Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ০ জন
আজকের পাঠক ৯৬ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩২৭৭৩৭ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৪৭৬৫ বার
+ - R Print

সূরা লূকমান


সূরা লূকমান বা জ্ঞানী - ৩১

৩৪ আয়াত, ৪ রুকু , মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা : এই সূরাতে সকল কিছুর শেষ পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। জ্ঞান বা দিব্যজ্ঞান কি ? কোথায় তাকে অনুসন্ধান করা যায় ? এ জ্ঞান কি সময় ও প্রকৃতির রহস্য, পার্থিব জগতের উর্দ্ধে যে জগতের অবস্থান তার রহস্য সমাধান করে এবং আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য পৌঁছিয়ে দেয় ? উত্তর হবে হ্যাঁ। জ্ঞানী লুকমানের উপদেশ হচ্ছে, যদি মানব, আল্লাহ্‌র এবাদতের মাধ্যমে নিজস্ব জ্ঞানের পরিমন্ডলকে বিস্তৃত করতে চায়, জীবনের প্রতিটি কাজকে দয়া ও সহমর্মিতায় মহিমান্বিত করে, মিথ্যাকে পরিহার করে, যা কিছু আল্লাহ্‌র আইনকে লঙ্ঘন করে তা থেকে বিরত থাকে এই-ই হচ্ছে জীবনকে গুণান্বিত করার সঠিক ও সহজ রাস্তা। বিশ্ব প্রকৃতির মাঝেও এ সত্য নিহিত আছে।

এই সূরার অবতীর্ণ হওয়ার সময়ের কোনও বিশেষ বৈশিষ্ট্য নাই। এই সূরা প্রধানতঃ অবতীর্ণ হয় মক্কাতে অবস্থানের শেষার্ধে।

সার সংক্ষেপ : যারা পূণ্যের অনুসন্ধান করে, তারা আল্লাহ্‌র নির্দ্দেশিত পথের সন্ধান লাভ করে। যারা তা না করে আত্ম অহংকারে মত্ত থাকে তদের অনিবার্য পরিণতি ধ্বংস। সৃষ্টির সকল কিছুই এই সত্যির সাক্ষ্য দেয়। জ্ঞানী লুকমান ব্যাখ্যা করেন যে,জ্ঞানের মাধ্যমেই আল্লাহ্‌র প্রকৃত সেবা করা যায়। [ ৩১ : ১ - ১৯ ]।

দিব্য জ্ঞান মানুষকে ধৈর্যশীল ও দৃঢ় করে এবং সৃষ্টির মাঝে আল্লাহ্‌র আইনকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। আল্লাহ্‌র আইন প্রতিটি বস্তুর শেষ পরিণতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যার রহস্য জানেন একমাত্র আল্লাহ্‌ [ ৩১ : ২০ - ৩৪ ]।

সূরা লূকমান বা জ্ঞানী - ৩১

৩৪ আয়াত, ৪ রুকু , মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

০১। আলিফ্‌ , লাম , মিম।

০২। এগুলি জ্ঞানগর্ভ কিতাবের আয়াত ৩৫৮০-

৩৫৮০। এই সূরাটিতে জ্ঞান [Wisdom] সম্পর্কে বলা হয়েছে। কোরাণকে যথার্থভাবেই জ্ঞানগর্ভ কিতাব অথবা জ্ঞানের ভান্ডার বলা হয়েছে। নীচে ১২ নং আয়াতে লুকমানকে জ্ঞানী [Hakim] বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এই জ্ঞানী বা হাকিম কথাটি দ্বারা বোঝায় যে তিনি পার্থিব ও ঐশ্বরিক বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানেই শুধু সমৃদ্ধ ছিলেন না , তার প্রতিদিনের জীবন বিধান [Amal] ছিলো আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবং সঠিক। প্রতিটি বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিলো সঠিক, এবং বাস্তব , কিন্তু তা কখনও পূর্ণাঙ্গ ছিলো না, কারণ কোনও মানুষেরই জ্ঞান পূর্ণতা প্রাপ্ত পেতে পারে না। এই পূর্ণতা পেতে হলে ব্যক্তিকে একাধারে বীর যোদ্ধা, সমাজ সংস্কারক,মনুষ্য চরিত্রের জ্ঞান ও প্রকৃতির সকল জ্ঞানের সাথে ঐশ্বরিক জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। শুধুমাত্র পার্থিব সকল কিছু এবং সমাজ, সংসার ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিকে জ্ঞানে সম্পূর্ণ বলা চলে না। একমাত্র আমাদের সম্মানীয় নবীর চরিত্রে এরূপ সকল জ্ঞানের সম্পূর্ণতা পাওয়া যায়। একাধারে তিনি ছিলেন যুগান্তকারী সমাজ সংস্কারক, বিচক্ষণ রাষ্ট্র নেতা, অসীম সাহসিক যোদ্ধা,আবার আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও ঐশ্বরিক চেতনায় সমৃদ্ধ। স্নেহময় পিতা, প্রেমময় স্বামী, গৃহীরূপে তিনি ছিলেন অনন্য। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ যে কিতাব প্রেরণ করেন তা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক প্রয়োজনের সম্পূরক নয়। তা হচ্ছে মানুষের জীবনের আধ্যাত্মিক ও পার্থিব সকল প্রয়োজনের সঠিক দিক্‌ নির্দ্দেশনা। এই কারণেই জ্ঞানগর্ভ কিতাব [Kitab-ul- Hakim] হচ্ছে কোরাণের অপর নাম।

০৩। সৎকর্মশীলদের জন্য পথ নির্দ্দেশ ও দয়া স্বরূপ , ৩৫৮১-

৩৫৮১। এখানে কোরাণকে বলা হয়েছে " পথ নির্দ্দেশ " এবং জীবন পথের "দয়া স্বরূপ "। তবে শর্ত দেয়া হয়েছে কোরাণের পথ নির্দ্দেশ তারাই গ্রহণ করতে পারবে যারা সৎকর্মপরায়ণ বা পূণ্যাত্মা। অর্থাৎ পাপীদের আত্মায় কোরাণের বাণীর কোনও প্রভাবই পড়বে না।

০৪। যারা নিয়মিত সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত দান করে, এবং তাদের [ হৃদয়ে ] পরকালের উপরে রয়েছে স্থির বিশ্বাস ৩৫৮২।

৩৫৮২। এই আয়াতে পূণ্যাত্মাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। পূণ্যাত্মাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের জীবন ধারণের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে :

১) তাঁরা আল্লাহ্‌র দেয় কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায় এবং সালাত বা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য অনুসন্ধান করে;

২) "যাকাত " দেয় অর্থাৎ তাঁরা দানের মাধ্যমে তাদের সাহায্যের হাত মানুষের জন্য প্রসারিত করেন;

৩) তাঁহারাই সফলকাম অর্থাৎ তাঁরা শুধু যে এই পৃথিবীতেই শান্তি লাভ করবেন তাই-ই নয়, তাদের জন্য পরকালেও আছে নিশ্চিত শান্তি। কারণ তারা পরকালের জবাবদিহিতায় স্থির বিশ্বাসী।

০৫।এরাই তাদের প্রভুর নির্দ্দেশিত পথে আছে। এরাই হবে সফলকাম ৩৫৮৩।

৩৫৮৩। উপরে যাদের কথ উল্লেখ করা হয়েছে , তারা আল্লাহ্‌র আর্শীবাদ পুষ্ট কারণ তারা আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনকারী। তাঁরা এই পৃথিবীতেও সফলকাম এবং তাঁরা ভবিষ্যতের লক্ষ্যেও পৌঁছাতে সক্ষম।

০৬। কিন্তু মানুষের মধ্যে অনেকে না জেনে মিথ্যা কাহিনী ক্রয় করে থাকে ৩৫৮৪, মানুষকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য ও [ সে পথ নিয়ে ] হাসি ঠাট্টা করার জন্য। এদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি।

৩৫৮৪। এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট হচ্ছে : মক্কার মোশরেক ব্যবসায়ী নাদের-ইবনে-হারেস একবার পারস্য দেশ থেকে তাদের ঐতিহাসিক কাহিনী সমূহ ক্রয় করে আনে এবং মক্কার মোশরেকদের কোরাণে বর্ণিত আদ, সামুদ জাতির কথা না শুনে পারস্যের কাহিনী শোনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। তাদেরকেই এই আয়াতে ভর্ৎসনা  করা হয়েছে। যারা প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী তারাই একমাত্র পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে অনুধাবনে সক্ষম, এবং তারা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপকে গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করেন। অপরপক্ষে ,যারা নির্বোধ তারাই প্রকৃত সত্য অপেক্ষা মূর্খতাপূর্ণ কল্প কাহিনী শুনতে ভালোবাসে এবং আল্লাহ্‌ প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে।

০৭। এরূপ লোকের নিকট যখন আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেনো সে ইহা শুনতে পায় নাই , যেনো তার দুই কানেই বধিরতা রয়েছে। অতএব তার নিকট তুমি ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ ঘোষণা কর ৩৫৮৫।

৩৫৮৫। উপরে বর্ণিত নির্বোধ লোকেরা এমন ব্যবহার করে যেনো তারা এরূপ কথা জন্মেও শোনে নাই। তারা কোরাণের এ সব গুরুত্বপূর্ণ নির্দ্দেশনাকে হাসি ঠাট্টার বিষয়বস্তু রূপে কল্পনা করে। তাদের এই উপহাসে কারও কোনও ক্ষতি হবে না। ক্ষতি যা হবে তা ঐ উপহাসকারীর। কারণ তারা জীবনের উচ্চতর মহত্বর পরিপূর্ণতার দিক অনুধাবনে অক্ষম ,ফলে তারা আল্লাহ্‌র করুণা লাভেও অক্ষম হবে। আর এক্ষেত্রে তাদের অক্ষমতাই তাদের আল্লাহ্‌র করুণা থেকে বিচ্যুত করে। অজ্ঞতা এবং সেই সাথে দম্ভ অবাধ্যতা ও একগুয়েমী তাদের পতনের কারণ ঘটায়।

০৮। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে , তাদের জন্য রয়েছে [ বেহেশতের ] বাগানের অনাবিল শান্তি ; -

০৯। সেখানে তারা [ চিরকাল ] বাস করবে। আল্লাহ্‌র অঙ্গীকার সত্য। ক্ষমতায় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় ৩৫৮৬।

৩৫৮৬। আল্লাহ্‌ মহাপরাক্রমশালী। তিনি তাঁর ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম। আর এ ব্যাপারে কেহই তাঁকে বাঁধা দান করার ক্ষমতা রাখে না। তিনি অসীম জ্ঞানের অধিকারী প্রজ্ঞাময়। সুতারাং তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই অর্থবহ - তা কখনও উদ্দেশ্যহীন নয়। আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি নিখিল বিশ্বভূবনে হারিয়ে যাওয়ার নয়, তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবেই।

১০। আকাশ মন্ডলীকে তিনি খুঁটি ব্যতীতই সৃষ্টি করেছেন ৩৫৮৭ ; তোমরা তা দেখতে পাচ্ছ। তিনি পৃথিবীতে পর্বত সমূহ স্থাপন করেছেন , যা দৃঢ়ভাবে দাড়িয়ে আছে, যেনো ইহা [ পৃথিবী ] তোমাদের নিয়ে না কাঁপে ৩৫৮৮। এবং এর [ পৃথিবীর] মাঝে সব রকমের প্রাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন ৩৫৮৯। আমি আকাশ থেকে বৃষ্টিকে প্রেরণ করি ৩৫৯০ এবং ইহাতে উদ্‌গত করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর সৃষ্টবস্তু জোড়ায় জোড়ায় ৩৫৯১।

৩৫৮৭। দেখুন আয়াত [ ১৩ : ২ ] এবং টিকা ১৮০০।

৩৫৮৮। দেখুন আয়াত [ ১৬ : ১৫ ] এবং টিকা ২০৩৮।

৩৫৮৯। দেখুন আয়াত [ ২ : ১৬৪ ] ও টিকা ১৬৬।

৩৫৯০। লক্ষ্য করুন এই আয়াত শুরু হয়েছে " তিনি " [আল্লাহ্‌ ] দিয়ে। এখানে আল্লাহ্‌ নিজেকে তৃতীয় পুরুষ রূপে প্রকাশ করেছেন। যেখানে তাঁর সৃষ্ট পর্দাথের বর্ণনা আছে। এই সৃষ্ট পদার্থসমূহ যেমন : পাহাড়-পর্বত,প্রাণীকূল, বহু বছর থেকে পৃথিবীতে অবস্থান করছে একই ভাবে, যদিও এ সবের বিবর্তন ঘটছে অতি ধীর গতিতে। এ সব বর্ণনার সময়ে আল্লাহ্‌র পরিবর্তে সর্বনামের তৃতীয় পুরুষ " তিনি" ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আয়াতের শেষ লাইনে আল্লাহ্‌ নিজেকে প্রকাশের জন্য প্রথম পুরুষ " আমি" সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। এখানে যে সব সৃষ্ট পর্দাথের বর্ণনা করা হয়েছে, সে সব দ্রুত পরিবর্তনশীল , যেমন : বৃষ্টি এবং উদ্ভিদ জগত। আকাশ, পৃথিবী, প্রাণীকূলের সাথে মানুষের সম্পর্ক নৈর্বক্তিক। কিন্তু বৃষ্টি ও উদ্ভিদ জগতের সাথে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত কাছের এবং নির্ভরশীল। সুতারাং গুরুত্বকে বোঝানোর জন্য এবং মানুষের সাথে আল্লাহ্‌র সম্পর্ককে গভীরভাবে উপলব্ধির জন্য ' আমি ' সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

৩৫৯১। কল্যাণকর [Karim] শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে উপকারী তরুলতা গুল্ম ও বৃক্ষের পরিবর্তে, যা ' আল্লাহ্‌ মানুষের মঙ্গলের জন্য সৃষ্টি করেছেন।

১১। এই হলো আল্লাহ্‌র সৃষ্টির [রূপ ]। এখন আমাকে ৩৫৯২ দেখাও তো - তিনি ব্যতীত অন্যেরা কি সৃষ্টি করেছে। বরং সীমালঙ্ঘনকারীরা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।

৩৫৯২। পূর্বের আয়াতে ' আল্লাহ্‌' নিজেকে 'আমি' সর্বনাম দ্বারা প্রকাশ করেছেন, এই আয়াতে 'আমাকে' সর্বনাম ব্যবহার করেছেন যা আরও ব্যক্তিগত সম্পর্ক [ দেখুন আয়াত [ ২ : ৩৮ ] ও টিকা ৫৬ ] : কারণ এখানে আল্লাহ্‌ আহ্বান করেছেন মিথ্যা উপাস্যের পরিবর্তে তাঁর উপাসনা করতে।

রুকু - ২

১২। [ অতীতে ] আমি লুকমানকে বিজ্ঞান [ বিশেষ জ্ঞান ] দান করেছিলাম ৩৫৯৩। [ বলেছিলাম ] : " আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।" যারা [ এরূপে ] কৃতজ্ঞ হয়; সে তো তা করে নিজেরই আত্মার কল্যাণের জন্য। কিন্তু কেউ যদি অকৃতজ্ঞ হয়; আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত ; সকল প্রশংসার যোগ্য ৩৫৯৪।

৩৫৯৩। জ্ঞানী লুকমান , যার নাম অনুযায়ী সূরার নামকরণ হয়েছে , তাঁর কাহিনী আরবদের পুরুষানুক্রমিকভাবে হস্তান্তরিত পৌরাণিক কাহিনী। তাঁর জীবনী সম্বন্ধে খুব কমই জানা যায়। বলা হয় তিনি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকেন যে কারণে তাঁর নামের পূর্বে Mu'ammar বা দীর্ঘজীবী শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কেহ কেহ তাঁকে আ'দ সম্প্রদায়ের সমসাময়িক মনে করে। আ'দ সম্প্রদায়ের জন্য দেখুন টিকা ১০৪০ ও আয়াত ৬৫। তিনি ছিলেন প্রকৃত জ্ঞানী। তার সম্বন্ধে বলা হয় তিনি ছিলেন গরীব,অথবা ক্রীতদাস অথবা সুত্রধর এবং তিনি রাজকীয় ক্ষমতাকে প্রত্যাখান করেন। গ্রীক ট্রাডিশনে যেরূপ ঈশপের গল্প আছে , ঠিক সেরূপ কাহিনী প্রচলিত আছে লুকমান সম্পর্কে। লুকমান বা ঈশপ কারও ঐতিহাসিক পরিচিতি নাই সত্য, তবে ঐতিহ্যগতভাবে একের প্রভাব অন্যের উপরে লক্ষ্য করা যায়।

৩৫৯৪। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ১৪ : ৮ ]। এই আয়াতটির উপদেশ অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। আল্লাহ্‌ প্রদত্ত নৈতিক নীতিমালার অনুসরণ দ্বারা আল্লাহ্‌র কোনও উপকার নাই। উপকার হচ্ছে ব্যক্তির নিজস্ব সুখ শান্তি। আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত। পৃথিবীর মানুষের কাছে তাঁর কিছু চাওয়া বা পাওয়ার নাই। আল্লাহ্‌ সকল প্রশংসার যোগ্য। আমাদের প্রশংসা আল্লাহ্‌র প্রয়োজন নাই। আল্লাহ্‌র মাহাত্ম্য বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে ভাস্বর। আমাদের প্রশংসা বা নিন্দা তাকে উজ্জ্বল বা ম্লান করে না। আমরা আল্লাহ্‌র প্রশংসা করি আমাদের নিজস্ব আত্মিক উন্নতির জন্য। যেমন বিশাল উদ্ভিদ জগত- যা নিজ অস্তিত্বের জন্য সূর্যকিরণের ওপর নির্ভরশীল। কোন উদ্ভিদ কতটুকু ভোগ করলো তাতে সূর্যের কিছু যায় আসে না। কিন্তু উদ্ভিদের বৃদ্ধি, সজীবতা, সর্ব অস্তিত্বের জন্য সূর্য কিরণ অপরিহার্য। ঠিক সেরূপ আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কাছে আমাদের ইচ্ছাকে আত্মসমর্পিত করলেই আমরা আমাদের অবস্থানকে আমাদের মূল প্রকৃতির সাথে সমন্বিত করতে পারবো। আদিতে বিশ্বস্রষ্টা আমাদের প্রকৃতিকে করেছেন নির্মল। একমাত্র আল্লাহ্‌ প্রদত্ত নৈতিক নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমেই তার মূল নির্মলতা বজায় থাকে। আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দ্বারা আল্লাহ্‌র কোনও উপকার নাই। কারণ আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত। উপকার যা তা আমাদের নিজস্ব।কারণ কৃতজ্ঞ অন্তরে শান্তি বিরাজ করে, অকৃতজ্ঞ অন্তরে বিরাজ করে হাহাকার - যা দোযখের আগুনের সমতুল্য।

১৩। স্মরণ কর ! লুকমান উপদেশচ্ছলে তাঁর পুত্রকে বলেছিলো , ৩৫৯৫" হে আমার পুত্র ! আল্লাহ্‌র সাথে [অন্য কিছুকে] এবাদতে শরীক করো না। মিথ্যা উপাসনা [ শরীক ] অবশ্যই সর্বোচ্চ পাপ।"

৩৫৯৫। মহামতি লুকমান হচ্ছেন প্রকৃত জ্ঞানীর প্রতিকৃতি। যে জ্ঞান মানুষের আত্মাকে স্বর্গীয় আলোকে উদ্ভাসিত করে তিনি সেই জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। জাগতিক কর্মের মাধ্যমেই মানুষ আত্মিক উন্নতি লাভ করে এবং ঐশ্বরিক বা দিব্য জ্ঞানের অধিকারী হয়। সে ভাবে চিন্তা করলে জাগতিক জ্ঞান ও ঐশ্বরিক জ্ঞানের মাঝে বিভক্তি খুব স্পষ্ট নয়। তবে সকল জ্ঞানেরই উৎপত্তি হচ্ছে আল্লাহ্‌র ইচ্ছার সাথে নিজের ইচ্ছাকে সমন্বিত করার ইচ্ছা থেকে। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে [ ৩১ : ১২ ] এই জ্ঞানের স্ফুরণ ঘটে। এ কথার গুঢ় অর্থ হচ্ছে আমাদের অনুধাবন করতে হবে স্রষ্টার সাথে আমাদের সম্পর্ক এবং একমাত্র তাঁরই উপসনা করতে হবে [ ৩১ : ১৩ ]। এরপরে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে মানুষের প্রতি সদয় হওয়া যার শুরু হবে পিতামাতার প্রতি সদয় ব্যবহার দিয়ে [ ৩১ : ১৪ ]।

১৪। এবং আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দ্দেশ দিয়েছি। তার জননী কষ্টের উপরে কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে,এবং তাহার [বুকের ] দুধ ছাড়ানো হয় দুই বৎসর বয়েসে ৩৫৯৬। [ আমার আদেশ শোন ] " আমার প্রতি ও পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমার নিকটেই তোমাদের [শেষ] প্রত্যার্বতন। "

৩৫৯৬। মানব শিশু দুধ-দাঁত ওঠা সম্পূর্ণ হয় দুই বৎসর বয়েসে। সুতারাং বুকের দুধ পান করানোর সেটাই হবে সর্বোচ্চ সীমা। এই -ই আল্লাহ্‌ প্রদত্ত প্রকৃতির সয়ম সীমা। কিন্তু বর্তমান সভ্যতায় মানুষ এই সময় সীমাকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছে।

১৫। "কিন্তু যদি তারা তোমাকে আমার শরীক করার জন্য বাধ্য করে ৩৫৯৭ , যদিও সে সম্বন্ধে তোমার কোন জ্ঞান নাই, তবে তাদের কথা মানবে না। তবুও পৃথিবীতে তাদের সাথে [ শ্রদ্ধা ও ] ন্যায়ের ভিত্তিতে বসবাস করবে। যারা [ভালোবেসে ] অনুগত ভাবে আমার দিকে ফিরে আসে তাদের পথ অনুসরণ কর ৩৫৯৮। অবশেষে তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন আমার নিকটে এবং আমি তোমাদের বলে দেবো তোমরা যা করতে তার সত্যতা [ ও অর্থ] ৩৫৯৯। "

৩৫৯৭। বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্‌র এবাদত হচ্ছে মানুষের প্রধান কর্তব্য। এই কর্তব্যে কোনরূপ বাধা উপস্থিত হলে তা গ্রহণীয় নয়। সে বাধাকে উপেক্ষা করতে হবে বিনয় ও সুবিবেচনার মাধ্যমে। আল্লাহ্‌র প্রতি কর্তব্য করতে যেয়ে আমাদের কোনও অবস্থাতেই উদ্ধত ও একগুয়ে হওয়া চলবে না। আল্লাহ্‌র এবাদতের ব্যাপারে দৃঢ়তাই হবে আমাদের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এমন কি স্নেহময় ও শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতাও যদি এ ব্যাপারে বাধা দান করেন, সেক্ষেত্রেও আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে তাদের প্রতি হতে হবে দয়ালু, বিনয়ী ভদ্র এবং সুবিবেচক। যদি তারা এমন কিছু হুকুম করেন যা আল্লাহ্‌র হুকুমের বিরুদ্ধে যায়, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে বিনয়ের সাথে তাদের প্রত্যাখান করা। সেটাই হবে সন্তানের কর্তব্য। আয়াতটির উপদেশ হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্তব্যের ডাকে হতে হবে দৃঢ় সংকল্প এবং নির্ভিক। তবে কর্তব্য কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে হতে হবে বিনয়ী , ভদ্র, দয়ালু এবং সুবিবেচক।

আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কিছুর উপাসনার অর্থই হচ্ছে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনা করা। আর যা কিছু মিথ্যা তাই-ই আত্মার জ্যোতিকে নিভিয়ে দেয়। আত্মাকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করে। স্রষ্টা মানুষের আত্মাকে সৃষ্টি করেছে পূত পবিত্র রূপে। তাই যা কিছু মিথ্যা তা সবই আমাদের প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ - যে প্রকৃতি অনুযায়ী স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আত্মাকে যখন মিথ্যার দ্বারা কলুষিত করে ফেলা হয়, সেখানে স্বর্গীয় আলোর প্রবেশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রকৃত জ্ঞান বা ঐশী জ্ঞান অন্তরে প্রবেশে বাধা পায়।

৩৫৯৮। জীবনে চলার পথে কর্তব্য কর্মের সাথে বিরোধ উপস্থিত হলে, আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে , আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত দায়িত্ব কর্তব্যের প্রতি অবিচল থাকা। যারা আল্লাহ্‌কে ভালোবাসে, তাদের জন্য এই-ই একমাত্র বিধান। আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য দেখাতে যেয়ে যদি তাদের পিতামাতা বা কর্তৃপক্ষ ও শাসক গোষ্ঠির অবাধ্য হতে হয় তবে তাই-ই তাদের করা কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে তাদের অবাধ্যতা তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা বা আবেগ অনুভূতির ফসল নয়। অপর পক্ষে তা হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য থেকে উৎসারিত, যা জীবনের সর্বোচ্চ ভালোবাসার প্রকাশ। কারণ আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসা জীবনকে করে মহিমান্বিত। আল্লাহ্‌র প্রতি ভালোবাসা ও কর্তব্যে আমাদের অবিচল থাকতে হবে, কারণ " তোমাদের ও আমাদের সকলকে আল্লাহ্‌র নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে শেষ পর্যন্ত।" সুতারাং আমরা সর্বান্তঃকরণে আল্লাহ্‌ ইচ্ছা বা বিধানকে অনুসরণ করবো এবং তোমরা এমন কিছুর হুকুম দেবে না যা আল্লাহ্‌র ইচ্ছার বিপরীত হবে।

৩৫৯৯। আল্লাহ্‌র প্রতি কর্তব্যের সাথে যখন বিরোধ উপস্থিত হয়, সাধারণ মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ জাগতিক মান-সম্মান, বিষয়-বুদ্ধি, স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধন ইত্যাদির দ্বারা পরিচালিত হয়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। সে এসব জাগতিক ব্যাপারকে আল্লাহ্‌র প্রতি কর্তব্যের উপরে স্থান দিয়ে থাকে। পৃথিবীর জীবনই শেষ কথা নয়। মৃত্যুর পরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি আত্মাকে তাঁর প্রতিটি কাজ, মূল্যবোধ , কাজের নিয়ত প্রভৃতি সম্বন্ধে প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি করা হবে। আমরা পার্থিব জীবনের সকল ব্যাপারে মর্মার্থ ও গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সমর্থ হব, যাদের আমরা ভালোবাসি যেমন : পিতা-মাতা, আল্লাহ্‌র প্রতি কর্তব্য কর্মের জন্য তাদের অবাধ্য হওয়া ,আবার একই সাথে তাদের ভালোবাসা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। আল্লাহ্‌র হুকুম আমাদের জন্য পরীক্ষা বৈকি। পৃথিবীতে এভাবেই আমাদের চরিত্রের প্রকৃতিগত ধর্ম আল্লাহ্‌ পরীক্ষা করে থাকেন।

১৬। "হে বৎস ! " [লুকমান বলেছিলো ] , ৩৬০০ : " [বস্তুটি ] যদি একটি সরিষা পরিমাণও হয় এবং উহা কোন শিলাগর্ভে অথবা আকাশ মন্ডলীর [যে কোন স্থানে ] অথবা মৃত্তিকার নীচে [ গুপ্ত থাকে ] , আল্লাহ্‌ তাহাও উপস্থিত করবেন ৩৬০১। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সুক্ষ রহস্য বুঝতে সক্ষম [এবং সে সম্বন্ধে ] সবিশেষ অবগত ৩৬০২।

৩৬০০। এখানে আয়াত ১৪-১৫ জ্ঞানী লুকমানের প্রত্যক্ষ উপদেশ নয়। জ্ঞানী লুকমানের উপদেশের মধ্যে এই দুই আয়াত হচ্ছে তাঁর উপদেশের ধারাবিবরণী স্বরূপ। লুকমান পিতা হিসেবে পুত্রকে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের আনুগত্যের সীমানার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন। মনে করা হয় এই আয়াতগুলি লুকমানের দেয়া সাধারণ উপদেশ যা সকলের জন্য প্রযোজ্য , শুধুমাত্র তাঁর ছেলের জন্য নয়। যদিও সকল উপদেশ লুকমানের দেয়া, কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে , তা হচ্ছে ঐশ্বরিক জীবন বিধান। জ্ঞানী লুকমান এই জ্ঞান আল্লাহ্‌র নিকট থেকে লাভ করেন - যা তিনি স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন।

৩৬০১। কোনও জিনিষের ক্ষুদ্রত্ব বোঝানোর জন্য সরিষা দানার উপমা ব্যবহার করা হয়। যে কোনও ক্ষুদ্র জিনিষ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। কিন্তু মহান আল্লাহ্‌র কাছে তা হারিয়ে যায় না। একটি ক্ষুদ্র সরিষার দানা যা সাধারণ ভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না, তা যদি বিশাল শিলার নীচে চাপা পড়ে বা গিরিগুহাতে লুক্কায়িত থাকে, তবে তা মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে যায়। মানুষ চেষ্টা করেও তা খুঁজে পাবে না। কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে কিছুই হারায় না। তিনি প্রতিটি জিনিষ সম্পর্কেই জ্ঞাত। আল্লাহ্‌র ক্ষমতার প্রকাশকে বোঝানোর জন্য সরিষার দানার উপমা ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যক্ত অব্যক্ত মানুষের সকল কথা, চিন্তাধারা,ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত কাজ বা মনের ভাব সব কিছু সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ জ্ঞাত। তাঁর কাছে কিছুই গোপন থাকে না বা হারিয়ে যায় না।

৩৬০২। 'Latif' - বা সুক্ষদর্শী হচ্ছে আল্লাহ্‌র এক উপাধি। দেখুন টিকা ২৮৪৪ এবং আয়াত [ ২২ : ৬৩ ]।

১৭। " হে বৎস ! সালাত প্রতিষ্ঠিত করো, ন্যায় কাজের আদেশ করো, এবং অন্যায় কাজকে নিষেধ করো। তোমার প্রতি যে [বিপদই ] ঘটুক না কেন, ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করবে। নিশ্চয়ই তা হবে কার্য [পরিচালনার উদ্দেশ্যের ] দৃঢ়সংকল্প।

১৮।" [ অহংকারে ] তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না ৩৬০৩। পৃথিবীতে দম্ভভরে বিচরণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

৩৬০৩। নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস তা অহংকার পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু যখনই নিজস্ব কোনও গুণ বা গরিমার জন্য অন্যকে ছোট করে দেখার প্রবণতা জন্মে , তখনই তা অহংকারের পর্যায়ে পড়ে এবং তা পাপ। আল্লাহ্‌ উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।

১৯। "নিজের চলনে মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর, এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে স্বরের মধ্য গর্দভের স্বরই সর্বাপেক্ষা কর্কশ।" ৩৬০৪

৩৬০৪। জ্ঞানী লুকমানের জীবন-দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর উপদেশাবলীর মধ্যে, এই দর্শন ছিলো এরিস্টোটলেরও এবং প্রকৃত পক্ষে এই জীবন দর্শন হচ্ছে ইসলামিক জীবনাদর্শন। অর্থাৎ প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিদের জ্ঞানের উপলব্ধি একই - কারণ তা আল্লাহ্‌র নিকট থেকে প্রবাহিত হয়। যারাই মানুষের সাথে আল্লাহ্‌র সর্ম্পক, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে মানুষের অবস্থানকে নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের মাঝেই আল্লাহ্‌র দেয়া ঐশ্বরিক জ্ঞান স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রবাহিত হয়। তাই তো দেখি যুগে যুগে মহামানবদের প্রচারিত বাণীর মধ্যে সামঞ্জস্য। কারণ তা ঐশিজ্ঞান, আল্লাহ্‌র নিকট থেকে প্রবাহিত। জ্ঞানী লুকমানের উপদেশ হচ্ছে : উদ্ধত ভাবে দ্রুত পৃথিবীতে চলাফেরা করবে না, আবার অতিরিক্ত ধীরগতি বা থেমেও থাকবে না, পদক্ষেপ বা চলাফেরা হবে সংযত। অতিরিক্ত কথা বলবে না, বা একদম নিঃশ্চুপ থাকবে না। কথা বলার সময়ে কণ্ঠস্বর বেশী উঁচু করবে না আবার নিস্তেজ বা উৎসাহশূন্য হবে না। এত বেশী আত্মবিশ্বাসী হবে না যা অহংকারের পর্যায়ে পড়ে আবার ভীতও হবে না অর্থাৎ সকল ব্যাপারে মধ্যপথ অবলম্বী হবে।

যদি তুমি বিপদ বিপর্যয়ে ধৈর্য্য অবলম্বন কর, তবে তা তোমার চরিত্রে স্থিরতা , বিশ্বস্ততা ও দৃঢ়তা আনায়ন করবে। ফলে তুমি সাহসের সাথে জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে পারবে। যদি তুমি বিনয়ী হও তবে তা তোমাকে দম্ভপূর্ণ আচরণ থেকে রক্ষা করবে, কিন্তু সেই সাথে তোমার উৎসাহ উদ্দীপনা , মনের দৃঢ়তা ও বিশ্বাসের ভিত্তিকে সমুন্নত রাখবে।

রুকু - ৩

২০। তোমরা কি দেখ না, আল্লাহ্‌ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন ৩৬০৫ এবং তোমাদের প্রতি পূর্ণ করে দিয়েছেন তাঁর প্রকাশ্য ও অদৃশ্য [ উভয় ] নেয়ামত সমূহ ৩৬০৬। তবুও মানুষের মধ্যে অনেকে আছে যারা আল্লাহ্‌র সম্বন্ধে তর্ক করে, তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথের নির্দ্দেশ এবং না কোন দীপ্তিমান কিতাব ৩৬০৭।

৩৬০৫। এই বিশাল বিশ্ব ভূবন আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর কারও সাহায্যের প্রয়োজন হয় নাই। আল্লাহ্‌র করুণা অসীম, তিনি মানুষকে ক্ষমতা দান করেছেন যেনো, বিশ্ব প্রকৃতির সকল শক্তিকে সে পদানত করতে পারে। মানুষ তাঁর বিচার শক্তি ও কল্পনা শক্তি প্রয়োগ দ্বারা প্রকৃতির সকল রহস্য উদ্ঘাটনে সমর্থ। মানুষকে আল্লাহ্‌ প্রকৃতির সকল কিছু জয় করার ক্ষমতা দান করেছেন। শুধু তাই নয়, মানুষের জন্য মৃত্যুর পরে রয়েছে অন্য আর এক জীবন।

৩৬০৬। "প্রকাশ্য ও অদৃশ্য অনুগ্রহ" - আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বিশ্ব ভূমন্ডলে সর্বত্র ছড়ানো। তাঁর অনুগ্রহের কোন সীমা পরিসীমা নাই। কখনও আমরা তা অনুভব করি, আবার কখনও তা অনুধাবন করতে পারি না। মানুষের জ্ঞান সীমিত। সুতারাং আল্লাহ্‌র সকল অনুগ্রহ মানুষের পক্ষে উপলব্ধি করা বা অনুধাবন করা এক অসম্ভব ব্যাপার। মানুষের জানা বা বোঝার বাইরেও রয়েছে মানুষের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের বিশাল ভান্ডার। যারা আধ্যাত্মিক জগতে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন , তারা সামান্য পরিমাণে অনুভবে সমর্থ হন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের এই বিশাল ভান্ডার। তবে অধিকাংশই আমাদের অগোচরে থেকে যায়। আমরা বুঝি বা না বুঝি, আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ মানুষের কল্যাণের জন্য সকল সময় নিয়োজিত থাকে।

৩৬০৭। যারা অজ্ঞ, তারা বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্‌র উপস্থিতি অনুভবে ব্যর্থ। তারা তাদের অর্ন্তদৃষ্টিকে ব্যবহারে অসমর্থ, তাঁরা যা ব্যবহার করে তা হচ্ছে তাদের আবেগ। আর আবেগের তাড়নায় তারা সত্যকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে অসমর্থ হয়। ফলে তারা সঠিক পথ নির্দ্দেশ পায় না। যেহেতু তারা সত্যকে প্রত্যাখান করে থাকে, সেই কারণে আল্লাহ্‌র প্রেরিত প্রত্যাদেশের সুফল এবং আধ্যাত্মিক অর্ন্তদৃষ্টি লাভে অসমর্থ হয়। এরাই আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে মিথ্যা বিতন্ডা করে।

২১। যখন তাদের বলা হয়, " আল্লাহ্‌ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অনুসরণ কর।" তারা বলে : " না, আমরা বরং আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি তারই অনুসরণ করবো ৩৬০৮।" শয়তান যদি তাদের [ জ্বলন্ত] আগুনের শাস্তির দিকে আহ্বান করে তবুও কি [ তারা তা করবে ] ?

৩৬০৮। এ সব লোকেরা আধ্যাত্মিক জগত সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এরা বুঝতে অক্ষম যে আমাদের চর্মচক্ষুর অন্তরালে মানুষের আধ্যাত্মিক জগত প্রতিদিন পরিপূর্ণতার দিকে অগ্রসরমান। কারণ এ সব ব্যক্তি আধ্যাত্মিক দিক থেকে মৃত। সে কারণে তারা পূর্বপুরুষদের মিথ্যা আনুষ্ঠানিকতাকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়। এ সব আধ্যাত্মিক ভাবে মৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশ পাপে আসক্ত হয় ফলে তারা দোযখের দিকে অগ্রসরমান।

২২। আর যে ব্যক্তি আপন সত্ত্বাকে আল্লাহ্‌র নিকট সমর্পন করে এবং সৎকর্মপরায়ণ হয়, নিশ্চয়ই সে তো দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছে এক মজবুত হাতল ৩৬০৯। সকল কাজের পরিণাম ও সিদ্ধান্ত আল্লাহ্‌র অধীনে ৩৬১০।

৩৬০৯। দেখুন [ ২ : ২৫৬ ] ও টিকা ৩০১।

৩৬১০। দেখুন [ ২২ : ৪১ ]। সর্ব কাজের হিসাব দিতে হবে আল্লাহ্‌র নিকট। সকল কিছুই তাঁর কাছেই প্রত্যার্পন করবে। তিনিই আদি ও তিনিই অন্ত। জীবনের শেষ লক্ষ্য তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন।

২৩। যদি কেউ ঈমানকে প্রত্যাখান করে , তবে তার প্রত্যাখান যেনো তোমাকে দুঃখ না দেয়। আমার নিকটেই ওদের প্রত্যাবর্তন হবে ৩৬১১। তখন আমি তাদের জানিয়ে দেবো তাদের কাজের সত্যতা সম্বন্ধে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ভালোভাবে জানেন যা কিছু [ মানুষের ] অন্তরে রয়েছে।

৩৬১১। এই আয়াতটিতে রসুলকে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু এর আবেদন সর্বসাধারণের জন্য। সাধারণ মানুষ যখন আল্লাহ্‌র বিধানকে প্রত্যাখান করে, তা যেনো পূণ্যাত্মাদের কষ্টের কারণ না হয়। যারা পূণ্যাত্মা ও আল্লাহ্‌র রাস্তায় কাজ করেন, তারা তাদের যা কর্তব্য তা অবিচলভাবে করে যাবে এই আল্লাহ্‌র হুকুম। কাজের সফলতা বা বিফলতা তাদের চিন্তা করার বিষয় নয়। ফলাফল তারা আল্লাহ্‌র হাতে ন্যস্ত করবে। প্রতিটি আত্মাকেই তার কর্মের হিসাব দাখিল করতে হবে পরলোকে। আল্লাহ্‌ সকল কিছুই অবগত, পৃথিবীর কিছুই তাঁর অগোচরে থাকে না। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল সৃষ্টিই তার অসীম জ্ঞানের স্বাক্ষর বহন করে।

২৪। আমি তাদের [ দুনিয়াতে ] সামান্য সময়ের জন্য আনন্দপোকরণ মঞ্জুর করবো ৩৬১২। অবশেষে তাদের তাড়িত করবো নিষ্ঠুর শাস্তির দিকে।

৩৬১২। দেখুন আয়াত [ ২ : ১৬ ]। অনেক সময়েই দেখা যায় , যারা পাপী তারা পৃথিবীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ পূণ্যাত্মাদের থেকে বেশী ভোগ করে থাকে। এদের কথাই এই আয়াতে বলা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তাদের প্রচুর জীবনোপকরণ দান করে থাকেন। তাদের পাপের দরুন শাস্তি না দিয়ে, ক্ষণকালের অবসর দান করা হয়, যেনো তারা অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের সুযোগ লাভ করে। যদি তারা তা না করে তবে তাদের যে শেষ পরিণতি হবে, সে শাস্তি থেকে তারা কোনও অবস্থাতেই অব্যহতি লাভ করবে না বা প্রশমিত করতে পারবে না [ দেখুন ১৪ : ১৭ ]। পরকালে তাদের আর অনুতাপের সুযোগ দান করা হবে না।

২৫। যদি তুমি তাদের জিজ্ঞাসা কর কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ৩৬১৩ ? তারা নিশ্চয় করে বলবে " আল্লাহ্‌।" বল : " সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌রই। " ৩৬১৪। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।

৩৬১৩। দেখুন [ ২৩ : ৮৪-৮৯ ] আয়াত এবং [ ২৯ : ৬১ ] ও টিকা ৩৪৯৩। সাধারণ মানুষ স্বীকার করে যে, এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড আল্লাহ্‌র সৃষ্টি , কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে অক্ষম যে, স্রষ্টার অপরিসীম করুণা, ও অনুগ্রহ দিবারাত্রি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে রক্ষা করে চলেছে , লালন-পালন করে চলেছে। যদিও তারা এ কথা প্রায়ই ভুলে যায় যে, আল্লাহ্‌ই একমাত্র উপাস্য। ফলে তারা মিথ্যা উপাস্যের পিছনে ধাওয়া করে, যা বেশীর ভাগ সময়েই হয় তাদের নিজস্ব মনগড়া। আল্লাহ্‌র প্রতি তাদের যে কর্তব্য তা তারা সঠিক ভাবে পালন করে না। যেমন : অসুখ বিসুখ, বিপদ-বিপর্যয় অনেকেই পীর -ফকির জ্যোতিষ ইত্যাদির সাহায্য কামনা করে থাকে।

৩৬১৪। আমাদের এটুকুই সান্তনা যে, অধিকাংশ লোক আল্লাহ্‌কে বিশ্ব স্রষ্টারূপে উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটুকু স্বীকারোক্তির পরে তারা আর বেশীদূর অগ্রসর হতে পারে না। তারা তাদের কর্তব্য বুঝতে অক্ষম।

২৬। আকাশ ও পৃথিবীর সকল কিছুই আল্লাহ্‌র অধীনে। তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি সকল অভাবশূন্য এবং সকল প্রশংসার যোগ্য ৩৬১৫।

৩৬১৫। দেখুন [ ৩১ : ১২ ]। মহামতি লুকমানের দর্শন শিক্ষা দিয়ে আয়াতটি শুরু হয়েছে , যেখানে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। তখনই আমরা স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে সক্ষম হব, যখন আমরা স্রষ্টাকে আমাদের হৃদয়ে অনুভব করতে সক্ষম হব। তাঁর করুণা ও ভালোবাসা হৃদয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হব। শুধু তখনই আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সৎ কাজে ও মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হব। আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত। আমাদের কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রয়োজন নাই। তিনি আমাদের কর্মের উপরে নির্ভরশীল নন। এই বার্তাকেই বিভিন্ন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন আয়াতে। এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্‌র করুণা ও অনুগ্রহ মানুষের পক্ষে হিসাব করে শেষ করা সম্ভব নয় অথবা মানুষের কোনও প্রযুক্তিও তা ধারণ করতে সক্ষম হবে না।

২৭। পৃথিবীর [সকল ] বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং [ সকল ] সমুদ্র যদি [ কালি ] হয়, এবং সাথে যদি আরও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহ্‌র [ করুণার ] বাণী লিখে শেষ করা যাবে না ৩৬১৬। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ক্ষমতায় পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ।

৩৬১৬। " আল্লাহ্‌র বাণী লিখে শেষ করা যাবে না।" আল্লাহ্‌র মহিমা প্রকাশক বাণী সমূহ এত অসীম যে তা মানুষের ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যদি পৃথিবীর সমস্ত গাছকে কলমে রূপান্তরিত করা হয়, এবং সমস্ত সাগরের যা আয়তন তাকে সাতগুণ করা হয় এবং তা কালিতে রূপান্তরিত করা হয়, তবুও আল্লাহ্‌র বাণী লিখে শেষ করা সম্ভব নয় এখানে সাতের সংখ্যা উদাহরণ স্বরূপ ব্যবহার করা হয়েছে, সীমিত করে দেয়া উদ্দেশ্য নয়। তাঁর বাণীর সেটুকুই প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, যতটুকু মানুষ বুঝতে পারে। কারণ আল্লাহ্‌র জ্ঞান, করুণা, দয়া, অনুগ্রহ অসীম, অতল যা মানুষের আয়ত্বের বাইরে। আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতা, মহিমা ও প্রজ্ঞার প্রশংসা করা মানুষের সর্বোচ্চ জ্ঞান , ক্ষমতা, ভাষা ও প্রযুক্তির পক্ষেও সম্ভব নয়। এই আয়াতে মহান আল্লাহ্‌ তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, তাঁর ক্ষমতার ব্যবহার এবং তাঁর নেয়ামত যে অসীম ও অফুরন্ত - কোনও ভাষার সাহায্যে তা প্রকাশ করা চলে না ,কোনও কলম দিয়ে তা লিপিবদ্ধ করা চলে না, এ কথাটুকুই সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন।

২৮। এবং তোমাদের সকলের সৃষ্টি অথবা পুণরুত্থান , একটি মাত্র আত্মার সৃষ্টি ও পুণরুত্থানের সমতুল্য ৩৬১৭। নিশ্চয় আল্লাহ্‌-ই [ সব ] শোনেন এবং দেখেন।

৩৬১৭। এই আয়াতে আল্লাহ্‌র অসীমত্ব, ক্ষমতা ও শক্তিকে উদাহরণের মাধ্যমে উত্থাপন করা হয়েছে। তিনি সকল কিছুই সৃষ্টি করার ও প্রতিপালন করার ক্ষমতা রাখেন। একটি মাত্র প্রাণ সৃষ্টি ও পুণরুত্থানের যে ইতিহাস, আবাহমানকাল থেকে যত প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে তা ঐ একই ইতিহাসের চক্রাকারে আবর্তন মাত্র। এর দ্বারা আল্লাহ্‌র সর্বব্যপী ও সর্বোতমুখী জ্ঞান ও ক্ষমতার-ই শুধু প্রকাশ ঘটে না , তিনি যে প্রতিটি আত্মার প্রতি যত্নশীল এবং প্রতিটি আত্মা যে তাঁর নিকট মূল্যবান , তাই-ই প্রমাণিত হয়। সুতারাং প্রতিটি আত্মার ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব রয়েছে স্রষ্টার কাছে। এখানেই বিশ্ব স্রষ্টার সাথে মানুষের সম্পর্কের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।

২৯। তুমি কি দেখ না আল্লাহ্‌ রাত্রিকে দিনের সাথে মিলিয়ে দেন ৩৬১৮ এবং দিনকে রাত্রির সাথে মিলান। তিনি সূর্য এবং চন্দ্রকে আপন [ আইনের ] অধীন করেছেন , প্রত্যেকে পূর্ব নির্ধারিত নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপন কক্ষে চলছে এবং তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ সে সম্বন্ধে ভালোভাবেই জানেন।

৩৬১৮। দেখুন আয়াত [ ২২ : ৬১ ] ও টিকা ২৮৪১। কোটি কোটি মানুষকে আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন তাদের প্রতিপালন করছেন অনায়াসে। তিনি প্রতিটি আত্মার প্রতি যত্নশীল। প্রতিটি আত্মাকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মূল্যায়ন করেন। এও তো আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতার স্বাক্ষর। যা উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ নং আয়াতে। আল্লাহ্‌র সাথে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কি ? এই সম্পর্ককে বোধগম্য করার জন্য এখানে প্রাকৃতিক আইনের উপমার ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ ভাবে দিন ও রাত্রির মধ্যে কোনও সুনির্দ্দিষ্ট সীমারেখা নাই। কখনও দিন বড় হয় এবং রাত্রির এক অংশ গ্রাস করে , আবার কখনও রাত্রি বড় হয় এবং তা দিনের একাংশ গ্রাস করে। সূর্য্য ও চন্দ্র তাদের উদয় ও অস্তের নির্দ্দিষ্ট আইন মেনে চলে। যদিও সাধারণ মানুষের নিকট প্রকৃতির এ সব আইনকে মনে হবে অনন্ত কাল স্থায়ী , কিন্তু বিরাট বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের তুলনায় তাদের স্থায়ীত্ব খুবই ক্ষণস্থায়ী। ঠিক সেরূপ আমাদের আধ্যাত্মিক জগতের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ আমাদের গোচরে আসে না। বিভিন্ন শ্রেণী চক্ষুর অন্তরালে পরস্পর মিশে যায়- তাদের সনাক্ত করার কোনও উপায় নাই। আমাদের পার্থিব কর্মকান্ডকেও সঠিকভাবে আমরা পাপ বা পূণ্য বলে চিহ্নিত করতে পারি না কারণ প্রতিটি কর্মের মূল্যায়ন হবে নিয়ত বা উদ্দেশ্য ও পরিবেশের পটভূমিতে। পৃথিবীতে পাপ ও পূণ্যের ধারা পাশাপাশি প্রবাহমান। কিন্তু আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের প্রতিটি কাজের মূল্যায়ন অত্যন্ত সহজ। কারণ আমাদের কাজের উদ্দেশ্য বা নিয়ত এবং পটভূমি তাঁর কাছে খোলা বই এর মত পরিষ্কার। " তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ সে সম্পর্কে ভালোভাবেই  জানেন। "

৩০। এর কারণ, আল্লাহ্‌ই [ একমাত্র ] সত্য এবং তাঁকে ব্যতীত আর যার কাছেই তারা প্রার্থনা করে তা মিথ্যা। এবং কারণ আল্লাহ্‌ই সর্বোচ্চ সুমহান ৩৬১৯।

৩৬১৯। দেখুন [২২ : ৬২ ] আয়াত এবং টিকা ২৮৪২ এবং ২৮৪৩। বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে,সৃষ্টির অতি সুক্ষ তারতম্য ও জটিলতার মাঝে এক সুক্ষ সমন্বয় বিদ্যমান। প্রকৃতির প্রতিটি পরিবর্তন নির্দ্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে ঘটে থাকে যাকে আমরা বিজ্ঞানের সুত্র বলে থাকি। এই আইন প্রকৃতির সকল বস্তু অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ আলোর কথাঃ আলোর যা ধর্ম তা পৃথিবীর যে কোনও স্থানেই এক এমন কি গ্রহগ্রহান্তরেও তা অপরিবর্তনীয়। এ কথা প্রতিটি বস্তুর প্রতিই প্রযোজ্য। এই সত্য স্রষ্টার একত্বের দিকে নির্দ্দেশ দান করে। স্রষ্টা এক ও অদ্বিতীয়। তিনিই অনন্ত সত্য। তার সমকক্ষ কাউকে কল্পনা করার অর্থই হচ্ছে মিথ্যার উপাসনা করা। আমাদের কল্পনার জগতের বহু উর্দ্ধে তাঁর অবস্থান।

রুকু - ৪

৩১। তুমি কি দেখ নাই জাহাজ সকল আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করছে যার দ্বারা তিনি তোমাদের তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারেন ? যারা সর্বদা ধৈর্যশীল [ অধ্যবসায়ী ] তাদের জন্য এগুলির মধ্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে ৩৬২০।

৩৬২০। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করেছে। প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার করতে শিখেছে। প্রকৃতির মাঝে অন্তর্নিহিত যে শক্তি সে সবই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি ও মানুষের কল্যাণের জন্য তা মানুষের বশীভূত করে দেয়া হয়েছে। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে পারে। কারণ এ ক্ষমতা আল্লাহ্‌ তাঁকে দান করেছেন। এ সবই যে স্রষ্টার অসীম অনুগ্রহ মানুষের জন্য, সাধারণ মানুষ তা অনুধাবন করতে পারে না। তারাই স্রষ্টার নিদর্শন ও অনুগ্রহকে অন্তরে উপলব্ধি করতে পারে যারা দৃঢ়, অবিচলিত, অধ্যবসায়ী, [ সবর অবলম্বনকারীর বৈশিষ্ট্য ] এবং যারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ। এখানে "Sabbar" শব্দটি "Sabr" শব্দটির তীব্রতা বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। "Sabr" শব্দটির জন্য দেখুন টিকা ৬১। আল্লাহকে আত্মার মাঝে অনুভবের জন্য ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ হওয়া হচ্ছে চরিত্রের পূর্বশর্ত। প্রকৃত মুসলমানের চরিত্রে এ দুটি চারিত্রিক গুণাবলী অবশ্যই থাকতে হবে।

৩২। যখন উত্তাল তরঙ্গমালা [ মেঘের ] চাঁদোয়ার মত তাদের ঢেকে দেয়, তারা একান্ত অনুগতভাবে আল্লাহকে ডাকে ৩৬২১। কিন্তু যখন তিনি তাদের নিরাপদে স্থলভাগে পৌঁছিয়ে দেন, তাদের মধ্যে কেহ কেহ [ন্যায় -অন্যায়ের ] মাঝামাঝি থেমে থাকে ৩৬২২। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞ [ হতভাগ্য ] ব্যতীত কেহ আমার নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখান করে না।

৩৬২১। দেখুন আয়াত [৭ : ২৯ ] যেখানে কৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের বর্ণনা আছে, যারা সর্বদা সকল অবস্থায় সুখে-দুঃখে আল্লাহ্‌র সাহায্য কামনা করে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ চিত্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। এই ধন্যবাদ জ্ঞাপনের ভাষা হচ্ছে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহসমূহের সঠিক ব্যবহার এবং আল্লাহ্‌র দেয় কর্তব্যে অবিচল থাকা। এই আয়াতে [ ৩১ : ৩২ ] কৃতজ্ঞদের বিপরীতে আর এক শ্রেণী লোকের উল্লেখ করা হয়েছে যারা শুধুমাত্র বিপদে পড়লেই আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে। তাদের এই বিপদ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়েছে সমুদ্রে অবস্থানরত কোন নৌযান যখন সামুদ্রিক ঝড়ে আক্রান্ত হয় তার অধিবাসীদের অবস্থা। এরূপ প্রকৃতির দুর্যোগ আরও হতে পারে যেমন : ভূমিকম্প, টর্নেডো ইত্যাদি। এরূপ দুর্যোগের ক্ষেত্রে এ সব লোক সর্বান্তঃকরণে আল্লাহ্‌র সাহায্য কামনা করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্‌র করুণায় বিপদ যখন অতিক্রম করে যায় , তারা আবার আল্লাহ্‌র সম্বন্ধে কোনও আকর্ষণ অনুভব করে না এবং পাপের প্রতি মনোযোগ দেয়।

৩৬২২। যারা আল্লাহ্‌র পথে থাকে না, তারা ভালো ও মন্দের মধ্যে সর্বদা দোদুল্যমান থাকে। তারা ভালোর বিরোধিতা করে না সত্য, কিন্তু মন্দকেও ত্যাগ করে না, যারা সর্বদা আল্লাহ্‌র নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে, এ সব লোক তাদের বিপরীত ধর্মী হয়। এ সব লোককেই বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি বলা হয়েছে।

৩৩। হে মানব সম্প্রদায় ! তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রতি কর্তব্য কর এবং ভয় কর সেই [ অনাগত ] দিনের যেদিন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না ; সন্তানও তার পিতার কোন উপকারে আসবে না ৩৬২৩। অবশ্যই আল্লাহ্‌র অঙ্গীকার সত্য। সুতারাং পার্থিব জীবন যেনো তোমাদের কিছুতেই প্রতারিত করতে না পারে। প্রধান প্রতারক [ শয়তান ] যেনো তোমাদের আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে প্রতারিত না করে ৩৬২৪।

৩৬২৩। 'সেইদিন' - অর্থাৎ শেষ বিচারের দিনে কেহ কারও উপকারে আসবে না। স্নেহময় পিতা সেদিন সন্তানের দিকে ফিরে তাকাবে না এবং সন্তানও পিতার জন্য শক্তি ও সাহস যোগাতে পারবে না। প্রত্যেকেই নিজস্ব দায় দায়িত্বের চিন্তায় অস্থির থাকবে। কেহ কারও দিকে ফিরে তাকাবে না বা উপকারে আসবে না।

৩৬২৪। " প্রধান প্রতারক " শব্দটি শয়তনের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। শয়তান আমাদের রক্তের সাথে মিশে থাকে। সে আমাদের অন্তরের মাঝে বাস করে সর্বদা আমাদের বিপথে চালিত করতে প্রয়াস পায়। ফলে আমরা তার প্ররোচনায় সময়ের মূল্য ভুলে যাই। সংসারের মায়াজালে এমন ভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি যে, শেষ বিচারের দিনকে বিস্মৃত হয়ে যাই। ভুলে যাই যে, আমাদের শেষ পরিণতি হাশরের ময়দানে স্থির হবে। আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি সত্য হবেই। সুতারাং জীবনের দ্রুত ধাবমান সময়কে নষ্ট না করে তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো উচিত। হয়তো বা সেদিন খুব বেশী দূরে নয় যাকে আমরা ভুলে থাকি।

৩৪। [ শেষ বিচারের ] সময়ের জ্ঞান রয়েছে [ কেবলমাত্র ] আল্লাহ্‌র নিকট। তিনি বৃষ্টি প্রেরণ করেন, এবং তিনিই জানেন জরায়ুতে কি আছে ৩৬২৫। কেউ জানে না আগামী কাল সে কি অর্জন করবে, এবং কেউ জানে না কোন দেশে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র নিকট রয়েছে পূর্ণ জ্ঞান এবং তিনি [ এ সবের সাথে ] পরিচিত ৩৬২৭।

৩৬২৫। বৃষ্টি ও জরায়ূর উল্লেখের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র জ্ঞানের রূপরেখার সামান্য পরিমাণকে তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে নিম্নোক্ত বিষয় গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে :

১) কিয়ামতের জ্ঞান

২) বৃষ্টি

৩) নূতন জীবনের সৃষ্টি [জরায়ূতে আছে ]

৪) প্রতিদিনের জীবনযাত্রা

৫) আমাদের মৃত্যু [ দেখুন টিকা ৩৬২৭ ]।

বৃষ্টির ব্যাপারে একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে প্রাকৃতিক আইন বা বিজ্ঞানের সুত্রের সমন্বয় কি অপূর্ব ভাবেই না ঘটেছে এখানে। সাগরের বিশাল লবণাক্ত জলরাশি সূর্যের তাপে বাষ্পে পরিণত হয়ে মিষ্টি পানির আধাঁর মেঘে পরিণত হয়। সেই মেঘ বায়ু তাড়িত হয়ে শুষ্ক স্থলভাগে প্রবাহিত হয় এবং স্থলভাগকে সিক্ত করে উর্বর করে। ফলে মাটি শস্য শ্যামল হয়ে ওঠে। সন্দেহ নাই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সুত্র জড়িত যা আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত। কিন্তু চিন্তা করার বিষয় কি অপূর্ব ভাবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সুত্র গুলিকে একত্রে সমন্বিত করা হয়েছে। আবহাওয়া বিজ্ঞান, গতিবিদ্যা, জলবায়ু সংক্রান্ত বিজ্ঞান, বাতাসের আর্দ্রতা নির্ণয় বিদ্যা,ইত্যাদি বিজ্ঞানের বহু শাখার জ্ঞানের প্রয়োজন শুধুমাত্র বৃষ্টি পাতের কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য। এতো শুধু একটি মাত্র প্রাকৃতিক ঘটনার বর্ণনা করা হলো, প্রকৃতিতে এরূপ হাজার হাজার ঘটনা বিদ্যমান যা আল্লাহ্‌র আইন ও জ্ঞানের স্বাক্ষর। সম্পূর্ণ বিশ্ব প্রকৃতির পরিচালনা আল্লাহ্‌র জ্ঞানেরই স্বাক্ষর। জরায়ূর উল্লেখের মাধ্যমে প্রাণী সৃষ্টির রহস্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এর মাঝেও নিহিত আছে বিজ্ঞানের ও সমাজবিজ্ঞানের হাজারো জ্ঞানের বার্তা যেমন : ভ্রূণের বিকাশের জ্ঞান, যৌন জীবন, ইত্যাদি ইত্যাদি বিজ্ঞানের হাজারো জ্ঞান। কেউ কি জানে কে কতদিন জরায়ূর অন্ধকারে বাস করবে ? শিশু কি সুস্থ অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করবে ? জন্মের পরে পূর্ণবয়স্করূপে তার কি বিশেষত্ব হবে, সে কি তার পিতামাতার বা সমাজের জন্য আর্শীবাদ না অভিশাপ হবে ? ইত্যাদি হাজারো প্রশ্নের জ্ঞান আছে একমাত্র আল্লাহ্‌র নিকট।

৩৬২৭। উপরের টিকাতে পাঁচটি রহস্যের জ্ঞানকে সারসংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এই আয়াতে সময় ও জ্ঞান সম্বন্ধে যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে। আমাদের সভ্যতার অগ্রগতিতে আমরা আমাদের জ্ঞানের জন্য গর্ব বোধ করি। কিন্তু আল্লাহ্‌র অগাধ জ্ঞানের নিকট এই জ্ঞান খুবই সামান্য। আর বিশ্বের অনন্ত প্রবাহে সময়ের প্রকৃত জ্ঞান সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান আরও অনিশ্চিত। আমরা জানি বৃষ্টিপাত উদ্ভিদের জন্ম দেয়, মাটিকে শস্য শ্যামল ভূমিতে পরিণত করে, জরায়ূর অন্ধকারে নূতন জীবনের সুত্রপাত ঘটে। কিন্তু আমরা কি সঠিকভাবে বলতে পারবো কখন, কোনসময়ে কোথায় তা ঘটবে ? ঠিক সেরূপই ঘটে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে। আমরা জানি না কবে কোথায় কিভাবে আমাদের জীবনাবসান ঘটবে। শেষ বিচারের দিন বা Ma'ad সম্বন্ধেও আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। এই সেই দিন যেদিন প্রতিটি বিষয়ের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে এবং সঠিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। মানব জীবন চক্রের সত্যের এই প্রকৃত রূপকে সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা অনুধাবন করতে পারিনা। কিন্তু তা অবশ্যই ঘটবে কিন্তু কখন তা আমরা জানি না। একমাত্র তা জানেন আল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ।