+
-
R
[দয়াময় , পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : হা-মিম সিরিজের সাতটি সূরার মধ্যে এটা হলো চতুর্থ সূরা। হা-মিম্ শ্রেণীর সূরার মূল বিষয়বস্তু সম্বন্ধে দেখুন ৪০ নম্বর সূরার ভূমিক।
এই সূরাতে সত্য এবং প্রত্যাদেশের প্রকৃত দ্যুতির সাথে মিথ্যা এবং মিথ্যা উপাস্যের প্রতারণামূলক চাকচিক্যের বৈষম্য তুলনা করা হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম , মুসা , এবং ঈসার উদাহরণের মাধ্যমে মিথ্যার প্রকৃতি রূপকে অনাবৃত করা হয়েছে এবং সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। মূল শব্দটি [ Zukhruf , স্বর্ণ অলংকার ] আয়াত নং ৩৮ তে উল্লেখ করা হয়েছে , কিন্তু এর ধারণা সূরাটির সর্বত্র বিদ্যমান।
সার সংক্ষেপ : কিতাব বা প্রত্যাদেশের বই সকল কিছুর ধারণাকে স্বচ্ছ করে দেয় যদিও অজ্ঞ ও বোকারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ স্থায়ী হবে এবং এর বিদ্রূপকারীরা ধবংস হয়ে যাবে [ ৪৩ : ১- ২৫ ]।
হযরত ইব্রাহীম গতানুগতিক উপাসনার, মিথ্যা প্রথার প্রতারণা ও অসাধুতাকে অনাবৃত করে দেন। পৃথিবীর জাগতিক ঔজ্জ্বল্য এবং সাজসজ্জা চিরস্থায়ী নয়। মুসার সাথে ফেরাউনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ যুদ্ধের শেষ পরিণতি কি হয়েছিলো ? [ ৪৩ : ২৬ - ৫৬ ]।
হযরত ঈসা ছিলেন আল্লাহ্র সেবক। কিন্তু তাঁর অনুসারীরা সাম্প্রদায়িকতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে হযরত ঈসা সম্বন্ধে অসার তর্কে লিপ্ত হয়। আল্লাহ্ প্রকৃত সত্য জানেন। অবিশ্বাস সত্বেও আল্লাহ্র সত্য ভাস্বর হবে। [ ৪৩ : ৫৭-৮৯]।
[দয়াময় , পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৪৬০৫। দেখুন [ ৪৩ : ৭ ] আয়াত ও টিকা ৪৫৩৩।
৪৬০৬। দেখুন [ ৩ : ৭ ] আয়াত ও টিকা ৩৪৭ এবং আয়াত [ ১৩ : ৩৯ ] ও টিকা ১৮৬৪। উম্মুল কিতাব বা প্রত্যাদেশের মূল ভিত্তি। সংরক্ষিত ফলক [ লাওহ্ মাহ্ফুজ দেখুন ৮৫ : ২২ ] হচ্ছে প্রত্যাদেশের আসল অংশ বা সারাংশ , মূল নীতিমালা অথবা বিশ্বজনীন , চিরস্থায়ী আল্লাহ্র আইনের মূল উৎস। এই মূল উৎস থেকে সকল জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অনন্ত ধারা প্রবাহিত হয় যা সর্ব যুগে সকল মনের সৃজনশীল ক্ষমতা ও চিন্তাকে জাগ্রত করে। উম্মুল কিতাব আল্লাহ্র কাছে সংরক্ষিত। এই কিতাবের সম্মান ও জ্ঞান আমাদের ধারণার বাইরে।
৪৬০৭। আল্লাহ্ অনুগ্রহপূর্বক আমাদের তাঁর প্রত্যাদেশ প্রেরণ করে , অসীম করুণা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন তবুও মানুষ বিভ্রান্ত হয়, অকৃতজ্ঞ হয়, অবজ্ঞা করে , আল্লাহ্ শিক্ষার বিরুদ্ধাচারণ করে। আল্লাহ্র অসীম করুণা না থাকলে, তিনি যদি ক্ষমাশীল না হতেন তবে তার হেদায়েতের আলো মানুষ জাতির উপর থেকে তুলে নেওয়াটাই ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি তা না করে তার করুণা ধারা অনবরত মানুষের উপরে বর্ষণ করে চলেছেন, অতীতেও করেছেন , বর্তমানেও করছেন, ভবিষ্যতে যারা আসবে তারাও তা লাভ করবে।
৪৬০৮। মানুষের বিদ্রোহ এবং একঘেয়েমী সত্বেও আল্লাহ্ যুগে যুগে মানুষের হেদায়েতের জন্য নবী ও রসুলদের প্রেরণ করেছেন।
৪৬০৯। যুগে যুগে আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার শাস্তি হচ্ছে তাদের পতন। রাসুলের (সা ) সমসাময়িক আরব মোশরেকদের এই আয়াতের মাধ্যমে সাবধান করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী জাতিসমূহ যাদের ধ্বংস করা হয়েছে , তারা ধনে-সম্পদে, শক্তিতে শৌর্যে বীর্যে আরবদের তুলনায় বহুগুণ শক্তিশালী ছিলো। কিন্তু আল্লাহ্র আইন অস্বীকার করার দরুণ তাদের ভাগ্যেও ধ্বংস নেমে এসেছিলো। অতীতের বিদ্রোহী জনগোষ্ঠি বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাক্ষী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
৪৬১০। দেখুন আয়াত [ ২৯ : ৬১ ] এবং টিকা ৩৪৯৩ এবং আয়াত [ ৩১ : ২৫ ] ও টিকা ৩৬১৩। পৃথিবীতে এরূপ লোকের সংখ্যা বহু আছে যারা তাদের আত্মার মাঝে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও শক্তিকে অনুধাবন করা সত্বেও আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্ব করে।দুঃখ- বিপর্যয়ে তারা আল্লাহ্র পরিবর্তে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি বা অন্যান্য শক্তিহীন যেমন : রত্ন পাথর , জ্যোতিষ, মাজার ইত্যাদির সাহায্য প্রার্থনা করে। এভাবেই তারা আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্বে অংশ গ্রহণ করে। ফলে তারা সৃষ্ট জীবের প্রতি আল্লাহ্র অসীম করুণা ও দয়াকে তাদের আত্মার মাঝে অনুভব করতে ব্যর্থ হয়।
৪৬১১। এই আয়াত সমূহের বাগ্মিতা লক্ষ্য করার মত সৌন্দর্য্যমন্ডিত। উপরে বর্ণিত এসব অসঙ্গত লোক যারা আল্লাহ্র আইন মেনে চলতে অপারগ তাদের সঙ্গতীবিহীন বক্তব্যের জবাব এখানে দেয়া হয়েছে। এ সব লোক আল্লাহ্র ক্ষমতাকে অনুধাবন করে কিন্তু আল্লাহ্র রহমত ও করুণাকে অনুধাবনে অক্ষম হয়, তাদের চৈতন্যদয়ের জন্য আলংকারিক ভাষাতে আল্লাহ্র রহমত ও করুণার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
৪৬১২। পূর্বের টিকা দেখুন।
৪৬১৩। দেখুন আয়াত [ ২০ : ৫৩ ] ও টিকা ২৫৭৬। 'Mihad' শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় কার্পেট বা বিস্তৃত বিছানা অর্থাৎ পৃথিবীর ভূভাগ শুধুমাত্র চলাচলের স্বাধীনতাই ধারণ করে না তা বিশ্রামেরও স্থান। চলাচলের রাস্তা বা পথ বাক্যটি দ্বারা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে যার মধ্যে স্থল পথ , জলপথ ও বিমান পথ অন্তর্ভূক্ত।
৪৬১৪। "পরিমিত ভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেন " অর্থাৎ ভূখন্ডের প্রয়োজন অনুযায়ী। এই প্রয়োজন স্থানীয় হতে পারে বা সামগ্রিক ভূখন্ডের জন্য হতে পারে। কোন দেশ বা মহাদেশের বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। বন্যা বা খরা হচ্ছে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক অবস্থা , যার মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্ষমতার অস্বাভাবিক প্রকাশ ঘটে - যার উদ্দেশ্য বোঝা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
৪৬১৫। "এভাবেই তোমাদিগকে পুনরুত্থিত করা হবে" দেখুন আয়াত [ ৩৫ : ৯ ] ও টিকা ৩৮৮১। আয়াতটির ভাষা লক্ষ্য করুন। প্রথম পুরুষ "আমি " শব্দটি এখানেপরিবর্তন করে তৃতীয় পুরুষ ব্যবহার করা হয়েছে , পুনরুত্থান শব্দটিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের জন্য। এ পুনরুত্থান আল্লাহ্র এক বিশেষ ক্ষমতার প্রকাশ যা সৃষ্টির অন্যান্য সাধারণ কর্ম থেকে পৃথক।
৪৬১৬। দেখুন [ ২০ : ৫৩ ] আয়াতের টিকা নং ২৫৭৮। আরও দেখুন আয়াত [ ৩৬ : ৩৬ ] ও টিকা ৩৯৮১।
৪৬১৭। নৌযান ও আনআম বা পশুকে, সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ঘোড়া, উট, জাহাজ, নৌকা, স্টীমার , রেলগাড়ী , এরোপ্লেন ইত্যাদি বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমগুলির মধ্যে গৃহপালিত পশুদের প্রশিক্ষণ দান ও যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলনের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োজন। এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা আল্লাহ্র বিশেষ দান মানুষের প্রতি যা জীব জগতের অন্যান্য প্রাণীকে দান করা হয় নাই।
৪৬১৮। দেখুন পূর্বের টিকা। বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা এ কথা অনুধাবন করে যে, প্রকৃত মঙ্গল ও মানব সভ্যতার বিভিন্ন উপকরণ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র দান যা মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
৪৬১৯। পৃথিবীতে যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম। যন্ত্র ও পশু উভয়েই যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পশুকে পোষ মানিয়ে এবং যান্ত্রিক শক্তিকে উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে স্ববশে এনে মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে চলাচল করে। দূরদূরান্তের এই জাগতিক ভ্রমণকে উপামা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, পৃথিবী থেকে পারলৌকিক যাত্রাকে উপলব্ধিতে ধারণ করার জন্য। মৃত্যুর সিংহদুয়ার অতিক্রম করে পরলোকে প্রবেশ করে মানুষ। পৃথিবীর ফেলে আসা সময়ের কার্যপ্রণালী তাকে অনন্ত সময়ের রাজ্যে নিয়ে যায়। পৃথিবীতে অতিবাহিত সময়কে সেকি সঠিক ভাবে পোষ মানাতে পেরেছে অর্থাৎ আল্লাহ্র দেখানো রাস্তাকে ব্যবহার করতে পেরেছে ?না কি পৃথিবীর সময়কে সে বুনো জন্তুর মত যা খুশী যেমন খুশী ভাবে অতিবাহিত হতে দিয়েছে ? যার উদ্দেশ্য তারা জানে না ? বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি যখনই কোন যান বাহনে আরোহণ করে তার মনে এই চিন্তা উদয় হওয়া উচিত যে যানবাহন যেরূপ নির্দ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়ে দেয়, সেরূপ আমাদের পার্থিব কর্মময় জীবনের শেষ প্রত্যাবর্তন প্রতিপালকের নিকট। পার্থিব সফরের সময় পরকালের কঠিন সফরের কথা স্মরণ করা , যে সফর অতিক্রম করার জন্য সৎকর্ম ব্যতীত অন্য কোন সওয়ারী কাজে আসবে না।
৪৬২০। এই আয়াতে প্রকৃত বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষের বিপরীতে অকৃতজ্ঞ ও আল্লাহ্ বিদ্রোহীদের আচরণ তুলে ধরা হয়েছে। এ সব লোক আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্ব করে থাকে। তারা আল্লাহ্র পুত্র ও কন্যার কল্পনা করে থাকে।এ ভাবেই তারা আল্লাহ্র প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়। জীবন সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্রএকত্বে বিশ্বাস। এই বিশ্বাসে যে অংশীদার স্থাপন করে তার থেকে অকৃতজ্ঞ আর কে আছে। এই বিবরণ আরও বিশদ করা হয়েছে পরের অধ্যায় বা রুকুতে।
রুকু - ২
৪৬২১। পৌত্তলিক আরবদের উপাস্য ছিলো দেবী বা স্ত্রী ভগবান। এখনও ভারতের পৌত্তলিকেরা যাকে 'মা' বলে সম্বোধন করে। আবার তারা দেবদূতদের আল্লাহ্র কন্যারূপে পরিগণিত করতো। এভাবেই তারা নিজেদের ধ্যান ধারণা অনুযায়ী আল্লাহ্র সংসার কল্পনা করতো। পৌত্তলিক আরবদের বৈশিষ্ট্য ছিলো তারা কন্যা সন্তানকে ঘৃণা করতো কিন্তু আল্লাহ্র জন্য তারা সেই কন্যা সন্তানই বরাদ্দ করেছিলো। এখনও পৌত্তলিক ভারতে ঠিক এই একই ধারণা প্রচলিত আছে। যে কন্যা সন্তানকে তারা ঘৃণা করতো সে অপাংক্তেয় কন্যা তারা কিভাবে আল্লাহ্র জন্য বরাদ্দ করে ?
৪৬২২। দেখুন [ ১৬ : ৫৭ - ৫৯ ] আয়াত এবং টিকাসমূহ। এই আয়াতে কঠোর পরিহাসচ্ছলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে পৌত্তলিকদের নিন্দনীয় আচরণের প্রতি। যে কন্যা সন্তানের জন্য তারা লজ্জিত হয় এবংযে সন্তানকে তারা ঘৃণা করে থাকে সেই কন্যা সন্তান তারা কিভাবে আল্লাহ্র প্রতি আরোপ করে ?
৪৬২৩। কন্যা সন্তান দুর্বলতার প্রতীক।সাধারণতঃ তাদের প্রতিপালিত করা হয় তুচ্ছ গহনা, অসাড় অলংকারে মুড়ে , উজ্জ্বল রেশমে আবৃত করে যেনো তারা তাদের লাজ নম্র আচরণ বলবৎ রাখে। তাদের বাইরের পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে দেয়া হয় না। ফলে তারা সংসার সমরাঙ্গনে যুদ্ধ করতে বা নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে অক্ষম। কারণ তাদের ব্যক্তিত্ব বা নিজস্ব মতামত গঠিত হওয়ার সুযোগই দান করা হয় না।তার অর্থ পৌত্তলিকরা কি আল্লাহ্র প্রতি কন্যা সন্তানের ন্যায় গুণাবলী আরোপ করে , আর সে কারণেই তারা আল্লাহ্র জন্য কন্যা সন্তানের কথা বলে ?
৪৬২৪। ফেরেশতারা আমাদের ধারণায় সর্বাপেক্ষা পূত এবং পবিত্র। তাদের প্রতি পুরুষ বা নারী এরূপ ধারণা প্রয়োগ করা সত্যের অপলাপ। কারণ ফেরেশতারা হলেন শক্তি [ Force ] যারা সর্বদা আল্লাহ্র হুকুম বা ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করে থাকেন। তারা আল্লাহ্র হুকুমের দাস ও আল্লাহ্র দূত। তারা সর্বদা আল্লাহ্র সেবায় সর্বান্তকরণে ব্যপৃত। যদি কেউ ফেরেশতাদের আল্লাহ্র কন্যারূপে পরিগণিত করে,তবে সে আল্লাহ্র একত্বের ধারণাকে বিসর্জন দেয় ও আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এদেরই আমলানামা বা কৃতকর্মের হিসেবের খাতাতে বিরাট কলঙ্কের ফোঁটা থাকবে যার হিসাব তাদের দিতে হবে।
৪৬২৫। সবচেয়ে বিদ্রূপাত্মক যুক্তির উত্থাপন করে তারা এবং তা হচ্ছে : "দয়াময় আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে আমরা এসব পূঁজা করতাম না।" কেন আল্লাহ্ আমাদের তা থেকে বিরত রাখেন না ? অর্থাৎ তারা তাদের পাপ কার্যের সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব আল্লাহ্র উপরে ন্যস্ত করে থাকে। মানুষের সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর জীবন অতিবাহিত করা। এই মূল সত্যকে তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে অবজ্ঞা করে। তারা প্রকৃত সত্যকে নিয়ে প্রতারণা মূলক খেলা করে। তারা অনুমানের উপরে ভিত্তি করে সত্যকে অস্বীকার করে থাকে।
৪৬২৬। দেখুন আয়াত [ ৬ : ১১৬ ]।
৪৬২৭। এ সব মোশরেকরা পূর্বপুরুষদের প্রথা ও নিয়মনীতির দোহাই দেয়। হযরত ইব্রাহীম ছিলেন মোশরেক আরবদের পূর্বপুরুষ। কিন্তু তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের মূর্তি পূঁজার প্রথা অস্বীকার করেন এবং আল্লাহ্র একত্বের প্রতি বিশ্বাসে ছিলেন অবিচল। সুতারাং পূর্বপুরুষদের দোহাই তাদের জন্য প্রযোজ্য ছিলো না - ছিলো মিথ্যা ওজর।
৪৬২৮। প্রকৃত সত্য হচ্ছে পূর্বপুরুষদের প্রথা মানার মিথ্যা ওজর ছিলো সুবিধাভোগীদের নিজস্ব সুবিধা লাভের কৌশল মাত্র। এ সবের ভিত্তি হচ্ছে মিথ্যা ও মোনাফেকী। পৃথিবীতে যুগে যুগে সুবিধাভোগীরা এ ভাবেই সত্যকে অস্বীকার করে থাকে। পৃথিবীর ধর্মীয় ইতিহাসে এই সত্যের সাক্ষ্য মেলে।
৪৬২৯। সর্তককারী বা আল্লাহ্ প্রেরিত নবী ও রসুলেরা যুগে যুগে সত্য প্রচার করেছেন। সেই সর্তককারী সত্যের শ্রেষ্ঠত্বের দিকে এবং পূর্বপুরুষদের মিথ্যা প্রথা সমূহের অসাড়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু মোশরেকরা তাঁর শিক্ষাকে প্রত্যাখান করে এবং তাকে আল্লাহ্র নবী বলে মানতে অস্বীকার করে। [ দেখুন আয়াত ২৬-২৮ ]। এক কথায় বলা যায় তারা প্রত্যাদেশে বিশ্বাস করে না এবং তারা তাদের পাপের পথ অনুসরণ করতে থাকে। অবশ্যই তাদের শেষ পরিণতি হবে ধ্বংস।
সূরা যুখরুখ
সূরা যুখরুফ বা স্বর্ণ অলংকার - ৪৩
৮৯ আয়াত, ৭ রুকু , মক্কী[দয়াময় , পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : হা-মিম সিরিজের সাতটি সূরার মধ্যে এটা হলো চতুর্থ সূরা। হা-মিম্ শ্রেণীর সূরার মূল বিষয়বস্তু সম্বন্ধে দেখুন ৪০ নম্বর সূরার ভূমিক।
এই সূরাতে সত্য এবং প্রত্যাদেশের প্রকৃত দ্যুতির সাথে মিথ্যা এবং মিথ্যা উপাস্যের প্রতারণামূলক চাকচিক্যের বৈষম্য তুলনা করা হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম , মুসা , এবং ঈসার উদাহরণের মাধ্যমে মিথ্যার প্রকৃতি রূপকে অনাবৃত করা হয়েছে এবং সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। মূল শব্দটি [ Zukhruf , স্বর্ণ অলংকার ] আয়াত নং ৩৮ তে উল্লেখ করা হয়েছে , কিন্তু এর ধারণা সূরাটির সর্বত্র বিদ্যমান।
সার সংক্ষেপ : কিতাব বা প্রত্যাদেশের বই সকল কিছুর ধারণাকে স্বচ্ছ করে দেয় যদিও অজ্ঞ ও বোকারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ স্থায়ী হবে এবং এর বিদ্রূপকারীরা ধবংস হয়ে যাবে [ ৪৩ : ১- ২৫ ]।
হযরত ইব্রাহীম গতানুগতিক উপাসনার, মিথ্যা প্রথার প্রতারণা ও অসাধুতাকে অনাবৃত করে দেন। পৃথিবীর জাগতিক ঔজ্জ্বল্য এবং সাজসজ্জা চিরস্থায়ী নয়। মুসার সাথে ফেরাউনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ যুদ্ধের শেষ পরিণতি কি হয়েছিলো ? [ ৪৩ : ২৬ - ৫৬ ]।
হযরত ঈসা ছিলেন আল্লাহ্র সেবক। কিন্তু তাঁর অনুসারীরা সাম্প্রদায়িকতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে হযরত ঈসা সম্বন্ধে অসার তর্কে লিপ্ত হয়। আল্লাহ্ প্রকৃত সত্য জানেন। অবিশ্বাস সত্বেও আল্লাহ্র সত্য ভাস্বর হবে। [ ৪৩ : ৫৭-৮৯]।
সূরা যুখরুফ বা স্বর্ণ অলংকার - ৪৩
৮৯ আয়াত, ৭ রুকু , মক্কী[দয়াময় , পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
০১। হা - মীম
০২। সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী কিতাবের শপথ , -
০৩। আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুর-আন ৪৬০৫ , যেনো তোমরা [ তা ] বুঝতে সক্ষম হও [এবং জ্ঞানী হতে শেখো ]।
০২। সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী কিতাবের শপথ , -
০৩। আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুর-আন ৪৬০৫ , যেনো তোমরা [ তা ] বুঝতে সক্ষম হও [এবং জ্ঞানী হতে শেখো ]।
৪৬০৫। দেখুন [ ৪৩ : ৭ ] আয়াত ও টিকা ৪৫৩৩।
০৪। এবং নিশ্চয় ইহা আমার উপস্থিতিতে কিতাব জননীর [লওহ্ মাহ্ফুজ ] মধ্যে রয়েছে , ইহা [ মর্যদায় ] অতি উচ্চ, জ্ঞানে পরিপূর্ণ ৪৬০৬।
৪৬০৬। দেখুন [ ৩ : ৭ ] আয়াত ও টিকা ৩৪৭ এবং আয়াত [ ১৩ : ৩৯ ] ও টিকা ১৮৬৪। উম্মুল কিতাব বা প্রত্যাদেশের মূল ভিত্তি। সংরক্ষিত ফলক [ লাওহ্ মাহ্ফুজ দেখুন ৮৫ : ২২ ] হচ্ছে প্রত্যাদেশের আসল অংশ বা সারাংশ , মূল নীতিমালা অথবা বিশ্বজনীন , চিরস্থায়ী আল্লাহ্র আইনের মূল উৎস। এই মূল উৎস থেকে সকল জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অনন্ত ধারা প্রবাহিত হয় যা সর্ব যুগে সকল মনের সৃজনশীল ক্ষমতা ও চিন্তাকে জাগ্রত করে। উম্মুল কিতাব আল্লাহ্র কাছে সংরক্ষিত। এই কিতাবের সম্মান ও জ্ঞান আমাদের ধারণার বাইরে।
০৫। আমি কি তোমাদের থেকে এই উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেবো এই কারণে যে, তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় ? ৪৬০৭।
৪৬০৭। আল্লাহ্ অনুগ্রহপূর্বক আমাদের তাঁর প্রত্যাদেশ প্রেরণ করে , অসীম করুণা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন তবুও মানুষ বিভ্রান্ত হয়, অকৃতজ্ঞ হয়, অবজ্ঞা করে , আল্লাহ্ শিক্ষার বিরুদ্ধাচারণ করে। আল্লাহ্র অসীম করুণা না থাকলে, তিনি যদি ক্ষমাশীল না হতেন তবে তার হেদায়েতের আলো মানুষ জাতির উপর থেকে তুলে নেওয়াটাই ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি তা না করে তার করুণা ধারা অনবরত মানুষের উপরে বর্ষণ করে চলেছেন, অতীতেও করেছেন , বর্তমানেও করছেন, ভবিষ্যতে যারা আসবে তারাও তা লাভ করবে।
০৬। প্রাচীনকালের সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি কত নবী প্রেরণ করেছিলাম ? ৪৬০৮
৪৬০৮। মানুষের বিদ্রোহ এবং একঘেয়েমী সত্বেও আল্লাহ্ যুগে যুগে মানুষের হেদায়েতের জন্য নবী ও রসুলদের প্রেরণ করেছেন।
০৭। কিন্তু এমন কোন নবী তাদের নিকট আসে নাই যাকে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করে নাই।
০৮। সুতারাং [ তাদের ] আমি ধ্বংস করেছিলাম - যারা ক্ষমতায় ইহাদের থেকেও শক্তিশালী ছিলো। আর [ এভাবেই ] চলে এসেছে পূর্ববর্তীদের অনুরূপ দৃষ্টান্ত৪৬০৯।
০৮। সুতারাং [ তাদের ] আমি ধ্বংস করেছিলাম - যারা ক্ষমতায় ইহাদের থেকেও শক্তিশালী ছিলো। আর [ এভাবেই ] চলে এসেছে পূর্ববর্তীদের অনুরূপ দৃষ্টান্ত৪৬০৯।
৪৬০৯। যুগে যুগে আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার শাস্তি হচ্ছে তাদের পতন। রাসুলের (সা ) সমসাময়িক আরব মোশরেকদের এই আয়াতের মাধ্যমে সাবধান করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী জাতিসমূহ যাদের ধ্বংস করা হয়েছে , তারা ধনে-সম্পদে, শক্তিতে শৌর্যে বীর্যে আরবদের তুলনায় বহুগুণ শক্তিশালী ছিলো। কিন্তু আল্লাহ্র আইন অস্বীকার করার দরুণ তাদের ভাগ্যেও ধ্বংস নেমে এসেছিলো। অতীতের বিদ্রোহী জনগোষ্ঠি বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাক্ষী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
০৯। যদি তুমি তাদের জিজ্ঞাসা কর, " কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে ? " ৪৬১০। তারাঅবশ্যই উত্তর দেবে, " এগুলি তো সৃষ্টি করেছেন মহাপরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহ্।" ৪৬১১।
৪৬১০। দেখুন আয়াত [ ২৯ : ৬১ ] এবং টিকা ৩৪৯৩ এবং আয়াত [ ৩১ : ২৫ ] ও টিকা ৩৬১৩। পৃথিবীতে এরূপ লোকের সংখ্যা বহু আছে যারা তাদের আত্মার মাঝে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও শক্তিকে অনুধাবন করা সত্বেও আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্ব করে।দুঃখ- বিপর্যয়ে তারা আল্লাহ্র পরিবর্তে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি বা অন্যান্য শক্তিহীন যেমন : রত্ন পাথর , জ্যোতিষ, মাজার ইত্যাদির সাহায্য প্রার্থনা করে। এভাবেই তারা আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্বে অংশ গ্রহণ করে। ফলে তারা সৃষ্ট জীবের প্রতি আল্লাহ্র অসীম করুণা ও দয়াকে তাদের আত্মার মাঝে অনুভব করতে ব্যর্থ হয়।
৪৬১১। এই আয়াত সমূহের বাগ্মিতা লক্ষ্য করার মত সৌন্দর্য্যমন্ডিত। উপরে বর্ণিত এসব অসঙ্গত লোক যারা আল্লাহ্র আইন মেনে চলতে অপারগ তাদের সঙ্গতীবিহীন বক্তব্যের জবাব এখানে দেয়া হয়েছে। এ সব লোক আল্লাহ্র ক্ষমতাকে অনুধাবন করে কিন্তু আল্লাহ্র রহমত ও করুণাকে অনুধাবনে অক্ষম হয়, তাদের চৈতন্যদয়ের জন্য আলংকারিক ভাষাতে আল্লাহ্র রহমত ও করুণার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
১০। যিনি ৪৬১২ , তোমাদের জন্য পৃথিবীকে [ কার্পেটের ন্যায় ] বিছিয়ে দিয়েছেন ৪৬১৩ , এবং তাতে তোমাদের জন্য তৈরী করেছে রাস্তা [ ও নদীপথ ] , যেনো তোমরা সঠিক পথের নির্দশনা পেতে পার।
৪৬১২। পূর্বের টিকা দেখুন।
৪৬১৩। দেখুন আয়াত [ ২০ : ৫৩ ] ও টিকা ২৫৭৬। 'Mihad' শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয় কার্পেট বা বিস্তৃত বিছানা অর্থাৎ পৃথিবীর ভূভাগ শুধুমাত্র চলাচলের স্বাধীনতাই ধারণ করে না তা বিশ্রামেরও স্থান। চলাচলের রাস্তা বা পথ বাক্যটি দ্বারা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে যার মধ্যে স্থল পথ , জলপথ ও বিমান পথ অন্তর্ভূক্ত।
১১। এবং যিনি আকাশ থেকে [মাঝে মাঝে ] পরিমিত ভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেন ৪৬১৪। অতঃপর আমি তার দ্বারা মৃত মাটিকে জীবনে ফিরিয়ে আনি। ঠিক এরূপেই তোমাদের [ মৃত্যু থেকে ] উত্থিত করা হবে ৪৬১৫।
৪৬১৪। "পরিমিত ভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেন " অর্থাৎ ভূখন্ডের প্রয়োজন অনুযায়ী। এই প্রয়োজন স্থানীয় হতে পারে বা সামগ্রিক ভূখন্ডের জন্য হতে পারে। কোন দেশ বা মহাদেশের বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। বন্যা বা খরা হচ্ছে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক অবস্থা , যার মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্ষমতার অস্বাভাবিক প্রকাশ ঘটে - যার উদ্দেশ্য বোঝা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
৪৬১৫। "এভাবেই তোমাদিগকে পুনরুত্থিত করা হবে" দেখুন আয়াত [ ৩৫ : ৯ ] ও টিকা ৩৮৮১। আয়াতটির ভাষা লক্ষ্য করুন। প্রথম পুরুষ "আমি " শব্দটি এখানেপরিবর্তন করে তৃতীয় পুরুষ ব্যবহার করা হয়েছে , পুনরুত্থান শব্দটিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের জন্য। এ পুনরুত্থান আল্লাহ্র এক বিশেষ ক্ষমতার প্রকাশ যা সৃষ্টির অন্যান্য সাধারণ কর্ম থেকে পৃথক।
১২। যিনি সব জিনিষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন ৪৬১৬, এবং যিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও গৃহপালিত পশু সৃষ্টি করেছেন যেনো তোমরা তাতে আরোহণ করতে পার ৪৬১৭।
৪৬১৬। দেখুন [ ২০ : ৫৩ ] আয়াতের টিকা নং ২৫৭৮। আরও দেখুন আয়াত [ ৩৬ : ৩৬ ] ও টিকা ৩৯৮১।
৪৬১৭। নৌযান ও আনআম বা পশুকে, সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ঘোড়া, উট, জাহাজ, নৌকা, স্টীমার , রেলগাড়ী , এরোপ্লেন ইত্যাদি বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমগুলির মধ্যে গৃহপালিত পশুদের প্রশিক্ষণ দান ও যান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলনের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োজন। এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা আল্লাহ্র বিশেষ দান মানুষের প্রতি যা জীব জগতের অন্যান্য প্রাণীকে দান করা হয় নাই।
১৩। যেনো তোমরা উহাদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, এবং এরূপভাবে বসে, তোমরা যেনো তোমাদের প্রভুর [দয়া ও ] অনুগ্রহ কীর্তন করতে পার ৪৬১৮ , এবং বল, " সব মহিমা আল্লাহ্র যিনি এগুলিকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন [ ব্যবহারের জন্য ], অথচ আমরা[ নিজেরা এগুলিকে ] কখনও বশীভূত করতে সমর্থ হতাম না।
৪৬১৮। দেখুন পূর্বের টিকা। বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা এ কথা অনুধাবন করে যে, প্রকৃত মঙ্গল ও মানব সভ্যতার বিভিন্ন উপকরণ সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র দান যা মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
১৪। " এবং আমরা আমাদের প্রভুর দিকে অবশ্যই ফিরে যাবো , ৪৬১৯।"
৪৬১৯। পৃথিবীতে যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম। যন্ত্র ও পশু উভয়েই যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পশুকে পোষ মানিয়ে এবং যান্ত্রিক শক্তিকে উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে স্ববশে এনে মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে চলাচল করে। দূরদূরান্তের এই জাগতিক ভ্রমণকে উপামা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, পৃথিবী থেকে পারলৌকিক যাত্রাকে উপলব্ধিতে ধারণ করার জন্য। মৃত্যুর সিংহদুয়ার অতিক্রম করে পরলোকে প্রবেশ করে মানুষ। পৃথিবীর ফেলে আসা সময়ের কার্যপ্রণালী তাকে অনন্ত সময়ের রাজ্যে নিয়ে যায়। পৃথিবীতে অতিবাহিত সময়কে সেকি সঠিক ভাবে পোষ মানাতে পেরেছে অর্থাৎ আল্লাহ্র দেখানো রাস্তাকে ব্যবহার করতে পেরেছে ?না কি পৃথিবীর সময়কে সে বুনো জন্তুর মত যা খুশী যেমন খুশী ভাবে অতিবাহিত হতে দিয়েছে ? যার উদ্দেশ্য তারা জানে না ? বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি যখনই কোন যান বাহনে আরোহণ করে তার মনে এই চিন্তা উদয় হওয়া উচিত যে যানবাহন যেরূপ নির্দ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়ে দেয়, সেরূপ আমাদের পার্থিব কর্মময় জীবনের শেষ প্রত্যাবর্তন প্রতিপালকের নিকট। পার্থিব সফরের সময় পরকালের কঠিন সফরের কথা স্মরণ করা , যে সফর অতিক্রম করার জন্য সৎকর্ম ব্যতীত অন্য কোন সওয়ারী কাজে আসবে না।
১৫। তথাপি তারা আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে অংশীদারিত্ব আরোপ করে [আল্লাহ্র সাথে ]। নিশ্চয়ই মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ ৪৬২০।
৪৬২০। এই আয়াতে প্রকৃত বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষের বিপরীতে অকৃতজ্ঞ ও আল্লাহ্ বিদ্রোহীদের আচরণ তুলে ধরা হয়েছে। এ সব লোক আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্ব করে থাকে। তারা আল্লাহ্র পুত্র ও কন্যার কল্পনা করে থাকে।এ ভাবেই তারা আল্লাহ্র প্রকৃত শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়। জীবন সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্রএকত্বে বিশ্বাস। এই বিশ্বাসে যে অংশীদার স্থাপন করে তার থেকে অকৃতজ্ঞ আর কে আছে। এই বিবরণ আরও বিশদ করা হয়েছে পরের অধ্যায় বা রুকুতে।
রুকু - ২
১৬। সে কি ! তিনি নিজে যা সৃষ্টি করেছেন তা থেকে কি তিনি নিজের জন্য কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদের মনোনীত করেছেন পুত্রের জন্য ? ৪৬২১
৪৬২১। পৌত্তলিক আরবদের উপাস্য ছিলো দেবী বা স্ত্রী ভগবান। এখনও ভারতের পৌত্তলিকেরা যাকে 'মা' বলে সম্বোধন করে। আবার তারা দেবদূতদের আল্লাহ্র কন্যারূপে পরিগণিত করতো। এভাবেই তারা নিজেদের ধ্যান ধারণা অনুযায়ী আল্লাহ্র সংসার কল্পনা করতো। পৌত্তলিক আরবদের বৈশিষ্ট্য ছিলো তারা কন্যা সন্তানকে ঘৃণা করতো কিন্তু আল্লাহ্র জন্য তারা সেই কন্যা সন্তানই বরাদ্দ করেছিলো। এখনও পৌত্তলিক ভারতে ঠিক এই একই ধারণা প্রচলিত আছে। যে কন্যা সন্তানকে তারা ঘৃণা করতো সে অপাংক্তেয় কন্যা তারা কিভাবে আল্লাহ্র জন্য বরাদ্দ করে ?
১৭। আর দয়াময় আল্লাহ্র প্রতি ওরা যা আরোপ করে ওদের কাউকে যখন সেই সন্তানের [ জন্মের ] সংবাদ দেয়া হয়, তাদের মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে মর্ম যাতনায় ক্লিষ্ট হয় ৪৬২২।
৪৬২২। দেখুন [ ১৬ : ৫৭ - ৫৯ ] আয়াত এবং টিকাসমূহ। এই আয়াতে কঠোর পরিহাসচ্ছলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে পৌত্তলিকদের নিন্দনীয় আচরণের প্রতি। যে কন্যা সন্তানের জন্য তারা লজ্জিত হয় এবংযে সন্তানকে তারা ঘৃণা করে থাকে সেই কন্যা সন্তান তারা কিভাবে আল্লাহ্র প্রতি আরোপ করে ?
১৮। যে [স্ত্রী জাতি ] অলঙ্কারে মন্ডিত হয়ে লালিত পালিত হয় এবং তর্ক বির্তক কালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ [সেকি আল্লাহ্র সন্তান হতে পারে ] ? ৪৬২৩
৪৬২৩। কন্যা সন্তান দুর্বলতার প্রতীক।সাধারণতঃ তাদের প্রতিপালিত করা হয় তুচ্ছ গহনা, অসাড় অলংকারে মুড়ে , উজ্জ্বল রেশমে আবৃত করে যেনো তারা তাদের লাজ নম্র আচরণ বলবৎ রাখে। তাদের বাইরের পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে দেয়া হয় না। ফলে তারা সংসার সমরাঙ্গনে যুদ্ধ করতে বা নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে অক্ষম। কারণ তাদের ব্যক্তিত্ব বা নিজস্ব মতামত গঠিত হওয়ার সুযোগই দান করা হয় না।তার অর্থ পৌত্তলিকরা কি আল্লাহ্র প্রতি কন্যা সন্তানের ন্যায় গুণাবলী আরোপ করে , আর সে কারণেই তারা আল্লাহ্র জন্য কন্যা সন্তানের কথা বলে ?
১৯। ওরা দয়াময় আল্লাহ্র বান্দা ফেরেশতাদের নারী বলে গণ্য করে। তাদের সৃষ্টি কি ওরা প্রত্যক্ষ করেছিলো ? তাদের সাক্ষ্য নথিভূক্ত করা হবে এবংতাদের কৈফিয়তের জন্য ডাকা হবে ৪৬২৪।
৪৬২৪। ফেরেশতারা আমাদের ধারণায় সর্বাপেক্ষা পূত এবং পবিত্র। তাদের প্রতি পুরুষ বা নারী এরূপ ধারণা প্রয়োগ করা সত্যের অপলাপ। কারণ ফেরেশতারা হলেন শক্তি [ Force ] যারা সর্বদা আল্লাহ্র হুকুম বা ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করে থাকেন। তারা আল্লাহ্র হুকুমের দাস ও আল্লাহ্র দূত। তারা সর্বদা আল্লাহ্র সেবায় সর্বান্তকরণে ব্যপৃত। যদি কেউ ফেরেশতাদের আল্লাহ্র কন্যারূপে পরিগণিত করে,তবে সে আল্লাহ্র একত্বের ধারণাকে বিসর্জন দেয় ও আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এদেরই আমলানামা বা কৃতকর্মের হিসেবের খাতাতে বিরাট কলঙ্কের ফোঁটা থাকবে যার হিসাব তাদের দিতে হবে।
২০। [ " আঃ " ] তারা বলে , " এটা যদি দয়াময় আল্লাহ্র ইচ্ছা হতো তবে আমরা এসব[ দেবতাদের ] পূঁজা করতাম না।" ৪৬২৫। এসব বিষয়ে উহাদের কোন জ্ঞানই নাই। তারা মিথ্যা ব্যতীত আর কিছু করে না ৪৬২৬।
৪৬২৫। সবচেয়ে বিদ্রূপাত্মক যুক্তির উত্থাপন করে তারা এবং তা হচ্ছে : "দয়াময় আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে আমরা এসব পূঁজা করতাম না।" কেন আল্লাহ্ আমাদের তা থেকে বিরত রাখেন না ? অর্থাৎ তারা তাদের পাপ কার্যের সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব আল্লাহ্র উপরে ন্যস্ত করে থাকে। মানুষের সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর জীবন অতিবাহিত করা। এই মূল সত্যকে তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে অবজ্ঞা করে। তারা প্রকৃত সত্যকে নিয়ে প্রতারণা মূলক খেলা করে। তারা অনুমানের উপরে ভিত্তি করে সত্যকে অস্বীকার করে থাকে।
৪৬২৬। দেখুন আয়াত [ ৬ : ১১৬ ]।
২১। সে কি ! আমি কি ওদের কোর-আনের পূর্বে এমন কোন কিতাব দিয়েছি যা ওরা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে ?
২২। বরং তারা বলে," নিশ্চয় আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের একটি নির্ভরযোগ্য ধর্মের অনুসারী পেয়েছি। এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি ৪৬২৭। "
২২। বরং তারা বলে," নিশ্চয় আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের একটি নির্ভরযোগ্য ধর্মের অনুসারী পেয়েছি। এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি ৪৬২৭। "
৪৬২৭। এ সব মোশরেকরা পূর্বপুরুষদের প্রথা ও নিয়মনীতির দোহাই দেয়। হযরত ইব্রাহীম ছিলেন মোশরেক আরবদের পূর্বপুরুষ। কিন্তু তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের মূর্তি পূঁজার প্রথা অস্বীকার করেন এবং আল্লাহ্র একত্বের প্রতি বিশ্বাসে ছিলেন অবিচল। সুতারাং পূর্বপুরুষদের দোহাই তাদের জন্য প্রযোজ্য ছিলো না - ছিলো মিথ্যা ওজর।
২৩। ঠিক একই ভাবে তোমার পূর্বে যখনই কোন স্থানে আমি সর্তককারী প্রেরণ করেছি - তখন উহার ধনবান ব্যক্তিরা বলেছে, ৪৬২৮ " আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের এক নির্ভরযোগ্য ধর্মের অনুসারী পেয়েছি এবং আমরা অবশ্যই তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করবো।"
৪৬২৮। প্রকৃত সত্য হচ্ছে পূর্বপুরুষদের প্রথা মানার মিথ্যা ওজর ছিলো সুবিধাভোগীদের নিজস্ব সুবিধা লাভের কৌশল মাত্র। এ সবের ভিত্তি হচ্ছে মিথ্যা ও মোনাফেকী। পৃথিবীতে যুগে যুগে সুবিধাভোগীরা এ ভাবেই সত্যকে অস্বীকার করে থাকে। পৃথিবীর ধর্মীয় ইতিহাসে এই সত্যের সাক্ষ্য মেলে।
২৪। সে বলেছিলো , " সে কি ! ৪৬২৯ তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষগণকে যে পথে পেয়েছ , আমি যদি তোমাদের জন্য তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথ নির্দ্দেশ এনে থাকি তবুও ? " তারা বলেছিলো, " আমরা অস্বীকার করি তোমাদের [নবী হিসেবে সত্যসহ ] প্রেরণ।"
৪৬২৯। সর্তককারী বা আল্লাহ্ প্রেরিত নবী ও রসুলেরা যুগে যুগে সত্য প্রচার করেছেন। সেই সর্তককারী সত্যের শ্রেষ্ঠত্বের দিকে এবং পূর্বপুরুষদের মিথ্যা প্রথা সমূহের অসাড়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু মোশরেকরা তাঁর শিক্ষাকে প্রত্যাখান করে এবং তাকে আল্লাহ্র নবী বলে মানতে অস্বীকার করে। [ দেখুন আয়াত ২৬-২৮ ]। এক কথায় বলা যায় তারা প্রত্যাদেশে বিশ্বাস করে না এবং তারা তাদের পাপের পথ অনুসরণ করতে থাকে। অবশ্যই তাদের শেষ পরিণতি হবে ধ্বংস।
২৫। সুতারাং আমি তাদের উপরে প্রতিশোধ নিয়েছি। এখন দেখো যারা [ সত্যকে ] প্রত্যাখান করেছিলো তাদের কি পরিণাম হয়েছে।
রুকু - ৩
৪৬৩০। মোশরেকরা পূর্বপুরুষের দোহাই দিয়ে পাপের পথ পরিত্যাগ করতো না। তাদের এই মিথ্যা দোহাই এর জবাব দেয়া হয়েছে হযরত ইব্রাহীমের উদাহরণের মাধ্যমে। দুভাবে তা ব্যক্ত করা হয়েছে : ১) ইব্রাহীম সত্য ধর্মের অনুসরণের জন্য পূর্বপুরুষদের মিথ্যা প্রথা ও নীতিকে পরিত্যাগ করেন। এর জন্য তিনি আত্মোৎসর্গ করতে দ্বিধা বোধ করেন নাই। এবং ২) ইব্রাহীম আরবদের পূর্বপুরুষ। যদি আরবরা পূর্বপুরুষদের প্রথার-ই অনুসরণ করতে চায় তবে তারা পূণ্যাত্মা পূর্বপুরুষ ইব্রাহীমের অনুসরণ না করে পাপিষ্ঠ পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে কেন ? দেখুন টিকা ৪৬২৭। ইব্রাহীমের কাহিনীর জন্য দেখুন [ ২১ : ৫১ - ৭০ ] আয়াত।
৪৬৩১। "স্থায়ী বাণীরূপে"- অর্থাৎ চিরস্থায়ী সত্য উপদেশ। তার বাণীর সারর্মম হচ্ছে , " আমি শুধু তারই উপাসনা করি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন [ আয়াত ২৭ ]।" এই হচ্ছে ইব্রাহীমের শিক্ষা যা শুধুমাত্র আল্লাহ্র একত্বের ঘোষণা দান করে। তাঁর এই সত্যের ঘোষণা তিনি তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন। তিনি আশা করেছেন পরবর্তী প্রজন্ম তা বিকৃত না করে পবিত্র রাখবে এবং সত্যেরএকত্বের বাণী চির সমুন্নত রাখবে। দেখুন [ ৩৭ : ১০৮ - ১১১ ]।
৪৬৩২। লক্ষ্য করুন আয়াতটিতে আল্লাহ্ নিজেকে একবচনে প্রথম পুরুষ ব্যবহার করে 'আমি ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন।এর মাধ্যমে আল্লাহ্ ইব্রাহীমের বংশধরদের দুটি শাখার উপরে তাঁরঅনুগ্রহ ও সযত্ন তত্বাবধানের গুরুত্বকে প্রকাশ করেছেন। এখানে বর্ণনা প্রসঙ্গে যাদের কথা বলা হয়েছে তারা হচ্ছেন মক্কাবাসী। মক্কাবাসীদের আল্লাহ্ জীবন ভোগের বিভিন্ন উপকরণ দান করেন,যতক্ষণ না তাদের নিকট সত্যসহ আল্লাহ্র রাসুলেরা আগমন ঘটে।
৪৬৩৩। পৌত্তলিক মক্কাবাসীরা রাসুলের [ সা ] প্রচারিত আল্লাহ্র বাণীর অপূর্ব ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করতে অক্ষম হয়। যার ফলে আল্লাহ্র বাণীর মোহনীয় প্রভাব যা মানুষকে সত্যপথে আকর্ষণ করে, তাকে তারা যাদুবিদ্যা বলে আখ্যায়িত করে।
৪৬৩৪। প্রতিটি মানুষই তার অভিজ্ঞতার দাস। পৃথিবীর সাধারণ মূল্যবোধ অনুযায়ী যারা সম্পদশালী , তারাই পৃথিবীতে প্রভাব , প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী। সে দিক থেকে রাসুল [ সা ] ছিলেন এতিম , অসহায় ও এক গরীব বালক মাত্র। এরূপ একজন এতিম বালক যৌবনে কেন এত আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান হবে - এছিলো তাদের নিকট এক বিস্ময়। আল্লাহ্ যদি এই বিশেষ ক্ষমতা কাউকে দিতেই চান; তাদের মতে, তা পাওয়ার যোগ্যতা পবিত্র নগরী মক্কা বা উর্বর উদ্যান সমৃদ্ধ নগরী তায়েফ , এই দুই নগরীর যে কোনও সমৃদ্ধশালী , ও ক্ষমতাধারী ব্যক্তির প্রাপ্য হওয়া উচিত। দুই জনপদ দ্বারা মক্কা ও তায়েফকে বুঝানো হয়েছে।
৪৬৩৫। 'অনুগ্রহ' দ্বারা এখানে নবুয়তকে বুঝানো হয়েছে। মানুষের জন্য নবুয়ত আল্লাহ্র বড় করুণা। প্রত্যাদেশের জ্ঞান, বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান আল্লাহ্র সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দান - মানুষের জন্য। এ সব নির্বোধ মোশরেকরা আল্লাহ্র প্রজ্ঞা ও জ্ঞানকে প্রশ্ন করার সাহস করে। তাদের সীমাহীন ঔদ্ধত্যের জন্যই তারা প্রশ্ন করার সাহস রাখে যে কেন আল্লাহ্র নেয়ামত তাদের মত সম্পদশালীদের মাঝে বিতরণ করা হলো না। তারা হয়তো ধারণা করে যে তারাতো সম্পদে ,বুদ্ধিতে ক্ষমতায় সাধারণ মানুষের উর্দ্ধে , সুতারাং নবুয়ত কাউকে দিতে হলে তাদেরই দেয়া উচিত কারণ তারা তার দ্বারা সমাজ পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। এরই উত্তরে আল্লাহ্ বলেছেন কাকে কি নেয়ামত দান করবেন তার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ্। আল্লাহ্র ইচ্ছাই সর্বোচ্চ। আল্লাহ্ তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী কাউকে কর্মী হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দান করেন। আল্লাহ্ অপার প্রজ্ঞার সাহায্যে বিশ্বের জীবন ব্যবস্থা পারস্পরিক মুখাপেক্ষিতার সুত্রে গ্রথিত করে সমগ্র সমাজের প্রয়োজন মিটিয়ে যাচ্ছেন।একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন কে কোন কাজের জন্য উপযোগী। মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহ্র এ সব জাগতিক নেয়ামত কামনা করে কিন্তু আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির তুলনায় এ সব জাগতিক সম্পদ অতি তুচ্ছ।
৪৬৩৬। আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির তুলনায় স্বর্ণ, রৌপ্য , প্রভাব , প্রতিপত্তি , ক্ষমতা এসব পার্থিব জিনিষ অতি নগণ্য। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে এগুলি আল্লাহ্র নিকট এতই তুচ্ছ ও মূল্যহীন যে তিনি ইচ্ছা করলে কাফেরদের অঢেল দান করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন না। কারণ সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাফেররাই নয়, সাধারণ মানুষও ঈমান বিসর্জন দিত এ সব পাওয়ার লোভে। বিশ্বাস বা ঈমান বিসর্জন দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো।ঈমানের পরিবর্তে ধন -সম্পদ লাভ এত বড় প্রলোভন অনেকেই ত্যাগ করতে পারতো না। রৌপ্যের ছাদ, সিঁড়ি ,দরজা , সোনার সিংহাসন ,অলংকার মনি -মুক্তা ইত্যাদি নশ্বর জিনিষ আল্লাহ্র পক্ষে মূল্যহীন। আল্লাহ্ দয়াময় তাই তিনি এ সব মূল্যহীন বস্তু দ্বারা মানুষদের প্রলোভিত করেন না। তিনি এসব বিভিন্ন ধরণের লোকের মাঝে বিতরণ করেন। এদের কেউ ঘোর পাপী কেউ আবার অন্যায়কারী। কেউ কাফের কেউ মোমেন। আবার এদের তুলনামূলক মান সকলের সমান নয়। কেউ ঘোর পাপী কেউ সাধারণ। সুতারাং এ সব ধন-সম্পদ লাভ করার সাথে পাপ বা পূণ্যের কোনও সম্পর্ক নাই। আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুধাবন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
৪৬৩৭। "স্বর্নের নির্মিত " বা স্বর্ণ সজ্জা। এটাই হচ্ছে সূরার নামকরণ। পৃথিবীর চাকচিক্য মিথ্যা। জাগতিক চাকচিক্য শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের ভোগসম্ভার যা আখিরাতের জীবনের সমৃদ্ধিকে ব্যাহত করে।
রুকু - ৪
৪৬৩৮। এই বিশাল বিশ্বভূবনের প্রতিটি বস্তু ও প্রাণ আল্লাহ্র প্রাকৃতিক আইনের আওতাভূক্ত। ঠিক সেরূপ ভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক জগতও নৈতিক আইনের আওতাভূক্ত। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ্র স্মরণে বিরত থাকে, তবে আল্লাহ্ প্রদত্ত নৈতিক বিধান অনুযায়ী তার আত্মাকে শয়তান অধিকার করে রাখবে। আমাদের ধারণায় আমরা শয়তানকে বিমূর্তরূপে ধারণা করি। কিন্তু আমাদের জীবন ও জীবনযাত্রা প্রণালীর মাধ্যমেই শয়তানের প্রকৃতরূপ ফুটে ওঠে।
৪৬৩৯। পাপের পথ বড় পিচ্ছিল। শয়তান এই পথে মানুষকে পরিচালিত করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মানুষ তা অনুধাবন করতে পারে না। তাদের ধারণা জন্মে তারা সঠিক পথে এবং আল্লাহ্র রাস্তায় জীবন অতিবাহিত করছে। মন্দকেই তারা তাদের জীবনের জন্য কল্যাণকর মনে করে। এভাবেই ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে শয়তানের ফাঁদে যত নিমজ্জিত হতে থাকে , তত তারা নির্মম থেকে নির্মমতর হয়ে পড়ে।
৪৬৪০। পৃথিবীতে বা শেষ বিচারের দিনে যখনই প্রকৃত সত্যের ঝলক তার মানসপটে উদ্ভাসিত হবে, হতাশা , উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা প্রতিটি পাপীর আত্মাকে ঘিরে ধরবে। সে তখন তাঁর মন্দ সঙ্গীকে অভিযুক্ত করবে। "হায় ! তোমার আমার মধ্যে যদি পূর্ব পশ্চিমের ব্যবধান থাকতো।" অনুতাপে তারা দগ্ধ হতে থাকবে। কিন্তু এই অনুতাপও তাদের শয়তান মুক্ত করতে পারবে না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে শয়তানের ফাঁদে ধরা দিয়েছে।
৪৬৪১। 'পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান' - আক্ষরিক অর্থে প্রাচ্য ও মধ্য প্রাচ্যের মধ্যে পার্থক্য। অধিকাংশ তফসীরকারের মতে এর অর্থ নিরক্ষরেখা থেকে গ্রীষ্মে ও শীতে সূর্যের দূরতম স্থানের অবস্থান। দেখুন [ ৩৭ : ৫ ] আয়াতের টিকা ৪০৩৪। এই বাক্যটি উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর মধ্যে যে ব্যবধান - অর্থাৎ দেখা হওয়ার কোনও সুযোগই নাই।
৪৬৪২। পাপী ও তার মন্দ সঙ্গী কেহই শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। সেদিন অনুতাপ কোন কাজে আসবে না। যদিও মন্দ সর্বদা অন্যের মন্দ কামনা করে থাকে। তবুও মন্দ সঙ্গীও শাস্তিযোগ্য হবে এই সংবাদও কোনও পাপীর আত্মাতে সান্তনা দিতে সক্ষম হবে না। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায় দায়িত্বে আবদ্ধ থাকবে।
২৬। স্মরণ কর ! ইব্রাহীম তাঁর পিতা এবং সম্প্রদায়কে বলেছিলো, ৪৬৩০ , " তোমরা যাদের পূঁজা কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
৪৬৩০। মোশরেকরা পূর্বপুরুষের দোহাই দিয়ে পাপের পথ পরিত্যাগ করতো না। তাদের এই মিথ্যা দোহাই এর জবাব দেয়া হয়েছে হযরত ইব্রাহীমের উদাহরণের মাধ্যমে। দুভাবে তা ব্যক্ত করা হয়েছে : ১) ইব্রাহীম সত্য ধর্মের অনুসরণের জন্য পূর্বপুরুষদের মিথ্যা প্রথা ও নীতিকে পরিত্যাগ করেন। এর জন্য তিনি আত্মোৎসর্গ করতে দ্বিধা বোধ করেন নাই। এবং ২) ইব্রাহীম আরবদের পূর্বপুরুষ। যদি আরবরা পূর্বপুরুষদের প্রথার-ই অনুসরণ করতে চায় তবে তারা পূণ্যাত্মা পূর্বপুরুষ ইব্রাহীমের অনুসরণ না করে পাপিষ্ঠ পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে কেন ? দেখুন টিকা ৪৬২৭। ইব্রাহীমের কাহিনীর জন্য দেখুন [ ২১ : ৫১ - ৭০ ] আয়াত।
২৭। " [ আমি এবাদত করি ] শুধু তারই যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন।এবং তিনিই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। "
২৮। আর ঘোষণাকে সে স্থায়ী বাণীরূপে রেখে গেছে তাঁর পরবর্তীদের জন্য ৪৬৩১, যেনো তারা [আল্লাহ্র দিকে ] প্রত্যাবর্তন করে।
২৮। আর ঘোষণাকে সে স্থায়ী বাণীরূপে রেখে গেছে তাঁর পরবর্তীদের জন্য ৪৬৩১, যেনো তারা [আল্লাহ্র দিকে ] প্রত্যাবর্তন করে।
৪৬৩১। "স্থায়ী বাণীরূপে"- অর্থাৎ চিরস্থায়ী সত্য উপদেশ। তার বাণীর সারর্মম হচ্ছে , " আমি শুধু তারই উপাসনা করি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন [ আয়াত ২৭ ]।" এই হচ্ছে ইব্রাহীমের শিক্ষা যা শুধুমাত্র আল্লাহ্র একত্বের ঘোষণা দান করে। তাঁর এই সত্যের ঘোষণা তিনি তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন। তিনি আশা করেছেন পরবর্তী প্রজন্ম তা বিকৃত না করে পবিত্র রাখবে এবং সত্যেরএকত্বের বাণী চির সমুন্নত রাখবে। দেখুন [ ৩৭ : ১০৮ - ১১১ ]।
২৯। হ্যাঁ , আমি এদের এবং এদের পূর্বপুরুষদের এই জীবনে ভোগের সামগ্রী দিয়েছিলাম, যতদিন না সত্যের [ কুর-আন ] আগমন ঘটলো এবং একজন রাসুল সব কিছু সুস্পষ্ট করে দিলো ৪৬৩২।
৪৬৩২। লক্ষ্য করুন আয়াতটিতে আল্লাহ্ নিজেকে একবচনে প্রথম পুরুষ ব্যবহার করে 'আমি ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন।এর মাধ্যমে আল্লাহ্ ইব্রাহীমের বংশধরদের দুটি শাখার উপরে তাঁরঅনুগ্রহ ও সযত্ন তত্বাবধানের গুরুত্বকে প্রকাশ করেছেন। এখানে বর্ণনা প্রসঙ্গে যাদের কথা বলা হয়েছে তারা হচ্ছেন মক্কাবাসী। মক্কাবাসীদের আল্লাহ্ জীবন ভোগের বিভিন্ন উপকরণ দান করেন,যতক্ষণ না তাদের নিকট সত্যসহ আল্লাহ্র রাসুলেরা আগমন ঘটে।
৩০। কিন্তু যখন তাদের নিকট সত্যের [ কুর-আনের ] আগমন হলো , তারা বলেছিলো , " এটা একটা যাদু , এবং আমরা তা প্রত্যাখান করি।" ৪৬৩৩
৪৬৩৩। পৌত্তলিক মক্কাবাসীরা রাসুলের [ সা ] প্রচারিত আল্লাহ্র বাণীর অপূর্ব ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করতে অক্ষম হয়। যার ফলে আল্লাহ্র বাণীর মোহনীয় প্রভাব যা মানুষকে সত্যপথে আকর্ষণ করে, তাকে তারা যাদুবিদ্যা বলে আখ্যায়িত করে।
৩১। তারা আরও বললো, " এই কুর-আন কেন অবতীর্ণ করা হলো না দুই [প্রধান ] জনপদের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির উপর ? " ৪৬৩৪
৪৬৩৪। প্রতিটি মানুষই তার অভিজ্ঞতার দাস। পৃথিবীর সাধারণ মূল্যবোধ অনুযায়ী যারা সম্পদশালী , তারাই পৃথিবীতে প্রভাব , প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার অধিকারী। সে দিক থেকে রাসুল [ সা ] ছিলেন এতিম , অসহায় ও এক গরীব বালক মাত্র। এরূপ একজন এতিম বালক যৌবনে কেন এত আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান হবে - এছিলো তাদের নিকট এক বিস্ময়। আল্লাহ্ যদি এই বিশেষ ক্ষমতা কাউকে দিতেই চান; তাদের মতে, তা পাওয়ার যোগ্যতা পবিত্র নগরী মক্কা বা উর্বর উদ্যান সমৃদ্ধ নগরী তায়েফ , এই দুই নগরীর যে কোনও সমৃদ্ধশালী , ও ক্ষমতাধারী ব্যক্তির প্রাপ্য হওয়া উচিত। দুই জনপদ দ্বারা মক্কা ও তায়েফকে বুঝানো হয়েছে।
৩২। ওরা কি তোমার প্রভুর অনুগ্রহ বণ্টন করার অধিকারী ? ৪৬৩৫। এই পার্থিব জীবনে আমিই ওদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দিই। এবং আমি তাদের একজনকে অপরের উপরে মর্যদায় উন্নত করি যেনো তাদের কেউ কেউ অন্যের উপরে কর্তৃত্ব করতে পারে। কিন্তু উহারা যা সঞ্চয় করে তা থেকে তোমার প্রভুর অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর।
৪৬৩৫। 'অনুগ্রহ' দ্বারা এখানে নবুয়তকে বুঝানো হয়েছে। মানুষের জন্য নবুয়ত আল্লাহ্র বড় করুণা। প্রত্যাদেশের জ্ঞান, বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান আল্লাহ্র সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দান - মানুষের জন্য। এ সব নির্বোধ মোশরেকরা আল্লাহ্র প্রজ্ঞা ও জ্ঞানকে প্রশ্ন করার সাহস করে। তাদের সীমাহীন ঔদ্ধত্যের জন্যই তারা প্রশ্ন করার সাহস রাখে যে কেন আল্লাহ্র নেয়ামত তাদের মত সম্পদশালীদের মাঝে বিতরণ করা হলো না। তারা হয়তো ধারণা করে যে তারাতো সম্পদে ,বুদ্ধিতে ক্ষমতায় সাধারণ মানুষের উর্দ্ধে , সুতারাং নবুয়ত কাউকে দিতে হলে তাদেরই দেয়া উচিত কারণ তারা তার দ্বারা সমাজ পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করতে পারে। এরই উত্তরে আল্লাহ্ বলেছেন কাকে কি নেয়ামত দান করবেন তার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ্। আল্লাহ্র ইচ্ছাই সর্বোচ্চ। আল্লাহ্ তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী কাউকে কর্মী হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দান করেন। আল্লাহ্ অপার প্রজ্ঞার সাহায্যে বিশ্বের জীবন ব্যবস্থা পারস্পরিক মুখাপেক্ষিতার সুত্রে গ্রথিত করে সমগ্র সমাজের প্রয়োজন মিটিয়ে যাচ্ছেন।একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন কে কোন কাজের জন্য উপযোগী। মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহ্র এ সব জাগতিক নেয়ামত কামনা করে কিন্তু আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির তুলনায় এ সব জাগতিক সম্পদ অতি তুচ্ছ।
৩৩। সত্য প্রত্যাখানে মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে , এরূপ আশংকা না থাকলে ,দয়াময় আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে তাদের প্রত্যেককে দিতাম রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি , উপরে আরোহণের জন্য। ৪৬৩৬
৪৬৩৬। আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির তুলনায় স্বর্ণ, রৌপ্য , প্রভাব , প্রতিপত্তি , ক্ষমতা এসব পার্থিব জিনিষ অতি নগণ্য। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে এগুলি আল্লাহ্র নিকট এতই তুচ্ছ ও মূল্যহীন যে তিনি ইচ্ছা করলে কাফেরদের অঢেল দান করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন না। কারণ সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাফেররাই নয়, সাধারণ মানুষও ঈমান বিসর্জন দিত এ সব পাওয়ার লোভে। বিশ্বাস বা ঈমান বিসর্জন দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যেতো।ঈমানের পরিবর্তে ধন -সম্পদ লাভ এত বড় প্রলোভন অনেকেই ত্যাগ করতে পারতো না। রৌপ্যের ছাদ, সিঁড়ি ,দরজা , সোনার সিংহাসন ,অলংকার মনি -মুক্তা ইত্যাদি নশ্বর জিনিষ আল্লাহ্র পক্ষে মূল্যহীন। আল্লাহ্ দয়াময় তাই তিনি এ সব মূল্যহীন বস্তু দ্বারা মানুষদের প্রলোভিত করেন না। তিনি এসব বিভিন্ন ধরণের লোকের মাঝে বিতরণ করেন। এদের কেউ ঘোর পাপী কেউ আবার অন্যায়কারী। কেউ কাফের কেউ মোমেন। আবার এদের তুলনামূলক মান সকলের সমান নয়। কেউ ঘোর পাপী কেউ সাধারণ। সুতারাং এ সব ধন-সম্পদ লাভ করার সাথে পাপ বা পূণ্যের কোনও সম্পর্ক নাই। আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুধাবন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
৩৪। এবং তাদের গৃহের জন্য [ রূপার ] দরজা ও [ রূপার ] সিংহাসন - যার উপরে তারা হেলান দিয়ে বসবে।
৩৫। এবং স্বর্ণের অলংকার ৪৬৩৭। কিন্তু এ সকল কিছুই বর্তমান জীবনের আরাম আয়েস মাত্র। পূণ্যাত্মাদের জন্য তোমার প্রভুর নিকটে রয়েছে পরকালের[ কল্যাণ ]।
৩৫। এবং স্বর্ণের অলংকার ৪৬৩৭। কিন্তু এ সকল কিছুই বর্তমান জীবনের আরাম আয়েস মাত্র। পূণ্যাত্মাদের জন্য তোমার প্রভুর নিকটে রয়েছে পরকালের[ কল্যাণ ]।
৪৬৩৭। "স্বর্নের নির্মিত " বা স্বর্ণ সজ্জা। এটাই হচ্ছে সূরার নামকরণ। পৃথিবীর চাকচিক্য মিথ্যা। জাগতিক চাকচিক্য শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের ভোগসম্ভার যা আখিরাতের জীবনের সমৃদ্ধিকে ব্যাহত করে।
রুকু - ৪
৩৬। কেউ যদি দয়াময় আল্লাহ্র স্মরণ থেকে বিমুখ হয় ৪৬৩৮ আমি তাদের জন্যএক শয়তানকে নিয়োজিত করি তার অন্তরঙ্গ সহচর হিসেবে।
৪৬৩৮। এই বিশাল বিশ্বভূবনের প্রতিটি বস্তু ও প্রাণ আল্লাহ্র প্রাকৃতিক আইনের আওতাভূক্ত। ঠিক সেরূপ ভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক জগতও নৈতিক আইনের আওতাভূক্ত। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ্র স্মরণে বিরত থাকে, তবে আল্লাহ্ প্রদত্ত নৈতিক বিধান অনুযায়ী তার আত্মাকে শয়তান অধিকার করে রাখবে। আমাদের ধারণায় আমরা শয়তানকে বিমূর্তরূপে ধারণা করি। কিন্তু আমাদের জীবন ও জীবনযাত্রা প্রণালীর মাধ্যমেই শয়তানের প্রকৃতরূপ ফুটে ওঠে।
৩৭। এ সব [শয়তানেরা ] তাদেরকে সৎপথ থেকে বিরত রাখে ৪৬৩৯। কিন্তু তারা মনে করে যে, তারা সঠিক পথেই পরিচালিত হচ্ছে।
৪৬৩৯। পাপের পথ বড় পিচ্ছিল। শয়তান এই পথে মানুষকে পরিচালিত করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মানুষ তা অনুধাবন করতে পারে না। তাদের ধারণা জন্মে তারা সঠিক পথে এবং আল্লাহ্র রাস্তায় জীবন অতিবাহিত করছে। মন্দকেই তারা তাদের জীবনের জন্য কল্যাণকর মনে করে। এভাবেই ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে শয়তানের ফাঁদে যত নিমজ্জিত হতে থাকে , তত তারা নির্মম থেকে নির্মমতর হয়ে পড়ে।
৩৮। অবশেষে যখন [এরূপ ব্যক্তি ] আমার নিকট উপস্থিত হবে, সে [তার মন্দ সঙ্গীকে ]বলবে, ৪৬৪০ "হায় ! আমার ও তোমার মধ্য যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকতো।" ৪৬৪১। আঃ ![ সত্যিই ] কত নিকৃষ্ট সহচর সে।
৪৬৪০। পৃথিবীতে বা শেষ বিচারের দিনে যখনই প্রকৃত সত্যের ঝলক তার মানসপটে উদ্ভাসিত হবে, হতাশা , উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা প্রতিটি পাপীর আত্মাকে ঘিরে ধরবে। সে তখন তাঁর মন্দ সঙ্গীকে অভিযুক্ত করবে। "হায় ! তোমার আমার মধ্যে যদি পূর্ব পশ্চিমের ব্যবধান থাকতো।" অনুতাপে তারা দগ্ধ হতে থাকবে। কিন্তু এই অনুতাপও তাদের শয়তান মুক্ত করতে পারবে না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে শয়তানের ফাঁদে ধরা দিয়েছে।
৪৬৪১। 'পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান' - আক্ষরিক অর্থে প্রাচ্য ও মধ্য প্রাচ্যের মধ্যে পার্থক্য। অধিকাংশ তফসীরকারের মতে এর অর্থ নিরক্ষরেখা থেকে গ্রীষ্মে ও শীতে সূর্যের দূরতম স্থানের অবস্থান। দেখুন [ ৩৭ : ৫ ] আয়াতের টিকা ৪০৩৪। এই বাক্যটি উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর মধ্যে যে ব্যবধান - অর্থাৎ দেখা হওয়ার কোনও সুযোগই নাই।
৩৯। যখন তোমরা দুনিয়াতে পাপ করেছিলে, আজ তা তোমাদের কোন কাজে আসবে না ৪৬৪২। সেদিন তোমরা উভয় পক্ষ শাস্তির ব্যাপারে পরস্পর অংশীদার ।
৪৬৪২। পাপী ও তার মন্দ সঙ্গী কেহই শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। সেদিন অনুতাপ কোন কাজে আসবে না। যদিও মন্দ সর্বদা অন্যের মন্দ কামনা করে থাকে। তবুও মন্দ সঙ্গীও শাস্তিযোগ্য হবে এই সংবাদও কোনও পাপীর আত্মাতে সান্তনা দিতে সক্ষম হবে না। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায় দায়িত্বে আবদ্ধ থাকবে।
৪০। [ হে মুহম্মদ ] তুমি কি বধিরকে শুনাতে পারবে ৪৬৪৩, অথবা অন্ধকে অথবা যে সুস্পষ্ট ভুলের মাঝে আছে তাকে পথ দেখাতে পারবে ? ৪৬৪৪
৪৬৪৩। দেখুন আয়াত [ ৩০ : ৫২-৫৩ ]। পাপের পথ বড় পিচ্ছিল। একবার যে এই পথে আসে সে অতি দ্রুত পাপের অতলে তলিয়ে যায়।যত সে পাপের অতলে তলিয়ে যেতে থাকে, তত তার বিবেক, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা , দূরদৃর্ষ্টি , বিচক্ষণতা প্রভৃতি মানসিক দক্ষতা সমূহের অবলুপ্তি ঘটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাদের আধ্যাত্মিক জগতের অবলুপ্তি ঘটে বা আত্মার মৃত্যু ঘটে। যেহেতু তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহ্র করুণাকে অস্বীকার করেছে; কোনও বাইরের শক্তির ক্ষমতা থাকে না তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করার।
৪৬৪৪। সত্যকে অনুসন্ধান করতে যেয়ে কেউ যদি ভুল পথে পরিচালিত হয়, তবে তাদের সঠিকপথে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি ভুলে এবং সংকল্পের দৃঢ়তার অভাবে বিপথে পরিচালিত হলে, তাদেরও ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যে সত্যকে জানার পরে ইচ্ছাকৃত ভাবে সত্যকে প্রত্যাখান করে এবং স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয় তার আর ফিরেআসার সম্ভাবনা নাই।
৪৬৪৬। মন্দ ও দুষ্টরা যা খুশী করুক যা খুশী বলুক , যতখুশী ষড়যন্ত্র করুক, এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর নবীকে উৎসাহিত করেছেন , যে সত্য তাঁর কাছে প্রেরণ করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করার জন্য। রাসুলের পথই হচ্ছে সরল পথ।
৪৬৪৭। 'Zikrun ' প্রেরিত বার্তা , স্মারক বস্তু , স্মৃতিচিহ্ন , স্মৃতি। কোরাণ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মারক বার্তা বা সম্মানের বস্তু। এর থেকে দ্বিবিধ অর্থ করা যায়। ১) কোরাণ হচ্ছে সত্যের প্রেরিত বার্তা এবং পথ প্রদর্শক রাসুলের [ সা ] এবং তাঁর অনুসারীদের জন্য। ২) কোরাণের প্রত্যাদেশ রাসুলকে [ সা ] এবং যাদের মধ্যে ও যে ভাষাতে তিনি তা প্রচার করেন, তাদের সম্মানীয় অধিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত করে যার ফলে তাদের সারা পৃথিবীতে সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ্ তাদের বিশেষ সম্মান দান করেছেন, সুতারাং সে সম্মানের দায়-দায়িত্বও তাদের বহন করতে হবে। কোরাণে বর্ণিত আদেশ নিষেধ পালন করা হয়েছে কিনা সে সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে। যারা তা শুনবে তাদের সকলকেই হিসাব দিতে হবে যে কোরাণের বাণী দ্বারা তারা আধ্যাত্মিক দিক থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছে। আয়াতে " তোমার সম্প্রদায়" দ্বারা কারও কারও মতে কোরাইশ গোত্রকে বোঝানো হয়েছে। আবার কেহ কেহ বলেন এর দ্বারা সমগ্র উম্মতকে বোঝানো হয়েছে। কোরাণ সকলের জন্যই সম্মান ওসুখ্যাতির কারণ।
৪৬৪৮। পূর্ববর্তী রাসুলদের জিজ্ঞাসা করার অর্থ, তাদের প্রচারিত বাণী সমূহ পরীক্ষা করে দেখা এবং তাদের মধ্যে যারা প্রকৃত জ্ঞানী তাদের জিজ্ঞাসা করা। পূর্বের প্রচারিত সকল নবী রসুলদের প্রচারিত বাণী এই শিক্ষাই দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেহ উপাস্য নাই।
রুকু - ৫
৪৬৫০। ফেরাউন ও ফেরাউনের সভাষদরা হযরত মুসাকে ও তাঁর প্রতি প্রেরিত আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করেছিলো , দেখুন [ ১৭ : ১০১ ] এবং নীচের আয়াত [ ৪৩ : ৪৯, ৫২- ৫৩ ]।
৪৬৫১। দেখুন [ ৭ : ১৩৩ ] আয়াতের টিকা ১০৯১ এবং আয়াত [ ১৭ : ১০১ ]। যেখানে মুসার নয়টি নিদর্শনের উল্লেখ আছে। নয়টি নিদর্শনের প্রতিটি নিদর্শন একটা থেকে অন্যটি শ্রেষ্ঠ, প্রতিটি নিদর্শনই অনন্য। এ সব নিদর্শন প্রদর্শন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মিশরবাসীদের ফেরাউনের এবাদত থেকে বিমুখ করে আল্লাহ্র এবাদতের প্রতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং আল্লাহ্র প্রতি প্রত্যাবর্তন করে।
৪৬৫২। এই আয়াতে মুসাকে তারা যেভাবে সম্বোধন করেছিলো , তা ছিলো অর্ধ কৌশল , অর্থ ব্যঙ্গ। কারণ তারা মুসাকে সম্বোধন করেছিলো যাদুকর রূপে - আল্লাহ্র নবী বলে নয়। এটা ছিলো তাদের ব্যঙ্গ বিদ্রূপের বহিঃপ্রকাশ।অবিশ্বাস সত্বেও একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাদের মনে ভয় ঢুকে যায়। প্লেগ মহামারী , এবং অন্যান্য বিপর্যয় যা একের পরে এক তাদের উপরে নিপতিত হচ্ছিল তা রোধ করার জন্য তারা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ওয়াদা করে। কিন্তু যখন বিপর্যয় তুলে নেয়া হয়, তারা পুণরায় তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে। এটা ছিলো বিপর্যয় রোধের একটা কৌশল মাত্র। দেখুন আয়াত [ ৭ : ১৩৩ - ১৩৫ ]।
৪৬৫৩। নীল নদের অফুরন্ত পানি , যা ফেরাউনের প্রাসাদের পাদদেশ ধৌত করে প্রবাহিত ,তা ছিলো মিশরের প্রাচুর্য্যের প্রতীক।ফেরাউনের ক্ষমতা, প্রাচুর্য ও সার্বভৌমত্বের প্রমাণ হচ্ছে নীল নদ। ফেরাউনের প্রাসাদের পাদদেশ ধৌতকরে প্রবাহিত হচ্ছে। নীল নদী হচ্ছে মিশরের প্রাণ। মিশরের পৌরাণিক কাহিনী সমূহ , নীল নদী মৃত্যুর দেবতা অসিরিস ও সূর্য দেবতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই নীল নদী ফেরাউনের আজ্ঞাবহ অর্থাৎ মিশর ফেরাউনের আজ্ঞাবহ। অদৃষ্টের পরিহাস, যে পানির জন্য ফেরাউন গর্ব করেছিলো সেই পানিতেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
৪৬৫৪। হযরত মুসা ছিলেন ইসরাঈলী বংশদ্ভুদ। ইসরাঈলীদের মিশরবাসীরা ক্রীতদাস হিসেবে অত্যন্ত ঘৃণার দৃষ্টিতে পরিগণিত করতো। উপরন্তু হযরত মুসা তোতলা থাকার দরুন কথা বলায় অসুবিধা ছিলো। দেখুন আয়াত [ ২০ : ২৭ ] এবং টিকা ২৫৫২ - ৫৩।
৪৬৫৫। সম্ভবতঃ প্রাচীন মিশরে, স্বর্ণালঙ্কার ছিলো রাজকীয় পদমর্যদার পরিচায়ক। কারণ স্বর্ণালঙ্কার সম্পদের পূর্বাভাষ দান করে। সাধারণ মানুষ সম্পদের পূঁজারী।তারা মানুষের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে তার সম্পদের পরিমাণ দ্বারা এবং সাজসজ্জা , গাড়িঘোড়া ও অনুচরবৃন্দ দ্বারা। ফেরাউনের মাঝেও সেই একই মানসিকতা বিরাজ করেছিলো। এ কারণেই ফেরাউন মুসার নিকট দাবী করে যে প্রকৃতপক্ষে মুসা যদি নিজেকে আল্লাহ্র প্রতিনিধি দাবী করে থাকেন , তবে তাঁর স্বর্ণালঙ্কার কই ? ফেরেশতারা কেন তাঁকে সারিবদ্ধভাবে অনুসরণ করে না? এ ভাবেই পার্থিব বিষয়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা জাগতিক অভিজ্ঞতার উর্দ্ধে উঠতে অক্ষম। সে কারণেই পার্থিব বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন কোরাইশরা নবীজির কাছেও ঐ একই রকম প্রমাণের দাবী জানিয়েছিলো। যদিও এরূপ প্রমাণ দাবী করা শিশুসুলভ আচরণ। তবুও পৃথিবীর জনারণ্যে অধিকাংশ লোকই এই মানসিকতার অধীন। ফেরাউনের সভাসদরাও ছিলো এরূপ মানসিকতার দ্বারা আক্রান্ত। অল্প কয়েক জন মিশরবাসী আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুসার প্রচারিত বাণীকে গ্রহণ করে। কিন্তু অধিকাংশ মিশরবাসী ফেরাউনের যুক্তির অনুসরণ করে ফলে তাদের আল্লাহ্র শাস্তি স্বরূপ লোহিত সাগরে ডুবে মৃত্যু বরণ করতে হয়।
৪৬৫৬। আল্লাহ্ অসীম ধৈর্য্যশীল। সর্বোচ্চ পাপী ও কঠোর হৃদয় সত্যত্যাগী , বিদ্রোহীদেরও তিনি বারে বারে সুযোগ দান করেন অনুতাপ করার জন্য। কিন্তু সে সুযোগ যারা গ্রহণ করে না , তারা অবশ্যই আল্লাহ্র ন্যায় বিচারের সম্মুখীন হবে এবং আল্লাহ্র শাস্তি তাদের উপরে বজ্রের মত নেমে আসবে।
৪৬৫৭। দেখুন [ ৭ : ১৩৬ ] আয়াত।
৪৬৫৮। আল্লাহ্র শাস্তিস্বরূপ ফেরাউন ও তাঁর দলবল পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং অতীতের দৃষ্টান্ত রূপে পৃথিবীর ইতিহাসে থেকে যায় যেনো , ভবিষ্যতের মানুষ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
৪৬৪৪। সত্যকে অনুসন্ধান করতে যেয়ে কেউ যদি ভুল পথে পরিচালিত হয়, তবে তাদের সঠিকপথে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি ভুলে এবং সংকল্পের দৃঢ়তার অভাবে বিপথে পরিচালিত হলে, তাদেরও ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যে সত্যকে জানার পরে ইচ্ছাকৃত ভাবে সত্যকে প্রত্যাখান করে এবং স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয় তার আর ফিরেআসার সম্ভাবনা নাই।
৪১। যদি আমি তোমাকে সরিয়েও নেই তবুও আমি তাদেরশাস্তি দিব ৪৬৪৫।
৪২। অথবা আমি তাদের যে [ শাস্তির ভীতি ] অঙ্গীকার করেছি আমি তোমাকে তা দেখাব। কেননা ওদের উপর আমি অবশ্যই ক্ষমতা রাখি।
৪৬৪৫। দেখুন [ ৮ : ৩০ ] আয়াত।রাসুলের [ সা ]জীবন শিক্ষা দেয়, কিভাবে নবুয়তের প্রথম যুগে মক্কাবাসীরা রাসুলের [সাঃ] বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে, হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং শেষ পর্যন্ত দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। তারা সর্বদা রাসুলের [ সা ] বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করতো।এই আয়াতে বলা হয়েছে যে যদি তাদের ষড়যন্ত্র সাফল্যলাভ করতো তবুও তারা আল্লাহ্র পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে পারতো না। তারা তাদের পাপের শাস্তিকে প্রতিহত করতে পারতো না। দেখুন আয়াত [ ১০ : ৪৬ ] ও টিকা ১৪৩৮।৪২। অথবা আমি তাদের যে [ শাস্তির ভীতি ] অঙ্গীকার করেছি আমি তোমাকে তা দেখাব। কেননা ওদের উপর আমি অবশ্যই ক্ষমতা রাখি।
৪৩। সুতারাং তোমার প্রতি যে প্রত্যাদেশ প্রেরণ করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর। অবশ্যই তুমি সরল পথে রয়েছ ৪৬৪৬।
৪৬৪৬। মন্দ ও দুষ্টরা যা খুশী করুক যা খুশী বলুক , যতখুশী ষড়যন্ত্র করুক, এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর নবীকে উৎসাহিত করেছেন , যে সত্য তাঁর কাছে প্রেরণ করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করার জন্য। রাসুলের পথই হচ্ছে সরল পথ।
৪৪। [কুর-আন ] তোমার জন্য এবং তোমার সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ ৪৬৪৭। এবং শীঘ্রই তোমাদের [সকলকে ] হিসাব গ্রহণের জন্য আনা হবে।
৪৬৪৭। 'Zikrun ' প্রেরিত বার্তা , স্মারক বস্তু , স্মৃতিচিহ্ন , স্মৃতি। কোরাণ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মারক বার্তা বা সম্মানের বস্তু। এর থেকে দ্বিবিধ অর্থ করা যায়। ১) কোরাণ হচ্ছে সত্যের প্রেরিত বার্তা এবং পথ প্রদর্শক রাসুলের [ সা ] এবং তাঁর অনুসারীদের জন্য। ২) কোরাণের প্রত্যাদেশ রাসুলকে [ সা ] এবং যাদের মধ্যে ও যে ভাষাতে তিনি তা প্রচার করেন, তাদের সম্মানীয় অধিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত করে যার ফলে তাদের সারা পৃথিবীতে সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ্ তাদের বিশেষ সম্মান দান করেছেন, সুতারাং সে সম্মানের দায়-দায়িত্বও তাদের বহন করতে হবে। কোরাণে বর্ণিত আদেশ নিষেধ পালন করা হয়েছে কিনা সে সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে। যারা তা শুনবে তাদের সকলকেই হিসাব দিতে হবে যে কোরাণের বাণী দ্বারা তারা আধ্যাত্মিক দিক থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছে। আয়াতে " তোমার সম্প্রদায়" দ্বারা কারও কারও মতে কোরাইশ গোত্রকে বোঝানো হয়েছে। আবার কেহ কেহ বলেন এর দ্বারা সমগ্র উম্মতকে বোঝানো হয়েছে। কোরাণ সকলের জন্যই সম্মান ওসুখ্যাতির কারণ।
৪৫। তোমার পূর্বে আমি যে সকল রাসুল প্রেরণ করেছিলাম ৪৬৪৮ তাদের তুমি জিজ্ঞাসা কর, আমি কি পরম করুণাময় [আল্লাহ্ ] ব্যতীত অন্য কোন দেবতা উপাসনার জন্য স্থির করেছিলাম ?
৪৬৪৮। পূর্ববর্তী রাসুলদের জিজ্ঞাসা করার অর্থ, তাদের প্রচারিত বাণী সমূহ পরীক্ষা করে দেখা এবং তাদের মধ্যে যারা প্রকৃত জ্ঞানী তাদের জিজ্ঞাসা করা। পূর্বের প্রচারিত সকল নবী রসুলদের প্রচারিত বাণী এই শিক্ষাই দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেহ উপাস্য নাই।
রুকু - ৫
৪৬। পূর্বে আমি মুসাকে আমার নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছিলাম ৪৬৪৯ ফেরাউন ও তার প্রধানদের নিকট। সে বলেছিলো, " আমি জগতসমূহের প্রভুর প্রেরিত রাসুল।"
৪৬৪৯। হযরত মুসার কাহিনীর বিশদ বিবরনের জন্য দেখুন আয়াত [ ৭ : ১০৩ - ১৩৭ ] বিশেষভাবে দেখুন [ ৭ : ১০৪, ১৩০-১৩৬ ]।৪৭। কিন্তু যখন সে আমার নিদর্শন সহ তাদের নিকট উপস্থিত হলো, দেখো তারা তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো ৪৬৫০।
৪৬৫০। ফেরাউন ও ফেরাউনের সভাষদরা হযরত মুসাকে ও তাঁর প্রতি প্রেরিত আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করেছিলো , দেখুন [ ১৭ : ১০১ ] এবং নীচের আয়াত [ ৪৩ : ৪৯, ৫২- ৫৩ ]।
৪৮। আমি তাদের নিদর্শনের পর নিদর্শন দেখিয়েছিলাম ৪৬৫১ যার প্রত্যেকটি ইহার পূর্ববর্তীদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলো ; এবং আমি তাদের শাস্তি দ্বারা গ্রেফতার করলাম , যেনো তারা [ আমার ] দিকে ফিরে আসে।
৪৬৫১। দেখুন [ ৭ : ১৩৩ ] আয়াতের টিকা ১০৯১ এবং আয়াত [ ১৭ : ১০১ ]। যেখানে মুসার নয়টি নিদর্শনের উল্লেখ আছে। নয়টি নিদর্শনের প্রতিটি নিদর্শন একটা থেকে অন্যটি শ্রেষ্ঠ, প্রতিটি নিদর্শনই অনন্য। এ সব নিদর্শন প্রদর্শন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মিশরবাসীদের ফেরাউনের এবাদত থেকে বিমুখ করে আল্লাহ্র এবাদতের প্রতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং আল্লাহ্র প্রতি প্রত্যাবর্তন করে।
৪৯। এবং তারা বলেছিলো , " ওহে যাদুকর ৪৬৫২ , তোমার প্রভু তোমার নিকট যে অঙ্গীকার করেছেন সেই অনুযায়ী তুমি তোমার প্রভুর নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর।তা হলে আমরা অবশ্যই সৎপথ অবলম্বন করবো।"
৫০। কিন্তু যখন আমি তাদের উপর থেকে শাস্তি অপসারিত করলাম , দেখো , তারা তখন অঙ্গীকার ভঙ্গ করলো।
৫০। কিন্তু যখন আমি তাদের উপর থেকে শাস্তি অপসারিত করলাম , দেখো , তারা তখন অঙ্গীকার ভঙ্গ করলো।
৪৬৫২। এই আয়াতে মুসাকে তারা যেভাবে সম্বোধন করেছিলো , তা ছিলো অর্ধ কৌশল , অর্থ ব্যঙ্গ। কারণ তারা মুসাকে সম্বোধন করেছিলো যাদুকর রূপে - আল্লাহ্র নবী বলে নয়। এটা ছিলো তাদের ব্যঙ্গ বিদ্রূপের বহিঃপ্রকাশ।অবিশ্বাস সত্বেও একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাদের মনে ভয় ঢুকে যায়। প্লেগ মহামারী , এবং অন্যান্য বিপর্যয় যা একের পরে এক তাদের উপরে নিপতিত হচ্ছিল তা রোধ করার জন্য তারা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ওয়াদা করে। কিন্তু যখন বিপর্যয় তুলে নেয়া হয়, তারা পুণরায় তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে। এটা ছিলো বিপর্যয় রোধের একটা কৌশল মাত্র। দেখুন আয়াত [ ৭ : ১৩৩ - ১৩৫ ]।
৫১। ফেরাউন তার সম্প্রদায়ের নিকট ঘোষণা করেছিলো এই বলে, " হে আমার সম্প্রদায় ! মিশর সাম্রাজ্য কি আমার অধীনে নয় ?[ সাক্ষী থাক ] , এই নদীগুলি আমার[ প্রাসাদের ] পাদদেশে প্রবাহিত ; সেকি ! তোমরা কি তা দেখ না ? ৪৬৫৩
৪৬৫৩। নীল নদের অফুরন্ত পানি , যা ফেরাউনের প্রাসাদের পাদদেশ ধৌত করে প্রবাহিত ,তা ছিলো মিশরের প্রাচুর্য্যের প্রতীক।ফেরাউনের ক্ষমতা, প্রাচুর্য ও সার্বভৌমত্বের প্রমাণ হচ্ছে নীল নদ। ফেরাউনের প্রাসাদের পাদদেশ ধৌতকরে প্রবাহিত হচ্ছে। নীল নদী হচ্ছে মিশরের প্রাণ। মিশরের পৌরাণিক কাহিনী সমূহ , নীল নদী মৃত্যুর দেবতা অসিরিস ও সূর্য দেবতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই নীল নদী ফেরাউনের আজ্ঞাবহ অর্থাৎ মিশর ফেরাউনের আজ্ঞাবহ। অদৃষ্টের পরিহাস, যে পানির জন্য ফেরাউন গর্ব করেছিলো সেই পানিতেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
৫২। " আমি কি এই[ মুসা ] অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নই , যে হচ্ছে নিকৃষ্ট দুরাত্মা এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতেও অক্ষম ? ৪৬৫৪
৪৬৫৪। হযরত মুসা ছিলেন ইসরাঈলী বংশদ্ভুদ। ইসরাঈলীদের মিশরবাসীরা ক্রীতদাস হিসেবে অত্যন্ত ঘৃণার দৃষ্টিতে পরিগণিত করতো। উপরন্তু হযরত মুসা তোতলা থাকার দরুন কথা বলায় অসুবিধা ছিলো। দেখুন আয়াত [ ২০ : ২৭ ] এবং টিকা ২৫৫২ - ৫৩।
৫৩। " তাহলে কেন তাকে স্বর্ণ বালা দেয়া হলো না, অথবা কেন তার সাথে ফেরেশতারা সারিবদ্ধ ভাবে এলো না ? " ৪৬৫৫
৪৬৫৫। সম্ভবতঃ প্রাচীন মিশরে, স্বর্ণালঙ্কার ছিলো রাজকীয় পদমর্যদার পরিচায়ক। কারণ স্বর্ণালঙ্কার সম্পদের পূর্বাভাষ দান করে। সাধারণ মানুষ সম্পদের পূঁজারী।তারা মানুষের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে তার সম্পদের পরিমাণ দ্বারা এবং সাজসজ্জা , গাড়িঘোড়া ও অনুচরবৃন্দ দ্বারা। ফেরাউনের মাঝেও সেই একই মানসিকতা বিরাজ করেছিলো। এ কারণেই ফেরাউন মুসার নিকট দাবী করে যে প্রকৃতপক্ষে মুসা যদি নিজেকে আল্লাহ্র প্রতিনিধি দাবী করে থাকেন , তবে তাঁর স্বর্ণালঙ্কার কই ? ফেরেশতারা কেন তাঁকে সারিবদ্ধভাবে অনুসরণ করে না? এ ভাবেই পার্থিব বিষয়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা জাগতিক অভিজ্ঞতার উর্দ্ধে উঠতে অক্ষম। সে কারণেই পার্থিব বিষয়বুদ্ধি সম্পন্ন কোরাইশরা নবীজির কাছেও ঐ একই রকম প্রমাণের দাবী জানিয়েছিলো। যদিও এরূপ প্রমাণ দাবী করা শিশুসুলভ আচরণ। তবুও পৃথিবীর জনারণ্যে অধিকাংশ লোকই এই মানসিকতার অধীন। ফেরাউনের সভাসদরাও ছিলো এরূপ মানসিকতার দ্বারা আক্রান্ত। অল্প কয়েক জন মিশরবাসী আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুসার প্রচারিত বাণীকে গ্রহণ করে। কিন্তু অধিকাংশ মিশরবাসী ফেরাউনের যুক্তির অনুসরণ করে ফলে তাদের আল্লাহ্র শাস্তি স্বরূপ লোহিত সাগরে ডুবে মৃত্যু বরণ করতে হয়।
৫৪। এ ভাবেই সে তার সম্প্রদায়কে হতবুদ্ধিকরে ফেললো , ফলে তারা তার কথা মেনে নিল। সত্যই তারা ছিলো [আল্লাহ্র বিরুদ্ধে ] বিদ্রোহী এক সম্প্রদায়।
৫৫। শেষ পর্যন্ত যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করলো ৪৬৫৬ আমি তাদের উপরে প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদের সকলকে ডুবিয়ে দিলাম ৪৬৫৭।
৫৫। শেষ পর্যন্ত যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করলো ৪৬৫৬ আমি তাদের উপরে প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদের সকলকে ডুবিয়ে দিলাম ৪৬৫৭।
৪৬৫৬। আল্লাহ্ অসীম ধৈর্য্যশীল। সর্বোচ্চ পাপী ও কঠোর হৃদয় সত্যত্যাগী , বিদ্রোহীদেরও তিনি বারে বারে সুযোগ দান করেন অনুতাপ করার জন্য। কিন্তু সে সুযোগ যারা গ্রহণ করে না , তারা অবশ্যই আল্লাহ্র ন্যায় বিচারের সম্মুখীন হবে এবং আল্লাহ্র শাস্তি তাদের উপরে বজ্রের মত নেমে আসবে।
৪৬৫৭। দেখুন [ ৭ : ১৩৬ ] আয়াত।
৫৬। এবং পরবর্তীদের জন্য আমি তাদের করে রাখলাম অতীত কালের দৃষ্টান্ত ৪৬৫৮।
৪৬৫৮। আল্লাহ্র শাস্তিস্বরূপ ফেরাউন ও তাঁর দলবল পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং অতীতের দৃষ্টান্ত রূপে পৃথিবীর ইতিহাসে থেকে যায় যেনো , ভবিষ্যতের মানুষ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
রুকু - ৬
৪৬৫৯। আল্লাহ্ হযরত ঈসাকে ইসরাঈলীদের নিকট প্রেরণ করেন সত্য প্রচারের জন্য। কিন্তু ইসরাঈলীরা তাকে আল্লাহ্র রাসুল বলে গ্রহণ করে নাই। তাঁর প্রচারিত ধর্মই হচ্ছে খৃষ্টধর্ম। তাঁর অন্তর্ধানের পরে খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মকে ত্রিতত্ববাদীরূপে প্রতিষ্ঠিত করে এবং হযরত ঈসাকে আল্লাহ্র পুত্ররূপে পূঁজা করতে শুরু করে। হযরত মুহম্মদের [ সা ] সময়ে বহু গোড়া খৃষ্টান ধর্মালম্বী গোত্র হযরত ঈসার পূঁজা করতো। হযরত মুহম্মদ [ সা ] প্রচার করেন আল্লাহ্র একত্ববাদে। এ কথা আল্ - কোরাণে ঘোষণা করা হয় যে, আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদের ' ইবাদত করা হয় তারা জাহান্নামের ইন্ধন ' [ ২১ : ৯৮ ] " খৃষ্টানগণ ঈসা [আঃ]কে আল্লাহ্র শরীক করে এবং তার উপাসনা করে। সুতারাং কোরাণের ভাষ্য অনুযায়ী যদি তাঁদের দেবদেবীরা জাহান্নামের ইন্ধন হয় তবে সেই সাথে হযরত ঈসাও [ আ ] জাহান্নামের ইন্ধন হবেন। সে এই হিসেবে আমাদের উপাস্যগুলি থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। তাদের এই বক্তব্যের কোনও সারবত্তা ছিলো না , তা ছিলো মিথ্যা বাকবিতন্ডা ও শ্লেষোক্তি মাত্র।হযরত ঈসা [ আ ] ছিলেন রসুলদের মধ্যে অন্যতম প্রধান রাসুল। তিনি আল্লাহ্র অবতার ছিলেন না। বা তাঁর সম্বন্ধে খৃষ্ট ধর্মের লোকেরা যা প্রচার করে তার সাথে হযরত ঈসার কোনও সম্পর্ক নাই।
৪৬৬০। হযরত ঈসার [ আ ] সময়কাল ছিলো অতি সংক্ষিপ্ত। তাঁর প্রচারিত ধর্ম ইহুদীরা বিকৃত করে ফেলে। হযরত ঈসাকে [ আ ] বনী ইসরাঈলীদের জন্য করা হয়েছিলো দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
৪৬৬১। হযরত ঈসার জন্ম হচ্ছে আল্লাহ্র অলৌকিক ক্রিয়া কর্মের দৃষ্টান্তস্বরূপ। কিন্তু তার পরিবর্তে খৃষ্টানেরা ঈসার পূঁজা শুরু করে আল্লাহ্র পুত্ররূপে - কারণ তার জন্ম হয় পিতা ব্যতীত । সুতারাং ঈসাকে তারা মরণশীল নবী রসুলদের উর্দ্ধে স্থাপন করার প্রয়াস পায়। কিন্তু তারা কি লক্ষ্য করে না যে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পিতা ও মাতা ব্যতীত। শুধু তাই -ই নয় মরণশীল মানুষের মত ফেরেশতাদের আহারগ্রহণ করতে হয় না , তারা পার্থিব কোনও ভৌত আইনের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু ফেরেশতারা তাই বলে মানুষের থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। সুতারাং ঈসাকে [ আ ] অন্যান্য নবী রসুলদের উর্দ্ধে স্থাপন করে আল্লাহ্র পুত্ররূপে পূঁজা করার কোনও যৌক্তিকতা নাই।
৪৬৬২। "ঈসা তো কিয়ামতের নিদর্শন " - অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে হযরত ঈসা [ আ ] পুণরায় দুনিয়াতে আসবেন। তাঁর দুনিয়ায় পুণরাগমন কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন। দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় আগমন করে হযরত ঈসা তার নামে সৃষ্ট সকল মিথ্যা মতবাদকে ধ্বংস করে দেবেন। তিনি সারা পৃথিবীতে ইসলাম অর্থাৎ আল্লাহ্র একত্বের বাণী প্রচার করবেন এবং সারা পৃথিবীতে তা গ্রহণের উপযোগীতা সৃষ্টি করবেন। পৃথিবীতে শান্তি ও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে - যা কোরাণে সহজ সরল পথরূপে বর্ণিত করা হয়েছে।
৪৬৬৩। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রজ্ঞা মানুষের মাঝে বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও বিবেকের জন্ম দেয়। যার ফলে মানুষের মাঝে ন্যায় -অন্যায়,ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যার জ্ঞান জন্মে। প্রজ্ঞার মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ্র একত্বের সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা থাকা যার ফলে ব্যক্তির অনুভবে ধরা দেয় স্রষ্টার সৃষ্টির উদ্দেশ্য মানুষের শেষ গন্তব্যস্থল। স্রষ্টার সান্নিধ্য আত্মার মাঝে অনুভবের মাধ্যমে তা ঘটে। হযরত ঈসার আগমন ঘটে, ইসরাঈলীদের মাঝে বিভিন্ন মতবাদের দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন দলের ভেদাভেদ দূর করে সমন্বয় সাধনের জন্য। হযরত ঈসার মূল শিক্ষার বৃহত্তর ব্যপ্তির রূপই হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। তিনি কখনও নিজেকে আল্লাহ্ বা আল্লাহ্র পুত্র রূপে প্রচার করে নাই। ঈসাকে আল্লাহ্র পুত্ররূপে প্রচার , খৃষ্টানদের মনগড়া ধারণা বই আরকিছু নয়। খৃষ্টানরা তবে কেন হযরত মুহম্মদের [ সা ] প্রচারিত আল্লাহ্র একত্ববাদকে গ্রহণ না করে পূর্বপুরুষদের ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করবে ?
৪৬৬৪। যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের প্রতি আবেদন করা হয়েছে ইসলাম গ্রহণের জন্য। আয়াতে [ ২৬ - ২৮ ] আরব পৌত্তলিকদের নিকট আবেদন করা হয়েছে যে ইসলাম তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম। হযরত ইব্রাহীম তাদের পূর্বপুরুষ এবং এ ধর্ম প্রচার করেন হযরত ইব্রাহীম। আয়াতে [ ৪৬- ৫৪ ] আবেদন করা হয়েছে ইহুদীদের প্রতি এবং বলা হয়েছে যে, ইসলাম কোনও নূতন ধর্ম নয়, এ ধর্মই প্রচার করেছেন হযরত মুসা। সুতারাং ইহুদীরা যেনো তাদের নেতাদের দ্বারা বিপথে পরিচালিত না হয়। আয়াতে [ ৫৭- ৬৫]আবেদন করা হয়েছে খৃষ্টান ধর্মাবম্বীদের যা হযরত ঈসা প্রচার করেন। তারা যেনো তাদের ভ্রান্ত ধারণা ও বিভিন্ন মতবাদ ত্যাগ করে বিশ্বজনীন ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করে। ইসলাম সর্বকালের সর্বযুগের বিশ্বজনীন ধর্ম। সর্বযুগে সব নবী রসুলগণ যুগে যুগে আল্লাহ্র একত্ববাদের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার করে গেছেন। ইসলামই একমাত্র পার্থিব জীবনে চলার সরল পথ।
৪৬৬৫। দেখুন আয়াত [ ১২ : ১০৭ ]। যারা কোনও অবস্থাতেই আল্লাহ্র রাস্তা গ্রহণ করে না ; প্রকারান্তে তারা নিজেদের ধ্বংসের জন্য প্রতীক্ষা করে। যে কোন মূহুর্তে তাদের উপরে ধ্বংস নেমে আসতে পারে। সঠিক ঘটনা বুঝে ওঠার পূর্বেই তাদের কেয়ামত ঘটে যেতে পারে। এই আয়াতে তাদের আহ্বান করে বলা হয়েছে যে, তারা যেনো বিভ্রান্তিকর তর্কবির্তক ত্যাগ করে সরল পথে আগমন করে।
৪৬৬৬। পাপ ও পূণ্য কাজ মানুষের মানসিক গঠনকে পরিবর্তন করে দেয়। পাপীদের মন সর্বদা হিংসা দ্বেষ ও বিদ্বেষে পরিপূর্ণ থাকে। এই হিংসা,দ্বেষ, আক্রোশ তাদের মনের শান্তি বিঘ্নিত করে। অপর পক্ষে মুত্তাকীদের মানসিক অবস্থা হবে ভিন্নতর। তাদের মনজগত আল্লাহ্র করুণায় বিধৌত হয় ফলে তা হিংসা, দ্বেষ, আক্রোশ প্রভৃতি রীপু মুক্ত থাকে, যার দরুণ তাদের আত্মার মাঝে প্রশান্তি বিরাজ করে। মানসিক এই অবস্থা এই পৃথিবীতেই ঘটে থাকে যা মৃত্যুর পরে আরও বৃদ্ধি পায়। সে দিন এত বৃদ্ধি পাবে যে, পাপীরা যারা পৃথিবীতে একে অপরের বন্ধুরূপে বিরাজ করতো , তারা পরস্পর পরস্পরকে ঘৃণা ও হিংসা করবে। বিদ্বেষ ও আক্রোশ তাদের আত্মাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। অপর পক্ষে মোমেন ব্যক্তিদের মানসিক প্রশান্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। তারা পাপীদের মানসিক বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকবে।
রুকু - ৭
৪৬৬৭। আল্লাহ্র প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন ও আল্লাহ্র রাস্তায় সৎকাজ আত্মাকে সকল রীপুর দহন মুক্ত রাখে, ফলে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোনও দুঃখ বা ভয় তার আত্মাকে বিপর্যস্ত করতে পারে না। আল্লাহ্র রহমতের আশ্রয়ে পৃথিবীর সীমাবদ্ধ সময়ের গন্ডি পেরিয়ে আত্মা যখন পরলোকে সীমাহীন সময়ের সমুদ্রে প্রবেশ করে তখনও তাদের এই মানসিক শান্তি অটুট থাকে বরং তা আরও বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ্র প্রতি এই আন্তরিক ভালোবাসা ও তাঁর রাস্তায় সৎ কাজকে এভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১) যে আল্লাহ্র আয়াত সমূহে বিশ্বাস স্থাপন করে। অর্থাৎ আল্লাহ্র নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাঁর ইচ্ছাকে হৃদয়ের মাঝে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে। এবং ২) আমাদের ইচ্ছাকে সর্বশক্তিমানের ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করা অর্থাৎ সীমাহীন বিশ্বজনীন ইচ্ছার সাথে একই সুরে ঐকতান সৃষ্টি করতে পারা ; যা সম্ভব আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সুখে দুঃখে বিপদ বিপর্যয়ে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে।
৪৬৬৮। "জান্নাত" অর্থাৎ এমন স্থান যা হৃদয় মন, চক্ষু ও আত্মার জন্য শান্তিদায়ক ,সুন্দর এবং তৃপ্তিদায়ক। বেহেশত হচ্ছে পবিত্র ও সর্বোচ্চ শান্তির প্রতীক যার অনুভব ও ধারণা এই দুঃখ, ব্যথা ও বিক্ষুব্ধ যন্ত্রণা ভরা পৃথিবীতে বসে কল্পনা করাও অসম্ভব। পরবর্তী আয়াত সমূহে বেহেশতের সুখ শান্তিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে পার্থিব আনন্দ ও আশা আকাঙ্খার মাধ্যমে যাতে আমরা মাটির মানুষ ধূলামাটির পৃথিবীতে বেহেশতের অপার সুখকে কল্পনায় ছবি আকঁতে পারি।
৪৬৬৯। তৃপ্তি ও আনন্দ তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন তা সঙ্গীর সাথে অংশ গ্রহণে করা হয়। সেই পূর্ণতার প্রতীককে ব্যবহার করা হয়েছে বেহেশতে সঙ্গীনিদের সাথে প্রবেশ দ্বারা। ভালোবাসা পরস্পরের মধ্যে আদান প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। এই পূর্ণতার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ঘটবে বেহেশতে। বহু মূল্যবান ও স্বর্ণ নির্মিত পান পাত্র দ্বারা পরিবেশিত পানীয় দ্বারা প্রত্যেকের পিপাসা নিবারণ করা হবে। এই পিপাসা হচ্ছে অন্তরের চাওয়া ও পাওয়ার পিপাসা। মানুষের অন্তর যা চায় তার পরিপূর্ণতা এখানে প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে যে, তা হবে স্বর্ণ পাত্রে পবিত্র ও উত্তম পানীয় পরিবেশনের ন্যায়। এর ফলে বেহেশতবাসীদের আত্মা অনন্ত শান্তির সন্ধান লাভ করবে।
৪৬৭০।বেহেশতের বর্ণনা শেষে বলা হয়েছে যে, বেহেশতবাসীগণ এখানে প্রবেশ লাভ করবে স্ব-অধিকারে। আল্লাহ্ তাদের বেহেশতের উত্তরাধীকারী করবেন। তাঁরা এই অশেষ সুখ ও শান্তির অধিকারী হবে, পৃথিবীতে তাদের সৎ জীবন যাপনের জন্য।
৫৭। যখন মরিয়ম পুত্র [ ঈসার ] দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয় ৪৬৫৯ , দেখো , তোমার সম্প্রদায় তাতে শোরগোল তোলে [ উপহাস করে ] ! -
৫৮। এবং তারা বলে, " আমাদের দেবতাগুলি শ্রেষ্ঠ না সে ? " ওরা কেবল বাক্-বিতন্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে এ কথা বলে থাকে। নিশ্চয়ই তারা তো এক কলহপ্রিয় সম্প্রদায়।
৫৮। এবং তারা বলে, " আমাদের দেবতাগুলি শ্রেষ্ঠ না সে ? " ওরা কেবল বাক্-বিতন্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে এ কথা বলে থাকে। নিশ্চয়ই তারা তো এক কলহপ্রিয় সম্প্রদায়।
৪৬৫৯। আল্লাহ্ হযরত ঈসাকে ইসরাঈলীদের নিকট প্রেরণ করেন সত্য প্রচারের জন্য। কিন্তু ইসরাঈলীরা তাকে আল্লাহ্র রাসুল বলে গ্রহণ করে নাই। তাঁর প্রচারিত ধর্মই হচ্ছে খৃষ্টধর্ম। তাঁর অন্তর্ধানের পরে খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মকে ত্রিতত্ববাদীরূপে প্রতিষ্ঠিত করে এবং হযরত ঈসাকে আল্লাহ্র পুত্ররূপে পূঁজা করতে শুরু করে। হযরত মুহম্মদের [ সা ] সময়ে বহু গোড়া খৃষ্টান ধর্মালম্বী গোত্র হযরত ঈসার পূঁজা করতো। হযরত মুহম্মদ [ সা ] প্রচার করেন আল্লাহ্র একত্ববাদে। এ কথা আল্ - কোরাণে ঘোষণা করা হয় যে, আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদের ' ইবাদত করা হয় তারা জাহান্নামের ইন্ধন ' [ ২১ : ৯৮ ] " খৃষ্টানগণ ঈসা [আঃ]কে আল্লাহ্র শরীক করে এবং তার উপাসনা করে। সুতারাং কোরাণের ভাষ্য অনুযায়ী যদি তাঁদের দেবদেবীরা জাহান্নামের ইন্ধন হয় তবে সেই সাথে হযরত ঈসাও [ আ ] জাহান্নামের ইন্ধন হবেন। সে এই হিসেবে আমাদের উপাস্যগুলি থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। তাদের এই বক্তব্যের কোনও সারবত্তা ছিলো না , তা ছিলো মিথ্যা বাকবিতন্ডা ও শ্লেষোক্তি মাত্র।হযরত ঈসা [ আ ] ছিলেন রসুলদের মধ্যে অন্যতম প্রধান রাসুল। তিনি আল্লাহ্র অবতার ছিলেন না। বা তাঁর সম্বন্ধে খৃষ্ট ধর্মের লোকেরা যা প্রচার করে তার সাথে হযরত ঈসার কোনও সম্পর্ক নাই।
৫৯। সে একজন বান্দা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। আমি তাকে আমার অনুগ্রহ দান করেছিলাম, এবং ইসরাঈলী সম্প্রদায়ের জন্য দৃষ্টান্ত করেছিলাম ৪৬৬০।
৪৬৬০। হযরত ঈসার [ আ ] সময়কাল ছিলো অতি সংক্ষিপ্ত। তাঁর প্রচারিত ধর্ম ইহুদীরা বিকৃত করে ফেলে। হযরত ঈসাকে [ আ ] বনী ইসরাঈলীদের জন্য করা হয়েছিলো দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
৬০। এবং যদি আমি ইচ্ছা করতাম তোমাদের মধ্য থেকে ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম এবং তারা দুনিয়াতে একে অন্যের উত্তরাধীকারী হতো ৪৬৬১।
৪৬৬১। হযরত ঈসার জন্ম হচ্ছে আল্লাহ্র অলৌকিক ক্রিয়া কর্মের দৃষ্টান্তস্বরূপ। কিন্তু তার পরিবর্তে খৃষ্টানেরা ঈসার পূঁজা শুরু করে আল্লাহ্র পুত্ররূপে - কারণ তার জন্ম হয় পিতা ব্যতীত । সুতারাং ঈসাকে তারা মরণশীল নবী রসুলদের উর্দ্ধে স্থাপন করার প্রয়াস পায়। কিন্তু তারা কি লক্ষ্য করে না যে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পিতা ও মাতা ব্যতীত। শুধু তাই -ই নয় মরণশীল মানুষের মত ফেরেশতাদের আহারগ্রহণ করতে হয় না , তারা পার্থিব কোনও ভৌত আইনের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু ফেরেশতারা তাই বলে মানুষের থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। সুতারাং ঈসাকে [ আ ] অন্যান্য নবী রসুলদের উর্দ্ধে স্থাপন করে আল্লাহ্র পুত্ররূপে পূঁজা করার কোনও যৌক্তিকতা নাই।
৬১। এবং [ ঈসা ] কিয়ামতের [ আগমনের ] নিশ্চিত নিদর্শন। সুতারাং [ কেয়ামত ] সম্বন্ধে সন্দেহ করো না, বরং তোমরা আমাকে অনুসরণ কর। ইহাই সরল পথ ৪৬৬২।
৬২। শয়তান যেনো তোমাদের বাধা না দেয়। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
৬২। শয়তান যেনো তোমাদের বাধা না দেয়। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
৪৬৬২। "ঈসা তো কিয়ামতের নিদর্শন " - অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে হযরত ঈসা [ আ ] পুণরায় দুনিয়াতে আসবেন। তাঁর দুনিয়ায় পুণরাগমন কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন। দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় আগমন করে হযরত ঈসা তার নামে সৃষ্ট সকল মিথ্যা মতবাদকে ধ্বংস করে দেবেন। তিনি সারা পৃথিবীতে ইসলাম অর্থাৎ আল্লাহ্র একত্বের বাণী প্রচার করবেন এবং সারা পৃথিবীতে তা গ্রহণের উপযোগীতা সৃষ্টি করবেন। পৃথিবীতে শান্তি ও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে - যা কোরাণে সহজ সরল পথরূপে বর্ণিত করা হয়েছে।
৬৩। ঈসা যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিলো , সে বলেছিলো, " আমি তো তোমাদের নিকট প্রজ্ঞাসহ এসেছি , ৪৬৬৩ তোমরা যে সব বিষয়ে মতভেদ করছ তা স্পষ্ট করে দেবার জন্য। সুতারাং আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে অনুসরণ কর।
৪৬৬৩। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রজ্ঞা মানুষের মাঝে বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও বিবেকের জন্ম দেয়। যার ফলে মানুষের মাঝে ন্যায় -অন্যায়,ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যার জ্ঞান জন্মে। প্রজ্ঞার মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ্র একত্বের সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা থাকা যার ফলে ব্যক্তির অনুভবে ধরা দেয় স্রষ্টার সৃষ্টির উদ্দেশ্য মানুষের শেষ গন্তব্যস্থল। স্রষ্টার সান্নিধ্য আত্মার মাঝে অনুভবের মাধ্যমে তা ঘটে। হযরত ঈসার আগমন ঘটে, ইসরাঈলীদের মাঝে বিভিন্ন মতবাদের দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন দলের ভেদাভেদ দূর করে সমন্বয় সাধনের জন্য। হযরত ঈসার মূল শিক্ষার বৃহত্তর ব্যপ্তির রূপই হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। তিনি কখনও নিজেকে আল্লাহ্ বা আল্লাহ্র পুত্র রূপে প্রচার করে নাই। ঈসাকে আল্লাহ্র পুত্ররূপে প্রচার , খৃষ্টানদের মনগড়া ধারণা বই আরকিছু নয়। খৃষ্টানরা তবে কেন হযরত মুহম্মদের [ সা ] প্রচারিত আল্লাহ্র একত্ববাদকে গ্রহণ না করে পূর্বপুরুষদের ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করবে ?
৬৪। "নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার এবং তোমার প্রভু। সুতারাং তোমরা তাঁর এবাদত কর। এটাই সরল পথ ৪৬৬৪।"
৪৬৬৪। যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের প্রতি আবেদন করা হয়েছে ইসলাম গ্রহণের জন্য। আয়াতে [ ২৬ - ২৮ ] আরব পৌত্তলিকদের নিকট আবেদন করা হয়েছে যে ইসলাম তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম। হযরত ইব্রাহীম তাদের পূর্বপুরুষ এবং এ ধর্ম প্রচার করেন হযরত ইব্রাহীম। আয়াতে [ ৪৬- ৫৪ ] আবেদন করা হয়েছে ইহুদীদের প্রতি এবং বলা হয়েছে যে, ইসলাম কোনও নূতন ধর্ম নয়, এ ধর্মই প্রচার করেছেন হযরত মুসা। সুতারাং ইহুদীরা যেনো তাদের নেতাদের দ্বারা বিপথে পরিচালিত না হয়। আয়াতে [ ৫৭- ৬৫]আবেদন করা হয়েছে খৃষ্টান ধর্মাবম্বীদের যা হযরত ঈসা প্রচার করেন। তারা যেনো তাদের ভ্রান্ত ধারণা ও বিভিন্ন মতবাদ ত্যাগ করে বিশ্বজনীন ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করে। ইসলাম সর্বকালের সর্বযুগের বিশ্বজনীন ধর্ম। সর্বযুগে সব নবী রসুলগণ যুগে যুগে আল্লাহ্র একত্ববাদের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার করে গেছেন। ইসলামই একমাত্র পার্থিব জীবনে চলার সরল পথ।
৬৫। কিন্তু তাদের মধ্যে নানা দল মতানৈক্য সৃষ্টি করলো। সুতারাং দুর্ভাগ্য পাপীদের জন্য , ভয়াবহ দিবসের শাস্তির জন্য।
৬৬। তারা কি কেয়ামতের অপেক্ষাকরছে ? ৪৬৬৫। এটা তাদের উপরে আকস্মিক ভাবে আপতিত হবে,যখন তারা তা অনুধাবনও করবে না।
৬৬। তারা কি কেয়ামতের অপেক্ষাকরছে ? ৪৬৬৫। এটা তাদের উপরে আকস্মিক ভাবে আপতিত হবে,যখন তারা তা অনুধাবনও করবে না।
৪৬৬৫। দেখুন আয়াত [ ১২ : ১০৭ ]। যারা কোনও অবস্থাতেই আল্লাহ্র রাস্তা গ্রহণ করে না ; প্রকারান্তে তারা নিজেদের ধ্বংসের জন্য প্রতীক্ষা করে। যে কোন মূহুর্তে তাদের উপরে ধ্বংস নেমে আসতে পারে। সঠিক ঘটনা বুঝে ওঠার পূর্বেই তাদের কেয়ামত ঘটে যেতে পারে। এই আয়াতে তাদের আহ্বান করে বলা হয়েছে যে, তারা যেনো বিভ্রান্তিকর তর্কবির্তক ত্যাগ করে সরল পথে আগমন করে।
৬৭। পূণ্যাত্মারা ব্যতীত সেদিন বন্ধু পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে ৪৬৬৬।
৪৬৬৬। পাপ ও পূণ্য কাজ মানুষের মানসিক গঠনকে পরিবর্তন করে দেয়। পাপীদের মন সর্বদা হিংসা দ্বেষ ও বিদ্বেষে পরিপূর্ণ থাকে। এই হিংসা,দ্বেষ, আক্রোশ তাদের মনের শান্তি বিঘ্নিত করে। অপর পক্ষে মুত্তাকীদের মানসিক অবস্থা হবে ভিন্নতর। তাদের মনজগত আল্লাহ্র করুণায় বিধৌত হয় ফলে তা হিংসা, দ্বেষ, আক্রোশ প্রভৃতি রীপু মুক্ত থাকে, যার দরুণ তাদের আত্মার মাঝে প্রশান্তি বিরাজ করে। মানসিক এই অবস্থা এই পৃথিবীতেই ঘটে থাকে যা মৃত্যুর পরে আরও বৃদ্ধি পায়। সে দিন এত বৃদ্ধি পাবে যে, পাপীরা যারা পৃথিবীতে একে অপরের বন্ধুরূপে বিরাজ করতো , তারা পরস্পর পরস্পরকে ঘৃণা ও হিংসা করবে। বিদ্বেষ ও আক্রোশ তাদের আত্মাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। অপর পক্ষে মোমেন ব্যক্তিদের মানসিক প্রশান্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। তারা পাপীদের মানসিক বিকৃতি থেকে মুক্ত থাকবে।
রুকু - ৭
৬৮।হে আমার ভক্তগণ ! আজ তোমাদের কোন ভয় নাই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না , - ৪৬৬৭
৬৯। যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করেছিলো , এবং[ তাদের ইচ্ছাকে ] আত্মসমর্পন করেছিলো ইসলামে।
৬৯। যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করেছিলো , এবং[ তাদের ইচ্ছাকে ] আত্মসমর্পন করেছিলো ইসলামে।
৪৬৬৭। আল্লাহ্র প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন ও আল্লাহ্র রাস্তায় সৎকাজ আত্মাকে সকল রীপুর দহন মুক্ত রাখে, ফলে অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোনও দুঃখ বা ভয় তার আত্মাকে বিপর্যস্ত করতে পারে না। আল্লাহ্র রহমতের আশ্রয়ে পৃথিবীর সীমাবদ্ধ সময়ের গন্ডি পেরিয়ে আত্মা যখন পরলোকে সীমাহীন সময়ের সমুদ্রে প্রবেশ করে তখনও তাদের এই মানসিক শান্তি অটুট থাকে বরং তা আরও বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ্র প্রতি এই আন্তরিক ভালোবাসা ও তাঁর রাস্তায় সৎ কাজকে এভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১) যে আল্লাহ্র আয়াত সমূহে বিশ্বাস স্থাপন করে। অর্থাৎ আল্লাহ্র নিদর্শনে বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাঁর ইচ্ছাকে হৃদয়ের মাঝে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে। এবং ২) আমাদের ইচ্ছাকে সর্বশক্তিমানের ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করা অর্থাৎ সীমাহীন বিশ্বজনীন ইচ্ছার সাথে একই সুরে ঐকতান সৃষ্টি করতে পারা ; যা সম্ভব আল্লাহ্র ইচ্ছার কাছে সুখে দুঃখে বিপদ বিপর্যয়ে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে।
৭০। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মীনিগণ আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ কর ৪৬৬৮।
৪৬৬৮। "জান্নাত" অর্থাৎ এমন স্থান যা হৃদয় মন, চক্ষু ও আত্মার জন্য শান্তিদায়ক ,সুন্দর এবং তৃপ্তিদায়ক। বেহেশত হচ্ছে পবিত্র ও সর্বোচ্চ শান্তির প্রতীক যার অনুভব ও ধারণা এই দুঃখ, ব্যথা ও বিক্ষুব্ধ যন্ত্রণা ভরা পৃথিবীতে বসে কল্পনা করাও অসম্ভব। পরবর্তী আয়াত সমূহে বেহেশতের সুখ শান্তিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে পার্থিব আনন্দ ও আশা আকাঙ্খার মাধ্যমে যাতে আমরা মাটির মানুষ ধূলামাটির পৃথিবীতে বেহেশতের অপার সুখকে কল্পনায় ছবি আকঁতে পারি।
৭১। তাদের স্বর্ণের থালা ও পেয়ালা দ্বারা পরিবেশন করা হবে ৪৬৬৯ ,যা কিছু মন চায়, এবং যা কিছু চক্ষুর উপভোগ্য। [ আর হ্যাঁ ] সেথায় তোমরা চিরস্থায়ী হবে।
৪৬৬৯। তৃপ্তি ও আনন্দ তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন তা সঙ্গীর সাথে অংশ গ্রহণে করা হয়। সেই পূর্ণতার প্রতীককে ব্যবহার করা হয়েছে বেহেশতে সঙ্গীনিদের সাথে প্রবেশ দ্বারা। ভালোবাসা পরস্পরের মধ্যে আদান প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। এই পূর্ণতার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ঘটবে বেহেশতে। বহু মূল্যবান ও স্বর্ণ নির্মিত পান পাত্র দ্বারা পরিবেশিত পানীয় দ্বারা প্রত্যেকের পিপাসা নিবারণ করা হবে। এই পিপাসা হচ্ছে অন্তরের চাওয়া ও পাওয়ার পিপাসা। মানুষের অন্তর যা চায় তার পরিপূর্ণতা এখানে প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে যে, তা হবে স্বর্ণ পাত্রে পবিত্র ও উত্তম পানীয় পরিবেশনের ন্যায়। এর ফলে বেহেশতবাসীদের আত্মা অনন্ত শান্তির সন্ধান লাভ করবে।
৭২। ইহাই সেই বেহেশত যার উত্তরাধীকারি তোমাদের করা হয়েছে তোমাদের[পার্থিব জীবনের ] সৎ কাজের ফল স্বরপ ৪৬৭০।
৪৬৭০।বেহেশতের বর্ণনা শেষে বলা হয়েছে যে, বেহেশতবাসীগণ এখানে প্রবেশ লাভ করবে স্ব-অধিকারে। আল্লাহ্ তাদের বেহেশতের উত্তরাধীকারী করবেন। তাঁরা এই অশেষ সুখ ও শান্তির অধিকারী হবে, পৃথিবীতে তাদের সৎ জীবন যাপনের জন্য।
৭৩। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফলমূল ৪৬৭১, যা থেকে তোমরা আহার করবে ৪৬৭২।
৪৬৭১। এই আয়াতের "ফল" ও "আহার " শব্দদ্বয় আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয় নাই তা ব্যবহৃত হয়েছে রূপক অর্থে। পূর্বের [ ৭১ ] আয়াতে 'আহার ' করা ও 'পান ' করাকে প্রতীকের সাহায্যে উপস্থাপন করা হয়েছে, "স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র" রূপে। ৭২ নং আয়াতে বলা হয়েছে "যাহার অধিকারী করা হয়েছে তোমাদিগের কর্মের ফল স্বরূপ। " অর্থাৎ সৎকার্যের পুরষ্কার স্বরূপ বেহেশত লাভ। এর অর্থ এই নয় যে, পুরষ্কার হবে সৎকাজের উপযুক্ত পরিমাণ অনুযায়ী। আল্লাহ্ অসীম করুণাময়। তাঁর রহমতের ধারা আমাদের কর্মকে ছাপিয়ে বহুগুণ করে বর্ধিতকরা হবে। এ কথা কোরাণে বারে বারে বলা হয়েছে যে মোমেন ব্যক্তিকে তার কাজের থেকে বহুগুণ বেশী পুরষ্কারে ভূষিত করা হবে। অপরপক্ষে পাপীরা ন্যায় বিচার স্বরূপ যতটুকু পাপ করেছে শুধু ততটুকুই শাস্তি লাভ করবে। প্রতিটি কাজেরই পরিণাম বিদ্যমান।কর্ম ও তার পরিণাম হচ্ছে পৃথিবীর নিয়ম।পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে "যাহার অধিকারী করা হয়েছে তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ। " এর থেকে মনে হতে পারে 'কর্ম' ও "কর্মের ফল" কঠোর ভাবে অনুশীলন করা হবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ্র দয়া ও করুণা মানুষের প্রকৃত প্রাপ্যকে অতিক্রম করে বহুগুণ করা হবে।আর তা লাভ করা সম্ভব অনুতাপ ও আত্ম সংশোধনের মাধ্যমে। "প্রচুর ফলমূল " দ্বারা আল্লাহ্র অসীম করুণাধারাকে প্রকাশ করা হয়েছে। এই আয়াতে যে ' ফলমূলের ' উল্লেখ আছে তা কোনও জাগতিক বা পার্থিব ফল নয়। এ সব ফল হবে প্রত্যেকের পছন্দের প্রতীক স্বরূপ। দেখুন [ ২ : ২৫ ] আয়াতের টিকা নং ৪৪। বেহেশতী ফলকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
৪৬৭২। আক্ষরিক বর্ণনা হচ্ছে , " আহার করবে" কিন্তু 'Akala' শব্দটি বহু জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে সংক্ষেপে 'উপভোগ' শব্দটি বোঝানোর জন্য। উদাহরণের জন্য দেখুন [ ৫ : ৫৯ ] আয়াতের টিকা ৭৭৬ এবং আয়াত [ ৭ : ১৯ ] ও টিকা ১০০৪। উপভোগ শব্দটি বেহেশতি ফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
৪৬৭৩। আল্লাহ্ অন্যায়কারী বা নিষ্ঠুর, সে কারণে পাপীরা শাস্তি লাভ করবে বা আল্লাহ্র প্রতিশোধের শীকার হবে পাপীরা , এরূপ ধারণা করা ভুল। পাপীরা তাদের কর্মফল ভোগ করবে মাত্র। প্রতিটি কর্মেরই প্রতিফল বিদ্যমান। পৃথিবীর "শিক্ষানবীশকাল" যারা পাপের মাঝে অতিবাহিত করে তারা তাদের আত্মাকে কলুষিত করে ফেলে, তারা তাদের কাজের পরিণতি অবশ্যই ভোগ করবে।কারণ অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা সর্বদা গ্রহণযোগ্য। অনুতাপকারীর জন্য আল্লাহ্র ক্ষমা ও করুণার দুয়ারসর্বদা উম্মুক্ত। কিন্তু পাপীরা পৃথিবীর জীবনে সে সুযোগ গ্রহণ করে নাই। তারা তা অহংকার ও গর্বভরে প্রত্যাখান করেছে। ফলে তারা নিজেরাই তাদের আত্মাকে কলুষিত করেছে এবং নিজেই নিজের প্রতি জুলুম করে আত্মার স্বচ্ছতা হারিয়েছে। "উহারা নিজেরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছে।" এই বর্ণনা কর্ম ও তার প্রতিফলের সাথে সম্পূরক যা বর্ণনা করা হয়েছে টিকা নং ৪৬৭১।
৪৬৭৪। "মালিক" হচ্ছে দোযখের অধিকর্তার নাম।
৪৬৭৫। দেখুন আয়াত [ ২০ : ৭৪ ]। জাহান্নামে পাপীরা অনন্তকাল ব্যপী নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে। অনন্ত যন্ত্রণা থেকে সম্পূর্ণ ধ্বংস অধিক কাম্য হবে। বিজ্ঞানের একটি বিশেষ সুত্র আছে যে "বস্তুর কোনও ধ্বংস নাই - তা শুধু একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবতির্ত হয়।" আধ্যাত্মিক জীবনেও এ সুত্রের প্রয়োগ হয়।পৃথিবীতে যে যা করবে তার ফলাফল কখনও ধ্বংস হবার নয়। পাপীরাও তাদের কর্মফলকে ইচ্ছা করলেও ধ্বংস করতে পারবে না। সুতারাং তাদের ধ্বংস দ্বারা তাদের কর্মফলকে ধ্বংস করার নীতি সেখানে প্রযোজ্য হওয়া সম্ভব নয়। সুতারাং পাপীদের জাহান্নামে নরক যন্ত্রণার মাঝেই অনন্তকাল থাকবে হবে। সেখানে তাদের ধ্বংসও হবে না বা নূতন জীবনও লাভ করবে না। "নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের শাস্তিতে থাকবে স্থায়ী " [ ৭৪ নং আয়াত ]।
৪৬৭৬। মক্কাতে ইসলাম প্রচারের প্রথম যুগে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে যখনই সত্য প্রচারিত হয়েছে তা সত্য বিমুখদের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়েছে। কারণ যারা ধোঁকাবাজি , প্রতারণা, মিথ্যার উপরে জীবন ধারণ করে, তাদের নিকট সত্য সব সময়ে তিক্ততা বহন করে আনবে। সত্যের বাণী সব সময়েই তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। সে কারণেই তারা সর্বদা সত্যকে ঘৃণা করে এবং সত্যকে ধ্বংস করার জন্য সত্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে থাকে। কিন্তু এতে কি তাদের মনঃষ্কামনা পূর্ণ হবে ? দেখুন পরবর্তী আয়াত ও টিকা।
৪৬৭৭। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা মানুষের নাই। এ সিদ্ধান্ত একমাত্র আল্লাহ্র। আল্লাহ্র সিদ্ধান্তই হচ্ছে আল্লাহ্র সত্য। যদি কেউ সত্যের বিরুদ্ধে সত্যকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করে তবে সত্যের দীপ্তি ও ক্ষমতা এ সব সত্য ত্যাগীদের ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু যদি কেউ সত্যকে নিজের জীবনে গ্রহণ করে,তবে তাদের আত্মা মুক্তিলাভ করবে। ইহকাল ও পরকালে তারা হবে সফলকাম আল্লাহ্র হাতেই সর্বময় ক্ষমতা।
৪৬৭৮। মানুষ যত সাবধানতা ও সর্তকতা অবলম্বন করুক না কেন মানুষের কোনও পরিকল্পনা বা গোপন কথা বা উদ্দেশ্য আল্লাহ্র নিকট গোপন থাকে না। কারণ মানুষের চিন্তার সাথে, মস্তিষ্কের রন্ধে রন্ধের, কণিকা কনিকায় ফেরেশতাদের অবস্থান। যারা সর্বসময়ে সর্বস্থানে, সর্বদা মানুষের সুক্ষাতিসুক্ষ চিন্তা-ভাবনা কর্মের নিয়ত সব কিছুই নিভুর্লভাবে সংরক্ষিত করে চলেছে। এটা আল্লাহ্র সৃষ্ট এক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা। এর ফলে শেষ বিচারের দিনে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকারের কোনও উপায় থাকবে না।
৪৬৭৯। আল্লাহ্র রাসুল আল্লাহ্র প্রকৃত উপাসনা থেকে কখনও বিরত থাকতে পারেন না ? আল্লাহ্র সন্তান' অর্থাৎ সর্বশক্তিমানের যে কোন রূপেই যদি প্রকৃতিতে অবস্থান থাকতো, তবে আল্লাহ্র রাসুল তার উপাসনা করতেন। আল্লাহ্র সন্তানরূপে মিথ্যার উপাসনা হচ্ছে প্রতারণা বিশেষ।
৪৬৮০। দেখুন [ ৭ : ৫৪ ] আয়াত ও টিকা ১০৩২। সমস্ত ক্ষমতা , প্রভুত্ব জ্ঞান এবং সত্য আল্লাহ্র নিকট। তিনি পবিত্র ও মহান। তিনি কারও পিতা নন বা পুত্র নন। তিনি এ সবের উর্দ্ধে পবিত্র।
৪৬৮১। "যে দিবসের কথা " - এর দ্বারা কিয়ামত দিবসকে বুঝানো হয়েছে। সে দিনের ছবি পৃথিবীর জীবনের ছবি থেকে ভিন্নতর হবে। সেদিন সকলের পুণরুত্থান ঘটবে এবং বিচারের সম্মুখীন হতে হবে এবং এই পৃথিবীর সকল কাজের হিসাব দাখিল করতে হবে। সুতারাং যারা কিয়ামত দিবসকে ভুলে পৃথিবীর আনন্দ কৌতুক নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়, তাদের তা থাকতে দাও। শেষ পর্যন্ত তারা প্রকৃত সত্যকে প্রত্যক্ষ করবেই।
৪৬৮২। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র। তিনি পবিত্র ও মহান। তিনি সমস্ত কিছুর সার্বভৌম অধিপতি, সমস্ত ক্ষমতার মালিক। আমাদের সকলের তারই নিকট প্রত্যার্পন ঘটবে।
৪৬৮৩। যারা মূর্তি ও অন্যান্য উপাস্যের উপাসনা করে থাকে; এ সব তাদের উপাসকদের কোনও কাজেই আসবে না। কারণ শেষ বিচারের দিনে এসব মিথ্যা উপাস্যদের আল্লাহ্র নিকট সুপারিশ করার কোনও ক্ষমতা দান করা হবে না। খৃষ্টধর্মালম্বীরা হযরত ঈসার এবাদত করে আল্লাহ্র পুত্র রূপে যা মিথ্যা। কিন্তু ঈসা [আ ] আল্লাহ্র একত্বের বাণী প্রচার করেন - তিনি প্রকৃত সত্যকে অন্তরে উপলব্ধি করেছিলেন। সুতারাং আল্লাহ্ তাঁকে সুপারিশের ক্ষমতা দান করবেন।
৪৬৮৪। দেখুন [ ৩১ : ২৫ ] আয়াত ও টিকা ৩৬১৩ এবং আয়াত [ ৩৯ : ৩৮ ] ও টিকা ৪২৯৯।
৪৬৮৫। রাসুল[ সা ] কোরেশদের অবিশ্বাসে অন্তরে ব্যথা অনুভব করেন কষ্ট পান। দেখুন আয়াত[ ১৮ : ৬ ]। পরবর্তী আয়াতে রাসুলকে আদেশ দেয়া হয়েছে তাদের উপেক্ষা করতে। কারণ শীঘ্রই সত্য তার স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত হবে।
৪৬৮৬। রসুল (সা ) কোরেশদের অবিশ্বাসে অন্তরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেন, কষ্ট পান। দেখুন আয়াত[ ১৮ : ৬ ]। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ রসুলকে (সা) সান্তনা দিয়েছেন এবং পরের আয়াতে রসুলকে ( সা ) আদেশ দেয়া হয়েছে তাদের উপেক্ষা করতে। কারণ শীঘ্রই সত্য তার স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত হবে।
৪৬৮৭। দেখুন [ ২৫ : ৬৩ ] আয়াত ও টিকা ৩১২৩।
৪৬৭২। আক্ষরিক বর্ণনা হচ্ছে , " আহার করবে" কিন্তু 'Akala' শব্দটি বহু জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে সংক্ষেপে 'উপভোগ' শব্দটি বোঝানোর জন্য। উদাহরণের জন্য দেখুন [ ৫ : ৫৯ ] আয়াতের টিকা ৭৭৬ এবং আয়াত [ ৭ : ১৯ ] ও টিকা ১০০৪। উপভোগ শব্দটি বেহেশতি ফলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
৭৪। [ আর হ্যাঁ ] পাপীরা জাহান্নামের শাস্তিতে চিরস্থায়ী হবে।
৭৫। তাদের [শস্তিকে ] লাঘব করা হবে না এবং তারা হতাশায় সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।
৭৬। আমি তাদের প্রতি অন্যায় করি নাই ৪৬৭৩; তারা নিজেরাই নিজেদের [ আত্মার ] প্রতি অন্যায় করেছে।
৭৫। তাদের [শস্তিকে ] লাঘব করা হবে না এবং তারা হতাশায় সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।
৭৬। আমি তাদের প্রতি অন্যায় করি নাই ৪৬৭৩; তারা নিজেরাই নিজেদের [ আত্মার ] প্রতি অন্যায় করেছে।
৪৬৭৩। আল্লাহ্ অন্যায়কারী বা নিষ্ঠুর, সে কারণে পাপীরা শাস্তি লাভ করবে বা আল্লাহ্র প্রতিশোধের শীকার হবে পাপীরা , এরূপ ধারণা করা ভুল। পাপীরা তাদের কর্মফল ভোগ করবে মাত্র। প্রতিটি কর্মেরই প্রতিফল বিদ্যমান। পৃথিবীর "শিক্ষানবীশকাল" যারা পাপের মাঝে অতিবাহিত করে তারা তাদের আত্মাকে কলুষিত করে ফেলে, তারা তাদের কাজের পরিণতি অবশ্যই ভোগ করবে।কারণ অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা সর্বদা গ্রহণযোগ্য। অনুতাপকারীর জন্য আল্লাহ্র ক্ষমা ও করুণার দুয়ারসর্বদা উম্মুক্ত। কিন্তু পাপীরা পৃথিবীর জীবনে সে সুযোগ গ্রহণ করে নাই। তারা তা অহংকার ও গর্বভরে প্রত্যাখান করেছে। ফলে তারা নিজেরাই তাদের আত্মাকে কলুষিত করেছে এবং নিজেই নিজের প্রতি জুলুম করে আত্মার স্বচ্ছতা হারিয়েছে। "উহারা নিজেরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছে।" এই বর্ণনা কর্ম ও তার প্রতিফলের সাথে সম্পূরক যা বর্ণনা করা হয়েছে টিকা নং ৪৬৭১।
৭৭। তারা আর্তনাদ করতে থাকবে, " হে মালিক ! ৪৬৭৪ তোমার প্রভু যেনো আমাদের ধ্বংস করে দেন।" সে বলবে , " না , তোমরা চিরকাল এভাবেই থাকবে।" ৪৬৭৫
৪৬৭৪। "মালিক" হচ্ছে দোযখের অধিকর্তার নাম।
৪৬৭৫। দেখুন আয়াত [ ২০ : ৭৪ ]। জাহান্নামে পাপীরা অনন্তকাল ব্যপী নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে। অনন্ত যন্ত্রণা থেকে সম্পূর্ণ ধ্বংস অধিক কাম্য হবে। বিজ্ঞানের একটি বিশেষ সুত্র আছে যে "বস্তুর কোনও ধ্বংস নাই - তা শুধু একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবতির্ত হয়।" আধ্যাত্মিক জীবনেও এ সুত্রের প্রয়োগ হয়।পৃথিবীতে যে যা করবে তার ফলাফল কখনও ধ্বংস হবার নয়। পাপীরাও তাদের কর্মফলকে ইচ্ছা করলেও ধ্বংস করতে পারবে না। সুতারাং তাদের ধ্বংস দ্বারা তাদের কর্মফলকে ধ্বংস করার নীতি সেখানে প্রযোজ্য হওয়া সম্ভব নয়। সুতারাং পাপীদের জাহান্নামে নরক যন্ত্রণার মাঝেই অনন্তকাল থাকবে হবে। সেখানে তাদের ধ্বংসও হবে না বা নূতন জীবনও লাভ করবে না। "নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের শাস্তিতে থাকবে স্থায়ী " [ ৭৪ নং আয়াত ]।
৭৮।নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট সত্য এনেছি ৪৬৭৬ , কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই সত্যকে ঘৃণা করে।
৪৬৭৬। মক্কাতে ইসলাম প্রচারের প্রথম যুগে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে যখনই সত্য প্রচারিত হয়েছে তা সত্য বিমুখদের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়েছে। কারণ যারা ধোঁকাবাজি , প্রতারণা, মিথ্যার উপরে জীবন ধারণ করে, তাদের নিকট সত্য সব সময়ে তিক্ততা বহন করে আনবে। সত্যের বাণী সব সময়েই তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। সে কারণেই তারা সর্বদা সত্যকে ঘৃণা করে এবং সত্যকে ধ্বংস করার জন্য সত্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে থাকে। কিন্তু এতে কি তাদের মনঃষ্কামনা পূর্ণ হবে ? দেখুন পরবর্তী আয়াত ও টিকা।
৭৯। সেকি ! তারা কি [ নিজেদের মধ্যে ] পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে ? কিন্তু আমিই তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী। ৪৬৭৭
৪৬৭৭। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা মানুষের নাই। এ সিদ্ধান্ত একমাত্র আল্লাহ্র। আল্লাহ্র সিদ্ধান্তই হচ্ছে আল্লাহ্র সত্য। যদি কেউ সত্যের বিরুদ্ধে সত্যকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করে তবে সত্যের দীপ্তি ও ক্ষমতা এ সব সত্য ত্যাগীদের ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু যদি কেউ সত্যকে নিজের জীবনে গ্রহণ করে,তবে তাদের আত্মা মুক্তিলাভ করবে। ইহকাল ও পরকালে তারা হবে সফলকাম আল্লাহ্র হাতেই সর্বময় ক্ষমতা।
৮০। অথবা তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন এবং ব্যক্তিগত মন্ত্রণার খবর রাখি না ? ৪৬৭৮অবশ্য [ আমি তা রাখি ] ,এবং আমার দূতগণ [ ফেরেশতারা ] তাদের নিকট উপস্থিত থেকে সব লিখে রাখছে।
৪৬৭৮। মানুষ যত সাবধানতা ও সর্তকতা অবলম্বন করুক না কেন মানুষের কোনও পরিকল্পনা বা গোপন কথা বা উদ্দেশ্য আল্লাহ্র নিকট গোপন থাকে না। কারণ মানুষের চিন্তার সাথে, মস্তিষ্কের রন্ধে রন্ধের, কণিকা কনিকায় ফেরেশতাদের অবস্থান। যারা সর্বসময়ে সর্বস্থানে, সর্বদা মানুষের সুক্ষাতিসুক্ষ চিন্তা-ভাবনা কর্মের নিয়ত সব কিছুই নিভুর্লভাবে সংরক্ষিত করে চলেছে। এটা আল্লাহ্র সৃষ্ট এক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা। এর ফলে শেষ বিচারের দিনে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকারের কোনও উপায় থাকবে না।
৮১। বল, " যদি পরম করুণাময় [আল্লাহ্র ] পুত্র সন্তান থাকতো,তবে তার এবাদতে আমিই প্রথম হতাম ৪৬৭৯।
৪৬৭৯। আল্লাহ্র রাসুল আল্লাহ্র প্রকৃত উপাসনা থেকে কখনও বিরত থাকতে পারেন না ? আল্লাহ্র সন্তান' অর্থাৎ সর্বশক্তিমানের যে কোন রূপেই যদি প্রকৃতিতে অবস্থান থাকতো, তবে আল্লাহ্র রাসুল তার উপাসনা করতেন। আল্লাহ্র সন্তানরূপে মিথ্যার উপাসনা হচ্ছে প্রতারণা বিশেষ।
৮২। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর [কর্র্তৃত্বের ] প্রভু মহান পবিত্র ৪৬৮০। ওরা যা [ তার সম্বন্ধে ] আরোপ করে তিনি তা থেকে [ মুক্ত ]।
৪৬৮০। দেখুন [ ৭ : ৫৪ ] আয়াত ও টিকা ১০৩২। সমস্ত ক্ষমতা , প্রভুত্ব জ্ঞান এবং সত্য আল্লাহ্র নিকট। তিনি পবিত্র ও মহান। তিনি কারও পিতা নন বা পুত্র নন। তিনি এ সবের উর্দ্ধে পবিত্র।
৮৩। সুতারাং ওদের যে দিবসের অঙ্গীকার করা হয়েছে , সে দিবসের সাক্ষাত না পাওয়া পর্যন্ত ৪৬৮১ ওদেরকে নিরর্থক গল্প গুজব ও [ অহংকারের ] খেলাতে মেতে থাকতে দাও।
৪৬৮১। "যে দিবসের কথা " - এর দ্বারা কিয়ামত দিবসকে বুঝানো হয়েছে। সে দিনের ছবি পৃথিবীর জীবনের ছবি থেকে ভিন্নতর হবে। সেদিন সকলের পুণরুত্থান ঘটবে এবং বিচারের সম্মুখীন হতে হবে এবং এই পৃথিবীর সকল কাজের হিসাব দাখিল করতে হবে। সুতারাং যারা কিয়ামত দিবসকে ভুলে পৃথিবীর আনন্দ কৌতুক নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়, তাদের তা থাকতে দাও। শেষ পর্যন্ত তারা প্রকৃত সত্যকে প্রত্যক্ষ করবেই।
৮৪। তিনিই প্রভু নভোমন্ডলের ও প্রভু পৃথিবীর এবং তিনি প্রজ্ঞা ও জ্ঞানে পরিপূর্ণ।
৮৫। এবং পবিত্র মঙ্গলময় তিনি যার অধীনে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এদুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু। শেষ বিচার দিবসের সময়ের জ্ঞান শুধুমাত্র তারই নিকটে রয়েছে এবং তোমাদের সকলকে তাঁরই নিকটে ফিরিয়ে আনা হবে ৪৬৮২।
৮৫। এবং পবিত্র মঙ্গলময় তিনি যার অধীনে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এদুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু। শেষ বিচার দিবসের সময়ের জ্ঞান শুধুমাত্র তারই নিকটে রয়েছে এবং তোমাদের সকলকে তাঁরই নিকটে ফিরিয়ে আনা হবে ৪৬৮২।
৪৬৮২। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র। তিনি পবিত্র ও মহান। তিনি সমস্ত কিছুর সার্বভৌম অধিপতি, সমস্ত ক্ষমতার মালিক। আমাদের সকলের তারই নিকট প্রত্যার্পন ঘটবে।
৮৬। আল্লাহ্ ব্যতীত ওরা যাদের আহ্বান করে, তাদের সুপারিশ করার কোন ক্ষমতা নাই। শুধুমাত্র সে [ব্যতীত ] , যে সত্য উপলব্ধি করে, উহার সাক্ষ্য দেয় ৪৬৮৩।
৪৬৮৩। যারা মূর্তি ও অন্যান্য উপাস্যের উপাসনা করে থাকে; এ সব তাদের উপাসকদের কোনও কাজেই আসবে না। কারণ শেষ বিচারের দিনে এসব মিথ্যা উপাস্যদের আল্লাহ্র নিকট সুপারিশ করার কোনও ক্ষমতা দান করা হবে না। খৃষ্টধর্মালম্বীরা হযরত ঈসার এবাদত করে আল্লাহ্র পুত্র রূপে যা মিথ্যা। কিন্তু ঈসা [আ ] আল্লাহ্র একত্বের বাণী প্রচার করেন - তিনি প্রকৃত সত্যকে অন্তরে উপলব্ধি করেছিলেন। সুতারাং আল্লাহ্ তাঁকে সুপারিশের ক্ষমতা দান করবেন।
৮৭। যদি তুমি তাদের জিজ্ঞাসা কর যে, কে তাদের সৃষ্টি করেছে ৪৬৮৪ , তারা অবশ্যই বলবে, " আল্লাহ্"। তাহলে কিভাবে তারা [ সত্য থেকে ] বিভ্রান্ত হচ্ছে ?
৪৬৮৪। দেখুন [ ৩১ : ২৫ ] আয়াত ও টিকা ৩৬১৩ এবং আয়াত [ ৩৯ : ৩৮ ] ও টিকা ৪২৯৯।
৮৮।[আল্লাহ্ জ্ঞাত আছেন যে রাসুলেরা ] ৪৬৮৫ , আর্তনাদ করেছিলো, " হে আমারপ্রভু !নিশ্চয় এরা এমন এক সম্প্রদায় যারা ঈমান আনবে না।" ৪৬৮৬
৪৬৮৫। রাসুল[ সা ] কোরেশদের অবিশ্বাসে অন্তরে ব্যথা অনুভব করেন কষ্ট পান। দেখুন আয়াত[ ১৮ : ৬ ]। পরবর্তী আয়াতে রাসুলকে আদেশ দেয়া হয়েছে তাদের উপেক্ষা করতে। কারণ শীঘ্রই সত্য তার স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত হবে।
৪৬৮৬। রসুল (সা ) কোরেশদের অবিশ্বাসে অন্তরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেন, কষ্ট পান। দেখুন আয়াত[ ১৮ : ৬ ]। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ রসুলকে (সা) সান্তনা দিয়েছেন এবং পরের আয়াতে রসুলকে ( সা ) আদেশ দেয়া হয়েছে তাদের উপেক্ষা করতে। কারণ শীঘ্রই সত্য তার স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত হবে।
৮৯। তবে তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং বল, " শান্তি " ৪৬৮৭। কেননা শীঘ্রই ওরা [এর শেষ ফল ] জানতে পারবে।
৪৬৮৭। দেখুন [ ২৫ : ৬৩ ] আয়াত ও টিকা ৩১২৩।