+
-
R
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : এই সূরাটি মক্কাতে অবতীর্ণ প্রাথমিক সূরাগুলির অন্যতম। এরূপ সাতটি সুরাকে একটি শ্রেণী বা গ্রুপে সন্নিবেশিত করা হয়েছে যা প্রত্যাদেশ ও পারলৌকিক জীবন সম্বন্ধে আলোচনা করে। সকল বাধা বিপত্তির বিরুদ্ধে সত্যের অপ্রতিদ্বন্দী বিজয় সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে এই সূরাতে।
সার সংক্ষেপ : বাতাস মৃদুমন্দ বা বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রবাহিত হতে পারে ; অথবা ঝঞার গতিতে বা প্রচন্ড বেগে সর্বদিকে। কিন্তু যে সত্য আল্লাহ্ প্রেরণ করেছেন তা অবশ্যই স্থায়ী হবে, যার সাহায্যে তোমরা তোমাদের চারিপার্শ্বেই বা অন্তরের মাঝে তাঁর নিদর্শন অনুভব করবে। [ ৫১ : ১ - ২৩ ]।
অতীতের ঘটনা এবং বর্তমানে যা পর্যবেক্ষণ কর সবই তোমাদের কৃতকর্মের পরিণতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আল্লাহ্ তাঁর অপার করুণার নিদর্শন স্বরূপ সতর্ককারী প্রেরণ করেছেন। যদি তোমরা তাঁকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান কর তবে যা ক্ষতি তা তোমাদেরই। [ ৫১ : ২৪ - ৬০ ]।
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৪৯৮৬। আয়াত নং ১ - ৪ পর্যন্ত চারটি শপথ বাক্যের উচ্চারণ করা হয়েছে। যে সত্যের বর্ণনা আয়াত [৫ - ৬ ] করা হয়েছে, সেই সত্যের একত্ব ও সন্দেহাতীতের স্বাক্ষর এই শপথগুলি। এগুলি আল্লাহ্র ক্ষমতা ও কল্যাণ হস্তের স্বাক্ষর; তাঁর বিশ্বজনীন পরিকল্পনার স্বাক্ষর এবং ভালো ও মন্দের শেষ পরিণতির স্বাক্ষর যখন ন্যায় বিচারের মাধ্যমে প্রত্যেককে প্রত্যেকের কর্মফল দেয়া হবে।
৪৯৮৭। 'ধুলিঝঞা ' - প্রকৃতির এক প্রচন্ড শক্তি, যখন ঝড়ের গতিতে তা প্রবাহিত হয়, তখন তার ধ্বংসলীলা সকলেই অবগত। সমস্ত প্রকৃতি ধূলিতে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। ধূলিঝঞা হচ্ছে বাতাসের এক রুদ্র মূর্তি যার শুধুমাত্র ক্ষতিকর দিক থাকে তা সত্য নয়। সাধারণ বাতাস প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। উদ্ভিদ জগত তাদের বীজের বিস্তার ঘটায় বাতাসের মাধ্যমে। ভূপৃষ্ঠের তাপের তারতম্য অনুযায়ী বাতাসের গতিবেগ ও বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ফলে ভূপৃষ্ঠ বাসপোযোগী হয়। বায়ু প্রবাহ জলীয় বাষ্পকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিচালিত করে মেঘরূপে - ফলে শুষ্ক ধরাতল বৃষ্টির পানিতে সঞ্জিবীত হয়ে শস্য শ্যামল রূপ ধারণ করে। বাতাস কখনও রুদ্র মূর্তিতে ঝড়রূপে, কখনও মৃদুমন্দ হিল্লোলে প্রবাহিত হয়ে পৃথিবীর জীবনকে ফুল, ফল, ফসলে ভরিয়ে তোলে। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ আধ্যাত্মিক জীবনে প্রচন্ড শক্তি রূপে কাজ করে থাকে। একে বাধা দান করার ক্ষমতা কারও নাই। সকল বাধা-বিপত্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বাধ্য। প্রত্যাদেশের সত্য সর্বদা নির্দ্দেশ করে সেই দিনের প্রতি যা অবশ্যম্ভাবী, যে দিন হবে কর্মফল দিবস; যার প্রতি লক্ষ্য রেখে সারা সৃষ্টি আবর্তিত হচ্ছে।
৪৯৮৮। বায়ুকে মেঘপুঞ্জ বা জলীয় বাষ্পের ভারী বোঝা বহনকারী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে অথবা বায়ুকে মেঘের বোঝা বহনকারীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। যাই-ই হোক না কেন এও আল্লাহ্র এক কুদরত। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশও ঠিক সেরূপ, মানুষের আত্মার ভারী বোঝা বহন করে দুরে সরিয়ে ফেলে। ফলে যুগে যুগের প্রাচীন প্রথা, কুসংস্কার, পাপ বিদূরীত হয়ে মানুষকে তার শেষ পরিণতির শুভ ফলের দিকে পরিচালিত করে।
৪৯৮৯। এখানে বাতাসের মৃদু মন্দ স্বচ্ছন্দ গতির কথা বলা হয়েছে যা নৌযানের পালকে ফুলিয়ে রাখতে সাহায্য করে, ফলে বাণিজ্য তরী তার নির্দ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। অথবা নৌযানের কথা বলা হয়েছে, পানির মধ্যে যার স্বচ্চন্দ গতির উল্লেখ এখানে এবং আরও অন্যান্য আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে 'Jara' এই শব্দটির দ্বারা যেমন দেখুন [২ : ১৬৪ ] আয়াতে।
৪৯৯১। "প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি " - আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দান করেছেন অনুতাপকারীদের তাঁর ক্ষমা ও দয়া এবং পাপী ও আল্লাহকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য ন্যায় বিচার ও শাস্তি এবং পারলৌকিক জীবনের প্রতিশ্রুতি। এ কথা বলা হয়েছে যে পৃথিবীর জীবনই শেষ কথা নয় মৃত্যুর পরে আছে স্থায়ী ও অনন্ত জীবন। পৃথিবীর জীবন হচ্ছে সে জীবনের জন্য প্রস্তুতি ক্ষেত্র মাত্র।
৪৯৯২। 'Din' প্রতিটি লোককে তার প্রাপ্য অনুযায়ী অংশ দেওয়া। এই শব্দটি ব্যবহার হয়েছে শেষ বিচারের দিনের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর জীবনের সকল অসমতা, সকল অন্যায়, অবিচারের সেদিন সমতা আনায়ন করা হবে।
৪৯৯৩। কোটি কোটি তারার মেলা হচ্ছে সূদূর নক্ষত্রমন্ডলী। নভোমন্ডলে অসংখ্য গ্রহ, নক্ষত্র নির্দ্দিষ্ট গতিপথ অতিক্রম করে চলছে, আবার ধূমকেতু বা উল্কারা অনির্দ্দিষ্টের পানে ধেয়ে চলেছে। এরূপ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে যে নভোমন্ডল, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তা গবেষণার বিষয়বস্তু। " বহু পথ বিশিষ্ট আকাশ " হচ্ছে গ্রহ, নক্ষত্র, তারকারাজি, ধূমকেতু, উল্কা প্রভৃতির বিভিন্ন গতিপথ - যা উচ্চতর বিজ্ঞানের যেমন জোতির্বিজ্ঞান, অংক শাস্ত্রের বিষয়বস্তু। কিন্তু মানুষ খুব কমই জ্ঞান ধারণ করে এ সম্বন্ধে। কিন্তু গ্রহ, নক্ষত্র, তারকারাজি এদের সম্বন্ধে আল্লাহ্র এক নির্দ্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।
৪৯৯৪। যারা বিভিন্ন মতবাদের দ্বারা বিভ্রান্ত, তারাই হয় সন্দেহ বাতিক। পরলোকের জীবনকে অস্বীকার দ্বারা কোনও মতবাদই আধ্যাত্মিক জীবনকে সমুন্নত রাখতে সক্ষম নয়।
৪৯৯৬। যারা আল্লাহ্র বাণীকে পরিত্যাগ করে তারা সত্যভ্রষ্ট। আধ্যাত্মিক জগতে তারা বিপদজনক অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু তারা জানে না। কারণ তারা বিভ্রান্ত।
৪৯৯৭। পৃথিবীতে অবিশ্বাসীরা পরিহাস ভরে বলে থাকে যে, পরলোকে যদি শাস্তি থেকেই থাকে তবে তা ত্বরাণ্বিত করা হোক। কিন্তু যখন তা সত্যিকার ভাবে তাদের উপরে নিপতিত হবে, তখন তারা বুঝতে পারবে যে কত ভয়াবহ সে শাস্তি। দেখুন [ ২৫ : ২০৪। আয়াত ও টিকা ৩২৩০।
৪৯৯৮। শরীর ও মনের সর্বোচ্চ ও প্রকৃত প্রশান্তিকে কোরাণের বহু স্থানে বাগান ও প্রস্রবণ এই উপমার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
৪৯৯৯। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।
১) তাঁরা সৎ জীবন যাপন করবেন এবং তারা হবেন সৎ কর্মপরায়ণ; তাঁদের বহু সময় ব্যয় হবে সৎ কর্মের পরিকল্পনায়। [ আয়াত নং ১৬ ]
২) রাত্রিকে তাঁরা নিদ্রাতে ব্যয় করেন না, তাঁরা রাত্রি ভরে এবাদতে মশগুল থাকনে, এক কথায় তাদের বৈশিষ্ট্য হবে তারা অলস জীবন যাপনকে ঘৃণা করবেন, এবং আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র সৃষ্টির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে জীবনকে ধন্য মনে করবেন।
৫০০০। মুত্তাকীদের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁরা সূর্যদয়ের পূর্বে রাত্রির শেষ প্রহরে শয্যা ত্যাগ করেন এবং এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। এই ক্ষমা প্রার্থনার অর্থ এই নয় যে, তাঁরা নূতন করে কোন পাপ কাজ করেছেন। এই ক্ষমা প্রার্থনার অর্থ তাঁদের আত্মনিবেদন মহান স্রষ্টার নিকট। দিনের শুরুতে তাঁরা সর্বোচ্চ বিনয়ের সাথে সর্বশক্তিমানের নিকট সারা দিনের কর্মকোলাহল ও দোষত্রুটি থেকে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনা করে দিন শুরু করে থাকেন। তাঁরা নিজের জন্য ও অপরের জন্যও প্রার্থনা করে থাকেন যার প্রতিফলন হচ্ছে সূরা ফাতেহার ৫নং আয়াত। দেখুন [ ১ : ৫ ] আয়াত ও টিকা ২১।
৫০০১। ভিক্ষুকরাই শুধুমাত্র দানের যোগ্য এ কথা ইসলামে স্বীকার করে না। যারা অভাবগ্রস্থ কিন্তু মানুষের নিকট যাঞা করা থেকে বিরত থাকে তারাও দানের যোগ্য পাত্র। অভাবগ্রস্থ লোক বহু কারণেই অন্যের কৃপা বা দয়া ভিক্ষা না করতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে তাদের প্রয়োজন কম। কারণগুলি নিম্নরূপ হতে পারে :
১) হয়তো অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি অত্যন্ত আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি। যার ফলে তাঁর পক্ষে অন্যের কৃপা ভিক্ষা করা অত্যন্ত অপমানজনক বোধ হয়।
২) হয়তো বা তিনি এমন কোনও মহত্তর ও বৃহ্ত্তর কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন যার ফলে কারও অনুগ্রহ প্রার্থনার কথা তাঁর স্মরণেই আসে না।
৩) এমনও হতে পারে ব্যক্তি তাঁর অভাব সম্বন্ধে সচেতন নয় যেমন : পৃথিবীতে অনেক উপজাতীয় সম্প্রদায় বাস করে যারা প্রকৃত শিক্ষার অভাব বোধ করে না। মনে রাখতে হবে অভাব শুধুমাত্র অর্থ সম্পদেরই হয় না। অভাব হতে পারে জ্ঞানের, দয়ার,কর্মকুশলতার প্রভৃতি জীবনের বিকাশের বিভিন্ন বস্তুর।
৪) অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি সব সময় নাও জানতে পারে কোথায় যাঞা করলে তার অভাব মিটানো সম্ভব হবে। অথবা
৫) অভাবগ্রস্থরা হতে পারে নির্বোধ বা ভাষাহীন। সব সময়ে তা মানুষ নাও হতে পারে। হতে পারে তা কোনও বোবা প্রাণী বা আল্লাহ্র সৃষ্ট যে কোনও প্রাণ যা অত্যন্ত অসহায়। ইসলামে দানের সজ্ঞা অত্যন্ত ব্যপক। ব্যপক অর্থে দান হচ্ছে আল্লাহ্র যে কোনও অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যক্তি [ হতে পারে তা মেধা, সৃজন ক্ষমতা, অর্থ সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি ইত্যাদি ] তার প্রাপ্ত অনুগ্রহ সমাজ, জাতি, আল্লাহ্র সৃষ্টির সেবার কাজে নিয়োজিত করবে - আর তাই হচ্ছে দান। দেখুন আয়াত [ ২ : ১৭৭ ] ও টিকা ১৭৯ ; আরও দেখুন [ ২ : ২৭৩ - ২৭৪ ] আয়াত ও টিকা ৩২২ ও ৩২৩।
৫০০২। আল্লাহ্র অস্তিত্বের নিদর্শন সারা বিশ্ব চরাচরে ছড়ানো রয়েছে। যার অনুভব করার মন আছে সেই বুঝতে পারে, যার দেখার মত অন্তর্দৃষ্টি আছে, সেই শুধু দেখতে পায়, যার শোনার মত শ্রবণশক্তি আছে সেই শুধুমাত্র সত্যের আহ্বান শুনতে পায়। আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যক্ষ করার জন্য খুব বেশী দূর যাওয়ার প্রয়োজন নাই। মানুষের জীবন, শরীরবৃত্তি, ও আত্মার মাঝে আল্লাহ্র সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রকাশ ঘটেছে। যারা জীববিজ্ঞান পড়েছেন তারা জানেন মানুষের শরীরবৃত্তি কি অসম্ভব বিস্ময়কর ব্যাপার। দেখুন [ ৪১ : ৫৩ ] আয়াত।
৫০০৩। 'রিযক' এর উল্লেখ এই আয়াতেএবং অন্যান্য আয়াতেও আছে। 'রিযক ' বা জীবিকা কোরাণে ব্যবহৃত হয়েছে ব্যপক অর্থে এর অর্থ শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পুষ্টি বা জীবিকা, 'আকাশ' হচ্ছে উভয় জীবিকার উৎস। আমরা খাদ্যের জন্য উদ্ভিদ জগতের উপরে নিভর্রশীল এবং উদ্ভিদ জগত তার বৃদ্ধি ও শষ্য উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণরূপে আকাশ থেকে পতিত বৃষ্টির পানি ও সূর্যের আলোর উপরে নির্ভরশীল। ঠিক সেরূপ আধ্যাত্মিক জীবিকা বা পুষ্টি আল্লাহ্র করুণা, দয়া, ও ক্ষমা ও অনুগ্রহের উপরে নির্ভরশীল। প্রত্যাদেশ এবং সর্তককারীর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের জন্য আধ্যাত্মিক উন্নতির রসদ সরবরাহ করে থাকেন।
৫০০৪। উপরের আয়াতগুলিতে [ ২০ - ২২ ] উল্লেখ করা হয়েছে যে, সারা বিশ্ব ভূবনে আল্লাহ্র নিদর্শন ছড়ানো আছে, এমন কি মানুষের শরীর ও ব্যক্তিসত্ত্বার মাঝেও আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল বিদ্যমান। এ সবের উল্লেখের মাধ্যমে মানুষের বিবেকের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তবুও কি তারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে সত্য বলে অনুধাবন করবে না ? আধ্যাত্মিক জগতের প্রয়োজন বুঝতে পারবে না ? মানুষ নিজের অস্তিত্ব ও সত্ত্বাকে যে ভাবে প্রকৃত সত্য বলে অনুভব করে, আল্লাহ্র অস্তিত্ব বিশ্বভূবনে তার থেকেও অধিক সুস্পষ্ট। বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজেদের মধ্যে কথা বলা বা আলোচনা দ্বারা বোঝানো হয়েছে- মানুষের নিজস্ব ব্যক্তিসত্ত্বার অস্তিত্ব।
সূরা যারিয়াত
সূরা যারিয়াত বা ধূলিঝঞা - ৫১
৬০ আয়াত, ৩ রুকু, মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : এই সূরাটি মক্কাতে অবতীর্ণ প্রাথমিক সূরাগুলির অন্যতম। এরূপ সাতটি সুরাকে একটি শ্রেণী বা গ্রুপে সন্নিবেশিত করা হয়েছে যা প্রত্যাদেশ ও পারলৌকিক জীবন সম্বন্ধে আলোচনা করে। সকল বাধা বিপত্তির বিরুদ্ধে সত্যের অপ্রতিদ্বন্দী বিজয় সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে এই সূরাতে।
সার সংক্ষেপ : বাতাস মৃদুমন্দ বা বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রবাহিত হতে পারে ; অথবা ঝঞার গতিতে বা প্রচন্ড বেগে সর্বদিকে। কিন্তু যে সত্য আল্লাহ্ প্রেরণ করেছেন তা অবশ্যই স্থায়ী হবে, যার সাহায্যে তোমরা তোমাদের চারিপার্শ্বেই বা অন্তরের মাঝে তাঁর নিদর্শন অনুভব করবে। [ ৫১ : ১ - ২৩ ]।
অতীতের ঘটনা এবং বর্তমানে যা পর্যবেক্ষণ কর সবই তোমাদের কৃতকর্মের পরিণতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আল্লাহ্ তাঁর অপার করুণার নিদর্শন স্বরূপ সতর্ককারী প্রেরণ করেছেন। যদি তোমরা তাঁকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান কর তবে যা ক্ষতি তা তোমাদেরই। [ ৫১ : ২৪ - ৬০ ]।
সূরা যারিয়াত বা ধূলিঝঞা - ৫১
৬০ আয়াত, ৩ রুকু, মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
০১। শপথ ধূলিঝঞার ৪৯৮৬, ৪৯৮৭
৪৯৮৬। আয়াত নং ১ - ৪ পর্যন্ত চারটি শপথ বাক্যের উচ্চারণ করা হয়েছে। যে সত্যের বর্ণনা আয়াত [৫ - ৬ ] করা হয়েছে, সেই সত্যের একত্ব ও সন্দেহাতীতের স্বাক্ষর এই শপথগুলি। এগুলি আল্লাহ্র ক্ষমতা ও কল্যাণ হস্তের স্বাক্ষর; তাঁর বিশ্বজনীন পরিকল্পনার স্বাক্ষর এবং ভালো ও মন্দের শেষ পরিণতির স্বাক্ষর যখন ন্যায় বিচারের মাধ্যমে প্রত্যেককে প্রত্যেকের কর্মফল দেয়া হবে।
৪৯৮৭। 'ধুলিঝঞা ' - প্রকৃতির এক প্রচন্ড শক্তি, যখন ঝড়ের গতিতে তা প্রবাহিত হয়, তখন তার ধ্বংসলীলা সকলেই অবগত। সমস্ত প্রকৃতি ধূলিতে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। ধূলিঝঞা হচ্ছে বাতাসের এক রুদ্র মূর্তি যার শুধুমাত্র ক্ষতিকর দিক থাকে তা সত্য নয়। সাধারণ বাতাস প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। উদ্ভিদ জগত তাদের বীজের বিস্তার ঘটায় বাতাসের মাধ্যমে। ভূপৃষ্ঠের তাপের তারতম্য অনুযায়ী বাতাসের গতিবেগ ও বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ফলে ভূপৃষ্ঠ বাসপোযোগী হয়। বায়ু প্রবাহ জলীয় বাষ্পকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিচালিত করে মেঘরূপে - ফলে শুষ্ক ধরাতল বৃষ্টির পানিতে সঞ্জিবীত হয়ে শস্য শ্যামল রূপ ধারণ করে। বাতাস কখনও রুদ্র মূর্তিতে ঝড়রূপে, কখনও মৃদুমন্দ হিল্লোলে প্রবাহিত হয়ে পৃথিবীর জীবনকে ফুল, ফল, ফসলে ভরিয়ে তোলে। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ আধ্যাত্মিক জীবনে প্রচন্ড শক্তি রূপে কাজ করে থাকে। একে বাধা দান করার ক্ষমতা কারও নাই। সকল বাধা-বিপত্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বাধ্য। প্রত্যাদেশের সত্য সর্বদা নির্দ্দেশ করে সেই দিনের প্রতি যা অবশ্যম্ভাবী, যে দিন হবে কর্মফল দিবস; যার প্রতি লক্ষ্য রেখে সারা সৃষ্টি আবর্তিত হচ্ছে।
০২। এবং শপথ তারই যা উত্তোলন করে এবং বহন করে বোঝার ভার ৪৯৮৮ ;
৪৯৮৮। বায়ুকে মেঘপুঞ্জ বা জলীয় বাষ্পের ভারী বোঝা বহনকারী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে অথবা বায়ুকে মেঘের বোঝা বহনকারীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। যাই-ই হোক না কেন এও আল্লাহ্র এক কুদরত। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশও ঠিক সেরূপ, মানুষের আত্মার ভারী বোঝা বহন করে দুরে সরিয়ে ফেলে। ফলে যুগে যুগের প্রাচীন প্রথা, কুসংস্কার, পাপ বিদূরীত হয়ে মানুষকে তার শেষ পরিণতির শুভ ফলের দিকে পরিচালিত করে।
০৩। এবং শপথ মৃদু ও স্বচ্ছন্দগতি [ নৌযানের ] ৪৯৮৯
৪৯৮৯। এখানে বাতাসের মৃদু মন্দ স্বচ্ছন্দ গতির কথা বলা হয়েছে যা নৌযানের পালকে ফুলিয়ে রাখতে সাহায্য করে, ফলে বাণিজ্য তরী তার নির্দ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। অথবা নৌযানের কথা বলা হয়েছে, পানির মধ্যে যার স্বচ্চন্দ গতির উল্লেখ এখানে এবং আরও অন্যান্য আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে 'Jara' এই শব্দটির দ্বারা যেমন দেখুন [২ : ১৬৪ ] আয়াতে।
০৪। এবং শপথ তাদের যারা আল্লাহ্র আদেশে ন্যায্যভাবে [ কর্ম ] বণ্টন করে ৪৯৯০ ;
৪৯৯০। "যারা কর্ম বন্টন করে " বাক্যটি দ্বারা আল্লাহ্র বিভিন্ন অনুমোদিত প্রতিনিধিদের কথা বলা হয়েছে যারা আল্লাহ্র বিভিন্ন অনুগ্রহ মানুষের জন্য দুনিয়াতে নিয়ে আসেন যেমন : বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত, বায়ু চাপ মেঘের সঞ্চালন ইত্যাদি। এসব কর্মবন্টন এক সুনির্দ্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলে, যা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ কর্তৃক নির্দ্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশেও সেরূপ আল্লাহ্র অপার অনুগ্রহ যা মানুষের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়।০৫। নিশ্চয়ই তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা সত্য ৪৯৯১ ;
৪৯৯১। "প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি " - আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দান করেছেন অনুতাপকারীদের তাঁর ক্ষমা ও দয়া এবং পাপী ও আল্লাহকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য ন্যায় বিচার ও শাস্তি এবং পারলৌকিক জীবনের প্রতিশ্রুতি। এ কথা বলা হয়েছে যে পৃথিবীর জীবনই শেষ কথা নয় মৃত্যুর পরে আছে স্থায়ী ও অনন্ত জীবন। পৃথিবীর জীবন হচ্ছে সে জীবনের জন্য প্রস্তুতি ক্ষেত্র মাত্র।
০৬। অবশ্যই ন্যায় বিচার অবশ্যম্ভাবী ৪৯৯২।
৪৯৯২। 'Din' প্রতিটি লোককে তার প্রাপ্য অনুযায়ী অংশ দেওয়া। এই শব্দটি ব্যবহার হয়েছে শেষ বিচারের দিনের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর জীবনের সকল অসমতা, সকল অন্যায়, অবিচারের সেদিন সমতা আনায়ন করা হবে।
০৭। শপথ বহু পথ বিশিষ্ট আসমানের ৪৯৯৩।
৪৯৯৩। কোটি কোটি তারার মেলা হচ্ছে সূদূর নক্ষত্রমন্ডলী। নভোমন্ডলে অসংখ্য গ্রহ, নক্ষত্র নির্দ্দিষ্ট গতিপথ অতিক্রম করে চলছে, আবার ধূমকেতু বা উল্কারা অনির্দ্দিষ্টের পানে ধেয়ে চলেছে। এরূপ কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে যে নভোমন্ডল, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের তা গবেষণার বিষয়বস্তু। " বহু পথ বিশিষ্ট আকাশ " হচ্ছে গ্রহ, নক্ষত্র, তারকারাজি, ধূমকেতু, উল্কা প্রভৃতির বিভিন্ন গতিপথ - যা উচ্চতর বিজ্ঞানের যেমন জোতির্বিজ্ঞান, অংক শাস্ত্রের বিষয়বস্তু। কিন্তু মানুষ খুব কমই জ্ঞান ধারণ করে এ সম্বন্ধে। কিন্তু গ্রহ, নক্ষত্র, তারকারাজি এদের সম্বন্ধে আল্লাহ্র এক নির্দ্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।
০৮। সত্যিই তোমরা পরস্পর বিরোধী মতবাদে লিপ্ত ৪৯৯৪।
৪৯৯৪। যারা বিভিন্ন মতবাদের দ্বারা বিভ্রান্ত, তারাই হয় সন্দেহ বাতিক। পরলোকের জীবনকে অস্বীকার দ্বারা কোনও মতবাদই আধ্যাত্মিক জীবনকে সমুন্নত রাখতে সক্ষম নয়।
০৯। এর দ্বারা যারা বিভ্রান্ত হওয়ার তারাই [সত্য থেকে ] বিভ্রান্ত হয়
১০। যারা মিথ্যার কারবারী তারা ধবংস হোক, -
১১। যারা অবহেলা ভরে ভুলের সমুদ্রে [ডুবে] রয়েছে ৪৯৯৬।
১০। যারা মিথ্যার কারবারী তারা ধবংস হোক, -
১১। যারা অবহেলা ভরে ভুলের সমুদ্রে [ডুবে] রয়েছে ৪৯৯৬।
৪৯৯৬। যারা আল্লাহ্র বাণীকে পরিত্যাগ করে তারা সত্যভ্রষ্ট। আধ্যাত্মিক জগতে তারা বিপদজনক অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু তারা জানে না। কারণ তারা বিভ্রান্ত।
১২। তারা জিজ্ঞাসা করে, " কবে ন্যায় বিচারের দিন আসবে ?"
১৩। [ এটা হবে ] সেদিন, যেদিন তাদের যাচাই করা হবে [ এবং পরীক্ষা করা হবে ] আগুনের উপরে।
১৪। [বলা হবেঃ ] " তোমাদের শাস্তিকে আস্বাদন কর; কেননা ইহাই তা যা তোমরা দ্রুত করতে চেয়েছিলে ৪৯৯৭। "
১৩। [ এটা হবে ] সেদিন, যেদিন তাদের যাচাই করা হবে [ এবং পরীক্ষা করা হবে ] আগুনের উপরে।
১৪। [বলা হবেঃ ] " তোমাদের শাস্তিকে আস্বাদন কর; কেননা ইহাই তা যা তোমরা দ্রুত করতে চেয়েছিলে ৪৯৯৭। "
৪৯৯৭। পৃথিবীতে অবিশ্বাসীরা পরিহাস ভরে বলে থাকে যে, পরলোকে যদি শাস্তি থেকেই থাকে তবে তা ত্বরাণ্বিত করা হোক। কিন্তু যখন তা সত্যিকার ভাবে তাদের উপরে নিপতিত হবে, তখন তারা বুঝতে পারবে যে কত ভয়াবহ সে শাস্তি। দেখুন [ ২৫ : ২০৪। আয়াত ও টিকা ৩২৩০।
১৫। পূণ্যাত্মারা, সেদিন তারা বাগান ও প্রস্রবণের মধ্যে থাকবে ৪৯৯৮;
৪৯৯৮। শরীর ও মনের সর্বোচ্চ ও প্রকৃত প্রশান্তিকে কোরাণের বহু স্থানে বাগান ও প্রস্রবণ এই উপমার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৬। তাদের প্রভু তাদের যা দেবেন তারা তাতে আনন্দিত হবে। কারণ, এর পূর্বে [পৃথিবীতে ] তারা সৎ জীবন যাপন করেছে।
১৭। তারা রাত্রির সামান্য অংশই অতিবাহিত করতো নিদ্রায় ৪৯৯৯;
১৭। তারা রাত্রির সামান্য অংশই অতিবাহিত করতো নিদ্রায় ৪৯৯৯;
৪৯৯৯। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।
১) তাঁরা সৎ জীবন যাপন করবেন এবং তারা হবেন সৎ কর্মপরায়ণ; তাঁদের বহু সময় ব্যয় হবে সৎ কর্মের পরিকল্পনায়। [ আয়াত নং ১৬ ]
২) রাত্রিকে তাঁরা নিদ্রাতে ব্যয় করেন না, তাঁরা রাত্রি ভরে এবাদতে মশগুল থাকনে, এক কথায় তাদের বৈশিষ্ট্য হবে তারা অলস জীবন যাপনকে ঘৃণা করবেন, এবং আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র সৃষ্টির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে জীবনকে ধন্য মনে করবেন।
১৮। রাত্রির শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতো ৫০০০ ;
৫০০০। মুত্তাকীদের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁরা সূর্যদয়ের পূর্বে রাত্রির শেষ প্রহরে শয্যা ত্যাগ করেন এবং এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। এই ক্ষমা প্রার্থনার অর্থ এই নয় যে, তাঁরা নূতন করে কোন পাপ কাজ করেছেন। এই ক্ষমা প্রার্থনার অর্থ তাঁদের আত্মনিবেদন মহান স্রষ্টার নিকট। দিনের শুরুতে তাঁরা সর্বোচ্চ বিনয়ের সাথে সর্বশক্তিমানের নিকট সারা দিনের কর্মকোলাহল ও দোষত্রুটি থেকে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনা করে দিন শুরু করে থাকেন। তাঁরা নিজের জন্য ও অপরের জন্যও প্রার্থনা করে থাকেন যার প্রতিফলন হচ্ছে সূরা ফাতেহার ৫নং আয়াত। দেখুন [ ১ : ৫ ] আয়াত ও টিকা ২১।
১৯। এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে [ অভাবগ্রস্থের ] অধিকার ; যারা যাঞা করে তাদের, অথবা যারা [সঙ্কোচবশে ] যাঞা করা থেকে বিরত থাকে তাদেরও ৫০০১।
৫০০১। ভিক্ষুকরাই শুধুমাত্র দানের যোগ্য এ কথা ইসলামে স্বীকার করে না। যারা অভাবগ্রস্থ কিন্তু মানুষের নিকট যাঞা করা থেকে বিরত থাকে তারাও দানের যোগ্য পাত্র। অভাবগ্রস্থ লোক বহু কারণেই অন্যের কৃপা বা দয়া ভিক্ষা না করতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে তাদের প্রয়োজন কম। কারণগুলি নিম্নরূপ হতে পারে :
১) হয়তো অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি অত্যন্ত আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি। যার ফলে তাঁর পক্ষে অন্যের কৃপা ভিক্ষা করা অত্যন্ত অপমানজনক বোধ হয়।
২) হয়তো বা তিনি এমন কোনও মহত্তর ও বৃহ্ত্তর কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন যার ফলে কারও অনুগ্রহ প্রার্থনার কথা তাঁর স্মরণেই আসে না।
৩) এমনও হতে পারে ব্যক্তি তাঁর অভাব সম্বন্ধে সচেতন নয় যেমন : পৃথিবীতে অনেক উপজাতীয় সম্প্রদায় বাস করে যারা প্রকৃত শিক্ষার অভাব বোধ করে না। মনে রাখতে হবে অভাব শুধুমাত্র অর্থ সম্পদেরই হয় না। অভাব হতে পারে জ্ঞানের, দয়ার,কর্মকুশলতার প্রভৃতি জীবনের বিকাশের বিভিন্ন বস্তুর।
৪) অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি সব সময় নাও জানতে পারে কোথায় যাঞা করলে তার অভাব মিটানো সম্ভব হবে। অথবা
৫) অভাবগ্রস্থরা হতে পারে নির্বোধ বা ভাষাহীন। সব সময়ে তা মানুষ নাও হতে পারে। হতে পারে তা কোনও বোবা প্রাণী বা আল্লাহ্র সৃষ্ট যে কোনও প্রাণ যা অত্যন্ত অসহায়। ইসলামে দানের সজ্ঞা অত্যন্ত ব্যপক। ব্যপক অর্থে দান হচ্ছে আল্লাহ্র যে কোনও অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যক্তি [ হতে পারে তা মেধা, সৃজন ক্ষমতা, অর্থ সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি ইত্যাদি ] তার প্রাপ্ত অনুগ্রহ সমাজ, জাতি, আল্লাহ্র সৃষ্টির সেবার কাজে নিয়োজিত করবে - আর তাই হচ্ছে দান। দেখুন আয়াত [ ২ : ১৭৭ ] ও টিকা ১৭৯ ; আরও দেখুন [ ২ : ২৭৩ - ২৭৪ ] আয়াত ও টিকা ৩২২ ও ৩২৩।
২০। যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী, ধরিত্রির বুকে তাদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন;
২১। এবং তোমাদের নিজেদের [অস্থিত্বের ] মাঝেও ৫০০২ ; তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না ?
২১। এবং তোমাদের নিজেদের [অস্থিত্বের ] মাঝেও ৫০০২ ; তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না ?
৫০০২। আল্লাহ্র অস্তিত্বের নিদর্শন সারা বিশ্ব চরাচরে ছড়ানো রয়েছে। যার অনুভব করার মন আছে সেই বুঝতে পারে, যার দেখার মত অন্তর্দৃষ্টি আছে, সেই শুধু দেখতে পায়, যার শোনার মত শ্রবণশক্তি আছে সেই শুধুমাত্র সত্যের আহ্বান শুনতে পায়। আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যক্ষ করার জন্য খুব বেশী দূর যাওয়ার প্রয়োজন নাই। মানুষের জীবন, শরীরবৃত্তি, ও আত্মার মাঝে আল্লাহ্র সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রকাশ ঘটেছে। যারা জীববিজ্ঞান পড়েছেন তারা জানেন মানুষের শরীরবৃত্তি কি অসম্ভব বিস্ময়কর ব্যাপার। দেখুন [ ৪১ : ৫৩ ] আয়াত।
২২। আকাশে রয়েছে তোমাদের জন্য রিযি্ক ও প্রতিশ্রুত সমস্ত কিছু ৫০০৩।
৫০০৩। 'রিযক' এর উল্লেখ এই আয়াতেএবং অন্যান্য আয়াতেও আছে। 'রিযক ' বা জীবিকা কোরাণে ব্যবহৃত হয়েছে ব্যপক অর্থে এর অর্থ শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পুষ্টি বা জীবিকা, 'আকাশ' হচ্ছে উভয় জীবিকার উৎস। আমরা খাদ্যের জন্য উদ্ভিদ জগতের উপরে নিভর্রশীল এবং উদ্ভিদ জগত তার বৃদ্ধি ও শষ্য উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণরূপে আকাশ থেকে পতিত বৃষ্টির পানি ও সূর্যের আলোর উপরে নির্ভরশীল। ঠিক সেরূপ আধ্যাত্মিক জীবিকা বা পুষ্টি আল্লাহ্র করুণা, দয়া, ও ক্ষমা ও অনুগ্রহের উপরে নির্ভরশীল। প্রত্যাদেশ এবং সর্তককারীর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের জন্য আধ্যাত্মিক উন্নতির রসদ সরবরাহ করে থাকেন।
২৩। অতএব, আকাশ ও পৃথিবীর প্রভুর শপথ ৫০০৪ ; নিশ্চয়ই ইহা [ কেয়ামত ] তেমনি সত্য, যেমন তোমরা পরস্পরের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার সাথে কথা বলে থাক।
৫০০৪। উপরের আয়াতগুলিতে [ ২০ - ২২ ] উল্লেখ করা হয়েছে যে, সারা বিশ্ব ভূবনে আল্লাহ্র নিদর্শন ছড়ানো আছে, এমন কি মানুষের শরীর ও ব্যক্তিসত্ত্বার মাঝেও আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল বিদ্যমান। এ সবের উল্লেখের মাধ্যমে মানুষের বিবেকের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তবুও কি তারা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশকে সত্য বলে অনুধাবন করবে না ? আধ্যাত্মিক জগতের প্রয়োজন বুঝতে পারবে না ? মানুষ নিজের অস্তিত্ব ও সত্ত্বাকে যে ভাবে প্রকৃত সত্য বলে অনুভব করে, আল্লাহ্র অস্তিত্ব বিশ্বভূবনে তার থেকেও অধিক সুস্পষ্ট। বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজেদের মধ্যে কথা বলা বা আলোচনা দ্বারা বোঝানো হয়েছে- মানুষের নিজস্ব ব্যক্তিসত্ত্বার অস্তিত্ব।
রুকু - ২
৫০০৫। দেখুন [ ১১ : ৬৯ - ৭৩ ] আয়াত। কাহিনীর বিশদ বিবরণ আছে [ ১৫ : ৫১ - ৫৬ ] আয়াতে।
৫০০৬। ফেরেশতারা মানুষের বেশে হযরত ইব্রাহীমের তাঁবুর দুয়ারে উপস্থিত হলেন এবং 'শান্তির ' অভিবাদন করলেন। ইব্রাহীম তাঁদের অভিবাদনের প্রতি উত্তর দিলেন কিন্তু ফেরেশতাদের দর্শনে তাঁর প্রতীয়মান হলো যে এরা সাধারণ ব্যক্তি নন।
৫০০৮। হযরত ইব্রাহীমের নিকট অতিথিদ্বয়কে সাধারণ ব্যক্তি মনে হয় নাই। কিন্তু তিনি বাহ্যতঃ তা প্রকাশ না করে তাদের প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শনে নিয়োজিত হলেন। মোটা তাজা গোবৎসের মাংস ভাজা দ্বারা তিনি তাদের আপ্যায়ন করলেন। কিন্তু অতিথিদ্বয় খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ করলো না [ ১১ : ৭০ ]। তাদের এই ব্যবহার হযরত ইব্রাহীমকে মনে মনে অস্থির করে তুললো। কারণ সে সময়ের দেশীয় প্রথা ছিলো, যে অতিথি বা যে কোনও আগুন্তক গৃহকর্তার নিরাপত্তার বেষ্টনীর আওতায় থাকে কিন্তু সেই অতিথি বা আগুন্তক যদি গৃহকর্তার আতিথেয়তা অস্বীকার করে তবে বুঝতে হবে সেখানে অস্বাভাবিকতা কিছু বিরাজ করছে। এ কারণে হযরত ইব্রাহীম অতিথিদ্বয় সম্বন্ধে অবিশ্বাস ও সন্দেহ পোষণ করলেন। প্রকৃত ঘটনা ছিলো যে তারা যেহেতু মানুষের ছদ্মবেশে ফেরেশতা ছিলেন, সে কারণে তারা খাদ্য গ্রহণে অপারগ ছিলেন। হযরত ইব্রাহীমের মানসিক অবস্থা অনুধাবন করে ফেরেশতারা তাদের পরিচয় প্রকাশ করেন এবং হযরত ইব্রাহীমকে পুত্র সন্তান লাভের শুভ সংবাদ প্রদাণ করেন - যে সন্তান হবেন জ্ঞানী ও আল্লাহ্র নবী। এ ভাবেই আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীমকে নবীদের শ্রেণীর প্রধান পূর্ব পুরুষরূপে সম্মানিত করেন। [ ১৫ : ৫৩ ]।
৫০০৯। হযরত ইব্রাহীমের স্ত্রী সারা ছিলেন বৃদ্ধা এবং বন্ধ্যা। এই শুভ সংবাদ বিশ্বাস করা তাঁর পক্ষে ছিলো সত্যিই কঠিন। যার ফলে তিনি আশ্চর্যান্বিত ও বিস্মিত হয়ে পড়লেন এবং নিজের অক্ষমতা ও নিরাশা জ্ঞাপনার্থে কপাল চাপড়িয়ে বললেন, " বৃদ্ধা মহিলার সন্তান হবে ? তা কি সম্ভব ?" [ ১১ : ৭১ -৭২ ]
৫০১০। সারার বিস্ময়ের উত্তরে ফেরেশতারা বললেন যে, " আপাতঃ দৃষ্টিতে যা অসম্ভব বলে বোধ হয়, আল্লাহ্র হুকুমে তা সম্ভব। আল্লাহ্ এ ভাবেই হুকুম দিয়েছেন যে সারা পুত্র সন্তান লাভ করবেন। আল্লাহ্র অঙ্গীকার জ্ঞান ও প্রজ্ঞাতে পরিপূর্ণ।" যদিও ফেরেশতারা সারার বিস্ময়ের উত্তরে এই ভাব প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু এর মূল বক্তব্য সার্বজনীন - যুগ কাল উত্তীর্ণ, সকল মানুষের জন্য সকল সময়ে প্রযোজ্য। এই আয়াতগুলির শিক্ষা বা উপদেশ হচ্ছে - কোনও কাজে কোনও সময়ে নিরাশ না হওয়া। মেঘে ঢাকা সূর্যের ন্যায় সত্যের প্রকৃত রূপ অনেক সময়েই আচ্ছাদিত থাকতে পারে; কিন্তু সত্য একদিন তার পূর্ণ ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর হবেই। মিথ্যার আবরণ খসে পড়বেই। সব কিছুর শেষ বিচার একদিন হবেই, সেদিন যা সত্য, যা ভালো তা প্রতিষ্ঠা লাভ করবেই।
৫০১১। দেখুন [ ১১ : ৮২ ] আয়াত এবং [ ৭ : ৮৪ ] আয়াত ও টিকা ১০৫২। ফেরেশতাদের প্রেরণ করা হয়েছিলো, হযরত ইব্রাহীমকে সুসংবাদ এবং হযরত লূতের সম্প্রদায় যারা সদম্ ও গোমরাহ্ নগরীতে বাস করতেন তাদের প্রতি প্রেরিত শাস্তির বার্তা দিয়ে। লূতের সম্প্রদায়ের লোকেরা জঘন্য পাপে লিপ্ত ছিলো। এই আয়াতগুলির শিক্ষা হচ্ছে ; আল্লাহ্র করুণা ও অনুগ্রহ এবং ন্যায় বিচার ও শাস্তি মানুষের সকল কাজে, সর্বত্র, সর্বসময়েই পাশাপাশি বিরাজ করে। যারা আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীল এবং আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসে বিশ্বস্ত তাদের ইহলোকে ও পরলোকে কখনও কোন ভয় নাই। এমন কি যারা পাপী ও দুষ্ট তারাও অনুশোচনার মাধ্যমে আত্মসংশোধনের দ্বারা আল্লাহ্র ক্ষমা, করুণা ও অনুগ্রহ লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
৫০১২। দেখুন [ ১১ : ৮৩ ] আয়াত ও টিকা ১৫৮০। "সীমালংঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত" - এই বাক্যটি দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে যে, প্রতিটি পাপের জন্য নির্দ্দিষ্ট শাস্তি বিরাজমান।
৫০১৩। সদম্ ও গোমরাহ্ নগরীতে [ যা মরু সাগরের পাশের সমতল ভূমিতে অবস্থিত ছিলো ] একমাত্র লূতের পরিবারই ছিলো " আল্লাহ্র প্রতি আত্মসমর্পনকারী " বা পূণ্যাত্মা। লূত তাঁর সম্প্রদায়কে বারে বারে সৎ পথে আহ্বান করেন এবং অনুতাপ ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্ষমা লাভের জন্য অনুপ্রাণীত করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা বিফল হয়। ফলে আল্লাহ্ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগরী ত্যাগ করতে বলেন। নির্দ্দিষ্ট সময়ের পরে প্রস্তর বর্ষণ দ্বারা নগরী দুটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।
৫০১৪। সেই নগরীতে একমাত্র লূতের পরিবারই ছিলো আত্মসমর্পনকারী। তবুও সেই পরিবারে লুতের স্ত্রী ছিলো অবিশ্বাসী। সে তার ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। দেখুন [ ১১ : ৮১ ] আয়াত ও টিকা ১৫৭৭।
৫০১৫। "যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি " - এই শাস্তির দ্বারা শেষ বিচারের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। সদম্ ও গোমরাহ্ নগরীর ধ্বংস শেষ বিচারের শাস্তির প্রতীকি উদাহরণ স্বরূপ। মরু সাগরের [ Dead Sea ] চতুঃপার্শ্বে গন্ধক মেশানো সমতল ভূমি ধ্বংসাবশেষের সাক্ষ্য বহন করে।
৫০১৬। মুসার কাহিনীর জন্য দেখুন [ ৪৪ : ১৭- ৩১ ] আয়াত। এই আয়াতগুলিতে শুধুমাত্র পূর্বের কাহিনীর উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতগুলিতে যে বিষয়গুলির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সেগুলি নিম্নরূপ :
১) মুসাকে আল্লাহ্ স্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের নিকট প্রেরণ করেন, তবুও ফেরাউন তাতে সন্দেহ পোষণ করে।
২) ফেরাউনের নির্ভরতা ছিলো জাগতিক বিষয়বস্তুর উপরে। সে নির্ভর করতো তাঁর সভাষদ ও পরিষদবর্গের উপর। কিন্তু যখন ফেরাউনের শেষ সময় ঘনিয়ে এলো, তখন এসব পরিষদবর্গ তার কোন উপকারেই আসে নাই।
৩) ফেরাউনের উদ্ধত অহংকার, একগুয়েমী ও লোকবলের উপরে নির্ভরশীলতা এবং আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসহীনতাই ছিলো তার সর্বনাশের কারণ।
৫০১৭। ফেরাউন ও তার প্রধান উপদেষ্টারা ধ্বংস হয়ে যায় সত্য, কিন্তু তাদের সকলের কৃতকর্মের জন্য প্রধানতঃ দায়ী ছিলো ফেরাউন। কারণ সেই সকলকে বিপথে চালিত করে। সে ভাবে ফেরাউনের শাস্তি ছিলো ন্যায়বিচার। তার আচরণের জন্য সেই একমাত্র দায়ী।
৫০১৮। দেখুন [ ৪৬ : ২১ - ২৬ ] আয়াত। আ'দ সম্প্রদায় ছিলো এক অত্যন্ত প্রতিভাবান জাতি। আল্লাহ্ তাদের বিভিন্ন নেয়ামতে ধন্য করেছিলেন। ফলে তারা পার্থিব সম্পদে সম্পদশালী হয়। তাদের সৌভাগ্য তাদের বিপথে চালিত করে এবং তারা আল্লাহ্কে অস্বীকার করে। ফলে রাতের আধাঁরে তাদের উপরে টর্নেডো ঘুর্ণিঝড় নেমে আসে - যা তাদের জাগতিক সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়। ঘুর্ণিঝড়ের মেঘকে তারা মনে করেছিলো বৃষ্টির মেঘ - যা তাদের শষ্য ক্ষেত্রকে উর্বর করতে সাহায্য করবে। তারা এই বৃষ্টির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু তা ছিলো তাদের ধ্বংসের পূর্বাভাষ। এ ভাবেই পাপীরা তাদের ধ্বংসের পূর্বাভাষকে স্বাগত জানায়। এ ভাবেই আল্লাহ্র সদয় তত্বাবধানে "ভালো" পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয় ও "মন্দ " ধ্বংস হয়ে যায়।
৫০১৯। দেখুন সালেহ্ নবী ও সামুদের কাহিনীর জন্য [ ৭ : ৭৩ - ৭৯ ] আয়াত। এই আয়াত গুলিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সামুদ জাতির উপরে নিপতিত শাস্তির ক্ষীপ্রতা এবং অস্বাভাবিকতা যা ছিলো তাদের কল্পনারও বাইরে।
৫০২০। সালেহ্ নবী তাদের অনুতাপের জন্য তিনদিন সময় দান করেছিলেন [ ১১ : ৬৫ ] কিন্তু তাঁর সম্প্রদায় তাঁর কথায় কর্ণপাত করলো না। উপরন্তু সালেহ্ নবীকে বিদ্রূপ ও উপহাস দ্বারা বিপর্যস্ত করলো এবং তাদের পাপ কাজ চালিয়ে যেতেই থাকলো।
৫০২১। সামুদ জাতি আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে উষ্ট্রীকে বধ করলো [ ১১ : ৬৪ - ৬৫ ও টিকা ১৫৬০]। তারা সালেহ্ নবীকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ অব্যহত রাখলো, যে পর্যন্ত না প্রচন্ড শব্দে ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করলো এবং তারা যেখানে ছিলো সেখানেই প্রোথিত হয়ে পড়লো।
৫০২২। "Saiqat" বজ্রের শব্দের ন্যায় বিকট শব্দ [ ২ : ৫৫ ]। প্রচন্ড ভূমিকম্পের সময়ে এরূপ প্রচন্ড শব্দ চারিদিক প্রকম্পিত করে [ দেখুন ৪১ : ১৭ আয়াত ও টিকা ৪৪৮৫ এবং ৭ : ৭৮ আয়াত ও টিকা ১০৪৭ ]।
৫০২৩। ভূমিকম্পের তান্ডবে তারা স্রোতের মুখে তৃণখন্ডের ন্যায় ভেসে গেলো। আল্লাহ্র শাস্তি পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয় - যা পাপীরা প্রতিরোধ করতে অক্ষম।
৫০২৪। নূহ্ এর সম্প্রদায় তাদের পাপের শাস্তি স্বরূপ প্রচন্ড বন্যায় ভেসে যায়। হযরত নূহ যখন তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ্র হুকুম সমূহ মানার জন্য অনুরোধ করতেন তখন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁকে মানসিক দিক থেকে বিভ্রান্ত বলে বিদ্রূপ করতো। কারণ তাদের ধারণায় বন্যা ছিলো এক অসম্ভব ব্যাপার। তারা প্রকৃত সত্য অনুধাবনে অক্ষম ছিলো, কারণ তারা ছিলো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।
উপদেশ : যারা সত্যকে ত্যাগ করে এবং মিথ্যা এবং পাপের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়, তাদের মাঝে কখনও প্রকৃত সত্যকে অনুভব করার ক্ষমতা জন্মলাভ করবে না।
২৪। তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত অতিথিদের কাহিনী পৌঁছে নাই ? ৫০০৫
৫০০৫। দেখুন [ ১১ : ৬৯ - ৭৩ ] আয়াত। কাহিনীর বিশদ বিবরণ আছে [ ১৫ : ৫১ - ৫৬ ] আয়াতে।
২৫। স্মরণ কর ! তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো : ৫০০৬ " সালাম [ শান্তি ] ! " সে বলেছিলো " সালাম [ শান্তি ] ! " [ এবং ভেবেছিলো, মনে হচ্ছে ] এরা অসাধারণ লোক।
৫০০৬। ফেরেশতারা মানুষের বেশে হযরত ইব্রাহীমের তাঁবুর দুয়ারে উপস্থিত হলেন এবং 'শান্তির ' অভিবাদন করলেন। ইব্রাহীম তাঁদের অভিবাদনের প্রতি উত্তর দিলেন কিন্তু ফেরেশতাদের দর্শনে তাঁর প্রতীয়মান হলো যে এরা সাধারণ ব্যক্তি নন।
২৬। এরপরে সে দ্রুত তার গৃহভ্যন্তরে ফিরে গেলো এবং একটি মোটা তাজা বাছুর গরুর [ ভাজা ] মাংস নিয়ে এলো ৫০০৮।
৫০০৮। হযরত ইব্রাহীমের নিকট অতিথিদ্বয়কে সাধারণ ব্যক্তি মনে হয় নাই। কিন্তু তিনি বাহ্যতঃ তা প্রকাশ না করে তাদের প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শনে নিয়োজিত হলেন। মোটা তাজা গোবৎসের মাংস ভাজা দ্বারা তিনি তাদের আপ্যায়ন করলেন। কিন্তু অতিথিদ্বয় খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ করলো না [ ১১ : ৭০ ]। তাদের এই ব্যবহার হযরত ইব্রাহীমকে মনে মনে অস্থির করে তুললো। কারণ সে সময়ের দেশীয় প্রথা ছিলো, যে অতিথি বা যে কোনও আগুন্তক গৃহকর্তার নিরাপত্তার বেষ্টনীর আওতায় থাকে কিন্তু সেই অতিথি বা আগুন্তক যদি গৃহকর্তার আতিথেয়তা অস্বীকার করে তবে বুঝতে হবে সেখানে অস্বাভাবিকতা কিছু বিরাজ করছে। এ কারণে হযরত ইব্রাহীম অতিথিদ্বয় সম্বন্ধে অবিশ্বাস ও সন্দেহ পোষণ করলেন। প্রকৃত ঘটনা ছিলো যে তারা যেহেতু মানুষের ছদ্মবেশে ফেরেশতা ছিলেন, সে কারণে তারা খাদ্য গ্রহণে অপারগ ছিলেন। হযরত ইব্রাহীমের মানসিক অবস্থা অনুধাবন করে ফেরেশতারা তাদের পরিচয় প্রকাশ করেন এবং হযরত ইব্রাহীমকে পুত্র সন্তান লাভের শুভ সংবাদ প্রদাণ করেন - যে সন্তান হবেন জ্ঞানী ও আল্লাহ্র নবী। এ ভাবেই আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীমকে নবীদের শ্রেণীর প্রধান পূর্ব পুরুষরূপে সম্মানিত করেন। [ ১৫ : ৫৩ ]।
২৭। এবং তা তাদের সামনে রেখে বলেছিলো, " তোমরা কি আহার করবে না ?"
২৮। [ যখন তারা আহার করলো না ], তখন তাদের সর্ম্পকে ইব্রাহীমের মনে ভয়ের সঞ্চার হলো। তারা বলেছিলো," ভয় পেয়ো না " এবং তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিল।
২৯। তখন তার স্ত্রী উচ্চস্বরে [ হাসতে হাসতে ] এগিয়ে এলো ৫০০৯; এবং কপালে করাঘাত করতে করতে বলতে লাগলো, " আমি তো এক বন্ধ্যা বৃদ্ধা !"
২৮। [ যখন তারা আহার করলো না ], তখন তাদের সর্ম্পকে ইব্রাহীমের মনে ভয়ের সঞ্চার হলো। তারা বলেছিলো," ভয় পেয়ো না " এবং তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিল।
২৯। তখন তার স্ত্রী উচ্চস্বরে [ হাসতে হাসতে ] এগিয়ে এলো ৫০০৯; এবং কপালে করাঘাত করতে করতে বলতে লাগলো, " আমি তো এক বন্ধ্যা বৃদ্ধা !"
৫০০৯। হযরত ইব্রাহীমের স্ত্রী সারা ছিলেন বৃদ্ধা এবং বন্ধ্যা। এই শুভ সংবাদ বিশ্বাস করা তাঁর পক্ষে ছিলো সত্যিই কঠিন। যার ফলে তিনি আশ্চর্যান্বিত ও বিস্মিত হয়ে পড়লেন এবং নিজের অক্ষমতা ও নিরাশা জ্ঞাপনার্থে কপাল চাপড়িয়ে বললেন, " বৃদ্ধা মহিলার সন্তান হবে ? তা কি সম্ভব ?" [ ১১ : ৭১ -৭২ ]
৩০। তারা বলেছিলো, " তোমার প্রভু এরূপই বলেছেন, এবং তিনি প্রজ্ঞা ও জ্ঞানে পরিপূর্ণ ৫০১০। "
৫০১০। সারার বিস্ময়ের উত্তরে ফেরেশতারা বললেন যে, " আপাতঃ দৃষ্টিতে যা অসম্ভব বলে বোধ হয়, আল্লাহ্র হুকুমে তা সম্ভব। আল্লাহ্ এ ভাবেই হুকুম দিয়েছেন যে সারা পুত্র সন্তান লাভ করবেন। আল্লাহ্র অঙ্গীকার জ্ঞান ও প্রজ্ঞাতে পরিপূর্ণ।" যদিও ফেরেশতারা সারার বিস্ময়ের উত্তরে এই ভাব প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু এর মূল বক্তব্য সার্বজনীন - যুগ কাল উত্তীর্ণ, সকল মানুষের জন্য সকল সময়ে প্রযোজ্য। এই আয়াতগুলির শিক্ষা বা উপদেশ হচ্ছে - কোনও কাজে কোনও সময়ে নিরাশ না হওয়া। মেঘে ঢাকা সূর্যের ন্যায় সত্যের প্রকৃত রূপ অনেক সময়েই আচ্ছাদিত থাকতে পারে; কিন্তু সত্য একদিন তার পূর্ণ ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর হবেই। মিথ্যার আবরণ খসে পড়বেই। সব কিছুর শেষ বিচার একদিন হবেই, সেদিন যা সত্য, যা ভালো তা প্রতিষ্ঠা লাভ করবেই।
৩১। [ইব্রাহীম ] বলেছিলো, " হে ফেরেশতাগণ ; [ এখন ] তোমাদের কাজ কি ? "
৩২। তারা বলেছিলো, " আমাদের প্রেরণ করা হয়েছে পাপে নিমজ্জিত এক সম্প্রদায়ের প্রতি, -
৩৩। " উহাদের প্রতি মাটির [ শক্ত ] ঢেলা বর্ষণ করার জন্য ৫০১১,
৩২। তারা বলেছিলো, " আমাদের প্রেরণ করা হয়েছে পাপে নিমজ্জিত এক সম্প্রদায়ের প্রতি, -
৩৩। " উহাদের প্রতি মাটির [ শক্ত ] ঢেলা বর্ষণ করার জন্য ৫০১১,
৫০১১। দেখুন [ ১১ : ৮২ ] আয়াত এবং [ ৭ : ৮৪ ] আয়াত ও টিকা ১০৫২। ফেরেশতাদের প্রেরণ করা হয়েছিলো, হযরত ইব্রাহীমকে সুসংবাদ এবং হযরত লূতের সম্প্রদায় যারা সদম্ ও গোমরাহ্ নগরীতে বাস করতেন তাদের প্রতি প্রেরিত শাস্তির বার্তা দিয়ে। লূতের সম্প্রদায়ের লোকেরা জঘন্য পাপে লিপ্ত ছিলো। এই আয়াতগুলির শিক্ষা হচ্ছে ; আল্লাহ্র করুণা ও অনুগ্রহ এবং ন্যায় বিচার ও শাস্তি মানুষের সকল কাজে, সর্বত্র, সর্বসময়েই পাশাপাশি বিরাজ করে। যারা আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীল এবং আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসে বিশ্বস্ত তাদের ইহলোকে ও পরলোকে কখনও কোন ভয় নাই। এমন কি যারা পাপী ও দুষ্ট তারাও অনুশোচনার মাধ্যমে আত্মসংশোধনের দ্বারা আল্লাহ্র ক্ষমা, করুণা ও অনুগ্রহ লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
৩৪। " তোমার প্রভুর তরফ থেকে যা চিহ্নিত করা হয়েছে সীমালংঘনকারীদের জন্য ৫০১২। "
৫০১২। দেখুন [ ১১ : ৮৩ ] আয়াত ও টিকা ১৫৮০। "সীমালংঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত" - এই বাক্যটি দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে যে, প্রতিটি পাপের জন্য নির্দ্দিষ্ট শাস্তি বিরাজমান।
৩৫। অতঃপর সেখানে যে সব মুমিন ছিলো, আমি তাদের [ সেখান থেকে ] সরিয়ে নিলাম ৫০১৩।
৫০১৩। সদম্ ও গোমরাহ্ নগরীতে [ যা মরু সাগরের পাশের সমতল ভূমিতে অবস্থিত ছিলো ] একমাত্র লূতের পরিবারই ছিলো " আল্লাহ্র প্রতি আত্মসমর্পনকারী " বা পূণ্যাত্মা। লূত তাঁর সম্প্রদায়কে বারে বারে সৎ পথে আহ্বান করেন এবং অনুতাপ ও আত্মসংশোধনের মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্ষমা লাভের জন্য অনুপ্রাণীত করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা বিফল হয়। ফলে আল্লাহ্ তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগরী ত্যাগ করতে বলেন। নির্দ্দিষ্ট সময়ের পরে প্রস্তর বর্ষণ দ্বারা নগরী দুটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।
৩৬। কিন্তু সেখানে আমি একটি পরিবার ব্যতীত অন্য কোন আত্মসমর্পনকারী পাই নাই ৫০১৪।
৫০১৪। সেই নগরীতে একমাত্র লূতের পরিবারই ছিলো আত্মসমর্পনকারী। তবুও সেই পরিবারে লুতের স্ত্রী ছিলো অবিশ্বাসী। সে তার ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। দেখুন [ ১১ : ৮১ ] আয়াত ও টিকা ১৫৭৭।
৩৭। যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্য সেখানে একটি নিদর্শন রেখেছি ৫০১৫।
৫০১৫। "যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি " - এই শাস্তির দ্বারা শেষ বিচারের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। সদম্ ও গোমরাহ্ নগরীর ধ্বংস শেষ বিচারের শাস্তির প্রতীকি উদাহরণ স্বরূপ। মরু সাগরের [ Dead Sea ] চতুঃপার্শ্বে গন্ধক মেশানো সমতল ভূমি ধ্বংসাবশেষের সাক্ষ্য বহন করে।
৩৮। এবং [ নিদর্শন রেখেছি ] মুসার কাহিনীতে ৫০১৬ ; যখন আমি তাকে স্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের নিকট প্রেরণ করেছিলাম,
৫০১৬। মুসার কাহিনীর জন্য দেখুন [ ৪৪ : ১৭- ৩১ ] আয়াত। এই আয়াতগুলিতে শুধুমাত্র পূর্বের কাহিনীর উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতগুলিতে যে বিষয়গুলির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সেগুলি নিম্নরূপ :
১) মুসাকে আল্লাহ্ স্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের নিকট প্রেরণ করেন, তবুও ফেরাউন তাতে সন্দেহ পোষণ করে।
২) ফেরাউনের নির্ভরতা ছিলো জাগতিক বিষয়বস্তুর উপরে। সে নির্ভর করতো তাঁর সভাষদ ও পরিষদবর্গের উপর। কিন্তু যখন ফেরাউনের শেষ সময় ঘনিয়ে এলো, তখন এসব পরিষদবর্গ তার কোন উপকারেই আসে নাই।
৩) ফেরাউনের উদ্ধত অহংকার, একগুয়েমী ও লোকবলের উপরে নির্ভরশীলতা এবং আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসহীনতাই ছিলো তার সর্বনাশের কারণ।
৩৯। কিন্তু [ ফেরাউন ] তাঁর দলবল সহ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো এবং বলেছিলো, " এই ব্যক্তি হয় এক যাদুকর অথবা উম্মাদ।"
৪০। সুতারাং আমি তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে শাস্তি দিলাম, এবং তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম ; এবং সে তো ছিলো অপরাধ যোগ্য ৫০১৭।
৪০। সুতারাং আমি তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে শাস্তি দিলাম, এবং তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম ; এবং সে তো ছিলো অপরাধ যোগ্য ৫০১৭।
৫০১৭। ফেরাউন ও তার প্রধান উপদেষ্টারা ধ্বংস হয়ে যায় সত্য, কিন্তু তাদের সকলের কৃতকর্মের জন্য প্রধানতঃ দায়ী ছিলো ফেরাউন। কারণ সেই সকলকে বিপথে চালিত করে। সে ভাবে ফেরাউনের শাস্তি ছিলো ন্যায়বিচার। তার আচরণের জন্য সেই একমাত্র দায়ী।
৪১। এবং আ'দ সম্প্রদায় [ ছিলো আর এক নিদর্শন ] ৫০১৮। দেখো ! আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম এক প্রলয়ঙ্কারী ঝঞা।
৪২। ইহা যা কিছুর উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিলো, তাকেই চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছিলো,
৪২। ইহা যা কিছুর উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিলো, তাকেই চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছিলো,
৫০১৮। দেখুন [ ৪৬ : ২১ - ২৬ ] আয়াত। আ'দ সম্প্রদায় ছিলো এক অত্যন্ত প্রতিভাবান জাতি। আল্লাহ্ তাদের বিভিন্ন নেয়ামতে ধন্য করেছিলেন। ফলে তারা পার্থিব সম্পদে সম্পদশালী হয়। তাদের সৌভাগ্য তাদের বিপথে চালিত করে এবং তারা আল্লাহ্কে অস্বীকার করে। ফলে রাতের আধাঁরে তাদের উপরে টর্নেডো ঘুর্ণিঝড় নেমে আসে - যা তাদের জাগতিক সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়। ঘুর্ণিঝড়ের মেঘকে তারা মনে করেছিলো বৃষ্টির মেঘ - যা তাদের শষ্য ক্ষেত্রকে উর্বর করতে সাহায্য করবে। তারা এই বৃষ্টির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু তা ছিলো তাদের ধ্বংসের পূর্বাভাষ। এ ভাবেই পাপীরা তাদের ধ্বংসের পূর্বাভাষকে স্বাগত জানায়। এ ভাবেই আল্লাহ্র সদয় তত্বাবধানে "ভালো" পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয় ও "মন্দ " ধ্বংস হয়ে যায়।
৪৩। সামুদ সম্প্রদায় [ হচ্ছে আর এক নিদর্শন ] ৫০১৯ ! দেখো, তাদের বলা হয়েছিলো, "স্বল্পকালের জন্য তোমরা উপভোগ করে নাও।" ৫০২০
৫০১৯। দেখুন সালেহ্ নবী ও সামুদের কাহিনীর জন্য [ ৭ : ৭৩ - ৭৯ ] আয়াত। এই আয়াত গুলিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সামুদ জাতির উপরে নিপতিত শাস্তির ক্ষীপ্রতা এবং অস্বাভাবিকতা যা ছিলো তাদের কল্পনারও বাইরে।
৫০২০। সালেহ্ নবী তাদের অনুতাপের জন্য তিনদিন সময় দান করেছিলেন [ ১১ : ৬৫ ] কিন্তু তাঁর সম্প্রদায় তাঁর কথায় কর্ণপাত করলো না। উপরন্তু সালেহ্ নবীকে বিদ্রূপ ও উপহাস দ্বারা বিপর্যস্ত করলো এবং তাদের পাপ কাজ চালিয়ে যেতেই থাকলো।
৪৪। কিন্তু তারা উদ্ধত ভাবে তাদের প্রভুর আদেশ লংঘন করেছিলো ৫০২১। ফলে [ ভূমিকম্পের ] হতবিহ্বলকারী শব্দ তাদের গ্রাস করলো, যদিও তারা তা চেয়ে দেখছিলো ৫০২২।
৫০২১। সামুদ জাতি আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে উষ্ট্রীকে বধ করলো [ ১১ : ৬৪ - ৬৫ ও টিকা ১৫৬০]। তারা সালেহ্ নবীকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ অব্যহত রাখলো, যে পর্যন্ত না প্রচন্ড শব্দে ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করলো এবং তারা যেখানে ছিলো সেখানেই প্রোথিত হয়ে পড়লো।
৫০২২। "Saiqat" বজ্রের শব্দের ন্যায় বিকট শব্দ [ ২ : ৫৫ ]। প্রচন্ড ভূমিকম্পের সময়ে এরূপ প্রচন্ড শব্দ চারিদিক প্রকম্পিত করে [ দেখুন ৪১ : ১৭ আয়াত ও টিকা ৪৪৮৫ এবং ৭ : ৭৮ আয়াত ও টিকা ১০৪৭ ]।
৪৫। এমনকি তারা [তাদের পায়ের উপরে ] দাঁড়াতে পারছিলো না ৫০২৩, এবং না পারলো নিজেদের সাহায্য করতে।
৫০২৩। ভূমিকম্পের তান্ডবে তারা স্রোতের মুখে তৃণখন্ডের ন্যায় ভেসে গেলো। আল্লাহ্র শাস্তি পৃথিবীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয় - যা পাপীরা প্রতিরোধ করতে অক্ষম।
৪৬। তাদের পূর্বে নূহ্এর সম্প্রদায়ের অবস্থা সেরূপ হয়েছিলো ৫০২৪ ; তারা ছিলো দুষ্ট ও অবাধ্য।
৫০২৪। নূহ্ এর সম্প্রদায় তাদের পাপের শাস্তি স্বরূপ প্রচন্ড বন্যায় ভেসে যায়। হযরত নূহ যখন তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ্র হুকুম সমূহ মানার জন্য অনুরোধ করতেন তখন তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁকে মানসিক দিক থেকে বিভ্রান্ত বলে বিদ্রূপ করতো। কারণ তাদের ধারণায় বন্যা ছিলো এক অসম্ভব ব্যাপার। তারা প্রকৃত সত্য অনুধাবনে অক্ষম ছিলো, কারণ তারা ছিলো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।
উপদেশ : যারা সত্যকে ত্যাগ করে এবং মিথ্যা এবং পাপের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়, তাদের মাঝে কখনও প্রকৃত সত্যকে অনুভব করার ক্ষমতা জন্মলাভ করবে না।
রুকু - ৩
৫০২৫। আলোচ্য আয়াত সমূহে আল্লাহ্র শক্তিসমূহ বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ আল্লাহ্র শক্তিতে অবিশ্বাস করে এবং বলে যে, যে সব জাতির উদাহরণ দেয়া হয়েছে সে সব তো অতীতের ইতিহাস। তাদের আহ্বান করা হয়েছে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য মহাবিশ্বের দিকে এবং আল্লাহ্র শক্তিকে উপলব্ধি করার জন্য।
১) প্রথমেই বলা হয়েছে অনন্ত মহাশূন্যের বা সীমাহীন আকাশের কথা। অনন্ত আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র, সতত সম্প্রসারণশীল আল্লাহ্র ক্ষমতায়, যা শুধুমাত্র বর্তমান জোর্তিবিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে। এই সত্যকে হৃদয়ে অনুভব করা সত্যিই অসাধারণ। এই বিশাল জগৎ, নক্ষত্র পুঞ্জ, উল্কা, নীহারিকা, ছায়াপথ কোটি কোটি দৃশ্য-অদৃশ্য নক্ষত্র জগৎ নিয়ে এই অনন্ত বিশ্ব - ক্ষুদ্র পৃথিবী এরই একজন অধিবাসী। ঐ গ্রহ,উল্কা, ধূমকেতু - ঐ নিঃসীম নাক্ষত্রিক বিরাট শূন্যের যিনি স্রষ্টা - ক্ষুদ্র মানুষ ঐ বিশাল নক্ষত্র জগত থেকে স্রষ্টার বিরাটত্ব অনুভবে সক্ষম হয় নিজের ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্ব অনুভবের মাধ্যমে।
২) দ্বিতীয়ত : সূদূর মহাবিশ্ব থেকে দৃষ্টিকে মাটির পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে বলা হয়েছে পরের আয়াতে। সমুদ্রের কি বিশাল অগাধ সুনীল জলরাশি এবং বিস্তৃত মহাদেশ যা সবুজ শ্যামলিমাতে যেনো কার্পেটের মত বিস্তৃত।
৩) পৃথিবীর প্রতিটি জীবন জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। উদ্ভিদ জগত, প্রাণী জগত, সকল জীবিত প্রাণই পুরুষ ও স্ত্রীরূপে বিরাজমান। সৃষ্টিকে অনাদিকাল থেকে ধরে রাখার স্রষ্টার এ এক অপূর্ব কৌশল।
এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ, উদ্ভিদ বা প্রাণী বা মানুষ এরা পরস্পর পরস্পরের সম্পূরক কেউ বড় নয় কেউ ছোট নয়। শুধু যে জীবন্ত জিনিষই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে তাই নয় জড় বস্তুকেও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন : দিন ও রাত্রি, ধ্বনাত্মক ও ঋনাত্মক বিদ্যুৎ, আকর্ষণ ও বিকর্ষণ শক্তি, এরূপ বহু শক্তি আছে যাদের আল্লাহ্ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এ ভাবেই প্রত্যেকে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণতা দান করে থাকে এবং বিশ্ব-ভূমন্ডলে আল্লাহ্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ভাবেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আধ্যাত্মিক জগতের প্রতি যেখানে ভালোবাসা - ঘৃণা, অনুগ্রহ, ন্যায় বিচার, উদ্যম, বিশ্রাম প্রতিটি আত্মিক গুণাবলী জোড়ায় জোড়ায় বিরাজ করে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্ব স্ব কার্য দ্বারা আল্লাহ্র শৈল্পিক কর্মকে বিশ্বের মাঝে পরিষ্ফুট করে তোলে। আল্লাহ্র পরিকল্পনাকে নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি পরিচালিত করে। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু, মনের প্রতিটি অনুভূতি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যারা একে অপরের সম্পূরক বা প্রতিরূপ বা জোড়া। দুয়ের মিলনের ফলেই পৃথিবীতে সৃষ্টি রক্ষা পায় ও সভ্যতার অগ্রগতি ঘটে, বস্তুজগতে ভারসাম্য রক্ষা পায় ও আত্মিক বিকাশ লাভ ঘটে। একমাত্র আল্লাহ্-ই এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনও অংশীদার নাই। আল্লাহ্র সৃষ্টির এই অভূতপূর্ব কৌশল সম্বন্ধে কেউ যদি ক্ষণিকের তরেও আত্মমগ্নভাবে চিন্তা করে তবে সে অনুভবে সমর্থ হবে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিশালত্ব ও শিল্প কৌশল। তবেই শুধুমাত্র আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ ও সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে সামান্য পরিমাণ হলেও অনুধাবন করা সম্ভব।
৫০২৬। দেখুন উপরের টিকা (৩) নম্বর অনুচ্ছেদ। আরও দেখুন [ ৩৬: ৩৬ ] আয়াত ও টিকা ৩৯৮১।
৫০২৭। " আল্লাহ্র প্রতি ধাবিত হও " - অর্থাৎ বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও শিল্পসত্তার অন্বেষণ কর। এই পৃথিবীর একটা আধ্যাত্মিক রূপ আছে। এর ফুল -ফল, আলো ছায়ার মাঝে জন্ম গ্রহণ করার দরুণ এবং শৈশব থেকে এর সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার দরুণ এর প্রকৃত রূপটি আমাদের চোখে পড়ে না। এ আমাদের দর্শন ও শ্রবণগ্রাহ্য জিনিষে গড়া হলেও আমাদের নিকট অজ্ঞাত থেকে যায়। বিশ্ব প্রকৃতির এই আধ্যাত্মিক রূপের প্রতিটি রেণু অসীম জটিলতায় আচ্ছন্ন যা কিনা মানুষের বুদ্ধি ও কল্পনার অতীত। কিন্তু যদি কেউ বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, শিল্পসত্ত্বার অন্বেষণ করে তবে অবশ্যই সে অনুভবে সমর্থ হবে যে, আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয়। তিনিই একমাত্র প্রকৃত সত্য। এই অনুভব যখন আত্মাকে আপ্লুত করে, মানুষ তখন সম্পূর্ণরূপে সেই বিশ্ব স্রষ্টার পদতলে আত্মনিবেদন করে ধন্য হয়। আল্লাহ্র নবী মানুষকে আল্লাহ্র প্রতি ধাবিত হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন।
৫০২৮। ৫০ এবং ৫১ নং আয়াত একই বাক্যদ্বারা সমাপ্ত করা হয়েছে। কারণ পুণঃরাবৃত্তি দ্বারা দুটি আয়াতের মধ্যে সংযুক্তিকে বোঝানো হয়েছে, এবং দুটি আয়াত এক সাথে পড়তে হবে। রাসুলের দায়িত্ব হচ্ছে :
১) আমাদের আল্লাহ্র প্রতি আহ্বান করা এবং উপলব্ধি করানো আমাদের পাপের জন্য অনুতাপ অত্যন্ত প্রয়োজন।
২) মিথ্যা উপাসনার ভ্রান্তি জাল ছিন্ন করা। প্রথমতঃ অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের ফলে, আমরা আল্লাহ্র ক্ষমা, করুণা ও অনুগ্রহ লাভের যোগ্যতা অর্জন করবো। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্বের উপাসনা থেকে মুক্তি ঘটে। এক আল্লাহ্র এবাদতে নিমগ্ন হওয়ার ফলে সে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাঁর সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করে। কারণ প্রকৃত সত্যের সন্ধান লাভের ফলে সে বুঝতে সক্ষম হয় যে মানুষের সেবা ও আল্লাহ্র সৃষ্ট প্রাণের সেবার মাঝেই আল্লাহ্র সন্তুষ্টি নিহিত আছে।
৫০২৯। "তুমি তো এক যাদুকর, না হয় এক উম্মাদ "। এ কটুক্তি কাফেররা হযরত মুসা সম্বন্ধে করেছিলো [ ৫১ : ৩৯ ]। এই একই বাক্য তারা প্রয়োগ করে রাসুলে করীম হযরত মুহম্মদ ( সা) সম্বন্ধে [ ৩৮ : ৪] ; [ ৪৪ : ১৪ ]।
৫০৩০। পৃথিবীতে পাপ ও পূণ্যের স্রোত ধারা পাশাপাশি প্রবাহিত। অবিশ্বাসীদের দ্বারা সত্যের বাণী প্রচারকদের নির্যাতনের ধারা যুগে যুগে একই রয়ে গেছে। তাদের বক্তব্যও একই রয়ে গেছে। মন্দের এই ধারা সত্যের কোনও ক্ষতি করতে সক্ষম নয়।
৫০৩১। রাসুলের দায়িত্ব সত্যকে প্রচার করা। কিন্তু যদি মন্দ ও পাপীরা একগুঁয়ে ভাবে সত্যকে প্রত্যাখান করে, তবে সে জন্য রাসুল ( সা ) দায়ী থাকবেন না। আল্লাহ্ এই আয়াত দ্বারা ঘোষণা করেছেন যে, " তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।" কিন্তু যারা সত্যের আহ্বান শুনতে চায় রাসুলকে ( সা ) তাদের মাঝে সত্য প্রচারের জন্য বলা হয়েছে।
৫০৩২। এই বিশ্ব ভূমন্ডলের সৃষ্টি আল্লাহ্র কোনও খেয়াল খুশীর বা খেলাধূলার প্রকাশ নয় [ ২১ : ১৬ ]। এই বিশাল বিশ্বভূবনের সৃষ্টির পিছনে আল্লাহ্র এক নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্য বিদ্যমান। আমরা সাধারণ মানুষ। সেই বিশাল পরিকল্পনার এক ক্ষুদ্র অংশ। আমাদের সীমিত জ্ঞানের দ্বারা আমরা সেই পরিকল্পনার খুব ক্ষুদ্র অংশই অনুধাবনে সক্ষম। জ্বিন ও মানুষের সৃষ্টি আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য, আর এই আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন আল্লাহ্র একত্বের প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন অর্থাৎ তাঁর এবাদত। তা হলেই আমরা আল্লাহ্র বিশাল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সুসম্পন্ন করতে সক্ষম হব। আল্লাহ্ সকল শক্তির উৎস, সকল কল্যাণের কেন্দ্র। আমাদের আধ্যাত্মিক বিকাশ আল্লাহ্র ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পনের উপরে নির্ভরশীল। আত্মিক বিকাশের মাধ্যমেই আল্লাহ্র ইচ্ছাকে পূরণ করা সম্ভব, তাঁর সেবা করার একমাত্র উপায়। এর দ্বারা আল্লাহ্র কোন লাভ নাই। লাভ যা তা বান্দার। দেখুন পরের দুই আয়াত।
৫০৩৩। "জীবনোপকরণ " - এখানে আক্ষরিক ও ব্যপক উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত। সুতারাং এ কথা চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র যে, আল্লাহ্ জীবিকার জন্য বা আহার্যের জন্য কখনও আমাদের উপরে নির্ভরশীল। বরং মানুষের মাঝে যা কিছু ভালো, কল্যাণ, সুখ -শান্তি সমৃদ্ধি, সবই বান্দাকে আল্লাহ্ দান করে থাকেন। আল্লাহকে বান্দার কিছু দান করার নাই। "জীবনোপকরণ " শব্দটি দ্বারা মানুষের জীবনের সকল কল্যাণকে ব্যপক অর্থে প্রকাশ করা হয়েছে।
৫০৩৪। সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ্। আল্লাহ্র ক্ষমতার কিছু অংশ আল্লাহ্ মানুষকে অনুগ্রহ করে দান করেন। সুতারাং যে কোনও ক্ষমতা, দক্ষতা [ মানসিক বা শারীরিক ], জ্ঞান, প্রজ্ঞা,সৃজন ক্ষমতা, ইত্যাদি সকল কিছুর জন্য আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ্র ক্ষমতা স্থির ও অচঞ্চল ক্ষমতার সাক্ষর বহন করে। এই আয়াত সমূহে আল্লাহ্ বলেছেন তিনি বান্দাকে সকল প্রকার জীবিকা দান করেন। সুতারাং তাঁর সাহায্য লাভ আমাদের জন্য সহজ।
৫০৩৫। সমস্ত বিশ্ব ভূবন আল্লাহ্র আইনের উপরে নির্ভরশীল। মন্দ ও পাপীদের শেষ পরিণতি ধ্বংস। অতীতেও তা ঘটেছে, বর্তমানেও তা ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও তা ঘটবে। আল্লাহ্র আইন চিরসত্য। পাপী ও মন্দদের উপরে শাস্তি নিপতিত হবে হঠাৎ করেই - যখন তারা তা কোনও ভাবেই আশঙ্কা করবে না। সুতারাং তারা যেনো বিদ্রূপভাবে তা ত্বরান্বিত করার জন্য যাঞা না করে।
৫০৩৬। 'সেইদিন ' হচ্ছে শেষ বিচারের দিন। পরলোকে তারা যে শাস্তি লাভ করবে তা হবে অনন্তকালের জন্য স্থায়ী।
৪৭। নভোমন্ডলকে আমি সৃষ্টি করেছি আমার ক্ষমতা ও দক্ষতাবলে ৫০২৫। নিঃসীম মহাশূন্যকে আমিই সৃষ্টি করেছি।
৪৮। [ বিস্তৃত ] পৃথিবীকে আমি বিছিয়ে দিয়েছি। কি সুন্দরভাবে আমি তা বিছাই !
৪৯। আর প্রতিটি বস্তুকে আমি সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায় ৫০২৬ ; যেনো তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার।
৪৮। [ বিস্তৃত ] পৃথিবীকে আমি বিছিয়ে দিয়েছি। কি সুন্দরভাবে আমি তা বিছাই !
৪৯। আর প্রতিটি বস্তুকে আমি সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায় ৫০২৬ ; যেনো তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার।
৫০২৫। আলোচ্য আয়াত সমূহে আল্লাহ্র শক্তিসমূহ বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ আল্লাহ্র শক্তিতে অবিশ্বাস করে এবং বলে যে, যে সব জাতির উদাহরণ দেয়া হয়েছে সে সব তো অতীতের ইতিহাস। তাদের আহ্বান করা হয়েছে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য মহাবিশ্বের দিকে এবং আল্লাহ্র শক্তিকে উপলব্ধি করার জন্য।
১) প্রথমেই বলা হয়েছে অনন্ত মহাশূন্যের বা সীমাহীন আকাশের কথা। অনন্ত আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র, সতত সম্প্রসারণশীল আল্লাহ্র ক্ষমতায়, যা শুধুমাত্র বর্তমান জোর্তিবিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে। এই সত্যকে হৃদয়ে অনুভব করা সত্যিই অসাধারণ। এই বিশাল জগৎ, নক্ষত্র পুঞ্জ, উল্কা, নীহারিকা, ছায়াপথ কোটি কোটি দৃশ্য-অদৃশ্য নক্ষত্র জগৎ নিয়ে এই অনন্ত বিশ্ব - ক্ষুদ্র পৃথিবী এরই একজন অধিবাসী। ঐ গ্রহ,উল্কা, ধূমকেতু - ঐ নিঃসীম নাক্ষত্রিক বিরাট শূন্যের যিনি স্রষ্টা - ক্ষুদ্র মানুষ ঐ বিশাল নক্ষত্র জগত থেকে স্রষ্টার বিরাটত্ব অনুভবে সক্ষম হয় নিজের ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্ব অনুভবের মাধ্যমে।
২) দ্বিতীয়ত : সূদূর মহাবিশ্ব থেকে দৃষ্টিকে মাটির পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে বলা হয়েছে পরের আয়াতে। সমুদ্রের কি বিশাল অগাধ সুনীল জলরাশি এবং বিস্তৃত মহাদেশ যা সবুজ শ্যামলিমাতে যেনো কার্পেটের মত বিস্তৃত।
৩) পৃথিবীর প্রতিটি জীবন জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। উদ্ভিদ জগত, প্রাণী জগত, সকল জীবিত প্রাণই পুরুষ ও স্ত্রীরূপে বিরাজমান। সৃষ্টিকে অনাদিকাল থেকে ধরে রাখার স্রষ্টার এ এক অপূর্ব কৌশল।
এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ, উদ্ভিদ বা প্রাণী বা মানুষ এরা পরস্পর পরস্পরের সম্পূরক কেউ বড় নয় কেউ ছোট নয়। শুধু যে জীবন্ত জিনিষই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে তাই নয় জড় বস্তুকেও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন : দিন ও রাত্রি, ধ্বনাত্মক ও ঋনাত্মক বিদ্যুৎ, আকর্ষণ ও বিকর্ষণ শক্তি, এরূপ বহু শক্তি আছে যাদের আল্লাহ্ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এ ভাবেই প্রত্যেকে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণতা দান করে থাকে এবং বিশ্ব-ভূমন্ডলে আল্লাহ্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ভাবেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আধ্যাত্মিক জগতের প্রতি যেখানে ভালোবাসা - ঘৃণা, অনুগ্রহ, ন্যায় বিচার, উদ্যম, বিশ্রাম প্রতিটি আত্মিক গুণাবলী জোড়ায় জোড়ায় বিরাজ করে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্ব স্ব কার্য দ্বারা আল্লাহ্র শৈল্পিক কর্মকে বিশ্বের মাঝে পরিষ্ফুট করে তোলে। আল্লাহ্র পরিকল্পনাকে নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি পরিচালিত করে। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু, মনের প্রতিটি অনুভূতি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যারা একে অপরের সম্পূরক বা প্রতিরূপ বা জোড়া। দুয়ের মিলনের ফলেই পৃথিবীতে সৃষ্টি রক্ষা পায় ও সভ্যতার অগ্রগতি ঘটে, বস্তুজগতে ভারসাম্য রক্ষা পায় ও আত্মিক বিকাশ লাভ ঘটে। একমাত্র আল্লাহ্-ই এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনও অংশীদার নাই। আল্লাহ্র সৃষ্টির এই অভূতপূর্ব কৌশল সম্বন্ধে কেউ যদি ক্ষণিকের তরেও আত্মমগ্নভাবে চিন্তা করে তবে সে অনুভবে সমর্থ হবে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিশালত্ব ও শিল্প কৌশল। তবেই শুধুমাত্র আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ ও সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে সামান্য পরিমাণ হলেও অনুধাবন করা সম্ভব।
৫০২৬। দেখুন উপরের টিকা (৩) নম্বর অনুচ্ছেদ। আরও দেখুন [ ৩৬: ৩৬ ] আয়াত ও টিকা ৩৯৮১।
৫০। অতএব, তোমরা আল্লাহ্র দিকে ধাবিত হও ৫০২৭, আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য সর্তককারী।
৫০২৭। " আল্লাহ্র প্রতি ধাবিত হও " - অর্থাৎ বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও শিল্পসত্তার অন্বেষণ কর। এই পৃথিবীর একটা আধ্যাত্মিক রূপ আছে। এর ফুল -ফল, আলো ছায়ার মাঝে জন্ম গ্রহণ করার দরুণ এবং শৈশব থেকে এর সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার দরুণ এর প্রকৃত রূপটি আমাদের চোখে পড়ে না। এ আমাদের দর্শন ও শ্রবণগ্রাহ্য জিনিষে গড়া হলেও আমাদের নিকট অজ্ঞাত থেকে যায়। বিশ্ব প্রকৃতির এই আধ্যাত্মিক রূপের প্রতিটি রেণু অসীম জটিলতায় আচ্ছন্ন যা কিনা মানুষের বুদ্ধি ও কল্পনার অতীত। কিন্তু যদি কেউ বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, শিল্পসত্ত্বার অন্বেষণ করে তবে অবশ্যই সে অনুভবে সমর্থ হবে যে, আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয়। তিনিই একমাত্র প্রকৃত সত্য। এই অনুভব যখন আত্মাকে আপ্লুত করে, মানুষ তখন সম্পূর্ণরূপে সেই বিশ্ব স্রষ্টার পদতলে আত্মনিবেদন করে ধন্য হয়। আল্লাহ্র নবী মানুষকে আল্লাহ্র প্রতি ধাবিত হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন।
৫১। আল্লাহ্র সাথে অন্য কিছুকে এবাদতের বস্তু করো না ৫০২৮। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য সর্তককারী।
৫০২৮। ৫০ এবং ৫১ নং আয়াত একই বাক্যদ্বারা সমাপ্ত করা হয়েছে। কারণ পুণঃরাবৃত্তি দ্বারা দুটি আয়াতের মধ্যে সংযুক্তিকে বোঝানো হয়েছে, এবং দুটি আয়াত এক সাথে পড়তে হবে। রাসুলের দায়িত্ব হচ্ছে :
১) আমাদের আল্লাহ্র প্রতি আহ্বান করা এবং উপলব্ধি করানো আমাদের পাপের জন্য অনুতাপ অত্যন্ত প্রয়োজন।
২) মিথ্যা উপাসনার ভ্রান্তি জাল ছিন্ন করা। প্রথমতঃ অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের ফলে, আমরা আল্লাহ্র ক্ষমা, করুণা ও অনুগ্রহ লাভের যোগ্যতা অর্জন করবো। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্র সাথে অংশীদারিত্বের উপাসনা থেকে মুক্তি ঘটে। এক আল্লাহ্র এবাদতে নিমগ্ন হওয়ার ফলে সে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাঁর সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করে। কারণ প্রকৃত সত্যের সন্ধান লাভের ফলে সে বুঝতে সক্ষম হয় যে মানুষের সেবা ও আল্লাহ্র সৃষ্ট প্রাণের সেবার মাঝেই আল্লাহ্র সন্তুষ্টি নিহিত আছে।
৫২। এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসুল এসেছে, তারা তাকে বলেছে, " তুমি তো এক যাদুকর,না হয় এক উম্মাদ ৫০২৯। "
৫০২৯। "তুমি তো এক যাদুকর, না হয় এক উম্মাদ "। এ কটুক্তি কাফেররা হযরত মুসা সম্বন্ধে করেছিলো [ ৫১ : ৩৯ ]। এই একই বাক্য তারা প্রয়োগ করে রাসুলে করীম হযরত মুহম্মদ ( সা) সম্বন্ধে [ ৩৮ : ৪] ; [ ৪৪ : ১৪ ]।
৫৩। তারা কি এই বিষয়ে বংশানুক্রমে একে অন্যকে অছিয়ৎ [নির্দ্দেশ ] করে গেছে ৫০৩০ ? বস্তুতঃ তারা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
৫০৩০। পৃথিবীতে পাপ ও পূণ্যের স্রোত ধারা পাশাপাশি প্রবাহিত। অবিশ্বাসীদের দ্বারা সত্যের বাণী প্রচারকদের নির্যাতনের ধারা যুগে যুগে একই রয়ে গেছে। তাদের বক্তব্যও একই রয়ে গেছে। মন্দের এই ধারা সত্যের কোনও ক্ষতি করতে সক্ষম নয়।
৫৪। সুতারাং [ হে মুহম্মদ ] তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। এতে তোমার কোন দোষ নাই ৫০৩১।
৫০৩১। রাসুলের দায়িত্ব সত্যকে প্রচার করা। কিন্তু যদি মন্দ ও পাপীরা একগুঁয়ে ভাবে সত্যকে প্রত্যাখান করে, তবে সে জন্য রাসুল ( সা ) দায়ী থাকবেন না। আল্লাহ্ এই আয়াত দ্বারা ঘোষণা করেছেন যে, " তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।" কিন্তু যারা সত্যের আহ্বান শুনতে চায় রাসুলকে ( সা ) তাদের মাঝে সত্য প্রচারের জন্য বলা হয়েছে।
৫৫। তুমি উপদেশ দান কর। নিশ্চয়ই উপদেশ মোমেনদের উপকারে আসে।
৫৬। জ্বিন ও মানুষদের আমি সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা শুধুমাত্র আমারই এবাদত করবে ৫০৩২।
৫৬। জ্বিন ও মানুষদের আমি সৃষ্টি করেছি এজন্য যে, তারা শুধুমাত্র আমারই এবাদত করবে ৫০৩২।
৫০৩২। এই বিশ্ব ভূমন্ডলের সৃষ্টি আল্লাহ্র কোনও খেয়াল খুশীর বা খেলাধূলার প্রকাশ নয় [ ২১ : ১৬ ]। এই বিশাল বিশ্বভূবনের সৃষ্টির পিছনে আল্লাহ্র এক নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্য বিদ্যমান। আমরা সাধারণ মানুষ। সেই বিশাল পরিকল্পনার এক ক্ষুদ্র অংশ। আমাদের সীমিত জ্ঞানের দ্বারা আমরা সেই পরিকল্পনার খুব ক্ষুদ্র অংশই অনুধাবনে সক্ষম। জ্বিন ও মানুষের সৃষ্টি আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য, আর এই আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন আল্লাহ্র একত্বের প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন অর্থাৎ তাঁর এবাদত। তা হলেই আমরা আল্লাহ্র বিশাল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সুসম্পন্ন করতে সক্ষম হব। আল্লাহ্ সকল শক্তির উৎস, সকল কল্যাণের কেন্দ্র। আমাদের আধ্যাত্মিক বিকাশ আল্লাহ্র ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পনের উপরে নির্ভরশীল। আত্মিক বিকাশের মাধ্যমেই আল্লাহ্র ইচ্ছাকে পূরণ করা সম্ভব, তাঁর সেবা করার একমাত্র উপায়। এর দ্বারা আল্লাহ্র কোন লাভ নাই। লাভ যা তা বান্দার। দেখুন পরের দুই আয়াত।
৫৭। আমি তাদের কাছে কোন জীবনোপকরণ চাই না ৫০৩৩; এবং এটাও চাই না যে, তারা আমার আহার যোগাড় করবে।
৫০৩৩। "জীবনোপকরণ " - এখানে আক্ষরিক ও ব্যপক উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত। সুতারাং এ কথা চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র যে, আল্লাহ্ জীবিকার জন্য বা আহার্যের জন্য কখনও আমাদের উপরে নির্ভরশীল। বরং মানুষের মাঝে যা কিছু ভালো, কল্যাণ, সুখ -শান্তি সমৃদ্ধি, সবই বান্দাকে আল্লাহ্ দান করে থাকেন। আল্লাহকে বান্দার কিছু দান করার নাই। "জীবনোপকরণ " শব্দটি দ্বারা মানুষের জীবনের সকল কল্যাণকে ব্যপক অর্থে প্রকাশ করা হয়েছে।
৫৮। আল্লাহ্-ই [ সকলকে ] জীবনোপকরণ দান করেন। তিনি [ সকল ] ক্ষমতার প্রভু ৫০৩৪ এবং অবিচলিত [ দৃঢ় ]
৫০৩৪। সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ্। আল্লাহ্র ক্ষমতার কিছু অংশ আল্লাহ্ মানুষকে অনুগ্রহ করে দান করেন। সুতারাং যে কোনও ক্ষমতা, দক্ষতা [ মানসিক বা শারীরিক ], জ্ঞান, প্রজ্ঞা,সৃজন ক্ষমতা, ইত্যাদি সকল কিছুর জন্য আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ্র ক্ষমতা স্থির ও অচঞ্চল ক্ষমতার সাক্ষর বহন করে। এই আয়াত সমূহে আল্লাহ্ বলেছেন তিনি বান্দাকে সকল প্রকার জীবিকা দান করেন। সুতারাং তাঁর সাহায্য লাভ আমাদের জন্য সহজ।
৫৯। পাপীদের প্রাপ্য তাই-ই যা অতীতে তাদের সমমত অবলম্বনকারীরা ভোগ করেছে ৫০৩৫। সুতারাং ওরা যেনো ইহার জন্য আমার নিকট ত্বরা না করে।
৫০৩৫। সমস্ত বিশ্ব ভূবন আল্লাহ্র আইনের উপরে নির্ভরশীল। মন্দ ও পাপীদের শেষ পরিণতি ধ্বংস। অতীতেও তা ঘটেছে, বর্তমানেও তা ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও তা ঘটবে। আল্লাহ্র আইন চিরসত্য। পাপী ও মন্দদের উপরে শাস্তি নিপতিত হবে হঠাৎ করেই - যখন তারা তা কোনও ভাবেই আশঙ্কা করবে না। সুতারাং তারা যেনো বিদ্রূপভাবে তা ত্বরান্বিত করার জন্য যাঞা না করে।
৬০। সেদিনের জন্য অবিশ্বাসীদের দুর্ভাগ্য ; যে দিনের শাস্তির প্রতিশ্রুতি তাদের অবশ্যই দেয়া হয়েছে ৫০৩৬।
৫০৩৬। 'সেইদিন ' হচ্ছে শেষ বিচারের দিন। পরলোকে তারা যে শাস্তি লাভ করবে তা হবে অনন্তকালের জন্য স্থায়ী।