+
-
R
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : হা-মিম সিরিজের এটা ৬ষ্ঠ সূরা। সূরার সাধারণ বিষয়বস্তুর জন্য দেখুন ৪০ নং সূরার ভূমিকা।
সার সংক্ষেপ : নতজানু করা শব্দটিকে চয়ন করা হয়েছে এই সূরার ২৮ নং আয়াত থেকে যা এই সূরার মূল বিষয়বস্তু। পৃথিবীতে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, বরং বিশ্বাসের প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রূপ প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের নতজানু হয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে হবে।
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৪৭৩৬। [ ৪০ : ২ ] আয়াতটি ও এই আয়াতটি [ ৪৫ : ২ ] একই রূপ শুধুমাত্র পূর্বের আয়াতের [ ৪০: ২ ] পরম জ্ঞানী শব্দটির স্থলে এই আয়াতে [ ৪৫ : ২ ] প্রজ্ঞাময় শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এই সূরার বিষয়বস্তুর সাথে " প্রজ্ঞাময়" শব্দটি সঠিক ভাবে প্রযোজ্য হয়েছে কারণ এই সূরার বিষয়বস্তুতে সেই সব মহামূর্খদের আলোচনা করা হয়েছে যারা আল্লাহ্ ও তাঁর নিদর্শনকে প্রত্যাখান করে। অপরপক্ষে ৪০ নং সূরাটি মানুষের ব্যক্তিগত গুণাবলী ও ঈমানের উপরে গুরুত্ব আরোপ করে।
৪৭৩৭। সূরা [ ২ : ১৬৪ ] আয়াতের বর্ণনায় আল্লাহ্র মাহত্ব্যের যে ছবি আকাঁ হয়েছে তারই দুই একটির পুণরাবৃত্তি করা হয়েছে এই সূরাতে তবে এর প্রেক্ষাপট আলাদা। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে বক্তব্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে , এবং এই তিনটি ভাগ তিনটি আয়াতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ১) [ ৪৫ : ৩ ] আয়াতে আল্লাহ্র যে সব নিদর্শনের উল্লেখ করা হয়েছে তা মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে , তবে তা অনুভব করতে হয় আত্মার মাঝে, যার জন্য প্রয়োজন বিশ্বাসের বা ঈমানের। এগুলিকে বলা হয়েছে মোমেন বান্দাদের জন্য নিদর্শন সমূহ যা তাদের ঈমানের ভিত্তিকে আরও মজবুত করে। অন্য দুটির জন্য দেখুন পরবর্তী টিকা দুটি।
৪৭৩৮। ২) এবারে যে নিদর্শনের উল্লেখ করা হয়েছে তা মানুষের সৃষ্টি ও তার প্রকৃতিদত্ত ক্ষমতার মাঝে নিহিত। আরও নিহিত আছে বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের মাঝে। অর্থাৎ প্রাণী জগত ও উদ্ভিদ জগতের সৃষ্টি কৌশলের মাঝে আল্লাহ্র নিদর্শন বর্তমান। এই সব নিদর্শনসমূহকে আত্মার মাঝে মানুষ অনুভব করতে সক্ষম বিজ্ঞানের জ্ঞানের মাধ্যমে। বিশ্ব প্রকৃতিতে যে সব প্রাকৃতিক আইন সবই আল্লাহ্র ক্ষমতার প্রকাশ বা আল্লাহ্র নিদর্শন। প্রকৃতির এই জ্ঞানই হচ্ছে 'বিজ্ঞান' বা ' বিশেষ জ্ঞান '। এই বিশেষ জ্ঞান মোমেন বান্দাদের ঈমানকে আরও নিশ্চিত করে। এই জ্ঞান 'নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য"। কারণ অবিশ্বাসীদের এই জ্ঞান আরও কাফেরে পরিণত করে।
৪৭৩৯। ৩) এই আয়াতে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহকে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রাকৃতিক শক্তির অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। এসব প্রাকৃতিক শক্তি বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে , নিয়ন্ত্রিত করে - আমাদের জীবনের সাথে এ সব প্রাকৃতিক শক্তি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যারা " চিন্তাশীল ও জ্ঞানী সম্প্রদায় " তারাই পারে এসব পর্যবেক্ষণের দ্বারা আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যক্ষ করতে ও স্থির সিদ্ধান্তে উপণীত হতে।
৪৭৪০। বৃষ্টি বা বারি হচ্ছে "আকাশ থেকে" জীবনোপকরণের প্রতীক। বৃষ্টির ফলে ফসল উৎপন্ন হয়, উৎপন্ন ফসল রিযিক, তাই বৃষ্টির জন্য রিযিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বৃষ্টি শুষ্ক মাটিকে সিক্ত করে মাটিতে জীবনের সঞ্চার করে। ফলে মাটি শস্য - শ্যামল রূপ ধারণ করে ; শুষ্ক ঊষর মাটিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। ঠিক সেরকমই আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের শক্তি মৃত আত্মার মাঝে প্রাণের সঞ্চার করার ক্ষমতা রাখে। এখানে বৃষ্টিকে, আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের ক্ষমতাকে বুঝানোর জন্য প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপ প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে প্রকৃতির বিভিন্ন পরিবর্তনকে। দিবা ও রাত্রির পরিবর্তন ,বায়ু প্রবাহের পরিবর্তন , প্রকৃতির এই অত্যাচার্য ঘটনাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে উপমা হিসেবে আল্লাহ্র ক্ষমতাকে বুঝানোর জন্য। রাত্রি হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পরিবর্তন , রাত হচ্ছে অন্ধকার , দিন হচ্ছে উজ্জ্বল আলো। রাত্রিকে বা অন্ধকারকে তুলনা করা হয়েছে আধ্যাত্মিক অজ্ঞতার সাথে। অন্ধকার আধ্যাত্মিক অজ্ঞতার প্রতীক। দিন বা আলোকে তুলনা করা হয়েছে আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞায়তার প্রতীক হিসেবে, অথবা রাত্রি হচ্ছে বিশ্রামের জন্য। রাত্রিকে আধ্যাত্মিক নিষ্কৃয়তার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ; অপর পক্ষে দিন হচ্ছে কর্মব্যস্ততার জন্য। সেভাবে দিন বা দিনের আলোকে আধ্যাত্মিক কর্মচাঞ্চল্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বায়ুর পরিবর্তনের সাথে পৃথিবীতে ঋতুর পরিবর্তন ঘটে ফলে পৃথিবীর বিরাট প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটে যার ফলে বিভিন্ন ঋতুতে পৃথিবী বিভিন্ন ফল ও ফসলে ভরে ওঠে। এভাবেই আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ মানুষের আত্মার মাঝে কল্যাণকর , মঙ্গলজনক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। প্রাকৃতিক এই ঘটনাবলীকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্রতীক হিসেবে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের ক্ষমতাকে উপলব্ধি করার জন্য। আল্লাহ্র রহমতে মানব আত্মা হয় ধন্য ,তখন আত্মার বিকাশ ঐ সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল ভূমির ন্যায় ধারণ করে, আল্লাহ্র নেয়ামত সীমাহীন তিনি সীমাহীন নেয়ামতের আঁধার।
৪৭৪১। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের বাণী , প্রকৃতির মাঝে তাঁর নিদর্শন সমূহ যদি কারও হৃদয় ও মনে সাড়া না জাগায় ; যদি তা তাদের মনে বিশ্বাস উৎপন্ন না করে; যদি তা তাদের প্রত্যয় উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট না হয়, তবে তারা আর কোন ধরণের বর্ণনা গ্রহণ করবে ?
৪৭৪২। উপরের টিকাতে যাদের বর্ণনা করা হয়েছে তারা আধ্যাত্মিক দিক থেকে মৃত। এরা প্রকৃতপক্ষেই হতভাগ্য। কারণ এরা কখনও সত্যের আলো হৃদয়ের মাঝে উপলব্ধি করতে পারবে না।এদের প্রধান অবলম্বন হবে মিথ্যা, - এই মিথ্যা তাদের সমগ্র সত্ত্বার মাঝে পরিব্যপ্ত হবে। তাদের কর্মে , চিন্তায় , চরিত্রে, উপাসনায়, আল্লাহ্র প্রতি মানসিকতায়। তাদের মানসিকতাকে এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। এরা আল্লাহ্র আয়াতসমূহের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে ,পরিহাস করে থাকে ; এবং ভান করে যে সে এসবের উর্দ্ধে অবস্থান করে জ্ঞানে ও গরিমায়। এরাই হচ্ছে তারা যারা কান থাকতেও আল্লাহ্র বাণী শুনতে পাবে না বা হৃদয়ে বধিরএবং চোখ থাকতেও আল্লাহ্র নিদর্শনাবলী দেখতে পাবে না বা আত্মায় অন্ধ। কোরাণের আয়াত দ্বারা এরা কোনওরূপ লাভবান হবে না। এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। আধ্যাত্মিক বধিরতা ও অন্ধত্ব অন্য কারও ক্ষতি করবে না ক্ষতি তার নিজেরই।
৪৭৪৩। লক্ষ করুন আয়াত [ ৮ -১১ ] নং পর্যন্ত পাপের শাস্তি বর্ণনা প্রসঙ্গে বিভিন্ন অলংকারময় ভাষার প্রয়োগ করা হয়েছে - যা কৃত পাপের গুরুত্ব অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১) ৮ নং আয়াতেবলা হয়েছে, যে ঔদ্ধত্য ও অহংকারের সাথে আল্লাহ্র আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তার অহংকারের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তি।
২) যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে তাদের জন্য আছে " লাঞ্ছনাদায়ক " শাস্তি। সে নিজেকে হাস্যষ্করভাবে বোকা প্রমাণিত করে থাকে।
৩) নম্বর শাস্তির বর্ণনা আছে নিম্নোক্ত আয়াত সমূহে।
৪৭৪৪। (৩) যারা অবিশ্বাসী ও পাপী তারা পৃথিবীর জীবনটাকেই সর্বোচ্চ চাওয়া ও পাওয়ার বস্তু বলে গণ্য করে। কারণ তাদের নিকট মৃত্যুর পরে আর কোনও জীবন নাই। সুতারাং এই জীবনের যা কিছু কাম্য বস্তু তারা তার পিছনেই ছুটে বেড়ায় জীবন ভরে এবং সম্মান , প্রভাব-প্রতিপত্তি , ধন-সম্পদ ইত্যাদি পার্থিব ভোগ্য বস্তু সম্ভারের পাহাড় গড়ে তোলে এবং মনে করে এগুলি তাকে ইহকাল ও পরকাল উভয় কালেই রক্ষা করতে পারবে। বিশ্বাস যখন প্রকৃত না হয়, তখন কার্য ও কার্যকরণ সিদ্ধান্ত ভুল হয়। তাদের এ সব পার্থিব বস্তু সামগ্রী পরলোকে কোনও কাজেই আসবে না। তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি। আল্লাহ্র পরিবর্তে তারা পৃথিবীতে পার্থিব বস্তু পাওয়ার জন্য সাধনা করেছে , যা তাদের কাছে মনে হতো মানব জীবনের একমাত্র কাম্য, যা ছিলো তাদের উপাসনার বিষয় এবং যাকে তারা মনে করতো যে, তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে, একমাত্র অভিভাবক , পরলোকে তাদের সে সব উপাস্য ও অভিভাবক কোনও কাজেইআসবে না।
সূরা জাছিয়া
সূরা জাছিয়া অথবা নতজানু - ৪৫
৩৭ আয়াত , ৪ রুকু , মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : হা-মিম সিরিজের এটা ৬ষ্ঠ সূরা। সূরার সাধারণ বিষয়বস্তুর জন্য দেখুন ৪০ নং সূরার ভূমিকা।
সার সংক্ষেপ : নতজানু করা শব্দটিকে চয়ন করা হয়েছে এই সূরার ২৮ নং আয়াত থেকে যা এই সূরার মূল বিষয়বস্তু। পৃথিবীতে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, বরং বিশ্বাসের প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রূপ প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের নতজানু হয়ে বশ্যতা স্বীকার করতে হবে।
সূরা জাছিয়া অথবা নতজানু - ৪৫
৩৭ আয়াত , ৪ রুকু , মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
০১। হা - মীম
০২। এই কিতাব পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্র নিকট থেকে অবতীর্ণ ৪৭৩৬।
০২। এই কিতাব পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্র নিকট থেকে অবতীর্ণ ৪৭৩৬।
৪৭৩৬। [ ৪০ : ২ ] আয়াতটি ও এই আয়াতটি [ ৪৫ : ২ ] একই রূপ শুধুমাত্র পূর্বের আয়াতের [ ৪০: ২ ] পরম জ্ঞানী শব্দটির স্থলে এই আয়াতে [ ৪৫ : ২ ] প্রজ্ঞাময় শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এই সূরার বিষয়বস্তুর সাথে " প্রজ্ঞাময়" শব্দটি সঠিক ভাবে প্রযোজ্য হয়েছে কারণ এই সূরার বিষয়বস্তুতে সেই সব মহামূর্খদের আলোচনা করা হয়েছে যারা আল্লাহ্ ও তাঁর নিদর্শনকে প্রত্যাখান করে। অপরপক্ষে ৪০ নং সূরাটি মানুষের ব্যক্তিগত গুণাবলী ও ঈমানের উপরে গুরুত্ব আরোপ করে।
০৩। যারা ঈমান এনেছে নিশ্চয়ই তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে নিদর্শন সমূহ রয়েছে ৪৭৩৭।
৪৭৩৭। সূরা [ ২ : ১৬৪ ] আয়াতের বর্ণনায় আল্লাহ্র মাহত্ব্যের যে ছবি আকাঁ হয়েছে তারই দুই একটির পুণরাবৃত্তি করা হয়েছে এই সূরাতে তবে এর প্রেক্ষাপট আলাদা। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে বক্তব্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে , এবং এই তিনটি ভাগ তিনটি আয়াতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ১) [ ৪৫ : ৩ ] আয়াতে আল্লাহ্র যে সব নিদর্শনের উল্লেখ করা হয়েছে তা মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে , তবে তা অনুভব করতে হয় আত্মার মাঝে, যার জন্য প্রয়োজন বিশ্বাসের বা ঈমানের। এগুলিকে বলা হয়েছে মোমেন বান্দাদের জন্য নিদর্শন সমূহ যা তাদের ঈমানের ভিত্তিকে আরও মজবুত করে। অন্য দুটির জন্য দেখুন পরবর্তী টিকা দুটি।
০৪। এবং তোমাদের সৃষ্টিতে ও জীব জন্তুর [ পৃথিবীর ] চারিদিকে ছড়িয়ে থাকার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী ৪৭৩৮।
৪৭৩৮। ২) এবারে যে নিদর্শনের উল্লেখ করা হয়েছে তা মানুষের সৃষ্টি ও তার প্রকৃতিদত্ত ক্ষমতার মাঝে নিহিত। আরও নিহিত আছে বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের মাঝে। অর্থাৎ প্রাণী জগত ও উদ্ভিদ জগতের সৃষ্টি কৌশলের মাঝে আল্লাহ্র নিদর্শন বর্তমান। এই সব নিদর্শনসমূহকে আত্মার মাঝে মানুষ অনুভব করতে সক্ষম বিজ্ঞানের জ্ঞানের মাধ্যমে। বিশ্ব প্রকৃতিতে যে সব প্রাকৃতিক আইন সবই আল্লাহ্র ক্ষমতার প্রকাশ বা আল্লাহ্র নিদর্শন। প্রকৃতির এই জ্ঞানই হচ্ছে 'বিজ্ঞান' বা ' বিশেষ জ্ঞান '। এই বিশেষ জ্ঞান মোমেন বান্দাদের ঈমানকে আরও নিশ্চিত করে। এই জ্ঞান 'নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য"। কারণ অবিশ্বাসীদের এই জ্ঞান আরও কাফেরে পরিণত করে।
০৫। এবং রাত্রি ও দিনের পরিবর্তনে ৪৭৩৯ , এবং আকাশ থেকে আল্লাহ্ যে জীবনোপকরণ প্রেরণ করেন ৪৭৪০, এবং তার দ্বারা মৃত ধরণীকে পুণর্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।
৪৭৩৯। ৩) এই আয়াতে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহকে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রাকৃতিক শক্তির অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। এসব প্রাকৃতিক শক্তি বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে , নিয়ন্ত্রিত করে - আমাদের জীবনের সাথে এ সব প্রাকৃতিক শক্তি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যারা " চিন্তাশীল ও জ্ঞানী সম্প্রদায় " তারাই পারে এসব পর্যবেক্ষণের দ্বারা আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যক্ষ করতে ও স্থির সিদ্ধান্তে উপণীত হতে।
৪৭৪০। বৃষ্টি বা বারি হচ্ছে "আকাশ থেকে" জীবনোপকরণের প্রতীক। বৃষ্টির ফলে ফসল উৎপন্ন হয়, উৎপন্ন ফসল রিযিক, তাই বৃষ্টির জন্য রিযিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বৃষ্টি শুষ্ক মাটিকে সিক্ত করে মাটিতে জীবনের সঞ্চার করে। ফলে মাটি শস্য - শ্যামল রূপ ধারণ করে ; শুষ্ক ঊষর মাটিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। ঠিক সেরকমই আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের শক্তি মৃত আত্মার মাঝে প্রাণের সঞ্চার করার ক্ষমতা রাখে। এখানে বৃষ্টিকে, আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের ক্ষমতাকে বুঝানোর জন্য প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুরূপ প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছে প্রকৃতির বিভিন্ন পরিবর্তনকে। দিবা ও রাত্রির পরিবর্তন ,বায়ু প্রবাহের পরিবর্তন , প্রকৃতির এই অত্যাচার্য ঘটনাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে উপমা হিসেবে আল্লাহ্র ক্ষমতাকে বুঝানোর জন্য। রাত্রি হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পরিবর্তন , রাত হচ্ছে অন্ধকার , দিন হচ্ছে উজ্জ্বল আলো। রাত্রিকে বা অন্ধকারকে তুলনা করা হয়েছে আধ্যাত্মিক অজ্ঞতার সাথে। অন্ধকার আধ্যাত্মিক অজ্ঞতার প্রতীক। দিন বা আলোকে তুলনা করা হয়েছে আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞায়তার প্রতীক হিসেবে, অথবা রাত্রি হচ্ছে বিশ্রামের জন্য। রাত্রিকে আধ্যাত্মিক নিষ্কৃয়তার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ; অপর পক্ষে দিন হচ্ছে কর্মব্যস্ততার জন্য। সেভাবে দিন বা দিনের আলোকে আধ্যাত্মিক কর্মচাঞ্চল্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বায়ুর পরিবর্তনের সাথে পৃথিবীতে ঋতুর পরিবর্তন ঘটে ফলে পৃথিবীর বিরাট প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটে যার ফলে বিভিন্ন ঋতুতে পৃথিবী বিভিন্ন ফল ও ফসলে ভরে ওঠে। এভাবেই আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ মানুষের আত্মার মাঝে কল্যাণকর , মঙ্গলজনক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। প্রাকৃতিক এই ঘটনাবলীকে উপমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্রতীক হিসেবে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের ক্ষমতাকে উপলব্ধি করার জন্য। আল্লাহ্র রহমতে মানব আত্মা হয় ধন্য ,তখন আত্মার বিকাশ ঐ সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল ভূমির ন্যায় ধারণ করে, আল্লাহ্র নেয়ামত সীমাহীন তিনি সীমাহীন নেয়ামতের আঁধার।
০৬। এগুলি হচ্ছে আল্লাহ্র আয়াত , যা আমি[আল্লাহ্ ] তোমার নিকট সত্যসহ তিলাওয়াত করছি। এর পরেও আল্লাহ্ ও তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা কোন ব্যাখ্যাতে বিশ্বাস করবে ? ৪৭৪১
৪৭৪১। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের বাণী , প্রকৃতির মাঝে তাঁর নিদর্শন সমূহ যদি কারও হৃদয় ও মনে সাড়া না জাগায় ; যদি তা তাদের মনে বিশ্বাস উৎপন্ন না করে; যদি তা তাদের প্রত্যয় উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট না হয়, তবে তারা আর কোন ধরণের বর্ণনা গ্রহণ করবে ?
০৭। প্রত্যেক পাপী ও মিথ্যার বেসাতীদের জন্য দুভার্গ্য ৪৭৪২।
৪৭৪২। উপরের টিকাতে যাদের বর্ণনা করা হয়েছে তারা আধ্যাত্মিক দিক থেকে মৃত। এরা প্রকৃতপক্ষেই হতভাগ্য। কারণ এরা কখনও সত্যের আলো হৃদয়ের মাঝে উপলব্ধি করতে পারবে না।এদের প্রধান অবলম্বন হবে মিথ্যা, - এই মিথ্যা তাদের সমগ্র সত্ত্বার মাঝে পরিব্যপ্ত হবে। তাদের কর্মে , চিন্তায় , চরিত্রে, উপাসনায়, আল্লাহ্র প্রতি মানসিকতায়। তাদের মানসিকতাকে এই আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। এরা আল্লাহ্র আয়াতসমূহের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে ,পরিহাস করে থাকে ; এবং ভান করে যে সে এসবের উর্দ্ধে অবস্থান করে জ্ঞানে ও গরিমায়। এরাই হচ্ছে তারা যারা কান থাকতেও আল্লাহ্র বাণী শুনতে পাবে না বা হৃদয়ে বধিরএবং চোখ থাকতেও আল্লাহ্র নিদর্শনাবলী দেখতে পাবে না বা আত্মায় অন্ধ। কোরাণের আয়াত দ্বারা এরা কোনওরূপ লাভবান হবে না। এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। আধ্যাত্মিক বধিরতা ও অন্ধত্ব অন্য কারও ক্ষতি করবে না ক্ষতি তার নিজেরই।
০৮। সে আল্লাহ্র আয়াতসমূহের তেলাওয়াত শোনে , অথচ ঔদ্ধত্যের সাথে অটল থাকে, যেনো সে উহা শোনে নাই। তাহলে তুমি তার নিকট ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা দাও।
০৯। এবং যখন সে আমার আয়াতসমূহের কিছু অবগত হয়, সে তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি ৪৭৪৩।
০৯। এবং যখন সে আমার আয়াতসমূহের কিছু অবগত হয়, সে তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি ৪৭৪৩।
৪৭৪৩। লক্ষ করুন আয়াত [ ৮ -১১ ] নং পর্যন্ত পাপের শাস্তি বর্ণনা প্রসঙ্গে বিভিন্ন অলংকারময় ভাষার প্রয়োগ করা হয়েছে - যা কৃত পাপের গুরুত্ব অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১) ৮ নং আয়াতেবলা হয়েছে, যে ঔদ্ধত্য ও অহংকারের সাথে আল্লাহ্র আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তার অহংকারের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তি।
২) যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে তাদের জন্য আছে " লাঞ্ছনাদায়ক " শাস্তি। সে নিজেকে হাস্যষ্করভাবে বোকা প্রমাণিত করে থাকে।
৩) নম্বর শাস্তির বর্ণনা আছে নিম্নোক্ত আয়াত সমূহে।
১০। এদের সামনে রয়েছে জাহান্নাম , তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের কোন উপকারে আসবে না , তারা আল্লাহ্র পরিবর্তে যে অভিভাবক গ্রহণ করেছে তারাও [ কাজে আসবে ] না। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি ৪৭৪৪।
৪৭৪৪। (৩) যারা অবিশ্বাসী ও পাপী তারা পৃথিবীর জীবনটাকেই সর্বোচ্চ চাওয়া ও পাওয়ার বস্তু বলে গণ্য করে। কারণ তাদের নিকট মৃত্যুর পরে আর কোনও জীবন নাই। সুতারাং এই জীবনের যা কিছু কাম্য বস্তু তারা তার পিছনেই ছুটে বেড়ায় জীবন ভরে এবং সম্মান , প্রভাব-প্রতিপত্তি , ধন-সম্পদ ইত্যাদি পার্থিব ভোগ্য বস্তু সম্ভারের পাহাড় গড়ে তোলে এবং মনে করে এগুলি তাকে ইহকাল ও পরকাল উভয় কালেই রক্ষা করতে পারবে। বিশ্বাস যখন প্রকৃত না হয়, তখন কার্য ও কার্যকরণ সিদ্ধান্ত ভুল হয়। তাদের এ সব পার্থিব বস্তু সামগ্রী পরলোকে কোনও কাজেই আসবে না। তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি। আল্লাহ্র পরিবর্তে তারা পৃথিবীতে পার্থিব বস্তু পাওয়ার জন্য সাধনা করেছে , যা তাদের কাছে মনে হতো মানব জীবনের একমাত্র কাম্য, যা ছিলো তাদের উপাসনার বিষয় এবং যাকে তারা মনে করতো যে, তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে, একমাত্র অভিভাবক , পরলোকে তাদের সে সব উপাস্য ও অভিভাবক কোনও কাজেইআসবে না।
১১। ইহাই [ এই কুর-আন ] সত্য পথ প্রদর্শক। যারা তাদের প্রভুর আয়াত সমূহকে প্রত্যাখান করে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ যাতনাময় শাস্তি ৪৭৪৫।
৪৭৪৫।(৪) যারা অবজ্ঞাভরে কোরাণের প্রদর্শিত সৎপথকে পরিহার করে এবং রসুলের সাবধান বাণীকে উপেক্ষা করে তাদের জন্য রয়েছে জঘন্য বা মর্মন্তুদ শাস্তি। কারণ সে পৃথিবীতেই সকলের নিকট থেকে ঘৃণা কুড়িয়েছে - তার পাপ কার্যের দরুণ। সুতারাং তার জন্য আছে অবর্ণনীয় ঘৃণা মিশ্রিত আতঙ্কজনিত শাস্তি।
৪৭৪৫।(৪) যারা অবজ্ঞাভরে কোরাণের প্রদর্শিত সৎপথকে পরিহার করে এবং রসুলের সাবধান বাণীকে উপেক্ষা করে তাদের জন্য রয়েছে জঘন্য বা মর্মন্তুদ শাস্তি। কারণ সে পৃথিবীতেই সকলের নিকট থেকে ঘৃণা কুড়িয়েছে - তার পাপ কার্যের দরুণ। সুতারাং তার জন্য আছে অবর্ণনীয় ঘৃণা মিশ্রিত আতঙ্কজনিত শাস্তি।
রুকু - ২
৪৭৪৬।দেখুন [ ১৬ : ১৪ ] আয়াত ও টিকা ২০৩৭। পৃথিবীর ১ ভাগ স্থলকে৩ ভাগ সমুদ্র বেষ্টন করে আছে। পৃথিবীর জীবন ধারার জন্য সমুদ্রের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশাল জলরাশি লবণাক্ত। এর লবণাক্ততা আল্লাহ্র করুণা। কারণ পৃথিবীর আবর্জনাসমূহ যা নদীবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয় তা এবং অন্যান্য আবর্জনা সমূহ সর্বদা সমুদ্রের নোনা পানিতে পরিশুদ্ধ হয়ে পৃথিবীকে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে সক্ষম হয়। সমুদ্রের বায়ুতে যে 'ওজোন' থাকে তা বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে থাকে- যার দরুণ সমুদ্র উপকূলের বাতাসে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়। প্রাচীন যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা , বর্তমান যুগের ন্যায় উন্নত ছিলো না। এক মহাদেশের মানুষ আর এক মহাদেশের সাথে যোগযোগ স্থাপন করতো নৌযানের মাধ্যমে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটতো প্রধানতঃ সমুদ্র পথে। সমুদ্রের অগাধ জলরাশি মানব জাতিকে একত্রে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে। সে কারণেই সমুদ্রতীরবর্তী শহর গুলিতে ব্যবসা বাণিজ্য ও কর্মব্যস্ততা স্থলের অভ্যন্তরের শহর গুলি থেকে বেশী। এভাবেই ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে সমুদ্র উপকূলবর্তী শহরগুলি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গমস্থলে পরিণত হয়। সমুদ্র মানুষকে আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে সাহায্য করে। এই অনুগ্রহ শুধুমাত্র ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার লাভই নয় , ধর্ম , সংস্কৃতি ও বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের প্রসার লাভ ঘটে। এগুলিও আল্লাহ্র অনুগ্রহ - যা আল্লাহ্র কল্যাণময় বা মঙ্গলময় পরিকল্পনার অংশ। আমাদের এ জন্য কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
৪৭৪৭। দেখুন [ ৩১ : ২০ ] আয়াত ও টিকা ৩৬০৫। মানুষকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে, আল্লাহ্ মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য , কল্যাণের জন্য আকাশ, বাতাস, সমুদ্র , এক কথায় সারা বিশ্ব প্রকৃতিকে মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। মানুষ বিশ্ব প্রকৃতির উপরে প্রভুত্ব লাভ করার ক্ষমতা রাখে। সে ক্ষমতা স্রষ্টা তাকে দান করেছেন তার মেধা , সৃজন ক্ষমতা ও মানসিক দক্ষতার মাধ্যমে। পৃথিবীর অন্য কোনও প্রাণীকে তা দান করা হয় নাই।মানুষের কর্মকুশলতা ও কৃতিত্বে অনেক সময়েই মানুষ স্রষ্টার অনুগ্রহের কথা ভুলে যেয়ে নিজস্ব একক কৃতিত্বে স্ফীত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষের ভোলা উচিত নয় যে প্রকৃতিকে জয় করার এই যে জ্ঞান ও ক্ষমতা যা 'বিজ্ঞান' নামে পরিচিত তা আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ মানুষের জন্য। যে বিষয়টি চিন্তা করে সেই তা উপলব্ধি করতে সক্ষম।
৪৭৪৮। " আল্লাহ্র দিবসগুলির " উল্লেখ আছে [ ১৪ : ৫ ] আয়াতে।
৪৭৪৯। এখানে 'ব্যক্তি' বলতে একই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মানব গোষ্ঠিকে বোঝানো হয়েছে , যেমন : পূণ্যাত্মা মানব গোষ্ঠির বিপরীতে পাপীদের দল। নিপীড়িত জনগোষ্ঠির বিপরীতে অত্যাচারীর দল ইত্যাদি।
৪৭৫০। আল্লাহ্ তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও পরিকল্পনা ও ন্যায়নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ভালো কাজ ও মন্দ কাজের প্রতিদান ও প্রতিফল দান করবেন।
৪৭৫১। পৃথিবীতে যে সৎ কর্ম করে, সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত। মানুষের সৎকর্মে তার প্রয়োজন নাই। যে সৎকর্ম করে তার দ্বারা সে তার নিজের আত্মাকেই পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের যোগ্যতা অর্জন করে। যে মন্দ কাজ করে তার প্রতিফল সে লাভ করে ইহকালে এবং পরকালেও। সকলেরই শেষ গন্তব্যস্থল আল্লাহ্র নিকট।
৪৭৫২। এই আয়াতে যে যুক্তির উপস্থাপন করা হয়েছে তা [ ৪৪ : ৩২- ৩৩ ] আয়াতের বক্তব্যের অনুরূপ , তবে এখানে বিশেষ উদাহরণের উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত মুসার মাধ্যমে ইসরাঈলীরা আল্লাহ্র কিতাব বা প্রত্যাদেশ লাভ করে। তাদের আল্লাহ্ পৃথিবীর বুকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দান করেন। দাউদ নবী ও হযরত সুলাইমানের বিশাল রাজত্বই হচ্ছে এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। এ ব্যতীত আল্লাহ্ তাদের মাঝে বহু নবী ও রসুল প্রেরণ করেন , যেমন ইসাঈয়া ,জেরেমীয়া ইত্যাদি।
৪৭৫৩। 'উত্তম জীবনোপকরণ"। মুসার আইন - খাদ্য সামগ্রীর উপরে বিধি নিষেধ আরোপ করে। অপবিত্র ও অপরিষ্কারকে পরিহার করতে বলা হয়। এবং যা কিছু পবিত্র ও সম্মানজনক শুধু তাই গ্রহণ করতে বলা হয়। আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের সম্পদে, প্রাচুর্যে পৃথিবীর অন্যান্য জাতিদের উর্দ্ধে স্থান দিয়েছিলেন। দাউদ নবী ও সুলাইমানের রাজত্বকালে তারা ছিলো সম্পদে ক্ষমতায় সমকালীন বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ। উপরন্তু আল্লাহ্ তাদের মাঝে বহু নবী ও রসুল প্রেরণ করে এ কথাই প্রমাণ করেছেন যে তারা বিশ্ব জগতের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলো। আল্লাহ্র বাণী ধারণের ক্ষমতা লাভ করার অর্থ আল্লাহ্র মনোনয়ন লাভ করা।
৪৭৫৪। দেখুন [ ১০ : ৯৩ ]। আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা অকৃপণ হস্তে ঢেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইসরাঈলীদের, তারা তাদের কর্মফলের দরুণ আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের মধ্যে যে মতদ্বৈততা ঘটে, যার কোন যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নাই। তার একটাই কারণ তা হচ্ছে পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ। হিংসা , পার্থিব ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা থেকে এই বিদ্বেষের উৎপত্তি। ব্যক্তি স্বার্থ -ই হচ্ছে এ সবের মূল কারণ যার ফলে পরস্পরের প্রতি ঈর্ষা দ্বেষের সৃষ্টি হয়, এবং মতবিরোধ ঘটে। এ সবের ফলে তারা ধর্মের মূল বিষয় থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে যা আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সমতুল্য। পরের আয়াতে রাসুলকে বলা হয়েছে যে, ইসরাঈলীরা যে কারণে মতভেদ করেছিলো আরবের ইসরাঈলীরা সে কারণেই মতভেদ করছে। অর্থাৎ দুনিয়া প্রীতি ও পারস্পরিক বিদ্বেষবশতঃ ইসরাঈলী ব্যতীত অন্য কোনও সম্প্রদায়ের লোকের নিকট রাসুলের আগমনকে তারা ঈর্ষার চোখে দেখে।
৪৭৫৫। দেখুন [ ২ : ৯০ ] আয়াত এবং এর টিকা।
৪৭৫৬। "Shariat" বা " দ্বীনের বিশেষ বিধান"। ইসলাম ধর্ম, বিশ্বাস ও অনুশীলন এই দুই ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত। কিছু মৌলিক বিশ্বাস ও নৈতিক নীতিমালা এবং কর্মজীবন সম্পর্কিত বিধিবিধান রয়েছে ইসলামে। এই মৌলিক বিশ্বাস ও নৈতিক নীতিমালা প্রত্যেক নবীর উম্মতের জন্যই এক ও অভিন্ন। এতে কোনরূপ পরিবর্তন , পরিবর্ধন সম্ভবপর নয়। কিন্তু কর্মগত বিধান বিভিন্ন পয়গম্বরের শরীয়তে যুগের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে এস কর্মগত বিধানকেই দ্বীনের বিশেষ বিধানবলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এই বিশেষ বিধানের অধিকাংশ অবতীর্ণ হয় মদিনায় ; যা এই মক্কার সূরার অবতীর্ণ হওয়ার অনেক পরে ঘটে।
৪৭৫৭। যদিও এই আয়াতটি রাসুলুল্লাহকে [ সা ] সম্বোধন করে অবতীর্ণ হয়েছে , কিন্তু এর আবেদন সার্বজনীন। আল্লাহ্ রাসুলকে [ সা ] বলেছেন যে, অজ্ঞ ও কলহপ্রিয় লোকেরা কখনও আল্লাহ্র রাস্তায় কাজ করতেপারবে না। এ কথা রাসুলের সময়ে যেরূপ প্রযোজ্য ছিলো অদ্যবধিও তা সমভাবে প্রযোজ্য আছে এবং ভবিষ্যতেও তা প্রযোজ্য থাকবে। অজ্ঞ অর্থাৎ আল্লাহ্র জ্ঞান সম্বন্ধে অজ্ঞ ও কলহপ্রিয় অর্থাৎ পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষবশতঃ যারা বিরোধিতা করে। এ সব লোকের অন্তর ঈর্ষাতে পূর্ণ থাকে। এই ঈর্ষাপূর্ণ হৃদয় বিদ্বেষের সুতিকাগার। তাদের মতবিরোধ তাদের ঈর্ষা ও বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সুতারাং যাদের হৃদয় হিংসা ও দ্বেষে পরিপূর্ণ তারা কাউকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না। যদি কেউ এদের সাহায্য কামনা করে,তবে তারা সেখানে মতবিরোধের সুত্রপাত করবে। যত তাদের প্রকৃত সত্য সম্বন্ধে অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে, তত তাদের মাঝে মতবিরোধ বৃদ্ধি পাবে এবং তারা নিজেদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরূপে চিত্রিত করে আত্মপ্রসাদ লাভ করবে। মন্দ সকল সময়ে মন্দকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবে। কারণ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তা প্রয়োজন। তারা পরস্পরের বন্ধু। অপরপক্ষে মোমেন ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীল। সে একমাত্র আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করে থাকে। আল্লাহ্-ই যাদের রক্ষাকর্তা ও সাহায্যকারী বন্ধু। সুতারাং আল্লাহ্র কাজে অর্থাৎ সৎ কাজে ঈর্ষাকাতর ব্যক্তিরা সর্বদা অবদান রাখতে অক্ষম হবে এ কথা চিরসত্য। তাদের এ বৈশিষ্ট্যই এই আয়াতের মাধ্যমে সার্বজনীন চিরসত্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বনী ইসরাঈলীদের উদাহরণের মাধ্যমে।
৪৭৫৮। কোরাণ হচ্ছে আল্লাহ্র বাণীর শ্বাসত সত্যের দলিল। যাদের অন্তরে আল্লাহ্র অস্তিত্বের দৃঢ় বিশ্বাস বিদ্যমান তারাই আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে সক্ষম। এই কোরাণ তাদের জন্য পথ নির্দেশ ও রহমত স্বরূপ।
৪৭৫৯। এই আয়াতিটিতে তিনটি ভাবের প্রকাশ ঘটেছে ;
১) মন্দ ও পাপী এবং মোমেন বান্দারা দুইশ্রেণীর লোক। যদিও বাহিরের আবরণে তারা সকলেই মনুষ্য শ্রেণীভূক্ত; কিন্তু আত্মিক দিক থেকে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এই দুই শ্রেণীর লোক ইহকালে ও পরলোকে কখনও আল্লাহ্র চোখে সমান নয়। মোমেন বান্দারা ইহলোকে আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে ধন্য ও তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহে সঠিক পথ নির্দ্দেশ লাভ করে থাকে, এবং পরলোকেও তারা আল্লাহ্র কৃপা লাভে ধন্য হয়। অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্র করুণাকে অর্থাৎ আল্লাহ্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে শাস্তি ও ঘৃণা লাভ করে থাকে।
২) ইহলোক বা পরলোকের কোন জীবনেই এই দুই শ্রেণীর লোক একরূপ নয়। মন্দ ও পাপীরা যদি ইহলোকে পার্থিব প্রাচুর্য্য , সম্পদে ও ক্ষমতায় সফলতা লাভ করে , তবে পরলোকে তারা দণ্ডনীয় অপরাধী বলে পরিগণিত হবে। অপরপক্ষে মোমেন বান্দারা যদি ইহলোকে দুঃখ-কষ্টে জীবন অতিবাহিত করে , কিন্তু তা সত্বেও তাদের ঈমানের শক্তি সমুন্নত রাখে, পরলোকে তাদের জন্য আছে শান্তি ও দুঃখ-যন্ত্রনা মুক্ত জীবন।
৩) মোমেন বান্দা ও পাপীদের মাঝে ইহলোকের জীবনের সংগাতে কত পার্থক্য। মোমেন বান্দার পার্থিব জীবন হচ্ছে সাধনার মাধ্যমে , পূণ্যময় জীবন যাপনের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি লাভের প্রচেষ্টার জীবন। যে জীবন গতিময় প্রতিদিন যা ধীরে ধীরে উর্দ্ধলোকে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের যোগ্যতা অর্জন করে। অপরপক্ষে পাপী লোকের জীবন আবর্তিত হয় পার্থিব সম্পদ,ক্ষমতা -প্রভাব প্রতিপত্তিকে কেন্দ্র করে - জীবন থাকা সত্বেও যে আত্মা মৃত। শারীরিক মৃত্যু মোমেন বান্দাদের অনন্ত শান্তির রাজ্যে নিয়ে যাবে, অপর পক্ষে শারীরিক মৃত্যু পাপীদের সীমাহীন যন্ত্রনার মাঝে নিক্ষিপ্ত করবে।
মোমেন বান্দার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে , যারা আল্লাহ্তে বিশ্বাসী ও আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য সৎ কাজ অর্থাৎ সমাজের মঙ্গলের জন্য কাজ করে তারাই মোমেন।
১২। আল্লাহ্-ই সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন ; ৪৭৪৬ ; যেনো তাঁর আদেশে নৌযান সমূহ উহার মধ্যে চলাচল করতে পারে ও তোমরা[ সমুদ্র বাণিজ্য দ্বারা ] তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার , এবং তোমরা যেনো তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পার।
৪৭৪৬।দেখুন [ ১৬ : ১৪ ] আয়াত ও টিকা ২০৩৭। পৃথিবীর ১ ভাগ স্থলকে৩ ভাগ সমুদ্র বেষ্টন করে আছে। পৃথিবীর জীবন ধারার জন্য সমুদ্রের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশাল জলরাশি লবণাক্ত। এর লবণাক্ততা আল্লাহ্র করুণা। কারণ পৃথিবীর আবর্জনাসমূহ যা নদীবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয় তা এবং অন্যান্য আবর্জনা সমূহ সর্বদা সমুদ্রের নোনা পানিতে পরিশুদ্ধ হয়ে পৃথিবীকে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে সক্ষম হয়। সমুদ্রের বায়ুতে যে 'ওজোন' থাকে তা বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে থাকে- যার দরুণ সমুদ্র উপকূলের বাতাসে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়। প্রাচীন যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা , বর্তমান যুগের ন্যায় উন্নত ছিলো না। এক মহাদেশের মানুষ আর এক মহাদেশের সাথে যোগযোগ স্থাপন করতো নৌযানের মাধ্যমে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটতো প্রধানতঃ সমুদ্র পথে। সমুদ্রের অগাধ জলরাশি মানব জাতিকে একত্রে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে। সে কারণেই সমুদ্রতীরবর্তী শহর গুলিতে ব্যবসা বাণিজ্য ও কর্মব্যস্ততা স্থলের অভ্যন্তরের শহর গুলি থেকে বেশী। এভাবেই ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে সমুদ্র উপকূলবর্তী শহরগুলি বিভিন্ন মানুষের সঙ্গমস্থলে পরিণত হয়। সমুদ্র মানুষকে আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে সাহায্য করে। এই অনুগ্রহ শুধুমাত্র ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার লাভই নয় , ধর্ম , সংস্কৃতি ও বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের প্রসার লাভ ঘটে। এগুলিও আল্লাহ্র অনুগ্রহ - যা আল্লাহ্র কল্যাণময় বা মঙ্গলময় পরিকল্পনার অংশ। আমাদের এ জন্য কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
১৩। আকাশমন্ডলীতে , ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে , তিনি সমুদয় তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই ইহাতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে। ৪৭৪৭
৪৭৪৭। দেখুন [ ৩১ : ২০ ] আয়াত ও টিকা ৩৬০৫। মানুষকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করে, আল্লাহ্ মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য , কল্যাণের জন্য আকাশ, বাতাস, সমুদ্র , এক কথায় সারা বিশ্ব প্রকৃতিকে মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। মানুষ বিশ্ব প্রকৃতির উপরে প্রভুত্ব লাভ করার ক্ষমতা রাখে। সে ক্ষমতা স্রষ্টা তাকে দান করেছেন তার মেধা , সৃজন ক্ষমতা ও মানসিক দক্ষতার মাধ্যমে। পৃথিবীর অন্য কোনও প্রাণীকে তা দান করা হয় নাই।মানুষের কর্মকুশলতা ও কৃতিত্বে অনেক সময়েই মানুষ স্রষ্টার অনুগ্রহের কথা ভুলে যেয়ে নিজস্ব একক কৃতিত্বে স্ফীত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষের ভোলা উচিত নয় যে প্রকৃতিকে জয় করার এই যে জ্ঞান ও ক্ষমতা যা 'বিজ্ঞান' নামে পরিচিত তা আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ মানুষের জন্য। যে বিষয়টি চিন্তা করে সেই তা উপলব্ধি করতে সক্ষম।
১৪। মুমিন বান্দাদের বল, যারা আল্লাহ্র দিনের [ আখিরাতের ] কোন আশা রাখে না , তাদের প্রতি যেনো [ প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ] ক্ষমা করে দেয় ৪৭৪৮। কারণ তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অর্জিত [ ভালো ও মন্দ ] কাজের জন্য প্রতিদান দেবেন ৪৭৪৯ , ৪৭৫০।
৪৭৪৮। " আল্লাহ্র দিবসগুলির " উল্লেখ আছে [ ১৪ : ৫ ] আয়াতে।
৪৭৪৯। এখানে 'ব্যক্তি' বলতে একই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মানব গোষ্ঠিকে বোঝানো হয়েছে , যেমন : পূণ্যাত্মা মানব গোষ্ঠির বিপরীতে পাপীদের দল। নিপীড়িত জনগোষ্ঠির বিপরীতে অত্যাচারীর দল ইত্যাদি।
৪৭৫০। আল্লাহ্ তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও পরিকল্পনা ও ন্যায়নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ভালো কাজ ও মন্দ কাজের প্রতিদান ও প্রতিফল দান করবেন।
১৫। কেহ যদি পূণ্য কাজ করে ৪৭৫১ , তবে তা তার আত্মার কল্যাণকে নিশ্চিত করে। যদি কেহ মন্দ কাজ করে , তা [ তার আত্মার কল্যাণের বিরুদ্ধে] করে। সব শেষে তোমরা [সকলে ] তোমাদের প্রভুর নিকট ফিরে আসবে।
৪৭৫১। পৃথিবীতে যে সৎ কর্ম করে, সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত। মানুষের সৎকর্মে তার প্রয়োজন নাই। যে সৎকর্ম করে তার দ্বারা সে তার নিজের আত্মাকেই পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের যোগ্যতা অর্জন করে। যে মন্দ কাজ করে তার প্রতিফল সে লাভ করে ইহকালে এবং পরকালেও। সকলেরই শেষ গন্তব্যস্থল আল্লাহ্র নিকট।
১৬। পূর্বে আমি তো বনী ইসরাঈলীকে কিতাব , কর্তৃত্ব ও নবুয়ত দান করেছিলাম ৪৭৫২। আমি তাদের উত্তম ও পবিত্র জীবনোপকরণ দান করেছিলাম ৪৭৫৩। এবংআমি তাদের সকল জাতির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম।
৪৭৫২। এই আয়াতে যে যুক্তির উপস্থাপন করা হয়েছে তা [ ৪৪ : ৩২- ৩৩ ] আয়াতের বক্তব্যের অনুরূপ , তবে এখানে বিশেষ উদাহরণের উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত মুসার মাধ্যমে ইসরাঈলীরা আল্লাহ্র কিতাব বা প্রত্যাদেশ লাভ করে। তাদের আল্লাহ্ পৃথিবীর বুকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দান করেন। দাউদ নবী ও হযরত সুলাইমানের বিশাল রাজত্বই হচ্ছে এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। এ ব্যতীত আল্লাহ্ তাদের মাঝে বহু নবী ও রসুল প্রেরণ করেন , যেমন ইসাঈয়া ,জেরেমীয়া ইত্যাদি।
৪৭৫৩। 'উত্তম জীবনোপকরণ"। মুসার আইন - খাদ্য সামগ্রীর উপরে বিধি নিষেধ আরোপ করে। অপবিত্র ও অপরিষ্কারকে পরিহার করতে বলা হয়। এবং যা কিছু পবিত্র ও সম্মানজনক শুধু তাই গ্রহণ করতে বলা হয়। আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের সম্পদে, প্রাচুর্যে পৃথিবীর অন্যান্য জাতিদের উর্দ্ধে স্থান দিয়েছিলেন। দাউদ নবী ও সুলাইমানের রাজত্বকালে তারা ছিলো সম্পদে ক্ষমতায় সমকালীন বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ। উপরন্তু আল্লাহ্ তাদের মাঝে বহু নবী ও রসুল প্রেরণ করে এ কথাই প্রমাণ করেছেন যে তারা বিশ্ব জগতের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলো। আল্লাহ্র বাণী ধারণের ক্ষমতা লাভ করার অর্থ আল্লাহ্র মনোনয়ন লাভ করা।
১৭। এবং আমি তাদের[সত্য ধর্মের ] বিষয়ে স্পষ্ট দলিল দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের জ্ঞান দান করার পরেও তারা উদ্ধত হিংসায় পরস্পর মতভেদে লিপ্ত হলো ,৪৭৫৪, ৪৭৫৫। ওরা যে বিষয়ে মতভেদ করতো,তোমার প্রভু শেষ বিচারের দিনে তাদের মধ্যে সে বিষয়ে ফয়সালা করে দেবেন।
৪৭৫৪। দেখুন [ ১০ : ৯৩ ]। আল্লাহ্ ইসরাঈলীদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা অকৃপণ হস্তে ঢেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইসরাঈলীদের, তারা তাদের কর্মফলের দরুণ আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের মধ্যে যে মতদ্বৈততা ঘটে, যার কোন যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নাই। তার একটাই কারণ তা হচ্ছে পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ। হিংসা , পার্থিব ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা থেকে এই বিদ্বেষের উৎপত্তি। ব্যক্তি স্বার্থ -ই হচ্ছে এ সবের মূল কারণ যার ফলে পরস্পরের প্রতি ঈর্ষা দ্বেষের সৃষ্টি হয়, এবং মতবিরোধ ঘটে। এ সবের ফলে তারা ধর্মের মূল বিষয় থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে যা আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সমতুল্য। পরের আয়াতে রাসুলকে বলা হয়েছে যে, ইসরাঈলীরা যে কারণে মতভেদ করেছিলো আরবের ইসরাঈলীরা সে কারণেই মতভেদ করছে। অর্থাৎ দুনিয়া প্রীতি ও পারস্পরিক বিদ্বেষবশতঃ ইসরাঈলী ব্যতীত অন্য কোনও সম্প্রদায়ের লোকের নিকট রাসুলের আগমনকে তারা ঈর্ষার চোখে দেখে।
৪৭৫৫। দেখুন [ ২ : ৯০ ] আয়াত এবং এর টিকা।
১৮। অতঃপর আমি তোমাকে [ সঠিক ] ধর্মের পথে স্থাপন করেছি ৪৭৫৬। সুতারাং তুমি সেই [ পথ ]
অনুসরণ কর, এবং যারা অজ্ঞ তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না।৪৭৫৬। "Shariat" বা " দ্বীনের বিশেষ বিধান"। ইসলাম ধর্ম, বিশ্বাস ও অনুশীলন এই দুই ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত। কিছু মৌলিক বিশ্বাস ও নৈতিক নীতিমালা এবং কর্মজীবন সম্পর্কিত বিধিবিধান রয়েছে ইসলামে। এই মৌলিক বিশ্বাস ও নৈতিক নীতিমালা প্রত্যেক নবীর উম্মতের জন্যই এক ও অভিন্ন। এতে কোনরূপ পরিবর্তন , পরিবর্ধন সম্ভবপর নয়। কিন্তু কর্মগত বিধান বিভিন্ন পয়গম্বরের শরীয়তে যুগের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে এস কর্মগত বিধানকেই দ্বীনের বিশেষ বিধানবলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এই বিশেষ বিধানের অধিকাংশ অবতীর্ণ হয় মদিনায় ; যা এই মক্কার সূরার অবতীর্ণ হওয়ার অনেক পরে ঘটে।
১৯। আল্লাহ্র দৃষ্টিতে তারা তোমার কোন কাজেই আসবে না ৪৭৫৭। কেবলমাত্র পাপীরাই একে অপরের রক্ষাকারী [বন্ধু ]। কিন্তু আল্লাহ্ পূণ্যাত্মাদের রক্ষাকারী।
৪৭৫৭। যদিও এই আয়াতটি রাসুলুল্লাহকে [ সা ] সম্বোধন করে অবতীর্ণ হয়েছে , কিন্তু এর আবেদন সার্বজনীন। আল্লাহ্ রাসুলকে [ সা ] বলেছেন যে, অজ্ঞ ও কলহপ্রিয় লোকেরা কখনও আল্লাহ্র রাস্তায় কাজ করতেপারবে না। এ কথা রাসুলের সময়ে যেরূপ প্রযোজ্য ছিলো অদ্যবধিও তা সমভাবে প্রযোজ্য আছে এবং ভবিষ্যতেও তা প্রযোজ্য থাকবে। অজ্ঞ অর্থাৎ আল্লাহ্র জ্ঞান সম্বন্ধে অজ্ঞ ও কলহপ্রিয় অর্থাৎ পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষবশতঃ যারা বিরোধিতা করে। এ সব লোকের অন্তর ঈর্ষাতে পূর্ণ থাকে। এই ঈর্ষাপূর্ণ হৃদয় বিদ্বেষের সুতিকাগার। তাদের মতবিরোধ তাদের ঈর্ষা ও বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সুতারাং যাদের হৃদয় হিংসা ও দ্বেষে পরিপূর্ণ তারা কাউকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না। যদি কেউ এদের সাহায্য কামনা করে,তবে তারা সেখানে মতবিরোধের সুত্রপাত করবে। যত তাদের প্রকৃত সত্য সম্বন্ধে অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে, তত তাদের মাঝে মতবিরোধ বৃদ্ধি পাবে এবং তারা নিজেদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরূপে চিত্রিত করে আত্মপ্রসাদ লাভ করবে। মন্দ সকল সময়ে মন্দকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবে। কারণ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তা প্রয়োজন। তারা পরস্পরের বন্ধু। অপরপক্ষে মোমেন ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীল। সে একমাত্র আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করে থাকে। আল্লাহ্-ই যাদের রক্ষাকর্তা ও সাহায্যকারী বন্ধু। সুতারাং আল্লাহ্র কাজে অর্থাৎ সৎ কাজে ঈর্ষাকাতর ব্যক্তিরা সর্বদা অবদান রাখতে অক্ষম হবে এ কথা চিরসত্য। তাদের এ বৈশিষ্ট্যই এই আয়াতের মাধ্যমে সার্বজনীন চিরসত্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বনী ইসরাঈলীদের উদাহরণের মাধ্যমে।
২০।এই [ কুর-আন ] হচ্ছে মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট দলিল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য পথ নির্দ্দেশ ও দয়া ৪৭৫৮।
৪৭৫৮। কোরাণ হচ্ছে আল্লাহ্র বাণীর শ্বাসত সত্যের দলিল। যাদের অন্তরে আল্লাহ্র অস্তিত্বের দৃঢ় বিশ্বাস বিদ্যমান তারাই আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে সক্ষম। এই কোরাণ তাদের জন্য পথ নির্দেশ ও রহমত স্বরূপ।
২১। সে কি ! যারা দুষ্কৃতিকারী তারা কি মনে করে যে , আমি তাদের সেই সকল লোকের সমান মনে করবো যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করে ? ৪৭৫৯ তাদের উভয় দলের জীবন ও মরণ কি সমান হতে পারে ? কত জঘন্য তাদের বিচার।
৪৭৫৯। এই আয়াতিটিতে তিনটি ভাবের প্রকাশ ঘটেছে ;
১) মন্দ ও পাপী এবং মোমেন বান্দারা দুইশ্রেণীর লোক। যদিও বাহিরের আবরণে তারা সকলেই মনুষ্য শ্রেণীভূক্ত; কিন্তু আত্মিক দিক থেকে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এই দুই শ্রেণীর লোক ইহকালে ও পরলোকে কখনও আল্লাহ্র চোখে সমান নয়। মোমেন বান্দারা ইহলোকে আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে ধন্য ও তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহে সঠিক পথ নির্দ্দেশ লাভ করে থাকে, এবং পরলোকেও তারা আল্লাহ্র কৃপা লাভে ধন্য হয়। অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্র করুণাকে অর্থাৎ আল্লাহ্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে শাস্তি ও ঘৃণা লাভ করে থাকে।
২) ইহলোক বা পরলোকের কোন জীবনেই এই দুই শ্রেণীর লোক একরূপ নয়। মন্দ ও পাপীরা যদি ইহলোকে পার্থিব প্রাচুর্য্য , সম্পদে ও ক্ষমতায় সফলতা লাভ করে , তবে পরলোকে তারা দণ্ডনীয় অপরাধী বলে পরিগণিত হবে। অপরপক্ষে মোমেন বান্দারা যদি ইহলোকে দুঃখ-কষ্টে জীবন অতিবাহিত করে , কিন্তু তা সত্বেও তাদের ঈমানের শক্তি সমুন্নত রাখে, পরলোকে তাদের জন্য আছে শান্তি ও দুঃখ-যন্ত্রনা মুক্ত জীবন।
৩) মোমেন বান্দা ও পাপীদের মাঝে ইহলোকের জীবনের সংগাতে কত পার্থক্য। মোমেন বান্দার পার্থিব জীবন হচ্ছে সাধনার মাধ্যমে , পূণ্যময় জীবন যাপনের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি লাভের প্রচেষ্টার জীবন। যে জীবন গতিময় প্রতিদিন যা ধীরে ধীরে উর্দ্ধলোকে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের যোগ্যতা অর্জন করে। অপরপক্ষে পাপী লোকের জীবন আবর্তিত হয় পার্থিব সম্পদ,ক্ষমতা -প্রভাব প্রতিপত্তিকে কেন্দ্র করে - জীবন থাকা সত্বেও যে আত্মা মৃত। শারীরিক মৃত্যু মোমেন বান্দাদের অনন্ত শান্তির রাজ্যে নিয়ে যাবে, অপর পক্ষে শারীরিক মৃত্যু পাপীদের সীমাহীন যন্ত্রনার মাঝে নিক্ষিপ্ত করবে।
মোমেন বান্দার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে , যারা আল্লাহ্তে বিশ্বাসী ও আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য সৎ কাজ অর্থাৎ সমাজের মঙ্গলের জন্য কাজ করে তারাই মোমেন।
রুকু - ৩
৪৭৬০। দেখুন [ ৪৪ : ৩৮-৩৯ ]। বিশ্ব প্রকৃতিকে এমন ভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে , যেনো প্রতিটি আত্মা আত্ম উন্নতির সুযোগ লাভ করে। আত্মিক উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি একান্ত বিশ্বাস ও আনুগত্য। এই বিশ্বাস ও আনুগত্য আত্মাকে পৃথিবীর পাপ ও কলুষমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। মোমেন বান্দা তাঁর ঈমান বা বিশ্বাস ও আনুগত্য অর্থাৎ সৎকর্মের প্রতিদান লাভ করবে ইহকালে ও পরকালেও। "যথাযথ " শব্দটি দ্বারা আল্লাহ্র আইন সমূহের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।আকাশ মন্ডলী ও বিশ্ব প্রকৃতি যেমন প্রাকৃতিক আইনের অধীনে; আধ্যাত্মিক জগতের জন্যও সেরূপ আইন বর্তমান। তবে তা চর্মচক্ষুতে ভাস্বর হয় না, তা অনুভবের মাধ্যমে আত্মার মাঝে উপলব্ধি করতে হয়। যে শুধুমাত্র জাগতিক বা প্রাকৃতিক আইনকেই সর্বোচ্চ আসন দান করে; সে পার্থিব বা জাগতিক সফলতা লাভে সক্ষম হয়। আর যে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সাধনা করে সে আধ্যাত্মিক ভাবে সফলতা লাভে ধন্য হয়।আল্লাহ্র তরফ থেকে তার মাঝে জন্ম নেয় , জ্ঞান, প্রজ্ঞা , বিচক্ষণতা ও বিবেক। রীপুর দহন মুক্ত শান্তিময় জীবন তার পুরষ্কার বা কর্মফল হিসেবে সে লাভ করে। যদি কেউ আল্লাহ্র আইন লঙ্ঘন করে, সেও তার প্রতিদান বা কর্মফল ভোগ করে। এ হচ্ছে বিশ্বজনীন আইন - সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য - কারও প্রতি কোনও অবিচার করা হয় না। কিন্তু আল্লাহ্র পুরষ্কার গ্রহীতার যোগ্যতাকে অতিক্রম করে যাবে। যা প্রাপ্য তার বহুগুণ তাকে দেয়া হবে।
৪৭৬১। আল্লাহ্ আমাদের স্রষ্টা। আমাদের দৈহিক , মানসিক ও আত্মিক সকল প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি বিশ্ব প্রকৃতিকে সমন্বিত করে রেখেছেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও নৈতিক আইনের মাধ্যমে। নৈতিক আইন সমূহ এ ভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে ; তা যেনো আত্মার শুদ্ধতা ও পবিত্রতা , সৃষ্টির আদিতে স্রষ্টা যে ভাবে আত্মাকে সৃষ্টি করেছেন , তা রক্ষা করতে সহায়ক হয়। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহ্ প্রদত্ত এ সব আইন না মেনে নিজস্ব 'খেয়াল খুশী' অনুযায়ী চলে তবে সে আল্লাহ্র পরিবর্তে আত্মপূঁজায় নিমগ্ন হয়। তার উপাস্য হয় তার খেয়াল খুশী। এ একধরণের মানসিক বিকৃতি যা আল্লাহ্র প্রতি বিদ্রোহ স্বরূপ। আল্লাহ্র প্রতি বা আল্লাহ্র আইনের প্রতি আত্মসমর্পন ব্যক্তিকে করে জ্ঞান, প্রজ্ঞা , বিবেকে সমৃদ্ধ। ফলে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল গুণাবলী তার মাঝে জন্ম লাভ করবে। অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্র আইনকে অস্বীকার করে বা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে বঞ্চিত হয়। ফলে তারা আল্লাহ্র পথ নির্দ্দেশ বা হেদায়েতের আলো আত্মার মাঝে উপলব্ধিতে অক্ষম হয়। এ সব লোকের কথাই বলা হয়েছে যে তাদের মানসিক দক্ষতা সমূহ লোপ পেয়ে যাবে। তাদের মাঝে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিবেকের পরিবর্তে বিভিন্ন রীপু সমূহ যেমন লোভ, হিংসা , দ্বেষ , অবিশ্বস্ততা ইত্যাদি তাদের আত্মাকে পরিবেষ্টন করে ফেলবে। তারা আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো আত্মার মাঝে উপলব্ধি করতে পারবে না। একমাত্র প্রকৃত অনুতাপ ও আত্মসংশোধনই তাদের জন্য আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভের উপায়।
৪৭৬২। দেখুন আয়াত [ ২ : ৭ ] এবং টিকা।
৪৭৬৩। দেখুন আয়াত [ ২৩ : ৩৭ ] ও টিকা ২৮৯৬। অবিশ্বাসী কাফিররা পার্থিব জীবনের বাইরে আর কিছু চিন্তা করতে পারে না। তারা যে শুধু নিজের খেয়াল খুশী মতই চলে তাই নয়, তারা আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর জীবন শেষে পরলোকের কোনও জীবন নাই। তারা মনে করে মানুষের জন্ম মৃত্যু প্রাকৃতিক ব্যাপার। সময়ের ব্যবধানে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং এই ধ্বংসই তার শেষ পরিণতি। তাদের এই বক্তব্যের কোন ভিত্তি নাই। তারা শুধু তা বলে অনুমানের উপরে নির্ভর করে। এই অনুমান তাদের মনগড়া।
৪৭৬৪। যখন আল্লাহ্র আয়াত সমূহ তাদের নিকট আবৃত্তি করা হয়, পরলোকের জীবন সম্বন্ধে সাবধান করা হয়, তখন তারা বলে , " যদি মৃত্যুর পরে আবার পুনরুত্থান ঘটবে, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদের হাজির কর।"এটা কাফেরদের সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি পন্থা। কারণ মৃত লোককে এই পৃথিবীতে হাজির করা কোনও জীবিত মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পুণরুত্থান ঘটবে শেষ বিচারের দিনে। একমাত্র আল্লাহর হাতেই আছে জীবন ও মরণের চাবিকাঠি।
রুকু - ৪
৪৭৬৫। পৃথিবীর জীবন প্রতি মূহুর্তে অপসৃয়মান , ক্ষণস্থায়ী এই জীবন। পৃথিবীর স্থায়ীত্ব অনন্ত সময়ের পটভূমিতে খুবই ক্ষনস্থায়ী। কেয়ামত বা মহাপ্রলয়ের পরে পৃথিবীকে নূতন ভাবে অনন্তকালের জন্য বিন্যস্ত করা হবে [ ১৪ : ৪৮ ]। সেই পৃথিবী-ই হচ্ছে স্থায়ী বাস্তবতা। যারা এই সত্যকে অস্বীকার করে এবং পরলোকের জীবন সম্বন্ধে অসাড় তর্কে লিপ্ত হয় তাদেরকে এই আয়াতে সাবধান করা হয়েছে। কেয়ামতের পরে তাদের যখন পুনরুত্থান ঘটবে তখন তারা বাস্তবতা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে। তাদের কাল্পনিক ও মিথ্যা ধারণা বিদূরিত হবে, এবং সেদিন তারা নিজেদের আবিষ্কার করবে অপমান ও লাঞ্ছনাকর পরিস্থিতির মাঝে। আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যাখাত করা ও তাঁর আইনের বিরুদ্ধাচারণ করার শাস্তি তারা সেদিন লাভ করবে।
৪৭৬৬। "নতজানু" - সূরাটির শিরোনামের ভাব প্রকাশ করা হয়েছেএই শব্দটির মাধ্যমে। দেখুন [ ১৯: ৭২] আয়াত। মন্দ ও পাপীরা পার্থিব জীবনে আত্ম অহংকারে ও দম্ভে মদমত্ত থাকে। নিজেদের পার্থিব সাফল্যে তারা নিজেদের স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলে ধারণা করে এবং তাদের ধারণা জন্মে যে তারা স্বতন্ত্র সম্প্রদায় যারা সাধারণ মানুষ অপেক্ষা উন্নত। কিন্তু শেষ বিচারের দিনে তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটবে। প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করে তারা ভয়ে বিস্ময়ে নতজানু হয়ে প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করবে। তারা যখন দেখতে পাবে যে তাদের সারা জীবনে কৃতকর্মের বিবরণ আল্লাহ্র সম্মুখে রক্ষিত তখন ভয়ে বিস্ময়ে তাদের বাক্রোধ হয়ে পড়বে।
৪৭৬৭। দেখুন আয়াত [ ৪৩ : ৮০ ] বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের সৃষ্টি ক্ষমতা, প্রযুক্তি নির্ভর বা শ্রম নির্ভর - যার ফলে মানুষের সৃষ্ট পদার্থের ধ্বংস যে কোনও মূহুর্তেই ঘটে যেতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ্ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের প্রতিটি পদার্থ ও জীবনের মাঝে এমন কলাকৌশল স্থাপন করে দিয়েছেন যে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ঠিক সেরূপই হচ্ছে মানুষের আমলনামা, মানুষ যা করে , এমন কি চেতন বা অবচেতন মনে যা চিন্তা করে সবই তার আমলনামাতে তৎক্ষণাত সংগ্রীহিত হয়ে চলেছে। আজকে ই-মেইল ও কম্পিউটারের যুগে এ ধারণা কোনও আলৌকিক ধারণা নয়। কারণ পৃথিবীর এক প্রান্তের সংবাদ মূহুর্তের মধ্যে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে সংগ্রীহিত হচ্ছে। এমন কি সূদূর মঙ্গলগ্রহে পাঠানো যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ যেখানে মূহুর্তের মধ্যে সেখানকার সংবাদ সংগ্রহ করছে। সেখানে আল্লাহ্র স্বয়ংসম্পূর্ণ যন্ত্রে মূহুর্তের মাঝে আমাদের সকল চিন্তা, ভাবনা , কর্ম সব কিছু যে নির্ভুল উপাত্তে সংগ্রীহিত হবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। এই রের্কডে যা কিছু বর্ণিত হবে তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নাই। এই রেকর্ডই হচ্ছে ব্যক্তির আমলনামা।
৪৭৬৮। 'মহাসাফল্য ' - অর্থাৎ শেষ বিচারের দিনে , যারা মোমেন ও সৎকর্মশীল তারা অপার শান্তির রাজ্যে প্রবেশ করবে। তাদের সকল অতৃপ্তি তৃপ্তিতে ভরে যাবে , সকল আশা আকাঙ্খার পরিসমাপ্তি ঘটবে। আত্মা হবে সকল দুঃখ , কষ্ট , সংগ্রাম , সন্দেহ , নিরাশা , তীব্র আবেগ এবং আকাঙ্খা মুক্ত। আত্মা থাকবে পরিপূর্র্ণ শান্তির মাঝে সমাহিত। এই অপার শান্তির অবস্থাকেই মহাসাফল্য বোঝানো হয়েছে। যা আল্লাহ্র 'স্বীয় রহমতের' স্বাক্ষর।
৪৭৬৯। এই আয়াতে কাফেরদের দম্ভ ও অহংকারকে তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীতে সর্ব যুগে সর্ব কালে সম্পদ ও ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ অহংকারী করে তোলে যার পরিণতিতে তারা আল্লাহকে অস্বীকার করার সাহস ও দম্ভ প্রকাশ করে থাকে। এরাই অন্ধ অহংকারে কেয়ামতকে অস্বীকার করে। কিন্তু যুগে যুগে নবী, রসুল ও পয়গম্বরগণ কেয়ামত দিবসের ঘোষণা করে গেছেন। সুতারাং শেষ দিবস কেয়ামত দিবসকে মিথ্যা ধারণা, কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেয়া তাদের একগুয়েমির পরিণতি।সত্যকে অস্বীকার দ্বারা তারা তাদের বড়াই আত্ম অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রকাশ করতে চায় মাত্র।
৪৭৭০। দেখুন [ ১১ : ৮ ] কেয়ামত দিবসে প্রত্যেককে প্রত্যেকের কর্মফল দেয়া হবে। তাদের কর্মফল তাদের বেষ্টন করে থাকবে। সুতারাং যারা আল্লাহ্র বিধান সমূহকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করতো, তা সেদিন তাদের বেষ্টন করে ধরবে। পৃথিবীতে তারা যে সত্যকে অস্বীকার করতো , অবজ্ঞা করতো, তাই-ই হবে সেদিন প্রকৃতি সত্য।
৪৭৭১। দেখুন [ ৭ : ৫১ ] এবং টিকা ১০২৯। আল্লাহ্ তাদের 'বিস্মৃত' হবেন। এই বিস্মৃত হওয়া এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।আল্লাহ্র নিকট কিছুই হারিয়ে যায় না। এই বিস্মৃতির অর্থ হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে অবজ্ঞা করা।
৪৭৭২। এই আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায় তোমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে পার্থিব বস্তুর মোহে ও দম্ভে নিজেকে প্রতারিত করেছিলে " - অথবা " তোমরা নিজেদেরজন্য এমন পরিবেশের সৃষ্টি করেছিলে যাতে তোমরা সহজেই মিথ্যার দ্বারা প্রতারিত হতে পার। কারণ তোমাদের বারে বারে সর্তক করা সত্বেও তোমরা তাতে কর্ণপাত কর নাই।
৪৭৭৩। মা'য়াদ বা পরলোকে এই পৃথিবীর সকল কাজের উপযুক্ত প্রতিফল দান করা হবে। সেদিন সম্পূর্ণ সাম্যবস্থা বিরাজ করবে - সর্বত্র ন্যায় ও সত্য প্রতিফলিত হবে।সূরাটি শেষ করা হয়েছে আল্লাহ্র প্রশংসা কীর্তন দ্বারা। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান , সর্বজ্ঞানী এবং আকাশ , পৃথিবী ও জগৎসমূহের প্রতিপালক। সূরাটি শুরু হয়েছে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ ও অনুগ্রহ স্মরণ করে এবং শেষ করা হয়েছে তাঁর গৌরব, গরিমা , ক্ষমতা এবং প্রজ্ঞার গুণকীর্তন দ্বারা। কি অপূর্ব নৈপুন্যের সাথে সূরাটিকে শেষকরা হয়েছে দ্বিতীয় আয়াতের শেষ লাইনটির অনুসরণ দ্বারা তা লক্ষ্যনীয়।
২২। আল্লাহ্ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে যথাযথ ভাবে সৃষ্টি করেছেন ৪৭৬০ এবং ইহা এই হেতু যে, প্রতিটি আত্মা যেনো তার অর্জিত [কর্ম ] অনুযায়ী প্রতিদান পেতে পারে, এবং তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
৪৭৬০। দেখুন [ ৪৪ : ৩৮-৩৯ ]। বিশ্ব প্রকৃতিকে এমন ভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে , যেনো প্রতিটি আত্মা আত্ম উন্নতির সুযোগ লাভ করে। আত্মিক উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি একান্ত বিশ্বাস ও আনুগত্য। এই বিশ্বাস ও আনুগত্য আত্মাকে পৃথিবীর পাপ ও কলুষমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। মোমেন বান্দা তাঁর ঈমান বা বিশ্বাস ও আনুগত্য অর্থাৎ সৎকর্মের প্রতিদান লাভ করবে ইহকালে ও পরকালেও। "যথাযথ " শব্দটি দ্বারা আল্লাহ্র আইন সমূহের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।আকাশ মন্ডলী ও বিশ্ব প্রকৃতি যেমন প্রাকৃতিক আইনের অধীনে; আধ্যাত্মিক জগতের জন্যও সেরূপ আইন বর্তমান। তবে তা চর্মচক্ষুতে ভাস্বর হয় না, তা অনুভবের মাধ্যমে আত্মার মাঝে উপলব্ধি করতে হয়। যে শুধুমাত্র জাগতিক বা প্রাকৃতিক আইনকেই সর্বোচ্চ আসন দান করে; সে পার্থিব বা জাগতিক সফলতা লাভে সক্ষম হয়। আর যে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সাধনা করে সে আধ্যাত্মিক ভাবে সফলতা লাভে ধন্য হয়।আল্লাহ্র তরফ থেকে তার মাঝে জন্ম নেয় , জ্ঞান, প্রজ্ঞা , বিচক্ষণতা ও বিবেক। রীপুর দহন মুক্ত শান্তিময় জীবন তার পুরষ্কার বা কর্মফল হিসেবে সে লাভ করে। যদি কেউ আল্লাহ্র আইন লঙ্ঘন করে, সেও তার প্রতিদান বা কর্মফল ভোগ করে। এ হচ্ছে বিশ্বজনীন আইন - সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য - কারও প্রতি কোনও অবিচার করা হয় না। কিন্তু আল্লাহ্র পুরষ্কার গ্রহীতার যোগ্যতাকে অতিক্রম করে যাবে। যা প্রাপ্য তার বহুগুণ তাকে দেয়া হবে।
২৩। তুমি কি এমন ব্যক্তিকে দেখেছ, যে তার নিজের প্রবৃত্তিকে উপাস্য বলে গ্রহণ করেছে ? ৪৭৬১। [এরূপ জেনেই ] আল্লাহ্ তাকে বিপথে ত্যাগ করেছেন , এবং তার শ্রবণশক্তি ও হৃদয়কে [ বোঝার ক্ষমতাকে ] সীলমোহর করে দিয়েছেন , এবং তার চক্ষুর উপরে [অবিশ্বাসের ] আবরণ টেনে দিয়েছেন ৪৭৬২। [আল্লাহ্ তাঁর হেদায়েত প্রত্যাহার করার পরে ] , আল্লাহ্র পরে কে তাকে পথ দেখাবে ? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না ?
৪৭৬১। আল্লাহ্ আমাদের স্রষ্টা। আমাদের দৈহিক , মানসিক ও আত্মিক সকল প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি বিশ্ব প্রকৃতিকে সমন্বিত করে রেখেছেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও নৈতিক আইনের মাধ্যমে। নৈতিক আইন সমূহ এ ভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে ; তা যেনো আত্মার শুদ্ধতা ও পবিত্রতা , সৃষ্টির আদিতে স্রষ্টা যে ভাবে আত্মাকে সৃষ্টি করেছেন , তা রক্ষা করতে সহায়ক হয়। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহ্ প্রদত্ত এ সব আইন না মেনে নিজস্ব 'খেয়াল খুশী' অনুযায়ী চলে তবে সে আল্লাহ্র পরিবর্তে আত্মপূঁজায় নিমগ্ন হয়। তার উপাস্য হয় তার খেয়াল খুশী। এ একধরণের মানসিক বিকৃতি যা আল্লাহ্র প্রতি বিদ্রোহ স্বরূপ। আল্লাহ্র প্রতি বা আল্লাহ্র আইনের প্রতি আত্মসমর্পন ব্যক্তিকে করে জ্ঞান, প্রজ্ঞা , বিবেকে সমৃদ্ধ। ফলে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল গুণাবলী তার মাঝে জন্ম লাভ করবে। অপরপক্ষে যারা আল্লাহ্র আইনকে অস্বীকার করে বা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভে বঞ্চিত হয়। ফলে তারা আল্লাহ্র পথ নির্দ্দেশ বা হেদায়েতের আলো আত্মার মাঝে উপলব্ধিতে অক্ষম হয়। এ সব লোকের কথাই বলা হয়েছে যে তাদের মানসিক দক্ষতা সমূহ লোপ পেয়ে যাবে। তাদের মাঝে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিবেকের পরিবর্তে বিভিন্ন রীপু সমূহ যেমন লোভ, হিংসা , দ্বেষ , অবিশ্বস্ততা ইত্যাদি তাদের আত্মাকে পরিবেষ্টন করে ফেলবে। তারা আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো আত্মার মাঝে উপলব্ধি করতে পারবে না। একমাত্র প্রকৃত অনুতাপ ও আত্মসংশোধনই তাদের জন্য আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভের উপায়।
৪৭৬২। দেখুন আয়াত [ ২ : ৭ ] এবং টিকা।
২৪। এবং তারা বলে, " একমাত্র পৃথিবীর জীবনই আমাদের জীবন, আমরা[একবারই ] মরি ও বাঁচি ৪৭৬৩ এবং সময় ব্যতীত আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করে না। বস্তুতঃ এই ব্যাপারে ওদের কোন জ্ঞান নাই। ওরা তো কেবলমাত্র অনুমান করে।
৪৭৬৩। দেখুন আয়াত [ ২৩ : ৩৭ ] ও টিকা ২৮৯৬। অবিশ্বাসী কাফিররা পার্থিব জীবনের বাইরে আর কিছু চিন্তা করতে পারে না। তারা যে শুধু নিজের খেয়াল খুশী মতই চলে তাই নয়, তারা আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর জীবন শেষে পরলোকের কোনও জীবন নাই। তারা মনে করে মানুষের জন্ম মৃত্যু প্রাকৃতিক ব্যাপার। সময়ের ব্যবধানে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং এই ধ্বংসই তার শেষ পরিণতি। তাদের এই বক্তব্যের কোন ভিত্তি নাই। তারা শুধু তা বলে অনুমানের উপরে নির্ভর করে। এই অনুমান তাদের মনগড়া।
২৫। যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তাদের আর কোন যুক্তিই থাকে না এই উক্তি ব্যতীত , তারা বলে, " যদি তোমরা সত্যি বলে থাক, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদের [ ফিরিয়ে] এনে দাও।" ৪৭৬৪
৪৭৬৪। যখন আল্লাহ্র আয়াত সমূহ তাদের নিকট আবৃত্তি করা হয়, পরলোকের জীবন সম্বন্ধে সাবধান করা হয়, তখন তারা বলে , " যদি মৃত্যুর পরে আবার পুনরুত্থান ঘটবে, তবে আমাদের পূর্বপুরুষদের হাজির কর।"এটা কাফেরদের সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি পন্থা। কারণ মৃত লোককে এই পৃথিবীতে হাজির করা কোনও জীবিত মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পুণরুত্থান ঘটবে শেষ বিচারের দিনে। একমাত্র আল্লাহর হাতেই আছে জীবন ও মরণের চাবিকাঠি।
২৬। বল, " আল্লাহ্-ই তোমাদের জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। অতঃপর তিনি শেষ বিচারের দিনে তোমাদের একত্র করবেন , সে [ দিন ] সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই।" কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা বুঝতে পারে না।
রুকু - ৪
২৭। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব , আল্লাহ্র অধীনে , এবং যখন শেষ বিচারের সময় প্রতিষ্ঠিত হবে - সেদিন মিথ্যার বেসাতীকারীরা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে ৪৭৬৫।
৪৭৬৫। পৃথিবীর জীবন প্রতি মূহুর্তে অপসৃয়মান , ক্ষণস্থায়ী এই জীবন। পৃথিবীর স্থায়ীত্ব অনন্ত সময়ের পটভূমিতে খুবই ক্ষনস্থায়ী। কেয়ামত বা মহাপ্রলয়ের পরে পৃথিবীকে নূতন ভাবে অনন্তকালের জন্য বিন্যস্ত করা হবে [ ১৪ : ৪৮ ]। সেই পৃথিবী-ই হচ্ছে স্থায়ী বাস্তবতা। যারা এই সত্যকে অস্বীকার করে এবং পরলোকের জীবন সম্বন্ধে অসাড় তর্কে লিপ্ত হয় তাদেরকে এই আয়াতে সাবধান করা হয়েছে। কেয়ামতের পরে তাদের যখন পুনরুত্থান ঘটবে তখন তারা বাস্তবতা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে। তাদের কাল্পনিক ও মিথ্যা ধারণা বিদূরিত হবে, এবং সেদিন তারা নিজেদের আবিষ্কার করবে অপমান ও লাঞ্ছনাকর পরিস্থিতির মাঝে। আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যাখাত করা ও তাঁর আইনের বিরুদ্ধাচারণ করার শাস্তি তারা সেদিন লাভ করবে।
২৮। এবং তুমি প্রত্যেক দলকে নতজানু দেখতে পাবে, ৪৭ ৬৬। প্রত্যেক দলকে তাদের আমলনামার দিকে ডাকা হবে। " তোমরা যা কিছু [ দুনিয়াতে ] করতে আজকের দিনে তার উপযুক্ত প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে।
৪৭৬৬। "নতজানু" - সূরাটির শিরোনামের ভাব প্রকাশ করা হয়েছেএই শব্দটির মাধ্যমে। দেখুন [ ১৯: ৭২] আয়াত। মন্দ ও পাপীরা পার্থিব জীবনে আত্ম অহংকারে ও দম্ভে মদমত্ত থাকে। নিজেদের পার্থিব সাফল্যে তারা নিজেদের স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলে ধারণা করে এবং তাদের ধারণা জন্মে যে তারা স্বতন্ত্র সম্প্রদায় যারা সাধারণ মানুষ অপেক্ষা উন্নত। কিন্তু শেষ বিচারের দিনে তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটবে। প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করে তারা ভয়ে বিস্ময়ে নতজানু হয়ে প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করবে। তারা যখন দেখতে পাবে যে তাদের সারা জীবনে কৃতকর্মের বিবরণ আল্লাহ্র সম্মুখে রক্ষিত তখন ভয়ে বিস্ময়ে তাদের বাক্রোধ হয়ে পড়বে।
২৯। " আমাদের এই নথি আজ তোমাদের সম্বন্ধে সত্য কথা বলবে। তোমরা যা করতে আমি তা নথিতে লিপিবদ্ধ করেছি।" ৪৭৬৭
৪৭৬৭। দেখুন আয়াত [ ৪৩ : ৮০ ] বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মানুষের সৃষ্টি ক্ষমতা, প্রযুক্তি নির্ভর বা শ্রম নির্ভর - যার ফলে মানুষের সৃষ্ট পদার্থের ধ্বংস যে কোনও মূহুর্তেই ঘটে যেতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ্ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের প্রতিটি পদার্থ ও জীবনের মাঝে এমন কলাকৌশল স্থাপন করে দিয়েছেন যে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ঠিক সেরূপই হচ্ছে মানুষের আমলনামা, মানুষ যা করে , এমন কি চেতন বা অবচেতন মনে যা চিন্তা করে সবই তার আমলনামাতে তৎক্ষণাত সংগ্রীহিত হয়ে চলেছে। আজকে ই-মেইল ও কম্পিউটারের যুগে এ ধারণা কোনও আলৌকিক ধারণা নয়। কারণ পৃথিবীর এক প্রান্তের সংবাদ মূহুর্তের মধ্যে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে সংগ্রীহিত হচ্ছে। এমন কি সূদূর মঙ্গলগ্রহে পাঠানো যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ যেখানে মূহুর্তের মধ্যে সেখানকার সংবাদ সংগ্রহ করছে। সেখানে আল্লাহ্র স্বয়ংসম্পূর্ণ যন্ত্রে মূহুর্তের মাঝে আমাদের সকল চিন্তা, ভাবনা , কর্ম সব কিছু যে নির্ভুল উপাত্তে সংগ্রীহিত হবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। এই রের্কডে যা কিছু বর্ণিত হবে তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নাই। এই রেকর্ডই হচ্ছে ব্যক্তির আমলনামা।
৩০। অতঃপর যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে , তাদের প্রভু তাদেরকে স্বীয় রহমতে প্রবেশের অধিকার দেবেন। ইহাই হবে সকলের জন্য দ্রষ্টব্য মহাসাফল্য ৪৭৬৮।
৪৭৬৮। 'মহাসাফল্য ' - অর্থাৎ শেষ বিচারের দিনে , যারা মোমেন ও সৎকর্মশীল তারা অপার শান্তির রাজ্যে প্রবেশ করবে। তাদের সকল অতৃপ্তি তৃপ্তিতে ভরে যাবে , সকল আশা আকাঙ্খার পরিসমাপ্তি ঘটবে। আত্মা হবে সকল দুঃখ , কষ্ট , সংগ্রাম , সন্দেহ , নিরাশা , তীব্র আবেগ এবং আকাঙ্খা মুক্ত। আত্মা থাকবে পরিপূর্র্ণ শান্তির মাঝে সমাহিত। এই অপার শান্তির অবস্থাকেই মহাসাফল্য বোঝানো হয়েছে। যা আল্লাহ্র 'স্বীয় রহমতের' স্বাক্ষর।
৩১। কিন্তু যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছিলো ; [ তাদের বলা হবে ] : " তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় নাই ? কিন্তু তোমরা ছিলে উদ্ধত এবং পাপে আসক্ত এক সম্প্রদায়।"
৩২। এবং যখন বলা হতো, " আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি তো সত্য, [ কেয়ামতের ]ক্ষণ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই" ; তোমরা বলতে , " আমরা [কেয়ামতের] সময় সম্বন্ধে জানি না। আমরা মনে করি এটা একটা ধারণামাত্র আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই।" ৪৭৬৯
৩২। এবং যখন বলা হতো, " আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি তো সত্য, [ কেয়ামতের ]ক্ষণ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নাই" ; তোমরা বলতে , " আমরা [কেয়ামতের] সময় সম্বন্ধে জানি না। আমরা মনে করি এটা একটা ধারণামাত্র আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত নই।" ৪৭৬৯
৪৭৬৯। এই আয়াতে কাফেরদের দম্ভ ও অহংকারকে তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীতে সর্ব যুগে সর্ব কালে সম্পদ ও ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ অহংকারী করে তোলে যার পরিণতিতে তারা আল্লাহকে অস্বীকার করার সাহস ও দম্ভ প্রকাশ করে থাকে। এরাই অন্ধ অহংকারে কেয়ামতকে অস্বীকার করে। কিন্তু যুগে যুগে নবী, রসুল ও পয়গম্বরগণ কেয়ামত দিবসের ঘোষণা করে গেছেন। সুতারাং শেষ দিবস কেয়ামত দিবসকে মিথ্যা ধারণা, কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেয়া তাদের একগুয়েমির পরিণতি।সত্যকে অস্বীকার দ্বারা তারা তাদের বড়াই আত্ম অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রকাশ করতে চায় মাত্র।
৩৩। অতঃপর, তারা যে মন্দ কাজ করতো, তার [ কুফল ] তাদের নিকট প্রকাশিত হবে এবং তারা যা নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রূপ করতো তা তাদের পরিবেষ্টন করবে ৪৭৭০।
৪৭৭০। দেখুন [ ১১ : ৮ ] কেয়ামত দিবসে প্রত্যেককে প্রত্যেকের কর্মফল দেয়া হবে। তাদের কর্মফল তাদের বেষ্টন করে থাকবে। সুতারাং যারা আল্লাহ্র বিধান সমূহকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করতো, তা সেদিন তাদের বেষ্টন করে ধরবে। পৃথিবীতে তারা যে সত্যকে অস্বীকার করতো , অবজ্ঞা করতো, তাই-ই হবে সেদিন প্রকৃতি সত্য।
৩৪। আরও বলা হবে , " আজ আমি তোমাদের বিস্মৃত হব যেমন তোমরা এই দিনের সাক্ষাৎকারকে বিস্মৃত হয়েছিলে। তোমাদের বাসস্থান হবে আগুনে, এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না ৪৭৭১।
৪৭৭১। দেখুন [ ৭ : ৫১ ] এবং টিকা ১০২৯। আল্লাহ্ তাদের 'বিস্মৃত' হবেন। এই বিস্মৃত হওয়া এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।আল্লাহ্র নিকট কিছুই হারিয়ে যায় না। এই বিস্মৃতির অর্থ হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে অবজ্ঞা করা।
৩৫। " ইহা এ কারণে যে, তোমরা আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীকে ঠাট্টা বিদ্রূপ হিসেবে গ্রহণ করেছিলে , এবং এই পৃথিবীর জীবন তোমাদের প্রতারিত করেছিলো। " ৪৭৭২। সুতারাং [সেদিন থেকে ] তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না , তাদেরকে [আল্লাহ্র] অনুগ্রহ লাভের সুযোগ দেয়া হবে না।
৪৭৭২। এই আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায় তোমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে পার্থিব বস্তুর মোহে ও দম্ভে নিজেকে প্রতারিত করেছিলে " - অথবা " তোমরা নিজেদেরজন্য এমন পরিবেশের সৃষ্টি করেছিলে যাতে তোমরা সহজেই মিথ্যার দ্বারা প্রতারিত হতে পার। কারণ তোমাদের বারে বারে সর্তক করা সত্বেও তোমরা তাতে কর্ণপাত কর নাই।
৩৬। সুতারাং প্রশংসা আল্লাহ্রই ৪৭৭৩ , যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রভু , এবং জগতসমূহের প্রভু এবং প্রতিপালক ৪৭৭৩।
৪৭৭৩। মা'য়াদ বা পরলোকে এই পৃথিবীর সকল কাজের উপযুক্ত প্রতিফল দান করা হবে। সেদিন সম্পূর্ণ সাম্যবস্থা বিরাজ করবে - সর্বত্র ন্যায় ও সত্য প্রতিফলিত হবে।সূরাটি শেষ করা হয়েছে আল্লাহ্র প্রশংসা কীর্তন দ্বারা। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান , সর্বজ্ঞানী এবং আকাশ , পৃথিবী ও জগৎসমূহের প্রতিপালক। সূরাটি শুরু হয়েছে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ ও অনুগ্রহ স্মরণ করে এবং শেষ করা হয়েছে তাঁর গৌরব, গরিমা , ক্ষমতা এবং প্রজ্ঞার গুণকীর্তন দ্বারা। কি অপূর্ব নৈপুন্যের সাথে সূরাটিকে শেষকরা হয়েছে দ্বিতীয় আয়াতের শেষ লাইনটির অনুসরণ দ্বারা তা লক্ষ্যনীয়।
৩৭। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ব্যপী মহিমা তারই। এবং তিনি ক্ষমতায় মহাশক্তিধর , প্রজ্ঞাতে পরিপূর্ণ।