Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ১ জন
আজকের পাঠক ৮৬ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩৩১৬৩২ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৬৮৯৮ বার
+ - R Print

সূরা মুমিন


সূরা মুমিন বা বিশ্বাসী - ৪০

৮৫ আয়াত, ৯ রুকু , মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


ভূমিকা : এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে মুমিন বা বিশ্বাসী ; অবিশ্বাসী ফেরাউনের লোকদের মাঝে একজনের ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা ঈমানের নাম অনুসারে, যে নিজেকে বিশ্বাসী বলে ঘোষণা করে এবং ভবিষ্যতের পানে দৃষ্টিকে প্রসারিত করে [ আয়াত ২৮-৪৫ ]। এই সূরার আর একটি নাম হচ্ছে গাফির [Gafir] বা যিনি ক্ষমা করেন [ দেখুন আয়াত নং ৩ ]। সূরা ২৩ নং এ বহুবচনে বিশ্বাসীগণকে বলা হয়েছে মুমিনুন [ Muminun ] , যেখানে যুক্তি উত্থাপন করা হয়েছে গুণের সমষ্টিগত শক্তির উপরে যা ঈমানের মূল ভিত্তি। এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও গুণরাজি যা ব্যক্তিকে সাফল্যের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়।

এই সূরা থেকে শুরু হচ্ছে সাতটি সূরার একটি শ্রেণী [সূরা নং ৪০ -৪৬ ]। এই সাতটি সূরার প্রারম্ভে হা-মীম [ Ha – Mim ] অক্ষর দ্বয়কে স্থাপন করা হয়েছে। কালক্রমানুসারে এই সকল সূরার সময়কাল প্রায় একই সময়। তা হচ্ছে মক্কার শেষ সময়কাল। হা-মীম্‌ শব্দটির প্রকৃত কোন ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় নাই , এর ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

এই শ্রেণীর সূরাগুলির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে মানুষের সাথে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের সম্পর্ক ,ভালো ও মন্দের সম্পর্ক, সত্য ও মিথ্যার সম্পর্ক ,প্রত্যাদেশ গ্রহণ ও প্রত্যাখানের সম্পর্ক। এই জোড়া শব্দগুলির প্রথম শব্দগুলি মানুষের প্রকৃত বন্ধু এবং দ্বিতীয় শব্দগুলি মানুষের শত্রু।

এই অর্থে 'হা-মিম ' শব্দটি সূরা নং ৪০ ও ৪১ এ ব্যবহৃত হয়েছে [ ৪০ : ১৮ এবং ৪১ : ৩৪ ]। অন্যান্য সূরাতে অন্যান্য শব্দগুলি একই গুরুত্ব বহন করে থাকে যেমন : 'Wali' অথবা 'nasir' [ ৪২ : ৮, ৩১ ] ; 'qarlin'[ ৪৩ : ৩৬ , ৩৮] ; 'maula'[ ৪৪ : ৪১ ] ; 'auliyaa' অথবা 'nasirin'[ ৪৫ : ১৯, ৩৪ ] ; এবং 'anliyaa'[ ৪৬ : ৩২ ]।

সার সংক্ষেপ : বিশ্বাস বা ঈমানই হচ্ছে সঠিক। আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল। মন্দ কাজ মন্দ পরিণাম ডেকে আনে। কারণ আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞাত এবং ন্যায়বান। [ ৪০ : ১ - ২০ ]।

ইতিহাস বলে মন্দ মন্দের নিকট আসবে। মন্দের দ্বারা ঈমান বা বিশ্বাসের প্রতিরোধ প্রত্যাখাত হতে পারে ; কিন্তু বিশ্বাসীকে রক্ষা করবেন স্বয়ং আল্লাহ্‌ এবং মন্দ শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যাবে। [ ৪০ : ২১ - ৫০ ]

শেষ বিচারের দিন সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ নাই। আল্লাহ্‌র ক্ষমতা , দয়া এবং ন্যায় বিচার স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। মানুষ কি খুব দেরী হয়ে যাওয়ার পূর্বে তা গ্রহণ করবে, না শুধু তর্ক করে যাবে ? [ ৪০ : ৫১ - ৮৫ ]।

সূরা মুমিন বা বিশ্বাসী - ৪০

৮৫ আয়াত, ৯ রুকু , মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


০১। হা - মীম ।

০২। এই কিতাবের প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে মহাপরাক্রমশালী, পরম জ্ঞানী আল্লাহ্‌র নিকট থেকে ৪৩৫৭।

৪৩৫৭। এই আয়াতটি সূরা [ ৩৯ :১ ] আয়াতের অনুরূপ , ব্যতিক্রম শুধুমাত্র শেষ লাইনটি যেখানে আল্লাহ্‌র সম্বন্ধে বিশেষ বিশেষণ প্রয়োগ করা হয়েছে। সূরা [ ৩৯: ১ ] আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্‌ " প্রজ্ঞাময় " এখানে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে আল্লাহ্‌র "প্রজ্ঞার " ও " বিচক্ষণতার " উপরে কারণ বিরোধীরা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শৃঙ্খলাকে ধ্বংস করতে আগ্রহী। এই সূরাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে আল্লাহ্‌র জ্ঞানের উপরে। আল্লাহ্‌র জ্ঞানের তুলনায় অন্যান্যদের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। কারণ তিনি সর্বজ্ঞ।

০৩। যিনি পাপ ক্ষমা করে দেন, অনুতাপ গ্রহণ করেন, ৪৩৫৮ , যিনি শাস্তি দানে কঠোর , শক্তিশালী। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। তার নিকটেই সকলের শেষ প্রত্যাবর্তন।

৪৩৫৮। আল্লাহ্‌র জ্ঞান সর্বোচ্চ, তা সব কিছুকে স্পর্শ করে থাকে। আল্লাহ্‌র অন্যান্য আরোপিত গুণ বা বিশেষণ যা আমাদের গভীরভাবে আগ্রহী করে তা হচ্ছে আল্লাহ্‌ আমাদের অনুতাপকে গ্রহণ করবেন, যদি তা আন্তরিক হয় এবং পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। আন্তরিক অনুতাপ পাপীর জীবনকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত করে দেয়। সেই সাথে তিনি ন্যায় বিচারকও - শাস্তি দানে কঠোর। সুতারাং পাপীদের পলায়নের কোনও উপায় থাকবে না ; একমাত্র অনুতাপের মাধ্যমেই পাপীদের অব্যহতি পাওয়া সম্ভব। এ ব্যতীত আল্লাহ্‌র অন্যান্য গুণবাচক আরোপিত বিশেষণ সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্যঃ তাঁর দয়া , জ্ঞান ও ন্যায়বিচার , তাঁর অনুগ্রহ এবং শাস্তি।

০৪। অবিশ্বাসীরা ব্যতীত আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহ সম্বন্ধে কেহ বির্তক করে না ৪৩৫৯। সুতারাং দেশের মাঝে তাদের সগর্বে চলাচল তোমাদের যেনো বিভ্রান্ত না করে ৪৩৬০।

৪৩৫৯। আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও আরোপিত গুণবাচক বিশেষণ সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ এবং নিখিল বিশ্ব-ভূবন সর্বদা এই সত্যকে ঘোষণা করছে। আমাদের চারিদিকে আল্লাহ্‌র নিদর্শনে পরিপূর্ণ। যাদের মাঝে বিশ্বাসের ঘাটতি আছে, শুধুমাত্র তারাই আল্লাহ্‌র নিদর্শনকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না এবং তারাই বৃথা তর্কে লিপ্ত হয়।

৪৩৬০। দেখুন আয়াত [ ৩ : ১৯৬ ]। যারা আল্লাহ্‌র নিদর্শন আত্মার মাঝে অনুভব করতে পারে না , তাদের বাইরের প্রদর্শনী অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়। তাদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি , চটপটে কথাবার্তা , দেশেবিদেশে অবাধ বিচরণ ইত্যাদি যেনো মোমেন বান্দাদের বিভ্রান্ত না করে।

০৫। ইহাদের পূর্বে নূহের দল এবং তার পরে [ অসৎ ] সম্প্রদায়েরা ছিলো , যারা [ নিদর্শন সমূহ ] অস্বীকার করেছিলো ৪৩৬১। এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের রাসুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলো, তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য এবং অহংকারের সাথে বির্তক করেছিলো সত্যকে অনুপযুক্ত ঘোষণা করার জন্য ৪৩৬২। কিন্তু আমিই তাদের পাকড়াও করেছিলাম। এবং কি [ ভয়াবহ ] হয়েছিলো আমার প্রতিশোধ ৪৩৬৩।

৪৩৬১। দেখুন আয়াত [৩৮ : ১১ - ১৩ ] ও টিকা ৪১৫৮। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে যুগে যুগে মন্দ সর্বদা ভালো ও সত্যকে প্রতিহত করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্‌র প্রেরিত সত্যের বিজয় হয়েছে। আল্লাহ্‌র প্রেরিত সত্যের বিরুদ্ধে বা এ সত্যকে যারা প্রচার করেন সে সব নবী ও রসুলদের বিরুদ্ধে বা আল্লাহ্‌র সুদূর প্রসারিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এসব অশুভ ও মন্দ শক্তির সমগ্র প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৪৩৬২। পৃথিবীতে আল্লাহ্‌ যখনই জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য অত্যাবশকীয় সত্যকে প্রেরণ করেছেন বা পুরাতন প্রচারিত সত্যের বাণীকে পূনর্জীবিত করেছেন যুগে যুগে সে বাণী প্রচারে বাধা প্রাপ্ত হয়েছে। অজ্ঞ ও স্বার্থে অন্ধ ব্যক্তিরা সর্বদা সত্যের বিরুদ্ধে অসাড় তর্ক বির্তকে লিপ্ত হয়। তারা এসব মিথ্যা বাক্‌ -বিতন্ডার দ্বারা সত্যের দীপ্তিকে ম্লান করে দিতে বদ্ধপরিকর। তাদের ধারণা এর দ্বারা তারা আল্লাহ্‌র পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু তারা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী। অনেক সময়ে দেখা যায় অন্যায় বা অসত্য তাদের কূটকৌশল ও দুষ্ট বুদ্ধির সাহায্যে ক্ষণস্থায়ী বিজয় অর্জনে সক্ষম হয়; সত্যকে দমিত করতে সক্ষম হয়, কিন্তু তা খুবই ক্ষণস্থায়ী , কারণ সময়ের বৃহত্তর পরিসরে সত্য প্রকাশিত হবেই এবং তা প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন অন্যায়কারীদের মিথ্যা পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হতে বাধ্য। তারা তাদের নিজেদের ফাঁদে নিজেরা ধৃত হয়ে পড়ে। শয়তানের ফাঁদে ধৃত হওয়ার শাস্তি ভয়ানক।

উপদেশ : পৃথিবীতে কোনও সৎ বা ভালো কাজ প্রথমেই অভিনন্দিত হবে না। মানুষরূপী শয়তান তাতে বাধা প্রদান করবেই। তবে আল্লাহ্‌ আমাদের সুসংবাদ দান করেছেন যে, এতে নিরাশ হওয়ার কিছু নাই। শেষ পর্যন্ত প্রকৃত সৎকর্ম প্রতিষ্ঠিত হবেই ,যা ন্যায় ও সত্য ,মানুষের জন্য যা মঙ্গলজনক তা ধ্বংস করার ক্ষমতা কারও নাই।

৪৩৬৩। দেখুন আয়াত [ ১৩ : ৩২ ]।

০৬। এ ভাবেই অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমার হুকুম সত্য প্রমাণীত হয়েছিলো ৪৩৬৪। সত্যই তারা জাহান্নামের অধিবাসী।

৪৩৬৪। দেখুন [ ৩৯ : ৭১ ]। আল্লাহ্‌র হুকুম বা আল্লাহ্‌র বাণী যার সাহায্যে মন্দ বা পাপীদের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে , তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ তারা শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছে পৃথিবীতে এবং পরলোকে তারা হবে দোযখের অধিবাসী।

০৭। যারা [আল্লাহ্‌র ] আরশ ধারণ করে ৪৩৬৫ এবং যারা ইহার চারপাশ ঘিরে তাদের প্রভুর মহিমা ও প্রশংসা কীর্তন করে; তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে; এবং যারা বিশ্বাসী তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে [ বলে] " হে আমাদের প্রভু! তোমার করুণা ও জ্ঞান সকল জিনিষকে ঘিরে রেখেছে। সুতারাং যারা অনুতাপের মাধ্যমে তোমার পথে ফিরে আসে, তাদের ক্ষমা কর এবং তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর ৪৩৬৬।

৪৩৬৫। দেখুন অনুরূপ আয়াত [৩৯ : ৭৫ ]।

৪৩৬৬।দেখুন আয়াত [ ৬ :৮০ ] ও [৭ : ৮৯ ]।
০৮। " হে আমাদের প্রভু ! তুমি তাদের অনন্তকালের জন্য বেহেশত্‌ দান কর, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের জন্য দিয়েছিলে , তাদের পূণ্যাত্মা পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা উপযুক্ত তাদেরও [ দান কর ] ৪৩৬৭। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী , প্রজ্ঞাময়। "।

৪৩৬৭। প্রার্থনার মাঝে কোনও স্বার্থপরতা নাই। তা যে শুধুমাত্র নিজের জন্য হতে হবে তা নয়। প্রার্থনা হতে হবে সার্বজনীন। যথা প্রকৃত পূণ্যাত্মা ও আল্লাহ্‌র প্রতি আন্তরিক - তারা সকলেই একই ভাতৃবন্ধনে আবদ্ধ। তারা সকলেই সকলের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করে থাকে। পাপ একটি সংক্রামক ব্যাধির ন্যায়। খুব সহজেই অন্যকে সংক্রামিত করে। পূণ্যও ঠিক তদ্রূপ। ভালো সকল সময়েই অন্যকে ভালোর দিকে আকর্ষণ করে থাকে। পূণ্যাত্মারা সর্বদা পূণ্যাত্মাদের সহচর্য কামনা করে থাকে। তারা পরস্পর পরস্পরের সুখ ও শান্তি কামনা করে এবং সকলের জন্য আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ কামনা করে থাকে।

উপদেশ : এই আয়াতগুলি প্রতিটি পূণ্যাত্মার প্রার্থনা হতে পারে। যদিও এই প্রার্থনা ছিলো আল্লাহ্‌র আরশ্‌ বহনকারী ফেরেশতাদের।

০৯। "তুমি তাদের [ সকল ] অমঙ্গল থেকে রক্ষা কর। সেদিন তুমি যাদের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করবে ৪৩৬৮ তাদের তুমি সত্যই অনুগ্রহ দান করবে। এবং [ তাদের জন্য ] তা হবে সত্য -সত্যই সর্বোচ্চ সাফল্য। " ৪৩৬৯।

৪৩৬৮। আল্লাহ্‌ যাকে শাস্তি থেকে রেহাই দেবেন সেই তো সাফল্য লাভ করে ; কারণ সেটাই হবে তার শেষ বিচার। যদি কেউ ইহকালের পাপ থেকে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে ক্ষমা লাভ করে থাকে; তবে তাই-ই হচ্ছে সর্বোচ্চ সাফল্য। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ ধাপে ধাপে জীবনের পথ অতিক্রম করে। ধাপে ধাপে তার চাওয়া ও পাওয়ার বিবর্তন ঘটে। এর শেষ হয় মৃত্যুর মাধ্যমে। মৃত্যুর সিংহদুয়ার পেরিয়ে পরলোকের জীবনে সে প্রবেশ লাভ করে এবং সে জীবনের সাফল্যই হচ্ছে সর্বোচ্চ সাফল্য। যেখানে জীবনের চাওয়া পাওয়ার সব শেষ হয়ে যায়। সকল কর্মের সিদ্ধি লাভ যেখানে ঘটে থাকে। জীবনের মহৎ পরিনতি হচ্ছে সর্বোচ্চ মুক্তি ও শান্তি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে।

৪৩৬৯। মুসলিম দর্শনে আত্মিক মুক্তি বা সাফল্যের ধারণা অত্যন্ত স্বচ্ছ। পৃথিবীতে মানুষের জন্ম শুধুমাত্র মৃত্যুর মাঝে শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য নয়। আল্লাহ্‌ মানুষের জন্য উচ্চতর মহৎ লক্ষ্য নির্ধারিত করে রেখেছেন মৃত্যু পরবর্তী জীবনে। যে সেই মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম সেই সাফল্য লাভ করে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে ধন্য হয়।

রুকু - ২

১০। অবিশ্বাসীদের সম্বোধন করা হবে ;" যখন তোমাদের ঈমানের দিকে ডাকা হতো এবং তোমরা তা অস্বীকার করতে,সেদিন আল্লাহ্‌র অসন্তোষ , এখন তোমাদের [শাস্তির ভয়ে ] নিজের উপরে অসন্তুষ্টি অপেক্ষাও অনেক বেশী ছিলো। " ৪৩৭০

৪৩৭০। পৃথিবীতে অবিশ্বাসীরা আল্লাহ্‌র নিদর্শন সমুহকে অস্বীকার করেছিলো। তারা আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনে নাই। মৃত্যুর পরে পরলোকের জীবনে তারা যখন প্রত্যক্ষ করবে যে , আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ব্যতীত সে জীবনে উদ্ধার পাওয়ার কোনও উপায় নাই, তখন তাদের মন অনুশোচনায় ভরে যাবে। এ সত্য তাদের সামনে প্রতিভাত হবে যে, পৃথিবীতে আল্লাহ্‌ তাঁর অনুগ্রহের দুয়ার অবারিত করে দিয়েছিলেন কিন্তু তারা তা সত্বেও আল্লাহকে অস্বীকার করেছিলো। পরলোকে এখন তারা কি ভাবে আল্লাহ্‌র অনুকম্পা ও অনুগ্রহ আশা করতে পারে ?

১১। তারা বলবে, " হে আমাদের প্রভু ! তুমি আমাদের দুইবার প্রাণহীন অবস্থায় রেখেছ এবং দুইবার আমাদের প্রাণ দিয়েছ ৪৩৭১। এখন আমরা আমাদের পাপকে সনাক্ত করতে পেরেছি। [ এর থেকে ] বের হওয়ার কোন পথ আছে কি ? "

৪৩৭১। দেখুন আয়াত [ ২ : ২৮ ]। জীবনকে গভীর ভাবে উপলব্ধির চেষ্টা করলে কেহ স্রষ্টাকে অস্বীকার করতে পারে না। এই বিশাল মহাবিশ্বে, মহাকালের নিঃসীম পরিব্যপ্তির মাঝে কোথায় ছিলো আমাদের অস্তিত্ব ? পৃথিবীতে জন্মের আগে পৃথিবীর ধূলি কণাতে মিশে ছিলো এই দেহের অণু, পরমাণু , কিন্তু তাতে ছিলো না কোনও প্রাণ। আল্লাহ্‌ কাদা থেকে দেহকে সৃষ্টি করে জীবনহীন দেহকে জীবন দান করেন। পৃথিবীর জীবনের সেই হয় শুরু। তারপরে পৃথিবীর পথ অতিক্রম করে শৈশব, কৈশোর ,যৌবন, বার্দ্ধক্যের পরে আবার মৃত্যু এসে এই দেহকে নিথর করে দেয়। মাটির দেহ পুণরায় মাটিতে মিশে যায়। এটা হয় দ্বিতীয় মৃত্যু। আবার পুণরুজ্জীবন ঘটবে পুণরুত্থানের মাধ্যমে শেষ বিচারের দিনে। এই হচ্ছে দুবার মৃত্যু ও দুবার প্রাণ লাভ করা।

১২। [ উত্তর হবে ] : " এর কারণ , যখন আল্লাহকে আহ্বান করা হতো [ একমাত্র উপাস্য হিসেবে] ৪৩৭২ , তোমরা ঈমানকে প্রত্যাখান করতে। কিন্তু যখন আল্লাহ্‌র সাথে শরীক স্থির করা হতো ,তখন তোমরা বিশ্বাস করতে। এখন এই আদেশ আল্লাহ্‌র তরফ থেকে এসেছে ৪৩৭৩, যিনি সমুচ্চ মহান।"

৪৩৭২। দেখুন আয়াত [ ৩৯ : ৪৫ ] ও টিকা ৪৩১৩। মানুষকে আল্লাহ্‌ এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে সৃষ্টি করেছেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ সামাজিক জীব; সে সব সময়েই কারও না কারও আজ্ঞানুবর্তী। শৈশবে পিতামাতার , কৈশোরে শিক্ষাগুরুর , যৌবনে কর্মক্ষেত্রে ও আর্দশ পুরুষের অনুসরণের মাধ্যমে। আল্লাহ্‌ মানুষের অনুভূতি ও জ্ঞান, প্রজ্ঞা সব কিছুকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ্‌র আজ্ঞানুবর্তী হওয়ার জন্য। তারই ক্ষুদ্র প্রকাশ ঘটে জীবনের বিভিন্ন স্তরে। মানুষ যদি শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে , তবেই তার জীবনের সার্থকতা। কারণ তখনই স্রষ্টার মানুষ সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য সার্থক হয়। আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যের সাথে মানুষের আনুগত্যের সমন্বয় ঘটার ফলে মানুষের আত্মার মাঝে প্রকৃত প্রজ্ঞার উপলব্ধি ঘটে। সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় স্রষ্টার সাথে তাঁর সম্পর্ক , সৃষ্টির মাঝে মানুষের অবস্থান, বিশ্ব ভূবনে আল্লাহ্‌র অধিষ্ঠান এবং সৃষ্টির উদ্দেশ্য। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে তখনই উপলব্ধি করা সম্ভব , যখন মানুষ তার সকল সত্ত্বাকে একাগ্রভাবে শুধুমাত্র স্রষ্টার পানে নিবেদন করে। বহু শরীকের উপাসনা মানুষের আত্মাকে বিভ্রান্ত করে , একমাত্র আল্লাহ্‌র করুণাই পারে সেই বিভ্রান্ত আত্মাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে। চুম্বক যেমন সর্বদা উত্তর দক্ষিণে অবস্থান করে, আল্লাহ্‌র প্রতি নিবেদিত আত্মাও সেরূপ। উত্তর দক্ষিণে না থাকলে চুম্বকের ধর্ম যেরূপ নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ্‌র একত্বের প্রতি নিবেদিত না থাকলেও আত্মার ধর্মও নষ্ট হয়ে যায়। সে আত্মা হয় বিভ্রান্ত ,ভীত , অশান্ত ,পাপে আসক্ত এবং তারাই তখন আল্লাহ্‌র সাথে শরীক স্থির করা হলে বিশ্বাস করে।

৪৩৭৩। আল্লাহ্‌র প্রতি আনুগত্য প্রকাশের শেষ সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে পৃথিবীর জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়। এ সময়ের মধ্যে অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনকে আল্লাহ্‌ গ্রহণ করেন ; তার সকল পূর্বের পাপকে ক্ষমা করে দেবেন। এই সময়ের পরে আর কোনও সুযোগ তাকে দেয়া হবে না। তবে এখানে বলা হয়েছে আল্লাহ্‌ সকল কিছুর উপরে কর্তৃত্বশীল, ন্যায় বিচার ও করুণা প্রদর্শনে তিনি সর্বোচ্চ। শেষ বিচারের দিনের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র-ই।
১৩। তিনিই তোমাদের তাহার নিদর্শনাবলী দেখান এবং তোমাদের জন্য আকাশ থেকে জীবনোপকরণ প্রেরণ করেন ৪৩৭৪। যারা [আল্লাহ্‌র ] অভিমুখী হয় শুধু তারাই উপদেশ গ্রহণ করে।

৪৩৭৪। এ কথা কেউ যেনো মনে না করে যে, আল্লাহ্‌র করুণা ও দয়া পাপীদের ত্যাগ করে যায়। আল্লাহ্‌র করুণা ও দয়া সকলের জন্য সমভাবে বহমান। আল্লাহ্‌র ক্ষমা ও দয়া পাপীদের বারে বারে সুযোগ দান করে থাকে। আল্লাহ্‌র নির্দ্দেশাবলী সর্বত্র প্রকাশিত - যে ইচ্ছা করে সেই-ই দেখতে পায়। অনুধাবন করতে পারে। সকল মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহ্‌র রিযকের বন্দোবস্ত করেন। যারা আল্লাহ্‌র প্রতি অভিমুখী হয় ; যারা আল্লাহ্‌র ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পন করে শুধুমাত্র তারাই আল্লাহ্‌র দেয়া এই সুযোগ গ্রহণ করার ক্ষমতা লাভ করে থাকে। আকাশ থেকে জীবনোপকরণের তাৎপর্য হচ্ছে যে, বিশাল উদ্ভিদ জগত তার অস্তিত্বের জন্য নির্ভরশীল আকাশের সূর্য কিরণ, বৃষ্টি ও বাতাসের কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসের উপর। আর এই উদ্ভিদ জগতই হচ্ছে আমাদের জন্য আহার সরবরাহকারী।

১৪। অতএব , একনিষ্ঠ আনুগত্যে আল্লাহকে ডাক, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে থাকে ৪৩৭৫।

৪৩৭৫। দেখুন আয়াত [ ৯: ৩৩ ]।

১৫। তিনি মর্যদায় সুউচ্চ , [ কর্তৃত্বের ] সিংহাসনের অধিপতি ৪৩৭৬। তিনি আপন বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা করেন ওহী প্রেরণ করেন ৪৩৭৭ , যাতে সে মানুষদের কেয়ামতের সম্বন্ধে সর্তক করতে পারে ; - ৪৩৭৮

৪৩৭৬। মানুষের চিন্তা ভাবনা ও অনুভবের বহু উর্দ্ধে আল্লাহ্‌র সম্মান ও মর্যদা। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোনও বান্দাকে পার্থিব সর্বোচ্চ ক্ষমতা দান করতে পারেন। কারণ আল্লাহ্‌ই হচ্ছেন সকল সম্মানের উৎস।

৪৩৭৭। আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ওহী আল্লাহ্‌ যাকে খুশী প্রেরণ করেন। যিনি ওহী প্রাপ্ত হন তিনি আল্লাহ্‌র সর্বোচ্চ সত্যকে ধারণ করে থাকেন। ফলে তিনি আল্লাহ্‌র রাজত্বে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। এই সম্মান আল্লাহ্‌র নিখুঁত পরিকল্পনা ও ইচ্ছার অংশ বিশেষ। আল্লাহ্‌র পরিকল্পনাকে বাধা দান করার ক্ষমতা কারও নাই। আপত্তি করার অধিকার কারও নাই। আল্লাহ্‌ সকল সম্মান, মর্যদা ও কর্তৃত্বের অধিকারী।

৪৩৭৮। কিয়ামত দিবস অর্থাৎ পরস্পর সাক্ষাতের দিবস। সেদিন সকল মানুষকে একত্র করা হবে আল্লাহ্‌র সম্মুখে। পৃথিবীতে তারা যতদূরেই ছড়ানো থাকুক না কেন তারা সেদিন পরস্পর পরস্পরের সাক্ষাৎ লাভ করবে।

১৬। যে দিন তারা [ সকলে কবর থেকে ] বের হয়ে আসবে ; সেদিন আল্লাহ্‌র নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। সেদিন কার রাজত্ব কায়েম হবে ? ৪৩৭৯। আল্লাহ্‌রই , যিনি এক এবং অপ্রতিরোধ্য।

৪৩৭৯। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌র আইন সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হবে, শয়তানের বা মন্দ বা পাপের প্রভাব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আল্লাহ্‌র রাজত্ব প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ সত্য , ন্যায় ও সৎকর্মের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা হবে। সেদিন মন্দ বা পাপ কোনও ভাবেই ভালো বা পূণ্যের সাথে প্রতিযোগীতা করার সুযোগ পাবে না।

১৭। সেদিন প্রতিটি আত্মাকে পুরষ্কৃত করা হবে যা সে অর্জন করেছে। সেদিন বিন্দুমাত্র অন্যায় করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ হিসাব গ্রহণে দ্রুত ৪৩৮০।

৪৩৮০। "হিসাব গ্রহণে দ্রুত।" দ্রুত শব্দটি বিভিন্ন ভাবকে ধারণ করে থাকে। ১) তৎপর অর্থাৎ দ্রুতগতি সম্পন্ন। এই দ্রুততা পৃথিবীর জীবনের জন্য হতে পারে বা মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্যবর্তী সময়েও হতে পারে। এই সময়টুকু অসীম অনন্ত সময়ের পটভূমিতে এতই সংক্ষিপ্ত যে, তা মনে হবে যৎসামান্য ক্ষুদ্র। পরবর্তী আয়াতে এই দিনকে বর্ণনা করা হয়েছে " আসন্ন দিন" হিসেবে। ২) শেষ বিচারের দিনে সকলকে সমবেত করা হবে বিচারের জন্য। সকলের এই প্রচন্ড ভীড়েও প্রত্যেকের বিচার কার্য সম্পন্ন হবে চোখের পলকে। "যেনো চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী [১৬ : ৭৭ ]।" কারণ সকল কিছু সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ পূর্বাহ্নেই জ্ঞাত ;কিন্তু এত দ্রুত গতি সম্পন্ন বিচার হলেও কারও প্রতি সামান্য পরিমাণও অন্যায় সংঘটিত হবে না।

মন্তব্য : সময়ের ধারণা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার মাত্র।

১৮। সেদিন সম্বন্ধে সর্তক কর , যেদিন [ ক্রমাগত ] নিকটবর্তী হচ্ছে, যেদিন হৃদয় কণ্ঠাগত হয়ে তাদের শ্বাসরোধ করবে ৪৩৮১। পাপীদের এমন কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু বা সুপারিশকারী থাকবে না যার কথা গ্রাহ্য করা হবে ৪৩৮২।

৪৩৮১। "যেদিন হৃদয় কন্ঠাগত হয়ে তাদের শ্বাসরোধ করবে " - এই বাক্যটি একটি বাগ্‌ধারার ন্যায়, যার সাহায্যে বুঝানো হয় যে, ভয়ে উৎকণ্ঠায় তাদের সমস্ত সত্ত্বা ও জীবন আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। তবে বাক্যটি বিশদ ব্যাখ্যার দাবী রাখে। [ প্রাণ ] বা হৃদয় হচ্ছে আমাদের সকল আবেগ , অনুভূতির উৎস ও ভালোবাসার উৎসস্থল। যেমন শঙ্কা, ভীতি, হতাশা , দুঃখবোধ ,ইত্যাদি অনুভূতিও আমাদের হৃদয়কে বা প্রাণ আপ্লুত করে আমাদের কণ্ঠকে রোধ করে দেয়। এখানে কণ্ঠ হচ্ছে মনের ভাব বা ভাষাকে প্রকাশ করার মাধ্যম। সেদিন পাপীদের কণ্ঠ রোধ হয়ে যাবে, তারা কোনও কিছু প্রকাশে অক্ষম হবে। আবার কণ্ঠ শুধু যে স্বরযন্ত্রকেই ধারণ করে তাই নয়, কণ্ঠ খাদ্য নালীকেও ধারণ করে। খাদ্য , খাদ্যনালীর মাধ্যমে পরিপাকযন্ত্রে যায় ও শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে। কণ্ঠ রোধ হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে শরীরের পুষ্টি সাধনে বাধা দান করে সমস্ত শরীরকে নিশ্চল করে দেয়া যার ফলে শরীরের সুস্থ কর্মকান্ড অচল হয়ে শরীর হয়ে পড়ে রোগ ও যন্ত্রনার আকর। সেইরূপ পৃথিবীর পাপ কাজ সেদিন তাদের আকণ্ঠ ঘিরে ধরবে , ফলে দুঃখ দুর্দ্দশাতে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে।

৪৩৮২। এই আয়াতটির মাধ্যমে ব্যক্তিগত দায় দায়িত্বের কথা পুণরায় ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের জন্য সেদিন কোনও সুপারিশকারী থাকবে না।

১৯। [আল্লাহ্‌ ] চোখের প্রতারণার [ কৌশল ] অবগত আছেন , ৪৩৮৩ , এবং [ মানুষের ] অন্তর যা ,গোপন করছে তাও জানেন ৪৩৮৪।

৪৩৮৩। পৃথিবীতে বহু ঘটনা ঘটে যা দুষ্টদের কুকর্মের কৌশলমাত্র। ফলে সাধারণ মানুষের চোখকে তারা ফাঁকি দিতে সক্ষম। কিন্তু আল্লাহ্‌র জ্ঞান সব কিছুকে পরিবৃত করে রাখে। তিনি সর্বজ্ঞ। "চক্ষুর অপব্যবহার " বিভিন্ন ভাবে ঘটতে পারে :

১) ম্যাজিক বা ভোজবাজির সময়ে মানুষ প্রকৃত বস্তুকে বা ঘটনাকে চর্মচক্ষুর সাহায্যে বুঝতে পারে না। সে ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টির বিভ্রম ঘটে।

২) মানুষ অনেক সময়েই চক্ষুর অপব্যবহার করে থাকে। যা দেখা তার জন্য পাপ সে সেই সব দৃশ্য দেখতে পছন্দ করে থাকে। এ ভাবেই সে চোখের মাধ্যমে পাপের আশ্রয় নেয়।

৪৩৮৪। মানুষের ব্যক্ত ও অব্যক্ত সকল চিন্তা মূহুর্তের মাঝে আল্লাহ্‌র দরবারে নীত হয় এবং রক্ষিত হতে থাকে। আজকের যুগে এ ধারণা খুবই যুক্তিসংগত ধারণা , কারণ ই-মেইলের মাধ্যমে একমূহুর্তের মধ্যে দুনিয়ার একপ্রান্তের সংবাদ অন্যপ্রান্তে রক্ষিত হচ্ছে। সুতারাং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্‌র লওহে মাহ্‌ফুজে মানুষের মনের সংবাদ মূহুর্তের মাঝে আমলনামায় রক্ষিত হবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। কারণ আধ্যাত্মিক জগৎ রক্তমাংসের দেহধারী মানুষের নিকট অদৃশ্য থাকলেও তা আল্লাহ্‌র নিকট সুস্পষ্ট।
২০। আল্লাহ্‌ [ন্যায় এবং ] সত্যের সাথে বিচার মীমাংসা করবেন। আল্লাহ্‌কে ব্যতীত [ মানুষ ] যাদের আহ্বান করে , তারা বিচার করার [ মত কোন অবস্থানে ] নাই। একমাত্র আল্লাহ্‌ই [ সব কিছু ] শোনেন এবং দেখেন ৪৩৮৫।

৪৩৮৫। যদি মানুষ আল্লাহ্‌র একত্বের ধারণা ত্যাগ করে বিপদ-বিপর্যয়ে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও দয়ার পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যের স্মরণাপন্ন হয়, যেমন : তাবিজ, মাদুলী , রত্নপাথর ধারণ ইত্যাদি, তবে অবশ্যই তারা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ বঞ্চিত হবে। কারণ আমাদের মনের যে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ,মিথ্যাভান, সন্দেহ , সবই আল্লাহ্‌র দরবারে মূহুর্তের মধ্যে পৌঁছে যায়। অপরপক্ষে মহৎ উদ্দেশ্য ও আশা-আকাঙ্খা , অর্থাৎ প্রকৃত মঙ্গলজনক যে কোন কথা ও কাজ তা যত ক্ষুদ্র্‌ই হোক না কেন মহান আল্লাহ্‌ দরবারে তা নীত হয় এবং বান্দার জন্য তা অনুগ্রহের দরজা উম্মুক্ত করে।

রুকু - ৩

২১। তারা কি পৃথিবী ভ্রমণ করে দেখে না যে - তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিলো ৪৩৮৬। তারা পৃথিবীর বুকে ক্ষমতায় এবং [ রেখে যাওয়া ] কীর্তিতে শ্রেষ্ঠতর ছিলো ৪৩৮৭। কিন্তু আল্লাহ্‌ তাদের পাপের হিসাব গ্রহণের জন্য গ্রেফতার করলেন। এবং আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে তাদের রক্ষা করার কেহ ছিলো না।

৪৩৮৬। অনুরূপ আয়াতের জন্য দেখুন [৩০ : ৯ ] আয়াত এবং আরও অন্যান্য আয়াত।

৪৩৮৭। দেখুন [৩: ৯ ] আয়াত ও টিকা ৩৫১৫। ইতিহাস আমাদের এই সাক্ষ্য দেয় যে, যুগে যুগে বহু কীর্তিমান , শক্তিশালী ,সুসভ্য জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পাপ কাজের দরুণ। তাদের দক্ষতার শেষ প্রমাণ এখনও বহু স্থানে বিদ্যমান , তাদের নির্মিত বিশাল সৌধমালা , প্রাসাদপম অট্টালিকার মাধ্যমে। তাদের জ্ঞান, দক্ষতা, শক্তি কিছুই তাদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে নাই। তাদের পাপের দরুণ আল্লাহ্‌ তাদের ধ্বংস করে দেন।

২২। এর কারণ হচ্ছে, তাদের নিকট তাদের রাসুলগণ সুস্পষ্ট [নিদর্শনসহ ] এসেছিলো ৪৩৮৮। কিন্তু তারা তাদের প্রত্যাখান করেছিলো। সুতারাং হিসাব গ্রহণের জন্য আল্লাহ্‌ তাদের গ্রেফতার করলেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমতায় পূর্ণ , কঠিন শাস্তিদাতা।

৪৩৮৮। পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতিকে ধ্বংসের পূর্বে আল্লাহ্‌ তাদের মাঝে নবী, রসুল এবং সত্যের প্রচারকদের প্রেরণ করেন - তাদের সাবধান করার জন্য। আল্লাহ্‌ তাঁর রাসুলদের এবং সত্যের প্রচারকদের নির্দ্দিষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেন যেনো জনসাধারণ তাঁদের মেনে নেয়। যে নিদর্শনসমূহের জন্য তাঁরা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত তা নিম্নরূপ :

১) আল্লাহ্‌র সত্য প্রচারকেরা পবিত্র এবং নিঃস্বার্থ জীবন যাপন করেন।

২) তারা আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হন ;

৩) তাঁদের প্রভাব তাদের সময়ে এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে স্থায়ী আসন লাভ করে। ইত্যাদি।

২৩। প্রাচীনকালে, আমার নিদর্শন ও স্পষ্ট কর্তৃত্বসহ মুসাকে প্রেরণ করেছিলাম ৪৩৮৯-

৪৩৮৯। এখানে মুসার [ আ ] উল্লেখ থাকলেও এখানে মুসার কাহিনী বর্ণনা করা হয় নাই। ফেরাউনের সভায় একজন পূণ্যাত্মা ব্যক্তি ছিলেন , যিনি ছিলেন ঈমানদার - তাঁর কাহিনীর সুত্রপাত এখানে করা হয়েছে মাত্র। দেখুন নীচে ২৮ নং আয়াত। এই সূরার নামকরণ মুমিন বা বিশ্বাসী বা ঈমানদার রাখা হয়েছে এই ব্যক্তির স্মরণে।

২৪। ফেরাউন, হামান, এবং কারূণের নিকট। কিন্তু তারা [তাঁকে ] ডেকেছিলো, " মিথ্যাবাদী যাদুকর।" ৪৩৯০

৪৩৯০। এই আয়াতে তিন ব্যক্তির উল্লেখ আছে। তিনজনের উল্লেখের মাধ্যমে তিনধরণের অবিশ্বাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে তিন ধরণের উপাস্যকে তাদের শক্তির উৎস বলে সাব্যস্ত করেছিলো।

১) ফেরাউনের শক্তি ও ক্ষমতা ফেরাউনকে দাম্ভিক , অহংকারী ও নিষ্ঠুর করে তোলে। তার নির্ভরতা ছিলো তার নিজস্ব পশু শক্তির উপর। নিজস্ব শক্তি ও আত্মঅহংকারই ছিলো তার উপাসনার বিষয়- আল্লাহ্‌র পরিবর্তে। দেখুন [ ২৮ : ৩৮-৩৯ ]।

২) হামান ছিলো ফেরাউনের মন্ত্রী। দেখুন [ ২৮ : ৬ ] আয়াত ও টিকা ৩৩৩১ এবং ২৮ : ৩৮ ] আয়াত। সে ছিলো ফেরাউনের হীন স্তাবক যে নিজস্ব হীন প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য যে কোনও লোকের ক্ষমতা ও অহংকারের গুণগান করবে। আল্লাহ্‌র পরিবর্তে সে ছিলো প্রবৃত্তির দাস।

৩) কারূণ ছিলো সম্পদে সর্বশ্রেষ্ঠ। সম্পদ অর্জনই ছিলো তার জীবনের একান্ত সাধনা এবং উপাস্য। ফলে সে সম্পদের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সেবার কথা ভুলে গিয়েছিলো। স্বার্থপরতা ও গরীবকে শোষণ ছিলো তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। [ ২ ৮: ৭৬ - ৮১ ] আয়াত ও টিকা ৩৪০৪ দেখুন।

২৫। অতঃপর মুসা যখন আমার নিকট থেকে সত্য নিয়ে উহাদের নিকট উপস্থিত হলো ৪৩৯১। তারা বলেছিলো ," যারা মুসার সাথে ঈমান এনেছে তাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা কর এবং তাদের নারীদের জীবিত রাখ।" ৪৩৯২। কিন্তু অবিশ্বাসীদের [ শেষ ] পরিণাম ভুল [ এবং বিভ্রান্তি ] ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

৪৩৯১। ২৪নং আয়াতে তিন ধরণের অবিশ্বাস কে তুলে ধরা হয়েছে , যারা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যের উপরে নির্ভরশীল , যার বিবরণ উপরের টিকাতেও দেয়া হয়েছে। এই আয়াতে [ ২৫ নং আয়াত] মুসার জন্মের সময়কার অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। এই আয়াতে "উহাদিগের " এবং "তারা " শব্দদ্বয় ফেরাউন ও তার সভাসদদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। "মুসার সাথে যারা ঈমান এনেছে " বাক্যটি কিছু শব্দ উহ্য রেখে গঠিত যার অর্থ দাঁড়ায় ইসরাঈলীদের পুত্র সন্তানদের হত্যা কর ; কারণ ভবিষ্যত আল্লাহ্‌র রসুল তাদের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করবে। সুতারাং তাঁর সাথে সাথে তার সঙ্গে যারা জন্মগ্রহণ করবে তাদের সকলকে হত্যা করা।" আয়াত ২৬ নং হচ্ছে মুসার জীবনের বেশ কিছু বছর পরের ঘটনা তখন মুসা আল্লাহ্‌র নিকট থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন- ফেরাউনের সভায় হাজির হয়েছেন। সাধারণ মিশরবাসীদের মধ্যে অনেকেই মুসার প্রচারিত সত্যের প্রতি ঈমান আনার জন্য প্রস্তুত।

৪৩৯২। "তাদের নারীদিগকে জীবিত রাখ " এখানে তাদের দ্বারা ইসরাঈলীদের বুঝানো হয়েছে , যারা ছিলো আল্লাহ্‌র ধর্মের অনুসারী।

২৬। ফেরাউন বলেছিলো , " মুসাকে হত্যা করার জন্য আমাকে ছেড়ে দাও; এবং তাঁকে তাঁর প্রভুকে ডাকতে বল ৪৩৯৩। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে ৪৩৯৪ , কিংবা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করবে।"

৪৩৯৩। এই আয়াতের ঘটনা হচ্ছে যখন হযরত মুসা ফেরাউনের সভায় গমন করে তাকে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসের আহ্বান জানান ফলে ফেরাউনের সাথে বিরোধের সম্মুখীন হন। দেখুন আয়াত [ ২০ : ৪৯, ৫৭ , ৬৩ ]।

৪৩৯৪। ফেরাউনের কিছু প্রজা পরবর্তীতে ফেরাউনের এবং মিশরবাসীদের দেবদেবীদের পূঁজা ত্যাগ করে এক আল্লাহ্‌র এবাদতে মনোনিবেশ করে। ফলে তারা আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাসের দরুণ শাহাদৎ বরণ করে। [ ২০ : ৭০-৭৩ ]।

২৭। মুসা বলেছিলো, " শেষ বিচারের দিনে অবিশ্বাসী প্রত্যেক উদ্ধত ব্যক্তি থেকে [নিরাপত্তার জন্য ] নিশ্চয়ই আমি আমার প্রভু ও তোমার প্রভুর আশ্রয় নিয়েছি। "৪৩৯৫।

৪৩৯৫। হযরত মুসার প্রচারিত সম্পূর্ণ ধর্মের মূল কথা হচ্ছে এই বিশাল বিশ্বভূবনের স্রষ্টা একজনই। তিনি-ই সকলের উপাসনার যোগ্য। আল্লাহ- মুসা , ইসরাঈলী, ফেরাউন , মিশরবাসী সকলেরই তিনিই প্রভু। তিনি এক ও অদ্বিতীয় বিশ্বজাহানের প্রভু।

রুকু - ৪

২৮। ফেরাউনের বংশের মধ্যে একজন বিশ্বাসী [ মোমেন ] ব্যক্তি ৪৩৯৬ , যে তার নিজ ঈমান গোপন রেখেছিলো , [ সে ] বলেছিলো , " তোমরা কি এমন এক ব্যক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে 'আল্লাহ্‌ আমার প্রভু ?' - অথচ সে তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে স্পষ্ট [নিদর্শন সহ ] তোমাদের নিকট এসেছে? এবং যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে তার মিথ্যার [পাপ ] তারই উপরে বর্তাবে , কিন্তু যদি সে সত্য বলে থাকে, ৪৩৯৭ , তবে সে তোমাদের যে [ বিপদ ] সম্বন্ধে সর্তক করছে , তার কিছুটা [ভয়াবহ বিপদ ] তোমাদের উপরে এসে পড়বে ৪৩৯৭। প্রকৃতপক্ষে যারা [ ঔদ্ধত্যে ] সীমালংঘন করে ও মিথ্যা বলে , আল্লাহ্‌ তাদের পথ দেখান না ৪৩৯৮।

৪৩৯৬। সূরা [ ২৮ : ২ ০ ] আয়াতে যে ব্যক্তির বর্ণনা আছে তিনি ছিলেন মুসার নবুয়ত প্রাপ্তির বহু পূর্বে। আর এখানে যে ব্যক্তির বর্ণনা আছে, তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির পরের ব্যক্তি। দুজনকে একই ব্যক্তিরূপে চিহ্নিত করার কোনও কারণ নাই। কারণ আয়াত সমূহে সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, মুসা ফেরাউনের নিকট আল্লাহ্‌র কথা প্রচার করেন এবং কিছুটা হলেও সাফল্য লাভ করেন, যে কারণে ফেরাউন ও তার লোকেরা তার জীবন নাশের ষড়যন্ত্র করে। এই আয়াতের যে ব্যক্তি, তিনি বর্ণনা করেছেন যে মুসা সুস্পষ্ট প্রমাণসহ আগমন করেছেন , যেহেতু সে সময়ে মুসা আল্লাহ্‌র নিকট থেকে দায়িত্ব লাভ করেছেন।

৪৩৯৭। এই আয়াতের বক্তব্য একজন মিশরবাসীর , যে তাঁর দেশবাসীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন, এবং চাইতেন না যে তারা ধবংস হয়ে যাক। তাই তার বক্তব্য ছিলো নিম্নরূপ : আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসের জন্য তোমরা এই লোককে হত্যা করবে ? তোমরা কি তার আচরণ ও চরিত্র পর্যবেক্ষণ কর নাই ? তোমরা কি লক্ষ্য কর নাই যে স্পষ্ট প্রমাণ তার পরিচয় পত্রের নির্দ্দেশ দান করে ? যদি তোমরা মনে কর সে মিথ্যাবাদী, সে আল্লাহ্‌ কর্তৃক প্রেরিত নয়, তবে সে তার কার্যের ফল ভোগ করবে। কিন্তু তা বলে তোমরা কেন এক আল্লাহ্‌র উপাসনা থেকে বিরত থাকবে ? মনে কর যদি সে প্রকৃতই আল্লাহ্‌ কর্তৃক প্রেরিত হয়ে থাকেন তবে তোমাদের কি পরিণতি হবে ? তোমরা যদি তাঁর সাবধান বাণী গ্রহণ না কর তবে যখন আল্লাহ্‌র শাস্তি নিপতিত হবে ,তোমাদের ভাগ্যে কি ঘটবে ? আর সে শাস্তি অবশ্যই নিপতিত হবে যদি মুসা আল্লাহ্‌র প্রেরিত দূত হয়ে থাকেন।

৪৩৯৮। আল্লাহ্‌র প্রেরিত "সুস্পষ্ট প্রমাণের " প্রেক্ষিতে এই উপদেশ প্রেরণ করা হয়েছে। বিশ্বভূবনের সর্বত্র আল্লাহ্‌র উপস্থিতির সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান। এই প্রমাণকে যারা অনুধাবনের চেষ্টা করেন তাদেরই আল্লাহ্‌ সৎপথে পরিচালিত করেন। যারা মিথ্যাবাদী ও সত্যের সীমাকে লঙ্ঘন করে থাকে তাদের আত্মায় আল্লাহ্‌র নূর বা হেদায়েত প্রবেশ লাভে বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ সীমালঙ্ঘন ও মিথ্যার দ্বারা তাদের আত্মা আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। ফলে আত্মা স্বচ্ছতা হারায় ও কঠিন রূপ ধারণ করে। এরা কখনও সঠিক পথের সন্ধান লাভ করে না।

২৯। "হে আমার সম্প্রদায় ! আজ দেশের কর্তৃত্ব তোমাদের। দেশে তোমরা ক্ষমতাশালী রয়েছ ৪৩৯৯। কিন্তু আমাদের উপরে আল্লাহ্‌র শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদের সাহায্য করবে ? " ফেরাউন বলেছিলো , "আমি [ নিজে ] যা দেখি তা ব্যতীত তোমাদের অন্য কিছু দেখাচ্ছি না ৪৪০০। আমি তো তোমাদের কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি। "

৪৩৯৯। উপরোক্ত মোমেন ব্যক্তির বক্তব্য ছিলো নিম্নরূপ : "ক্ষমতা আজ তোমাদের হাতে , ক্ষমতার দম্ভে তোমরা বর্তমানে উদ্ধত ও অহংকারী হয়ো না। ক্ষমতা কি চিরদিন থাকে? পাপের দ্বারা তোমরা যদি তোমাদের নিজেদের উপরে আল্লাহ্‌র শাস্তিকে ডেকে আন, কে তোমাদের রক্ষা করবে ? "

৪৪০০। ফেরাউনের অহংকার ও উদ্ধত আচরণের প্রকাশ ঘটেছিলো তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে , " আমি সব কিছু পর্যবেক্ষণে সক্ষম , এবং আমি সব কিছু বুঝি , এবং আমি সেভাবেই তোমাদের নির্দ্দেশ দান করে থাকি। আমি সঠিক পথের সন্ধান জানি ,এবং তোমাদের সঠিক পথের নির্দ্দেশ দান করে থাকি ; সুতারাং তোমরা আমার অনুসরণ কর।"

যারা মিথ্যাবাদী ও সীমালঙ্ঘনকারী তারা হয় উদ্ধত ও অহংকারী । তারা সব সময়েই ভ্রান্ত পথে চলে। ফেরাউনের চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন।

৩০। তখন বিশ্বাসী ব্যক্তিটি বলেছিলো , " হে আমার সম্প্রদায় ! আমি তোমাদের সম্বন্ধে [ পাপে আসক্ত পূর্ববর্তী ] জাতিদের [ দুর্দ্দশার ] দিনের মত অবস্থার ভয় পাচ্ছি ; - ৪৪০১ , ৪৪০২

৪৪০১। মোমেন ব্যক্তিটি প্রাচীনকালের উদাহরণের মাধ্যমে নিম্নলিখিত আবেদন করেন, " তোমাদের পূর্বে যারা পৃথিবীতে ছিলেন তাদের কথা কি তোমরা জান না ? নূহ্‌ , আ'দ ,সামুদ এবং এরূপ অন্যান্য বহু জাতি যারা আল্লাহ্‌র নবীদের বিরুদ্ধাচারণ করেছিলো - পরিণামে তারা তাদের পাপের দরুণ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ?"

৪৪০২। দেখুন [ ৩৮ : ১১-১৩ ] ও টিকা ৪১৫৮ এবং [ ৪০ : ৫ ] ও টিকা ৪৩৬১।

৩১। " যেমন ঘটেছিলো , নূহ্‌, আদ্‌ , সামুদ জাতির এবং তাদের পরে যারা এসেছিলো তাদের। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের উপরে কোন অন্যায় করতে চান না ৪৪০৩।

৪৪০৩। এই আয়াতটি মোমেন ব্যক্তির বক্তব্যের ধারাবাহিকতা। " পূর্বের বহু জাতি তাদের পাপের দরুণ বিপর্যয়ে ধবংস হয়ে গেছে। তোমরা যদি তোমাদের পাপকে ত্যাগ না কর তবে তোমাদের ভাগ্যেও সেই একই বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। মনে কর না আল্লাহ্‌ অন্যায় করেন। তোমরাই অন্যায়কারী এবং তোমাদের ইচ্ছাকৃত কার্যের দ্বারা তোমরা নিজেদের উপরে বিপর্যয় ডেকে আনছো।"

উপদেশ : মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে পূণ্য বা ভালো কাজের জন্য। যখন সে অন্যায় বা পাপ কাজ করে তখন সে প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে। ফলে তার পরিণামও তাকে ভোগ করতে হয়।

৩২। " এবং হে আমার সম্প্রদায় ! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য আশংকা করি পরস্পর আহ্বান [ এবং আর্তনাদ ] দিবসের ; - ৪৪০৪

৪৪০৪। 'তানাদ' বা প্রচন্ড হাকডাকের দিবসের বা কিয়ামতের দিবসের। এই দিনকে বলা হয় শেষ বিচারের দিন যার তিনটি বৈশিষ্ট্য এই আয়াতে ও পরবর্তী আয়াতে। ১) লোক সকল ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে এবং প্রত্যেকে একে অপরকে ডাকবে এবং চিৎকার করবে। কিন্তু কেউই সাহায্যের জন্যএগিয়ে আসবে না। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ভাগ্যের পরিণতির আশঙ্কায় কণ্টকিত থাকবে। ২) পাপীদের বিচারের পরে দোযখের দিকে বিতাড়িত করা হবে , তারা পশ্চাৎ ফিরে পালাতে চাইবে , কিন্তু পারবে না। ৩) সেখানে তারা কোনও রক্ষাকর্তা খুঁজে পাবে না। কোনও রক্ষাকর্তা বা সাহায্যকারী বা সুপারিশকারী সেদিন এগিয়ে আসবে না। যদিও বর্ণনাটি ছিলো মোমেন ব্যক্তি দ্বারা তার সম্প্রদায়ের জন্য কিন্তু এর বক্তব্য সার্বজনীন।

৩৩। " সেদিন যখন তোমরা তোমাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে এবং পলায়ন করবে, আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে তোমরা কোন রক্ষাকারী পাবে না। আল্লাহ্‌ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন পথ প্রদর্শক নাই।

৩৪। " ইহার পূর্বে তোমাদের নিকট ইউসুফ এসেছিলো , স্পষ্ট নিদর্শন সহ ৪৪০৫ , কিন্তু সে তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছিলো তোমরা [ তার উপদেশ সম্বন্ধে ] সন্দেহ করা থেকে বিরত থাক নাই। অবশেষে সে যখন পরলোকে গমন করলো তখন তোমরা বললে, " তার পরে আর কোন রাসুল আল্লাহ্‌ প্রেরণ করবেন না। " এভাবেই যারা সীমালংঘন করে এবং সন্দেহের মধ্যে থাকে আল্লাহ্‌ তাদের পথ ভ্রান্ত করেন, ৪৪০৬

৪৪০৫। এতক্ষণ সার্বজনীনভাবে ধর্মীয় ইতিহাসের ঐতিহ্য বা ধারাকে তুলে ধরা হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে নির্দ্দিষ্ট ভাবে মিশরবাসীদের সম্বোধন করে, মিশরে হযরত ইউসুফের নবুয়তের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। হযরত ইউসুফের জন্য দেখুন সূরা নং ১২। ইউসুফ মিশরে জন্মগ্রহণ করেন নাই বা তিনি মিশরবাসীও ছিলেন না। আল্লাহ্‌র পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি মিশরে নীত হন। তাঁর নিজের ভাইদের ষড়যন্ত্রের শীকার হন তিনি। কি অদ্ভুদ ভাবে তিনি মিশরে নীত হন এবং মিশরে উজীরের পরিবারে দত্তক পুত্র হিসেবে গৃহিত হন। মানুষের অন্যায় , ঘৃণা, বিস্মৃতি তার জীবনকে অমানিশার অন্ধকারে ঢেকে দেয় , কিন্তু তার মাঝেই ছিলো প্রভাতের সোনালী সূর্যের ইশারা। ইউসুফের দুর্যোগের ও অন্যায়ের দিন শেষ হয়ে যায় , এবং শেষ পর্যন্ত তিনি মিশরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং মিশরকে দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা করেন। তিনি সত্যের প্রচার করেন কয়েদখানায় বন্দীদের মাঝে, আজিজের স্ত্রীর নিকট , মিশরের সম্ভ্রান্ত স্ত্রীলোকদের মাঝে এবং শেষ পর্যন্ত ফেরাউনের রাজসভায়। মিশরবাসীরা তার কার্যদ্বারা জাগতিক দিক থেকে লাভবান হয় সত্য, কিন্তু তারা ইউসুফের নিকট থেকে কোনও আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে গ্রহণ করে নাই। কারণ তারা ছিলো সংশয়বাদী বা সন্দেহবাতিক জাতি। তারা এবং তাদের পরবর্তী বহু প্রজন্ম ইউসুফের প্রচারিত সত্যকে গ্রহণ করে নাই।
উপদেশ : আল্লাহ্‌র অস্তিত্বে যারা সংশয়বাদী ও সত্যকে গ্রহণের ব্যাপারে যারা সীমালংঘনকারী তারা কখনও সঠিক পথের সন্ধান লাভ করবে না। কারণ আল্লাহ্‌ তাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিকে বিভ্রান্ত করে দেবেন।

৪৪০৬। হযরত ইউসুফের সময়ে ইসরাঈলীরা মিশরে আগমন করে। মিশর বাসীদের ধারণা ছিলো ইউসুফের পরে আল্লাহ্‌ আর কোনও রাসুল প্রেরণ করবেন না। কিন্তু ইউসুফের পরে আল্লাহ্‌ মিশরে হযরত মুসাকে প্রেরণ করেন ইসরাঈলীদের উদ্ধারের জন্য। কারণ ইতিমধ্যে মিশরবাসীরা ইউসুফের আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে অবহেলা করে ইসরাঈলীদের উপরে নির্যাতন , অত্যাচার ও অবিচার আচরণ করে থাকেন। কারণ তারা ইউসুফের কার্যের পরিণতির সুফল ভোগ করতে আগ্রহী , কিন্তু অনুধাবনে অক্ষম যে, আল্লাহ্‌র আইন সর্বযুগে সর্বক্ষেত্রে একই ভাবে কাজ করে যায়। যদিও মানুষ তা অগ্রাহ্য ও অবহেলা করে থাকে। হযরত ইউসুফ ও হযরত মুসার মধ্যে সময়ের পার্থক্য ২-৩ শত বৎসর। একটি সুসভ্য জাতির জন্য এই সময় খুব বেশী লম্বা নয় যে তারা ইউসুফের শিক্ষাকে ভুলে যাবে। সংশয়বাদীরা ও সীমালংঘনকারীরা সর্বদাই বিভ্রান্তিতে ভুগবে এই আল্লাহ্‌র আইন

৩৫। " যারা বিধিসংগত ক্ষমতা ব্যতীতও আল্লাহ্‌র নিদর্শন সম্বন্ধে বির্তক করে ; [ এরূপ আচরণ ] আল্লাহ্‌ ও মোমেনদের চোখে দুঃখজনক ও ঘৃণাই। এ ভাবেই আল্লাহ্‌ উদ্ধত , একগুঁয়ে, সীমালংঘনকারীদের প্রত্যেকের হৃদয়ে সীলমোহর করে দেন।" ৪৪০৭

৪৪০৭। উপরের টিকা দেখুন। অহংকারে যারা সীমালঙ্ঘন করে তাদের আত্মা আল্লাহ্‌র বাণী ধারণে অনুপযুক্ত হবে। আল্লাহ্‌ তাদের হৃদয়কে মোহর করে দেন। ফলে আল্লাহ্‌র বাণীর আবেদন তাদের অনুভবের, উপলব্ধির সীমানাতে পৌঁছায় না। ফলে কোনও ভালো বা সত্যকে তারা অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারবে না। তারা সর্বদা সংশয়ে ভুগবে। দেখুন [৭: ১০০ ] ও [২ : ৭ ] আয়াত ও টিকা নং ৩১।

৩৬। ফেরাউন বলেছিলো, " ওহে হামান ! আমার জন্য একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর ৪৪০৮ , যেনো আমি পথ ও অবলম্বন পেতে পারি -

৪৪০৮। দেখুন [ ২৮ : ৩৮] আয়াত ও টিকা ৩৩৭১। এই আয়াত থেকে ফেরাউনের চরিত্রের প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।

১) জাগতিক সম্পদ ও ক্ষমতা ফেরাউনকে অহংকারে উদ্ধত ও একগুয়েতে পরিণত করে। আধ্যাত্মিক জগত সম্বন্ধে সে অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে, ফলে সে আল্লাহ্‌র অবস্থানকে জাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে আল্লাহ্‌র প্রাসাদে মই দ্বারা আরোহণের ইচ্ছা প্রকাশ করে। 'Asbab' অর্থ অবলম্বন।

২) সে উদ্ধতভাবে মুসা এবং মুসার ইলাহ্‌কে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে। সে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে যে, "আমি উহাকে [ মুসাকে ] মিথ্যাবাদী মনে করি।"

৩৭। " আসমানে [ পৌঁছানোর ] অবলম্বন ; যেনো আমি মুসার আল্লাহ্‌র নিকট আরোহণ করতে পারি। তবে আমার ধারণায় আমি মনে করি [ মুসা ] একজন মিথ্যাবাদী। " এভাবেই ফেরাউনের চোখে তার মন্দ কার্যাবলীকে সুশোভিত করা হয়েছে ৪৪০৯। এবং তাকে সৎপথ থেকে বিরত রাখা হয়েছিলো। ফেরাউনের ষড়যন্ত্র তাকে জাহান্নাম ব্যতীত অন্য কোথাও পরিচালিত করে নাই ৪৪১০।

৪৪০৯। ফেরাউনের ভাষ্য-ই প্রমাণ করে যে, নিজের সম্বন্ধে কি পরিমাণ অহংকার থাকলে মানুষ এতটা উদ্ধত ও গর্বিত হতে পারে। যার ফলে তার নিজের কৃত সকল কুর্কীতি ও পাপকে তার কাছে নয়নাভিরাম বোধ হতো। এর কারণ অহংকার, আত্মগরিমা হৃদয়ের সকল অনুভূতির দুয়ার বন্ধ করে দেয়। ফলে এসব হৃদয়ে আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো প্রবেশের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। এসব ব্যক্তি কখনও সঠিক পথ বা হেদায়েতের পথ খুঁজে পাবে না। নিজের কুর্কীর্তি নিজের কাছে মোহনীয় বোধ হবে।

উপদেশ : অহংকার ও আত্মগরিমা অত্যন্ত খারাপ রীপু যা মানুষকে বিপথে চালিত করে এবং শেষ পর্যন্ত সে ধ্বংস হয়ে যায়।

৪৪১০। ভবিষ্যত আল্লাহ্‌র রসুল মুসাকে হত্যার জন্য ফেরাউন ইসরাঈলীদের পুত্র সন্তাদের হত্যার নির্দ্দেশ দান করেছিলো। [ ৪০ : ২৫ ]। আবার হযরত মুসার নবুয়ত পাওয়ার পরে মুসা যখন ফেরাউনকে আল্লাহ্‌র পথে আহ্বান করেন, তখন আর একবার মুসাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ফেরাউন [ ৪০ : ২৬ ]। দুবারই ফেরাউন ও তার সহচরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় এবং তারা সকলে লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়।

রুকু - ৫

৩৮। বিশ্বাসী ব্যক্তিটি আরও বলেছিলো , " হে আমার সম্প্রদায় ! আমাকে অনুসরণ কর। আমি তোমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করবো ৪৪১১।

৪৪১১। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে ফেরাউনের তর্জন গর্জনে ভরা কর্তৃত্বপূর্ণ হাঁকডাকের বিপরীতে মোমেন ব্যক্তির মিনতিপূর্ণ আহ্বান একই ভাবের প্রকাশ পেয়েছে সূরা [ ৪০ : ২৯ ] আয়াত।

৩৯। " হে আমার সম্প্রদায় ! বর্তমান জীবন তো [ ক্ষণস্থায়ী ] সুখ স্বাচ্ছন্দ ব্যতীত অন্য কিছু নয়। পরলোকের জীবন হচ্ছে স্থায়ী আবাস ৪৪১২।

৪৪১২। মোমেন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টিতে অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, জাগতিক ধন-সম্পদ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি এসব ক্ষণস্থায়ী বিত্ত-বিভব মাত্র। অনন্ত জীবনের পটভূমিতে তা খুবই অস্থায়ী। পরলোকের জীবনই স্থায়ী জীবন। মানুষের শেষ পরিণতি পরলোকের স্থায়ী জীবন। মানুষের সৃষ্টিই করা হয়েছে ইহলোকের জীবনের মাধ্যমে পরিশ্রুত হয়ে অনন্ত পরলোকের জীবনে প্রবেশ লাভ করার জন্য।

৪০। " যে মন্দ কাজ করে, সে কেবল তার কাজের অনুরূপ শাস্তি পাবে। কিন্তু যে মুমিন হয়ে সৎ কাজ করবে - পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন সে-ই [মহা প্রশান্তির ] জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রচুর পরিমাণে জীবনোপকরণ ৪৪১৩।

৪৪১৩। দেখুন [ ২ : ২২ ]। বেহেশতে যে জীবনোপকরণ আল্লাহ্‌ তার বান্দাদের জন্য দান করবেন তা হবে স্থায়ী ও অপরিমিত। যার যতটুকু পাওয়ার যোগ্যতা তার থেকে বহুগুণ বেশী হবে এই পাওয়া।

৪১। " এবং হে আমার সম্প্রদায় ! কি আশ্চর্য ! আমি তোমাদের মুক্তির দিকে আহ্বান করছি, আর তোমরা আমাকে আগুনের দিকে আহ্বান করছো ৪৪১৪।

৪৪১৪। পার্থিব নিয়ম অনুযায়ী কেহ কারও প্রতি মন্দ আচরণ করলে, বিনিময়ে সেও মন্দ আচরণ লাভ করে থাকে। সে ভাবে বিচার করলে এটা সত্যিই আশ্চর্য যে মোমেন বান্দাটি তাঁর সম্প্রদায়কে সৎ পথে , চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তির পথে আহ্বান করেছেন, বিনিময়ে তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে জাহান্নামের বা ধ্বংসের পথে আহ্বান করে। তবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই, কারণ এই-ই হচ্ছে মোমেন বান্দাদের গুণাবলী। তাদের সর্বদা চেষ্টা থাকে পাপীদের উদ্ধার করা।

৪২। " তোমরা আমাকে বলছো আল্লাহকে অস্বীকার করতে ৪৪১৫ , এবং আল্লাহ্‌র সাথে অংশীদার করতে যার সম্বন্ধে আমার কোন জ্ঞান নাই। পক্ষান্তরে আমি আহ্বান করছি মহাপরাক্রমশালীর দিকে ,যিনি বারে বারে ক্ষমা করে থাকেন।

৪৪১৫। প্রাচীন মিশরের লোকেরা ফেরাউনকে তাদের ঈশ্বররূপে পূঁজা করতো। অর্থাৎ ফেরাউনকে তারা আল্লাহ্‌র সমকক্ষ দাঁড় করাতো। প্রাচীন মিশরের এই অংশীবাদী বা শেরেকীর রূপ অদ্যাবধি বিভিন্ন রূপে সমাজে বিদ্যমান। যেমন : বীরপূঁজা , পশু পূঁজা, ভালো ও মন্দ ক্ষমতার পূঁজা , প্রাকৃতিক ক্ষমতার পূঁজা , অর্থ সম্পদের পূঁজা , মূর্তিপূঁজা ইত্যাদি। এ সকলই এক ধরণের বিকৃত ধর্মবিশ্বাস যার বিরুদ্ধে পুনঃপুন জনসাধারণকে সচেতন করা প্রয়োজন। আল্লাহ্‌ পাপীদের জন্য তাঁর ক্ষমার হস্ত প্রসারিত করে রেখেছেন ; তিনি তো পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।

৪৩। " নিঃসন্দেহে তোমরা আমাকে আহ্বান করছো এমন একজনের দিকে যে এই দুনিয়াতে বা আখেরাতে কোথাও ডাকার যোগ্য নয় ৪৪১৬। বস্তুত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহ্‌র নিকট ,এবং সীমালংঘনকারীরাই হবে আগুনের অধিবাসী।

৪৪১৬। বিশ্বাস বা ঈমান হচ্ছে অন্তরের ধন। আত্মার মাঝে প্রত্যয় উৎপাদনকারী দৃঢ় বিশ্বাস এবং অন্তর্দৃষ্টি বিশ্বাস বা ঈমানের অঙ্গ। অন্তরের বিশ্বাসকে বহু ভাবে উপস্থাপন করা যায়। এখানে এ ব্যাপারে তিনটি যুক্তির উত্থাপন করা হয়েছেঃ

১) ইহকাল ও পরলোক , আল্লাহ্‌ই একমাত্র উপাসনার যোগ্য।

২) আমাদের সকলকেই পৃথিবীর জীবন শেষে আল্লাহ্‌র নিকট ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ্‌-ই একমাত্র শাশ্বত সত্য।

৩) আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কিছুর উপাসনা হচ্ছে মিথ্যার উপাসনা।মিথ্যার উপাসনাকারীরা সীমালংঘনকারী - সুতারাং তারা শাস্তির যোগ্য। একমাত্র আল্লাহ্‌র করুণাই তাদের রক্ষা করতে পারে। আল্লাহ্‌ আন্তরিক অনুতাপকারীকে সর্বদাই ক্ষমা করে দেন।

৪৪। "শীঘ্রই তোমরা স্মরণ করবে আমি তোমাদের [ এখন ] যা বলছি ৪৪১৭। আমি আমার [ নিজের ] ব্যাপারে আল্লাহতে সমর্পন করেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন।"

৪৪১৭। আয়াতের বক্তব্য থেকে অনুমিত হয় যে বক্তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। পরবর্তী আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে তিনি আল্লাহ্‌র রহমতে রক্ষা পান। মোমেন ব্যক্তিটি শেষ পর্যন্ত তাঁর সম্প্রদায়ের কথা চিন্তা করেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিলো, " তোমরা আমার সম্বন্ধে যাই-ই কর না কেন তাতে কিছু যায় বা আসে না। তোমরা একদিন হয়তো আমার সর্তকবাণী স্মরণ করবে, কিন্তু তখন হয়তো অনেক দেরী হয়ে যাবে। অনুতাপ করার আর সময় থাকবে না। আমি আমার সর্ব ব্যাপার আল্লাহ্‌র হস্তে অর্পন করেছি। আমি জানি আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন।

৪৫। অতঃপর ,তারা [ তার বিরুদ্ধে ] যে ষড়যন্ত্র করেছিলো তার [ প্রতিটি ] অনিষ্ট থেকে আল্লাহ্‌ তাকে রক্ষা করলেন। কিন্তু শাস্তির প্রচন্ডতা ফেরাউনের লোকজনদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরলো ৪৪১৮।

৪৪১৮। হযরত মুসার সময়ে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। দেখুন আয়াত [৭ : ১৩০ - ১৩৬ ]। কিন্তু সেগুলি ছিলো আল্লাহ্‌র তরফ থেকে প্রেরিত শাস্তি স্বরূপ। কিন্তু পরবর্তী আয়াতে যে শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে তার তুলনায় এ শাস্তি কিছু নয়।

৪৬। সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের জাহান্নামের আগুনের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়, ৪৪১৯ এবং যে দিন শেষ বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, [ দণ্ডাদেশ হবে ] "ফেরাউনের লোকজনদের কঠিনতম শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।"

৪৪১৯। "সকাল ও সন্ধ্যায় " - বাগ্‌ধারা বিশেষ যার অর্থ সর্বক্ষণ। এই আয়াতে কবর আযাবের ইঙ্গিত আছে।

৪৭। দেখো তারা আগুনের মাঝে পরস্পরের সাথে বির্তক করবে ৪৪২০। দুর্বল [যারা অনুসরণ করতো ] বলবে উদ্ধতদের " আমরা তো তোমাদেরই অনুসরণ করতাম , এখন কি তোমরা আমাদের থেকে জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ [তোমাদের উপরে ] নেবে " ?

৪৪২০। আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ফলে আত্মার মাঝে, ব্যক্তির চিন্তা ভাবনার জগতে সমন্বিত শৃঙ্খলা বিরাজ করে। কোনও ব্যাপারই তাকে বিভ্রান্তি ঘটাতে সক্ষম হয় না। আত্মসংযম, আত্মশৃঙ্খলা তার জীবনের চলার পথে হবে সাথী। যার পরিণতিতে তার ঘটে আত্মিক মুক্তি। অর্থাৎ সে পৃথিবীর লোভ লালসার উর্দ্ধে উঠতে সক্ষম হয়। এক কথায় আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাস , সত্যের প্রতি অনুরাগ ও সমন্বিত শৃঙ্খলার মাধ্যমে ব্যক্তির আত্মিক মুক্তি ঘটে যার ফলে তার জীবন স্বর্গীয় সুখে ভরে যায়। অপরপক্ষে ভর্ৎসনা বিবাদ-কলহ, এবং বিশৃঙ্খলা হচ্ছে দোযখের শাস্তির প্রতীক স্বরূপ।

৪৮। যারা উদ্ধত হয়েছিলো , তারা বলবে, " আমরা সকলেই এই [আগুনে ] রয়েছি। অবশ্যই আল্লাহ্‌ বান্দাদের মধ্যে বিচার করে দিয়েছেন। " ৪৪২১

৪৪২১। যারা পাপ কাজে অন্যকে প্রভাবিত করতে অভ্যস্ত ছিলো তাদের কৌশলপূর্ণ উত্তর এখানে অনুধাবনযোগ্য। তাদের বক্তব্য হবে নিম্নরূপ : " আমরা কি তোমাদের মত সমপরিমাণ শাস্তি ভোগ করছি না ? আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা কর। তিনি তো বিচারের রায় দিয়ে দিয়েছেন।" দেখুন [ ১৪ : ২১ - ২২ ] আয়াত।

৪৯। যারা আগুনের মাঝে রয়েছে , তারা জাহান্নামের দ্বাররক্ষীকে বলবে , ৪৪২২, " তোমাদের প্রভুর নিকট প্রার্থনা কর, তিনি যেনো [নিদেন পক্ষে ] এক দিনের জন্য শাস্তি হালকা করে দেন। "

৪৪২২। হতভাগ্য বিপথগামী তারাই যারা অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সত্যপথকে ত্যাগ করেছিলো। পরলোকে তারা তাদের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে পারবে। তারা তখন দোযখের প্রহরীকে অনুরোধ করবে তাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করতে। কিন্তু প্রহরীদের নিযুক্ত করা হয়েছে পাহারার কাজে ; সুপারিশের জন্য নয়। তারা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করবে ; " তোমাদিগের নিকট কি স্পষ্ট নিদর্শনসহ তোমাদিগের রাসুলগণ আসে নাই ? "

৫০। তারা বলবে, " তোমাদের নিকট কি স্পষ্ট নিদর্শনসহ রাসুলদের আগমন ঘটে নাই ? " তারা বলবে, " হ্যাঁ "। তখন প্রহরীরা বলবে, " তবে প্রার্থনা কর [ তোমাদের ইচ্ছা মত ] ! কিন্তু যাদের ঈমান নাই তাদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয় ৪৪২৩। "
৪৪২৩। উত্তর হবে হ্যাঁ সূচক। প্রকৃত সত্যকে তাদের সম্মুখে প্রকাশ করা হবে , " এখন কোনও প্রার্থনা করার সময় নয় বা আল্লাহ্‌র করুণা লাভ করারও উপায় নাই। সর্বাপেক্ষা বড় কথা আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাসহীন প্রার্থনা মূল্যহীন। [ ১৩ : ১৪ ] আয়াত দেখুন।

রুকু - ৬

৫১। নিঃসন্দেহে , আমি আমার রাসুলদের এবং যারা ঈমান আনে [ উভয়কে ] সাহায্য করবো এই পার্থিব জীবনে এবং সেদিন , যেদিন সাক্ষীরা দণ্ডায়মান হবে [হাশরের দিনে ] ৪৪২৪।

৪৪২৪। শেষ বিচারের দিনকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে , " যেদিন সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে।" এই বর্ণনার অন্তর্নিহিত তথ্যকে দুভাবে ব্যাখ্যা করা যায় : ১) সেদিন প্রত্যেকের প্রতি ন্যায় বিচার করা হবে এবং এই ন্যায় বিচারের ভিত্তি হবে বান্দার পার্থিব জীবনের কার্য-কলাপ। আল্লাহ্‌র নেয়ামত সকল মানুষ সমভাবে লাভ করে না। পৃথিবীর অগ্রযাত্রায় সভ্যতার বিকাশ কল্পে আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা অনুযায়ী আল্লাহ্‌র নেয়ামত কেউ বেশী ভোগ করে কেউ কম। মেধা, মননশক্তি , মানসিক দক্ষতা , সৃজন ক্ষমতা , সুযোগ সুবিধা , পারিপার্শ্বিক অবস্থা এ সবই আল্লাহ্‌র দান। আল্লাহ্‌র দান বা অনুগ্রহের দায়িত্বও বান্দাকে বহন করতে হবে বৈকি। না হলে পরলোকে এসব দানের হিসাব সে দেবে কিরূপে ? তার সর্ব অঙ্গ তার বিরুদ্ধে সেদিন সাক্ষী দান করবে। [ ২৪ : ২৪ ]। প্রকৃতপক্ষে সে নিজেই তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। [৬ : ১৩০ ]। ২) নবী রসুল ও পূণ্যাত্মা ব্যক্তিরা যারা পৃথিবীতে মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করেছেন তারা সাক্ষী দেবেন যে, তারা আন্তরিক ও বিশ্বস্ততার সাথে সত্যকে প্রচার করেছেন কিন্তু সকলে তা গ্রহণ করে নাই।

৫২। যেদিন পাপীদের ওজর আপত্তি কোন উপকারে আসবে না। তাদের জন্য রয়েছে [ শুধু ] অভিশাপ এবং কষ্টকর মন্দ বাসস্থান ৪৪২৫।

৪৪২৫। পরলোকে পাপী ও পূণ্যাত্মাদের অবস্থান পূর্বের আয়াতে আল্লাহ্‌ পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করেছেন। এই ঐশ্বরিক বিধানের পরে আর কোনও ওজর আপত্তি করা বৃথা। কোনও অজুহাত বা ওজর আপত্তি সেদিন কোনও কাজে আসবে না। পৃথিবীর জীবনে লোক দেখানো কাজ বা মিথ্যা ওজর বা মিথ্যা বিশ্বাস দ্বারা সমাজ জীবনে ধোঁকা দেয়া যায়। সেদিন এরূপ প্রতারণামূলক উদ্দেশ্য কোনও কাজে আসবে না।

৫৩। পূর্বে আমি মুসাকে দান করেছিলাম [পথ নিদ্দের্শক ] কিতাব ৪৪২৬ এবং বনী ইসরাঈলীদের উত্তরাধিকারী করেছিলাম সেই কিতাবের -

৪৪২৬। হযরত মুসাকে আল্লাহ্‌ প্রত্যাদেশের মাধ্যমে পথ নির্দ্দেশ প্রেরণ করেন। এই পথ নির্দ্দেশ বা কিতাব পরবর্তীতে ইসরাঈলীরা উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ্‌ তাদের এই পথ নির্দ্দেশ প্রদান করেন যেনো তারা তা রক্ষণাবেক্ষণ করে ; সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে এবং এর মূল কাহিনীকে জীবনে সর্বোচ্চ স্থান দেয়। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়। পরের আয়াতে বলা হয়েছে এই কিতাব ," পথ নির্দ্দেশ ও উপদেশ স্বরূপ।"

মন্তব্য : " কোরান" শরীফকেও আল্লাহ প্রেরণ করেছেন পথ নির্দ্দেশ ও উপদেশ স্বরূপ বিশ্বমানবের জন্য। সুতারাং কোরাণের বাণীর মূল মর্মবাণীকে হৃদয়ের মাঝে উপলব্ধির প্রয়োজন আছে। সে কারণে কোরাণ পড়ে বুঝতে হবে। না বুঝে শুধুমাত্র আরবী পড়ে কোরাণ পাঠের দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ করলে কোরাণ শরীফের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হয় না।

৫৪। [ যা ছিলো ] পথের নির্দ্দেশ এবং উপদেশ ; বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য।

৫৫। অতএব , ধৈর্য্য ধারণ কর অধ্যাবসায়ের সাথে ৪৪২৭ ; নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি সত্য। তোমার দোষত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর ৪৪২৮ এবং তোমার প্রভুর প্রশংসা ও গুণকীর্তন কর সন্ধ্যায় ও সকালে ৪৪২৯।

৪৪২৭। সময়ের ব্যবধানে ইসরাঈলীরা আল্লাহ্‌র কিতাবের মূল বক্তব্য পরিবর্তিত করে ফেলে, ফলে তারা তাদের মূল কিতাব হারিয়ে ফেলে। তারা আল্লাহ্‌র আইন লঙ্ঘন করতে থাকে। ফলে তারা আল্লাহ্‌র বাণীর দ্বারা জীবনকে মহিমান্বিত করতে ব্যর্থ হয়। একারণেই নূতন ভাবে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ প্রেরণের প্রয়োজন হয় এবং পূণ্যাত্মা রাসুলের [ সা ] নিকট আল্লাহ্‌র কিতাব প্রেরণ করা হয়। যদিও প্রথমে তা বিরোধীদের দ্বারা প্রত্যাখাত হয় এবং এই ধর্মের অনুসারীদের হত্যা ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু আল্লাহ্‌ অভয় দান করেছেন যে, এর ফলে নিরাশ বা হতাশ হওয়ার কিছু নাই। বরং এরূপ ক্ষেত্রে প্রচন্ড ধৈর্য্য ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন ,তাহলেই আল্লাহ্‌র রহমত লাভ করা যাবে ও সাফল্য লাভ ঘটবে।

উপদেশ : এই আয়াতের উপদেশ হচ্ছে : যে কোনও সৎকাজে প্রথমে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে, কিন্তু মোমেন বান্দারা আল্লাহ্‌র উপরে ভরসা রেখে ধৈর্য অবলম্বন করবে এবং অধ্যবসায়ের সাথে আল্লাহ্‌র প্রদত্ত কর্তব্য কর্ম করে যাবে। আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি সত্য। জীবনের সর্বক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য।

৪৪২৮। মরণশীল মানুষ প্রত্যেকেই আল্লাহ্‌র করুণার পাত্র। কারণ পৃথিবীতে কারও পক্ষেই দোষত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব নয়। পাপী, ও পূণ্যাত্মা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব আধ্যাত্মিক অগ্রগতি অনুযায়ী আল্লাহ্‌র নিকট বিবেচনাধীন, প্রত্যেকেরই দোষত্রুটি বিদ্যমান। আল্লাহ্‌ এসব দোষত্রুটি ক্ষমা না করলে বহু পূর্বেই তারা ধ্বংস হয়ে যেতো [ ১৬ : ৬১ ]। সুতারাং মরণশীল প্রতিটি মানুষকে পাপী , পূণ্যাত্মা নির্বিশেষে আল্লাহ্‌র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। পৃথিবীতে কেহই দোষত্রুটির উর্দ্ধে নয়। এমন কি আল্লাহ্‌র নিকটবর্তী বান্দারাও দোষত্রুটি মুক্ত হতে পারেন না। দেখুন উদাহরণ [ ৩৮ : ২৪ - ২৫ ] ও টিকা ৪১৭৫ - ৭৬]। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ রসুলকে [ সা ] তার ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছেন। নিজস্ব দায়িত্ব ব্যতীতও নবী রসুলদের তাদের উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এক মহান দায়িত্ব।

৪৪২৯। দেখুন আয়াত [৩ : ৪১ ]। ঊষালগ্ন এবং গোধূলী লগ্ন আল্লাহ্‌র ধ্যানের সর্বাপেক্ষা প্রকৃষ্ট সময়। এই দুটি হচ্ছে দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণ। বিশ্ব প্রকৃতি , দিক্‌চক্রবাল রং এর পরিবর্তনের ধারাতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে যা মানুষের মনকেও প্রভাবিত করে। কিন্তু এখানে " সকাল-সন্ধ্যা " বাক্যটি একটি বাগধারা বিশেষ যে বাগ্‌ধারার অনুরূপ বাগ্‌ধারা বাংলাতে চালু আছে " দিন ও রাত্রি " যার অর্থ হচ্ছে সর্বক্ষণ , সকল সময়।

৫৬। যদি কেহ বিধিসংগত ক্ষমতা লাভ ব্যতীত আল্লাহ্‌র নিদর্শন সম্বন্ধে বির্তক করে - তাহলে তাদের অন্তরে মহৎ হওয়ার [ আকাঙ্খা ] ব্যতীত অন্য কিছু নাই - যা তারা কখনও অর্জনে সক্ষম হবে না ৪৪৩০। অতএব আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনিই [ সব ] শোনেন এবং দেখেন।

৪৪৩০। " তাদের অন্তরে মহৎ হওয়ার [ আকাঙ্খা ] ব্যতীত অন্য কিছু নাই।" তারা আল্লাহ্‌র আয়াত সম্পর্কে কোন দলিল প্রমাণ ব্যতিরেকে তর্ক করে। এদের উদ্দেশ্য ধর্মকে অস্বীকার করা। রাসুলের যুগ গত হয়েছে বহু পূর্বে ; তবু আজও এদের অবস্থান সমভাবে বিদ্যমান। এরা ধর্মের নামে বির্তক করে এবং ধর্মের মাঝে বিভেদের সৃষ্টি করে। এর কারণ এই আয়াতে আল্লাহ্‌ প্রকাশ করেছেন - আর তা হচ্ছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচারের আকাঙ্খা। তাদের বির্তকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্ম মহিমা প্রচার। আত্ম -অহংকারের এও এক বিশেষ রূপ। " উহাদের অন্তরে আছে কেবল অহংকার যা সফল হবার নয়।" আল্লাহ্‌র বিধান হচ্ছে এ সব আত্মগর্বে গর্বিত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য সফল হওয়ার নয়। কারণ তাদের কাজের কোনও মহৎ উদ্দেশ্য নাই। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে আত্মপ্রচারের মাধ্যমে নিজস্ব ক্ষমতা [ রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ] অক্ষুন্ন রাখা। সুতারাং এ থেকে যেনো সাধারণ মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে।

মন্তব্য : এ কারণেই বাংলাদেশে ধর্মের নামে বিভিন্ন ঈদের জামাত সংঘটিত হয়। এ থেকে ধর্মের যারা ধারক বাহক বা রক্ষক বলে নিজেদের দাবী করেন তারা সাবধান হবেন।

৫৭। নিশ্চয়ই আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি ,মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা অধিকতর গুরুতর [ বিষয় ]। তথাপি অধিকাংশ মানুষ তা বুঝতে পারে না ৪৪৩১।

৪৪৩১। মহা বিশ্বের সৃষ্টি কোটি কোটি তারার সমষ্টিতে। অগণিত ছায়াপথের সমষ্টিতে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। ক্ষুদ্র সৌর জগত তারই একটি অংশ মাত্র। অদপেক্ষা ক্ষুদ্র আমাদের এই গ্রহ, পৃথিবী যার নাম। সেই ক্ষুদ্র পৃথিবীর কোটি কোটি সৃষ্ট পদার্থের ভীড়ে মানুষও একটি ক্ষুদ্র অংশ। সমগ্র চিত্র অনুধাবন করলে স্রষ্টার বিশাল বিপুল সৃষ্টির সমারোহে মানুষের অস্তিত্ব অতি নগণ্য। সেই মানুষ কি ভাবে এত অহংকারপূর্ণ হতে পারে ? বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সমগ্র সৃষ্টির সে এক ক্ষুদ্র কণা মাত্র। এই বিশাল বিশ্ব ভূবনের স্রষ্টা মহান আল্লাহ্‌। তাঁর সৃষ্টি নৈপুন্যের জ্ঞান যুগ যুগ ধরে মানুষ অন্বেষণ করে আসছে - যে জ্ঞানের অপর নাম " বিজ্ঞান "। তবুও মানুষ সে জ্ঞানের সীমানার সন্ধান লাভ করে নাই। নিউটনের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষ জ্ঞান সমুদ্রের তীরে নুড়ি কুড়াচ্ছে মাত্র। মানুষের সর্বোচ্চ কল্পনাও আল্লাহ্‌র অসীম জ্ঞানের সীমানাকে উপলব্ধিতে অক্ষম। সুতারাং মানুষ কেন উদ্ধত গর্বভরে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে ? কেন সে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশে বিশ্বাস স্থাপন করে না? কেন সে আত্মার অমরত্বে সন্দেহ পোষণ করে ? এর একটাই কারণ তা হচ্ছে আত্মগর্ব ও অহংকার তার প্রকৃত জ্ঞান চক্ষুকে আবরণে ঢেকে রাখে। ফলে সে প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধিতে অক্ষম। দেখুন পরবর্তী টিকা।

৫৮। অন্ধ এবং যারা [ পরিষ্কার ] দেখতে পায় , তারা সমান নয় ৪৪৩২। যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তারা, যারা মন্দ কাজ করে তাদের সমান নয়। উপদেশ দ্বারা তোমরা খুব সামান্যই শিক্ষা লাভ করে থাক।

৪৪৩২। ইসলাম ধর্মের মূল কথা অন্তরের ঐকান্তিক বিশ্বাস বা ঈমান এক আল্লাহ্‌র প্রতি। শুধু বিশ্বাসই শেষ কথা নয়। বিশ্বাসকে সৎকর্মের মাধ্যমে চরিত্রে প্রতিফলিত করতে হবে তবেই সে পূণ্যাত্মা বা মোমেন বান্দা রূপে আল্লাহ্‌র নিকট পরিগণিত হবে। যে লোক বিশ্বাস বা ঈমানকে সৎকর্মের মাধ্যমে তার চরিত্রে প্রতিফলিত করে তাদের জন্য আল্লাহ্‌ দিব্য জ্ঞানের দৃষ্টি উম্মীলিত করেন। এদেরকেই এই আয়াতে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি বলা হয়েছে। কারণ তারা হন অন্তর্দৃষ্টি ও প্রজ্ঞা সম্পন্ন। ফলে তারা জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে তার প্রকৃত অবস্থা অনুযায়ী উপলব্ধিতে সক্ষম এবং তারা হন বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ফলে তারা দৃপ্ত পদক্ষেপে আল্লাহ্‌র প্রদর্শিত পথে পদচারণা করেন। যারা পাপ কাজে নিমগ্ন থাকে তাদের তুলনা করা হয়েছে অন্ধ ব্যক্তির সাথে। কারণ পাপের কালিমা তাদের অন্তর্দৃষ্টিকে ঢেকে দেয়; ফলে তারা হয় জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দিব্যজ্ঞান রহিত। আল্লাহ্‌ তাদের দিব্য জ্ঞান শূন্য করেন। এরা হয় আধ্যাত্মিক দিক থেকে অন্ধ [Spiritual blind ]। ফলে এদের চরিত্রে প্রকৃত জ্ঞান , বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার অভাব পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো এদের চারিপার্শ্বে উজ্জ্‌লভাবে দীপ্তিমান হওয়া সত্বেও এরা কিছুই দেখতে পায় না, উপলব্ধি করে না। অন্ধরা যেরূপ তার চারিপার্শ্বের আলোর বন্যাকে দেখতে পায় না। সুতারাং চক্ষুষ্মান হয়েও সে অন্ধ। সে ঈমান বা বিশ্বাসকে প্রতিহত করেছে। সুতারাং তার পক্ষে কোনও সর্তকবাণী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাও অসম্ভব।

৫৯। কেয়ামত অবশ্যই আসবে ৪৪৩৩; এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই। তবুও অধিকাংশ লোকে তা বিশ্বাস করে না।

৪৪৩৩। কেয়ামত হচ্ছে এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন ধারার সমাপ্তি ঘোষণা। আবার অন্য অর্থে কেয়ামত হচ্ছে পরকালের সিংহদ্বার বিশেষ।

৬০। এবং তোমাদের প্রভু বলে, " আমাকে আহ্বান কর , আমি তোমাদের [ ডাকে ] সাড়া দিব। ৪৪৩৪ কিন্তু যারা অহংকার , ঔদ্ধত্যে আমার এবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের জাহান্নামে লাঞ্ছিত অবস্থায় দেখতে পাবে।" ৪৪৩৪

৪৪৩৪। নশ্বর দেহের ধ্বংস আছে ; কিন্তু আত্মা অমর। আল্লাহ্‌র নিকট থেকে এর যাত্রা শুরু আবার পরলোকে আল্লাহ্‌র নিকটই তার প্রত্যাবর্তন। সেখানেই আত্মার পরিপূর্ণতা, যাত্রার শেষ। এই যাত্রাপথে আমাদের আত্মিক পরিপূর্ণতার জন্য আমরা ইহকালের ও পরকালের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করতে পারি। এই আয়াতে আল্লাহ্‌ আমাদের সুসংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি বান্দার প্রার্থনা শোনার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকেন। এই ডাকের জন্য কোনও মাধ্যমের প্রয়োজন নাই। বান্দা ও স্রষ্টার মাঝে সরাসরি যোগাযোগ ঘটে। তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন ; ক্ষমা করবেন , হেদায়েত করবেন , এবং আমাদের জীবনের চলার পথকে বাধাহীন করবেন। কিন্তু স্রষ্টা ও মানুষের মধ্যে যে বাধার প্রাচীর ব্যবধান রচনা করে তা হচ্ছে মানুষের অহংকার ফলে তার পতন ঘটে ও তার জন্য অপমানকর শাস্তি আরোপিত হয় [ ৩৭ : ১৮ ] ও টিকা ৪০৪৪।

উপদেশ : অহংকার একটি অত্যন্ত খারাপ রীপু ; যার দরুন শয়তানের পতন ঘটে ছিলো।

রুকু - ৭

৬১। আল্লাহ্‌-ই তোমাদের বিশ্রামের জন্য রাত্রিকে সৃষ্টি করেছেন ৪৪৩৫ এবং [ তোমাদের ] দেখার সুবিধার জন্য দিনকে করেছেন [ আলোকজ্জ্বল ]। অবশ্যই আল্লাহ্‌ মানুষের প্রতি করুণা ও অনুগ্রহে পূর্ণ। তবুও অধিকাংশ লোকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

৪৪৩৫। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের দিন ও রাত্রির পরিক্রমাকে বহুবার উপমা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। দিন ও রাত্রির পটভূমিতে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে আল্লাহ্‌র রহমত ও অনুগ্রহের প্রতি। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহসমূহ হৃদয়ে উপলব্ধির মাধ্যমে , আমাদের উচিত আল্লাহ্‌র এবাদত করা , তাঁর হেদায়েতের জন্য প্রার্থনা করা , একমাত্র তাঁরই উপরে নির্ভর করা , এবং শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁরই প্রশংসা করা।

৬২। ইনিই আল্লাহ্‌, তোমাদের প্রভু, সকল জিনিষের স্রষ্টা। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। তাহলে কিভাবে তোমরা সত্য থেকে বিভ্রান্ত হচ্ছ ? ৪৪৩৬

৪৪৩৬। যদি আমরা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কিছুর প্রতি আমাদের এবাদত নিবেদন করি যেমন আত্ম অহংকার , তবে তা আমাদের চিত্তে বিভ্রান্তি ঘটাবে ও আমাদের পথভ্রান্ত করবে। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের পরিবর্তে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। তার পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনা অকৃতজ্ঞতার নিদর্শন ফলে আল্লাহ্‌র প্রদত্ত বোধশক্তির তারা সঠিক ব্যবহারে অপারগ হয়, তারা হয় বিভ্রান্ত।

৬৩। যারা আল্লাহ্‌র নিদর্শনকে প্রত্যাখান করে , এভাবেই তাদের বিভ্রান্ত করা হয়ে থাকে ৪৪৩৭।

৪৪৩৭। দেখুন উপরের দুইটি টিকা। মানুষ যখন আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করে , আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে তখনই মানুষ আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য উপাস্যের উপাসনার দিকে আকৃষ্ট হয়। কারণ ঈমানহীন বা বিশ্বাসহীন আত্মার মাঝে আল্লাহ্‌র নূর প্রবেশ লাভ না করার ফলে আত্মার মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

৬৪। আল্লাহ্‌-ই ৪৪৩৮ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিশ্রামস্থল করেছেন ৪৪৩৯ ,এবং আকাশকে করেছেন চাঁদোয়া এবং তোমাদের আকৃতিতে সৌন্দর্য দান করেছেন ৪৪৪০ - এবং তোমাদের পবিত্র ও উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণে সমৃদ্ধ করেছেন ৪৪৪১ ; - তিনিই আল্লাহ্‌ ,তোমাদের প্রভু। সুতারাং পৃথিবীর অধিপতি আল্লাহ্‌র মহিমা ঘোষণা কর।

৪৪৩৮। পূর্বের আয়াত সমূহে যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে , মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ; যে অভিজ্ঞতা সে লাভ করে পৃথিবীর প্রতিদিনের জীবনযাত্রা থেকে। এই আয়াত ও পরবর্তী আয়াতে মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে উচ্চতর যুক্তির মাধ্যমে। বলা হয়েছে , " হে মানুষ সামগ্রিকভাবে তাকিয়ে দেখ, নিখিল বিশ্বকে তোমাদের বাসপোযোগী করা হয়েছে। যা সৌরমন্ডলের অন্য কোনও গ্রহকে করা হয় নাই।" যারা বিজ্ঞান পড়েছেন তারা জানেন ; কি অপূর্ব যত্নে পৃথিবীর আবহাওয়া মন্ডল দ্বারা পৃথিবীকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। কি অপূর্ব কৌশলে পৃথিবীর সকল সৃষ্ট পর্দাথ সমন্বিত শৃঙ্খলার মাধ্যমে পরস্পরের অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। এই নিখিল বিশ্বভূবনের মাঝে সকল সৃষ্ট প্রাণী ও জীবকূলের মাঝে মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। মানুষের অবয়বের গঠন, আকৃতি সবই করা হয়েছে সকল প্রাণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। মানুষের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা। মানুষকে আল্লাহ্‌ দান করেছেন জীবনোপকরণে রুচীশীলতা, জীবন যাপনে সংস্কৃতি , আধ্যাত্মিক জীবনে শ্রেষ্ঠত্ব এবং সমৃদ্ধির উপায়। এর পরেও মানুষ কেন অনুভব করে না আল্লাহ্‌র মাহাত্ব্য ও করুণা এবং আল্লাহ্‌র প্রশংসা দ্বারা আত্মাকে সঞ্জীবিত করে না ?

৪৪৩৯। "বিশ্রামস্থল " - এই শব্দটি দ্বারা এ কথাই বুঝানো হয়েছে যে, পৃথিবী একটি পান্থশালা বিশেষ। পান্থশালাতে মানুষের অবস্থান যেরূপ অল্পকিছুকালের জন্য, পৃথিবী নামক এই পান্থশালাকেও বাসের উপযোগী করা হয়েছে মানুষের জন্য; মানুষের "শিক্ষানবীশকাল" অতিক্রম করার জন্য ; যেনো পরকালের স্থায়ী ঠিকানাতে সে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

৪৪৪০। দেখুন আয়াত [ ৭ : ১১ ] এবং টিকা ৯৯৬। আকৃতি ও গঠন বলতে শুধুমাত্র দেহসৌষ্ঠবই নয়,মানুষের জন্মগত মানসিক দক্ষতা ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকেও বুঝানো হয়েছে। আদম ও ইভের দেহসৌষ্ঠব বর্ণনার জন্য কবি মিলটনের ভাষার ব্যবহার করা যায় , "Two of far noble shape, erect and tall" [ Paradise lost iv 288 ] । মানসিক ও নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দক্ষতা সম্বন্ধে বলা চলে, তা হচ্ছে সর্বোচ্চ। কারণ আল্লাহ্‌ মানুষের মাঝে তাঁর রূহুর কিছু অংশ ফুৎকারে প্রবেশ করিয়েছেন [ ১৫ : ২৯ ]।

৪৪৪১। 'রিযি্ক ' শব্দটি ব্যপক অর্থ বহন করে। সাধারণ মানুষ সঙ্কীর্ণার্থে শব্দটির প্রয়োগ করে থাকে দেহের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে খাদ্যসামগ্রী তাকেই। তবে ব্যপক অর্থে রিযিক হচ্ছে দেহ, মন , আত্মার খোরাক। মানুষের দেহ, মন ও আত্মার বিকাশ ও সমৃদ্ধির জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবই রিযিক। দেখুন আয়াত [ ১৬ : ৭৩ ] ও টিকা ২১০৫।

৬৫। তিনিই চিরঞ্জীব ৪৪৪২। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই। একান্ত আনুগত্যের সাথে তাঁকে আহ্বান কর। সকল প্রশংসা পৃথিবীর অধিপতির।

৪৪৪২। আল্লাহ্‌র বিশেষণ ; এ জন্য দেখুন আয়াত [ ২ : ২৫৫ ] ও টিকা ২৯৬।

৬৬। বল, " আল্লাহ্‌ ব্যতীত তোমরা যাদের আহ্বান কর তাদের আহ্বান করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে - যখন আমার নিকট আমার প্রভুর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এসেছে। এবং আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে আমি যেনো জগতসমূহের প্রভুর নিকট আত্মসমর্পনকারী হই ৪৪৪৩। "

৪৪৪৩। আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর সব কিছুর আরাধনা মানসিক বিভ্রান্তিমাত্র। যে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশে দৃঢ় বিশ্বাসী সে অবশ্যই এই সত্যকে অন্তরের মাঝে উপলব্ধি করে। যার অন্তরের মাঝে আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো প্রবেশ করে, তখন তার পক্ষে অন্যসব মিথ্যা উপাস্যেকে মনে হবে ভ্রান্ত। তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থলের অনুভূতিও আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ ও মিথ্যা উপাসনার অসাড়তা সম্বন্ধে আত্মাকে সচেতন করে এবং ব্যক্তির নিজস্ব ইচ্ছাকে আল্লাহ্‌র ইচ্ছার সাথে একত্বতা ঘোষণা করে। ব্যক্তির সমস্ত ইচ্ছা আল্লাহ্‌র ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পিত হয়। যখন কেউ সর্বশক্তিমান , চিরঞ্জীব আল্লাহ্‌র ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পন করে তখন তার আত্মার মাঝে বিশেষ শক্তির উদ্ভব ঘটে যা মিথ্যা ও বিলীয়মান উপাসনার হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করে।

উপদেশ : আল্লাহ্‌র ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পনই হচ্ছে ইসলামের প্রকৃত রূপ। প্রতিনিয়ত মানুষের বিভিন্ন রীপুসমূহের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে এই অবস্থা লাভের সুযোগ ঘটে।

৬৭। তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে ৪৪৪৪; তারপরে শুক্রবিন্দু থেকে, তারপরে জোঁকের মত জমাট রক্তপিন্ড থেকে। অতঃপর তিনি তোমাদের শিশুরূপে আলোতে বের করেন। তারপরে যেনো তোমরা [ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে ] যৌবনে পৌঁছাতে পার এবং পরে যেনো বৃদ্ধ হও। যদিও তোমাদের মধ্যে কতক পূর্বেই মারা যায়। এবং [অধিকাংশকে ] এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হয় এই হেতু যে , তোমরা যেনো জ্ঞান আহরণ করতে পার।

৪৪৪৪। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ২২ : ৫ ] ও টিকা ২৭৭৩ এবং ২৭৭৪। মানব সন্তানের সারা জীবনের বিভিন্ন ধাপকে এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে :

১) প্রথমঃ অতি সাধারণ বস্তু থেকে মানব দেহের সৃষ্টি যা হচ্ছে ধূলা বা কাঁদা।

২) দ্বিতীয়ঃ পিতার নিকট থেকে প্রাপ্ত শুক্রানু ;

৩) তৃতীয় : মাতৃ জরায়ুতে ডিম্বের নিষিক্তকরণ;

৪) চতুর্থঃ মানব শিশুরূপে ধরণীতে আগমন ;

৫) পঞ্চমঃ পূর্ণ যৌবন প্রাপ্তি

৬) ষষ্ঠঃ বার্দ্ধক্য বা ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা ;

৭) সপ্তমঃ পরিসমাপ্তি বা মৃত্যু।

এই সাতটি ধাপের মাধ্যমে মানব জীবনের বিভিন্ন ধাপকে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে কখনও কখনও শেষের ধাপগুলি কেহ কেহ সমাপ্ত করতে সক্ষম হয় না। তবে সকল ক্ষেত্রেই প্রত্যেক ব্যক্তিকেই আল্লাহ্‌ নির্ধারিত নির্দ্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত করতে হয় এবং জীবনের পূর্ণতা প্রাপ্ত হতে হয়। এভাবেই মাটির তৈরী মাবন, জীবনের মহত্তর ও বৃহত্তর উদ্দেশ্যকে সফলতার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়এবং আল্লাহ্‌র ইচ্ছার পূর্ণতা সাধন করে। মানুষ যেনো সমগ্র বিষয়টিকে চিন্তার মাধ্যমে অনুধাবন করে।

৬৮। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান ৪৪৪৫। ফলে যখন তিনি কোন কাজ করতে ইচ্ছা করেন , তিনি শুধু বলেন, " হও" এবং তা হয়ে যায়।

৪৪৪৫। জীবন ও মৃত্যুর চাবিকাঠি আল্লাহ্‌র হাতে। আল্লাহ্‌ কোনও সময় বা কাল বা পার্থিব জিনিষের উপরে নির্ভরশীল নন। তিনি কোনও কিছু করতে চাইলে শুধুমাত্র বলেন 'হও' এবং তা হয়ে যায়। দেখুন আয়াত [ ১৬: ৪০ ] ও টিকা ২০৬৬ এবং আয়াত [ ৩৬ : ৮২ ] ও টিকা ৪০২৮। ঠিক বিপরীত ভাবে কোনও কিছু ধ্বংস করার ইচ্ছা হলে তার ইচ্ছাই যথেষ্ঠ -সর্ব অস্তিত্ব , অস্তিত্ববিহীন হয়ে যায়। জীবন স্তব্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। জীবন ও মৃত্যুর সীমানা বড় সুক্ষ ; যা বিধান করেন একমাত্র আল্লাহ্‌।

রুকু - ৮

৬৯। তুমি কি তাদের দেখ নাই , যারা আল্লাহ্‌র নিদর্শন সম্পর্কে বির্তক করে ? কি ভাবে তারা [ বাস্তবতা থেকে ] ফিরে যায় ? - ৪৪৪৬

৪৪৪৬। আল্লাহ্‌র নিদর্শন তারাই সুস্পষ্টরূপে দেখতে পায় যারা তা দেখতে এবং বিশ্বাস করতে আগ্রহী।যারা আগ্রহী নয়, তাদের নিকট আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহ হবে কুয়াশাবৃত্ত এবং ধোঁয়াটে। ফলে তারা কোন কিছুই স্পষ্টরূপে অনুভব করতে অক্ষম হবে। এরাই তো বিপথগামী। দেখুন [ ১০ : ৩২ ] আয়াত।

৭০। যারা অস্বীকার করে কিতাব এবং [প্রত্যাদেশ ] যা সহ আমার রাসুলদের প্রেরণ করেছিলাম তা ৪৪৪৭। কিন্তু শীঘ্রই তারা জানতে পারবে। -

৪৪৪৭। কিতাব দ্বারা এখানে কোরাণ শরীফকে বোঝানো হয়েছে। অথবা " মূল কিতাবের" [ ৩: ৭; ১৩ : ৩৯ ] অংশ বা প্রত্যাদেশ। যুগে যুগে নবী রসুলদের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ পৃথিবীতে প্রত্যাদেশের মাধ্যমে কিতাব প্রেরণ করে থাকেন।

৭১। যখন তাদের গলায় পরানো হবে বেড়ী ও শিকল ৪৪৪৮। তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে -

৪৪৪৮। পৃথিবীতে প্রতিটি কর্মেরই প্রতিফল বিদ্যমান। এই নিয়ম আধ্যাত্মিক জগতের জন্যও প্রযোজ্য। আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ গ্রহণ আধ্যাত্মিক জগতের সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। যে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করে সে তার নিজের শাস্তি নিজে আহ্বান করে। পাপ কাজ তার প্রভুর আসনে স্থান পায়। তার সমস্ত সত্ত্বা , চেতনা , অনুভব , উপলব্ধি পাপের চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে সে স্বাধীনভাবে চিন্তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আত্মার স্বাধীনতা হয় অবলুপ্ত। সে পরিণত হয় পাপের ক্রীতদাসে। পাপের দাসত্ব তাকে বেষ্টন করে থাকে গলদেশে বেড়ীর ন্যায় এবং ধীরে ধীরে তা আরও দৃঢ় হয়। কারণ আত্মার স্বাধীনতাকে সে পাপের দাসে পরিণত করেছে , রীপুর কাছে সে পরাজয় বরণ করেছে। যে মানুষ রীপুর দাস সে কখনও সত্য ও ভালোর জন্য ইচ্ছা থাকলেও ত্যাগ স্বীকার করতে পারবে না। কারণ তার সে স্বাধীনতা নাই। ফলে নানারূপ কুপ্রথা , কুসংস্কার , মিথ্যা উপাসনা তার সর্বসত্ত্বাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যে "সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি" সে স্রষ্টার নিকট থেকে লাভ করেছিলো , তা সে সঠিক ব্যবহারে অক্ষম হয়; ভালোকে গ্রহণে সে হবে অক্ষম , মন্দকে গ্রহণে সে বাধ্য হয়। তার রীপু তাকে তা বাধ্য করে। পৃথিবীর সমগ্র জীবনে তার এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং তার সর্বোচ্চ পরিণতি ঘটে শেষ বিচারের দিনে কেয়ামতে। পাপের দাসত্বের বেড়ি তাদের গলদেশ বেষ্টনকরে থাকবে।

৭২। তীব্র দুগর্ন্ধযুক্ত ফুটন্ত তরল পদার্থের মধ্যে ৪৪৪৯। তারপরে তাদের [ জাহান্নামের ] আগুনে পোড়ানো হবে।

৪৪৪৯। পাপীদের পাপ কাজের কর্মফলের পরিণতি তাদের পরলোকে ভোগ করতে হবে। অসহনীয় পরিণতির দিকে তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের আগুনে তারা নিমজ্জিত হবে।

৭৩। তারপর তাদের বলা হবে, " কোথায় তারা যাদের তোমরা এবাদতে শরীক করতে -

৭৪। "আল্লাহকে অপমান করে ? " তারা উত্তর করবে " তারা আমাদের হতাশার মাঝে ত্যাগ করে চলে গেছে, বরং পূর্বে আমরা এমন কিছুকে আহ্বান করি নাই [ যার প্রকৃত অস্তিত্ব আছে ]।" এ ভাবেই আল্লাহ্‌ অবিশ্বাসীদের বিপথে ত্যাগ করে থাকেন ৪৪৫০।

৪৪৫০। যারা পাপী তারা এক আল্লাহ্‌র উপাসনার পরিবর্তে বহু উপাস্যের উপাসনা করে - নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী। মিথ্যা , অন্যায় , অবিচার , কুসংস্কার , কুপ্রথা ইত্যাদি তাদের জীবনের প্রধান উপাস্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কেয়ামত দিবসে সত্যের প্রকৃতরূপ তাদের সম্মুখে উদ্ভাসিত হবে। পৃথিবীর জীবনে পাপিষ্ঠদের চোখে যা কিছু সুন্দর ও মনোরম মনে হতো, পরলোকে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে। তারা সেদিন উপলব্ধি করবে যে, তারা প্রকৃত সত্যকে আহ্বান করে নাই, তারা যা আহ্বান করেছে তা ছিলো অপচ্ছায়া মাত্র; যার কোন বাস্তব সত্য ভিত্তি নাই। আল্লাহ্‌র হেদায়েত ও করুণাকে অস্বীকার করার এই হবে পরিণতি। তারা সেদিন ভুলের গোলক ধাঁধাতে ঘুরপাক খেতে থাকবে , কিন্তু মুক্তি মিলবে না।

৭৫। এর কারণ হচ্ছে ৪৪৫১ , পৃথিবীতে তোমরা সত্য ব্যতীত অযথা উল্লাস করে বেড়াতে এবং এই হেতু যে তোমরা দম্ভ করে বেড়াতে।

৪৪৫১। আল্লাহ্‌র করুণা থেকে মানব তখনই বঞ্চিত হয় যখন সে ১) ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যায় ও অবৈধ ভোগের মাধ্যমে উল্লাস প্রকাশ করে এবং ২) দাম্ভিক ও গর্বভরে সত্যকে অস্বীকার করে। এক কথায় যার অর্থ দাঁড়ায় মানুষ যখন ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যায় ও অবৈধ জিনিষের আশ্রয় গ্রহণ করে, তখন সে আত্মার মাঝে আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো নির্বাপিত করে। দম্ভ ও অহংকারই হচ্ছে এ ব্যাপারে সর্বপ্রধান হাতিয়ার।

উপদেশ : দম্ভ ও অহংকার প্রকৃত হেদায়েত গ্রহণের পথে বাঁধা স্বরূপ।

৭৬। তোমরা বসবাস করার জন্য জাহান্নামের দ্বার দিয়ে প্রবেশ কর ৪৪৫২। উদ্ধত অহংকারীদের জন্য [তা] হবে নিকৃষ্ট আবাসস্থল।

৪৪৫২। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৩৯ : ৭২ ]।

৭৭। অতএব তুমি ধৈর্যের সাথে অধ্যাবসায়ী হও; অবশ্যই আল্লাহ্‌র অঙ্গীকার সত্য। এবং আমি ওদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার কিছু যদি তোমাকে [এই জীবনেই ] দেখাই অথবা [ তার পূর্বেই ] তোমার মৃত্যু ঘটাই , [ এর যে কোনটাতেই ] তারা সকলেই আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করবে ৪৪৫৩।

৪৪৫৩। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ১০ : ৪৬ ] ও টিকা ১৪৩৮। "ওদের" দ্বারা পাপী ও কাফেরদের বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ্‌ পাপী, অন্যায়কারী ও কাফেরদের যে শাস্তির ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন তা পূর্ণ হবেই। রসুলুল্লাহ্‌র [সা ] জীবদ্দশায় পাপিষ্ঠদের শাস্তি হোক বা না হোক , তাহাদের সকলকেই আল্লাহ্‌র দরবারে নীত করা হবে।

৭৮। তোমার পূর্বেও আমি অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি। আমি তাদের কারও কারও কাহিনী তোমার নিকট বর্ণনা করেছি; এবং কারও কারও কাহিনী তোমার নিকট বর্ণনা করি নাই ৪৪৫৪। আল্লাহ্‌র অনুমতি ব্যতীত কোন রাসুলের পক্ষে কোন নিদর্শন উপস্থিত করা [ সম্ভব ] নয়। কিন্তু যখনই আল্লাহ্‌র হুকুম নির্ধারিত হয়েছে , তখন সত্য ও ন্যায়ের সাথে বিষয়টির মীমাংসা হয়ে গেছে ; এবং যারা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেছিলো, তারা তৎক্ষণাত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো ৪৪৫৫।

৪৪৫৪। দেখুন আয়াত [ ৪ : ১৬৪ ]। আল্লাহ্‌ যুগে যুগে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট সত্যের বাণী প্রচারের জন্য নবী রসুলদের প্রেরণ করেছেন। কোরাণের মাধ্যমে তাদের কিছু সংখ্যকের নাম আমরা জানি, তবে তারা ব্যতীত বহু সংখ্যক সত্যের প্রচারক আছেন , যাদের নাম আমরা জানি না। কোরাণ শরীফে তাদের উল্লেখ করা হয় নাই। সুতারাং যেখানেই প্রকৃত সত্যের সন্ধান লাভ করবো আমাদের তা সনাক্ত করা উচিত আল্লাহ্‌র বাণীরূপে।

৪৪৫৫। বিশ্ব প্রকৃতির সর্বত্র আল্লাহ্‌র নিদর্শন বিদ্যমান। যে তা অন্তরের মাঝে উপলব্ধি করে সেই তা সব সময়ে দেখতে পায়। এর পরেও যদি অবিশ্বাসীরা রাসুলের নিকট অলৌকিক কর্মকান্ড প্রদর্শনের দাবী করে তবে তা প্রদান করার কোনও বাধ্যবাধকতা বা যৌক্তিকতা নাই। আল্লাহ্‌র আজ্ঞা অনুযায়ী তা প্রদর্শিত হয় - মানুষের খেয়াল খুশী চরিতার্থ করার জন্য তা ব্যবহার করা হবে না - এমন কি তিনি যদি আল্লাহ্‌র নবীও হোন তবুও তা করা হবে না। পৃথিবী তার নিজস্ব গতিতে চলবে - কারও ইচ্ছায় সেখানে কোনও ব্যতিক্রম ঘটবে না। যদি কখনও তা ঘটে তবে বুঝতে হবে তা হবে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। বুঝতে হবে যে সেদিন মিথ্যাশ্রয়ীদের অন্যায়ের পাত্র পূর্ণ হয়েছে। পাপীদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং তাদের সাময়িক বিরামের সময় শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ্‌র করুণা ও রহমতের পরিবর্তে ন্যায় বিচারের সময় আসন্ন। মিথ্যাশ্রয়ীদের ধ্বংস তখন অনিবার্য হয়ে দাড়াবে।

উপদেশ : যারা মিথ্যার আশ্রয় জীবনের প্রতিপদে অনুসরণ করে তারা সত্যের ডাক শুনতে বা উপলব্ধি করতে অক্ষম।

রুকু - ৯

৭৯। আল্লাহ্‌-ই তোমাদের জন্য গৃহপালিত পশু সৃষ্টি করেছেন , যেনো উহাদের কতককে আরোহণের জন্য এবং কতককে আহার করার জন্য ব্যবহার করতে পার। ৪৪৫৬

৮০। [ এ ছাড়াও ] এদের মধ্যে তোমাদের জন্য [ বিবিধ ] উপকার রয়েছে। তাদের মাধ্যমে তোমাদের হৃদয়ের ইচ্ছার প্রয়োজন মেটাতে পার [ যদি কিছু থাকে ] , এবং ইহাদের উপর ও নৌযানের উপর তোমাদের বহন করা হয়।

৪৪৫৬। দেখুন আয়াত [ ১৬ : ৫ - ৮ ]। আন্‌ -আম বা গৃহপালিত পশু। গৃহপালিত পশু যখন বন্য অবস্থায় থাকে তখন তারা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর জন্তুরূপে পরিগণিত হয়। কিন্তু যখন তা পোষ মানানো হয় , সেই জন্তুই মানুষের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে। অবিশ্বাসীরা আল্লাহ্‌র নিদর্শনের জন্য অলৌকিক ক্রিয়াকর্মের অনুসন্ধান করে। কিন্তু প্রকৃতির এসব দান যেমন, বন্য পশুর মানুষের বশ্যতা স্বীকার করা এও কি আল্লাহ্‌র বিশেষ করুণার নিদর্শন নয় মানুষের জন্য? গৃহপালিত পশুর উপকারিতা অনুধাবনযোগ্য। তাদের ব্যবহার করা হয় আরোহণের জন্য, আহারের জন্য, খাদ্য হিসেবে , ভূমি কর্ষণের জন্য, দুধের জন্য অথবা পশম থেকে উল তৈরীর জন্য , তাদের হাড় ও শিং থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বস্তু তৈরীর জন্য, চামড়াকে জুতা , ব্যাগ প্রভৃতি প্রস্তুতের জন্য ব্যবহার করা হয়। এক কথায় মানুষ প্রকৃতির দান পশু সম্পদের উপরে নানা ভাবে নির্ভরশীল। পশুর ব্যবহারের আরও উচ্চতর দিক হচ্ছে : প্রাচীনকালে তা ব্যবহার করা হতো ভারবাহী পশুরূপে যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান উপকরণই ছিলো পশু। এ ভাবেই পশু কে বলা যায় সভ্যতার মূল ভিত্তি - যার মাধ্যমে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে ফলে মানুষের সভ্যতার উন্নতি ঘটেছে। পশুকে সে হিসেবে স্থলভাগের জাহাজ হিসেবে পরিগণিত করা যেতো , সমুদ্রে যেমন সমুদ্রগামী জাহাজের ভূমিকা দেখুন আয়াত [ ৩০: ৪৬ ] ও টিকা ৩৫৬৫। স্থলপথে ও জলপথে যাতায়াতের ফলেই এক জাতি আর এক জাতির সংস্পর্শে আসে, মানুষে মানুষে পরস্পরে মেলামেশার সুযোগ লাভ করে, ফলে সংস্কৃতির প্রসার ও বিকাশ ঘটে। মানুষের সভ্যতার বিকাশের এই সুযোগ করে স্রষ্টা প্রকারান্তে তার করুণার নিদর্শন উপস্থাপন করেছেন মানুষের সম্মুখে। যে হৃদয় দিয়ে তা অনুভব করে সেই তো বিশ্বস্রষ্টার নিদর্শনকে প্রত্যক্ষ করে।

৮১। এবং তিনি [ সর্বদা ] তোমাদের তাঁর নিদর্শনাবলী দেখিয়ে থাকেন ৪৪৫৭। সুতারাং তোমরা আল্লাহ্‌র কোন নিদর্শনাবলী অস্বীকার করবে ?

৪৪৫৭। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র কল্যাণ হস্তের স্পর্শ ও করুণার নিদর্শন এত বেশী বিদ্যমান যে তা গুণে বা লিখে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তা শুধুমাত্র উপলব্ধির বিষয়। মরণশীল মানুষ তা কিভাবে অস্বীকার করে ? সূরা আর রাহমানের এই -ই হচ্ছে মূল বক্তব্য [ সূরা নং ৫৫ ]।

৮২। তারা কি পৃথিবী ভ্রমণ করে না ও দেখে না যে তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিলো ? [পৃথিবীতে] তারা সংখ্যায় এদের অপেক্ষা অধিক ছিলো ; এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে [ যা তারা রেখে গেছে ] তারা ছিলো অধিক শ্রেষ্ঠ। তবুও তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের কোন উপকারে আসে নাই ৪৪৫৮।

৪৪৫৮। দেখুন আয়াত [ ৯ : ৬৯ ]। এই আয়াতে আল্লাহ্‌ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন, "পৃথিবী ভ্রমণ " - অর্থাৎ প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পর্যলোচনা করে শিক্ষা গ্রহণ করা। পৃথিবীতে বহু জাতি গত হয়েছে যারা জ্ঞানে , বিজ্ঞানে , সভ্যতা সংস্কৃতিতে, র্কীতিতে শক্তি ও ক্ষমতাতে ছিলো প্রবল - কিন্তু তারা আল্লাহকে এবং আল্লাহ্‌র অপ্রতিরোধ্য আইনকে ভুলে গিয়েছিলো। ফলে তাদের কোন সাফল্যই স্থায়ী হতে পারে নাই। শেষ পর্যন্ত তারা ধ্বংস হয়ে কালের অতলে হারিয়ে যায়।

মানুষ অন্ধ গর্ব ও উদ্ধত অহংকারে সর্ব কৃতিত্বের দাবী করে। কিন্তু মানুষের বর্তমান সাফল্যের ভিত্তি অতীতের কর্মফলের উপরে নির্ভরশীল। পূর্ববর্তীদের কার্যের দরুণই বর্তমানে সাফল্য লাভ সম্ভব হয়েছে। সে একক কৃতিত্বের অধিকারী নয় এই সাধারণ সত্যকে সে ভুলে যায়। দম্ভ ও অহংকার তাদের অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণের প্রধাণ অন্তরায়। দেখুন আয়াত [ ৪০ : ২১ ] ও টিকা ৪৩৮৭। যে যুক্তি উপরের আয়াতে আরম্ভ করা হয়েছিলো ; এই আয়াতে তা শেষ করা হয়েছে।

৮৩। যখনই স্পষ্ট নিদর্শনসহ রাসুলগণ তাদের নিকট আসতো , তখন তারা তাদের নিজেদের জ্ঞান [ ও দক্ষতার ] গৌরবে দম্ভ প্রকাশ করতো ৪৪৫৯। কিন্তু তারা যা [ যে শাস্তি ] নিয়ে ঠাট্টা -বিদ্রূপ করতো উহাই তাদের বেষ্টন করলো ৪৪৬০।

৪৪৫৯। আত্মগর্ব ও আত্মগরিমা , অহংকার , দম্ভ ও উদ্ধতপনার জন্ম দেয়। আর অহংকার সকল পতনের কারণ ও সকল পাপের মূল বা উৎস। " জ্ঞানের দম্ভ" অর্থাৎ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবী বা অহংকার করা। এভাবেই কোন ব্যক্তি বিশেষ বা জাতি অহংকারের দরুন ধ্বংস হয়ে যায়।

৪৪৬০। দেখুন আয়াত [ ১৬ : ৩৪ ]। আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচার সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবেই। যারা আল্লাহ্‌র সম্বন্ধে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে, আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচারের শাস্তি তাদের সর্ব অস্তিত্বকে বেষ্টন করে ফেলবে। তাদের জাঁকজমক , জ্ঞান বিজ্ঞান ,দ্‌ক্ষতা , শক্তি ক্ষমতা কোন কাজেই আসবে না।

৮৪। কিন্তু যখন তারা আমাদের শাস্তিকে প্রত্যক্ষ করলো , তারা বলেছিলো , " আমরা আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করলাম - এবং আমরা তাঁর সাথে যাদের শরীক করতাম তাদের প্রত্যাখান করলাম। "

৮৫। কিন্তু যখন তারা [ সত্যি সত্যিই] আমার শাস্তিকে প্রত্যক্ষ করলো তখন তাদের ঈমানের স্বীকারোক্তি কোন উপকারে আসলো না ৪৪৬১। [ এরূপই হচ্ছে ] আল্লাহ্‌র নিয়ম তার বান্দাদের জন্য [ প্রাচীন কাল থেকে ]। এ ভাবেই আল্লাহকে প্রত্যাখানকারীরা [ সম্পূর্ণ ] ধ্বংস হয়ে যায়।

৪৪৬১। বিশ্বাস বা ঈমান হচ্ছে না দেখে অন্তরের মাঝে আল্লাহ্‌র অস্তিত্বকে উপলব্ধি করা। তারাই হচ্ছেন মুত্তাকী বা ঈমানদার যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করেন [ ২ : ৩ ]। মৃত্যুর পরে আমাদের সম্মুখে পরলোকের জীবন প্রকৃত সত্যরূপে উপস্থিত হবে। তখন আর পরলোকের জীবন অদৃশ্য থাকবে না। কিন্তু তখন সে জীবনে ও আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা কোনও গুরুত্বই বহন করবে না। পৃথিবীতে আল্লাহ্‌ ‌বারে বারে সুযোগ দান করেছেন ঈমান আনার জন্য কিন্তু অবিশ্বাসীরা সর্বদা তা প্রত্যাখান করেছে। কিন্তু ঈমান ঘোষণা করার সময় যখন শেষ হয়ে যায়, যখন অদৃশ্য জগত আর অদৃশ্য থাকে না , তখন ঈমানের ঘোষণা কোনও উপকারেই আসবে না। আল্লাহ্‌র কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ্‌র বিধান হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহকে চাক্ষুস না দেখেও তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আমাদের চরিত্রকে আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী পরিশুদ্ধ করে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্যের উপযোগী করা। যারা তা না করবে,তারা তাদের বিদ্রোহ ও আনুগত্যহীনতার জন্য শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যাবে।