+
-
R
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : অধিকাংশ তফসীরকারের মতে এই সূরাটি মক্কাতে ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম দিকে অবতীর্ণ হয়। অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন যে এর অংশ বিশেষ মদিনাতে অবতীর্ণ হয়। এ কথা নিসংশয়ে বলা চলে যে সূরার অধিকাংশ মক্কাতে অবতীর্ণ হয়।
সূরাটি অত্যন্ত কাব্যিক ও আল্লাহ্র মহিমায় পরিপূর্ণ। বিশেষ ভাবে " তোমরা তোমাদিগের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ? " বাক্যটি আল্লাহ্র মহিমা বর্ণনা শেষে এই সূরাতে পুনঃপুণঃ আবৃত্তি করা হয়েছে। এই সূরার ৭৮ টি আয়াতের মাঝে ৩১ বার এই লাইনটি আবৃত্তি করা হয়েছে।
সাতটি সূরার শ্রেণীটি যা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ অনুগ্রহ এবং পরলোক সম্পর্কে আলোচনা করে অবতীর্ণ হয়, সেই শ্রেণীর মাঝে এই সূরাটি ষষ্ঠ। দেখুন ৫০ নং সূরার ভূমিকা।
এই সূরাটিতে সঙ্গীতের ধূয়ার মত একটি লাইনের পুণঃ আবৃত্তির মাধ্যমে সূরাটির বিশেষ বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি আয়াতের বাচনভঙ্গীতে বিষয়বস্তুকে দ্বৈতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এ ভাবে যুক্তির উত্থাপন করা হয়েছে যে, যদিও সৃষ্টির সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু এসবের সৃষ্টি কর্তা একজনই। সৃষ্টির সকল কিছুই তাঁরই অনুগ্রহে ধন্য এবং তাঁর কাছেই সব কিছুর প্রত্যার্পন।
সার সংক্ষেপ : পরম করুণাময় আল্লাহ্ মানুষের জন্য প্রত্যাদেশ প্রেরণ করে মানুষকে অশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন। তিনি প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, ভারসাম্য পূর্ণ করেছেন। সকল সৃষ্ট বস্তু তাঁর অনুগ্রহ লাভে ধন্য। কিন্তু একদিন সৃষ্টির সব কিছু শেষ হয়ে যাবে, শুধু রয়ে যাবে আল্লাহ্র অস্তিত্ব। [ ৫৫ : ১ - ৩৪ ]।
সকল মন্দ ও পাপী তাদের পরিণতি লাভ করবে ; ঠিক সেরূপ সকল ভালো ও পূণ্যাত্মা তাদের পুরষ্কার। আল্লাহ্ যিনি পবিত্র, সম্মানিত, অনুগ্রহের মালিক, মহিমান্বিত। [ ৫৫ : ৩৫ - ৭৮ ]।
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৫১৭২। পরম করুণাময় আল্লাহ্র নিকট থেকে প্রত্যাদেশ বা কোরাণ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে। কোরাণ আল্লাহ্র অসীম অনুগ্রহ ও ক্ষমার স্বাক্ষর। আল্লাহ্ সকল স্বর্গীয় জ্যোতির উৎস এবং তার জ্যোতি নিখিল বিশ্বভূবন ব্যপী বিকির্ণ হয়।
৫১৭৩। 'Bayan' বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন ; মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা; বিভিন্ন বস্তুর মাঝে সম্পর্ক পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারার ক্ষমতা এবং তা ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা অর্থাৎ কার্যকরণ ক্ষমতা নিরূপণ তা প্রকাশ করার ক্ষমতা। আল্লাহ্ মানুষকে এই বিশেষ ক্ষমতা দান করেছেন যা সৃষ্টির অন্য প্রাণীকে দান করা হয় নাই। মানুষকে আল্লাহ্ দান করেছেন প্রত্যাদেশ যা আত্মাকে আলোকিত করতে সাহায্য করে, এ ব্যতীত প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্র নিদর্শনের মাধ্যমে এবং নবী রসুলদের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ্ আধ্যাত্মিক জগতে উন্নীত করতে সাহায্য করেন।
৫১৭৪। জোতির্বিজ্ঞান বলে মহাবিশ্ব নিভুর্লভাবে গণিত শাস্ত্রের সুক্ষ হিসাব মেনে চলে, যা আল্লাহ্র মহাজ্ঞানের স্বাক্ষর। এই আয়াতে বলা হয়েছে চন্দ্রের যেমন গতিপথ আছে, সূর্যেরও ঠিক সেরূপ গতিপথ বিদ্যমান যা সে অতিক্রম করে চলেছে। এতদিন পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিলো যে সূর্য স্থির। সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে সূর্য এক নির্দ্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করছে যার বার্তা চৌদ্দশ বছর পূর্বে কোরাণ দান করেছে। আবার পৃথিবীর নির্দ্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তনের ফলে আমরা সূর্যকে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে দেখে থাকি। যার ফলে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন ঘটে, জোয়ার ভাটা হয়, আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে ইত্যাদি যার উপরে পৃথিবীর জীব ও উদ্ভিদ জগত নির্ভরশীল।
৫১৭৫। 'Nagim' অর্থাৎ নক্ষত্রপুঞ্জ বা তরুলতা।এখানে উভয় অর্থই প্রযোজ্য হতে পারে।
৫১৭৬। প্রকৃতির মাঝে আল্লাহকে অনুভব করার কথা বারে বারে বলা হয়েছে। কারণ বিশ্ব প্রকৃতি আল্লাহ্র বিধান বা আইন বা হুকুম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। আল্লাহ্র নিদর্শন বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে অকৃপণ ভাবে ছড়িয়ে আছে। যে তা পাঠ করতে পারে সেই ধন্য। দেখূন সূরা [ ২২ : ১৮ ] ও টিকা ২৭৯০ ; সূরা [ ১৩ : ১৫ ] এবং সূরা [ ১৬ : ৪৮ - ৪৯ ]।
৫১৭৭। এই আয়াতের ন্যায়ের মানদন্ডকে পরবর্তী দুই আয়াতে সমন্বিত করে দেয়া হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে মানুষ সকলের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে ন্যায়ের সাথে চলবে। দ্বিতীয়তঃ বলা হয়েছে তার সর্বকাজে ন্যায্য মানদন্ড প্রতিষ্ঠিত করবে। এ ব্যাপারে কখনও সীমালংঘন করবে না অর্থাৎ ন্যায়ের মানদন্ড হচ্ছে স্বর্গীয় গুণাবলীর মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ। এই মানদন্ডকে আক্ষরিকভাবে তিনটি প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। পূর্বের আয়াতগুলির মাধ্যমে :
১) ন্যায়ের মানদন্ড এক স্বর্গীয় গুণ ;
২) সমগ্র নভোমন্ডল গাণিতিক মানদন্ডের উপরে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে।
৩) আকাশকে সমুন্নত করে নক্ষত্র পুঞ্জের মানদন্ড রক্ষা করা হয়েছে।
৫১৭৮। "ন্যায়ের ভিত্তিতে ওজন কর " বাক্যটি আক্ষরিক ও আলংকারিক উভয় অর্থ বহন করে। মানুষ তার দৈনন্দিক প্রতিটি কাজে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হবে যেমন : ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে উপযুক্ত প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া। সামাজিক জীবনে আমাদের প্রতিনিয়ত মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। এখানে আমাদের মানুষের সাথে আচরণ প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বোচ্চ সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে। এই সততা যে শুধুমাত্র অন্য লোকের প্রতি প্রদর্শন করতে হবে তাই-ই নয় এই সততা ব্যক্তির নিজের জীবনেও প্রতিফলিত করতে হবে। যেমন চিন্তার সততা, বক্তব্যের সততা, কার্যের নিয়তের সততা, এবং আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যের সততা। মানুষ মনের গহন গভীরের চিন্তাধারাকে অনুধাবন করতে না পারলেও আল্লাহ্র নিকট তা দিবালোকের ন্যায় সুষ্পষ্ট। মানুষ মনে করে যা প্রকাশ্য নয় তা পাপ নয়, সুতারাং সুযোগ পেলেই ছোটখাট প্রতারণা বা মিথ্যার আশ্রয় নিতে দ্বিধা বোধ করে না, অবশ্য যদি তাতে তার জীবিকার বা কোন পার্থিব কাজ সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ্ বলেছেন ন্যায় নীতি হচ্ছে সকল ঐশ্বরিক গুণাবলীর কেন্দ্রবিন্দু।
সততা ও ন্যায়নীতি একটি সমাজের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে ঠিক যেমন গাণিতিক সুত্র নভোমন্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে। যে সমাজে সততা ও ন্যায়নীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, সে সমাজের ধ্বংস অনিবার্য; ঠিক যেরূপ হবে নভোমন্ডলের গাণিতিক ভারসাম্য নষ্ট হলে। এরই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলকে বিচার করতে হবে।
৫১৭৯। আল্লাহ্র অনুগ্রহ গুণে শেষ করা অসম্ভব। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে আল্লাহ্র অনুগ্রহের সামান্য ইঙ্গিত করা হয়েছে মাত্র। পৃথিবীতে জীবন ও পরিবেশ পরস্পর ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। উদ্ভিদ জগত বিভিন্ন ধরণের ফল এবং শষ্য দানা উৎপন্ন করে যার দ্বারা মানুষ ও প্রাণী জগত জীবন ধারণ করে। ফসল কেটে ঘরে তোলার পরে শষ্য দানা মানুষের খাদ্য ও খড় বিচালী পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। উদ্ভিদ জগত যে শুধুমাত্র খাদ্য সরবরাহ করে তাই-ই নয়, সুগন্ধ গুল্ম খাদ্য দ্রব্যকে সুস্বাদু করার জন্য মশলা উৎপন্ন করে থাকে। এসব হলো দেহের খাদ্য, মনের খাদ্যের জন্য উদ্ভিদ জগত অপূর্ব সুন্দর ফুলের জন্ম দেয় যার শোভা মানুষকে মুগ্ধ করে। এ সবই আল্লাহ্র অনুগ্রহ মাত্র।
৫১৯৪। দেখুন আয়াত [ ৬ : ১৩০ ] যেখানে জ্বিন ও মানুষ উভয়কে একত্রে সম্বোধন করা হয়েছে। সূরা [ ৬: ১৩০- ১৩৪ ] সমস্তটা এই আয়াতের বিশদ বিবরণ হিসেবে পড়া উচিত। যদি কেউ মনে করে যে, তাঁর গোপন পাপ আল্লাহ্র নিকট প্রকাশ পাবে না, বা তাঁরা তাদের পাপের জন্য কোনও মন্দ পরিণতি লাভ করে নাই ; অথবা কারও ভালো কাজ তার যোগ্য পুরষ্কার লাভ করে নাই, - তবে এ সব দ্বারা সে যেনো প্রতারিত না হয়। অবশ্য মানুষের প্রতিটি চিন্তা, কথা, কাজ, কাজের নিয়ত, সবই আল্লাহ্র নিকট রক্ষিত হয়ে চলেছে। এবং অবশ্যই মানুষের কর্মের হিসাব দাখিল করতে হবে। মানুষকে আল্লাহ যে সীমানার মাঝে রেখেছেন, মানুষ তা অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখে না, আল্লাহ্র হুকুম ব্যতীত। বিজ্ঞানের নিত্য নূতন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ এই সীমার বাঁধনকে বিস্তৃত করে চলেছে। সুতারাং আল্লাহ যে সুযোগ দান করেছেন,তার জন্য সকলেরই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
৫১৯৫। এই সূরাতে কত সুন্দর ধারাবাহিকভাবে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের চর্তুদ্দিকে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ ছড়ানো আছে। মানুষের সৃষ্টিতে, তার বুদ্ধিমত্তায়, প্রকৃতির মাঝে, প্রত্যাদেশের মাঝে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল বিদ্যমান। দিনের উষ্ণতা সূর্যের দীপ্তির সাথে জড়িত, পানির চক্রের মাধ্যমে রক্ষা হয় পৃথিবীর জীবন ও বিশোধনের কাজ; মানুষের বুদ্ধিমত্তা বা বিজ্ঞানের দ্বারা প্রকৃতিকে জয় করা এ সবই হচ্ছে আল্লাহ্র অসীম অনুগ্রহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি - আল্লাহ্র সাহায্য ও প্রতিপালনের মাধ্যম বিশেষ। মানুষ যদি প্রশান্ত মনে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল সম্বন্ধে চিন্তা করে ; তবে অবশ্যই সে অনুধাবনে সক্ষম হবে যে, কি গভীর মমতায় বিশ্বস্রষ্টার কল্যাণময় হস্ত আমাদের ঘিরে আছে। মানুষ তবেই প্রকৃত সত্যকে অনুভবে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতের জবাবদিহি সম্পর্কে সাবধান হবে। সূরার পরবর্তী অংশে এই সাবধানবাণীই বারে বারে উচ্চারণ করা হয়েছে।
এতক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ সমূহ। এখান থেকে শুরু হচ্ছে শেষ বিচারের দিনে পাপীদের শাস্তির বিবরণ।
৫১৯৬। উপরের টিকা ৫১৯৩ তে যে দুই ভূবনের কথা বলা হয়েছে, তাদের কথা এখানে বলা হয়েছে।
৫১৯৭। বিচারের শাস্তির ভয়াবহতা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে।
৫১৯৮। এই আয়াতে এবং নিম্নলিখিত আয়াত সমূহে [ আয়াত নং ৪০, ৪২ এবং ৪৫ ] এই লাইনটি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে বিদ্রূপাত্মক ভাব প্রকাশ করে। ভাবটি এরূপ যে, "পৃথিবীতে আল্লাহ্র সাবধান বাণী,প্রত্যাদেশ তোমাদের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিলো, যেনো তোমরা অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের দ্বারা আল্লাহ্র ক্ষমা লাভে ধন্য হতে পার। কিন্তু তোমরা তা বারে বারে প্রত্যাখান করেছ। এখন তোমরা কি ফল ভোগ করবে ? তোমাদের যা বলা হয়েছিলো তা কি সত্য নয় ? " আল্লাহ্র আইন বা বিধানকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ্র করুণা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো।
৫১৯৯। এই আয়াতটির ইংরেজী ও বাংলা অনুবাদে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজী অনুবাদ হচ্ছে,"......... and it becomes red like Ointment " অধিকাংশ বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে "উহা রক্ত রংগে রঞ্জিত চর্মের রূপ ধারণ করিবে।" মোট কথা লাল রং হবে অগ্নিশিখার কারণে এবং উত্তপ্ত হওয়ার কারণে। এই চেনা জানা পৃথিবী মোমের মত গলে উত্তপ্ত হয়ে লাল রং ধারণ করবে।
৫২০০। এই আয়াতটির অর্থ এই নয় যে, শেষ বিচারের দিনে মানুষ বা জ্বিনকে তাদের পাপের কৈফিয়ত দিতে হবে না। অবশ্যই প্রত্যেককে তাদের কাজের হিসাব দাখিল করতে হবে [ ১৫ : ৯২ ]। প্রকৃত পক্ষে এই আয়াতটির অর্থ হচ্ছে যে সেদিন ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব উপলব্ধি করতে বাধ্য করা হবে। তাদের হাত, পা, জিহ্বা ইত্যাদি শরীরের বিভিন্ন অংগ প্রত্যঙ্গ তাদের পাপ কাজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দান করবে [ ২৪ : ২৪]। প্রতিটি ব্যক্তিই তার কর্মের দ্বারা সেদিন চিহ্নিত হয়ে প্রকাশ্য হয়ে যাবে [ ৭: ৪৮]। চিহ্নিত হওয়ার পরে প্রত্যেকের অবস্থান ও পদমর্যদা নির্ধারিত হয়ে যাবে এবং সকলের নিকট তা প্রকাশ্য হবে। অবশ্য বিচারকের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত আল্লাহ্র নিকট বিচারের পূর্বেও কিছু গোপন ছিলো না। যদিও আল্লাহ্ আমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাপও পূর্বেই অবগত, তবুও তিনি অভিযুক্তকে তার অপরাধের খুঁটিনাটি ও পরিমাণ অবগত করাবেন, অভিযুক্তদের সম্মুখে আমলনামা উপস্থাপন করা হবে [ ৬৯ : ১৯, ২৫ ] ও [ ১৮: ৪৯ ] আয়াত দেখুন। এবং অপরাধীকে ওকালতি করার সুযোগ দান করা হবে [ ৭ : ৫৩ ]। কিন্তু সেদিন পাপীরা থাকবে এক বিভ্রান্তিকর ও হতবুদ্ধি অবস্থায় [ ২৮ : ৬৫ ]। ওকালতি করার ক্ষমতা তাদের থাকবে না।
৫২০১। "পাপীদের তাদের চিহ্নদ্বারা সনাক্ত করা যাবে " - দেখুন উপরের টিকা।
৫২০২। পাপীদের সম্মুখে যখন জাহান্নামের আগুন প্রকাশ্য হবে,তখন তাদের মনের সকল দ্বিধা দূর হয়ে যাবে। তা হবে তাদের নিকট অতি বাস্তব।
৫২০৩। সেখানে তাদের এক মূহুর্তের জন্য বিশ্রাম থাকবে না। আগুন তাদের পোড়াবে কিন্তু নিশ্চিহ্ন করে দেবে না। অর্থাৎ তারা আগুনে পোড়ার যন্ত্রণা লাভ করবে কিন্তু ধ্বংস বা শেষ হয়ে যাবে না। তাদের পানীয় হবে শুধুমাত্র ফুটন্ত পানি।
রুকু -৩
৫২০৪। পাপীদের শাস্তির বর্ণনা কয়েকটি বাক্যের দ্বারা শেষ করে এবারে বর্ণনা করা হচ্ছে বেহেশতবাসীদের অবস্থান।
৫২০৫। এই আয়াতে বেহেশতের দুইটি উদ্যানের উল্লেখ আছে আর দুটির উল্লেখ আছে [ ৫৫ : ৬২ - ৭৬ ] আয়াতে। এই বাগানের বর্ণনার ব্যাপারে মতভেদ আছে, তবে সর্বোৎকৃষ্ট মতামত হচ্ছে যে [ ৫৫ : ৪৬ - ৬১ ] আয়াতে যে উদ্যানদ্বয়ের উল্লেখ আছে তা হচ্ছে আল্লাহ্র সবচেয়ে নিকটবর্তী ব্যক্তিদের [ Muqarrabun ] জন্য নির্ধারিত। এবং [ ৫৫ : ৬২-৭৬ ] আয়াতে যে উদ্যানদ্বয়ের উল্লেখ আছে তা হচ্ছে তাদের জন্য যাদের আমলনামা তাদের ডান হস্তে প্রদান করা হবে। প্রশ্ন হলো প্রতি ক্ষেত্রে দুটি উদ্যানের উল্লেখ করা হলো কেন ? কারণ দ্বৈততার উল্লেখের মাধ্যমে বিভিন্নতা বা বৈচিত্র আনা হয়েছে। এই সূরার বর্ণনাতে সর্বত্র দ্বৈততার প্রকাশ করা হয়েছে জোড়ায় জোড়ায়।
৫২০৬। 'দুইটি প্রস্রবন' কারণ উদ্যান দুইটি।
৫২০৭। ফলের দ্বৈততাও বাগানের দ্বৈততার কারণে প্রকাশ করা হয়েছে।
৫২০৮। এই পৃথিবীর ক্লান্তি ও শ্রান্তি সেখানে তাদের স্পর্শ করবে না। দেখুন [৩৫ : ৩৫] আয়াত।
সূরা রাহ্মান
সূরা রাহ্মান বা [আল্লাহ্ ] পরম করুণাময় - ৫৫
৭৮ আয়াত, ৩ রুকু, মাদানী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : অধিকাংশ তফসীরকারের মতে এই সূরাটি মক্কাতে ইসলামের আবির্ভাবের প্রথম দিকে অবতীর্ণ হয়। অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন যে এর অংশ বিশেষ মদিনাতে অবতীর্ণ হয়। এ কথা নিসংশয়ে বলা চলে যে সূরার অধিকাংশ মক্কাতে অবতীর্ণ হয়।
সূরাটি অত্যন্ত কাব্যিক ও আল্লাহ্র মহিমায় পরিপূর্ণ। বিশেষ ভাবে " তোমরা তোমাদিগের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ? " বাক্যটি আল্লাহ্র মহিমা বর্ণনা শেষে এই সূরাতে পুনঃপুণঃ আবৃত্তি করা হয়েছে। এই সূরার ৭৮ টি আয়াতের মাঝে ৩১ বার এই লাইনটি আবৃত্তি করা হয়েছে।
সাতটি সূরার শ্রেণীটি যা আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ অনুগ্রহ এবং পরলোক সম্পর্কে আলোচনা করে অবতীর্ণ হয়, সেই শ্রেণীর মাঝে এই সূরাটি ষষ্ঠ। দেখুন ৫০ নং সূরার ভূমিকা।
এই সূরাটিতে সঙ্গীতের ধূয়ার মত একটি লাইনের পুণঃ আবৃত্তির মাধ্যমে সূরাটির বিশেষ বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি আয়াতের বাচনভঙ্গীতে বিষয়বস্তুকে দ্বৈতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এ ভাবে যুক্তির উত্থাপন করা হয়েছে যে, যদিও সৃষ্টির সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু এসবের সৃষ্টি কর্তা একজনই। সৃষ্টির সকল কিছুই তাঁরই অনুগ্রহে ধন্য এবং তাঁর কাছেই সব কিছুর প্রত্যার্পন।
সার সংক্ষেপ : পরম করুণাময় আল্লাহ্ মানুষের জন্য প্রত্যাদেশ প্রেরণ করে মানুষকে অশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন। তিনি প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, ভারসাম্য পূর্ণ করেছেন। সকল সৃষ্ট বস্তু তাঁর অনুগ্রহ লাভে ধন্য। কিন্তু একদিন সৃষ্টির সব কিছু শেষ হয়ে যাবে, শুধু রয়ে যাবে আল্লাহ্র অস্তিত্ব। [ ৫৫ : ১ - ৩৪ ]।
সকল মন্দ ও পাপী তাদের পরিণতি লাভ করবে ; ঠিক সেরূপ সকল ভালো ও পূণ্যাত্মা তাদের পুরষ্কার। আল্লাহ্ যিনি পবিত্র, সম্মানিত, অনুগ্রহের মালিক, মহিমান্বিত। [ ৫৫ : ৩৫ - ৭৮ ]।
সূরা রাহ্মান বা [আল্লাহ্ ] পরম করুণাময় - ৫৫
৭৮ আয়াত, ৩ রুকু, মাদানী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
০১। [আল্লাহ্ ] পরম করুণাময় !
০২। তিনিই কুর-আন শিক্ষা দিয়েছেন ৫১৭২।
০২। তিনিই কুর-আন শিক্ষা দিয়েছেন ৫১৭২।
৫১৭২। পরম করুণাময় আল্লাহ্র নিকট থেকে প্রত্যাদেশ বা কোরাণ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে। কোরাণ আল্লাহ্র অসীম অনুগ্রহ ও ক্ষমার স্বাক্ষর। আল্লাহ্ সকল স্বর্গীয় জ্যোতির উৎস এবং তার জ্যোতি নিখিল বিশ্বভূবন ব্যপী বিকির্ণ হয়।
০৩। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন
০৪। তিনি ভাষা শিখিয়েছেন ৫১৭৩ [ এবং বুদ্ধিমত্তা তারই দান ]।
০৪। তিনি ভাষা শিখিয়েছেন ৫১৭৩ [ এবং বুদ্ধিমত্তা তারই দান ]।
৫১৭৩। 'Bayan' বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন ; মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা; বিভিন্ন বস্তুর মাঝে সম্পর্ক পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারার ক্ষমতা এবং তা ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা অর্থাৎ কার্যকরণ ক্ষমতা নিরূপণ তা প্রকাশ করার ক্ষমতা। আল্লাহ্ মানুষকে এই বিশেষ ক্ষমতা দান করেছেন যা সৃষ্টির অন্য প্রাণীকে দান করা হয় নাই। মানুষকে আল্লাহ্ দান করেছেন প্রত্যাদেশ যা আত্মাকে আলোকিত করতে সাহায্য করে, এ ব্যতীত প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্র নিদর্শনের মাধ্যমে এবং নবী রসুলদের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ্ আধ্যাত্মিক জগতে উন্নীত করতে সাহায্য করেন।
০৫। সূর্য ও চন্দ্র অনুসরণ করে [ নির্ধারিত ] কক্ষপথ ৫১৭৪ ;
৫১৭৪। জোতির্বিজ্ঞান বলে মহাবিশ্ব নিভুর্লভাবে গণিত শাস্ত্রের সুক্ষ হিসাব মেনে চলে, যা আল্লাহ্র মহাজ্ঞানের স্বাক্ষর। এই আয়াতে বলা হয়েছে চন্দ্রের যেমন গতিপথ আছে, সূর্যেরও ঠিক সেরূপ গতিপথ বিদ্যমান যা সে অতিক্রম করে চলেছে। এতদিন পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিলো যে সূর্য স্থির। সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে সূর্য এক নির্দ্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করছে যার বার্তা চৌদ্দশ বছর পূর্বে কোরাণ দান করেছে। আবার পৃথিবীর নির্দ্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তনের ফলে আমরা সূর্যকে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে দেখে থাকি। যার ফলে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন ঘটে, জোয়ার ভাটা হয়, আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে ইত্যাদি যার উপরে পৃথিবীর জীব ও উদ্ভিদ জগত নির্ভরশীল।
০৬। তৃণ-গুল্ম ৫১৭৫ ও বৃক্ষাদি তাঁরই সিজ্দারত ৫১৭৬ ;
৫১৭৫। 'Nagim' অর্থাৎ নক্ষত্রপুঞ্জ বা তরুলতা।এখানে উভয় অর্থই প্রযোজ্য হতে পারে।
৫১৭৬। প্রকৃতির মাঝে আল্লাহকে অনুভব করার কথা বারে বারে বলা হয়েছে। কারণ বিশ্ব প্রকৃতি আল্লাহ্র বিধান বা আইন বা হুকুম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। আল্লাহ্র নিদর্শন বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে অকৃপণ ভাবে ছড়িয়ে আছে। যে তা পাঠ করতে পারে সেই ধন্য। দেখূন সূরা [ ২২ : ১৮ ] ও টিকা ২৭৯০ ; সূরা [ ১৩ : ১৫ ] এবং সূরা [ ১৬ : ৪৮ - ৪৯ ]।
০৭। এবং তিনি নভোমন্ডলকে করেছেন সমুন্নত এবং তিনি স্থাপন করেছেন [ ন্যায় -অন্যায়ের ] মানদণ্ড ৫১৭৭
৫১৭৭। এই আয়াতের ন্যায়ের মানদন্ডকে পরবর্তী দুই আয়াতে সমন্বিত করে দেয়া হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে মানুষ সকলের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে ন্যায়ের সাথে চলবে। দ্বিতীয়তঃ বলা হয়েছে তার সর্বকাজে ন্যায্য মানদন্ড প্রতিষ্ঠিত করবে। এ ব্যাপারে কখনও সীমালংঘন করবে না অর্থাৎ ন্যায়ের মানদন্ড হচ্ছে স্বর্গীয় গুণাবলীর মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ। এই মানদন্ডকে আক্ষরিকভাবে তিনটি প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। পূর্বের আয়াতগুলির মাধ্যমে :
১) ন্যায়ের মানদন্ড এক স্বর্গীয় গুণ ;
২) সমগ্র নভোমন্ডল গাণিতিক মানদন্ডের উপরে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে।
৩) আকাশকে সমুন্নত করে নক্ষত্র পুঞ্জের মানদন্ড রক্ষা করা হয়েছে।
০৮। এই কারণে, যাতে তোমরা [ নির্দ্দিষ্ট ] মানদন্ডে সীমালংঘন না কর।
০৯। সুতারাং ন্যায়ের ভিত্তিতে ওজন কর, এবং মাপে কখনও কম দিও না ৫১৭৮।
৫১৭৮। "ন্যায়ের ভিত্তিতে ওজন কর " বাক্যটি আক্ষরিক ও আলংকারিক উভয় অর্থ বহন করে। মানুষ তার দৈনন্দিক প্রতিটি কাজে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হবে যেমন : ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে উপযুক্ত প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া। সামাজিক জীবনে আমাদের প্রতিনিয়ত মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। এখানে আমাদের মানুষের সাথে আচরণ প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বোচ্চ সততা ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে। এই সততা যে শুধুমাত্র অন্য লোকের প্রতি প্রদর্শন করতে হবে তাই-ই নয় এই সততা ব্যক্তির নিজের জীবনেও প্রতিফলিত করতে হবে। যেমন চিন্তার সততা, বক্তব্যের সততা, কার্যের নিয়তের সততা, এবং আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যের সততা। মানুষ মনের গহন গভীরের চিন্তাধারাকে অনুধাবন করতে না পারলেও আল্লাহ্র নিকট তা দিবালোকের ন্যায় সুষ্পষ্ট। মানুষ মনে করে যা প্রকাশ্য নয় তা পাপ নয়, সুতারাং সুযোগ পেলেই ছোটখাট প্রতারণা বা মিথ্যার আশ্রয় নিতে দ্বিধা বোধ করে না, অবশ্য যদি তাতে তার জীবিকার বা কোন পার্থিব কাজ সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ্ বলেছেন ন্যায় নীতি হচ্ছে সকল ঐশ্বরিক গুণাবলীর কেন্দ্রবিন্দু।
সততা ও ন্যায়নীতি একটি সমাজের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে ঠিক যেমন গাণিতিক সুত্র নভোমন্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে। যে সমাজে সততা ও ন্যায়নীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, সে সমাজের ধ্বংস অনিবার্য; ঠিক যেরূপ হবে নভোমন্ডলের গাণিতিক ভারসাম্য নষ্ট হলে। এরই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলকে বিচার করতে হবে।
১০। তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন ৫১৭৯, [ তাঁর ] সৃষ্ট জীবের জন্য।
৫১৭৯। আল্লাহ্র অনুগ্রহ গুণে শেষ করা অসম্ভব। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে আল্লাহ্র অনুগ্রহের সামান্য ইঙ্গিত করা হয়েছে মাত্র। পৃথিবীতে জীবন ও পরিবেশ পরস্পর ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। উদ্ভিদ জগত বিভিন্ন ধরণের ফল এবং শষ্য দানা উৎপন্ন করে যার দ্বারা মানুষ ও প্রাণী জগত জীবন ধারণ করে। ফসল কেটে ঘরে তোলার পরে শষ্য দানা মানুষের খাদ্য ও খড় বিচালী পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। উদ্ভিদ জগত যে শুধুমাত্র খাদ্য সরবরাহ করে তাই-ই নয়, সুগন্ধ গুল্ম খাদ্য দ্রব্যকে সুস্বাদু করার জন্য মশলা উৎপন্ন করে থাকে। এসব হলো দেহের খাদ্য, মনের খাদ্যের জন্য উদ্ভিদ জগত অপূর্ব সুন্দর ফুলের জন্ম দেয় যার শোভা মানুষকে মুগ্ধ করে। এ সবই আল্লাহ্র অনুগ্রহ মাত্র।
১১। সেখানে রয়েছে ফল এবং খেঁজুর গাছ যা উৎপন্ন করে [ আবরণযুক্ত ] ফলের কাঁদি।
১২। আর তুষযুক্ত ও পশুখাদ্য সম্বলিত শষ্যদানা এবং সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ।
১৩। তাহলে তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ৫১৮০ ?
১২। আর তুষযুক্ত ও পশুখাদ্য সম্বলিত শষ্যদানা এবং সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ।
১৩। তাহলে তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ৫১৮০ ?
৫১৮০। 'উভয়ে' অর্থাৎ মানুষ ও জ্বিন। 'তোমাদিগের ' শব্দটি দ্বারা মানুষ ও জ্বিন এই উভয় সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। সমগ্র সূরাটি এক সূরের মুর্চ্ছনা, যাতে সব কিছুকে জোড়ায় জোড়ায় দ্বৈতভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। এই দ্বৈত ভাবে বা জোড়ায় জোড়ায় আহ্বানের মাধ্যমে আল্লাহ্র একত্বের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে জড় এবং জীব সব কিছুকে সৃষ্টি করা হয়েছে জোড়ায় জোড়ায়, যেমন বলা হয়েছে [ ৫১ : ৪৯ ] আয়াতে ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে টিকা নং ৫০২৫ - ২৬; [ ৩৬ : ৩৬ ] আয়াতে ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে টিকা নং ৩৯৮১। ন্যায়ের মানদন্ড দুই বিরোধী শক্তির দ্বন্দ দূর করে - ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তি করে থাকে। এই সূরাতে সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় দ্বৈতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মানুষ ও প্রকৃতি, সূর্য ও চন্দ্র, লতাগুল্ম ও বৃক্ষ, আকাশ ও পৃথিবী, ফল ও শষ্যদানা,মানুষের খাদ্য ও পশু খাদ্য ; পুষ্টিকর ও সুগন্ধিযুক্ত ইত্যাদি প্রতিটি জিনিষই দ্বৈতভাবে এই সূরাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫১৮১। দেখুন [১৫ : ২৬ ] আয়াতের টিকা ১৯৬৫। মানুষ ও জ্বিনের সৃষ্টি তত্বকে তুলনা করা হয়েছে। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে পোড়া মাটির মত শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ধূম অগ্নি থেকে [ দেখুন নীচের টিকা ] অর্থাৎ যে আগুনের কোনও ধূঁয়া নাই। যদিও তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির উপাদান থেকে, তবুও তাদের উভয়েরই আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভের ক্ষমতা ও সম্ভাবনা রয়েছে।
৫১৮২। জ্বিনের অর্থ বোঝার জন্য দেখুন [ ৬ : ১০০] আয়াত ও টিকা ৯২৯। জ্বিনেরা হচ্ছে আত্মা, তাদের কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দেহ নাই, তাদের দেখায় প্রজ্জ্বলিত অগ্নি শিখার ন্যায়। এই আগুন ধোঁয়া মুক্ত, এই বাক্য দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে তারা ইন্দ্রিগ্রাহ্য দেহের ন্যায় স্থুলতা মুক্ত। কারণ আগুনের উজ্জ্বলতার স্থুল দিক হচ্ছে তার কালিমাযুক্ত ধোঁয়া।
৫১৮৩। আয়াতের এই লাইনটির অনুরূপ লাইন হচ্ছে [ ১৬: ৭১ - ৭২ ] ; [ ৪০ : ৮১ ] এবং [ ৫৩ : ৫৫ ] আয়াত ও টিকা ৫১২২।
৫১৮৪। দুই উদয়াচাল ' বা দুই পূর্ব। সূর্য বছরের সব দিন পূর্বদিকের এক নির্দ্দিষ্ট বিন্দুতে উদিত হয় না। শীতে ২১ শে ডিসেম্বর সূর্য সর্ব দক্ষিণের বিন্দুতে এবং ২১ জুন সর্ব উত্তরের বিন্দুতে উদিত হয়। এই দুই বিন্দুর মধ্যবর্তী সকল স্থানে সূর্য বছরের অন্যান্য সময়ে উদিত হয়। একই ভাবে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে বছরের দুইদিন সর্ব দক্ষিণে ও সর্ব উত্তরে অস্ত যায় এবং বছরের অন্যান্য দিন এই দুই বিন্দুর মধ্যবর্তী স্থানে অস্তমিত হয়। দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের সাহায্যে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ্ পৃথিবী ও আকাশের সর্বস্থানের অধিপতি এবং তিনি তাঁর অনুগ্রহ সর্বস্থানে বিতরণ করে থাকেন। এই আয়াতের দ্বৈত সংখ্যা সূরাটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দেখুন [ ৪৩ : ৩৮ ] আয়াতের টিকা ৪৬৪১ এবং [ ৩৭ : ৫ ] আয়াতের টিকা ৪০৩৪।
৫১৮৫। দেখুন [ ২৫ : ৫৩ ] ও টিকা ৩১১১ যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে দুই দরিয়া অর্থাৎ মিঠা পানি ও লবণাক্ত পানির উৎস কিভাবে পরস্পর মিলিত হওয়া সত্ত্বেও বিচ্ছিন্ন থাকে; ঠিক যেনো তাদের মাঝে পার্টিশন বা বিভাজন বিদ্যমান। সমুদ্রের লবনাক্ত পানি কখনও স্থলভাগের মিঠা পানিকে কলুষিত করবে না। আল্লাহ্র এও এক কুদরত এবং জীবিত প্রাণীর জন্য এক অনুগ্রহ বৈকি। সমুদ্র হচ্ছে পৃথিবীর আবর্জনা দূরীকরণ দ্বারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং মিঠা পানির উৎস হচ্ছে সুস্বাদু পানীয় যা জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক।
৫১৮৬। ঝিনুকের মাঝে মুক্তার জন্ম হয়, এবং প্রবাল উৎপন্ন হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য প্রবাল কীটদ্বারা। সমুদ্রগর্ভে প্রবাল প্রাচীর, প্রবাল দ্বীপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য মৃত প্রবাল কীট দ্বারা গঠিত হয়। এদের অসংখ্য রং, আকৃতি অপূর্ব সুন্দর। অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত Great Barear Reef, লোহিত সাগরের দুই প্রান্তের প্রবালের প্রাচুর্য এবং পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে সমুদ্রের উপকূলে প্রবালের মনোহর রূপ পর্যটকদের মুগ্ধ করে এবং স্রষ্টার শিল্প সত্ত্বাকে অনুভবে সাহায্য করে। সাধারণতঃ মুক্তা হচ্ছে উজ্জ্বল রংএর তবে কালো ও গোলাপী রং এরও হয়। মুক্তা ও প্রবাল উভয়ই গহনা তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫১৮৭। "পর্ব্বত প্রমাণ নৌযান সমূহ" - বর্তমানে সমুদ্রগামী যুদ্ধ জাহাজ সমূহ যা পারমানবিক শক্তিচালিত তার আয়তন দর্শনে পর্ব্বতপ্রমাণ বলেই ভ্রম হয়। এগুলি এরোপ্লেনের সমুদ্রের মাঝে ওঠা নামার জন্য এবং এরোপ্লেন পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫১৮৮। সমুদ্রে বিচরণশীল জাহাজ অথবা স্টীমার বা যে কোনও জলযান যা পানির বুকে ভেসে বেড়ায়। আরও সার্বজনীন ভাবে বললে এর মাঝে উড়োজাহাজকেও অন্তর্ভূক্ত করা উচিত। কারণ উড়োজাহাজ বাতাসের সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়। বিশাল অর্ণব পোতসমূহ বাতাসের সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়। অবশ্যই এসব উদ্ভাবন করেছে মানুষ। কিন্তু মানুষের এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা আল্লাহ্রই দান। বর্তমানে মানুষ পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে সূদূর মহাকাশে ভ্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এও স্রষ্টার অসীম কৃপা মানুষের প্রতি। প্রতিটি যুগে যুগের উপযোগী বুদ্ধিমত্তা আল্লাহ্ মানুষকে দিয়ে থাকেন। সেভাবেই সকল কিছুই আল্লাহ্র নিয়ন্ত্রাধীন।
রুকু -২
৫১৮৯। মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি - সর্বোৎকৃষ্ট আবিষ্কার যার জন্য সে গর্বিত হয় এবং অহংকার বোধ করে সবই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল সভ্যতা, আসমুদ্র বিস্তৃত রাজত্ব, বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কার, মানুষের চমকপ্রদ কর্মতৎপরতা, সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীর কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এমন কি সুউচ্চ পর্বতমালা, উপত্যকা, সূর্য,চন্দ্র, গ্রহ,নক্ষত্র ইত্যাদি যা আমাদের চোখে চির ভাস্বর বলে প্রতিভাত হয় তাও একদিন স্রষ্টার নির্দ্দেশে ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধু রয়ে যাবে স্রষ্টার সত্ত্বা যা মহিমাময় এবং মহানুভব।
৫১৯০। 'Ikram''- এই শব্দটি দ্বারা দ্বিবিধ ভাবকে প্রকাশ করা হয়েছে। ১) ব্যক্তির মহানুভবতা ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ২) অপর ব্যক্তি দ্বারা কোন ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করাকে বোঝানো হয়। এই দুই ভাবকে অর্থাৎ মহানুভব ও মহিমাময় শব্দকে 'Ikram' এই একটি শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
৫১৯১। আকাশে যা কিছু আছে এবং পৃথিবীর সকল সৃষ্ট পদার্থ, জড় এবং জীব, সকলেই আল্লাহ্র সাহায্যপ্রার্থী। তিনি সকল কিছুর প্রতিপালক।
৫১৯২। 'Shun'- জাঁকজমক, ঔজ্জ্বল্যের দীপ্তি, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য, কাজ,পেশা, বৃত্তি ইত্যাদি। বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ আল্লাহ্র হাতে। তিনি নিষ্ক্রিয় থাকেন না বা মানুষ বা তাঁর সৃষ্ট সম্বন্ধে তিনি উদাসীন নন। তাঁর সৃষ্টি কর্ম আকাশে বাতাসে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ প্রতিপলে নিত্য নূতনভাবে ভাস্বর হয়ে ওঠে।
৫১৯৩। মানুষ ও জ্বিন এই উভয় সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন যা সৃষ্টির আর কোনও প্রাণীকে দেয়া হয় নাই। তাদের কর্মের হিসাব আল্লাহ্র নিকট দাখিল করতে হবে। যদি কেউ অন্যায় বা পাপ করে, বা ন্যায়ের মানদন্ড থেকে বিচ্যুত হয়, আল্লাহ্ সাথে সাথে তাদের কৃত অন্যায়ের জন্য শাস্তি দান করেন না। আল্লাহ্ ভালো ও মন্দ প্রত্যেককে নিজস্ব ভুল সংশোধনের সুযোগ দান করেন। আর এই সুযোগ দান করা হয় পৃথিবীর শিক্ষানবীশ কালের মধ্যে। যখন এই শিক্ষানবীশকাল অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তখন তাদের আর সুযোগ দান করা হয় না। তারা পরলোকে বিচারের সম্মুখীন হয়। এই সুযোগ, পৃথিবীর এই শিক্ষানবীশকাল, এই সতর্কবাণী,এ সকলই আল্লাহর বিশেষ কুদরত। আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহের জন্য প্রত্যেকের উপকৃত এবং কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
১৪। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত ঠন্ঠনে শুষ্ক মাটি থেকে ৫১৮১ ;
৫১৮১। দেখুন [১৫ : ২৬ ] আয়াতের টিকা ১৯৬৫। মানুষ ও জ্বিনের সৃষ্টি তত্বকে তুলনা করা হয়েছে। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে পোড়া মাটির মত শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে। জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ধূম অগ্নি থেকে [ দেখুন নীচের টিকা ] অর্থাৎ যে আগুনের কোনও ধূঁয়া নাই। যদিও তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির উপাদান থেকে, তবুও তাদের উভয়েরই আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভের ক্ষমতা ও সম্ভাবনা রয়েছে।
১৫। এবং তিনি জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়ামুক্ত আগুন থেকে ৫১৮২ ;
৫১৮২। জ্বিনের অর্থ বোঝার জন্য দেখুন [ ৬ : ১০০] আয়াত ও টিকা ৯২৯। জ্বিনেরা হচ্ছে আত্মা, তাদের কোন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দেহ নাই, তাদের দেখায় প্রজ্জ্বলিত অগ্নি শিখার ন্যায়। এই আগুন ধোঁয়া মুক্ত, এই বাক্য দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে যে তারা ইন্দ্রিগ্রাহ্য দেহের ন্যায় স্থুলতা মুক্ত। কারণ আগুনের উজ্জ্বলতার স্থুল দিক হচ্ছে তার কালিমাযুক্ত ধোঁয়া।
১৬। সুতারাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ৫১৮৩ ?
৫১৮৩। আয়াতের এই লাইনটির অনুরূপ লাইন হচ্ছে [ ১৬: ৭১ - ৭২ ] ; [ ৪০ : ৮১ ] এবং [ ৫৩ : ৫৫ ] আয়াত ও টিকা ৫১২২।
১৭। [ তিনি ] দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের প্রভু ৫১৮৪
৫১৮৪। দুই উদয়াচাল ' বা দুই পূর্ব। সূর্য বছরের সব দিন পূর্বদিকের এক নির্দ্দিষ্ট বিন্দুতে উদিত হয় না। শীতে ২১ শে ডিসেম্বর সূর্য সর্ব দক্ষিণের বিন্দুতে এবং ২১ জুন সর্ব উত্তরের বিন্দুতে উদিত হয়। এই দুই বিন্দুর মধ্যবর্তী সকল স্থানে সূর্য বছরের অন্যান্য সময়ে উদিত হয়। একই ভাবে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে বছরের দুইদিন সর্ব দক্ষিণে ও সর্ব উত্তরে অস্ত যায় এবং বছরের অন্যান্য দিন এই দুই বিন্দুর মধ্যবর্তী স্থানে অস্তমিত হয়। দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের সাহায্যে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ্ পৃথিবী ও আকাশের সর্বস্থানের অধিপতি এবং তিনি তাঁর অনুগ্রহ সর্বস্থানে বিতরণ করে থাকেন। এই আয়াতের দ্বৈত সংখ্যা সূরাটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দেখুন [ ৪৩ : ৩৮ ] আয়াতের টিকা ৪৬৪১ এবং [ ৩৭ : ৫ ] আয়াতের টিকা ৪০৩৪।
১৮। সুতারাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ?
১৯। তিনি দুটি প্রবাহিত পানির সমুদ্রকে মিলিত হওয়ার জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন ৫১৮৫
২০। কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক [ অদৃশ্য ] বাঁধা যা তারা অতিক্রম করতে পারে না :
১৯। তিনি দুটি প্রবাহিত পানির সমুদ্রকে মিলিত হওয়ার জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন ৫১৮৫
২০। কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক [ অদৃশ্য ] বাঁধা যা তারা অতিক্রম করতে পারে না :
৫১৮৫। দেখুন [ ২৫ : ৫৩ ] ও টিকা ৩১১১ যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে দুই দরিয়া অর্থাৎ মিঠা পানি ও লবণাক্ত পানির উৎস কিভাবে পরস্পর মিলিত হওয়া সত্ত্বেও বিচ্ছিন্ন থাকে; ঠিক যেনো তাদের মাঝে পার্টিশন বা বিভাজন বিদ্যমান। সমুদ্রের লবনাক্ত পানি কখনও স্থলভাগের মিঠা পানিকে কলুষিত করবে না। আল্লাহ্র এও এক কুদরত এবং জীবিত প্রাণীর জন্য এক অনুগ্রহ বৈকি। সমুদ্র হচ্ছে পৃথিবীর আবর্জনা দূরীকরণ দ্বারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং মিঠা পানির উৎস হচ্ছে সুস্বাদু পানীয় যা জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক।
২১। সুতারাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ?
২২। এই উভয় [সমুদ্র ] থেকে মুক্তা ও কোরাল পাওয়া যায় ৫১৮৬ ;
২২। এই উভয় [সমুদ্র ] থেকে মুক্তা ও কোরাল পাওয়া যায় ৫১৮৬ ;
৫১৮৬। ঝিনুকের মাঝে মুক্তার জন্ম হয়, এবং প্রবাল উৎপন্ন হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য প্রবাল কীটদ্বারা। সমুদ্রগর্ভে প্রবাল প্রাচীর, প্রবাল দ্বীপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য মৃত প্রবাল কীট দ্বারা গঠিত হয়। এদের অসংখ্য রং, আকৃতি অপূর্ব সুন্দর। অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত Great Barear Reef, লোহিত সাগরের দুই প্রান্তের প্রবালের প্রাচুর্য এবং পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে সমুদ্রের উপকূলে প্রবালের মনোহর রূপ পর্যটকদের মুগ্ধ করে এবং স্রষ্টার শিল্প সত্ত্বাকে অনুভবে সাহায্য করে। সাধারণতঃ মুক্তা হচ্ছে উজ্জ্বল রংএর তবে কালো ও গোলাপী রং এরও হয়। মুক্তা ও প্রবাল উভয়ই গহনা তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হয়।
২৩। সুতারাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ?
২৪। সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বতপ্রমাণ নৌযানসমূহ তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন ৫১৮৭, ৫১৮৮
২৪। সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বতপ্রমাণ নৌযানসমূহ তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন ৫১৮৭, ৫১৮৮
৫১৮৭। "পর্ব্বত প্রমাণ নৌযান সমূহ" - বর্তমানে সমুদ্রগামী যুদ্ধ জাহাজ সমূহ যা পারমানবিক শক্তিচালিত তার আয়তন দর্শনে পর্ব্বতপ্রমাণ বলেই ভ্রম হয়। এগুলি এরোপ্লেনের সমুদ্রের মাঝে ওঠা নামার জন্য এবং এরোপ্লেন পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫১৮৮। সমুদ্রে বিচরণশীল জাহাজ অথবা স্টীমার বা যে কোনও জলযান যা পানির বুকে ভেসে বেড়ায়। আরও সার্বজনীন ভাবে বললে এর মাঝে উড়োজাহাজকেও অন্তর্ভূক্ত করা উচিত। কারণ উড়োজাহাজ বাতাসের সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়। বিশাল অর্ণব পোতসমূহ বাতাসের সমুদ্রে ভেসে বেড়ায়। অবশ্যই এসব উদ্ভাবন করেছে মানুষ। কিন্তু মানুষের এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা আল্লাহ্রই দান। বর্তমানে মানুষ পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে সূদূর মহাকাশে ভ্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এও স্রষ্টার অসীম কৃপা মানুষের প্রতি। প্রতিটি যুগে যুগের উপযোগী বুদ্ধিমত্তা আল্লাহ্ মানুষকে দিয়ে থাকেন। সেভাবেই সকল কিছুই আল্লাহ্র নিয়ন্ত্রাধীন।
২৫। সুতারাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ?
রুকু -২
২৬। ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে ;
২৭। কিন্তু চিরস্থায়ী হবে তোমার প্রভুর সত্ত্বা, ৫১৮৯ যিনি মহিমান্বিত, মহাকল্যাণময়, সম্মানিত ৫১৯০
২৭। কিন্তু চিরস্থায়ী হবে তোমার প্রভুর সত্ত্বা, ৫১৮৯ যিনি মহিমান্বিত, মহাকল্যাণময়, সম্মানিত ৫১৯০
৫১৮৯। মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি - সর্বোৎকৃষ্ট আবিষ্কার যার জন্য সে গর্বিত হয় এবং অহংকার বোধ করে সবই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল সভ্যতা, আসমুদ্র বিস্তৃত রাজত্ব, বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কার, মানুষের চমকপ্রদ কর্মতৎপরতা, সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীর কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এমন কি সুউচ্চ পর্বতমালা, উপত্যকা, সূর্য,চন্দ্র, গ্রহ,নক্ষত্র ইত্যাদি যা আমাদের চোখে চির ভাস্বর বলে প্রতিভাত হয় তাও একদিন স্রষ্টার নির্দ্দেশে ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধু রয়ে যাবে স্রষ্টার সত্ত্বা যা মহিমাময় এবং মহানুভব।
৫১৯০। 'Ikram''- এই শব্দটি দ্বারা দ্বিবিধ ভাবকে প্রকাশ করা হয়েছে। ১) ব্যক্তির মহানুভবতা ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ২) অপর ব্যক্তি দ্বারা কোন ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করাকে বোঝানো হয়। এই দুই ভাবকে অর্থাৎ মহানুভব ও মহিমাময় শব্দকে 'Ikram' এই একটি শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
২৮। সুতারাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ?
২৯। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীই তার কৃপা প্রার্থী ৫১৯১ ; প্রতিটি দিন তিনি [ নূতন] দীপ্তিতে উজ্জ্বল ৫১৯২।
২৯। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীই তার কৃপা প্রার্থী ৫১৯১ ; প্রতিটি দিন তিনি [ নূতন] দীপ্তিতে উজ্জ্বল ৫১৯২।
৫১৯১। আকাশে যা কিছু আছে এবং পৃথিবীর সকল সৃষ্ট পদার্থ, জড় এবং জীব, সকলেই আল্লাহ্র সাহায্যপ্রার্থী। তিনি সকল কিছুর প্রতিপালক।
৫১৯২। 'Shun'- জাঁকজমক, ঔজ্জ্বল্যের দীপ্তি, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য, কাজ,পেশা, বৃত্তি ইত্যাদি। বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ আল্লাহ্র হাতে। তিনি নিষ্ক্রিয় থাকেন না বা মানুষ বা তাঁর সৃষ্ট সম্বন্ধে তিনি উদাসীন নন। তাঁর সৃষ্টি কর্ম আকাশে বাতাসে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ প্রতিপলে নিত্য নূতনভাবে ভাস্বর হয়ে ওঠে।
৩০। সুতরাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৩১। হে মানুষ ও জ্বিন শীঘ্রই আমি তোমাদের ব্যাপারে মীমাংসা করবো ৫১৯৩।
৩১। হে মানুষ ও জ্বিন শীঘ্রই আমি তোমাদের ব্যাপারে মীমাংসা করবো ৫১৯৩।
৫১৯৩। মানুষ ও জ্বিন এই উভয় সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন যা সৃষ্টির আর কোনও প্রাণীকে দেয়া হয় নাই। তাদের কর্মের হিসাব আল্লাহ্র নিকট দাখিল করতে হবে। যদি কেউ অন্যায় বা পাপ করে, বা ন্যায়ের মানদন্ড থেকে বিচ্যুত হয়, আল্লাহ্ সাথে সাথে তাদের কৃত অন্যায়ের জন্য শাস্তি দান করেন না। আল্লাহ্ ভালো ও মন্দ প্রত্যেককে নিজস্ব ভুল সংশোধনের সুযোগ দান করেন। আর এই সুযোগ দান করা হয় পৃথিবীর শিক্ষানবীশ কালের মধ্যে। যখন এই শিক্ষানবীশকাল অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তখন তাদের আর সুযোগ দান করা হয় না। তারা পরলোকে বিচারের সম্মুখীন হয়। এই সুযোগ, পৃথিবীর এই শিক্ষানবীশকাল, এই সতর্কবাণী,এ সকলই আল্লাহর বিশেষ কুদরত। আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহের জন্য প্রত্যেকের উপকৃত এবং কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
৩২। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৩৩। হে মানুষ ও জ্বিনের সম্প্রদায় ৫১৯৪ ! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু আমার অনুমতি ব্যতীত তোমরা অতিক্রম করতে পারবে না।
৩৩। হে মানুষ ও জ্বিনের সম্প্রদায় ৫১৯৪ ! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু আমার অনুমতি ব্যতীত তোমরা অতিক্রম করতে পারবে না।
৫১৯৪। দেখুন আয়াত [ ৬ : ১৩০ ] যেখানে জ্বিন ও মানুষ উভয়কে একত্রে সম্বোধন করা হয়েছে। সূরা [ ৬: ১৩০- ১৩৪ ] সমস্তটা এই আয়াতের বিশদ বিবরণ হিসেবে পড়া উচিত। যদি কেউ মনে করে যে, তাঁর গোপন পাপ আল্লাহ্র নিকট প্রকাশ পাবে না, বা তাঁরা তাদের পাপের জন্য কোনও মন্দ পরিণতি লাভ করে নাই ; অথবা কারও ভালো কাজ তার যোগ্য পুরষ্কার লাভ করে নাই, - তবে এ সব দ্বারা সে যেনো প্রতারিত না হয়। অবশ্য মানুষের প্রতিটি চিন্তা, কথা, কাজ, কাজের নিয়ত, সবই আল্লাহ্র নিকট রক্ষিত হয়ে চলেছে। এবং অবশ্যই মানুষের কর্মের হিসাব দাখিল করতে হবে। মানুষকে আল্লাহ যে সীমানার মাঝে রেখেছেন, মানুষ তা অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখে না, আল্লাহ্র হুকুম ব্যতীত। বিজ্ঞানের নিত্য নূতন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ এই সীমার বাঁধনকে বিস্তৃত করে চলেছে। সুতারাং আল্লাহ যে সুযোগ দান করেছেন,তার জন্য সকলেরই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
৩৪। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? ৫১৯৫
৫১৯৫। এই সূরাতে কত সুন্দর ধারাবাহিকভাবে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের চর্তুদ্দিকে আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহ ছড়ানো আছে। মানুষের সৃষ্টিতে, তার বুদ্ধিমত্তায়, প্রকৃতির মাঝে, প্রত্যাদেশের মাঝে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল বিদ্যমান। দিনের উষ্ণতা সূর্যের দীপ্তির সাথে জড়িত, পানির চক্রের মাধ্যমে রক্ষা হয় পৃথিবীর জীবন ও বিশোধনের কাজ; মানুষের বুদ্ধিমত্তা বা বিজ্ঞানের দ্বারা প্রকৃতিকে জয় করা এ সবই হচ্ছে আল্লাহ্র অসীম অনুগ্রহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি - আল্লাহ্র সাহায্য ও প্রতিপালনের মাধ্যম বিশেষ। মানুষ যদি প্রশান্ত মনে আল্লাহ্র সৃষ্টি কৌশল সম্বন্ধে চিন্তা করে ; তবে অবশ্যই সে অনুধাবনে সক্ষম হবে যে, কি গভীর মমতায় বিশ্বস্রষ্টার কল্যাণময় হস্ত আমাদের ঘিরে আছে। মানুষ তবেই প্রকৃত সত্যকে অনুভবে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যতের জবাবদিহি সম্পর্কে সাবধান হবে। সূরার পরবর্তী অংশে এই সাবধানবাণীই বারে বারে উচ্চারণ করা হয়েছে।
এতক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহ সমূহ। এখান থেকে শুরু হচ্ছে শেষ বিচারের দিনে পাপীদের শাস্তির বিবরণ।
৩৫। তোমাদের [মধ্য মন্দদের, উভয়ের ] ৫১৯৬ উপরে আগুনের শিখা [পোড়ানোর জন্য ] এবং ধূয়া [ শ্বাস রোধ করার জন্য ] ৫১৯৭ প্রেরণ করা হবে। তখন তোমরা প্রতিরোধ করতে পারবে না।
৫১৯৬। উপরের টিকা ৫১৯৩ তে যে দুই ভূবনের কথা বলা হয়েছে, তাদের কথা এখানে বলা হয়েছে।
৫১৯৭। বিচারের শাস্তির ভয়াবহতা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে।
৩৬। সুতারাং তোমার প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ? ৫১৯৮
৫১৯৮। এই আয়াতে এবং নিম্নলিখিত আয়াত সমূহে [ আয়াত নং ৪০, ৪২ এবং ৪৫ ] এই লাইনটি পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে বিদ্রূপাত্মক ভাব প্রকাশ করে। ভাবটি এরূপ যে, "পৃথিবীতে আল্লাহ্র সাবধান বাণী,প্রত্যাদেশ তোমাদের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিলো, যেনো তোমরা অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের দ্বারা আল্লাহ্র ক্ষমা লাভে ধন্য হতে পার। কিন্তু তোমরা তা বারে বারে প্রত্যাখান করেছ। এখন তোমরা কি ফল ভোগ করবে ? তোমাদের যা বলা হয়েছিলো তা কি সত্য নয় ? " আল্লাহ্র আইন বা বিধানকে অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ্র করুণা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো।
৩৭। যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, এবং তা মলমের মত রক্তবর্ণ হবে ৫১৯৯
৫১৯৯। এই আয়াতটির ইংরেজী ও বাংলা অনুবাদে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজী অনুবাদ হচ্ছে,"......... and it becomes red like Ointment " অধিকাংশ বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে "উহা রক্ত রংগে রঞ্জিত চর্মের রূপ ধারণ করিবে।" মোট কথা লাল রং হবে অগ্নিশিখার কারণে এবং উত্তপ্ত হওয়ার কারণে। এই চেনা জানা পৃথিবী মোমের মত গলে উত্তপ্ত হয়ে লাল রং ধারণ করবে।
৩৮। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৩৯। সেদিন মানুষ অথবা জ্বিন কাউকে তাদের পাপ সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করা হবে না ৫২০০।
৩৯। সেদিন মানুষ অথবা জ্বিন কাউকে তাদের পাপ সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করা হবে না ৫২০০।
৫২০০। এই আয়াতটির অর্থ এই নয় যে, শেষ বিচারের দিনে মানুষ বা জ্বিনকে তাদের পাপের কৈফিয়ত দিতে হবে না। অবশ্যই প্রত্যেককে তাদের কাজের হিসাব দাখিল করতে হবে [ ১৫ : ৯২ ]। প্রকৃত পক্ষে এই আয়াতটির অর্থ হচ্ছে যে সেদিন ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব উপলব্ধি করতে বাধ্য করা হবে। তাদের হাত, পা, জিহ্বা ইত্যাদি শরীরের বিভিন্ন অংগ প্রত্যঙ্গ তাদের পাপ কাজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দান করবে [ ২৪ : ২৪]। প্রতিটি ব্যক্তিই তার কর্মের দ্বারা সেদিন চিহ্নিত হয়ে প্রকাশ্য হয়ে যাবে [ ৭: ৪৮]। চিহ্নিত হওয়ার পরে প্রত্যেকের অবস্থান ও পদমর্যদা নির্ধারিত হয়ে যাবে এবং সকলের নিকট তা প্রকাশ্য হবে। অবশ্য বিচারকের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত আল্লাহ্র নিকট বিচারের পূর্বেও কিছু গোপন ছিলো না। যদিও আল্লাহ্ আমাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাপও পূর্বেই অবগত, তবুও তিনি অভিযুক্তকে তার অপরাধের খুঁটিনাটি ও পরিমাণ অবগত করাবেন, অভিযুক্তদের সম্মুখে আমলনামা উপস্থাপন করা হবে [ ৬৯ : ১৯, ২৫ ] ও [ ১৮: ৪৯ ] আয়াত দেখুন। এবং অপরাধীকে ওকালতি করার সুযোগ দান করা হবে [ ৭ : ৫৩ ]। কিন্তু সেদিন পাপীরা থাকবে এক বিভ্রান্তিকর ও হতবুদ্ধি অবস্থায় [ ২৮ : ৬৫ ]। ওকালতি করার ক্ষমতা তাদের থাকবে না।
৪০। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৪১। পাপীদের তাদের চিহ্ন দ্বারা সনাক্ত করা যাবে ৫২০১। এবং তাদের গ্রেফতার করা হবে তাদের চুলের ঝুটি ও পদদ্বয় ধরে।
৪১। পাপীদের তাদের চিহ্ন দ্বারা সনাক্ত করা যাবে ৫২০১। এবং তাদের গ্রেফতার করা হবে তাদের চুলের ঝুটি ও পদদ্বয় ধরে।
৫২০১। "পাপীদের তাদের চিহ্নদ্বারা সনাক্ত করা যাবে " - দেখুন উপরের টিকা।
৪২। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৪৩। এটাই সেই জাহান্নাম যা পাপীরা অস্বীকার করতো ; ৫২০২।
৪৩। এটাই সেই জাহান্নাম যা পাপীরা অস্বীকার করতো ; ৫২০২।
৫২০২। পাপীদের সম্মুখে যখন জাহান্নামের আগুন প্রকাশ্য হবে,তখন তাদের মনের সকল দ্বিধা দূর হয়ে যাবে। তা হবে তাদের নিকট অতি বাস্তব।
৪৪। ওরা জাহান্নামের মাঝে ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে ৫২০৩।
৪৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৪৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২০৩। সেখানে তাদের এক মূহুর্তের জন্য বিশ্রাম থাকবে না। আগুন তাদের পোড়াবে কিন্তু নিশ্চিহ্ন করে দেবে না। অর্থাৎ তারা আগুনে পোড়ার যন্ত্রণা লাভ করবে কিন্তু ধ্বংস বা শেষ হয়ে যাবে না। তাদের পানীয় হবে শুধুমাত্র ফুটন্ত পানি।
রুকু -৩
৪৬। কিন্তু যারা তাদের প্রভুর বিচারের সম্মুখীন হওয়ার ভয় রাখে ৫২০৪, তাদের জন্য রয়েছে দুটি বেহেশ্ত - ৫২০৫
৪৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৪৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২০৪। পাপীদের শাস্তির বর্ণনা কয়েকটি বাক্যের দ্বারা শেষ করে এবারে বর্ণনা করা হচ্ছে বেহেশতবাসীদের অবস্থান।
৫২০৫। এই আয়াতে বেহেশতের দুইটি উদ্যানের উল্লেখ আছে আর দুটির উল্লেখ আছে [ ৫৫ : ৬২ - ৭৬ ] আয়াতে। এই বাগানের বর্ণনার ব্যাপারে মতভেদ আছে, তবে সর্বোৎকৃষ্ট মতামত হচ্ছে যে [ ৫৫ : ৪৬ - ৬১ ] আয়াতে যে উদ্যানদ্বয়ের উল্লেখ আছে তা হচ্ছে আল্লাহ্র সবচেয়ে নিকটবর্তী ব্যক্তিদের [ Muqarrabun ] জন্য নির্ধারিত। এবং [ ৫৫ : ৬২-৭৬ ] আয়াতে যে উদ্যানদ্বয়ের উল্লেখ আছে তা হচ্ছে তাদের জন্য যাদের আমলনামা তাদের ডান হস্তে প্রদান করা হবে। প্রশ্ন হলো প্রতি ক্ষেত্রে দুটি উদ্যানের উল্লেখ করা হলো কেন ? কারণ দ্বৈততার উল্লেখের মাধ্যমে বিভিন্নতা বা বৈচিত্র আনা হয়েছে। এই সূরার বর্ণনাতে সর্বত্র দ্বৈততার প্রকাশ করা হয়েছে জোড়ায় জোড়ায়।
৪৮। উভয়েই বহু শাখা -পল্লব বিশিষ্ট
৪৯। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫০। উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ ; ৫২০৬
৫১। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা অস্বীকার করবে ?
৪৯। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫০। উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ ; ৫২০৬
৫১। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা অস্বীকার করবে ?
৫২০৬। 'দুইটি প্রস্রবন' কারণ উদ্যান দুইটি।
৫২। উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই দুই প্রকার ৫২০৭
৫৩। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫৩। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২০৭। ফলের দ্বৈততাও বাগানের দ্বৈততার কারণে প্রকাশ করা হয়েছে।
৫৪। তারা সেখানে ফরাশের উপরে হেলান দিয়ে বসবে, যার ভিতরের আস্তরণ হবে মহার্ঘ ব্রোকেডের। উভয় উদ্যানে ফল পাওয়া যাবে নিকটেই [ যা হবে সহজ লভ্য] ৫২০৮।
৫৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২০৮। এই পৃথিবীর ক্লান্তি ও শ্রান্তি সেখানে তাদের স্পর্শ করবে না। দেখুন [৩৫ : ৩৫] আয়াত।
৫৬। সেখানে থাকবে আনত নয়না পবিত্র [ কুমারীরা ] ৫২০৯ ; ৫২১০ ; যাদের পূর্বে কোন মানুষ বা জ্বিন স্পর্শ করে নাই ; -
৫৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২০৯। দেখুন [ ৪৪ : ৫৪ ] আয়াতের টিকা ৪৭২৮ - ২৯।
৫২১০। দেখুন [ ৩৭ : ৪৮ ] আয়াত ও টিকা ৪০৬৪। তাদের পবিত্রতা তাদের চেহারার বর্ণনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৫২১১। তাদের নারী সুলভ কমনীয়তা প্রকাশ পাবে তাদের গাত্রবর্ণে যার বর্ণনা আছে এই আয়াতে। এই গাত্রবর্ণ হবে প্রবাল ও পদ্মরাগের ন্যায় কোমল গোলাপী বর্ণ।
৫২১২। "উত্তম কাজের উত্তম পুরষ্কার " বাক্যটি দ্বারা পরিশিষ্ট টানা হয়েছে। তবে এই পরিশিষ্টের সঠিক ভাবধারা প্রকাশ করা হয়েছে বিমূর্ত প্রকাশ দ্বারা। বলা হয়েছে, "উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরষ্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে ?"
৫২১৩। দেখুন উপরের টিকা নং ৫২০৫।
৫২১৪। এই উদ্যানদ্বয়েও ফল ও ফুল গাছে পরিপূর্ণ এবং সেগুলি ঘন সবুজ ও সতেজ। যারা সেই উদ্যানে অবস্থান করবেন ; তাদের মানসিক শান্তির স্তর অনুযায়ী বৃক্ষলতার বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করা যাবে।
৫২১৫। এই উদ্যানেও রয়েছে দুটি প্রস্রবন পূর্বের উদ্যানের [ ৫৫ : ৫০ ] বর্ণনার ন্যায়। এই প্রস্রবন দুটি সৌন্দর্য ব্যতীতও ফলমূলের গাছে সেচ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫২১৬। দেখুন উপরের টিকা এবং আয়াত [ ৫৫ : ৫২ ] যেখানে প্রত্যেক ফল অর্থাৎ সর্বপ্রকার ফলের কথা বলা হয়েছে।
৫২১৭। দেখুন টিকা নং ৫২০৯। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে সৌন্দর্য্য ও পবিত্রতাকে নারী সৌন্দর্য্যের প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
৫২১৯। তাঁবুতে সুরক্ষিত দ্বারা তাদের সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অপর দুটি উদ্যান যার বর্ণনা আছে [ ৫৫ : ৫৪ ] আয়াতে। সেখানে তাদের বর্ণনাতে বলা হয়েছে, "তাহারা যেনো প্রবাল ও পদ্মরাগ; যার সাহায্যে তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে।
৫২২০। এই সূরার [ ৫৫ : ৫৪ ] আয়াতের সমান্তরালভাবে বর্ণনা টানা হয়েছে এই আয়াতে। পূর্বের আয়াতের বর্ণনা সম্ভবতঃ সম্মানের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ।
৫২১০। দেখুন [ ৩৭ : ৪৮ ] আয়াত ও টিকা ৪০৬৪। তাদের পবিত্রতা তাদের চেহারার বর্ণনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৫৮। তারা হবে পদ্মরাগ ও প্রবালের ন্যায় [ সুন্দর ] ৫২১১।
৫৯। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫৯। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১১। তাদের নারী সুলভ কমনীয়তা প্রকাশ পাবে তাদের গাত্রবর্ণে যার বর্ণনা আছে এই আয়াতে। এই গাত্রবর্ণ হবে প্রবাল ও পদ্মরাগের ন্যায় কোমল গোলাপী বর্ণ।
৬০। ভালো কাজের পুরষ্কার ভালো ব্যতীত আর কি হতে পারে ? ৫২১২
৬১। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৬১। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১২। "উত্তম কাজের উত্তম পুরষ্কার " বাক্যটি দ্বারা পরিশিষ্ট টানা হয়েছে। তবে এই পরিশিষ্টের সঠিক ভাবধারা প্রকাশ করা হয়েছে বিমূর্ত প্রকাশ দ্বারা। বলা হয়েছে, "উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরষ্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে ?"
৬২। এই দুইটি ব্যতীত আরও দুটি উদ্যান রয়েছে ৫২১৩
৬৩। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৬৩। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১৩। দেখুন উপরের টিকা নং ৫২০৫।
৬৪। [ সেই দুই উদ্যান ] ঘন সবুজ রং এর ৫২১৪।
৬৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৬৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১৪। এই উদ্যানদ্বয়েও ফল ও ফুল গাছে পরিপূর্ণ এবং সেগুলি ঘন সবুজ ও সতেজ। যারা সেই উদ্যানে অবস্থান করবেন ; তাদের মানসিক শান্তির স্তর অনুযায়ী বৃক্ষলতার বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করা যাবে।
৬৬। [ উভয় উদ্যানে ] দুই প্রস্রবণ আছে যা প্রচুর ধারায় পানি নির্গত করছে ৫২১৫ ;
৬৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৬৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১৫। এই উদ্যানেও রয়েছে দুটি প্রস্রবন পূর্বের উদ্যানের [ ৫৫ : ৫০ ] বর্ণনার ন্যায়। এই প্রস্রবন দুটি সৌন্দর্য ব্যতীতও ফলমূলের গাছে সেচ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৬৮। সেখানে থাকবে ফলমূল ; এবং খেজুর ও আনার ৫১১৬।
৬৯। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৬৯। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১৬। দেখুন উপরের টিকা এবং আয়াত [ ৫৫ : ৫২ ] যেখানে প্রত্যেক ফল অর্থাৎ সর্বপ্রকার ফলের কথা বলা হয়েছে।
৭০। সেখানে থাকবে পবিত্র [ সঙ্গী, যারা ] সুশীলা এবং সুন্দরী ৫২১৭।
৭১। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৭১। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১৭। দেখুন টিকা নং ৫২০৯। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে সৌন্দর্য্য ও পবিত্রতাকে নারী সৌন্দর্য্যের প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
৭২। [এই ] হুররা রয়েছে তাঁবুতে সুরক্ষিতা ৫২১৯
৭৩। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৭৩। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৫২১৯। তাঁবুতে সুরক্ষিত দ্বারা তাদের সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অপর দুটি উদ্যান যার বর্ণনা আছে [ ৫৫ : ৫৪ ] আয়াতে। সেখানে তাদের বর্ণনাতে বলা হয়েছে, "তাহারা যেনো প্রবাল ও পদ্মরাগ; যার সাহায্যে তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে।
৭৪। পূর্বে যাদের কোন মানুষ বা জ্বিন স্পর্শ করে নাই ; -
৭৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৭৬। ওরা হেলান দিয়ে বসবে সুবজ তাকিয়ায় ৫২২০, এবং সুন্দর ও মহার্ঘ গালিচার উপরে।
৭৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৭৮। তোমার প্রভুর নাম মহিমান্বিত। তিনি মর্যদাবান, মহাকল্যাণময় ও সম্মানিত ৫২২১।
৭৫। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৭৬। ওরা হেলান দিয়ে বসবে সুবজ তাকিয়ায় ৫২২০, এবং সুন্দর ও মহার্ঘ গালিচার উপরে।
৭৭। সুতারাং তোমাদের প্রভুর কোন অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
৭৮। তোমার প্রভুর নাম মহিমান্বিত। তিনি মর্যদাবান, মহাকল্যাণময় ও সম্মানিত ৫২২১।
৫২২০। এই সূরার [ ৫৫ : ৫৪ ] আয়াতের সমান্তরালভাবে বর্ণনা টানা হয়েছে এই আয়াতে। পূর্বের আয়াতের বর্ণনা সম্ভবতঃ সম্মানের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ।