Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ১ জন
আজকের পাঠক ৮২ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩৩০৩৬৬ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৬১২৫ বার
+ - R Print

সূরা হুজুরাত


সূরা হুজুরাত বা অন্তঃপুর - ৪৯

১৮ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


ভূমিকা : মদিনায় অবতীর্ণ সূরাগুলির যে শ্রেণীটি তিনটি সূরার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এবং যে শ্রেণীটির শুরু হয়েছে ৪৭নং সূরা দ্বারা ; বর্তমান সূরাটি [ ৪৯ নং ] এই শ্রেণীটির শেষ সূরা।

এই সূরার বিষয় বস্তু হচ্ছে : দ্রুত প্রসারিত মুসলিম সম্প্রদায়ের আচার-ব্যবহার সম্পর্কিত বিষয়বস্তু। তাদের আচার ব্যবহারের নির্দ্দেশনা এতে আছে। মূল শব্দ Hujurat [ অন্তঃপুর ] শব্দটি আছে ৪নং আয়াতে।

এই সূরার সময়কাল ধরা হয় প্রতিনিধিবর্গের প্রেরণের সময়কাল যা ছিলো ৯ম হিজরী। এই সময়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গ মদিনাতে আগমন করেন এবং ইসলামের প্রতি তাদের দেশের আনুগত্য প্রকাশ করেন।

সার সংক্ষেপ : যে কোনও সম্প্রদায় তাদের নেতার প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করবে। ঝগড়া বিবাদ অনুচিত ও অশোভন তা শীঘ্র মিটিয়ে নেয়া প্রয়োজন। শোভনীয় ও ভদ্র আচরণ নৈতিক মূল্যবোধ থেকে উৎসারিত হয়। ইসলামী মূল্যবোধের সৌন্দর্য হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস প্রদর্শন যা প্রত্যেকের কর্তব্য বলে মনে করা হয়। [ ৪৯ : ১ - ১৮ ]।

সূরা হুজুরাত বা অন্তঃপুর - ৪৯

১৮ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


০১। হে বিশ্বাসীগণ ! আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের পূর্বে [ কোন কথায় বা কাজে ] অগ্রবর্তী হয়ো না ৪৯১৯। আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ্‌ই সব শোনেন ও জানেন।

৪৯১৯। এই আয়াতটিকে বিভিন্নভাবে তফসীর করা হয়েছে :

১) আল্লাহ্‌র সম্মুখে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করা উচিত নয়। আল্লাহ্‌র সম্মুখে অর্থাৎ মসজিদ অথবা নামাজের সময়ে অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

২) কথা এবং কাজে নেতার অগ্রবর্তী না হওয়া। এক্ষেত্রে রাসুলের (সা ) প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে এই উপদেশ দেয়া হয়েছে।

৩) প্রতিটি কাজে তাড়াহুড়া না করে ধৈর্য্য ধারণ করা। কারণ সবকিছুর সঠিক মূল্যায়ন আল্লাহ্‌র হাতে। আল্লাহ্‌ তাঁর রাসুলের (সা) মাধ্যমে কথা বলেন। সুতারাং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে যেনো তোমরা সকল কর্মে আল্লাহ্‌র উপস্থিতি অনুভব কর। কারণ আল্লাহ্‌ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

৪) কোরাণ ও রাসুলের (সা) সুন্নার মাধ্যমে হেদায়েতকে অন্বেষণ কর। আর কিছুই কোরাণ ও সুন্নার উপরে স্থান পেতে পারে না।

০২। হে মুমিনগণ ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ করো না ৪৯২০। তোমরা নিজেদের মধ্যে যেরূপ উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উচ্চস্বরে কথা বলো না ; এই আশঙ্কায় যে, তোমাদের সকল কর্ম বিফল হয়ে যাবে ৪৯২১ আর তোমরা হয়তো তা টেরই পাবে না।

৪৯২০। রাসুলের (সা) প্রতি আচরণের মাধ্যমে মুসলমানদের সামাজিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। নেতার সম্মুখে বা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের সম্মুখে উচ্চস্বরে কথা বলা অশিষ্টাচার। যারা অভদ্র ও শিষ্টাচার বিহীন শুধু তারাই নেতা ও শ্রদ্ধেয়ভাজনদের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলে থাকে।

৪৯২১। নম্রতা, ভদ্রতা ও বিনয় এমন একটি গুণ যা সমাজকে করে সুন্দর ও সামাজিক ক্রিয়াকর্মকে করে অনেক সহজ। অভদ্র ও রুক্ষ ব্যবহার যে কোন ভালো কাজকে মূল্যহীন করে দেয়। যেমন : দান করে রুক্ষ ব্যবহার দানের মর্যদা হানি করে, অপরপক্ষে দান না করেও মিষ্ট ব্যবহার গ্রহীতার অন্তরে শান্তি আনায়ন করে। এ ভাবেই দুর্ব্যবহার ও অশিষ্ট ব্যবহার কর্মফলকে নিষ্ফল করে দেয়। এমনকি দুর্ব্যবহারকারী নিজেও জানতে পারে না যে তার কর্মফল নিষ্ফল হয়ে যায়।

০৩। যারা আল্লাহ্‌র রসুলের উপস্থিতিতে তাদের কণ্ঠস্বরকে নীচু করে, - আল্লাহ্‌ তাদের হৃদয়কে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন ৪৯২২। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।

৪৯২২। শিষ্টাচার ও ভালো ব্যবহার উৎসরিত হয় হৃদয় থেকে। আল্লাহ্‌র রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, - যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাভাজন নেতাকে মেনে চলে আল্লাহ্‌ তার হৃদয়ে  ধর্মভাব জাগ্রত করেন। অপরপক্ষে যে তার শ্রদ্ধেয় নেতার প্রতি শিষ্টাচার সম্পন্ন না হয়; তার কর্মফল বৃথা হয়ে যায়। কারণ এরূপ ক্ষেত্রে নেতার কর্তৃত্ব শিথিল হয়ে পড়ে ফলে সমগ্র কর্মপ্রচেষ্টাতে শিথিলতা দেখা যায়।

০৪। যারা ঘরের বাহির থেকে তোমাকে চিৎকার করে ডাকে, তাদের অধিকাংশের বোধ শক্তির অভাব আছে। ৪৯২৩

৪৯২৩। বান্‌তামীমের একটি প্রতিনিধিদল রাসুলের (সা ) সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। তখন রাসুলুল্লাহ্‌ (সা) নিজ প্রকোষ্ঠে অবস্থান করছিলেন। তারা কক্ষের পিছন থেকে তাঁকে চীৎকার করে ডাকতে থাকে। আয়াতটি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়। এই আয়াতগুলির আবেদন সার্বজনীন - যুগ কাল অতিক্রান্ত। নেতাকে ঘরের বাইরে থেকে চীৎকার করে ডাকা অভদ্রতারই পরিচায়ক। এর দ্বারা নেতার কর্ম, সময়, ও তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধাই জ্ঞাপন করা হয়। একমাত্র উদ্ধত, হঠকারী ও নির্বোধ ব্যক্তিরাই তা করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে বিনয়ী ও শিষ্টাচার সম্পন্ন যে কোনও ব্যক্তি নেতার আগমন পর্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করবে। আল্লাহ্‌র নবী ছিলেন ক্ষমা ও দয়ার প্রতীক। এসব অজ্ঞ ও নির্বোধদের দোষত্রুটি তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিক জীবনে এরূপ অজ্ঞতাকে ক্ষমা করা হয় না। যেমন : কোন সাধারণ সৈনিক যদি সামরিক বাহিনীর জেনারেলের সাথে এরূপ ব্যবহার করে অথবা রাজা বা রাষ্ট্রপতি বা উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীর সাথে অভদ্র ও শিষ্টাচার বর্হিভূত ব্যবহার করে তবে দেশের আইনের চোখে সে অপরাধী হয়। তাকে দন্ডনীয় আইনে সোপর্দ করা হয়। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে সামাজিক শিষ্টাচারের সাধারণ নিয়মগুলি শিক্ষা দান করা হয়েছে।

০৫। তুমি বাইর হয়ে তাদের নিকট আসা পর্যন্ত যদি তারা ধৈর্য ধারণ করতো, তবে তা হতো তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ্‌ বারে বারে ক্ষমাশীল,পরম করুণাময়।

০৬। হে মুমিনগণ ! কোন দুষ্ট লোক যদি কোন বার্তা সহ তোমাদের নিকট আসে ৪৯২৪; তবে তার সত্যতা ভালোভাবে যাচাই করে নেবে, এই আশঙ্কায় যে, পাছে অজ্ঞাতসারে কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে ফেলো ; এবং যার ফলে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হয়।

৪৯২৪। এই আয়াতের মাধ্যমে এক অমূল্য সার্বজনীন উপদেশ দান করা হয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে কানকথা ও অন্যের কথা বিশ্বাস করা। বলা হয়েছে কোন কথা বিশ্বাস করার পূর্বে পরীক্ষা করে নাও বক্তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সে কি সত্যবাদী, ন্যায়বান, মোমেন বান্দা ? না কি সে মিথ্যাবাদী, মোনাফেক, অন্যায়কারী, পাপাচারী। যদি সে মোমেন না হয়ে পাপাচারী হয়, তবে তার কথা বিশ্বাস করার পূর্বে পরীক্ষা করে নাও। নতুবা পরবর্তীতে অনুতাপ করেও ভুলের সংশোধন করা সম্ভব হবে না। মিথ্যা অপবাদ, কলঙ্ক ও দুর্নাম সব কিছু থেকেই এই আয়াতে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।

০৭। তোমরা মনে রেখো যে, তোমাদের মাঝে আল্লাহ্‌র রাসুল রয়েছে ৪৯২৫। এমন অনেক ব্যাপার আছে যে, সে যদি তোমাদের কথা মেনে নেয়, তবে অবশ্যই তোমরা বিপদে পড়বে। কিন্তু আল্লাহ্‌ ঈমানকে তোমাদের নিকট প্রিয় করেছেন এবং তোমাদের হৃদয়ের মাঝে তা মনোরম করেছেন ৪৯২৬। এবং তিনি অবিশ্বাস, কুকর্ম এবং অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট ঘৃণিত। এরাই তারা যারা পূণ্য পথের পথিক ; -

০৮। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও দয়াতে। বস্তুতঃ আল্লাহ্‌ জ্ঞান ও প্রজ্ঞাতে পরিপূর্ণ।

৪৯২৫। আল্লাহ্‌র রাসুল ( সা ) যদি সকল ব্যাপারেই তাঁর অনুসরীদের পরামর্শ ও প্রস্তাব গ্রহণ করতেন তবে তা তাঁদের জন্য কল্যাণকর হতো না। নেতা হিসেবে যে কোন কাজের সঠিক কর্মপন্থা গ্রহণের দায়িত্ব তাঁরই। তিনি সাধারণ মানুষ অপেক্ষা অনেক বেশী বিচক্ষণ, জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন। তিনি কখনও ব্যক্তিগত আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনও কাজ করতেন না। তাঁর প্রতিটি কাজই ছিলো জ্ঞান ও প্রজ্ঞার স্বাক্ষর। পৃথিবীর সর্বযুগে সর্বকালের নেতাদের তিনি হচ্ছেন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।

৪৯২৬। "কিন্তু আল্লাহ্‌ ঈমানকে তোমাদের নিকট প্রিয় করেছেন এবং তোমাদের হৃদয়ের মাঝে তা মনোরম করেছেন।" রাসুলের সময়কালে যারা তাঁর চারিপার্শ্বে ছিলেন তাঁরা সত্যিই সৌভাগ্যবান। ধন্য তাঁরা রাসুলের সহচার্যে। রাসুলের (সা ) জীবনযাত্রা, তাঁর উদাহরণ তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিকে করেছিলো দৃঢ় ও মজবুত। ঈমান তাদের নিকট ছিলো প্রাণাধিক প্রিয়। আত্মার মাঝে ঈমানের আলোর ঔজ্বল্যে তাঁরা ছিলেন মুগ্ধ, বিমোহিত ও গর্বিত। তাঁরা শৃঙ্খলা, আনুগত্য এবং ন্যায়পরাণতাকে ভালোবাসতেন। এ সব গুণাবলী ধীরে ধীরে তাঁদের চরিত্র থেকে তাঁদের দোষত্রুটি দূর করে দেয়। ফলে দিনে দিনে তাদের ঈমানের ভিত্তি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর রূপ ধারণ করে। তাদের অন্তরের এই পরিবর্তন এ সব হচ্ছে আল্লাহ্‌র রহমতের স্বাক্ষর - তাঁর অপার করুণার দান ও অনুগ্রহ। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ব্যতীত প্রকৃত ঈমানের বোধ, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জন্ম অন্তরের মাঝে ঘটে না। প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তির নিকট কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে ঘৃণ্য বলে বোধ হবে।

০৯। মুমিনদের দুই দল বিবাদে লিপ্ত হলে; তোমরা তাদের মাঝে শান্তি স্থাপন কর ৪৯২৭। কিন্তু যদি তাদের একদল অপরদলের বিরুদ্ধে সীমা লংঘন করে, তবে যে অন্যায় করছে তার বিরুদ্ধে [ সকলে ] যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে আল্লাহ্‌র হুকুমের দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি সেই দল আল্লাহ্‌র [ নির্দ্দেশের ] দিকে ফিরে আসে, তবে উহাদের মাঝে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করে দাও, এবং [ এ ব্যাপারে ] নিরপেক্ষ হবে। কারণ যারা নিরপেক্ষ [ ও ন্যায় বিচারক ] আল্লাহ্‌র তাদের ভালোবাসেন।

৪৯২৭। ব্যক্তিগত ঝগড়া -বিবাদ মেটানো সহজ। কিন্তু বিবাদ যখন ব্যপকতা লাভ করে দলে দলে লিপ্ত হয় বা বর্তমান বিশ্বে যেরূপ জাতিতে জাতিতে লিপ্ত হয়, সেরূপ ক্ষেত্রে বিবাদ মেটানো খুব সহজ কাজ নয়। এরূপ ক্ষেত্রে মুসলিমদের করণীয় কর্তব্য সম্বন্ধে এই আয়াতে নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে। মুসলিমদের মাঝে যখন বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠির মধ্যে এরূপ দ্বন্দ বিবাদের সুত্রপাত ঘটে - মনে রাখতে হবে ইসলামের ঝান্ডা হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিচয়। কোনও অবস্থাতেই মুসলিম ভাতৃত্বের বিভাজন কাম্য নয়। মীমাংসা হতে হবে ন্যায়ের ভিত্তিতে - মনে রাখতে হবে যুদ্ধ অপেক্ষা শান্তি অধিক কাম্য। কিন্তু কোনও পক্ষের যদি ন্যায় বিচার পছন্দ না হয় এবং তারা যুদ্ধ করার জন্য বদ্ধপরিকর হয়, এরূপ ক্ষেত্রে মুসলিম ভাতৃত্বের সকল শক্তি সংঘবদ্ধভাবে, তাদের আক্রমণ করবে - শর্ত হবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহ্‌র নির্দ্দেশের দিকে ফিরে আসে। সর্বক্ষেত্রেই শর্ত হবে ন্যায় ও কল্যাণ এবং সর্বোচ্চ নীতিবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। কারণ ইসলাম ধর্ম সর্বদা সকলের ন্যায্য এবং আইনগত অধিকারকে স্বীকার করে থাকে। আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে সকলের প্রতি ন্যায় ও সুবিচার। পার্থিব জগতের ন্যায় ও সুবিচার হচ্ছে আধ্যাত্মিক জগতের সমৃদ্ধির ভিত্তি। "কারণ যারা নিরপেক্ষ (ন্যায় বিচারক) আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।" আয়াতের এই বাক্যটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের পূর্বশর্ত হচ্ছে ন্যায় ও সুবিচার। যেখানেই অন্যায় হয় অবদমিত, এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা লাভ ঘটে তাই-ই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়। এ সত্য পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জগত উভয় জগতের জন্য সত্য। এর প্রচুর উদাহরণ ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে লক্ষ্য করা যায়। এই ন্যায় নীতির অভাবে অতীতে "লীগ অব নেশন " ভেঙ্গে যায়। বর্তমানেও জাতিসংঘ সঠিকভাবে কার্যকর হতে পারছে না - তার কারণ ন্যায়নীতির অভাব। ন্যায়নীতি ও সুবিচার হচ্ছে ধর্মীয় আর্দশের মূল ভিত্তি।

১০। বিশ্বাসীগণ তো পরস্পর ভাই ভাই ৪৯২৮। সুতারাং তোমার দুই [ বিবাদমান ] ভাইএর মাঝে শান্তি স্থাপন দ্বারা পুনর্মিলন করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় কর, যেনো তোমরা তাঁর অনুগ্রহ প্রাপ্ত হতে পার।

৪৯২৮। ইসলাম ধর্মে মুসলিম ভাতৃত্বের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বিদায় হজ্বে রাসুলুল্লাহ্‌র (সা) ভাষণের প্রধান বক্তব্যই ছিলো মুসলিম ভাতৃত্বের সংহতি। মুসলিম ভাতৃত্বের প্রতি আত্ম নিবেদন ব্যতীত ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

রুকু - ২

১১। হে বিশ্বাসীগণ ! তোমাদের মধ্যে কিছু লোক যেনো অন্যদের উপহাস না করে ৪৯২৯। কারণ, হতে পারে, যে [শেষোক্ত দল ] তাদের থেকে উত্তম। আর কিছু সংখ্যক স্ত্রীলোক যেনো অন্যদের উপহাস না করে। কারণ, হতে পারে যে [ শেষোক্ত দল ] তাদের থেকে উত্তম। তোমরা পরস্পরের প্রতি নিন্দা বাক্য বলো না ব্যঙ্গোক্তি করো না ; পরস্পরকে [ অপমানজনক ] ডাক নামে ডেকো না ৪৯৩০। কেননা ঈমান আনার পরে যারা [ কোন ব্যক্তিকে ] মন্দ তাৎপর্যসহ খারাপ নামে ডাকে এবং যারা তা থেকে বিরত না হয়, তারা [ সত্যিই ] পাপ কাজ করে।

৪৯২৯। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে নৈতিক চরিত্রের বিশেষ দিকগুলি শিক্ষাদান করা হয়েছে। পুরুষ ও নারী উভয়কে বলা হয়েছে অপরকে উপহাস না করতে। উপহাসের প্রধান উপজীব্য হচ্ছে স্বার্থপরতা ও উদ্ধত একগুঁয়েমী এবং অন্যকে হেয় করার প্রবণতা। অন্যের সাথে হাসি ঠাট্টাতে অংশগ্রহণ করা ভালো, তবে তা হতে হবে নির্মল আনন্দ উপভোগের উপকরণ। অন্যকে হেয় করে বা অন্যকে বিদ্রূপ করে, অপমানিত করে যে আনন্দ লাভ তা নিন্দনীয়। হয়তো প্রকৃতপক্ষে তারা উপহাসকারী অপেক্ষা প্রশংসনীয় ব্যক্তি।

৪৯৩০। সাধারণ মানুষ সমাজ জীবনে যে সব দোষত্রুটিতে অভ্যস্ত যা তাদের দৃষ্টিগোচর হয় না এবং খুব স্বাভাবিক বলে অনুমিত হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা অত্যন্ত গর্হিত। এই আয়াতের মাধ্যমে সেগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। অপরের প্রতি খারাপ বলা, বা লেখা অথবা অন্যের সম্বন্ধে এমন ইঙ্গিত করা যাতে বোঝা যায় সেই ব্যক্তি দোষী এরূপ অভিব্যক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ অন্যের দোষ বিচার করার ক্ষমতা আমাদের নাই ; সে ভার আমাদের দেয়া হয় নাই। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে অপরকে মন্দ নামে ডাকা যার দরুণ সে অসন্তুষ্ট হয়। হয়তো নামটি তার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, কিন্তু সে নামে ডাকলে সে মনে কষ্ট পায় সেরূপ ক্ষেত্রেও সেই মন্দ নামে তাঁকে ডাকা উচিত নয়। যেমন প্রকৃত অন্ধকে 'কানা ' নামে ডাকা বা 'খঞ্জকে' 'খোড়া' নামে ডাকা ইত্যাদি উচিত নয়। তা শুধু অন্ধ বা খঞ্জের জন্য মনোবেদনার কারণই ঘটে। প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তিরা কখনও অন্যের মনোবেদনার কারণ হন না। সুতারাং এই সুক্ষ শিষ্টাচার ইসলাম ধর্মের অংগ বিশেষ।

১২। হে বিশ্বাসীগণ ! [ যতদূর সম্ভব ] সন্দেহ সংশয় থেকে দূরে থাক ৪৯৩১। কারণ কোন কোন ক্ষেত্রে সন্দেহ পাপের কারণ হয়। এবং একে অপরের উপরে গোয়েন্দাগিরি করো না, একে অপরের অসাক্ষাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেহ তার মৃত ভাইএর গোশ্‌ত খেতে চাইবে ৪৯৩২? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ বারে বারে তাওবা কবুলকারী, পরম করুণাময়।

৪৯৩১। এই আয়াতেও পারস্পরিক হক্‌ ও সামাজিক রীতিনীতি ও শিষ্টাচার শিক্ষাদান করা হয়েছে। এই আয়াতে তিনটি বিষয়কে হারাম করা হয়েছে। ১) সন্দেহ, অনুমান বা ধারণা করা; ২) কারও গোপন দোষ সন্ধান করা ও ৩) গীবত বা কোন অনুপস্থিত ব্যক্তি সম্বন্ধে এমন কথা বলা যা শুনলে সে অসহনীয় মনে করতো।

সন্দেহ, অনুমান বা ধারণাকে এস্থলে অপবাদ বোঝানো হয়েছে। কোন ব্যক্তির প্রতি শক্তিশালী প্রমাণ ব্যতিরেকে কোনও দোষ অথবা গোনাহ্‌ আরোপ করা হারাম। ভিত্তিহীন অনুমান পাপ ও অনেক ক্ষেত্রে তা দন্ডনীয় অপরাধ। কারণ অনেক সময়ে তা নিরাপরাধ পুরুষ ও বিশেষতঃ নারীর জন্য অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দ্দশার কারণ ঘটে যা অন্যায়।

দ্বিতীয়তঃ গোপনীয় বিষয় সন্ধান করা বা কারও বিরুদ্ধে স্পাই করা বা অপরের সম্বন্ধে অহেতুক কৌতুহল ও ঔৎসুক্য প্রকাশ করা নিন্দনীয় অপরাধ। কারণ এরূপ কৌতুহলের ভিত্তিই হচ্ছে অলস মস্তিষ্কের কাজ যা সমাজ বা সংসারের কোনও উপকারেই লাগে না। উপরন্তু এ সব কৌতুহল অনেক সময়েই ব্যক্তিকে পাপের পথে আকর্ষণ করে থাকে। অর্থাৎ অনুমান মিথ্যা কথারই নামান্তর।

তৃতীয়তঃ 'গীবত' বা পরনিন্দা মহাপাপ। কারও অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে কষ্টকর কথাবার্তা বলা, যদিও তা সত্য কথা হয় তা হচ্ছে গীবত। এই আয়াতে তিনটি বিষয় নিষিদ্ধ করতে গিয়ে গীবতের নিষিদ্ধতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং একে মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণের সমতুল্য বলে প্রকাশ করে এর নিষিদ্ধতা ও নীচুতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গীবতের মধ্যে কোন প্রতিরোধকারী থাকে না। প্রতিরোধ না থাকার কারণে এর ধারা সাধারণতঃ দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং এতে মানুষ লিপ্তও হয় বেশী এ সব কারণে গীবতের নিষিদ্ধতার উপরে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য : বাংলাদেশীদের জাতীয় অধঃপতনের অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে গীবত।

৪৯৩২। ভাইয়ের মাংস ভক্ষণের মত ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজ চিন্তাও করা যায় না। তারপরে যদি হয় সেই ভাই মৃত ও গলিত শব; সেই মাংস ভক্ষণ কি নিদারুণ ঘৃণ্য ও জঘন্য বিষয়বস্তু। এই উপমার সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে গীবতের জঘন্য চিত্রকে। যেখানে একজনের উপস্থিতিতে তার অনুভূতিতে আঘাত করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে কারও অনুপস্থিতিতে তার সম্বন্ধে সত্য বা মিথ্যা যাই-ই বলা হোক না কেন যা তার অনুভূতি বা সম্মানের জন্য ক্ষতিকর তা কতটা জঘন্য তা সহজেই অনুমেয়।

১৩। হে মানব সম্প্রদায় ! আমি তোমাদের [একজোড়া ] পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি ৪৯৩৩ ; এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেনো তোমরা একে অপরকে [ ঘৃণা না করে ] পরিচিত হতে পার। আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে সেই ব্যক্তি সর্বোচ্চ সম্মানিত যে সবচেয়ে বেশী পূণ্যাত্মা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।

৪৯৩৩। এই আয়াতটির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ সকল মানুষ বা বিশ্ব মানব সম্প্রদায়কে সম্বোধন করেছেন। আয়াতটি শুধুমাত্র মুসলিম ভাতৃত্বের জন্য প্রযোজ্য নহে। প্রকৃতপক্ষে কোরাণ শরীফে মুসলমানদের জন্য আল্লাহ্‌ যে জীবন বিধান দান করেছেন তা বিশ্বমানবের জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য। এখানে বলা হয়েছে মানুষ জাতির সৃষ্টি শুধুমাত্র একজোড়া নর ও নারী থেকে। সমস্ত মনুষ্য কূলের একজন নর ও একজন নারীই পূর্বপুরুষ। আজ দেশে দেশে যত গোত্র, সম্প্রদায় ও জাতি রয়েছে তাদের যত পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকুক না কেন আসলে তারা সকলেই একই পিতা-মাতার সন্তান। আল্লাহ্‌র সম্মুখে সকল মানুষ সমান এই সত্যকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কালো, সাদা, ধনী, দরিদ্র, রাজা-প্রজা,এসবের কোনও মূল্যই আল্লাহ্‌র নিকট নাই। সেই আল্লাহ্‌র নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। মানুষের প্রকৃত পরিচয়কে এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। যে ব্যক্তি চরিত্রগত গুণে গুণান্বিত একমাত্র সেই আসল মর্যদার অধিকারী। এই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বিধান।

১৪। মরুবাসী আরবেরা বলে ৪৯৩৪, " আমরা বিশ্বাস করলাম।" বল, " তোমরা ঈমান আন নাই ; বরং তোমরা [ শুধুমাত্র মুখে ] বল, 'আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আত্মসমর্পন করেছি ৪৯৩৫।' কারণ বিশ্বাস এখনও তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করে নাই। কিন্তু তোমরা যদি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসুলকে মান্য কর,তবে তোমাদের কর্মফল সামান্য পরিমাণও লাঘব করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ বারে বারে ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। "

১৫। শুধুমাত্র তারাই [ প্রকৃত ] মোমেন যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসুলে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তারপরে কোন সন্দেহ করে না। অপরপক্ষে তারা তাদের জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহ্‌র পথে সংগ্রাম করে। এসব লোকেরাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ।

৪৯৩৪। মরুবাসী আরবেরা ইসলামের বিজয় দর্শনে প্রভাবিত হয়ে আনুগত্য স্বীকার করে। কিন্তু তাদের হৃদয় ও মন ছিলো ভীত, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুর চিন্তায় তাদের মন হতো আবর্তিত, বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝে তাদের আত্মা হতো সর্বদা দোদুল্যমান। কিন্তু প্রকৃত ঈমান হচ্ছে আল্লাহ্‌র বিধানের কাছে নিঃশর্ত আত্মনিবেদন। মরুবাসী আরব যারা ঈমান অর্জনে পিছিয়ে পড়েছিলো তাদের কথা সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে [ ৪৮ : ১১ - ১৫ ] আয়াতে। যাদের পটভূমিতে এই আয়াতটি নাজেল হয় তারা ছিলো 'বানু আসাদ' গোত্র। এরা ইসলাম কবুল করে, দুর্ভিক্ষের সময় সাহায্য লাভের আশায়। ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তারা ইসলাম কবুল করে নাই।

৪৯৩৫। অর্থাৎ মরুবাসী আরবরা শুধুমাত্র মৌখিকভাবে বলে যে তারা আত্মসমর্পন করেছে। এটা একটা বাহ্যিক কথা মাত্র। এর কোন আন্তরিক ভিত্তি নাই। যদি তাদের প্রকৃত ঈমান থেকে থাকে তবে এ কথার সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।

১৬। বল, " কি ! তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে আল্লাহ্‌কে শিক্ষা দিতেছ ৪৯৩৬ ? অথচ আল্লাহ্‌ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব সম্বন্ধে অবহিত। সকল বিষয় সম্বন্ধে আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে। "

৪৯৩৬। এই আয়াতটির আবেদন বিশ্বজনীন, যুগ কাল অতিক্রান্ত। মরুবাসী আরবেরা মৌখিকভাবে ঈমান এনে সম্ভবতঃ নিজেদের প্রকৃত মুসলিম বলে মনে করতো। তাদের বলা হয়েছে যে, মৌখিক ঈমানের কোনও মূল্য আল্লাহ্‌র কাছে নাই। বাস্তব জীবনে কর্মের মাধ্যমে ঈমানের পরীক্ষা দিতে হয়। কার অন্তরের ঈমান খাঁটি আর কার ঈমান শুধুমাত্র মৌখিক, আল্লাহ্‌ তা সম্যক অবগত। কারণ আল্লাহ্‌ মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের সকল উদ্দেশ্য গোপন চিন্তা, ভাবনা, সব কিছু খোলা বইএর ন্যায় পাঠ করতে পারেন। আল্লাহকে প্রতারিত করার ক্ষমতা পৃথিবীতে কারও নাই। বাহ্যিকভাবে ধার্মিকতার লেবেলে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করা গেলেও আল্লাহকে প্রতারিত করা সম্ভব নয়। এত যুগ আগে মরুবাসী আরবদের জন্য যে সর্তকবাণী আল্লাহ্‌ প্রেরণ করেছিলেন, আজও মুসলিম নামধারী, ধার্মিকতার লেবেল আঁটা বহু মুসলমানের জন্য তা সমভাবে প্রযোজ্য।

১৭। তারা দাবী করে যে, তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছে ৪৯৩৭। তুমি বল, "তোমাদের ইসলাম কবুল দ্বারা আমার প্রতি কোন প্রকার অনুগ্রহ করেছ এমন দাবী করো না। যদি তোমাদের কথা সত্য হয়, তবে আল্লাহ্‌-ই বরং তোমাদের ঈমানের দিকে হেদায়েত করে অনুগ্রহ করেছেন।

৪৯৩৭। যে আল্লাহ্‌র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে সে ধন্য। এ কথা কেউ যেনো মনে না করে যে ইসলাম গ্রহণ দ্বারা সে কোনও প্রচারক বা সম্প্রদায়ের জন্য গৌরব বহন করে এনেছে। বরং ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে সে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছে। যে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভ করে সেই তো ধন্য। আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো যখন আত্মাকে আলোকিত করে, সে সুখ শান্তি ও অনুভূতি পার্থিব সকল অনুভূতির উর্দ্ধে - তা অমূল্য সম্পদ।

১৮। " নিশ্চয় আল্লাহ্‌ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত গুপ্ত বিষয় জানেন। এবং তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তা অবশ্য দেখেন।" ৪৯৩৮

৪৯৩৮। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা নবাগত মুসলিম বা অন্যদের ধার্মিকতা সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করে তাদের ধার্মিকতার উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করবো। এ ধরণের কাজ হবে পরছিদ্রান্বেষীদের সমতুল্য যা ইসলামে নিষিদ্ধ [ দেখুন আয়াত ৪৯ : ১২ ]। আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ঈমানের ব্যাপারে হব সত্যবাদী, বিশ্বস্ত, আন্তরিক, নিজেকে আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণযোগ্য করার জন্য হব নিবেদিত প্রাণ। অন্য সকলের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কিছু নাই - আল্লাহ্‌ সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। " তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তা অবশ্য দেখেন।"