনও কারণেই আমাদের অধৈর্য্য হওয়া উচিত নয়। কারণ আল্লাহ্‌ কিছুই ভোলেন না। আমাদের কল্যাণের জন্য যখন যেমন প্রয়োজন সেই অনুযায়ী আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। তাঁর দূরদর্শিতা , বিচক্ষণতা, সূদূর প্রসারী ও সকলের জন্য। আমাদের সে জন্য অধৈর্য্য হওয়ার প্রয়োজন নাই। আমাদের যা কর্তব্য তা হচ্ছে ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহ্‌র রাস্তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া।

৬৫। "আকাশমন্ডলী , পৃথিবী এবং এই দুই এর মধ্যবর্তী সকল কিছুর প্রভু তিনি। সুতারাং তাঁর এবাদত কর এবং এবাদতে দৃঢ় ও ধৈর্যশীল থাক। তুমি কি আল্লাহ্‌র নামের সমগুণ সম্পন্ন কাউকে জান ? ২৫১৫ "

২৫১৫। সত্যকে অনুধাবনের মাধ্যমে , জীবনের রহস্যকে উপলব্ধির মাধ্যমে, মানুষের জ্ঞানচক্ষু উম্মীলিত হয়। যত আমাদের এই অনুধাবন ও উপলব্ধির অনুভূতি প্রগাঢ় হবে তত আমাদের এই বোধোদয় ঘটবে যে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আর কিছু নাই। তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। সমস্ত সৌন্দর্য, সমস্ত গুণের আঁধার এক আল্লাহ্‌। মানুষের মাঝে যে সব গূণাবলী দেখে আমরা মুগ্ধ হই, প্রকৃতির মাঝে যে সৌন্দর্য আমাদের অভিভূত করে সবই আল্লাহ্‌র গুণাবলীর ক্ষুদ্র প্রকাশ মাত্র। বিশ্ব-প্রকৃতির রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ, সৃষ্টি জগতের নানা বৈচিত্র সবই সেই এক স্রষ্টার নিজস্ব গুণাবলীর প্রকাশ মাত্র। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ স্রষ্টা, সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী, সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাময়। তাঁর গুণাবলী সারা বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডময় অণু পরমাণুতে ছড়িয়ে আছে। তাঁর করুণা তাঁর সর্ব সৃষ্টিতে বিদ্যমান। পৃথিবীব্যপী তাঁর সৃষ্টি বৈচিত্রের সাথে তুলনা করার ক্ষমতা আর কেউ রাখে না। তিনিই একমাত্র প্রশংসনীয়।

রুকু - ৫

৬৬। লোকে বলে, " যখন আমি মরে যাব, তখন আমি আবার জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব ?"

৬৭। কিন্তু মানুষ কি স্মরণ করে না যে, প্রথমে আমি তাকে শুণ্য থেকে সৃষ্টি করি ?

৬৮। সুতারাং তোমার প্রভুর শপথ ! নিঃসন্দেহে আমি ওদের এবং [তাদের সাথে ] শয়তানাদেরও একসঙ্গে সমবেত করবো ২৫১৬। অতঃপর আমি তাদের নতজানু করে জাহান্নামের চারিদিকে উপস্থিত করবো ২৫১৭।

২৫১৬। পরলোকে অবিশ্বাস করা, এটা যে শুধুমাত্র কোন দার্শনিক তত্বে সন্দেহ পোষণ করা তা নয়। এর সাথে জড়িত থাকে অবাধ্যতা, কুটিলতা, আত্মার ক্ষতিকর অভিজ্ঞতা ও সহজাত প্রেরণা যা মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের অবস্থানকে নির্ণয় করে। ঈমান বা বিশ্বাস আত্মার চেতনাকে সুসংহত করে, কেন্দ্রীভূত করে এক সুনির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি। যার ফলে স্রষ্টাকে অনুভব করার ক্ষমতা, স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খা, শান্তির পরশ উপলব্ধির ক্ষমতা সহজাত প্রেরণা হিসেবে নিজের আত্মার মাঝে জন্ম লাভ করে। আত্মার এ অবস্থায় আল্লাহ্‌র ক্ষমতা সম্বন্ধে আমাদের কোনও সন্দেহই থাকবে না। যে স্রষ্টা কোনও কিছু ব্যতীতই আমাদের সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি অবশ্যই আমাদের সত্ত্বা বা অনুভব বা ব্যক্তিত্বকে এক ভুবন থেকে অন্য ভূবনে স্থানান্তরিত করতে সক্ষম। অর্থাৎ দৈহিক মৃত্যুর পরেও আমাদের সত্ত্বাকে অপরিবর্তিত রাখতে সক্ষম। কিন্তু যদি আমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহ্‌র পথ নির্দ্দেশকে অস্বীকার করি তবে আমাদের আত্মার একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে আত্মার মাঝে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হবে। সৃষ্টি হবে সন্দেহ, বিভেদের। যার ফলে আল্লাহ্‌র রহমতের আলো এ সব আত্মায় প্রবেশে বাঁধা পায়। ফলে, তারা হয় আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বঞ্চিত। এদের কথাই বলা হয়েছে যাদের পরলোকে শয়তানের সাথে একত্র সমবেত করা হবে। শয়তান, মন্দ ও পাপের প্রতীক। অর্থাৎ এসব লোকের পাপ কার্যই হবে তাদের জন্য শয়তানের প্রতীক, যা পরলোকেও তাদের সাথে থাকবে। সেখানে কিন্তু তাদের উদ্ধত, একগুয়ে ও অবাধ্যতা দূর হয়ে যাবে। সত্যকে অস্বীকার করার প্রতিফল তারা সর্বোচ্চ বিনয়ের সাথে গ্রহণ করবে। " নতজানু " শব্দটি দ্বারা সর্বোচ্চ বিনয়কে বোঝানো হয়েছে।

২৫১৭। " জাহান্নামের চতুর্দিক" পাপের পথ বহুবিধ। পাপের শাস্তি জাহান্নাম। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন পথে মানুষ পাপ করে থাকে। কিন্তু সকল পাপের পথই একখানে এসে মিলিত হয়, আর তা হচ্ছে "জাহান্নাম "। সে জন্যই বলা হয়েছে দোযখের সাতটি দরজা। দেখুন আয়াত [ ১৫ : ৪৪ ] এবং টিকা ১৯৭৭।

৬৯। অতঃপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যারা , পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা অনমনীয় বিদ্রোহী , আমি নিশ্চয়ই তাদের টেনে বের করবো।

৭০। অবশ্যই আমি সর্বাপেক্ষা ভালো জানি , তাদের মধ্যে সেখানে দগ্ধ হওয়ার জন্য যোগ্যতম কে ?

৭১। তোমরা প্রত্যেকেই উহা অতিক্রম করবে ২৫১৮। ইহা তোমার প্রভুর সিদ্ধান্ত যা অবশ্যই সম্পাদন করা হবে।

২৫১৮। এই লাইনটির তিন রকম ব্যাখ্যা সম্ভব : ১) প্রত্যেক ব্যক্তিকে উহা অর্থাৎ আগুনের মধ্যে দিয়ে বা উপর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। যারা পৃথিবীতে 'তাকওয়া' [ দেখুন ২:২ ও টিকা ২৬ ] অবলম্বন করেছিলো, আল্লাহ্‌ তাদের অনুগ্রহ করে রক্ষা করবেন। অপর পক্ষে যারা পাপী তারা দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। ২) দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে : এই আয়াতে "তোমরা" সর্বনামটি ব্যবহার করা হয়েছে ৬৯ নং আয়াতে যে সব "সর্বাধিক অবাধ্য " জনের উল্লেখ আছে তাদের জন্য। এদের উল্লেখ ৭০ নং আয়াতেও আছে। সে হিসেবে এই আয়াতটি শুধুমাত্র পাপীদের জন্য প্রযোজ্য। ৩) তৃতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে : "উহা" শব্দটি পুল সিরাত, যা জাহান্নামের উপরে অবস্থিত। উহা অতিক্রম করে জান্নাতে প্রবেশ করতে হবে। এই পুলের উল্লেখ কোরাণে নাই।

৭২। কিন্তু আমি তাদের রক্ষা করবো যারা নিজেদেরকে মন্দ থেকে রক্ষা করে। এবং পাপীদের [ বিনয়ে ] নতজানু অবস্থায় সেখানে ত্যাগ করবো।

৭৩। যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ তাদের নিকট আবৃত্তি করা হয়; তখন অবিশ্বাসীরা , যারা ঈমান এনেছে তাদের বলে, " [ বলতো আমাদের ] দু দলের মধ্যে মর্যাদায় কোন দল শ্রেষ্ঠ ? কাদের সভার আড়ম্বর অধিক বেশী ? " ২৫১৯

২৫১৯। এই পৃথিবীতে অবিশ্বাসীরা সব সময়েই অর্থ-সম্পদ, ক্ষমতা প্রতিপত্তিতে বা জনবলে শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন হয়। কারণ জনবল সর্বদা যে দিকে সম্পদ ও ক্ষমতা সেদিকে ধাবিত হয়। জনবল বিশেষতঃ জনসমর্থনকে বোঝায়। কিন্তু পৃথিবীতে শেষ পর্যন্ত সত্য টিকে থাকবে এবং বিরাজ করবে এই আল্লাহ্‌র আইন।

৭৪। ওদের পূর্বে আমি কত [ অসংখ্য ] মানব গোষ্ঠিকে বিনাশ করেছি, যারা অস্ত্র - শস্ত্র ও চাকচিক্যে বাহ্যদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠতর ছিলো।

৭৫। বল ! যদি কেউ ভ্রান্ত পথে যায়, পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] তাদের [ ভ্রান্ত পথের রজ্জু ] বৃদ্ধি করে দেন , যতক্ষণ না তারা আল্লাহ্‌র দেয়া সতর্কবাণী প্রত্যক্ষ করবে - তা শাস্তি হিসেবেই হোক ২৫২০; অথবা কেয়ামতের [ আগমন ] হিসেবেই হোক। শেষ পর্যন্ত তারা বুঝতে পারবে , কে মর্যদায় নিকৃষ্ট এবং [ কে ] শক্তিতে সর্বাপেক্ষা দুর্বল।

২৫২০। আল্লাহ্‌ সর্তক করে দেন যে, প্রত্যেক মন্দ কাজের পরিণাম শাস্তি। এবং মৃত্যুই জীবনের শেষ নয়। মৃত্যুর সিংহদুয়ার পেরিয়ে , পরলোকে ইহকালের সকল কার্যের জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। একেই বলা হয়েছে শেষ বিচারের দিন। মন্দ কাজ বা পাপের পরিণতি সব সময়ে যে পরকালেই ভোগ করতে হবে তা নয়, অনেক সময়ে দেখা যায় ইহকালেই শাস্তি বা পরিণতি শুরু হয়ে যায়। যেমন, অতিরিক্ত অসংযম ও বাড়াবাড়ির প্রতিফল এই জীবনেই অনেক সময়ে শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময়ে মানুষের স্বার্থপরতা ও পাপ এত সুক্ষ ও ভালো মানুষের আবরণে ঢাকা থাকে যে, তা সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। কিন্তু মানুষের বিচারে এরা রেহাই পেলেও আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচার অবশ্যাম্ভবী। যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন , অহংকারী , গর্বিত পাপীরা জানতে পারবে "কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে শক্তিতে দুর্বল " অর্থাৎ সম্মান ও ক্ষমতায় কে নিকৃষ্ট ও কে দুর্বল যে ব্যাপারেও তারা সর্বদা বিদ্রূপ করতো ; যার উল্লেখ আছে আয়াত [ ১৯ : ৭৩]

৭৬। যারা পথের ঠিকানা অনুসন্ধান করে, আল্লাহ্‌ তাদের হেদায়েতের পথে অগ্রসর করান। যা [ শেষ পর্যন্ত ] টিকে থাকে তা হচ্ছে সৎ কাজ। যা পুরষ্কার লাভের জন্য এবং প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে সর্বোৎকৃষ্ট ২৫২১।

২৫২১। " যা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে তা হচ্ছে সৎ কাজ " - এই লাইনটি সূরা [ ১৮ : ৪৬ ] আয়াতের শেষার্ধে উল্লেখ আছে, শুধুমাত্র "প্রতিদান (maradd)চ্ শব্দটির স্থানে [ ১৮ : ৪৬ ] আয়াতে " আশা আকাঙ্খা (amal)" শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই এর জন্য অর্থের খুব একটা তারতম্য ঘটে নাই। যেখানে পার্থিব সম্পদের আকাঙ্খার সাথে চাওয়া পাওয়াকে সমন্বিত করা হয়েছে সেখানে " আশা-আকাঙ্খা" শব্দটি অধিক প্রযোজ্য। আবার যেখানে মর্যদা ও পাপীদের পার্থিব বিনিয়োগ যা সম্পদ ও ক্ষমতা লাভের কুটিল ষড়যন্ত্র, সেখানে " প্রতিদান" শব্দটি অধিক প্রযোজ্য।

৭৭। তুমি কি সে সব লোককে লক্ষ্য করেছ, যারা আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখান করেছে , তথাপি বলে, আমাকে অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান -সন্ততি দেয়া হবে ২৫২২।

২৫২২। অর্থ সম্পদ , প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতায় যারা শ্রেষ্ঠ তাদের মানসিকতাকে এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। এ সব ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য গর্ব প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু এদের মধ্যে আর এক দল থাকে যারা শুধু বর্তমান নয়, তারা ঘোষণা করে যে, ভবিষ্যতেও তাদের ধন-সম্পদ, ও ক্ষমতার পরিমাণ অব্যাহত থাকবে। এখানে সন্তান সন্ততিকে জনবল বা ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যত সম্বন্ধে তারা নিশ্চিত হয় কি ভাবে ? সমস্ত কল্যাণ আল্লাহ্‌র হাতে। তাদের ঘোষণা দ্বারা প্রতীয়মান হবে যেনো আল্লাহ্‌ তাদের অনুগ্রহ করতে বাধ্য। যেখানে তারা আল্লাহ্‌র সত্যকে অস্বীকার করে, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনে না , সেখানে তারা এরূপ আশা কিভাবে করে ? অথবা তারা কি এমন ভান করে যে, তারা ভবিষ্যতকে প্রত্যক্ষ করতে পারে ? তারা কি ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্‌র নিকট থেকে লাভ করেছে ? কিন্তু কোনও মানুষই ভবিষ্যতের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারবে না।

৭৮। সে কি অদৃশ্যকে ভেদ করতে পেরেছে অথবা সে কি পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র সাথে চুক্তি করেছে ?

৭৯। কখনই না! তারা যা বলে তা আমি সংরক্ষিত করবো। এবং আমি তাকে শাস্তির উপরে শাস্তি বৃদ্ধি করবো ২৫২৩।

২৫২৩। এসব লোকের শাস্তি বৃদ্ধি করা হবে বা দ্বিগুণ করা হবে। কারণ প্রথমতঃ তারা আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনে নাই, দ্বিতীয়তঃ তারা আল্লাহ্‌র নামে মিথ্যা আরোপ করেছে।

৮০। সে যা বলে তার সব আমার কাছে ফিরে আসবে। এবং সে আমার কাছে উপস্থিত হবে রিক্ত এবং নিঃসঙ্গ অবস্থায় ২৫২৪।

২৫২৪। পৃথিবীতে যে সম্পদ ও ক্ষমতাকে ব্যক্তি কুক্ষিগত করে রাখে , তাঁর প্রকৃত মালিক সে নয়, সব কিছুর মালিক সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌। সব কিছুই আল্লাহ্‌র কাছে নীত হবে, যিনি সব কিছুর উৎস। মানুষও সেখানে নিঃসঙ্গ, পার্থিব সম্পদ ও ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রিক্ত অবস্থায় আল্লাহ্‌র বিচারের সম্মুখীন হবে। যে পার্থিব সম্পদ ও ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে সে পরকালকে অস্বীকার করেছিলো, তা তার কোনও কাজেই আসবে না। সেদিন তার সম্পদ, ক্ষমতা সবই থাকবে আল্লাহ্‌র অধিকারে।

৮১। [ এবাদতের জন্য ] তারা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য উপাস্য গ্রহণ করে থাকে, যেনো তারা তাকে ক্ষমতা ও খ্যাতি দান করতে পারে ২৫২৫।

২৫২৫। "Izz" শব্দটির অর্থ উচ্চ শ্রেণী, ক্ষমতা, শক্তি, অন্যের উপরে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতা , ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করার ক্ষমতা বা বিজয় গৌরব ইত্যাদি। "

৮২। পক্ষান্তরে , তারা [ উপাস্যরা ] তাদের এবাদত প্রত্যাখান করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যাবে ২৫২৬।

২৫২৬। দেখুন [ ১০ : ২৮ - ৩০ ] যেখানে বলা হয়েছে মিথ্যা উপাস্যরা তাদের উপাসনার কথা অস্বীকার করবে, তারা পূজারীদের শেষ বিচারের দিনে ত্যাগ করবে, ফলে তারা হতাশার মাঝে নিমজ্জিত হবে। আয়াতে [ ৫ : ১১৬ ] যীশু খৃষ্ট শেষ বিচারের দিনে অস্বীকার করবেন যে তিনি তাঁকে আল্লাহ্‌র অংশীদার হিসেবে পূজা করার কথা বলেছেন। এ সব অংশীবাদীদের আল্লাহ্‌র শাস্তির জন্য অর্পণ করা হবে।

রুকু - ৬

৮৩। তুমি কি দেখো নাই যে, আমি অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে শয়তানকে ছেড়ে দিয়েছি তাদের [ মন্দ কর্মে ] উগ্র আবেগে উৎসাহিত করতে ? ২৫২৭

২৫২৭। প্রকৃতি যেমন প্রাকৃতিক আইনের আজ্ঞাবহ। মানুষের নৈতিক নীতিমালাও সেরূপ আল্লাহ্‌ প্রদত্ত আইনের আয়ত্তাধীন। প্রকৃতির আইন অমান্য করলে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঠিক সেরূপ অন্যায় , পাপ, দ্বারা মানুষের নৈতিক নীতিমালা লঙ্ঘিত হয় ফলে আত্মার ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাদের চোখে তখন তাদের পাপ কাজকে নয়নাভিরাম মনে হয়। আল্লাহ্‌র আইন হচ্ছে , যখন পাপ, অন্যায়, এবং ঈমানহীনতা একটি নির্দ্দিষ্ট সীমারেখা অতিক্রম করে , তখন ব্যক্তির মাঝে পাপ পূণ্যের সীমারেখা অবলুপ্ত হয়ে যায়। তখন পাপ করার প্রবণতার গতি হয় ত্বরান্বিত। আল্লাহ্‌ পাপীদের সৎপথে ফিরে আসার জন্য সময় দিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে সে যদি অনুতপ্ত না হয়,তবে তার জন্য আল্লাহ্‌র শাস্তি থেকে অব্যহতি পাওয়ার দিন হয়ে যায় সীমিত। সুতারাং পূণ্যাত্মারা পাপী ও অবিশ্বাসীদের পার্থিব সাফল্যে বিভ্রান্ত হবে না। তারা আল্লাহ্‌র উপরে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে ধীর ও অবিচলিত ভাবে তাদের কর্তব্য কর্ম করে যাবে।

৮৪। সুতারাং তাদের বিষয়ে তাড়াহুড়ো করো না। কারণ আমি তো তাদের জন্য গণনা করে রেখেছি [ সীমিত ] সংখ্যক [ দিন ]।

৮৫। সেদিন পূণ্যাত্মাদের পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] সমীপে সমবেত করা হবে যেনো, রাজার সম্মুখে সম্মানীয় মেহমান দল।

৮৬। এবং পাপীদের আমি দোযখের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব ঠিক যেনো, তৃষ্ণার্ত পশুপাল পানির দিকে তাড়িত হচ্ছে ২৫২৮।

২৫২৮। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে পূণ্যাত্মা ও পাপীর অবস্থার মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। পূণ্যাত্মারা সেদিন উদ্ধার পাবে, আল্লাহ্‌র নিকট সমবেত হবে সম্মানিত মেহমানরূপে ,আর পাপীরা সেদিন ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। এদের তুলনা করা হয়েছে পশুপালের সাথে, যে তৃষ্ণার্ত পশুপালকে পানি পানের স্থানে সমবেত ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। ঠিক সেই ভাবে পাপীদের চিন্তাক্লিষ্টভাবে জাহান্নামের দিকে তাড়িত করা হবে। লক্ষ্য করুণ এখানে তৃষ্ণার্ত শব্দটি উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি যেরূপ পানির দর্শনে ছুটে যায়। পাপীরাও যেরূপ শান্তি রূপ পানির সন্ধানে ছুটে যাবে কিন্তু পরিণামে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।

৮৭। পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] অনুমতি [ বা প্রতিশ্রুতি ] ব্যতীত, কারও সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না।

৮৮। তারা বলে, " পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] পুত্র সন্তান গ্রহণ করেছেন !"

৮৯। অবশ্যই তোমরা এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করেছ ২৫২৯;-

২৫২৯। খৃষ্টানেরা বলে যীশু খৃষ্ট আল্লাহ্‌র সন্তান। আল্লাহ্‌ সন্তান গ্রহণ করেন, একথা তারা প্রচার করে অনুমানের উপরে। এ কথা বিশ্বাস করা এক প্রচন্ড বীভৎস কথাকে বিশ্বাস করা। কারণ এ কথা এক প্রচন্ড ঈশ্বর নিন্দা। সন্তানের জন্মদান এক জৈবিক প্রক্রিয়া যা পশু প্রবৃত্তিরূপে পরিগণিত। আল্লাহ্‌র সন্তান গ্রহণের মাধ্যমে তাঁকে সেই পশু প্রবৃত্তির সমকক্ষ রূপে পরিগণিত করা হয়। আল্লাহ্‌র পবিত্রতা, মহত্ব , শ্রেষ্ঠত্ব এতে খর্ব করা হয়। এর সাথে খৃষ্টানেরা যাজক শ্রেণীর অবতারণা করেছে যারা আল্লাহ্‌ ও সাধারণ মানুষের মধ্যবর্তী হিসেবে কাজ করে। যারা বলে মানুষের পাপকে যীশুর রক্তের মাধ্যমে শোধ করা হয়। সেইরূপ যাজকেরা মানুষের পাপের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থী হবে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কর্মফলের জন্য দায়ী। এই বোধ আমাদের আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচার সম্বন্ধে ধারণা দান করে। সুতারাং মানুষের পাপের ঋণ যীশু রক্তের মাধ্যমে শোধ করেন বা মধ্যবর্তী শ্রেণীর ধারণা করা যারা অন্যের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারবে , [ এই ধারণা থেকেই যাজক শ্রেণীর উদ্ভব ] মানুষকে ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে। ফলে আল্লাহ্‌ যে ন্যায় বিচারের প্রতীক সে ধারণা এখানে অনুপস্থিত। সুতারাং এও এক ধরণের আল্লাহ্‌র নিন্দা বৈকি। এই মতবাদ মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলার মধ্যে বিপর্যয় সংগঠিত করে। কারণ শুধুমাত্র এক আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পনের মাধ্যমেই আত্মার নৈতিক উন্নতি ঘটে। যেখানেই আল্লাহ্‌র সাথে অংশীদারিত্ব করা হয়, সেখানে আত্মার বিকাশের এই ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন ঘটে। সুতারাং যীশু খৃষ্ট আল্লাহ্‌র পুত্র এই মতবাদকে কঠোর ভাষাতে নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

৯০। যার ফলে আকাশ বিদীর্ণ হতে পৃথিবী খন্ড বিখন্ড হতে এবং পবর্তমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে প্রস্তুত।

৯১। কারণ তারা পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] নামে পুত্র-সন্তানের [ অপবাদ ] দেয়।

৯২। অথচ ইহা পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌র ] মর্যদার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়, যে তিনি পুত্র গ্রহণ করবেন ২৫৩০।

২৫৩০। "সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়" এই মূল নীতি পূর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে আয়াতে [ ১৯ : ৩৫ ] বিভিন্ন নবীর ব্যক্তিগত জীবনীর মাধ্যমে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে , এবং আরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, যীশু ছিলেন একজন মর্তের মানব যে একান্ত অনুগতভাবে আল্লাহ্‌র সেবা করতেন। এ ভাবেই যুগে যুগে বহু জাতি নিজেদের কুসংস্কার দ্বারা আল্লাহ্‌র অবমাননা করে থাকে যার ফলে তাদের ধ্বংস অবধারিত হয়ে দাঁড়ায়।

৯৩। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে এমন কেহ নাই যে, পরম করুণাময়ের নিকট [ তাঁর ] বান্দারূপে উপস্থিত হবে না।

৯৪। তিনি তাদের [ সকলের ] হিসাব নেন এবং [ সকলের ] সঠিক সংখ্যা গণনা করেন ২৫৩১।

২৫৩১। আল্লাহ্‌র কোনও সন্তান নাই, কোনও প্রিয়পাত্র নাই অথবা কোনও পরাশ্রয়ীও নাই। আল্লাহ্‌র নিকট তার সৃষ্ট জীব সকলেই সমান। তাঁর সৃষ্টির সকলকেই তিনি ভালোবাসেন ও সস্নেহে লালন পালন করেন। তিনি পরম করুণাময় ও দয়াময়। শেষ বিচারের দিনে প্রত্যেককে নিজস্ব দায় দায়িত্বের ভিত্তিতে তাঁর সিংহাসনের সামনে ন্যায় বিচারের জন্য দাঁড়াতে হবে। তিনি প্রত্যেককে বিশেষভাবে গণনা করেন।

৯৫। শেষ বিচারের দিনে তাদের প্রত্যেককে আল্লাহ্‌র নিকট একা একা উপস্থিত করা হবে।

৯৬। যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করে, পরম করুণাময় [আল্লাহ্‌ ] তাদের জন্য ভালোবাসা দান করবেন ২৫৩২।

২৫৩২। " যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে " তাঁদের অন্তরে আল্লাহ্‌র জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হয় এবং আল্লাহ্‌ও তাঁদের ভালোবাসেন। সে ক্ষেত্রে সৃষ্টির সকলেই তাঁকে ভালোবাসে। পৃথিবীতে এবং পরকালে , সে আল্লাহ্‌ এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের ভালোবাসা লাভ করবে। তাঁর জীবন হবে শান্তিময়। ভালোবাসা মানুষকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে এবং সৎকাজ আত্মাকে শান্তিতে ভরিয়ে দেয়। পূণ্য বা ব্যক্তিগত গুণাবলী আত্মার মাঝে শান্তি আনায়ন করে অপর পক্ষে পাপ আত্মার মাঝে ঘৃণার সৃষ্টি করে পরিণামে বিবাদ বিসংবাদের সৃষ্টি হয়।

৯৭। আমি তো তোমার ভাষায় [ কুর-আনকে ] সহজ করেছি যেনো এর সাহায্যে তুমি পূণ্যাত্মাদের সুসংবাদ দিতে পার এবং যারা বির্তক প্রিয় তাদের সর্তক করতে পার।

৯৮। তাদের পূর্বে কত [ অসংখ্য ] মানব গোষ্ঠিকে আমি বিনাশ করেছি ২৫৩৩। [ বর্তমানে ] তুমি তাদের একজনকেও দেখতে পাবে না অথবা [ এমনকি ] তাদের ফিসফিসানি কথাও শুনবে না।

২৫৩৩। আয়াত [ ১৯ : ৭৪ ] থেকে ধারাবাহিকভাবে যা বর্ণনা করা হয়েছে, এই আয়াতে তারই স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। পাপের পথে অগ্রযাত্রা , ভালোদের জন্য আল্লাহ্‌র পথ নির্দ্দেশ , আল্লাহ্‌র নিন্দার ভয়াবহ পরিণাম , পাপীদের জন্য অব্যহতি দান এবং শেষ পরিণতি হিসেবে যখন ব্যক্তিগত কাজের দায় দায়িত্ব নিয়ে স্রষ্টার সামনে ন্যায় বিচারের জন্য উপণীত হতে হবে। এ সকল ভাবকেই এই আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করে সূরাটিকে শেষ করা হয়েছে।