+
-
R
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : মক্কাতে অবতীর্ণ সূরাগুলির মধ্যে এই সূরাটি প্রথমভাগে অবতীর্ণ হয় এবং সূরা নং ৫০ এর ভূমিকাতে যে সাতটি সূরার শ্রেণীর কথা বলা হয়েছে, এটি সেই শ্রেণীর ৫নম্বর সূরা। এই শ্রেণীর সুরাগুলির বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রত্যাদেশের সত্য এবং শেষ বিচারের দিন যার উল্লেখ পূর্বেই ৫০ নং সূরার ভূমিকাতে করা হয়েছে।
এই সূরার বিষয়বস্তুকে একটি বাক্যের মাধ্যমে পুণঃ পুণঃ উপস্থাপন করা হয়েছে, আর তা হচ্ছে, " অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি ? " এই বাক্যটি সম্পূর্ণ সূরাতে ছয়বার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে ; এবং প্রতিবার অতীতের বিভিন্ন জাতির উদাহরণ উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের পাপ, আল্লাহ্র নবীকে এবং তাঁর সতর্কবাণীকে প্রত্যাখান ইত্যাদি বর্ণনা শেষে কোরাণের সহজ সরল উপদেশাবলীকে এই বাক্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। [ আয়াত নং ১৫, ১৭, ২২, ৩২, ৪০ এবং ৫১ ]। আল্লাহ্র বাণী শোনার জন্য এবং সত্য ও ন্যায় গ্রহণের জন্য আহ্বান করা হয়েছে।
সার সংক্ষেপ : কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিন সন্নিকটে কিন্তু মানুষ তা ভুলে থাকে ; আল্লাহ্র বাণীকে প্রত্যাখান করে যেমন করেছিলো নূহ্-এর সম্প্রদায়, আ'দ ও সামুদ সম্প্রদায়, লূতের সম্প্রদায় এবং ফেরাউনের লোকেরা। উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছ কি ? [ ৫৪ : ১ -৫৫ ]।
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৫১২৭। দেখুন ৫৩ নং সূরার ভূমিকার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ। "কেয়ামত আসন্ন" এই বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে এই সূরার প্রথমে এবং পূর্ববর্তী সূরার [ ৫৩ নং ] শেষে [ ৫৭ নং আয়াতে ]।
৫১২৮। এই আয়াতটি দ্বারা যে ঘটনাকে বোঝানো হয়েছে তা তিন ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
১) হিজরতের পাঁচ বৎসর পূর্বে হজ্জ্বের মৌসুমে মিনায় যখন লোক সমাগম ছিলো, কাফেররা তখন রাসুলুল্লাহ্কে (সা) মুজেজা প্রদর্শন করতে বলেন। তিনি আল্লাহ্র হুকুমে চন্দ্রের দিকে ইশারা করেন। চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে স্থির হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর আবার খন্ড দুটি মিলিত হয়ে চন্দ্র আবার পূর্ব আকার ধারণ করে।
২) "চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে " - এই বাক্যটি দ্বারা ভবিষ্যত কালকে বোঝানো হয়েছে, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষণ - ভবিষ্যত কাল দ্বারা তাই বোঝানো হয়েছে।
৩) বাক্যটি রূপক অর্থ বহন করে। অর্থাৎ কেয়ামতের বিষয়বস্তু চন্দ্রের ন্যায় স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট।
১) নম্বর ঘটনাটি বহু লোক দর্শন করে যার মধ্যে বহু অবিশ্বাসীও ছিলো, যাদের উল্লেখ ২নং আয়াতে করা হয়েছে। ২) নম্বর ব্যাখ্যাটি কেয়ামতের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা যায় যখন সম্পূর্ণ সৌর মন্ডল ধ্বংস হয়ে যাবে। দেখুন [ ৭৫ : ৮ - ৯ ] আয়াতের বর্ণনা।
৫১২৯। "Mustamirr" অর্থাৎ ক্রমাগত অথবা শক্তিশালী। এর যে কোন একটি অর্থ এখানে প্রযোজ্য হতে পারে। অবিশ্বাসীরা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার মত ঘটনাকে অবলোকন করে তা অস্বাভাবিক বলে স্বীকার করে কিন্তু তাকে যাদু বিদ্যা বলে সনাক্ত করে। তারা এর দ্বারা কোনরূপ আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করে নাই।
৫১৩০। "পূর্ব নির্ধারিত সময়কাল" - অর্থাৎ পৃথিবীর জীবনে যা পাপ ও অন্যায় তা প্রথমে অপ্রতিহত গতিতে চলে এবং সত্য ও ন্যায় অবদমিত হয়ে থাকে। কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী। কারণ আল্লাহ্র আইন হচ্ছে পাপের ধ্বংস ও সত্যের বিজয় ও স্থায়ীত্ব। তবে পাপীদের জন্যও একটি সময়কালকে
আল্লাহ নির্ধারিত করে দিয়েছেন।
৫১৩১। অতীতের বিভিন্ন জাতির পাপ কার্য তাদের প্রতি আল্লাহ্র শাস্তির সংবাদ কাফেররা অবগত। কিন্তু তারা যদি প্রজ্ঞা সম্পন্ন হতো তবে এসব কাহিনী তাদের জ্ঞান চক্ষুকে উম্মীলন করে দিত। এর ফলে তারা প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করতে পারতো এবং পাপ পথে জীবিকা অর্জনের মাধ্যমে পার্থিব উন্নতি কামনা করতো না। অতীতের এরূপ পাঁচটি ঘটনার বিবরণ এই সূরার পরবর্তী আয়াত সমূহে বর্ণনা করা হয়েছে।
৫১৩২। পাপের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করা, সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জন করা, সম্পদ ও ক্ষমতা আহরণ করা সহজ। কিন্তু তা কখনও স্থায়ী ফল বয়ে আনতে পারে না। পৃথিবীর হিসাবই শেষ ফলাফল নয়; শেষ বিচারের দিনে সব কিছুর স্থায়ী মূল্যায়ন হবে।
৫১৩৩। কেয়ামত দিবসের বর্ণনাতে বলা হয়েছে যে, সেদিন আহ্বানকারী ফেরেশতা পুনরুত্থানের জন্য আহ্বান করবে প্রতিটি আত্মাকে দেখুন [ ২০ : ১০৮ - ১১১ ] আয়াত।
৫১৩৪। "বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল " - এই উপমাটির সাহায্যে কেয়ামত দিবসে পাপীদের পুনরুত্থানের ছবি আঁকা হয়েছে। যারা পঙ্গপালের ঝাঁক দেখেছেন তারা ছবিটি অনুধাবনের চেষ্টা করবেন। লক্ষ লক্ষ পঙ্গপাল ঝাঁকে ঝাঁকে শষ্য ক্ষেত্রকে আক্রমন করে পরদিন দেখা যায় রাশি রাশি হতবুদ্ধি পঙ্গপাল বিক্ষিপ্ত অবস্থায় চর্তুদিকে স্তুপাকারভাবে মরে পড়ে আছে। রোজ হাশরের ময়দানে মানুষেরা কবরের নিদ্রা থেকে জেগে উঠে হতবুদ্ধির মত বলবে, " হায় ! কে আমাদের জাগ্রত করলো ? "
৫১৩৫। হযরত নূহ্ এর মহাপ্লাবনের কাহিনী কোরানে বহুবার বর্ণনা করা হয়েছে। নূহ্ নবীর কাহিনী সবচেয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সূরা [ ১১ : ২৫ - ৪৮ ] আয়াতে। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে, কিভাবে তারা প্রথমে তাঁকে নির্মমভাবে অপমান ও নির্যাতন করতো। কি ভাবে নূহ্ নবী বিনীত ভাবে তাদের সাথে যুক্তি তর্কের উত্থাপন করতেন। কি ভাবে তারা নূহ্ নবীকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতো এবং তাকে পাগল ও ভূতে পাওয়া বলে অভিহিত করতো। কি ভাবে বন্যা তাদের প্লাবিত করেছিলো। নূহ্ নবী নৌকা দ্বারা উদ্ধার পান এবং পাপীরা ধ্বংস হয়ে যায়।
৫১৩৬। নূহ্ নবী মন্দ লোকদের বিরুদ্ধাচারণে তাঁর প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেন নাই। তাঁর সকল কর্ম প্রচেষ্টা যখন বিফল হলো, তিনি তখন আল্লাহ্র নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন, যার ফলে পাপীরা ধ্বংস হয়ে যায়।
৫১৩৭। উপর থেকে প্রবল বারী বর্ষণ এবং মাটির নীচ থেকে প্রবল বেগে পানি উৎক্ষিপ্ত হতে থাকে ফলে মহাপ্লাবনের সৃষ্টি হয়।
৫১৩৮। "Dusur" বহু বচনে "Disar" অর্থাৎ 'পাম' গাছের আঁশ। বলা হয়েছে এই আঁশকে ব্যবহার করা হয়েছে নৌকা নির্মানের জন্য। অনেকে মনে করেন পেরেক সদৃশ্য তক্তা যা নৌকা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছিলো। সে যুগের নৌকা তৈরীর প্রণালী এ যুগের অনুবাদকদের অনুধাবন করা অসম্ভব ব্যাপার।
৫১৩৯। হযরত নূহ্ এর ঘটনা হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি নিবেদিত বান্দার আল্লাহ্র করুণা ও দয়া লাভের সাক্ষ্য।
৫১৪০। যুগে যুগে আল্লাহ্ পূণ্যাত্মাদের শাস্তির আওতা থেকে রক্ষা করেছেন। দেখুন আয়াত [ ২৯ : ১৫ ] আয়াত যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পূণ্যাত্মাদের উদ্ধার লাভ ছিলো আল্লাহ্র করুণার নিদর্শন। দেখুন সূরা [ ২৫ : ৩৭ ] এবং [ ২৬ : ১২১ ] যেখানে অনুরূপ আয়াত আছে। আরও দেখুন [ ২৯ : ৩৫ ] এবং [ ৫১ : ৩৭ ] আয়াত সমূহ যেখানে লূতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যাকে আল্লাহ্ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন।
৫১৪১। "অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছ কি ? " - এই বাক্যটি এই সূরাতে ছয়বার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। দেখুন সূরার ভূমিকা।
সূরা কামার
সূরা কামার বা চন্দ্র -৫৪
৫৫ আয়াত, ৩ রুকু, মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : মক্কাতে অবতীর্ণ সূরাগুলির মধ্যে এই সূরাটি প্রথমভাগে অবতীর্ণ হয় এবং সূরা নং ৫০ এর ভূমিকাতে যে সাতটি সূরার শ্রেণীর কথা বলা হয়েছে, এটি সেই শ্রেণীর ৫নম্বর সূরা। এই শ্রেণীর সুরাগুলির বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রত্যাদেশের সত্য এবং শেষ বিচারের দিন যার উল্লেখ পূর্বেই ৫০ নং সূরার ভূমিকাতে করা হয়েছে।
এই সূরার বিষয়বস্তুকে একটি বাক্যের মাধ্যমে পুণঃ পুণঃ উপস্থাপন করা হয়েছে, আর তা হচ্ছে, " অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি ? " এই বাক্যটি সম্পূর্ণ সূরাতে ছয়বার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে ; এবং প্রতিবার অতীতের বিভিন্ন জাতির উদাহরণ উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের পাপ, আল্লাহ্র নবীকে এবং তাঁর সতর্কবাণীকে প্রত্যাখান ইত্যাদি বর্ণনা শেষে কোরাণের সহজ সরল উপদেশাবলীকে এই বাক্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে। [ আয়াত নং ১৫, ১৭, ২২, ৩২, ৪০ এবং ৫১ ]। আল্লাহ্র বাণী শোনার জন্য এবং সত্য ও ন্যায় গ্রহণের জন্য আহ্বান করা হয়েছে।
সার সংক্ষেপ : কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিন সন্নিকটে কিন্তু মানুষ তা ভুলে থাকে ; আল্লাহ্র বাণীকে প্রত্যাখান করে যেমন করেছিলো নূহ্-এর সম্প্রদায়, আ'দ ও সামুদ সম্প্রদায়, লূতের সম্প্রদায় এবং ফেরাউনের লোকেরা। উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছ কি ? [ ৫৪ : ১ -৫৫ ]।
সূরা কামার বা চন্দ্র -৫৪
৫৫ আয়াত, ৩ রুকু, মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
০১। কেয়ামত নিকটবর্তী ৫১২৭, এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে ৫১২৮।
৫১২৭। দেখুন ৫৩ নং সূরার ভূমিকার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ। "কেয়ামত আসন্ন" এই বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে এই সূরার প্রথমে এবং পূর্ববর্তী সূরার [ ৫৩ নং ] শেষে [ ৫৭ নং আয়াতে ]।
৫১২৮। এই আয়াতটি দ্বারা যে ঘটনাকে বোঝানো হয়েছে তা তিন ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
১) হিজরতের পাঁচ বৎসর পূর্বে হজ্জ্বের মৌসুমে মিনায় যখন লোক সমাগম ছিলো, কাফেররা তখন রাসুলুল্লাহ্কে (সা) মুজেজা প্রদর্শন করতে বলেন। তিনি আল্লাহ্র হুকুমে চন্দ্রের দিকে ইশারা করেন। চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে স্থির হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর আবার খন্ড দুটি মিলিত হয়ে চন্দ্র আবার পূর্ব আকার ধারণ করে।
২) "চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে " - এই বাক্যটি দ্বারা ভবিষ্যত কালকে বোঝানো হয়েছে, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষণ - ভবিষ্যত কাল দ্বারা তাই বোঝানো হয়েছে।
৩) বাক্যটি রূপক অর্থ বহন করে। অর্থাৎ কেয়ামতের বিষয়বস্তু চন্দ্রের ন্যায় স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট।
১) নম্বর ঘটনাটি বহু লোক দর্শন করে যার মধ্যে বহু অবিশ্বাসীও ছিলো, যাদের উল্লেখ ২নং আয়াতে করা হয়েছে। ২) নম্বর ব্যাখ্যাটি কেয়ামতের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা যায় যখন সম্পূর্ণ সৌর মন্ডল ধ্বংস হয়ে যাবে। দেখুন [ ৭৫ : ৮ - ৯ ] আয়াতের বর্ণনা।
০২। কিন্তু ওরা যদি কোন নিদর্শন দেখে, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, " ইহা তো সেই প্রচলিত যাদু।" ৫১২৯
৫১২৯। "Mustamirr" অর্থাৎ ক্রমাগত অথবা শক্তিশালী। এর যে কোন একটি অর্থ এখানে প্রযোজ্য হতে পারে। অবিশ্বাসীরা চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার মত ঘটনাকে অবলোকন করে তা অস্বাভাবিক বলে স্বীকার করে কিন্তু তাকে যাদু বিদ্যা বলে সনাক্ত করে। তারা এর দ্বারা কোনরূপ আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করে নাই।
০৩। তারা [সর্তকবাণীকে ] প্রত্যাখান করে এবং তাদের [নিজ ] প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। কিন্তু প্রত্যেক জিনিষের জন্য রয়েছে এক [ পূর্ব] নির্ধারিত সময়কাল ৫১৩০।
৫১৩০। "পূর্ব নির্ধারিত সময়কাল" - অর্থাৎ পৃথিবীর জীবনে যা পাপ ও অন্যায় তা প্রথমে অপ্রতিহত গতিতে চলে এবং সত্য ও ন্যায় অবদমিত হয়ে থাকে। কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী। কারণ আল্লাহ্র আইন হচ্ছে পাপের ধ্বংস ও সত্যের বিজয় ও স্থায়ীত্ব। তবে পাপীদের জন্যও একটি সময়কালকে
আল্লাহ নির্ধারিত করে দিয়েছেন।
০৪। অবশ্যই [কুর-আনের মাধ্যমে ] তাদের নিকট সংবাদ এসেছে ; যাতে আছে তাদের জন্য সাবধান বাণী ৫১৩১ ;-
০৫। পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা ; কিন্তু সর্তকারীর [এই প্রচার ] তাদের কোন উপকারে আসে নাই।
০৫। পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা ; কিন্তু সর্তকারীর [এই প্রচার ] তাদের কোন উপকারে আসে নাই।
৫১৩১। অতীতের বিভিন্ন জাতির পাপ কার্য তাদের প্রতি আল্লাহ্র শাস্তির সংবাদ কাফেররা অবগত। কিন্তু তারা যদি প্রজ্ঞা সম্পন্ন হতো তবে এসব কাহিনী তাদের জ্ঞান চক্ষুকে উম্মীলন করে দিত। এর ফলে তারা প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করতে পারতো এবং পাপ পথে জীবিকা অর্জনের মাধ্যমে পার্থিব উন্নতি কামনা করতো না। অতীতের এরূপ পাঁচটি ঘটনার বিবরণ এই সূরার পরবর্তী আয়াত সমূহে বর্ণনা করা হয়েছে।
০৬। সুতারাং [হে নবী ! ] ৫১৩২ তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। সেদিন আহ্বানকারী [তাদের ] এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে আহ্বান করবে, ৫১৩৩
৫১৩২। পাপের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করা, সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জন করা, সম্পদ ও ক্ষমতা আহরণ করা সহজ। কিন্তু তা কখনও স্থায়ী ফল বয়ে আনতে পারে না। পৃথিবীর হিসাবই শেষ ফলাফল নয়; শেষ বিচারের দিনে সব কিছুর স্থায়ী মূল্যায়ন হবে।
৫১৩৩। কেয়ামত দিবসের বর্ণনাতে বলা হয়েছে যে, সেদিন আহ্বানকারী ফেরেশতা পুনরুত্থানের জন্য আহ্বান করবে প্রতিটি আত্মাকে দেখুন [ ২০ : ১০৮ - ১১১ ] আয়াত।
০৭। তারা নত নেত্রে [ তাদের ] কবর থেকে বের হবে, বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায় ৫১৩৪,
০৮। আহ্বানকারীর দিকে বিষ্ফোরিত নেত্রে চেয়ে ছুটতে থাকবে। অবিশ্বাসীরা বলবে, " কঠিন এই দিন।"
০৮। আহ্বানকারীর দিকে বিষ্ফোরিত নেত্রে চেয়ে ছুটতে থাকবে। অবিশ্বাসীরা বলবে, " কঠিন এই দিন।"
৫১৩৪। "বিক্ষিপ্ত পঙ্গপাল " - এই উপমাটির সাহায্যে কেয়ামত দিবসে পাপীদের পুনরুত্থানের ছবি আঁকা হয়েছে। যারা পঙ্গপালের ঝাঁক দেখেছেন তারা ছবিটি অনুধাবনের চেষ্টা করবেন। লক্ষ লক্ষ পঙ্গপাল ঝাঁকে ঝাঁকে শষ্য ক্ষেত্রকে আক্রমন করে পরদিন দেখা যায় রাশি রাশি হতবুদ্ধি পঙ্গপাল বিক্ষিপ্ত অবস্থায় চর্তুদিকে স্তুপাকারভাবে মরে পড়ে আছে। রোজ হাশরের ময়দানে মানুষেরা কবরের নিদ্রা থেকে জেগে উঠে হতবুদ্ধির মত বলবে, " হায় ! কে আমাদের জাগ্রত করলো ? "
০৯। তাদের পূর্বে নূহ্ এর সম্প্রদায়ও [তাদের নবীকে ] প্রত্যাখান করেছিলো। তারা আমার বান্দাকে প্রত্যাখান করেছিলো ৫১৩৫ এবং বলেছিলো, " এই এক পাগল।" এবং সে বিতাড়িত হয়েছিলো।
৫১৩৫। হযরত নূহ্ এর মহাপ্লাবনের কাহিনী কোরানে বহুবার বর্ণনা করা হয়েছে। নূহ্ নবীর কাহিনী সবচেয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সূরা [ ১১ : ২৫ - ৪৮ ] আয়াতে। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে, কিভাবে তারা প্রথমে তাঁকে নির্মমভাবে অপমান ও নির্যাতন করতো। কি ভাবে নূহ্ নবী বিনীত ভাবে তাদের সাথে যুক্তি তর্কের উত্থাপন করতেন। কি ভাবে তারা নূহ্ নবীকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতো এবং তাকে পাগল ও ভূতে পাওয়া বলে অভিহিত করতো। কি ভাবে বন্যা তাদের প্লাবিত করেছিলো। নূহ্ নবী নৌকা দ্বারা উদ্ধার পান এবং পাপীরা ধ্বংস হয়ে যায়।
১০। অতঃপর সে তাঁর প্রভুকে ডেকে বলেছিলো, " আমি তো অসহায়, অতএব তুমি [আমাকে ] সাহায্য কর।" ৫১৩৬
৫১৩৬। নূহ্ নবী মন্দ লোকদের বিরুদ্ধাচারণে তাঁর প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারেন নাই। তাঁর সকল কর্ম প্রচেষ্টা যখন বিফল হলো, তিনি তখন আল্লাহ্র নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন, যার ফলে পাপীরা ধ্বংস হয়ে যায়।
১১। সুতারাং মুষলধারে বৃষ্টির সাথে আমি আকাশের দুয়ার খুলে দিলাম।
১২। এবং মৃত্তিকা থেকে উৎসরিত করলাম প্রস্রবণ। সুতারাং [সকল ] পানি মিলিত হলো [এবং স্ফীত হলো ] এক নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত ৫১৩৭
১২। এবং মৃত্তিকা থেকে উৎসরিত করলাম প্রস্রবণ। সুতারাং [সকল ] পানি মিলিত হলো [এবং স্ফীত হলো ] এক নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত ৫১৩৭
৫১৩৭। উপর থেকে প্রবল বারী বর্ষণ এবং মাটির নীচ থেকে প্রবল বেগে পানি উৎক্ষিপ্ত হতে থাকে ফলে মহাপ্লাবনের সৃষ্টি হয়।
১৩। কিন্তু আমি তাকে প্রশস্ত তক্তা ও পাম গাছের আঁশ দ্বারা পানি নিরোধক ভাবে প্রস্তুত [ নৌকাতে ] বহন করেছিলাম ৫১৩৮।
৫১৩৮। "Dusur" বহু বচনে "Disar" অর্থাৎ 'পাম' গাছের আঁশ। বলা হয়েছে এই আঁশকে ব্যবহার করা হয়েছে নৌকা নির্মানের জন্য। অনেকে মনে করেন পেরেক সদৃশ্য তক্তা যা নৌকা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছিলো। সে যুগের নৌকা তৈরীর প্রণালী এ যুগের অনুবাদকদের অনুধাবন করা অসম্ভব ব্যাপার।
১৪। যা ভেসে বেড়াত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ; যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো, [ অবজ্ঞার সাথে ], ইহা ছিলো তারই পুরষ্কার ৫১৩৯।
৫১৩৯। হযরত নূহ্ এর ঘটনা হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি নিবেদিত বান্দার আল্লাহ্র করুণা ও দয়া লাভের সাক্ষ্য।
১৫। এবং আমি এই ঘটনাকে [ সকল সময়ের জন্য ] এক নিদর্শন স্বরূপ রেখে দিয়েছি ৫১৪০ ; এরপরেও কি কেউ আছ যে উপদেশ গ্রহণ করবে ৫১৪১ ?
৫১৪০। যুগে যুগে আল্লাহ্ পূণ্যাত্মাদের শাস্তির আওতা থেকে রক্ষা করেছেন। দেখুন আয়াত [ ২৯ : ১৫ ] আয়াত যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পূণ্যাত্মাদের উদ্ধার লাভ ছিলো আল্লাহ্র করুণার নিদর্শন। দেখুন সূরা [ ২৫ : ৩৭ ] এবং [ ২৬ : ১২১ ] যেখানে অনুরূপ আয়াত আছে। আরও দেখুন [ ২৯ : ৩৫ ] এবং [ ৫১ : ৩৭ ] আয়াত সমূহ যেখানে লূতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যাকে আল্লাহ্ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন।
৫১৪১। "অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছ কি ? " - এই বাক্যটি এই সূরাতে ছয়বার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। দেখুন সূরার ভূমিকা।
১৬। কি কঠোর ছিলো আমার শাস্তি ও সর্তকবাণী ৫১৪২ ?
৫১৪২। আল্লাহ্ করুণা ও দয়ার আঁধার। কোরাণ শরীফে বহুবার তাঁর করুণার উল্লেখ আছে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, তিনি করুণাময় ঠিকই,তবে তিনি ন্যায়বান। পাপীরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি এড়াতে পারবে না। যখন কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহ্র সর্তকবাণীকে উপেক্ষা করে তাদের প্রতি থেকে আল্লাহ্ করুণা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সেই ভয়াবহ অবস্থার কথাই এখানে বর্ণনা করা হয়েছে।
৫১৪৩। মানুষের জীবন দর্শন ও আধ্যাত্মিক জীবনের এক সুস্পষ্ট চিত্র আল্ - কোরাণ। যে জীবন বিধান মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধির পথে ইহকালে ও পরকালে শান্তির পথে পরিচালিত করবে, কোরাণে তা সমৃদ্ধ ভাষাতে সহজ সরল ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন সাধারণ মানুষের তা বোধগম্য হয়। আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি লাভের উপায় বর্ণনা করা হয়েছে কোরাণের পাতায় পাতায়। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্র এ এক অসীম করুণা সাধারণ মানুষের জন্য। না হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পথের দিশা অন্বেষণ করে ফিরতো অন্ধের মত। এর পরেও কোরাণ থেকে পথের দিশা সন্ধান করে না কোন মূর্খ ?
মন্তব্য : আরবীতে কোরাণ পাঠের সাথে সাথে মাতৃভাষাতে কোরাণ পাঠ প্রয়োজন যেনো আল্লাহ্র দেয়া পথ নির্দ্দেশকে হৃদয়ের মাঝে বুঝতে পারে ও অনুসরণ করতে পারে।
৫১৪৪। দেখুন আয়াত [ ৪১ : ১৬] কি সংক্ষেপে কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে কি জীবন্ত চিত্র আঁকা হয়েছে ঘুর্ণিঝড়ের। এই ঘুর্ণিঝড় ছিলো অবর্ণনীয় প্রচন্ড গতি সম্পন্ন যা মানুষকে ধ্বংস করে ফেলেছিলো ঠিক খেজুর গাছ যে ভাবে শিকড় সহ উৎপাটিত হয়ে যায়। "নিরবচ্ছিন্ন প্রচন্ড বিপর্যয়ের দিন" বাক্যটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে তা কয়েকদিন স্থায়ী ছিলো। যে ঝঞাবায়ু আ'দ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলে তা সাত রাত্রি ও আট দিনস্থায়ী ছিলো। দেখুন [ ৬৯: ৭ ] আয়াত।
৫১৪৫। ১৮ নং আয়াত থেকে শুরু করা হয়েছে পাপীদের বর্ণনা এবং ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতার পরিণাম শাস্তি। এর পর ২১ নং আয়াতে আল্লাহ্র সর্তকবাণী ও ২২ নং আয়াতে উপদেশ গ্রহণের উপদেশ। একই ভাবে পুণরাবৃত্তি করা হয়েছে আয়াত নং ৩০ ও ৩২ এবং ৩৯ [ সামান্য পরিবর্তন সহ ] ও ৪০ নং আয়াতে।
রুকু - ২
৫১৪৬। সামুদ জাতির মনঃস্তাতিক বিশ্লেষণ এই আয়াতের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই আয়াত ও সূরা [ ৪১ : ১৭ ] আয়াতের মাধ্যমে সঙ্কীর্ণ বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন লোকের আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ সম্বন্ধে ধারণাকে বর্ণনা করা হয়েছে এবং প্রত্যাদেশের সত্যের মানবতা, সামাজিক মূল্যবোধকে তুলনা করা হয়েছে,তাদের বিচার বুদ্ধির সাথে। সামুদ জাতির নিকট আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ প্রেরণ করা হয়েছিলো সলেহ্ নবীর মাধ্যমে। এই আয়াতে সামুদ জাতির উক্তিগুলি সালেহ্ নবী সম্বন্ধে।
৫১৪৭। সামুদ সম্প্রদায়ের বক্তব্য ছিলো যে সালেহ্ নবী তাদেরই একজন অতি সাধারণ ব্যক্তি। তাহলে কি ভাবে তিনি তাদের পথ প্রদর্শক হতে পারেন। তাদের অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, সালেহ্ নবীর মাঝে নবী সুলভ বৈশিষ্ট্য উপলব্ধিতে বাঁধা প্রদান করে। উপরন্তু সালেহ্ নবী একই গোত্রের লোক, একই স্থানে, একই পরিবেশে, একই রকমভাবে অন্য দশজনের মতই তিনি লালিত পালিত হয়েছেন এবং তা অতি সাধারণ ভাবে। সেই তিনি বিশেষভাবে কেন আল্লাহ্র নবী হয়ে তাদের পথ প্রদর্শক রূপে সম্মানিত হবেন? সুতারাং তাদের মন্তব্য ছিলো হয় সালেহ্ নবী উম্মাদ নয় বিপথগামী। যুগে যুগে প্রতিটি নবী ও রসুলকে তার স্বগোত্রের লোকদের দ্বারা ঠিক এই একই ভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে - আমাদের রাসুলও (সা) তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।
উপদেশ : সৎ পথের আহ্বানকারীকে সর্বদা অত্যাচার নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হবে এ কথা শুধু নবী বা রসুল নয় সকলের জন্যই সত্য।
৫১৪৮। আগামীকাল দ্বারা ভবিষ্যত কালকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অতি সত্বরই তারা জানতে পারবে।
৫১৪৯। দেখুন [ ৭ : ৭৩ ] আয়াতের টিকা নং ১০৪৪। উষ্ট্রীটি ছিলো সামুদ সম্প্রদায়ের জন্য এক মহাপরীক্ষা। কারণ তারা ছিলো স্বার্থপর ও গরীবের উপরে নির্যাতনকারী। অনাবৃষ্টির দরুণ পানির অভাব হলে সম্পদশালী লোকেরা চারণভূমির ঘাস ও পানের পানি শুধু তাদের পশু পালের ব্যবহারের জন্য এবং গরীবের পশুপালকে এ থেকে বঞ্চিত করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে। এরই পটভূমিতে আল্লাহ্ উষ্ট্রীটিকে প্রেরণ করেন গরীবদের পশুপালের প্রতিভূ স্বরূপ।
৫১৫০। দেখুন আয়াত [ ২৬ : ১৫৫ - ১৫৬ ]। আল্লাহ্র হুকুম ছিলো প্রত্যেকে প্রত্যেকের নির্ধারিত পানির অংশ লাভ করবে। এখানে ধনী বা দরিদ্র বলে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামত পানিকে কেহ কুক্ষিগত করতে পারবে না। দরিদ্রদের জন্য ও তাদের পশুদের জন্যও তা সমভাবে উম্মুক্ত।
৫১৫১। সামুদ জাতির শাস্তির বর্ণনাতে বলা হয়েছে তাদের ধ্বংস করা হয়েছিলো 'মহানাদ' দ্বারা - সম্ভবতঃ তা ছিলো প্রচন্ড শব্দসহ ভূমিকম্প।
৫১৫২। "খোয়াড় প্রস্তুতকারী " অর্থ গৃহপালিত পশুর খোয়াড় নির্মাণকারী। আরববাসীরা সে যুগে শাখা -পল্লব দ্বারা ছাগল, ভেড়ার খোয়াড় ও বেড়া নির্মাণ করিত।
৫১৫৩। সমতল ভূমির শহরে বাসকারী লূত সম্প্রদায় সম্বন্ধে কোরাণশরীফে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। দেখুন সূরা [ ১১ : ৭৪ - ৮৩ ]।
৫১৫৪। "Hasib" প্রচন্ড টর্ণেডো বা ঘুর্ণিঝড়। এই শব্দটি এই আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে ; এবং আরও ব্যবহৃত হয়েছে [ ১৭ : ৬৮ ] আয়াতে ও [ ২৯ : ৪০] আয়াতে এবং [ ৬৭ : ১৭] আয়াতে। লূতের নগরীর উপরে শাস্তি হিসেবে বর্ষণ করা হয়েছিলো পাথর।
৫১৫৫। যারা আল্লাহ্র আইন মান্য করে চলে এবং যারা আল্লাহ্র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ আল্লাহ্ তাদের পুরষ্কৃত করেন।
৫১৫৬। দেখুন আয়াত [ ১১ : ৭৮ - ৭৯ ]।
৫১৫৭। লূতের সম্প্রদায় সমকামিতার জঘন্য পাপে লিপ্ত ছিলো। লূত বহুদিন থেকে তাদের সুপথে আনার বৃথা চেষ্টাতে লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু হায় সবই ছিলো বৃথা। তাদের শেষ সময় ঘনিয়ে এলো যখন দুজন ফেরেশতা সুপুরুষের ছদ্মবেশে লূতের নিকট আগমন করলেন। নগরীর লোকেরা উম্মাদের ন্যায় লূতের বাড়ী আক্রমণ করলো সুপুরুষ অতিথিদ্বয়কে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য। লূত প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগলেন তাদের বিরত করার জন্য। কিন্তু পাপিষ্ঠদের প্রচন্ড শক্তির কাছে তার ক্ষমতা ছিলো অতি সামান্য। লূতের সম্প্রদায়ের পাপের ভাড়া পূর্ণ হলো। তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার পূর্বে আল্লাহ্ তাদের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নেন। পরদিন প্রভাতে তাদের নগরীদ্বয় পাথর বৃষ্টি দ্বারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। লূত এবং তাঁর সহচরেরা আল্লাহ্র কৃপায় রক্ষা পায়।
১৭। বুঝার ও মনে রাখার জন্য কুর-আনকে আমি অবশ্যই সহজ করেছি ৫১৪৩। এরপরে এমন কেউ আছ কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে ?
৫১৪৩। মানুষের জীবন দর্শন ও আধ্যাত্মিক জীবনের এক সুস্পষ্ট চিত্র আল্ - কোরাণ। যে জীবন বিধান মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধির পথে ইহকালে ও পরকালে শান্তির পথে পরিচালিত করবে, কোরাণে তা সমৃদ্ধ ভাষাতে সহজ সরল ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন সাধারণ মানুষের তা বোধগম্য হয়। আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রশান্তি লাভের উপায় বর্ণনা করা হয়েছে কোরাণের পাতায় পাতায়। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্র এ এক অসীম করুণা সাধারণ মানুষের জন্য। না হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পথের দিশা অন্বেষণ করে ফিরতো অন্ধের মত। এর পরেও কোরাণ থেকে পথের দিশা সন্ধান করে না কোন মূর্খ ?
মন্তব্য : আরবীতে কোরাণ পাঠের সাথে সাথে মাতৃভাষাতে কোরাণ পাঠ প্রয়োজন যেনো আল্লাহ্র দেয়া পথ নির্দ্দেশকে হৃদয়ের মাঝে বুঝতে পারে ও অনুসরণ করতে পারে।
১৮। আ'দ সম্প্রদায়ও [ সত্যকে ] প্রত্যাখান করেছিলো। অতঃপর কি ভয়ানক হয়েছিলো আমার শাস্তি ও সর্তকবাণী ?
১৯। [নিরবচ্ছিন্ন] এক প্রচন্ড বিপর্যয়ের দিনে আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম এক ঝঞ্ঝা বায়ু ৫১৪৪,
১৯। [নিরবচ্ছিন্ন] এক প্রচন্ড বিপর্যয়ের দিনে আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম এক ঝঞ্ঝা বায়ু ৫১৪৪,
৫১৪৪। দেখুন আয়াত [ ৪১ : ১৬] কি সংক্ষেপে কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে কি জীবন্ত চিত্র আঁকা হয়েছে ঘুর্ণিঝড়ের। এই ঘুর্ণিঝড় ছিলো অবর্ণনীয় প্রচন্ড গতি সম্পন্ন যা মানুষকে ধ্বংস করে ফেলেছিলো ঠিক খেজুর গাছ যে ভাবে শিকড় সহ উৎপাটিত হয়ে যায়। "নিরবচ্ছিন্ন প্রচন্ড বিপর্যয়ের দিন" বাক্যটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে তা কয়েকদিন স্থায়ী ছিলো। যে ঝঞাবায়ু আ'দ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলে তা সাত রাত্রি ও আট দিনস্থায়ী ছিলো। দেখুন [ ৬৯: ৭ ] আয়াত।
২০। মানুষকে উৎপাটিত করা হয়েছিলো, যেনো তারা [ মাটি থেকে ] উৎপাটিত পাম গাছের শিকড়
২১। হ্যাঁ, কত ভয়ংকর ছিলো আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী ৫১৪৫।
২১। হ্যাঁ, কত ভয়ংকর ছিলো আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী ৫১৪৫।
৫১৪৫। ১৮ নং আয়াত থেকে শুরু করা হয়েছে পাপীদের বর্ণনা এবং ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতার পরিণাম শাস্তি। এর পর ২১ নং আয়াতে আল্লাহ্র সর্তকবাণী ও ২২ নং আয়াতে উপদেশ গ্রহণের উপদেশ। একই ভাবে পুণরাবৃত্তি করা হয়েছে আয়াত নং ৩০ ও ৩২ এবং ৩৯ [ সামান্য পরিবর্তন সহ ] ও ৪০ নং আয়াতে।
২২। বুঝার জন্য ও মনে রাখার জন্য,কুর-আনকে আমি অবশ্যই সহজ করে দিয়েছি। এরপরে এমন কেউ আছ কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে ?
রুকু - ২
২৩। সামুদরাও [ তাদের ] সর্তককারীকে প্রত্যাখান করেছিলো।
২৪। তারা বলেছিলো, " সে কি ! ৫১৪৬। [ সে ] একজন মানুষ মাত্র। আমাদের মধ্য থেকে নিঃসঙ্গ একজন। আমরা কি তাকেই অনুসরণ করবো ৫১৪৭ ? তবে তো আমরা হব বিপথগামী ও উম্মাদ।
২৪। তারা বলেছিলো, " সে কি ! ৫১৪৬। [ সে ] একজন মানুষ মাত্র। আমাদের মধ্য থেকে নিঃসঙ্গ একজন। আমরা কি তাকেই অনুসরণ করবো ৫১৪৭ ? তবে তো আমরা হব বিপথগামী ও উম্মাদ।
৫১৪৬। সামুদ জাতির মনঃস্তাতিক বিশ্লেষণ এই আয়াতের মাধ্যমে করা হয়েছে। এই আয়াত ও সূরা [ ৪১ : ১৭ ] আয়াতের মাধ্যমে সঙ্কীর্ণ বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন লোকের আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ সম্বন্ধে ধারণাকে বর্ণনা করা হয়েছে এবং প্রত্যাদেশের সত্যের মানবতা, সামাজিক মূল্যবোধকে তুলনা করা হয়েছে,তাদের বিচার বুদ্ধির সাথে। সামুদ জাতির নিকট আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ প্রেরণ করা হয়েছিলো সলেহ্ নবীর মাধ্যমে। এই আয়াতে সামুদ জাতির উক্তিগুলি সালেহ্ নবী সম্বন্ধে।
৫১৪৭। সামুদ সম্প্রদায়ের বক্তব্য ছিলো যে সালেহ্ নবী তাদেরই একজন অতি সাধারণ ব্যক্তি। তাহলে কি ভাবে তিনি তাদের পথ প্রদর্শক হতে পারেন। তাদের অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, সালেহ্ নবীর মাঝে নবী সুলভ বৈশিষ্ট্য উপলব্ধিতে বাঁধা প্রদান করে। উপরন্তু সালেহ্ নবী একই গোত্রের লোক, একই স্থানে, একই পরিবেশে, একই রকমভাবে অন্য দশজনের মতই তিনি লালিত পালিত হয়েছেন এবং তা অতি সাধারণ ভাবে। সেই তিনি বিশেষভাবে কেন আল্লাহ্র নবী হয়ে তাদের পথ প্রদর্শক রূপে সম্মানিত হবেন? সুতারাং তাদের মন্তব্য ছিলো হয় সালেহ্ নবী উম্মাদ নয় বিপথগামী। যুগে যুগে প্রতিটি নবী ও রসুলকে তার স্বগোত্রের লোকদের দ্বারা ঠিক এই একই ভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে - আমাদের রাসুলও (সা) তার ব্যতিক্রম ছিলেন না।
উপদেশ : সৎ পথের আহ্বানকারীকে সর্বদা অত্যাচার নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হবে এ কথা শুধু নবী বা রসুল নয় সকলের জন্যই সত্য।
২৫। "আমাদের সকলের মধ্যে কি তার প্রতিই প্রত্যাদেশ প্রেরিত হয়েছে ? না, সে তো একজন মিথ্যাবাদী দাম্ভিক"
২৬। হায় ! আগামী দিনে তারা জানতে পারবে, কে মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক ৫১৪৮।
২৬। হায় ! আগামী দিনে তারা জানতে পারবে, কে মিথ্যাবাদী ও দাম্ভিক ৫১৪৮।
৫১৪৮। আগামীকাল দ্বারা ভবিষ্যত কালকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অতি সত্বরই তারা জানতে পারবে।
২৭। আমি পরীক্ষা হিসেবে তাদের জন্য একটি উষ্ট্রী পাঠাবো। সুতারাং [ হে সালেহ্ ] তাদের আচরণ লক্ষ্য কর এবং ধৈর্যধারণ কর ৫১৪৯।
৫১৪৯। দেখুন [ ৭ : ৭৩ ] আয়াতের টিকা নং ১০৪৪। উষ্ট্রীটি ছিলো সামুদ সম্প্রদায়ের জন্য এক মহাপরীক্ষা। কারণ তারা ছিলো স্বার্থপর ও গরীবের উপরে নির্যাতনকারী। অনাবৃষ্টির দরুণ পানির অভাব হলে সম্পদশালী লোকেরা চারণভূমির ঘাস ও পানের পানি শুধু তাদের পশু পালের ব্যবহারের জন্য এবং গরীবের পশুপালকে এ থেকে বঞ্চিত করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করে। এরই পটভূমিতে আল্লাহ্ উষ্ট্রীটিকে প্রেরণ করেন গরীবদের পশুপালের প্রতিভূ স্বরূপ।
২৮। এবং তাদের বল যে, তাদের মাঝে পানি বণ্টন করে নিতে হবে ৫১৫০। পানির প্রাপ্য অংশের জন্য প্রত্যেকে উপস্থিত হবে [ পালাক্রমে ]।
৫১৫০। দেখুন আয়াত [ ২৬ : ১৫৫ - ১৫৬ ]। আল্লাহ্র হুকুম ছিলো প্রত্যেকে প্রত্যেকের নির্ধারিত পানির অংশ লাভ করবে। এখানে ধনী বা দরিদ্র বলে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামত পানিকে কেহ কুক্ষিগত করতে পারবে না। দরিদ্রদের জন্য ও তাদের পশুদের জন্যও তা সমভাবে উম্মুক্ত।
২৯। কিন্তু তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহ্বান করলো,এবং সে তার হাতে এক তরবারী গ্রহণ করে [ উষ্ট্রীকে] হত্যা করেছিলো।
৩০। হায় ! কি [ ভীষণ ] ছিলো আমার শাস্তি ও সর্তকবাণী।
৩১। আমি তাদের বিরুদ্ধে একটি মাত্র প্রচন্ড বিস্ফোরণ পাঠিয়েছিলাম ৫১৫১ ফলে তারা খোয়াড় প্রস্তুতকারীর দ্বিখন্ডিত শুষ্ক শাখা প্রশাখার ন্যায় পরিণত হলো ৫১৫২।
৩০। হায় ! কি [ ভীষণ ] ছিলো আমার শাস্তি ও সর্তকবাণী।
৩১। আমি তাদের বিরুদ্ধে একটি মাত্র প্রচন্ড বিস্ফোরণ পাঠিয়েছিলাম ৫১৫১ ফলে তারা খোয়াড় প্রস্তুতকারীর দ্বিখন্ডিত শুষ্ক শাখা প্রশাখার ন্যায় পরিণত হলো ৫১৫২।
৫১৫১। সামুদ জাতির শাস্তির বর্ণনাতে বলা হয়েছে তাদের ধ্বংস করা হয়েছিলো 'মহানাদ' দ্বারা - সম্ভবতঃ তা ছিলো প্রচন্ড শব্দসহ ভূমিকম্প।
৫১৫২। "খোয়াড় প্রস্তুতকারী " অর্থ গৃহপালিত পশুর খোয়াড় নির্মাণকারী। আরববাসীরা সে যুগে শাখা -পল্লব দ্বারা ছাগল, ভেড়ার খোয়াড় ও বেড়া নির্মাণ করিত।
৩২। বুঝার ও মনে রাখার জন্য, এই কুর-আনকে আমি অবশ্যই সহজ করে দিয়েছি। এরপরে এমন কেউ আছ কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে?
৩৩। লূতের সম্প্রদায় [ লূতের ] উপদেশকে মিথ্যা জেনেছিলো ৫১৫৩।
৩৩। লূতের সম্প্রদায় [ লূতের ] উপদেশকে মিথ্যা জেনেছিলো ৫১৫৩।
৫১৫৩। সমতল ভূমির শহরে বাসকারী লূত সম্প্রদায় সম্বন্ধে কোরাণশরীফে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। দেখুন সূরা [ ১১ : ৭৪ - ৮৩ ]।
৩৪। আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুর বর্ষণকারী প্রচন্ড টর্ণেডো প্রেরণ করেছিলাম ৫১৫৪ [ যা তাদের ধ্বংস করেছিলো ], শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ছিলো লূতের পরিবার। আমি তাদের অতি প্রত্যুষে উদ্ধার করেছিলাম,
৫১৫৪। "Hasib" প্রচন্ড টর্ণেডো বা ঘুর্ণিঝড়। এই শব্দটি এই আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে ; এবং আরও ব্যবহৃত হয়েছে [ ১৭ : ৬৮ ] আয়াতে ও [ ২৯ : ৪০] আয়াতে এবং [ ৬৭ : ১৭] আয়াতে। লূতের নগরীর উপরে শাস্তি হিসেবে বর্ষণ করা হয়েছিলো পাথর।
৩৫। আমার বিশেষ অনুগ্রহ স্বরূপ। যে শোকর করে, তাদের আমি এ ভাবেই পুরষ্কৃত করে থাকি ৫১৫৫।
৫১৫৫। যারা আল্লাহ্র আইন মান্য করে চলে এবং যারা আল্লাহ্র অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ আল্লাহ্ তাদের পুরষ্কৃত করেন।
৩৬। লূত তাদের আমার শাস্তি সম্বন্ধে সর্তক করেছিলো ৫১৫৬। কিন্তু তারা সর্তকবাণী সম্বন্ধে বির্তক করেছিলো।
৫১৫৬। দেখুন আয়াত [ ১১ : ৭৮ - ৭৯ ]।
৩৭। এমন কি তারা তার [ লূতের ] নিকট থেকে অতিথিদের কেড়ে নিতে চাইল ৫১৫৭। কিন্তু আমি তাদের চক্ষু অন্ধ করে দিলাম। [ তারা শুনতে পেলো ] " এখন আমার ক্রোধ ও ভয় প্রদর্শন আস্বাদন কর।"
৫১৫৭। লূতের সম্প্রদায় সমকামিতার জঘন্য পাপে লিপ্ত ছিলো। লূত বহুদিন থেকে তাদের সুপথে আনার বৃথা চেষ্টাতে লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু হায় সবই ছিলো বৃথা। তাদের শেষ সময় ঘনিয়ে এলো যখন দুজন ফেরেশতা সুপুরুষের ছদ্মবেশে লূতের নিকট আগমন করলেন। নগরীর লোকেরা উম্মাদের ন্যায় লূতের বাড়ী আক্রমণ করলো সুপুরুষ অতিথিদ্বয়কে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য। লূত প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগলেন তাদের বিরত করার জন্য। কিন্তু পাপিষ্ঠদের প্রচন্ড শক্তির কাছে তার ক্ষমতা ছিলো অতি সামান্য। লূতের সম্প্রদায়ের পাপের ভাড়া পূর্ণ হলো। তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার পূর্বে আল্লাহ্ তাদের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নেন। পরদিন প্রভাতে তাদের নগরীদ্বয় পাথর বৃষ্টি দ্বারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। লূত এবং তাঁর সহচরেরা আল্লাহ্র কৃপায় রক্ষা পায়।
৩৮। প্রত্যুষে এক বিরামহীন শাস্তি তাদের গ্রেফতার করলো ;
৩৯। " সুতারাং আমার ক্রোধ ও ভয় প্রদর্শন আস্বাদন কর।"
৪০। বুঝার জন্য ও মনে রাখার জন্য,কুর-আনকে আমি অবশ্যই সহজ করে দিয়েছি। এরপরে এমন কেউ আছ কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে ?
৩৯। " সুতারাং আমার ক্রোধ ও ভয় প্রদর্শন আস্বাদন কর।"
৪০। বুঝার জন্য ও মনে রাখার জন্য,কুর-আনকে আমি অবশ্যই সহজ করে দিয়েছি। এরপরে এমন কেউ আছ কি যে উপদেশ গ্রহণ করবে ?
রুকু -৩
৫১৫৮। যুগে যুগে পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতিকে আল্লাহ্ তাদের পাপের পরিণতিতে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এই সূরাতে এ সব জাতির বর্ণনা আছে, এই বর্ণনার সর্বশেষে আছে মিশরের অধিবাসীদের নাম। এ সব দৃষ্টান্ত থেকে আরব মোশরেকদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে যে, তারা যদি অবাধ্য ও একগুঁয়ে ভাবে পুনঃপুনঃ সত্যকে প্রতিহত করতে থাকে তাদের ভাগ্যেও হবে অনুরূপ জাতিসমূহের ভাগ্যের মত। মিশরবাসীরা সে সময়ে সমসাময়িক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। আল্লাহ্ তাদের অনুগ্রহে ধন্য করেছিলেন। বিভিন্ন মানসিক দক্ষতা বা গুণাবলী যা শুধুমাত্র আল্লাহ্রই করুণা, তাতে তারা ভূষিত ছিলো। ফলে বিজ্ঞান, শিল্প প্রভৃতির প্রভূত উন্নতি সাধন করে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়েছিলো। যদি তারা পৃথিবীর ইতিহাস থেকে এই শিক্ষা গ্রহণ করতো যে আত্মার সর্বোচ্চ গুণাবলী হারিয়ে গেলে জাতির পতন অবশ্যম্ভবী। আল্লাহ্ তাদের মাঝে হযরত মুসাকে প্রেরণ করেন আল্লাহ্র বাণী প্রচারে জন্য। কিন্তু উদ্ধত অহংকারে তারা তা প্রত্যাখান করে। তারা ছিলো অন্যায়কারী ও মিথ্যা উপাস্যের উপাসনাকারী। তারা সত্যকে পরিহাস করতো। ফলে শেষ পর্যন্ত ফেরাউন ও তার সভাষদরা লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়। দেখুন [ ১০ : ৭৫ - ৯০ ] আয়াতের ধারা বিবরণী।
৫১৫৯। ধনে, জনে, শক্তিতে প্রাচীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়া সত্ত্বেও মিশরবাসীরা আল্লাহ্র শাস্তিকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয় নাই। আল্লাহ্ মোশরেক আরবদের জিজ্ঞাসা করছেন, আল্লাহ্র শক্তিকে প্রতিহত করার তাদের কি ক্ষমতা আছে ? তারা কি উহাদের, অর্থাৎ পূর্ববর্তী শক্তিশালী জাতি অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ ? " তোমাদের আল্লাহ্র আইনের অবাধ্যতা করার মত কোনও ক্ষমতা দান করা হয় নাই। কাফেরদের বলা হয়েছে, যদি তোমরা তোমাদের জন্য শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে থাক তবে তা হবে তোমাদের জন্য এক অনির্ভরযোগ্য মূল্যহীন শক্তিমাত্র। এ কথার সত্যতা প্রমাণিত হয় বদরের যুদ্ধে।
৫১৫৯ -ক। এই আয়াতে বদরে মুসলিমদের বিজয়ের ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে।
৫১৬০। যারা অন্যায়কারী ও পাপিষ্ঠ তারা সর্বদা আল্লাহ্র শক্তি অপেক্ষা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞান, জনশক্তি, সমরশক্তি ইত্যাদির উপরে অধিক নির্ভরশীল। কিন্তু তাদের এই নির্ভরশীলতা যুগে যুগে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এমন কি বর্তমান যুগেও হিটলারের ন্যায় বিভিন্ন অত্যাচারী এক নায়কের জীবনেও একই পরিণতি ঘটেছে। উপরের আয়াতগুলির মাধ্যমে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, ঐ সব অত্যাচারী মোশরেকদের জন্য পরলোকে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। পৃথিবীতে অন্যায় অবিচারের মাধ্যমে হয়তো তারা পার্থিব সুযোগ সুবিধা, সম্পদ,ক্ষমতা অধিক লাভ করতে পারে এ কথা সত্য, কিন্তু পরলোকে যখন প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, তখন এ সব পাপিষ্ঠরা তাদের প্রকৃত অবস্থানকে অনুধাবনে সক্ষম হবে। সে অভিজ্ঞতা তাদের জন্য হবে তিক্ত এবং ভয়াবহ।
৫১৬১। দেখুন [ ৫৪ : ২৪ ] আয়াতের বর্ণনা। লক্ষ্য করুন উপরের আয়াতের বর্ণনার পটভূমিতে কিভাবে এই আয়াতে ঘটনার ধারা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হয়ে যায়। পৃথিবীতে তারা আল্লাহ্র প্রেরিত দূতদের মনে করতো বিভ্রান্ত। কিন্তু পরলোকে তারা প্রকৃত সত্যকে অনুধাবনে সক্ষম হবে। সম্পদ, ক্ষমতার পরিপূর্ণতা সত্ত্বেও পৃথিবীতে তারাই ছিলো উদভ্রান্ত ও বিভ্রান্ত।
৫১৬২। "উপুর করে " ইংরেজী অনুবাদ হয়েছে "On their faces" অর্থাৎ যখন কাউকে উপুর করা হয়, তখন তাদের মুখ নীচের দিকে থাকে। "মুখ উপুর করা " বাক্যটি প্রতীক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। 'মুখ' হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিসত্ত্বার প্রতীক। পাপিষ্ঠদের পার্থিব সৃষ্টি সকল ব্যক্তিত্ব, কর্তৃত্ব ধ্বংস করা হবে এবং আগুনের মাঝে অবদমিত করা হবে।
৫১৬৩। আল্লাহ্র সৃষ্টি পরিমিত, সমন্বিত ও সুশৃঙ্খলিত, কখনও তা এলোমেলো বা বিশৃঙ্খল নয়। সৃষ্টির প্রতিটি বস্তু নির্দ্দিষ্ট আইনের অধীনে। তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নির্দ্দিষ্ট মাপ ও আয়তনে। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু, প্রাণী,সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই এক নির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য, নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নির্দ্দিষ্ট স্থানের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বিশাল বিশ্বভূবন সৃষ্টি, এর অস্তিত্ব ও স্থায়ীত্ব সবই আল্লাহ্র সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ মাত্র। মানুষ সৃষ্টিও সেই পরিকল্পনারই অংশ। মানুষের শুধুমাত্র অস্তিত্ব নয়, তার প্রতিটি চিন্তা, কথা, কাজ সব কিছুরই অস্তিত্ব স্রষ্টার কাছে বিদ্যমান এবং এ সকল কিছুরই ফলাফল বিদ্যমান। "নির্ধারিত পরিমাপ" শব্দটি অত্যন্ত অর্থবহ। সৃষ্টির মাঝে কোনও কিছুরই অপচয় নাই। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন স্রষ্টা সেখানে ঠিক ততটুকু দান করেন।
৫১৬৪। পৃথিবীতে মানুষকে কোনও কিছু সৃষ্টি করতে বহু কিছুর মধ্যে দিয়ে পথ অতিক্রম করতে হয় যেমন, সময়ের পরিমাণ, দূরত্ব পরিবেশ, নির্ধারিত পরিমাপ ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ্র সৃষ্টিতে পরিকল্পনা, হুকুম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সবই মূহুর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়ে যায়। আল্লাহ্র কর্মপ্রণালী বাস্তবায়নের দ্রুততাকে এই আয়াতে একটি সুন্দর উপমার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে "চক্ষুর পলকে"। অর্থাৎ মানুষের অনুভবের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম সময়। চোখের পলক' দ্বারা বোঝানো হয় যে মানুষ চক্ষুবদ্ধ করে আবার মূহুর্তে মধ্যে চক্ষুর পাতা উম্মুক্ত করে ফেলে। এ সম্পূর্ণ ঘটনাটি মূহুর্তের মধ্যে চক্ষুর মাংসপেশী দ্বারা সংঘটিত হয়। আল্লাহ্র কাজ তার থেকে দ্রুততর সাথে সংঘটিত হয়। মানুষের কাজের উদাহরণ হলো এরূপ যেনো : একজন লোক একটি বই রচনা করছে। প্রথমতঃ তাঁর মনে বইটির বিষয়বস্তুর একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা ধারণা করতে হবে। তার পরে সেই বিষয়বস্তুকে রূপদান করার জন্য তাকে গবেষণা করতে হবে, বিষয়বস্তুর জ্ঞান সংগ্রহ করতে হবে অন্যান্য মাধ্যম থেকে বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় বই লেখার জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য তাকে যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হবে। এর পরে সে লেখার সামগ্রী, যেমন কাগজ, কলম, কালি ইত্যাদি সংগ্রহ করে লেখাতে মনোনিবেশ করবে যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অর্থাৎ একটি বই লেখা হচ্ছে ধারাবাহিক ঘটনা যা অন্যান্য বহুলোকের অভিজ্ঞতা ও কার্যাবলীর উপরে নির্ভরশীল। শুধু এখানেই শেষ নয়, লেখার পরে থাকে বই, ছাপানো, বাঁধানো, লাইব্রেরীতে সরবরাহ করা ইত্যাদি অসংখ্য কাজ বিভিন্ন মানুষের কর্মদক্ষতা তথা একটি বই প্রকাশের সাথে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু আল্লাহ্ যখন কিছু সৃষ্টি করেন তিনি শুধু বলেন "হও" [Kun ] সাথে সাথে তা হয়ে যায়। আল্লাহ্ সৃষ্টি কৌশল কারও উপরেই নিভর্রশীল নয়। কোনও কিছু সৃষ্টিতে আল্লাহ্র কারও সাহায্যের প্রয়োজন নাই। আল্লাহ্র একত্বের ধারণার এও এক বিশ্বজনীন রূপ।
৫১৬৫। "Ashya'a kum" দল বা মানুষের সমাবেশ। এর দ্বারা দুষ্ট লোকের দলকে সম্বোধন করা হয়েছে যারা বিদ্রোহী ও একগুঁয়ে, যারা মনে করে যে তারা স্বনির্ভর, আল্লাহ্র করুণার উপরে নির্ভরশীল নয়। তাদের সমগ্র শক্তিও আল্লাহ্র ক্ষমতার নিকট অতি তুচ্ছ।
৫১৬৬। প্রাচীন যুগের সুসভ্য ও শক্তিশালী ফেরাউনের লোকদের সাথে মোশরেক কোরেশদের সমান্তরাল ভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। কোরেশদের প্রাচীন যুগের উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, বলা হয়েছে তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না ও অনুতপ্ত হবে না ?
৫১৬৭। আপতঃদৃষ্টিতে মনে হয় পৃথিবীতে অনেক কিছু অতীতের অতলে হারিয়ে যায়। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ্ বলেছেন কিছুই কখনও হারিয়ে যাবে না। এমন কি মানুষের মনের অব্যক্ত ক্ষুদ্র, চিন্তাধারাও আল্লাহ্র কাছে মূহুর্তের মধ্যে রক্ষিত হয়ে চলেছে। "আমলনামা" অর্থাৎ Books of Deeds । প্রতিটি কাজের আছে পরস্পর কার্যকরণ সম্পর্ক। এটা একধরণের কার্য শৃঙ্খলে [ Chain of action ] আবদ্ধ। সকল কিছুই পূর্ববর্তী কর্মের ফল। ভালো কাজের ভালো ফল; মন্দ কাজের মন্দ ফল এর থেকে কারও নিষ্কৃতি নাই। একমাত্র আল্লাহ্ যদি এই শৃঙ্খল ভেঙ্গে নিষ্কৃতি দেন। একমাত্র আল্লাহ্-ই পারেন মানুষকে আমলানামাতে রক্ষিত ফলাফল থেকে নিষ্কৃতি দিতে। মানুষ যদি অনুতাপের মাধ্যমে আল্লাহ্র অনুগ্রহ ভিক্ষা করে, একমাত্র সেই পথই হচ্ছে আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভের একমাত্র পথ।
৫১৬৮। পৃথিবীতে যারা মন্দ কাজের অংশীদার তাদের পরিণতি তারা ভোগ করবে; কিন্তু যারা পূণ্যাত্মা, যারা সৎ কর্ম দ্বারা তাদের জীবনধারাকে পূত পবিত্র করতে পেরেছেন তাদের শেষ পরিণতি চারটি উপমার দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে :
১) প্রথমে বলা হয়েছে স্রোতস্বীনি বিধৌত নয়নাভিরাম উদ্যান।
২) 'যোগ্য আসন' অর্থাৎ যোগ্য বাসস্থান।
৩) আল্লাহ্র সান্নিধ্যে থাকার যোগ্যতা
৪) আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব অনুভূতির মাধ্যমে আত্মিক পরিতৃপ্তির মাঝে।
স্রোতস্বীনি বিধৌত উদ্যানের বর্ণনা পূর্বেও বহুবার করা হয়েছে ; দেখুন [ ৪৩ : ৭০ ] আয়াতের টিকা ৪৫৫৮। উদ্যান হচ্ছে মানসিক প্রশান্তি ও শান্তির প্রতীক যা আমরা শুধুমাত্র আমাদের অনুভবের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে সক্ষম।
৫১৬৯। বেহেশতের সুখ, শান্তি, পার্থিব জীবনে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করা অসম্ভব ব্যাপার। তবুও তা উপলব্ধির জন্য পার্থিব জীবনের অনুভবের মাধ্যমে তাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আরাম আয়েশকে আমরা শরীরের অনুভূতির মাধ্যমে, আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করে থাকি। যোগ্য আসন দ্বারা সেই অনুভূতিকে বোঝানো হয়েছে।
৫১৭০। শারীরিক অনুভূতি ব্যতীত আর একধরনের অনুভূতি মানুষ অনুভব করে তা হচ্ছে মানসিক প্রশান্তি। এই মানসিক প্রশান্তির সর্বোচ্চ রূপ আত্মিক শান্তি যা শুধুমাত্র স্রষ্টার সান্নিধ্যে লাভ করা সম্ভব।"Muqtadir" - যার অনুবাদ করা হয়েছে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। প্রকৃত পক্ষে শব্দটির সঠিক অনুবাদ সম্ভব নয়। শব্দটির অর্থ আরও গভীর ব্যঞ্জনাময়। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব প্রকাশের সর্বোচ্চ অনুভূতি।
৪১। অতীতে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের নিকটও [ আল্লাহ্র নিকট থেকে ] সর্তককারীগণ এসেছিলো ৫১৫৮।
৪২। কিন্তু তারা আমার সমস্ত নিদর্শনকে প্রত্যাখান করেছিলো ; তখন পরাক্রমশালী ও সর্বশক্তিমানরূপে আমি তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম।
৪২। কিন্তু তারা আমার সমস্ত নিদর্শনকে প্রত্যাখান করেছিলো ; তখন পরাক্রমশালী ও সর্বশক্তিমানরূপে আমি তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম।
৫১৫৮। যুগে যুগে পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতিকে আল্লাহ্ তাদের পাপের পরিণতিতে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এই সূরাতে এ সব জাতির বর্ণনা আছে, এই বর্ণনার সর্বশেষে আছে মিশরের অধিবাসীদের নাম। এ সব দৃষ্টান্ত থেকে আরব মোশরেকদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে যে, তারা যদি অবাধ্য ও একগুঁয়ে ভাবে পুনঃপুনঃ সত্যকে প্রতিহত করতে থাকে তাদের ভাগ্যেও হবে অনুরূপ জাতিসমূহের ভাগ্যের মত। মিশরবাসীরা সে সময়ে সমসাময়িক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। আল্লাহ্ তাদের অনুগ্রহে ধন্য করেছিলেন। বিভিন্ন মানসিক দক্ষতা বা গুণাবলী যা শুধুমাত্র আল্লাহ্রই করুণা, তাতে তারা ভূষিত ছিলো। ফলে বিজ্ঞান, শিল্প প্রভৃতির প্রভূত উন্নতি সাধন করে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়েছিলো। যদি তারা পৃথিবীর ইতিহাস থেকে এই শিক্ষা গ্রহণ করতো যে আত্মার সর্বোচ্চ গুণাবলী হারিয়ে গেলে জাতির পতন অবশ্যম্ভবী। আল্লাহ্ তাদের মাঝে হযরত মুসাকে প্রেরণ করেন আল্লাহ্র বাণী প্রচারে জন্য। কিন্তু উদ্ধত অহংকারে তারা তা প্রত্যাখান করে। তারা ছিলো অন্যায়কারী ও মিথ্যা উপাস্যের উপাসনাকারী। তারা সত্যকে পরিহাস করতো। ফলে শেষ পর্যন্ত ফেরাউন ও তার সভাষদরা লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়। দেখুন [ ১০ : ৭৫ - ৯০ ] আয়াতের ধারা বিবরণী।
৪৩। [হে কুরাইশগণ ] তোমাদের মধ্যকার অবিশ্বাসীরা কি তাদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ৫১৫৯ ? না কি তোমাদের অব্যহতির কোন সনদ রয়েছে পবিত্র কিতাব সমূহে ?
৫১৫৯। ধনে, জনে, শক্তিতে প্রাচীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়া সত্ত্বেও মিশরবাসীরা আল্লাহ্র শাস্তিকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয় নাই। আল্লাহ্ মোশরেক আরবদের জিজ্ঞাসা করছেন, আল্লাহ্র শক্তিকে প্রতিহত করার তাদের কি ক্ষমতা আছে ? তারা কি উহাদের, অর্থাৎ পূর্ববর্তী শক্তিশালী জাতি অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ ? " তোমাদের আল্লাহ্র আইনের অবাধ্যতা করার মত কোনও ক্ষমতা দান করা হয় নাই। কাফেরদের বলা হয়েছে, যদি তোমরা তোমাদের জন্য শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে থাক তবে তা হবে তোমাদের জন্য এক অনির্ভরযোগ্য মূল্যহীন শক্তিমাত্র। এ কথার সত্যতা প্রমাণিত হয় বদরের যুদ্ধে।
৪৪। অথবা তারা কি বলে, " আমরা এমন এক সংঘবদ্ধ দল, যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারি।"
৪৫। শীঘ্রই তাদের দল পরাজিত হবে, এবং তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। ৫১৫৯-ক
৪৫। শীঘ্রই তাদের দল পরাজিত হবে, এবং তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। ৫১৫৯-ক
৫১৫৯ -ক। এই আয়াতে বদরে মুসলিমদের বিজয়ের ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে।
৪৬। বরং তাদের জন্য কেয়ামত হচ্ছে [তাদের পূর্ণ প্রতিফলের ] অঙ্গীকার কাল ৫১৬০। এবং কেয়ামত হবে অতি ভয়াবহ ও তিক্ততম।
৫১৬০। যারা অন্যায়কারী ও পাপিষ্ঠ তারা সর্বদা আল্লাহ্র শক্তি অপেক্ষা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞান, জনশক্তি, সমরশক্তি ইত্যাদির উপরে অধিক নির্ভরশীল। কিন্তু তাদের এই নির্ভরশীলতা যুগে যুগে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এমন কি বর্তমান যুগেও হিটলারের ন্যায় বিভিন্ন অত্যাচারী এক নায়কের জীবনেও একই পরিণতি ঘটেছে। উপরের আয়াতগুলির মাধ্যমে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, ঐ সব অত্যাচারী মোশরেকদের জন্য পরলোকে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। পৃথিবীতে অন্যায় অবিচারের মাধ্যমে হয়তো তারা পার্থিব সুযোগ সুবিধা, সম্পদ,ক্ষমতা অধিক লাভ করতে পারে এ কথা সত্য, কিন্তু পরলোকে যখন প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে, তখন এ সব পাপিষ্ঠরা তাদের প্রকৃত অবস্থানকে অনুধাবনে সক্ষম হবে। সে অভিজ্ঞতা তাদের জন্য হবে তিক্ত এবং ভয়াবহ।
৪৭। নিশ্চয়ই পাপীরা মনের দিক থেকে বিভ্রান্ত এবং বিকারগ্রস্থ ৫১৬১।
৫১৬১। দেখুন [ ৫৪ : ২৪ ] আয়াতের বর্ণনা। লক্ষ্য করুন উপরের আয়াতের বর্ণনার পটভূমিতে কিভাবে এই আয়াতে ঘটনার ধারা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হয়ে যায়। পৃথিবীতে তারা আল্লাহ্র প্রেরিত দূতদের মনে করতো বিভ্রান্ত। কিন্তু পরলোকে তারা প্রকৃত সত্যকে অনুধাবনে সক্ষম হবে। সম্পদ, ক্ষমতার পরিপূর্ণতা সত্ত্বেও পৃথিবীতে তারাই ছিলো উদভ্রান্ত ও বিভ্রান্ত।
৪৮। সেদিন তাদের মুখ উপুর করে আগুনের দিকে টেনে নেয়া হবে ৫১৬২, [ তারা শুনবে : ]," জাহান্নামের পরশ আস্বাদন কর।"
৫১৬২। "উপুর করে " ইংরেজী অনুবাদ হয়েছে "On their faces" অর্থাৎ যখন কাউকে উপুর করা হয়, তখন তাদের মুখ নীচের দিকে থাকে। "মুখ উপুর করা " বাক্যটি প্রতীক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। 'মুখ' হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিসত্ত্বার প্রতীক। পাপিষ্ঠদের পার্থিব সৃষ্টি সকল ব্যক্তিত্ব, কর্তৃত্ব ধ্বংস করা হবে এবং আগুনের মাঝে অবদমিত করা হবে।
৪৯। নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক বস্তুকে সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত অনুপাত ও পরিমাপে ৫১৬৩।
৫১৬৩। আল্লাহ্র সৃষ্টি পরিমিত, সমন্বিত ও সুশৃঙ্খলিত, কখনও তা এলোমেলো বা বিশৃঙ্খল নয়। সৃষ্টির প্রতিটি বস্তু নির্দ্দিষ্ট আইনের অধীনে। তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে নির্দ্দিষ্ট মাপ ও আয়তনে। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু, প্রাণী,সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই এক নির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য, নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নির্দ্দিষ্ট স্থানের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বিশাল বিশ্বভূবন সৃষ্টি, এর অস্তিত্ব ও স্থায়ীত্ব সবই আল্লাহ্র সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ মাত্র। মানুষ সৃষ্টিও সেই পরিকল্পনারই অংশ। মানুষের শুধুমাত্র অস্তিত্ব নয়, তার প্রতিটি চিন্তা, কথা, কাজ সব কিছুরই অস্তিত্ব স্রষ্টার কাছে বিদ্যমান এবং এ সকল কিছুরই ফলাফল বিদ্যমান। "নির্ধারিত পরিমাপ" শব্দটি অত্যন্ত অর্থবহ। সৃষ্টির মাঝে কোনও কিছুরই অপচয় নাই। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন স্রষ্টা সেখানে ঠিক ততটুকু দান করেন।
৫০। এবং আমার আদেশ তো একটি মাত্র কথায় নিষ্পন্ন হয়, চোখের পলকে ৫১৬৪।
৫১৬৪। পৃথিবীতে মানুষকে কোনও কিছু সৃষ্টি করতে বহু কিছুর মধ্যে দিয়ে পথ অতিক্রম করতে হয় যেমন, সময়ের পরিমাণ, দূরত্ব পরিবেশ, নির্ধারিত পরিমাপ ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহ্র সৃষ্টিতে পরিকল্পনা, হুকুম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সবই মূহুর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়ে যায়। আল্লাহ্র কর্মপ্রণালী বাস্তবায়নের দ্রুততাকে এই আয়াতে একটি সুন্দর উপমার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে "চক্ষুর পলকে"। অর্থাৎ মানুষের অনুভবের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম সময়। চোখের পলক' দ্বারা বোঝানো হয় যে মানুষ চক্ষুবদ্ধ করে আবার মূহুর্তে মধ্যে চক্ষুর পাতা উম্মুক্ত করে ফেলে। এ সম্পূর্ণ ঘটনাটি মূহুর্তের মধ্যে চক্ষুর মাংসপেশী দ্বারা সংঘটিত হয়। আল্লাহ্র কাজ তার থেকে দ্রুততর সাথে সংঘটিত হয়। মানুষের কাজের উদাহরণ হলো এরূপ যেনো : একজন লোক একটি বই রচনা করছে। প্রথমতঃ তাঁর মনে বইটির বিষয়বস্তুর একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা ধারণা করতে হবে। তার পরে সেই বিষয়বস্তুকে রূপদান করার জন্য তাকে গবেষণা করতে হবে, বিষয়বস্তুর জ্ঞান সংগ্রহ করতে হবে অন্যান্য মাধ্যম থেকে বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় বই লেখার জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য তাকে যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হবে। এর পরে সে লেখার সামগ্রী, যেমন কাগজ, কলম, কালি ইত্যাদি সংগ্রহ করে লেখাতে মনোনিবেশ করবে যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অর্থাৎ একটি বই লেখা হচ্ছে ধারাবাহিক ঘটনা যা অন্যান্য বহুলোকের অভিজ্ঞতা ও কার্যাবলীর উপরে নির্ভরশীল। শুধু এখানেই শেষ নয়, লেখার পরে থাকে বই, ছাপানো, বাঁধানো, লাইব্রেরীতে সরবরাহ করা ইত্যাদি অসংখ্য কাজ বিভিন্ন মানুষের কর্মদক্ষতা তথা একটি বই প্রকাশের সাথে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু আল্লাহ্ যখন কিছু সৃষ্টি করেন তিনি শুধু বলেন "হও" [Kun ] সাথে সাথে তা হয়ে যায়। আল্লাহ্ সৃষ্টি কৌশল কারও উপরেই নিভর্রশীল নয়। কোনও কিছু সৃষ্টিতে আল্লাহ্র কারও সাহায্যের প্রয়োজন নাই। আল্লাহ্র একত্বের ধারণার এও এক বিশ্বজনীন রূপ।
৫১। এবং অতীতে আমি তোমাদের মত বহু দলকে বিনাশ করেছি ৫১৬৫। তবে এমন কেউ আছ কি যে আমার উপদেশ গ্রহণ করবে ৫১৬৬?
৫১৬৫। "Ashya'a kum" দল বা মানুষের সমাবেশ। এর দ্বারা দুষ্ট লোকের দলকে সম্বোধন করা হয়েছে যারা বিদ্রোহী ও একগুঁয়ে, যারা মনে করে যে তারা স্বনির্ভর, আল্লাহ্র করুণার উপরে নির্ভরশীল নয়। তাদের সমগ্র শক্তিও আল্লাহ্র ক্ষমতার নিকট অতি তুচ্ছ।
৫১৬৬। প্রাচীন যুগের সুসভ্য ও শক্তিশালী ফেরাউনের লোকদের সাথে মোশরেক কোরেশদের সমান্তরাল ভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। কোরেশদের প্রাচীন যুগের উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, বলা হয়েছে তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না ও অনুতপ্ত হবে না ?
৫২। তারা যা করে, তা লিখিত আছে [ তাদের ] নথিতে [ আমলনামায় ] ৫১৬৭
৫৩। প্রতিটি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সমস্ত কিছুই আছে নথিভুক্ত।
৫৩। প্রতিটি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সমস্ত কিছুই আছে নথিভুক্ত।
৫১৬৭। আপতঃদৃষ্টিতে মনে হয় পৃথিবীতে অনেক কিছু অতীতের অতলে হারিয়ে যায়। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ্ বলেছেন কিছুই কখনও হারিয়ে যাবে না। এমন কি মানুষের মনের অব্যক্ত ক্ষুদ্র, চিন্তাধারাও আল্লাহ্র কাছে মূহুর্তের মধ্যে রক্ষিত হয়ে চলেছে। "আমলনামা" অর্থাৎ Books of Deeds । প্রতিটি কাজের আছে পরস্পর কার্যকরণ সম্পর্ক। এটা একধরণের কার্য শৃঙ্খলে [ Chain of action ] আবদ্ধ। সকল কিছুই পূর্ববর্তী কর্মের ফল। ভালো কাজের ভালো ফল; মন্দ কাজের মন্দ ফল এর থেকে কারও নিষ্কৃতি নাই। একমাত্র আল্লাহ্ যদি এই শৃঙ্খল ভেঙ্গে নিষ্কৃতি দেন। একমাত্র আল্লাহ্-ই পারেন মানুষকে আমলানামাতে রক্ষিত ফলাফল থেকে নিষ্কৃতি দিতে। মানুষ যদি অনুতাপের মাধ্যমে আল্লাহ্র অনুগ্রহ ভিক্ষা করে, একমাত্র সেই পথই হচ্ছে আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভের একমাত্র পথ।
৫৪। নিশ্চয়ই পূণ্যাত্মাগণ থাকবে [ বেহেশতের ] বাগান ও নহরসমূহের মধ্যে ৫১৬৮।
৫৫। যোগ্য আসনে, সার্বভৌম, সর্বশক্তিমান [আল্লাহ্র ] উপস্থিতিতে ৫১৬৯, ৫১৭০।
৫৫। যোগ্য আসনে, সার্বভৌম, সর্বশক্তিমান [আল্লাহ্র ] উপস্থিতিতে ৫১৬৯, ৫১৭০।
৫১৬৮। পৃথিবীতে যারা মন্দ কাজের অংশীদার তাদের পরিণতি তারা ভোগ করবে; কিন্তু যারা পূণ্যাত্মা, যারা সৎ কর্ম দ্বারা তাদের জীবনধারাকে পূত পবিত্র করতে পেরেছেন তাদের শেষ পরিণতি চারটি উপমার দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে :
১) প্রথমে বলা হয়েছে স্রোতস্বীনি বিধৌত নয়নাভিরাম উদ্যান।
২) 'যোগ্য আসন' অর্থাৎ যোগ্য বাসস্থান।
৩) আল্লাহ্র সান্নিধ্যে থাকার যোগ্যতা
৪) আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব অনুভূতির মাধ্যমে আত্মিক পরিতৃপ্তির মাঝে।
স্রোতস্বীনি বিধৌত উদ্যানের বর্ণনা পূর্বেও বহুবার করা হয়েছে ; দেখুন [ ৪৩ : ৭০ ] আয়াতের টিকা ৪৫৫৮। উদ্যান হচ্ছে মানসিক প্রশান্তি ও শান্তির প্রতীক যা আমরা শুধুমাত্র আমাদের অনুভবের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে সক্ষম।
৫১৬৯। বেহেশতের সুখ, শান্তি, পার্থিব জীবনে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করা অসম্ভব ব্যাপার। তবুও তা উপলব্ধির জন্য পার্থিব জীবনের অনুভবের মাধ্যমে তাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আরাম আয়েশকে আমরা শরীরের অনুভূতির মাধ্যমে, আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করে থাকি। যোগ্য আসন দ্বারা সেই অনুভূতিকে বোঝানো হয়েছে।
৫১৭০। শারীরিক অনুভূতি ব্যতীত আর একধরনের অনুভূতি মানুষ অনুভব করে তা হচ্ছে মানসিক প্রশান্তি। এই মানসিক প্রশান্তির সর্বোচ্চ রূপ আত্মিক শান্তি যা শুধুমাত্র স্রষ্টার সান্নিধ্যে লাভ করা সম্ভব।"Muqtadir" - যার অনুবাদ করা হয়েছে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। প্রকৃত পক্ষে শব্দটির সঠিক অনুবাদ সম্ভব নয়। শব্দটির অর্থ আরও গভীর ব্যঞ্জনাময়। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব প্রকাশের সর্বোচ্চ অনুভূতি।