+
-
R
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : হা-মিম্ সুরাগুলিতে সময়কাল ও মূল বিষয়বস্তুর জন্য দেখুন ৪০নং সূরার ভূমিকা। শ্রেণীর ক্রমপঞ্জিতে এই সূরাটির স্থান পঞ্চম।
এই সূরার বিষয় বস্তুর বৈশিষ্ট্য দুখান শব্দটি ১০নং আয়াতে দ্রষ্টব্য। এর অর্থ ধোঁয়া বা কুয়াশা। এই ধোঁয়া বা কুয়াশা দুভির্ক্ষের পূর্বাভাষ হতে পারে যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে আয়াতের টিকাতে।
সার সংক্ষেপ : প্রত্যাদেশ ব্যাখ্যা করে কিভাবে পার্থিব অহংকার ও উদ্ধতপনা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়। আধ্যাত্মিক সত্যই স্থায়ীত্ব লাভ করে [ ৪৪ : ১ - ২৯ ]।
মানুষ আল্লাহ্র নেয়ামত লাভ করে আল্লাহ্র তরফ থেকে আমানত হিসেবে - কিন্তু মানুষ সেই আমানতের মর্যদা রাখতে সক্ষম হয় না - যেমনটি ঘটেছিলো ইসরাঈলীদের সম্পর্কে। কোরেশরা কি ভালো ও মন্দের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে ? [ ৪৪ : ৩০- ৫৯]।
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৪৬৮৯। পূর্বের সূরাতে [ ৪৩:৩ ] গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে কোরাণ সম্পর্কে যেনো প্রত্যেকে বুঝতে পারে। এই সূরাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, কোরাণ শরীফ আল্লাহ্র তরফ থেকে করুণা ও দয়া যার সাহায্যে মানুষকে পাপের বিরুদ্ধে সর্তক করা হয়েছে।
৪৬৯০। "মঙ্গলময় রাত্রি " - এই রাত্রি সাধারণতঃ মনে করা হয় রমজান মাসের ২৩ শে বা ২৫ শে বা ২৭ এর রাত্রি। এই রাত্রিকে বলা হয়েছে বরকতময় রাত্রি। সাধারণতঃ ২৭শে রমজানকে ধরা হয় এই বরকতময় রাত্রি। এই রাত্রিতে কুর-আনের বাণী ধরিত্রীতে প্রথম অবতীর্ণ হয়, যা মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ , ঠিক বৃষ্টি যেরূপ রৌদ্রদগ্ধ শুষ্ক জমিকে সিক্ত করে সেরূপ। এই রাত্রিকে আয়াত [ ২ : ১৮৫]ও আয়াতে [ ৯৭ : ১ ] বলা হয়েছে মহিমান্বিত রাত্রি। এই রাত্রিতে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয়। পবিত্র এই রজনীকে শবে-কদরের রাত্রি বলে, যে রাতে কোরাণ পৃথিবীতে নাজেল হয়।
৪৬৯১। এই সেই রাত্রি, যে রাত্রিতে ঐশি জ্ঞান ধরার বুকে আগমন করে এবং প্রত্যাদেশের মাধ্যমে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করা হয় যা আধ্যাত্মিক মুক্তির সন্ধান দান করে। মানুষের জন্য যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
৪৬৯২। মহান আল্লাহ্ বন্ধুহীনের বন্ধু, অসহায়ের সাহায্যকারী। তিনি সকলের আন্তরিক প্রার্থনা শোনেন। তাঁর জ্ঞান সকল কিছুকে পরিবৃত করে থাকে। আমাদের দূরদৃষ্টির অভাবে আমরা অনেক সময়েই আমাদের প্রকৃত মঙ্গলকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই না। আমাদের জন্য যা কিছু মঙ্গলজনক মহান আল্লাহ্ তা আমাদের প্রদান করেন তাঁর জ্ঞান , প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা অনুযায়ী। আমরা যে ভাবে চাই সে ভাবে তা নাও হতে পারে। কারণ আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত - অপরপক্ষে আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নিভুর্ল ও সম্পূর্ণ।
৪৬৯৩। দেখুন আয়াত [ ২ : ৪ ]। আকাশমন্ডলী , পৃথিবী ও উহাদিগের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালক আল্লাহ্। এই বিশাল বিশ্ব ভূবনের একজনই স্রষ্টা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। এ কথা অনুভবের মাধ্যমে হৃদয় কন্দরে উপলব্ধি করা অসাধারণ এক বিষ্ময়কর ব্যাপার। যে আত্মায় আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসে আছে প্রচন্ডতা, দৃঢ়তায় আছে অতল সমুদ্রের গভীরতা, একমাত্র সেই আত্মার মাঝেই আল্লাহ্র এই বিশালত্বের ধারণা সামান্য হলেও ধারণ করা সম্ভব। বিশ্বাস যখন নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয় শুধু তখনই স্রষ্টাকে অনুভবের মাধ্যমে আত্মার মাঝে উপলব্ধি করা সম্ভব।
৪৬৯৪। এই আয়াতে কোরাইশদের কথা বলা হয়েছে। হযরতের [ সা ] নবুয়ত পাওয়ার প্রথম দিকে কোরাইশরা হযরতের প্রচারিত ধর্ম সম্বন্ধে হাসি ঠাট্টা করতো; তারা ব্যঙ্গ বিদ্রূপের মাধ্যমে তার গুরুত্ব লাঘব করতে চাইত। প্রথমেই তারা হযরতের [ সা ] উপরে অত্যাচার নির্যাতন আরম্ভ করে নাই। প্রথমে কোরাইশরা হযরতের [ সা ] প্রচারিত ধর্ম সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করে ও হাসি খেলার বস্তুতে পরিণত করতে চেষ্টা করে। অপরপক্ষে রাসুল [ সা ] ছিলেন একান্ত আন্তরিক ভাবে মনপ্রাণ দিয়ে সচেষ্ট। তিনি তাঁর দেশবাসীকে ভালোবাসেন এবং তিনি তাদের পাপের পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বদা আপ্রাণ চেষ্টা করতেন।
মন্তব্য : কোরেশদের এই মানসিকতা সর্ব যুগে সত্য বিরোধীদের প্রতি প্রযোজ্য। এই মানসিকতা পূর্বেও ছিলো, বর্তমানেও আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে।
৪৬৯৫। এখানে যে দিনের উল্লেখ করা হয়েছে সেটা কোন দিন ? অবশ্যই সে দিন হবে বিরাট বিপর্যয়ের দিন। ভাষার বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, সে বিপর্যয়ের দিন হবে ভবিষ্যতে। এই সূরার ১১নং আয়াতের 'yagsha' শব্দটি সূরা [ ৮৮ : ১ ] আয়াতের 'gashiya' শব্দটির সাথে তুলনাযোগ্য। তবে শব্দটি শেষ বিচারের দিনের জন্য প্রযোজ্য হয়েছে। কিন্তু এই সূরার ১৫ নং আয়াতটিতে বলা হয়েছে , " শাস্তি কিছু কালের জন্য রহিত করিতেছি।" সুতারাং এই বিপর্যয়ের দিন শেষ বিচারের দিন হবে না। এটি হবে পৃথিবীর জীবনের বিপর্যয় যা ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে। সম্ভবতঃ পরবর্তী মক্কাতে যে দুর্ভিক্ষ হবে তারই পূর্বাভাষ এখানে দেয়া হয়েছে।
৪৬৯৬। তফসীরকারগণ মনে করেন 'ধোঁয়া' বা কুয়াশা যাই বলা হোক না কেন তার দ্বারা মক্কার দুর্ভিক্ষের প্রতি ইঙ্গিতকরা হয়েছে। দিনের পরে দিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে করতে মানুষ এমন অবস্থায় পৌঁছায় যখন তারা চোখে ঘোর দেখে অর্থাৎ সব কিছু ঝাপসা বলে পরিগণিত হয়। মনে হবে ধোঁয়া সব কিছুকে আচ্ছাদিত করে ফেলেছে। ইবনে কাফীর মক্কার দুইটি দুর্ভিক্ষের উল্লেখ করেছেন। একটা ছিলো নবুয়ত পাওয়ার ৮ম বর্ষে বা হিজরতের চার বছর পূর্বে , অন্যটি ছিলো হিজরতের ৮ম বর্ষে। যে কোনটি অথবা দুটোই সম্ভবতঃ প্রায় সাত বছরের মত স্থায়ী হয়। এটাও সম্ভব যে দুটো দুর্ভিক্ষই সামান্য ব্যবধানে ধারাবাহিক ভাবে চলে এসেছে বছরের পর বছর। যার প্রচন্ডতা এক এক বর্ষে এক এক রকম ভাবে অনুভূত হয়েছে। বুখারী শরীফে শুধুমাত্র হিজরতের পরবর্তী দুর্ভিক্ষের উল্লেখ আছে। সে দুর্ভিক্ষের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে সে দুর্ভিক্ষ এতটাই তীব্র ছিলো যে, মানুষ মৃত প্রাণীর গলিত শব ও হাড় ভক্ষণ করতো। আবু সুফিয়ান অষ্টম হিজরীতে রাসুলের নিকট গমন করেন আল্লাহ্র দরবারে রাসুলকে [ সা ] সুপারিশ করার জন্য; আল্লাহ্ যেনো তাদের দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি দেন। যেহেতু, মোশরেক আরবরা বিশ্বাস করতো যে, দুর্ভিক্ষ রাসুলের [ সা ] অভিশাপের ফল। সূরা [ ২৩ : ৭৫ ] আয়াতে এবং টিকাতে ২৯২১ দুর্ভিক্ষের উল্লেখ আছে, যদিও সে সূরাটি বর্তমান সূরার পরে মক্কাতে অবতীর্ণ হয়। সকল সূরা সম্পূর্ণ এক সাথে অবতীর্ণ হয় নাই। অনেক সূরাই অংশ হিসেবে নাজেল হয়েছে। সুতারাং সম্ভবতঃ সূরার কোন কোন আয়াত সম্পূর্ণ সূরার নাজেল হওয়ার তারিখ থেকে আলাদা হতে পারে।
৪৬৯৮। " অন্যের দ্বারা শিক্ষাপ্রাপ্ত " - দেখুন অনুরূপ অভিযোগ [ ১৬ : ১০৩ ] আয়াত ও টিকা ২১৪৩। "সে তো এক পাগল " - দেখুন অনুরূপ অভিযোগ [ ১৫ : ৬ ] ও টিকা ১৯৪০।
সূরা দুখান
সূরা দুখান বা ধূয়া অথবা কুয়াশা - ৪৪
৫৯ আয়াত , ৩ রুকু , মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : হা-মিম্ সুরাগুলিতে সময়কাল ও মূল বিষয়বস্তুর জন্য দেখুন ৪০নং সূরার ভূমিকা। শ্রেণীর ক্রমপঞ্জিতে এই সূরাটির স্থান পঞ্চম।
এই সূরার বিষয় বস্তুর বৈশিষ্ট্য দুখান শব্দটি ১০নং আয়াতে দ্রষ্টব্য। এর অর্থ ধোঁয়া বা কুয়াশা। এই ধোঁয়া বা কুয়াশা দুভির্ক্ষের পূর্বাভাষ হতে পারে যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে আয়াতের টিকাতে।
সার সংক্ষেপ : প্রত্যাদেশ ব্যাখ্যা করে কিভাবে পার্থিব অহংকার ও উদ্ধতপনা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়। আধ্যাত্মিক সত্যই স্থায়ীত্ব লাভ করে [ ৪৪ : ১ - ২৯ ]।
মানুষ আল্লাহ্র নেয়ামত লাভ করে আল্লাহ্র তরফ থেকে আমানত হিসেবে - কিন্তু মানুষ সেই আমানতের মর্যদা রাখতে সক্ষম হয় না - যেমনটি ঘটেছিলো ইসরাঈলীদের সম্পর্কে। কোরেশরা কি ভালো ও মন্দের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে ? [ ৪৪ : ৩০- ৫৯]।
সূরা দুখান বা ধূয়া (অথবা কুয়াশা )- ৪৪
৫৯ আয়াত , ৩ রুকু , মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
০১। হা - মীম
০২। সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী কিতাবের শপথ ; - ৪৬৮৯
০২। সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী কিতাবের শপথ ; - ৪৬৮৯
৪৬৮৯। পূর্বের সূরাতে [ ৪৩:৩ ] গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে কোরাণ সম্পর্কে যেনো প্রত্যেকে বুঝতে পারে। এই সূরাতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, কোরাণ শরীফ আল্লাহ্র তরফ থেকে করুণা ও দয়া যার সাহায্যে মানুষকে পাপের বিরুদ্ধে সর্তক করা হয়েছে।
০৩। নিশ্চয়ই আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মঙ্গলময় রাত্রিতে ৪৬৯০। নিশ্চয় আমি [সবসময়ে মন্দের বিরুদ্ধে ]সাবধান করতে চাই।
৪৬৯০। "মঙ্গলময় রাত্রি " - এই রাত্রি সাধারণতঃ মনে করা হয় রমজান মাসের ২৩ শে বা ২৫ শে বা ২৭ এর রাত্রি। এই রাত্রিকে বলা হয়েছে বরকতময় রাত্রি। সাধারণতঃ ২৭শে রমজানকে ধরা হয় এই বরকতময় রাত্রি। এই রাত্রিতে কুর-আনের বাণী ধরিত্রীতে প্রথম অবতীর্ণ হয়, যা মানুষের জন্য রহমত স্বরূপ , ঠিক বৃষ্টি যেরূপ রৌদ্রদগ্ধ শুষ্ক জমিকে সিক্ত করে সেরূপ। এই রাত্রিকে আয়াত [ ২ : ১৮৫]ও আয়াতে [ ৯৭ : ১ ] বলা হয়েছে মহিমান্বিত রাত্রি। এই রাত্রিতে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয়। পবিত্র এই রজনীকে শবে-কদরের রাত্রি বলে, যে রাতে কোরাণ পৃথিবীতে নাজেল হয়।
০৪। এই [ রাত্রিতে ] প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় মীমাংসা করার সিদ্ধান্ত করা হয় , ৪৬৯১-
৪৬৯১। এই সেই রাত্রি, যে রাত্রিতে ঐশি জ্ঞান ধরার বুকে আগমন করে এবং প্রত্যাদেশের মাধ্যমে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করা হয় যা আধ্যাত্মিক মুক্তির সন্ধান দান করে। মানুষের জন্য যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
০৫। আমার উপস্থিতিতে আমার আদেশ অনুসারে। নিশ্চয়ই আমি [ সর্বদা প্রত্যাদেশ ] প্রেরণ করে থাকি ,
০৬। তোমার প্রভুর অনুগ্রহ স্বরূপ। নিশ্চয়ই তিনি [ সব কিছু ] শোনেন ও জানেন , ৪৬৯২ -
০৬। তোমার প্রভুর অনুগ্রহ স্বরূপ। নিশ্চয়ই তিনি [ সব কিছু ] শোনেন ও জানেন , ৪৬৯২ -
৪৬৯২। মহান আল্লাহ্ বন্ধুহীনের বন্ধু, অসহায়ের সাহায্যকারী। তিনি সকলের আন্তরিক প্রার্থনা শোনেন। তাঁর জ্ঞান সকল কিছুকে পরিবৃত করে থাকে। আমাদের দূরদৃষ্টির অভাবে আমরা অনেক সময়েই আমাদের প্রকৃত মঙ্গলকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই না। আমাদের জন্য যা কিছু মঙ্গলজনক মহান আল্লাহ্ তা আমাদের প্রদান করেন তাঁর জ্ঞান , প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা অনুযায়ী। আমরা যে ভাবে চাই সে ভাবে তা নাও হতে পারে। কারণ আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত - অপরপক্ষে আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নিভুর্ল ও সম্পূর্ণ।
০৭। যিনি আসমান , যমিন এবং এই উভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সমস্তের প্রভু, অবশ্য যদি তোমরা স্থির বিশ্বাসী হও ৪৬৯৩।
৪৬৯৩। দেখুন আয়াত [ ২ : ৪ ]। আকাশমন্ডলী , পৃথিবী ও উহাদিগের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালক আল্লাহ্। এই বিশাল বিশ্ব ভূবনের একজনই স্রষ্টা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। এ কথা অনুভবের মাধ্যমে হৃদয় কন্দরে উপলব্ধি করা অসাধারণ এক বিষ্ময়কর ব্যাপার। যে আত্মায় আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসে আছে প্রচন্ডতা, দৃঢ়তায় আছে অতল সমুদ্রের গভীরতা, একমাত্র সেই আত্মার মাঝেই আল্লাহ্র এই বিশালত্বের ধারণা সামান্য হলেও ধারণ করা সম্ভব। বিশ্বাস যখন নিশ্চিত বিশ্বাসে পরিণত হয় শুধু তখনই স্রষ্টাকে অনুভবের মাধ্যমে আত্মার মাঝে উপলব্ধি করা সম্ভব।
০৮। তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নাই। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান । তিনি তোমাদের প্রভু এবং প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও।
০৯। তবুও তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে [ ধর্মকে নিয়ে ] খেলা করে ৪৬৯৪।
০৯। তবুও তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে [ ধর্মকে নিয়ে ] খেলা করে ৪৬৯৪।
৪৬৯৪। এই আয়াতে কোরাইশদের কথা বলা হয়েছে। হযরতের [ সা ] নবুয়ত পাওয়ার প্রথম দিকে কোরাইশরা হযরতের প্রচারিত ধর্ম সম্বন্ধে হাসি ঠাট্টা করতো; তারা ব্যঙ্গ বিদ্রূপের মাধ্যমে তার গুরুত্ব লাঘব করতে চাইত। প্রথমেই তারা হযরতের [ সা ] উপরে অত্যাচার নির্যাতন আরম্ভ করে নাই। প্রথমে কোরাইশরা হযরতের [ সা ] প্রচারিত ধর্ম সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করে ও হাসি খেলার বস্তুতে পরিণত করতে চেষ্টা করে। অপরপক্ষে রাসুল [ সা ] ছিলেন একান্ত আন্তরিক ভাবে মনপ্রাণ দিয়ে সচেষ্ট। তিনি তাঁর দেশবাসীকে ভালোবাসেন এবং তিনি তাদের পাপের পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বদা আপ্রাণ চেষ্টা করতেন।
মন্তব্য : কোরেশদের এই মানসিকতা সর্ব যুগে সত্য বিরোধীদের প্রতি প্রযোজ্য। এই মানসিকতা পূর্বেও ছিলো, বর্তমানেও আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে।
১০। অতএব তুমি সেদিনের অপেক্ষা কর ৪৬৯৫ , যেদিন আকাশ ধূঁয়াতে [ বা কুয়াশায় ] আচ্ছন্ন হয়ে যাবে যা সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে ৪৬৯৬
১১। যা মানব সম্প্রদায়কে আবৃত করে ফেলবে। এটা হবে এক ভয়াবহ শাস্তি।
১২। [ তারা বলবে : ] " হে আমাদের প্রভু ! আমাদের উপর থেকে শাস্তি দূর করে দাও , আমরা অবশ্যই ঈমান এনেছি।"
১১। যা মানব সম্প্রদায়কে আবৃত করে ফেলবে। এটা হবে এক ভয়াবহ শাস্তি।
১২। [ তারা বলবে : ] " হে আমাদের প্রভু ! আমাদের উপর থেকে শাস্তি দূর করে দাও , আমরা অবশ্যই ঈমান এনেছি।"
৪৬৯৫। এখানে যে দিনের উল্লেখ করা হয়েছে সেটা কোন দিন ? অবশ্যই সে দিন হবে বিরাট বিপর্যয়ের দিন। ভাষার বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, সে বিপর্যয়ের দিন হবে ভবিষ্যতে। এই সূরার ১১নং আয়াতের 'yagsha' শব্দটি সূরা [ ৮৮ : ১ ] আয়াতের 'gashiya' শব্দটির সাথে তুলনাযোগ্য। তবে শব্দটি শেষ বিচারের দিনের জন্য প্রযোজ্য হয়েছে। কিন্তু এই সূরার ১৫ নং আয়াতটিতে বলা হয়েছে , " শাস্তি কিছু কালের জন্য রহিত করিতেছি।" সুতারাং এই বিপর্যয়ের দিন শেষ বিচারের দিন হবে না। এটি হবে পৃথিবীর জীবনের বিপর্যয় যা ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে। সম্ভবতঃ পরবর্তী মক্কাতে যে দুর্ভিক্ষ হবে তারই পূর্বাভাষ এখানে দেয়া হয়েছে।
৪৬৯৬। তফসীরকারগণ মনে করেন 'ধোঁয়া' বা কুয়াশা যাই বলা হোক না কেন তার দ্বারা মক্কার দুর্ভিক্ষের প্রতি ইঙ্গিতকরা হয়েছে। দিনের পরে দিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে করতে মানুষ এমন অবস্থায় পৌঁছায় যখন তারা চোখে ঘোর দেখে অর্থাৎ সব কিছু ঝাপসা বলে পরিগণিত হয়। মনে হবে ধোঁয়া সব কিছুকে আচ্ছাদিত করে ফেলেছে। ইবনে কাফীর মক্কার দুইটি দুর্ভিক্ষের উল্লেখ করেছেন। একটা ছিলো নবুয়ত পাওয়ার ৮ম বর্ষে বা হিজরতের চার বছর পূর্বে , অন্যটি ছিলো হিজরতের ৮ম বর্ষে। যে কোনটি অথবা দুটোই সম্ভবতঃ প্রায় সাত বছরের মত স্থায়ী হয়। এটাও সম্ভব যে দুটো দুর্ভিক্ষই সামান্য ব্যবধানে ধারাবাহিক ভাবে চলে এসেছে বছরের পর বছর। যার প্রচন্ডতা এক এক বর্ষে এক এক রকম ভাবে অনুভূত হয়েছে। বুখারী শরীফে শুধুমাত্র হিজরতের পরবর্তী দুর্ভিক্ষের উল্লেখ আছে। সে দুর্ভিক্ষের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে সে দুর্ভিক্ষ এতটাই তীব্র ছিলো যে, মানুষ মৃত প্রাণীর গলিত শব ও হাড় ভক্ষণ করতো। আবু সুফিয়ান অষ্টম হিজরীতে রাসুলের নিকট গমন করেন আল্লাহ্র দরবারে রাসুলকে [ সা ] সুপারিশ করার জন্য; আল্লাহ্ যেনো তাদের দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি দেন। যেহেতু, মোশরেক আরবরা বিশ্বাস করতো যে, দুর্ভিক্ষ রাসুলের [ সা ] অভিশাপের ফল। সূরা [ ২৩ : ৭৫ ] আয়াতে এবং টিকাতে ২৯২১ দুর্ভিক্ষের উল্লেখ আছে, যদিও সে সূরাটি বর্তমান সূরার পরে মক্কাতে অবতীর্ণ হয়। সকল সূরা সম্পূর্ণ এক সাথে অবতীর্ণ হয় নাই। অনেক সূরাই অংশ হিসেবে নাজেল হয়েছে। সুতারাং সম্ভবতঃ সূরার কোন কোন আয়াত সম্পূর্ণ সূরার নাজেল হওয়ার তারিখ থেকে আলাদা হতে পারে।
১৩। তাদের জন্য উপদেশ কি ভাবে [কার্যকর ] হবে, যখন [ ইতিমধ্যে ] তাদের নিকট সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদানকারী একজন রসুল এসেছে,- ৪৬৯৭
৪৬৯৭। কোরাইশদের সম্মুখে রাসুলের [ সা ] জীবন ছিলো পবিত্রতার প্রতীক যে কারণে তারা তাঁকে আল্-আমীন [ বিশ্বাসী ]উপাধিতে ভূষিত করেছিলো। রাসুল তাদের মাঝে তাদের ভাষাতেই আল্লাহ্র বাণী প্রচার করেন। তাঁর বক্তব্য ছিলো স্বচ্ছ ও মাধুর্য্যপূর্ণ ও যুক্তিপূর্ণ। তবুও সে বাণীর আবেদন কোরেশদের মনোজগতে কোনও আবেদন সৃষ্টি করতে পারে নাই। তাঁরা রাসুলকে প্রত্যাখান করে এই বলে যে তাঁর প্রচারিত বাণী আল্লাহ্র বাণী নয়, তিনি কারও শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন বা তিনি তো একজন উম্মাদ ব্যক্তি যার বক্তব্য সামঞ্জস্যবিহীন। এরূপ কদর্য মানসিকতাপূর্ণ ব্যক্তির অন্তরে কিভাবে আল্লাহ্র বাণী আসন লাভ করতে পারে ? কিভাবে তারা আল্লাহ্র নূরে বিধৌত হতে পারবে ?
১৪। তথাপি তারা [ নবীর ] দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বললো , " [ অন্যের দ্বারা] শিক্ষাপ্রাপ্ত এক পাগল।" ৪৬৯৮
৪৬৯৮। " অন্যের দ্বারা শিক্ষাপ্রাপ্ত " - দেখুন অনুরূপ অভিযোগ [ ১৬ : ১০৩ ] আয়াত ও টিকা ২১৪৩। "সে তো এক পাগল " - দেখুন অনুরূপ অভিযোগ [ ১৫ : ৬ ] ও টিকা ১৯৪০।
১৫। আমি স্বল্পকালের জন্য শাস্তি প্রত্যাহার করে নেবো , [ কিন্তু ] প্রকৃতপক্ষে তোমরা [তোমাদের পথে ] ফিরে যাবে ৪৬৯৯।
৪৬৯৯। দুর্ভিক্ষ যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন আবু সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ্কে [ সা ] দোয়া করতে অনুরোধ করায় তিনি দু'আ করেছিলেন। ফলে, দুর্ভিক্ষের অবসান হয়। মানুষ যত বিদ্রোহী-ই হোক না কেন আল্লাহ্ তাদের বারে বারে সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ দান করেন। তারা যাতে সঠিক পথে ফিরে আসে এ কারণে আল্লাহ্ তাদের ব্যক্তিগত বা আর্থিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে সঠিক রাস্তায় ফিরাতে চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন যেনো বিপদ বিপর্যয় তাদের আল্লাহ্র প্রতি অনুগত করে, তারা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করে। এর ফলে অনেকেই ফিরে আসে, আবার অনেকেই আসে না। যারা আসে না তাদের সুযোগ দেয়ার জন্য আল্লাহ্ তাদের উপর থেকে বিপদ বিপর্যয়ের কালো মেঘ অপসারিত করেন। এর ফলে কিছু সংখ্যক সঠিক পথে ফিরে আসে। কিছু সংখ্যক এর পরও ফিরে আসে না। এদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তবুও আল্লাহ্র করুণা ও দয়া বারে বারে তাদের সুপথে আনতে চেষ্টা করে এবং সে চেষ্টা রোজ কেয়ামত পর্যন্ত পাপীদের সুযোগ দান করবে। রোজ কেয়ামতের পরে তারা আর কোন সুযোগ পাবে না সুপথে ফিরে আসার।
৪৭০০। এই আয়াতে ফেরাউন ও মিশরবাসীদের পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসার কাহিনীর বর্ণনা নয় ফেরাউন ও তার অনুসারীদের গর্ব ও অহংকার এবং তার দরুণ পতনের উল্লেখের মাধ্যমে তাদের বিচারের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। ঠিক সেই ভাবে [ ৪৪ : ৩০ -৩৩ ] আয়াতে ইসরাঈলীদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহের উল্লেখ করা হয়েছে তাদের গর্ব, অহংকার , অবিশ্বাস ও পতনের বিপরীতে। এবং আয়াত [ ৪৪ : ৩৭ ] উল্লেখ করা হয়েছে ইয়েমেনের প্রাচীন শক্তিশালী 'হিমাইর' রাজবংশের যাদেরও পতনও ঘটেছিলো একই ভাবে।
৪৭০১। 'সম্মানিত রাসুল' এই সম্ভাষণ হযরত মুসার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানে হযরত মুসার সত্যসহ অবতীর্ণ হওয়ার বিপরীতে ফেরাউনের মিথ্যা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীকে তুলনা করা হয়েছে। দেখুন আয়াত [ ৪৩ :৫২] যেখানে ফেরাউন নিজস্ব মিথ্যা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীতে মুসাকে সম্বোধন করেছিলো, " আমি তো শ্রেষ্ঠ এই ব্যক্তি থেকে , যে হীন এবং স্পষ্ট ভাবে কথা বলতেও অক্ষম।"
উপদেশ : যুগে যুগে যারা অহংকারী ও মিথ্যাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার বলে পরিগণিত করে থাকে, তাদের দৃষ্টিতে সত্যের প্রকৃতরূপ কখনও ধরা দেবে না। পৃথিবীর সকল যুগের সকল মানুষের জন্য এই সত্য প্রযোজ্য।
৪৭০২। ইসরাঈলীদের উপরে হযরত মুসার কাহিনী ও আইনসঙ্গত অধিকার সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে নিম্নলিখিত আয়াত সমূহে [ ৭ : ১০৪ -১০৮, ১২০-১২৬, ১৩০ - ১৩৭ ]। এই আয়াতে হযরত মুসার বক্তব্য থেকে পরিষ্ফুট হয় যে কত পরিপূর্ণভাবে তিনি তাঁর প্রতি অর্পিত দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যকে তিনি উপস্থাপন করেছেন এভাবে, " আল্লাহ্র বান্দাদিগের " শব্দটি দ্বারা। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন , প্রকৃত আল্লাহ্ প্রেমিকদের এরা ইসরাঈলীও হতে পারে আবার মিশরীয় হতে পারে। কারণ তাঁর প্রতি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্দ্দিষ্ট দায়িত্ব ইসরাঈলী ও মিশরবাসী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য ছিলো। ফেরাউনের ঔদ্ধত্যকে অস্বীকার করে মুসা খোদা প্রেমিকদের তাঁর হস্তে অর্পন করার দাবী জানান।
৪৭০৩। 'Amin' বা বিশ্বস্ত - এই উপাধিটি আল্লাহ্র রসুলদের জন্য প্রযোজ্য দেখুন আয়াত [ ২৬ : ১০৭ ]। আমাদের মহান রাসুল [ সা ] ঐতিহাসিক এই উপাধি লাভ করেন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট থেকে। এখানে হযরত মুসার কাহিনীর স্মৃতিচারণ করা হয়েছে হযরত রাসুলে করীমের কর্ম জীবনকে কোরেশদের উদ্ধত ও অন্ধ আক্রোশের বিপরীতে তুলে ধরার জন্য।
৪৭০৪। "আঘাত" - এই শব্দটি প্রতীক অর্থে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ যে কোনও রূপ শারীরিক আঘাত বা মানহানিকর কার্য।
৪৭০৫। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, মুসাকে হত্যা করার বা মানহানির পরিকল্পনা করে কোনও লাভ নাই। কারণ হযরত মুসার নিরাপত্তার দায়িত্ব আল্লাহ্ গ্রহণ করেছেন। হযরত মুসা সে কারণেই বলেছেন যে, " আমি আমার প্রতিপালক ও তোমাদিগের প্রতিপালকের নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।" লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে তিনি বলেছেন সকলেরই প্রতিপালক একজনই। কিন্তু মানুষ বিভ্রান্তির আশ্রয় অবলম্বন করে স্রষ্টার একত্বে অংশীদার কল্পনা করে। আল্লাহ্ শুধু মুসারই নয়, মিশরবাসীদেরও সেই একই আল্লাহ্। সুতারাং এ ব্যাপারে তাদেরও দায়িত্ব বর্তমান।
উপদেশ : হযরত মুসার আল্লাহ্র উপরে যে নির্ভরশীলতা তুলে ধরা হয়েছে, মোমেন ব্যক্তি সেই , যে বিপদ বিপর্যয়ে অনুরূপ নির্ভরশীলতা অবলম্বন করতে পারেন।
৪৭০৬। হযরত মুসা অবিশ্বাসীদের বলেছিলেন যে, " যদি তোমরা বিশ্বাস করতে না পার , সেক্ষেত্রে অন্ততঃপক্ষে তোমরা আমার নিকট থেকে দূরে সরে যাও। আমাকে নির্যাতন করে এবং আল্লাহ্র প্রেরিত সত্যকে অবদমিত করে তোমাদের পাপকে আরও বৃদ্ধি করো না। তোমরা আমার থেকে দূরে থাক।"
৪৭০৭। এমনকি , ফেরাউনের অনুসারীরা হযরত মুসার সকল কাজেই বাঁধার সৃষ্টি করতো। সুতারাং তিনি আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করেন। রাসুল হিসেবে তিনি জানতেন যে, তাঁকে আল্লাহ্ মানুষকে বিচার করার ক্ষমতা দান করেন নাই। বিচারক একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ্। তিনিই একমাত্র জানেন কাকে তিনি ধ্বংস করবেন বা করবেন না। সুতারাং প্রার্থনার মাধ্যমে মুসা কারও ধ্বংস কামনা করেন নাই। তিনি আল্লাহ্র দরবারে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন মাত্র। তিনি তাঁর কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন , কিন্তু অবিশ্বাসীদের আত্মা পাপে আসক্তির ফলে কঠিন রূপ ধারণ করেছে। সুতারাং অবিশ্বাসীরা আল্লাহ্- বিশ্বাসীদের নির্যাতন ও অবদমিত করতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলো। হযরত মুসার এই প্রার্থনার উত্তরে অগ্রসর হওয়ার হুকুম আসে। তাদের রাতের আঁধারে অগ্রসর হওয়ার হুকুম দান করা হয়। কারণ শত্রুরা অবশ্যই পচাদ্ধাবন করবে। হুকুম হয় সমস্ত বিশ্বাসীদের সহযোগে রাতের আঁধারে অগ্রসর হওয়ার। অনুমান করা হয় অগ্রসরকারী বিশালদলে ইসরাঈলীরা ব্যতীতও কিছু মিশরবাসী ছিলো। আয়াত [ ৭ : ২২ ] দেখুন যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে মিশরবাসীদের কথা যারা অবিশ্বাসী থেকে বিশ্বাসীতে পরিণত হয়। অবশ্য এদের অধিকাংশকেই ফেরাউন হত্যা করে।
৪৭০৮। বণী ইসরাঈলীদের সহ হযরত মুসা যখন সমুদ্র অতিক্রম করছিলেন তখন তাঁদের জন্য সমুদ্রকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয় [ ২ : ৫০ ]। তাদের সমুদ্র অতিক্রম করার পর মুসাকে বলা হয়েছিলো যে সমুদ্রকে সেই দ্বিধা বিভক্ত অবস্থায় থাকতে দাও। ফেরাউন ও তার অনুসারীদের প্রলোভিত করার জন্য। যাতে ফেরাউন ও তার বাহিনী উহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে সমুদ্র পূর্বাস্থাতে ফিরে আসে ও ফেরাউন তার বাহিনীসহ ধ্বংস হয়ে যায়।
৪৭০৯। সুন্দর বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে পৃথিবীতে আনন্দদায়ক ও উপভোগের সামগ্রী সমূহের নিখুঁত চিত্র। অত্যাচারী , অবিশ্বাসীরা এ সবের একচেটিয়া অধিকার লাভের জন্য জনসাধারণের উপরে নির্যাতন, নিপীড়ন ও অবিচার অত্যাচার করে থাকে। ফেরাউনের উদাহরণের মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, ফেরাউন তার একচ্ছত্র অধিকার ত্যাগ করে সলিল সমাধি লাভ করেছে। এভাবেই অত্যাচারীরা তাদের একচেটিয়া অধিকার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এবং আল্লাহ্ তাদের ভোগের সামগ্রীসমূহ অন্য লোককে দান করেন।
৪৭১০। ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ্ বলে দাবী করেছিলো এবং অন্যান্যরা তাকে অনুসরণ করেছিলো। সে ছিলো অবিশ্বাসী , অত্যাচারী ও অন্যায়কারী। তার মৃত্যুর বর্ণনাতে বলা হয়েছে তার মৃত্যু ঘটে অশ্রুহীন, অসম্মান ও কুকীর্তির মাধ্যমে,"কেহই তাদের জন্য অশ্রুপাত কর নাই"। কোরাণের বাণী সর্বকালের সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।ফেরাউনের মৃত্যুর বর্ণনার মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন অত্যাচারী অন্যায়কারীর মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার চিত্র আঁকা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে কেউই তাদের জন্য অশ্রুপাত করবে না বা তাদের কুকীর্তির জন্য সম্মান প্রদর্শন করবে না।
১৬। যেদিন আমি তোমাদের ভয়ঙ্কর ভাবে আক্রমণ করবো, নিশ্চয় [সেদিন] আমি প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়বো।
১৭। তাদের পূর্বে আমি তো ফেরাউনের সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছিলাম ৪৭০০। এবং তাদের নিকটেও এসেছিলো এক সম্মানিত রাসুল ৪৭০১।
১৭। তাদের পূর্বে আমি তো ফেরাউনের সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছিলাম ৪৭০০। এবং তাদের নিকটেও এসেছিলো এক সম্মানিত রাসুল ৪৭০১।
৪৭০০। এই আয়াতে ফেরাউন ও মিশরবাসীদের পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুসার কাহিনীর বর্ণনা নয় ফেরাউন ও তার অনুসারীদের গর্ব ও অহংকার এবং তার দরুণ পতনের উল্লেখের মাধ্যমে তাদের বিচারের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। ঠিক সেই ভাবে [ ৪৪ : ৩০ -৩৩ ] আয়াতে ইসরাঈলীদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহের উল্লেখ করা হয়েছে তাদের গর্ব, অহংকার , অবিশ্বাস ও পতনের বিপরীতে। এবং আয়াত [ ৪৪ : ৩৭ ] উল্লেখ করা হয়েছে ইয়েমেনের প্রাচীন শক্তিশালী 'হিমাইর' রাজবংশের যাদেরও পতনও ঘটেছিলো একই ভাবে।
৪৭০১। 'সম্মানিত রাসুল' এই সম্ভাষণ হযরত মুসার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানে হযরত মুসার সত্যসহ অবতীর্ণ হওয়ার বিপরীতে ফেরাউনের মিথ্যা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীকে তুলনা করা হয়েছে। দেখুন আয়াত [ ৪৩ :৫২] যেখানে ফেরাউন নিজস্ব মিথ্যা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীতে মুসাকে সম্বোধন করেছিলো, " আমি তো শ্রেষ্ঠ এই ব্যক্তি থেকে , যে হীন এবং স্পষ্ট ভাবে কথা বলতেও অক্ষম।"
উপদেশ : যুগে যুগে যারা অহংকারী ও মিথ্যাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার বলে পরিগণিত করে থাকে, তাদের দৃষ্টিতে সত্যের প্রকৃতরূপ কখনও ধরা দেবে না। পৃথিবীর সকল যুগের সকল মানুষের জন্য এই সত্য প্রযোজ্য।
১৮। সে বলেছিলো , " আল্লাহ্র বান্দাদের আমার নিকট প্রত্যার্পন কর ৪৭০২। আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসুল ; ৪৭০৩
৪৭০২। ইসরাঈলীদের উপরে হযরত মুসার কাহিনী ও আইনসঙ্গত অধিকার সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে নিম্নলিখিত আয়াত সমূহে [ ৭ : ১০৪ -১০৮, ১২০-১২৬, ১৩০ - ১৩৭ ]। এই আয়াতে হযরত মুসার বক্তব্য থেকে পরিষ্ফুট হয় যে কত পরিপূর্ণভাবে তিনি তাঁর প্রতি অর্পিত দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যকে তিনি উপস্থাপন করেছেন এভাবে, " আল্লাহ্র বান্দাদিগের " শব্দটি দ্বারা। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন , প্রকৃত আল্লাহ্ প্রেমিকদের এরা ইসরাঈলীও হতে পারে আবার মিশরীয় হতে পারে। কারণ তাঁর প্রতি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্দ্দিষ্ট দায়িত্ব ইসরাঈলী ও মিশরবাসী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য ছিলো। ফেরাউনের ঔদ্ধত্যকে অস্বীকার করে মুসা খোদা প্রেমিকদের তাঁর হস্তে অর্পন করার দাবী জানান।
৪৭০৩। 'Amin' বা বিশ্বস্ত - এই উপাধিটি আল্লাহ্র রসুলদের জন্য প্রযোজ্য দেখুন আয়াত [ ২৬ : ১০৭ ]। আমাদের মহান রাসুল [ সা ] ঐতিহাসিক এই উপাধি লাভ করেন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট থেকে। এখানে হযরত মুসার কাহিনীর স্মৃতিচারণ করা হয়েছে হযরত রাসুলে করীমের কর্ম জীবনকে কোরেশদের উদ্ধত ও অন্ধ আক্রোশের বিপরীতে তুলে ধরার জন্য।
১৯। " এবং তোমরা আল্লাহ্র বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করো না ; আমি তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট দলিল সহই এসেছি।
২০। " তোমরা যাতে আমাকে আঘাত করতে না পার সেজন্য আমি আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভুর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি ৪৭০৪ ,৪৭০৫।
২০। " তোমরা যাতে আমাকে আঘাত করতে না পার সেজন্য আমি আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভুর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি ৪৭০৪ ,৪৭০৫।
৪৭০৪। "আঘাত" - এই শব্দটি প্রতীক অর্থে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ যে কোনও রূপ শারীরিক আঘাত বা মানহানিকর কার্য।
৪৭০৫। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে, মুসাকে হত্যা করার বা মানহানির পরিকল্পনা করে কোনও লাভ নাই। কারণ হযরত মুসার নিরাপত্তার দায়িত্ব আল্লাহ্ গ্রহণ করেছেন। হযরত মুসা সে কারণেই বলেছেন যে, " আমি আমার প্রতিপালক ও তোমাদিগের প্রতিপালকের নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।" লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে তিনি বলেছেন সকলেরই প্রতিপালক একজনই। কিন্তু মানুষ বিভ্রান্তির আশ্রয় অবলম্বন করে স্রষ্টার একত্বে অংশীদার কল্পনা করে। আল্লাহ্ শুধু মুসারই নয়, মিশরবাসীদেরও সেই একই আল্লাহ্। সুতারাং এ ব্যাপারে তাদেরও দায়িত্ব বর্তমান।
উপদেশ : হযরত মুসার আল্লাহ্র উপরে যে নির্ভরশীলতা তুলে ধরা হয়েছে, মোমেন ব্যক্তি সেই , যে বিপদ বিপর্যয়ে অনুরূপ নির্ভরশীলতা অবলম্বন করতে পারেন।
২১। " যদি তোমরা আমাকে বিশ্বাস না কর ৪৭০৬ , তবে তোমরা আমার থেকে দূরে থাক।"
৪৭০৬। হযরত মুসা অবিশ্বাসীদের বলেছিলেন যে, " যদি তোমরা বিশ্বাস করতে না পার , সেক্ষেত্রে অন্ততঃপক্ষে তোমরা আমার নিকট থেকে দূরে সরে যাও। আমাকে নির্যাতন করে এবং আল্লাহ্র প্রেরিত সত্যকে অবদমিত করে তোমাদের পাপকে আরও বৃদ্ধি করো না। তোমরা আমার থেকে দূরে থাক।"
২২। [ কিন্তু তারা ছিলো আক্রমণে উদ্যত ] ৪৭০৭। তখন সে তার প্রভুর নিকট আবদেন করলো , " এরা বাস্তবিকই মহাপাপী লোক।"
৪৭০৭। এমনকি , ফেরাউনের অনুসারীরা হযরত মুসার সকল কাজেই বাঁধার সৃষ্টি করতো। সুতারাং তিনি আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করেন। রাসুল হিসেবে তিনি জানতেন যে, তাঁকে আল্লাহ্ মানুষকে বিচার করার ক্ষমতা দান করেন নাই। বিচারক একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ্। তিনিই একমাত্র জানেন কাকে তিনি ধ্বংস করবেন বা করবেন না। সুতারাং প্রার্থনার মাধ্যমে মুসা কারও ধ্বংস কামনা করেন নাই। তিনি আল্লাহ্র দরবারে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন মাত্র। তিনি তাঁর কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন , কিন্তু অবিশ্বাসীদের আত্মা পাপে আসক্তির ফলে কঠিন রূপ ধারণ করেছে। সুতারাং অবিশ্বাসীরা আল্লাহ্- বিশ্বাসীদের নির্যাতন ও অবদমিত করতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলো। হযরত মুসার এই প্রার্থনার উত্তরে অগ্রসর হওয়ার হুকুম আসে। তাদের রাতের আঁধারে অগ্রসর হওয়ার হুকুম দান করা হয়। কারণ শত্রুরা অবশ্যই পচাদ্ধাবন করবে। হুকুম হয় সমস্ত বিশ্বাসীদের সহযোগে রাতের আঁধারে অগ্রসর হওয়ার। অনুমান করা হয় অগ্রসরকারী বিশালদলে ইসরাঈলীরা ব্যতীতও কিছু মিশরবাসী ছিলো। আয়াত [ ৭ : ২২ ] দেখুন যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে মিশরবাসীদের কথা যারা অবিশ্বাসী থেকে বিশ্বাসীতে পরিণত হয়। অবশ্য এদের অধিকাংশকেই ফেরাউন হত্যা করে।
২৩। [ উত্তর এলো ; ] রাতে তুমি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে পড় , তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।
২৪।সমুদ্রকে [ দ্বিধাবিভক্ত ] অবস্থায় স্থির থাকতে দাও ৪৭০৮। তারা এমন এক বাহিনী যারা নিমজ্জিত হবেই।
২৪।সমুদ্রকে [ দ্বিধাবিভক্ত ] অবস্থায় স্থির থাকতে দাও ৪৭০৮। তারা এমন এক বাহিনী যারা নিমজ্জিত হবেই।
৪৭০৮। বণী ইসরাঈলীদের সহ হযরত মুসা যখন সমুদ্র অতিক্রম করছিলেন তখন তাঁদের জন্য সমুদ্রকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয় [ ২ : ৫০ ]। তাদের সমুদ্র অতিক্রম করার পর মুসাকে বলা হয়েছিলো যে সমুদ্রকে সেই দ্বিধা বিভক্ত অবস্থায় থাকতে দাও। ফেরাউন ও তার অনুসারীদের প্রলোভিত করার জন্য। যাতে ফেরাউন ও তার বাহিনী উহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে সমুদ্র পূর্বাস্থাতে ফিরে আসে ও ফেরাউন তার বাহিনীসহ ধ্বংস হয়ে যায়।
২৫। তারা পিছনে ফেলে এসেছিলো কত উদ্যান, কত প্রস্রবণ , ৪৭০৯
৪৭০৯। সুন্দর বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে পৃথিবীতে আনন্দদায়ক ও উপভোগের সামগ্রী সমূহের নিখুঁত চিত্র। অত্যাচারী , অবিশ্বাসীরা এ সবের একচেটিয়া অধিকার লাভের জন্য জনসাধারণের উপরে নির্যাতন, নিপীড়ন ও অবিচার অত্যাচার করে থাকে। ফেরাউনের উদাহরণের মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, ফেরাউন তার একচ্ছত্র অধিকার ত্যাগ করে সলিল সমাধি লাভ করেছে। এভাবেই অত্যাচারীরা তাদের একচেটিয়া অধিকার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এবং আল্লাহ্ তাদের ভোগের সামগ্রীসমূহ অন্য লোককে দান করেন।
২৬। এবং শষ্যক্ষেত্র ও সুরম্য অট্টালিকা।
২৭। এবং সম্পদ [এবং জীবনের ভোগের সামগ্রী ] , যাতে তারা আনন্দ পেতো !
২৮। এটাই ছিলো [ তাদের শেষ পরিণতি ] ! এবং আমি অন্য সম্প্রদায়কে[ এসব জিনিষের ] উত্তরাধিকারী করলাম।
২৯। না আকাশ না পৃথিবী ৪৭১০ কেহই তাদের জন্য অশ্রুপাত করে নাই। তাদের [পুণরায় ] কোন অবকাশ দেয়া হয় নাই।
২৭। এবং সম্পদ [এবং জীবনের ভোগের সামগ্রী ] , যাতে তারা আনন্দ পেতো !
২৮। এটাই ছিলো [ তাদের শেষ পরিণতি ] ! এবং আমি অন্য সম্প্রদায়কে[ এসব জিনিষের ] উত্তরাধিকারী করলাম।
২৯। না আকাশ না পৃথিবী ৪৭১০ কেহই তাদের জন্য অশ্রুপাত করে নাই। তাদের [পুণরায় ] কোন অবকাশ দেয়া হয় নাই।
৪৭১০। ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ্ বলে দাবী করেছিলো এবং অন্যান্যরা তাকে অনুসরণ করেছিলো। সে ছিলো অবিশ্বাসী , অত্যাচারী ও অন্যায়কারী। তার মৃত্যুর বর্ণনাতে বলা হয়েছে তার মৃত্যু ঘটে অশ্রুহীন, অসম্মান ও কুকীর্তির মাধ্যমে,"কেহই তাদের জন্য অশ্রুপাত কর নাই"। কোরাণের বাণী সর্বকালের সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।ফেরাউনের মৃত্যুর বর্ণনার মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন অত্যাচারী অন্যায়কারীর মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার চিত্র আঁকা হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে কেউই তাদের জন্য অশ্রুপাত করবে না বা তাদের কুকীর্তির জন্য সম্মান প্রদর্শন করবে না।
রুকু - ২
৪৭১১। ইসরাঈলীরা ফেরাউনের সময়ে মিশরে দাসত্বের নিগড়ে বাঁধা ছিলো। তাদের প্রভুরা তাদের অসম্মানজনক এবং কঠিন কাজে সর্বদা নিয়োজিত করতো এবং ফেরাউন আইন চালু করেছিলো যে ইসরাঈলীদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করা হবে, এবং কন্যা সন্তানদের মিশরবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য জীবিত রাখা হবে। আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের এই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির হাত থেকে উদ্ধার করেন।
৪৭১২। ইসরাঈলীদের আল্লাহ্ অপমানজনক ক্রীতদাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। তাদের নানা ধরণের বিদ্রোহ ও অবিশ্বাস এবং সৎপথ ত্যাগ করে অসৎপথ অবলম্বন করা সত্বেও আল্লাহ্ তাদের ক্ষমা করে দেন এবং তাদের শেষ পর্যন্ত "দুধ ও মধুর দেশে " স্থায়ীভাবে বসবাসের বন্দোবস্ত করেন। তারা সেখানে পরবর্তীতে নবী সুলাইমানের অধীনে বিশাল গৌরবময় রাজত্বের পত্তন করে। ইসরাঈলীদের এই উত্থান কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। আল্লাহ্র বৃহত্তর পরিকল্পনার এটা একটা অংশ মাত্র। তাদের আল্লাহ্ মনোনীত করেছিলেন তাঁর বৃহত্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে। এই মনোনয়নের অর্থ এই নয় যে, তারা যা খুশী তাই করতে পারবে। যা খুশী তাই করার অধিকার আল্লাহ্ পৃথিবীর কোন জাতিকে দান করেন নাই। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে বিশ্বস্রষ্টা প্রত্যেক ব্যক্তিকে বা জাতিকে সফলতা লাভের সুযোগ দান করেন। যে আল্লাহ্র রাস্তায় থেকে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সেই ব্যক্তি বা জাতি হয় সফলকাম। আর যে ব্যক্তি বা জাতি তা করতে হয় অপারগ তার পতন অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ্ তাদের স্থানে অন্য কাউকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। এখানে বিশ্বে অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্বে।
৪৭১৩। ইসরাঈলীদের প্রতি আল্লাহ্র দেয়া নিদর্শনাবলীর মধ্যে ছিলো হযরত মুসার প্রতি দেয়া আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ, উর্বর ক্যানন উপত্যকাতে তাদের বসতি স্থাপন , দাউদ নবী ও হযরত সুলাইমানের অধীনে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাজত্ব স্থাপন, যারা তাদের আল্লাহ্র সত্য শিক্ষা দিতেন। এবং তাদের সঠিক পথে আনায়ন করার জন্য হযরত ঈসার আগমন - এ সকলই ছিলো আল্লাহ্র তরফ থেকে ইসরাঈলীদের প্রতি দেয়া নিদর্শন সমূহ। তাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। যখন তারা এসব পরীক্ষাতে অকৃতকার্য হলো , আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিলেন পৃথিবীতে নিঃসঙ্গভাবে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়ানো।
৪৭১৪। প্রাচীন সভ্যতায়, পৃথিবীর ইতিহাসে মিশর ও ইসরাঈলীদের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। এরা ছিলো সমসাময়িক বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, কিন্তু তাদের অহংকার ও গর্বের দরুণ ও তাদের পাপের পরিণতিতে তাদের পতন ঘটে। এই আয়াতে 'এরা ' দ্বারা রাসুলের সমকালীন কাফিরদিগকে বুঝানো হয়েছে। পৃথিবীর দুই সুসভ্য, ও পরাক্রমশালী জাতির উদাহরণ স্থাপন করা হয়েছে এসব অবিশ্বাসী ও একগুয়ে কোরাইশদের সম্মুখে। তাঁরা নবীর বিরুদ্ধে ছিলো একগুয়ে। অবাধ্যভাবে তারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করতো। তারা পরলোকের জীবনকে অস্বীকার করতো , যেমন করতো ইহুদীদের মধ্যে যারা নাস্তিক ছিলো। কোরাইশরা আল্লাহ্র রাসুলকে ও যারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশে বিশ্বাস করতো তাদের নির্যাতন ও অত্যাচার করতো। শুধু তাই-ই নয়, ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপ করে দাবী করতো যে পরলোকে যদি পুণরুত্থান ঘটেই থাকে তবে এখনই তাদের পূর্বপুরুষদের উপস্থিত করা হোক। এদেরই স্মরণ করানো হয়েছে যে, তাদের থেকেও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি যারা আরবেই বাস করতো, তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে [ পরবর্তী আয়াত সমূহ ]। কারণ ছিলো তাদের আল্লাহ্র প্রতি অবিশ্বাস ও পাপ কার্য। তারাও যদি অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন না করে তবে তাদেরও শেষ পরিণতি ঐ একই ঘটবে।
৪৭১৫। 'তুব্বা " ছিলো ইয়েমেনের এক শক্তিশালী রাজবংশের উপাধি। এই রাজবংশ ছিলো ইয়েমেনের হিমইয়ারী সম্রাটগণ। হিমইয়ারীরা হচ্ছে এক প্রাচীন জাতি। তারা দীর্ঘকাল ব্যপী ইয়েমেনের পশ্চিমাংশকে রাজধানী করে আরব, শাম , ইরাক ও আফ্রিকার কিছু অংশ শাসন করে। প্রথমে তারা সাবিঈন ধর্মাবলম্বী ছিলো অর্থাৎ তারা নক্ষত্র পূঁজারী ছিলো। পরবর্তীতে তারা ইহুদী ধর্ম ও খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। রাসুল [ সা ] ৯-১০ হিজরীতে ইয়েমেনের হিমারী রাজার নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত প্রেরণ করেন যার ফলে তারা ইসলাম গ্রহণ করে। অবশ্য এই ঘটনাটি ঘটে এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার বহু পরে।
৪৭১৭। দেখুন আয়াত [ ২১ : ১৬ ] ও টিকা ২৬৭৬। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি আল্লাহ্র কোন "লীলা খেলা" নয়। সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করা হয়েছে একটি নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদন করে যা আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই স্বাক্ষর। সাধারণতঃ অধিকাংশ মানুষ এই উদ্দেশ্যকে অনুধাবনে অক্ষম হয় কারণ তার আত্ম অহংকার ও একগুয়েমী তাকে এ সব অনুধাবনে বাঁধার সৃষ্টি করে। তাদের অজ্ঞতাই তাদের এরূপ অহংকারী ও একগুয়েতে পরিণত করে; যার ফলে সৃষ্টির মাঝে মানুষের অবস্থান , শেষ পরিণতি উপলব্ধিতে তারা অক্ষম হয়।
৪৭১৮। শেষ বিচারের দিন বা 'বাছাই করার দিন'। দেখুন [ ৩৭ : ২১ ] আয়াত ও টিকা ৪০৪৭। সাধারণ মানুষের চরিত্রে স্নেহ, ভালোবাসা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বিবেক বুদ্ধি, ন্যায়নীতি ও জ্ঞানের পাশাপাশি বিরাজ করে স্বার্থপরতা, কুসংস্কার , অন্ধ আবেগ, ঘৃণা-বিদ্বেষ, অজ্ঞতা , প্রভৃতি পাপ। নিষ্কলুষ পূণ্যাত্মা বা সম্পূর্ণ পূণ্য বিহীন শুধুই পাপে নিমজ্জিত আত্মা সংসারে বিরল। জীবনের এই চরম পর্যায় খুব কমই লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ মানুষের জীবন ভালো ও মন্দের সংমিশ্রণে কেটে যায়। শেষ বিচারের দিনে ভালো ও মন্দকে আলাদাভাবে পৃথক করা হবে। সকলের জন্য এই দিনকে নির্ধারিত করা হয়েছে।
৪৭১৯। সেদিন সর্বত্র ন্যায়নীতি প্রতিফলিত হবে। কারও প্রতি অন্যায় করা হবে না। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিও কারও সাহায্যে আসবে না। বরং তারই সাহায্যের প্রয়োজন হবে। পৃথিবীর জীবন হচ্ছে পরস্পর সহযোগীতার জীবন। উচ্চ , নীচ, ধনী-দরিদ্র সকলেই সকলের উপরে নির্ভরশীল , সকলেই সকলকে সহযোগীতা করে থাকে। শেষ বিচারের দিনে পৃথিবীর এই পরিবেশ বর্তমান থাকবে না। কারও কাউকে সাহায্য সহযোগীতা করার ক্ষমতা থাকবে না। সেদিন যে জিনিষটি মানুষকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখবে তা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ্র দয়া ও করুণা।
৪৭২০। সেদিন মানবাত্মার জন্য আল্লাহ্র করুণা ও দয়াই একমাত্র অভীষ্ট ফলদানে সক্ষম হবে। আল্লাহ্, তিনিই তো একমাত্র সাহায্য দানে সক্ষম [ পরাক্রমশালী ] এবং তিনি সর্বদা পাপীকে ক্ষমা করতে ব্যগ্র [ পরম দয়ালু ]।
৩০। আমি তো বণী ইসরাঈলীদের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি থেকে উদ্ধার করেছিলাম ৪৭১১
৪৭১১। ইসরাঈলীরা ফেরাউনের সময়ে মিশরে দাসত্বের নিগড়ে বাঁধা ছিলো। তাদের প্রভুরা তাদের অসম্মানজনক এবং কঠিন কাজে সর্বদা নিয়োজিত করতো এবং ফেরাউন আইন চালু করেছিলো যে ইসরাঈলীদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করা হবে, এবং কন্যা সন্তানদের মিশরবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য জীবিত রাখা হবে। আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের এই লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির হাত থেকে উদ্ধার করেন।
৩১। [ যা ] আরোপ করেছিলো ফেরাউন ,সে ছিলো উদ্ধত [ এমনকি ] অতিরিক্ত সীমালংঘনকারীদের অর্ন্তভূক্ত।
৩২। এবং আমি জেনে শুনেই তাদের সকল জাতির উপরে মনোনীত করেছিলাম ৪৭১২।
৩২। এবং আমি জেনে শুনেই তাদের সকল জাতির উপরে মনোনীত করেছিলাম ৪৭১২।
৪৭১২। ইসরাঈলীদের আল্লাহ্ অপমানজনক ক্রীতদাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। তাদের নানা ধরণের বিদ্রোহ ও অবিশ্বাস এবং সৎপথ ত্যাগ করে অসৎপথ অবলম্বন করা সত্বেও আল্লাহ্ তাদের ক্ষমা করে দেন এবং তাদের শেষ পর্যন্ত "দুধ ও মধুর দেশে " স্থায়ীভাবে বসবাসের বন্দোবস্ত করেন। তারা সেখানে পরবর্তীতে নবী সুলাইমানের অধীনে বিশাল গৌরবময় রাজত্বের পত্তন করে। ইসরাঈলীদের এই উত্থান কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। আল্লাহ্র বৃহত্তর পরিকল্পনার এটা একটা অংশ মাত্র। তাদের আল্লাহ্ মনোনীত করেছিলেন তাঁর বৃহত্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে। এই মনোনয়নের অর্থ এই নয় যে, তারা যা খুশী তাই করতে পারবে। যা খুশী তাই করার অধিকার আল্লাহ্ পৃথিবীর কোন জাতিকে দান করেন নাই। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে বিশ্বস্রষ্টা প্রত্যেক ব্যক্তিকে বা জাতিকে সফলতা লাভের সুযোগ দান করেন। যে আল্লাহ্র রাস্তায় থেকে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সেই ব্যক্তি বা জাতি হয় সফলকাম। আর যে ব্যক্তি বা জাতি তা করতে হয় অপারগ তার পতন অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ্ তাদের স্থানে অন্য কাউকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। এখানে বিশ্বে অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্বে।
৩৩।এবং তাদের জন্য নিদর্শনাবলী দান করেছিলাম , যার মধ্যে ছিলো [ ঈমানের] সুস্পষ্ট পরীক্ষা ৪৭১৩।
৪৭১৩। ইসরাঈলীদের প্রতি আল্লাহ্র দেয়া নিদর্শনাবলীর মধ্যে ছিলো হযরত মুসার প্রতি দেয়া আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ, উর্বর ক্যানন উপত্যকাতে তাদের বসতি স্থাপন , দাউদ নবী ও হযরত সুলাইমানের অধীনে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাজত্ব স্থাপন, যারা তাদের আল্লাহ্র সত্য শিক্ষা দিতেন। এবং তাদের সঠিক পথে আনায়ন করার জন্য হযরত ঈসার আগমন - এ সকলই ছিলো আল্লাহ্র তরফ থেকে ইসরাঈলীদের প্রতি দেয়া নিদর্শন সমূহ। তাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। যখন তারা এসব পরীক্ষাতে অকৃতকার্য হলো , আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিলেন পৃথিবীতে নিঃসঙ্গভাবে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়ানো।
৩৪।যেমন এরা [ কুরাইশরা ] নিশ্চয়ই বলে থাকে ;
৩৫। " আমাদের প্রথম মৃত্যু ব্যতীত আর কিছু নাই, এবং আমাদের পুণরায় উঠানো হবে না।
৩৬। "তাহলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ফিরিয়ে আন, যদি তুমি সত্যি বলে থাক।" ৪৭১৪
৩৫। " আমাদের প্রথম মৃত্যু ব্যতীত আর কিছু নাই, এবং আমাদের পুণরায় উঠানো হবে না।
৩৬। "তাহলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ফিরিয়ে আন, যদি তুমি সত্যি বলে থাক।" ৪৭১৪
৪৭১৪। প্রাচীন সভ্যতায়, পৃথিবীর ইতিহাসে মিশর ও ইসরাঈলীদের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। এরা ছিলো সমসাময়িক বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, কিন্তু তাদের অহংকার ও গর্বের দরুণ ও তাদের পাপের পরিণতিতে তাদের পতন ঘটে। এই আয়াতে 'এরা ' দ্বারা রাসুলের সমকালীন কাফিরদিগকে বুঝানো হয়েছে। পৃথিবীর দুই সুসভ্য, ও পরাক্রমশালী জাতির উদাহরণ স্থাপন করা হয়েছে এসব অবিশ্বাসী ও একগুয়ে কোরাইশদের সম্মুখে। তাঁরা নবীর বিরুদ্ধে ছিলো একগুয়ে। অবাধ্যভাবে তারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে প্রত্যাখান করতো। তারা পরলোকের জীবনকে অস্বীকার করতো , যেমন করতো ইহুদীদের মধ্যে যারা নাস্তিক ছিলো। কোরাইশরা আল্লাহ্র রাসুলকে ও যারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশে বিশ্বাস করতো তাদের নির্যাতন ও অত্যাচার করতো। শুধু তাই-ই নয়, ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপ করে দাবী করতো যে পরলোকে যদি পুণরুত্থান ঘটেই থাকে তবে এখনই তাদের পূর্বপুরুষদের উপস্থিত করা হোক। এদেরই স্মরণ করানো হয়েছে যে, তাদের থেকেও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি যারা আরবেই বাস করতো, তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে [ পরবর্তী আয়াত সমূহ ]। কারণ ছিলো তাদের আল্লাহ্র প্রতি অবিশ্বাস ও পাপ কার্য। তারাও যদি অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন না করে তবে তাদেরও শেষ পরিণতি ঐ একই ঘটবে।
৩৭। সে কি ! তারা কি তুবা সম্প্রদায় ৪৭১৫ এবং তাদের পূর্বে যারা ছিলো তাদের থেকেও ভালো ? তাদের আমি ধ্বংস করেছি , কেননা তারা ছিলো পাপাসক্ত ৪৭১৬।
৪৭১৫। 'তুব্বা " ছিলো ইয়েমেনের এক শক্তিশালী রাজবংশের উপাধি। এই রাজবংশ ছিলো ইয়েমেনের হিমইয়ারী সম্রাটগণ। হিমইয়ারীরা হচ্ছে এক প্রাচীন জাতি। তারা দীর্ঘকাল ব্যপী ইয়েমেনের পশ্চিমাংশকে রাজধানী করে আরব, শাম , ইরাক ও আফ্রিকার কিছু অংশ শাসন করে। প্রথমে তারা সাবিঈন ধর্মাবলম্বী ছিলো অর্থাৎ তারা নক্ষত্র পূঁজারী ছিলো। পরবর্তীতে তারা ইহুদী ধর্ম ও খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে। রাসুল [ সা ] ৯-১০ হিজরীতে ইয়েমেনের হিমারী রাজার নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত প্রেরণ করেন যার ফলে তারা ইসলাম গ্রহণ করে। অবশ্য এই ঘটনাটি ঘটে এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার বহু পরে।
৩৮। আমি তো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে এবং তাদের মধ্যবর্তী সকল কিছুকে [ অলস ] খেলার জন্য সৃষ্টি করি নাই ৪৭১৭।
৩৯। নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্য ব্যতীত তাদের সৃষ্টি করি নাই। কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা বুঝতে পারে না।
৩৯। নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্য ব্যতীত তাদের সৃষ্টি করি নাই। কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা বুঝতে পারে না।
৪৭১৭। দেখুন আয়াত [ ২১ : ১৬ ] ও টিকা ২৬৭৬। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি আল্লাহ্র কোন "লীলা খেলা" নয়। সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করা হয়েছে একটি নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদন করে যা আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই স্বাক্ষর। সাধারণতঃ অধিকাংশ মানুষ এই উদ্দেশ্যকে অনুধাবনে অক্ষম হয় কারণ তার আত্ম অহংকার ও একগুয়েমী তাকে এ সব অনুধাবনে বাঁধার সৃষ্টি করে। তাদের অজ্ঞতাই তাদের এরূপ অহংকারী ও একগুয়েতে পরিণত করে; যার ফলে সৃষ্টির মাঝে মানুষের অবস্থান , শেষ পরিণতি উপলব্ধিতে তারা অক্ষম হয়।
৪০। অবশ্যই তাদের সকলের জন্য বাছাই করার দিনকে ধার্য করা হয়েছে , - ৪৭১৮
৪৭১৮। শেষ বিচারের দিন বা 'বাছাই করার দিন'। দেখুন [ ৩৭ : ২১ ] আয়াত ও টিকা ৪০৪৭। সাধারণ মানুষের চরিত্রে স্নেহ, ভালোবাসা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বিবেক বুদ্ধি, ন্যায়নীতি ও জ্ঞানের পাশাপাশি বিরাজ করে স্বার্থপরতা, কুসংস্কার , অন্ধ আবেগ, ঘৃণা-বিদ্বেষ, অজ্ঞতা , প্রভৃতি পাপ। নিষ্কলুষ পূণ্যাত্মা বা সম্পূর্ণ পূণ্য বিহীন শুধুই পাপে নিমজ্জিত আত্মা সংসারে বিরল। জীবনের এই চরম পর্যায় খুব কমই লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ মানুষের জীবন ভালো ও মন্দের সংমিশ্রণে কেটে যায়। শেষ বিচারের দিনে ভালো ও মন্দকে আলাদাভাবে পৃথক করা হবে। সকলের জন্য এই দিনকে নির্ধারিত করা হয়েছে।
৪১। সেদিন কোন রক্ষাকর্তা তার মক্কেলের সামান্যতম কাজে লাগবে না, এবং কোন সাহায্যও তারা পাবে না , - ৪৭১৯
৪৭১৯। সেদিন সর্বত্র ন্যায়নীতি প্রতিফলিত হবে। কারও প্রতি অন্যায় করা হবে না। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিও কারও সাহায্যে আসবে না। বরং তারই সাহায্যের প্রয়োজন হবে। পৃথিবীর জীবন হচ্ছে পরস্পর সহযোগীতার জীবন। উচ্চ , নীচ, ধনী-দরিদ্র সকলেই সকলের উপরে নির্ভরশীল , সকলেই সকলকে সহযোগীতা করে থাকে। শেষ বিচারের দিনে পৃথিবীর এই পরিবেশ বর্তমান থাকবে না। কারও কাউকে সাহায্য সহযোগীতা করার ক্ষমতা থাকবে না। সেদিন যে জিনিষটি মানুষকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখবে তা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ্র দয়া ও করুণা।
৪২। যারা আল্লাহ্র করুণা লাভ করেছে তারা ব্যতীত। অবশ্যই তিনি মহাশক্তিশালী , পরম করুণাময় ৪৭২০।
৪৭২০। সেদিন মানবাত্মার জন্য আল্লাহ্র করুণা ও দয়াই একমাত্র অভীষ্ট ফলদানে সক্ষম হবে। আল্লাহ্, তিনিই তো একমাত্র সাহায্য দানে সক্ষম [ পরাক্রমশালী ] এবং তিনি সর্বদা পাপীকে ক্ষমা করতে ব্যগ্র [ পরম দয়ালু ]।
রুকু - ৩
৪৭২১। পাপীদের শেষ গন্তব্যস্থলের ভয়াবহ কথাচিত্র এখানে আঁকা হয়েছে। এ স্থানের ভয়াবহতা কোন মানবিক ভাষাতে প্রকাশ করা সাধ্যের অতীত।
৪৭২২। সুস্বাদু ফলের বিপরীতে জাকুম বৃক্ষকে বর্ণনা করা হয়েছে ভয়াবহরূপে। এর বর্ণনা আরও আছে আয়াত [ ৩৭: ৬২ - ৬৮ ] ও টিকা ৪০৭৩। আরও দেখুন আয়াত [ ১৭ : ৬০ ] ও টিকা ২২৫০।
৪৭২৩। এই সূরাতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে মানুষের অহংকারকে। যে অহংকার ও গর্বের উৎপত্তি আভিজাত্য ও পার্থিব সম্মান থেকে। আভিজাত্যের ও শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার সচারচর মানুষকে অহংকার ও গর্বের মত পাপে প্রলুব্ধ করে থাকে। এই শ্রেষ্ঠত্ব হতে পারে ক্ষমতার , সম্পদের , সম্মানের , মেধার , মননশীলতা প্রভৃতি। পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে এ সব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সন্দেহ নাই , কিন্তু এর থেকে আত্মার মাঝে যদি অহংকারের জন্ম নেয় , বিনয় অন্তর্হিত হয়, তবে তা অত্যন্ত জঘন্য পাপে পরিণত হয়। আল্লাহ্র নেয়ামতকে সে আল্লাহ্র দান হিসেবে আত্মার মাঝে স্বীকার না করে নিজস্ব কৃতিত্বে মেতে ওঠে। এই আত্মনির্ভরশীতাই তাকে অহংকারী করে তোলে।
৪৭২৪। যখন এসব অভিজাত লোকেরা তাদের শাস্তিকে প্রত্যক্ষ করবে, তাদের নির্বোধের ন্যায় পরিলক্ষিত হবে। এরাই তারা যারা পরলোক সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করেছিলো।
৪৭২৫। পৃথিবীর বহমান জীবনে সম্পদ , ক্ষমতা, প্রভাব , প্রতিপত্তি, কিছুই স্থায়ী নয়। এরা বহমান নদীর ন্যায় - একূলে ভাঙ্গে ও ওকূল গড়ে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে , পরিবার থেকে পরিবারে, ও জাতি থেকে জাতিতে স্থানান্তরিত হয়। পরলোকের জীবন এরূপ অস্থায়ী নয়।সে জীবনে কোন বিপদ বিপর্যয় মুত্তাকীদের আরাম আয়েশে বাঁধার সৃষ্টির করবে না। সুখ ও শান্তি সেখানে হবে সময়ের গন্ডি পেরিয়ে অসীম ও অবারিত।
৪৭২৬। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ১৮ : ৩১] ও টিকা ২৩৭৩।
৪৭২৭। মুত্তাকীদের বেহেশতের জীবনধারা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, সে জীবন হবে স্বচ্ছ ও পবিত্র। কোন ষড়যন্ত্র বা গোপনীয়তা সে জীবনকে কলুষিত করতে পারবে না। সেখানে সামাজিক জীবনে কোনও গোপনীয়তা বা ঈর্ষা , একচেটিয়া মনোভাব বা স্বাতন্ত্রবোধ সামাজিক জীবনের পবিত্রতা নষ্ট করবে না। কারণ সকলেই এসব মুক্ত থাকবে। 'মুখোমুখি বসবে ' বাক্যটি দ্বারা এই সাম্যের ভাবকেই ধারণ করা হয়েছে।
৪৭২৮। সেখানের দৃশ্য, সঙ্গীনী , পোষাক , ফলমূল সবই হবে নয়ানভিরাম। বেহেশত হবে মুত্তাকীদের আবাসস্থল। সে জীবন হবে পূত , পবিত্র , শান্তির জীবন - পৃথিবীর কলুষতা পূর্ণ স্থুল জীবনের মত নয়। মুত্তাকী পুরুষ ও মহিলা সকলেই অবর্ণনীয় সুখ ও শান্তি উপভোগ করবে বেহেশতের জীবনে । যা ভাষায় প্রকাশ করা যে কোনও মানুষের অসাধ্য।
৪৭২৯। 'Hur' শব্দটি দ্বারা নিম্নলিখিত ধারণাগুলি প্রকাশ করা হয়েছে :
১) পবিত্রতার প্রতীক ,
২) সৌন্দর্য্যের প্রতীক। একে প্রকাশ করা হয়েছে আয়তলোচনা নয়ন শব্দটি দ্বারা। মুখের সৌন্দর্য্যের এক প্রধান অংশ হচ্ছে চক্ষুর সৌন্দর্য্য ও এর উজ্জ্বলতার প্রকাশ। অপর পক্ষে সুন্দর মুখের সৌন্দর্যও ম্লান হয়ে পড়ে যদি চক্ষু হয় ম্লান , ভাষাহীন ও অনুজ্জ্বল।
৩) সত্য এবং শুভ এর প্রতীক।
৪৭৩০। 'ফল' শব্দটির মর্মার্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে [ ৪৩ : ৭৩ ] আয়াতের টিকাতে ৪৬৭১।
৪৭৩১। 'প্রথম মৃত্যু' শব্দটি দ্বারা পার্থিব জীবনের সাধারণ মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে। এই দৈহিক মৃত্যুর পরেই মুত্তাকীদের বেহেশতে আনায়ন করা হয়, যেখানে তারা পরম শান্তি লাভ করবে। দেখুন আয়াত [ ৩৭ : ৫৯ ] এবং টিকা ৪০৭১।
৪৭৩২। ইসলামে আধ্যাত্মিক মুক্তির রূপরেখা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে এই মুক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতে লাভ করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিকে সর্বশক্তি দিয়ে আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য চেষ্টা করতে হবে সত্য, এবং এই চেষ্টা করা হচ্ছে মুক্তি লাভের অবধারিত অংশ বিশেষ। কিন্তু সর্বপরি প্রয়োজন হচ্ছে আল্লাহ্র করুণা ও দয়া লাভ করা। একমাত্র আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও করুণাই পারে আমাদের আধ্যাত্মিক মুক্তি দান করে পরলোকের শাস্তি থেকে রক্ষা করতে। আধ্যাত্মিক মুক্তি তথা ধর্মের মূল ভিত্তিকে এই আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে সূরাটির শেষে। নিজস্ব চেষ্টা ও সর্বপরি আল্লাহ্র সাহায্য,অনুগ্রহ ও করুণা আমাদের পরলোকের অপার শান্তির ভিত্তি রচনা করে থাকে। আল্লাহ্র অনুগ্রহই হচ্ছে আধ্যাত্মিক শান্তির পথ ইহলোকে ও পরলোকেও।
৪৭৩৩। ইসলামে পারলৌকিক মুক্তিকে এভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া লাভ হচ্ছে পারলৌকিক মুক্তির প্রধান উপায়। একমাত্র আল্লাহ্র অনুগ্রহ-ই পারে মন্দের কুপ্রভাব থেকে আত্মাকে রক্ষা করে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করাতে। আল্লাহ্র অনুগ্রহ আমাদের প্রাপ্যকে অতিক্রম করে যাবে। পৃথিবীতে মানুষের ইন্দ্রিয়গাহ্য সকল চাওয়া পাওয়ার সীমানা, মানুষের সর্বোচ্চ কল্পনাশক্তির সীমানা অতিক্রম করে যাবে আল্লাহ্র অনুগ্রহ। আর এই অনুগ্রহ যে লাভ করে সেই ধন্য , সেই সফলকাম , সেই লাভ করে আধ্যাত্মিক মুক্তি। আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য , আত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য, নিজস্ব চেষ্টা তখনই সফলতা লাভ করে,যখন তা আল্লাহ্র অনুগ্রহে ধন্য হয়।
৪৭৩৪। কোরাণ শরীফ আরবী ভাষাতে অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে তা আরবী ভাষাভাষী লোকদের বুঝতে "সহজ" হবে। কোর্আন অবতীর্ণ হয়েছে কবিতার ছন্দে, তা পাঠ করতে হয় সঙ্গীতের ছন্দে। ভাষা, ছন্দ, সুর সব কিছুর মিলিত প্রভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক জগতকে পার্থিব থেকে অপার্থিব জগতে টেনে নিয়ে যায়। আবার , এই আয়াতটির বক্তব্যকে এ ভাবেও প্রকাশ করা যায় - কোরাণের মূল বক্তব্য অনুধাবন করতে হলে, নিজস্ব ঐকান্তিক ও নিরলস চেষ্টার প্রয়োজন। সে কারণেই আরবী ভাষীদের মধ্যে আরবী ভাষাতে অবতীর্ণ হয়েছে যেনো ভাষার ব্যবধানকে অতিক্রম করতে না হয়।
৪৩।অবশ্যই যাক্কুম বৃক্ষ , ৪৭২১ , ৪৭২২ ,
৪৭২১। পাপীদের শেষ গন্তব্যস্থলের ভয়াবহ কথাচিত্র এখানে আঁকা হয়েছে। এ স্থানের ভয়াবহতা কোন মানবিক ভাষাতে প্রকাশ করা সাধ্যের অতীত।
৪৭২২। সুস্বাদু ফলের বিপরীতে জাকুম বৃক্ষকে বর্ণনা করা হয়েছে ভয়াবহরূপে। এর বর্ণনা আরও আছে আয়াত [ ৩৭: ৬২ - ৬৮ ] ও টিকা ৪০৭৩। আরও দেখুন আয়াত [ ১৭ : ৬০ ] ও টিকা ২২৫০।
৪৪। পাপীদের খাদ্য হবে ; -
৪৫। গলিত তাম্রের মত ; ইহা তাদের উদরে ফুটতে থাকবে ,
৪৬। ঝলসে দেয় এরূপ ফুটন্ত পানির মত ,
৪৭। [ ফেরেশতাদের বলা হবে ] তোমরা ওকে পাকড়াও কর এবং জাহান্নামের মধ্যস্থলে জ্বলন্ত আগুনের মাঝে টেনে নিয়ে যাও।
৪৮। তারপরে তার মাথার উপরে ফুটন্ত পানির শাস্তি ঢেলে দাও।
৪৯।[ এই শাস্তির ] আস্বাদ গ্রহণ কর ! তুমি তো ছিলে ক্ষমতাবান , সম্মানীয় ৪৭২৩
৪৫। গলিত তাম্রের মত ; ইহা তাদের উদরে ফুটতে থাকবে ,
৪৬। ঝলসে দেয় এরূপ ফুটন্ত পানির মত ,
৪৭। [ ফেরেশতাদের বলা হবে ] তোমরা ওকে পাকড়াও কর এবং জাহান্নামের মধ্যস্থলে জ্বলন্ত আগুনের মাঝে টেনে নিয়ে যাও।
৪৮। তারপরে তার মাথার উপরে ফুটন্ত পানির শাস্তি ঢেলে দাও।
৪৯।[ এই শাস্তির ] আস্বাদ গ্রহণ কর ! তুমি তো ছিলে ক্ষমতাবান , সম্মানীয় ৪৭২৩
৪৭২৩। এই সূরাতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে মানুষের অহংকারকে। যে অহংকার ও গর্বের উৎপত্তি আভিজাত্য ও পার্থিব সম্মান থেকে। আভিজাত্যের ও শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার সচারচর মানুষকে অহংকার ও গর্বের মত পাপে প্রলুব্ধ করে থাকে। এই শ্রেষ্ঠত্ব হতে পারে ক্ষমতার , সম্পদের , সম্মানের , মেধার , মননশীলতা প্রভৃতি। পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে এ সব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সন্দেহ নাই , কিন্তু এর থেকে আত্মার মাঝে যদি অহংকারের জন্ম নেয় , বিনয় অন্তর্হিত হয়, তবে তা অত্যন্ত জঘন্য পাপে পরিণত হয়। আল্লাহ্র নেয়ামতকে সে আল্লাহ্র দান হিসেবে আত্মার মাঝে স্বীকার না করে নিজস্ব কৃতিত্বে মেতে ওঠে। এই আত্মনির্ভরশীতাই তাকে অহংকারী করে তোলে।
৫০। ইহা তো তাই-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ পোষণ করতে ৪৭২৪।
৪৭২৪। যখন এসব অভিজাত লোকেরা তাদের শাস্তিকে প্রত্যক্ষ করবে, তাদের নির্বোধের ন্যায় পরিলক্ষিত হবে। এরাই তারা যারা পরলোক সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করেছিলো।
৫১। [ অপর পক্ষে ] পুণাত্মারা নিরাপদে অবস্থান করবে ৪৭২৫ -
৪৭২৫। পৃথিবীর বহমান জীবনে সম্পদ , ক্ষমতা, প্রভাব , প্রতিপত্তি, কিছুই স্থায়ী নয়। এরা বহমান নদীর ন্যায় - একূলে ভাঙ্গে ও ওকূল গড়ে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে , পরিবার থেকে পরিবারে, ও জাতি থেকে জাতিতে স্থানান্তরিত হয়। পরলোকের জীবন এরূপ অস্থায়ী নয়।সে জীবনে কোন বিপদ বিপর্যয় মুত্তাকীদের আরাম আয়েশে বাঁধার সৃষ্টির করবে না। সুখ ও শান্তি সেখানে হবে সময়ের গন্ডি পেরিয়ে অসীম ও অবারিত।
৫২। উদ্যান ও প্রস্রবণের মাঝে ;
৫৩। তারা মিহি রেশম ও মূল্যবান ব্রকেডের বস্ত্র পরিধান করে পরস্পরের মুখোমুখি বসবে ৪৭২৬, ৪৭২৭ ,
৫৩। তারা মিহি রেশম ও মূল্যবান ব্রকেডের বস্ত্র পরিধান করে পরস্পরের মুখোমুখি বসবে ৪৭২৬, ৪৭২৭ ,
৪৭২৬। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ১৮ : ৩১] ও টিকা ২৩৭৩।
৪৭২৭। মুত্তাকীদের বেহেশতের জীবনধারা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, সে জীবন হবে স্বচ্ছ ও পবিত্র। কোন ষড়যন্ত্র বা গোপনীয়তা সে জীবনকে কলুষিত করতে পারবে না। সেখানে সামাজিক জীবনে কোনও গোপনীয়তা বা ঈর্ষা , একচেটিয়া মনোভাব বা স্বাতন্ত্রবোধ সামাজিক জীবনের পবিত্রতা নষ্ট করবে না। কারণ সকলেই এসব মুক্ত থাকবে। 'মুখোমুখি বসবে ' বাক্যটি দ্বারা এই সাম্যের ভাবকেই ধারণ করা হয়েছে।
৫৪। অবস্থা এরূপই হবে।আমি তাদের সঙ্গিনী দান করবো আয়তলোচনা হুর ৪৭২৮, ৪৭২৯।
৪৭২৮। সেখানের দৃশ্য, সঙ্গীনী , পোষাক , ফলমূল সবই হবে নয়ানভিরাম। বেহেশত হবে মুত্তাকীদের আবাসস্থল। সে জীবন হবে পূত , পবিত্র , শান্তির জীবন - পৃথিবীর কলুষতা পূর্ণ স্থুল জীবনের মত নয়। মুত্তাকী পুরুষ ও মহিলা সকলেই অবর্ণনীয় সুখ ও শান্তি উপভোগ করবে বেহেশতের জীবনে । যা ভাষায় প্রকাশ করা যে কোনও মানুষের অসাধ্য।
৪৭২৯। 'Hur' শব্দটি দ্বারা নিম্নলিখিত ধারণাগুলি প্রকাশ করা হয়েছে :
১) পবিত্রতার প্রতীক ,
২) সৌন্দর্য্যের প্রতীক। একে প্রকাশ করা হয়েছে আয়তলোচনা নয়ন শব্দটি দ্বারা। মুখের সৌন্দর্য্যের এক প্রধান অংশ হচ্ছে চক্ষুর সৌন্দর্য্য ও এর উজ্জ্বলতার প্রকাশ। অপর পক্ষে সুন্দর মুখের সৌন্দর্যও ম্লান হয়ে পড়ে যদি চক্ষু হয় ম্লান , ভাষাহীন ও অনুজ্জ্বল।
৩) সত্য এবং শুভ এর প্রতীক।
৫৫। সেখানে তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফলমূল আনতে , বলবে ৪৭৩০।
৪৭৩০। 'ফল' শব্দটির মর্মার্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে [ ৪৩ : ৭৩ ] আয়াতের টিকাতে ৪৬৭১।
৫৬। প্রথম মৃত্যু ব্যতীত তারা সেথায় আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না ৪৭৩১। এবং তিনি তাদের জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন - ৪৭৩২।
৪৭৩১। 'প্রথম মৃত্যু' শব্দটি দ্বারা পার্থিব জীবনের সাধারণ মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে। এই দৈহিক মৃত্যুর পরেই মুত্তাকীদের বেহেশতে আনায়ন করা হয়, যেখানে তারা পরম শান্তি লাভ করবে। দেখুন আয়াত [ ৩৭ : ৫৯ ] এবং টিকা ৪০৭১।
৪৭৩২। ইসলামে আধ্যাত্মিক মুক্তির রূপরেখা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে এই মুক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাতে লাভ করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিকে সর্বশক্তি দিয়ে আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য চেষ্টা করতে হবে সত্য, এবং এই চেষ্টা করা হচ্ছে মুক্তি লাভের অবধারিত অংশ বিশেষ। কিন্তু সর্বপরি প্রয়োজন হচ্ছে আল্লাহ্র করুণা ও দয়া লাভ করা। একমাত্র আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও করুণাই পারে আমাদের আধ্যাত্মিক মুক্তি দান করে পরলোকের শাস্তি থেকে রক্ষা করতে। আধ্যাত্মিক মুক্তি তথা ধর্মের মূল ভিত্তিকে এই আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে সূরাটির শেষে। নিজস্ব চেষ্টা ও সর্বপরি আল্লাহ্র সাহায্য,অনুগ্রহ ও করুণা আমাদের পরলোকের অপার শান্তির ভিত্তি রচনা করে থাকে। আল্লাহ্র অনুগ্রহই হচ্ছে আধ্যাত্মিক শান্তির পথ ইহলোকে ও পরলোকেও।
৫৭। তোমার প্রভুর অনুগ্রহ স্বরূপ ! সেটাই তো হবে মহাসাফল্য ৪৭৩৩।
৪৭৩৩। ইসলামে পারলৌকিক মুক্তিকে এভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া লাভ হচ্ছে পারলৌকিক মুক্তির প্রধান উপায়। একমাত্র আল্লাহ্র অনুগ্রহ-ই পারে মন্দের কুপ্রভাব থেকে আত্মাকে রক্ষা করে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করাতে। আল্লাহ্র অনুগ্রহ আমাদের প্রাপ্যকে অতিক্রম করে যাবে। পৃথিবীতে মানুষের ইন্দ্রিয়গাহ্য সকল চাওয়া পাওয়ার সীমানা, মানুষের সর্বোচ্চ কল্পনাশক্তির সীমানা অতিক্রম করে যাবে আল্লাহ্র অনুগ্রহ। আর এই অনুগ্রহ যে লাভ করে সেই ধন্য , সেই সফলকাম , সেই লাভ করে আধ্যাত্মিক মুক্তি। আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য , আত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য, নিজস্ব চেষ্টা তখনই সফলতা লাভ করে,যখন তা আল্লাহ্র অনুগ্রহে ধন্য হয়।
৫৮। অবশ্যই ,আমি [ এই কুর-আন ] তোমার ভাষায় সহজ করে প্রকাশ করেছি , যেনো তারা [ এর উপদেশে ] মনোযোগ দিতে পারে৪৭৩৪।
৪৭৩৪। কোরাণ শরীফ আরবী ভাষাতে অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে তা আরবী ভাষাভাষী লোকদের বুঝতে "সহজ" হবে। কোর্আন অবতীর্ণ হয়েছে কবিতার ছন্দে, তা পাঠ করতে হয় সঙ্গীতের ছন্দে। ভাষা, ছন্দ, সুর সব কিছুর মিলিত প্রভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক জগতকে পার্থিব থেকে অপার্থিব জগতে টেনে নিয়ে যায়। আবার , এই আয়াতটির বক্তব্যকে এ ভাবেও প্রকাশ করা যায় - কোরাণের মূল বক্তব্য অনুধাবন করতে হলে, নিজস্ব ঐকান্তিক ও নিরলস চেষ্টার প্রয়োজন। সে কারণেই আরবী ভাষীদের মধ্যে আরবী ভাষাতে অবতীর্ণ হয়েছে যেনো ভাষার ব্যবধানকে অতিক্রম করতে না হয়।
৫৯। সুতারাং তুমি প্রতীক্ষা কর এবং লক্ষ করতে থাক তারাও প্রতীক্ষা করতে থাকুক।