Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ০ জন
আজকের পাঠক ১০০ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩৩০৩৯১ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৬১৩৫ বার
+ - R Print

সূরা ওয়াকি'আ


সূরা ওয়াকি'আ বা অপরিহার্য ঘটনা - ৫৬

৯৬ আয়াত, ৩ রুকু, মক্কী
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


ভূমিকা : এই শ্রেণীর এটা হলো সপ্তম বা শেষ সূরা। দেখুন ৫০নং সূরার ভূমিকা।

দুই একটি আয়াত বাদে সম্পূর্ণ সূরাটির অবতীর্ণ স্থান মক্কা।

বিষয়বস্তু হচ্ছে শেষ বিচারের দিন এবং প্রতিটি বিষয়ের প্রকৃত মূল্যমানের প্রতিষ্ঠা ; [ ৫৬ : ১ - ৫৬ ] ; আল্লাহ্‌র ক্ষমতা, গুণাবলী ও মহিমা [ ৫৬ : ৫৭ - ৭৪ ] ; এবং প্রত্যাদেশের সত্য [ ৫৬ : ৭৫ - ৯৬ ]।

সার সংক্ষেপ : যখন রোজ কেয়ামত উপস্থিত হবে, পৃথিবীর মূল ভিত্তি কেঁপে উঠবে। মানুষকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছেঃ যারা আল্লাহ্‌র অতি নিকটে তারা সর্বোচ্চ প্রশান্তি ও সম্মান প্রাপ্ত ; ডানদিকের সঙ্গী যাদের মাঝে প্রশান্তি বিরাজ করবে এবং বাম দিকের সঙ্গী যাদের মাঝে দুর্দ্দশা ও কষ্ট বিরাজ করবে। [ ৫৬ : ১ - ৫৬ ]।

প্রত্যাদেশ আল্লাহ্‌র ক্ষমতা, গুণাবলী ও মহিমার নিদর্শন যা মানুষকে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ গ্রহণে ও মহিমা কীর্তনে অনুপ্রাণীত করে [ ৫৬ : ৫৭ - ৯৬ ]।

সূরা ওয়াকি'আ বা অপরিহার্য ঘটনা - ৫৬

৯৬ আয়াত, ৩ রুকু, মক্কী
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


০১। যখন অপরিহার্য মহা ঘটনা [ কেয়ামত ] ঘটবে ৫২২২।

০২। অতঃপর এর সংঘটনের অস্বীকার করার কোন [ আত্মা ] থাকবে না

৫২২২। কেয়ামত অবশ্যাম্ভবী ঘটনা। পার্থিব জীবন নিয়ে যারা সর্বদা ব্যস্ত থাকে, তারা এই ঘটনার আগমন সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করে থাকে। কিন্তু কেয়ামত ঘটবেই, এবং যখন তা সংঘটিত হবে, তখন তা হবে আকস্মিক ভাবে। এই ঘটনার আকস্মিকতায় প্রতিটি আত্মা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে। তা হবে এত বাস্তব সত্য যে তার প্রচন্ডতা প্রতিটি আত্মার অন্তঃস্থলকে  দহন করবে। ফলে কারও পক্ষে মিথ্যা ধারণা বা ভান করা সম্ভব হবে না। "তখন ইহার সংঘটন অস্বীকার করবার কেহ থাকবে না।"

০৩। ইহা [একদলকে ] করবে বিনীত ৫২২৩, আবার [ অনেককেই ] করবে উল্লাসিত ;

৫২২৩। সেই ভয়াবহ দিনে পৃথিবীর মানুষের সকল শ্রেণী বিভাগ বিলুপ্ত হয়ে নূতন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং মানুষকে নূতনভাবে নূতন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হবে। যেমন ৭নং আয়াতে বলা হয়েছে সেদিন মানুষকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হবে। প্রথমতঃ সর্বোচ্চ শ্রেণী যারা সর্বোচ্চ সম্মানিত, আল্লাহ্‌র সর্বাপেক্ষা নিকটস্থ [ Muqarrabun] [ ৫৬ : ১১ - ২৯ ] ; পূণ্যাত্মা ব্যক্তিগণ যাদের বলা হয়েছে "ডানদিকের দল" [ Ashab-ul- maimana ] [ ৫৬ : ২৭- ৪০ ]। আর একদল থাকবে যারা থাকবে উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তার মধ্যে, এদের বলা হয়েছে, "বাম দিকের দল" [ Ashabul-mash-ama ] [ ৫৬ : ৪১ - ৫৬ ]। সেদিন এমন হবে যেমনঃ পার্থিব জীবনে ক্ষমতাধর ব্যক্তিগণ যারা ছিলেন বহুলোকের দন্ডমুন্ডের কর্তা কিন্তু পাপিষ্ঠ ; কেয়ামতের দিনে তাদের মান সম্মান ধূলায় লুণ্ঠিত করে তাদের অবদমিত করা হবে তাদের পাপের দরুণ। আবার যারা পৃথিবীতে ছিলেন পূণ্যাত্মা ও গুণবান কিন্তু ক্ষমতাধর বা খুব সম্মানীয় নয়। সেদিন তারা তাদের পূণ্য ও গুণরাজির জন্য তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হবেন। পৃথিবীর জীবনের মান -সম্মান ও ক্ষমতার সীমানা হয়ে যাবে বিলুপ্ত। সেদিন নূতন পৃথিবীতে গুণরাজি ও পূণ্যের ভিত্তিতে নূতন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে।

০৪। যখন পৃথিবী তার গভীর থেকে প্রকম্পিত হবে,

০৫। এবং পবর্তসমূহ অণু-পরমাণুতে চূর্ণ হয়ে যাবে ৫২২৪,

০৬। পরিণত হবে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণাতে

৫২২৪। আয়াতে [ ৪ - ৬ ] বর্ণনা করা হয়েছে কেয়ামত দিবসে পৃথিবীর অবস্থা। অল্প কয়েকটি বাক্যে যে চিত্র আঁকা হয়েছে তা অতি ভয়াবহ। আমাদের এই চেনা পৃথিবী অর্ন্তহিত হয়ে যাবে এবং নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি হবে।

০৭। এবং তোমাদের বাছাই করা হবে তিনটি শ্রেণীতে ৫২২৫

৫২২৫। দেখুন উপরের টিকা ৫২২৩।

০৮। সেখানে থাকবে ডান হাতের [ আমলনামার ] দল ; কিরূপ [ ভাগ্যবান ] হবে ডান হাতের দল ?

০৯। এবং বা হাতের [ আমলনামার ] দল; কিরূপ [ হতভাগ্য ] হবে বা হাতের দল?

১০। এবং [ ঈমানে ] অগ্রবর্তীগণই হবে [পরলোকে ] অগ্রবর্তী ৫২২৬।

৫২২৬।"অগ্রবর্তীগণ [ বিশ্বাসে ] " - এই আয়াতটিকে দুভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

১) আল্লাহ্‌র একত্বে বিশ্বাসে যারা অগ্রবর্তী তাঁরাই আধ্যাত্মিক জগতকে অন্তরের মাঝে অনুভবে শীর্ষপর্যায়ে রয়ে যান। এরা হলেন নবী, রসুল এবং মানুষকে যারা নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছেন যুগে যুগে। পরলোকের জীবনে এরাই হবেন অগ্রবর্তী।

২) যারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে ছিলেন দ্রুত ও আল্লাহ্‌র বাণী গ্রহণে ছিলেন সর্বাপেক্ষা অগ্রগামী পরলোকের জীবনে বেহেশতে তাদের অবস্থান শীর্ষে থাকবে।

আয়াত নম্বর ৮, ৯, ও ১০ উল্লেখ করা হয়েছে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে করা তিনটি প্রধান শ্রেণীর। পরবর্তী আয়াত সমূহে তাদের সুখ-শান্তি ও দুঃখ দুর্দ্দশাকে প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসে যারা সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করবেন তাঁরাই হবেন আল্লাহ্‌র সবচেয়ে নিকটবর্তী।

১১। তারাই হবে [আল্লাহ্‌র ] নিকটতম ৫২২৭ ;

১২। প্রশান্তির বাগান সমূহে।

৫২২৭। দেখুন পূর্বের টিকা নং ৫২২৩। আধ্যাত্মিক জীবনে যে যত আল্লাহ্‌র নিকটবর্তী হবেন তাঁর আত্মিক প্রশান্তি তত গাঢ় ও তীব্র হবে। আত্মা, যাকে "রূহু" বলে সম্বোধন করা হয় যা আল্লাহ্‌ আমাদের এই নশ্বর দেহের মাঝে ফুঁকে দিয়েছেন তা আল্লাহ্‌রই রূহুর অংশ। রূহু যত তাঁর স্ব অবস্থানের নিকটবর্তী হবে তত তার মাঝে প্রশান্তি বৃদ্ধি পাবে। মানব আত্মা পরমাত্মারই অংশ যাকে এই নশ্বর দেহের মাঝে বন্দী করে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়, যার মুক্তি ঘটে 'বিশ্বাস' ও সৎকাজের মাধ্যমে।

১৩। [ অগ্রবর্তীদের ] অধিকাংশই হবে প্রথম যুগের [ ইসলাম গ্রহণকারীগণ ] ৫২২৮

৫২২৮। বহু নবী ও রসুল গত হয়েছেন আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সা) এর পূর্বে। হযরত মুহম্মদ (সা) শেষ নবী। তাঁর পরে তাঁর শিক্ষাকে যারা মানুষের মাঝে প্রচার করবেন তাদের সংখ্যা আনুপাতিক ভাবে কম হবে।

১৪। এবং [ অগ্রবর্তীদের ] অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তী যুগের।

১৫। স্বর্ণ-খচিত আসনে [ তারা সমাসীন হবে ], ৫২২৯

৫২২৯। "স্বর্ণ খচিত আসন " এই বাক্যটি দ্বারা সম্মানীত ব্যক্তির আসনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সম্মান পার্থিব জীবনের নয়, এই সম্মান আধ্যাত্মিক। যিনি আধ্যাত্মিক জীবনে যত উন্নতি করেছেন, আল্লাহ্‌র যত নৈকট্য লাভ করেছেন তার জন্য বেহেশতে তত উচ্চ স্থান নির্দ্দিষ্ট করা হবে।

১৬। ওরা হেলান দিয়ে বসবে, পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে ৫২৩০,

৫২৩০। বেহেশতবাসীরা কখনও নিঃসঙ্গতা বা একাকীত্ব ভোগ করবেন না। তাঁরা পরস্পর মুখোমুখি হেলান দিয়ে বসবেন। তাঁরা সকলে বেহেশতি সুখ ও শান্তি উপভোগ করবেন এক সামাজিক গোষ্ঠির অন্তর্ভূক্ত হয়ে।

১৭। তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে চির-কিশোরেরা ৫২৩১

৫২৩১। দেখুন [ ৫২ : ২৪ ] আয়াত ও টিকা ৫০৫৮। বেহেশতবাসীদের সেবকের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে ; " চির কিশোর "। অর্থাৎ তারুণ্যের দীপ্তিতে ঝল্‌মলে। এটা একটা প্রতীক ধর্মী বর্ণনা যার মাধ্যমে পরলোকের আধ্যাত্মিক জীবনের চিত্র অংকন করা হয়েছে। বেহেশতে কোন জড়া, বা বৃদ্ধ বা পুরানোর স্থান থাকবে না।

১৮। পান পাত্র, [ চক্‌চকে ] কুঁজা ও প্রস্রবন নিঃসৃত সূরাপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে।

১৯। এতে তাদের মাথা ব্যাথাও হবে না কিংবা তারা জ্ঞান হারাও হবে না ৫২৩২

৫২৩২। বেহেশতের সুখ শান্তির বর্ণনায়, পানীয়ের উল্লেখ করা হয়েছে এই আয়াতে। যে কোন ভোজে "পানীয়" এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে থাকে। পার্থিব জীবনে 'সুরা' এক মূল্যবান পানীয়রূপে পরিগণিত করা হয়। তবে 'সুরা' পানে মানুষ নানা ধরণের মানসিক বিকৃতি প্রদশর্ন করে থাকে ও শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু বেহেশতি সুরা এসব দোষ ত্রুটি মুক্ত থাকবে।

২০। এবং [ থাকবে ] তাদের পছন্দমত ফলমূল,

২১। আর তাদের ইস্পিত পাখীর গোশ্‌ত।

২২। এবং [ সেখানে থাকবে ] আয়তলোচনা হুর ৫২৩৩

৫২৩৩। দেখুন অনুরূপ বর্ণনা [ ৪৪ : ৫৪ ] আয়াত এবং টিকা ৪৭২৯। পূত, পবিত্র, সৌন্দর্যমন্ডিত ও সম্মানীয় "সাথী" মানুষের জীবনে আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য, যার আবেদন পার্থিব জীবনে সর্বোচ্চ। পার্থিব জীবনে মানুষ নশ্বর দেহের মাধ্যমে, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে, দৈহিক সুখের আস্বাদন করে থাকে। সুতারাং পার্থিব জীবনে এই সুখের ধারণার শারীরিক অবয়বের দ্বারা চিহ্নিত হয়ে থাকে। কিন্তু পরলোকের জীবন পার্থিব জীবনের নশ্বর দেহের, মলিনতা মুক্ত হবে। সুতারাং আধ্যাত্মিক জীবনের সাথীরা হবে পার্থিব জীবনের সকল হীনতা, নীচতা, কলুষতা মুক্ত সর্বোচ্চ সৌন্দর্যমন্ডিত।

২৩। সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ ৫২৩৪ -

৫২৩৪। এই আয়াতের অনুরূপ বর্ণনা আছে সেবা দানকারী কিশোরদের সম্বন্ধে [ ৫২ : ২৪ ] আয়াতে। সেখানে দেখুন টিকা নং ৫০৫৮।

২৪। তাদের গত [ জীবনের ] কাজের পুরষ্কার স্বরূপ।

২৫। সেখানে তারা কোন চপলতা বা পাপবাক্য শুনবে না, ৫২৩৫

৫২৩৫। দেখুন [ ৫২ : ২৩ ] আয়াত। পার্থিব জীবনে মানুষ আনন্দ ফূর্তি করার জন্য ভোজের ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু সেসব ভোজ পরিপূর্ণ আনন্দ দানে সক্ষম নয়। কারণ যারা সেখানে অংশগ্রহণ করেন সেখানে তাদের পরস্পরের মাঝে প্রতিযোগীতা, অহংকার, তোষামোদ, পরস্পরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ প্রভৃতির বিষবাষ্প উদগীরণের ফলে পরিবেশ হয়ে পরে নৈতিক অবক্ষয়ের অনুকূলে যা কখনও মানুষকে পরিপূর্ণ আনন্দ দানে সক্ষম হবে না। পার্থিব জীবনের এ সব পাপ মুক্ত থাকবে পরলোকে বেহেশতে।

২৬। কেবলমাত্র বলা হবে, " শান্তি, শান্তি।" ৫২৩৬

৫২৩৬। মানুষ যা চিন্তা করে, তা কথার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। ভাষা হচ্ছে 'চিন্তার' বা মনোভাবের মাধ্যম। বেহেশতের যে পরিবেশ তা প্রকাশ করা হবে 'সালাম' বা শান্তি বাক্যটি দ্বারা যা বেহেশতের সর্বোচ্চ সুখ ও শান্তির প্রতীক।

২৭। ডান হাতের [ আমলনামার ] দল; কি ঘটবে ডান হাতের দলের ?

২৮। তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যেখানে আছে কণ্টকহীন কুল বৃক্ষ, -৫২৩৭

৫২৩৭। "কন্টকহীন কূলবৃক্ষ " বা লোট গাছ। দেখুন আয়াত [ ৩৪ : ১৬ ] ও টিকা ৩৮১৪। 'কন্টকহীন কুলবৃক্ষ ' হচ্ছে বেহেশতী শান্তির প্রতীক স্বরূপ। দেখুন [ ৫৩ : ১৪ ]।

২৯। কাঁদি ভরা কদলী বৃক্ষ, ৫২৩৮

৫২৩৮। 'Talh' -অনেকেই একে কদলী বৃক্ষরূপে অনুদিত করেছেন। 'কদলী ' গাছে ফল ধরে কাঁদি হিসেবে যেখানে ফলগুলি সারিবদ্ধভাবে একটির উপরে আর একটি সাজানো থাকে। কিন্তু আরবে কোনও কদলী বৃক্ষ জন্মে না। আবার আরবে কদলী বা কলার নাম হচ্ছে 'Mauz'। সুতারাং এখানে অন্যভাবে চিন্তা যায় এক শ্রেণীর একাশিয়া বৃক্ষ হিসেবে যা ফুলে ফুলে সুশোভিত হয় এবং ফুলগুলি ঝালরের ন্যায় একের উপরে আর এক ন্যস্ত থাকে।

৩০। সুবিস্তৃত ছায়া

৩১। সদা প্রবাহমান পানি,

৩২। ও প্রচুর ফল-মূল।

৩৩। যে ফলের সময়কাল সীমাবদ্ধ নয়, অথবা যার সরবরাহ নিষিদ্ধ করা হবে না ৫২৩৯

৫২৩৯। যেহেতু এসব ফল ও ফুল পার্থিব নয়। এ সবের কোন নির্দ্দিষ্ট সীমা,সময় থাকবে না। পৃথিবীর ফল ও ফুল উৎপন্ন হয় ঋতু অনুযায়ী, যা নির্দ্দিষ্ট সময় শেষে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বেহেশতের চিত্ররূপ সম্পূর্ন ভিন্ন। সেখানে কোনও কিছুই শেষ হওয়ার নয় বা কিভাবে তা গ্রহণ করা হবে বা কখন গ্রহণ করা হবে সে সম্বন্ধে কোনও ধরাবাধা নিয়ম নাই। প্রত্যেকেই আপন ইচ্ছা ও তৃপ্তি অনুযায়ী তা গ্রহণ করতে পারে, তা হবে অশেষ। এই বর্ণনাটি রূপক ধর্মী। আধ্যাত্মিক কৃতকর্মের 'ফল' কে রূপকের মাধ্যমে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যে 'ফল' হবে সহজলভ্য, অশেষ এবং সীমাহীন।

৩৪। এবং [ সম্মানের ] সমুচ্চ সিংহাসনে থাকবে।

৩৫। আমি [ তাদের সঙ্গীনিদের ] বিশেষ ভাবে সৃষ্টি করেছি ৫২৪০

৩৬। এবং তাদের করেছি পবিত্র কুমারী

৩৭। সোহাগিনি,সমবয়স্ক, -

৩৮। ডান হাতের [ আমলানামাদের ] জন্য।

৫২৪০। যদিও বর্ণনাটি পার্থিব বর্ণনার ন্যায় স্ত্রী জাতির সৌন্দর্য বর্ণনার সাথে সমন্বিত করা হয়েছে, কিন্তু পরলোকের জীবনকে এবং সেই জীবনের সৌন্দর্য ও সুখানুভূতিকে নশ্বর দেহের অনুভূতির ন্যায় কল্পনা করা হবে মূর্খতার কাজ। তবুও বেহেশতের সুখ শান্তিকে মানুষের অনুভূতি ও উপলব্ধির ধারণার মাঝে সীমাবদ্ধ করার জন্য পার্থিব জীবনের উপলব্ধিকে ব্যবহার করা হয়েছে। বেহেশতের জীবনে পার্থিব জীবনের যৌনতার যে অপবিত্র রূপ তা থাকবে না। কারণ সেখানে নশ্বর দেহের অনুপস্থিতির কারণে নশ্বর দেহের চাওয়া পাওয়ার বিকৃত রূপ অন্তর্হিত হবে। বেহেশতের এই সঙ্গীরা হবে আল্লাহ্‌র বিশেষ সৃষ্টি যাদের বলা হয়েছে ; কুমারী, পূত-পবিত্র, স্বর্গীয় সৌন্দর্যের অধিকারী। যারা হবে সোহাগিনী ও সমবয়স্কা। এই বর্ণনাতে সম্পূর্ণটাই স্ত্রীলিঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছে তার কারণ আরবীতে Pronoun বা বিশেষণ স্ত্রীলিঙ্গে প্রকাশ করা হয়। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে বেহেশতে সকলেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে স্বর্গীয় সুখ ও শান্তির অধিকারী হবে যা প্রকাশ করা হয়েছে দৈহিক সৌন্দর্য, আরাম আয়েশ, যৌন অনুভূতি, খাদ্য -পানীয় ইত্যাদি পার্থিব সুখের অনুভূতির মাধ্যমে। যে অনুভূতি হবে দেহাতীত। পরলোকের জীবন হচ্ছে আধ্যাত্মিক জীবন যা হবে নশ্বর দেহের অনুপস্থিতিতে এক নূতন পৃথিবী।

রুকু- ২

৩৯। তাদের অনেকে হবে প্রথম যুগের ৫২৪১,

৪০। এবং অনেকে হবে পরবর্তী যুগের।

৫২৪১। 'ডান দিকের দল ' বেহেশতাবাসীরা হবেন এক বিশাল দল যার মাঝে পৃথিবীর সকল, যুগের পূণ্যাত্মা লোকেরাই থাকবেন। দেখুন [ ৫৬ : ১৩ ] আয়াত। এটি পরমকরুণাময়ের অশেষ করুণা।

৪১। বাঁ হাতের আমল নামার দল, - কি ঘটবে বাঁ হাতের দলের ?

৪২। [ তারা থাকবে ] প্রচন্ড আগুনের ঝাপটার মধ্যে ৫২৪২, এবং ফুটন্ত পানির মধ্যে,

৫২৪২। নিম্নোক্ত আয়াতগুলির মাধ্যমে দোযখবাসীদের দুঃখ ও যন্ত্রণার নিমর্ম চিত্র আঁকা হয়েছে। এ ভাবেই বেহেশতের সুখ -শান্তির সাথে দোযখের দুঃখ যন্ত্রণার তুলনা করা হয়েছে। অত্যুচ্চ বায়ু উত্তপ্ত পানি, কৃষ্ণবর্ণের ধূম্র ইত্যাদির বিপরীতে তুলনা করা হয়েছে কন্টকহীন কূল বৃক্ষ, ফুল ও ফলে সুশোভিত বৃক্ষ ইত্যাদি যা বর্ণনা করা হয়েছে আয়াত [ ২৮-২৯ ] এর মাধ্যমে। এই তুলনা মূলক উভয় বর্ণনাই হচ্ছে রূপক বর্ণনা যার মাধ্যমে বেহেশত ও দোযখের চিত্র উপলব্ধি করতে সাধারণ মানুষকে বলা হয়েছে। কারণ সেই নূতন পৃথিবীর প্রকৃত রূপ অনুধাবন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার।

৪৩। এবং কালো ধুঁয়ার ছায়াতে ৫২৪৩

৫২৪৩। "কৃষ্ণ বর্ণের ধূম্রের ছায়া" - এই বাক্যটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, দোযখের ছায়ার রূপও হবে ভিন্নতর। বেহেশতের সদা প্রবাহ মান স্রোতস্বীনির পার্শ্বে অবস্থিত বৃক্ষের ছায়ার বিপরীতে তুলনা করা হয়েছে কালো ধোঁয়ার ছায়ার।

৪৪। সেখানে আরামদায়ক ও সুখকর কিছু থাকবে না।

৪৫। ইতিপূর্বে ওরা তো অভ্যস্ত ছিলো সম্পদে [ ও বিলাসিতায় ], ৫২৪৪

৪৬। এবং ঘোরতর পাপে ছিলো নাছোড়বান্দা ও একগুঁয়ে

৫২৪৪। দেখুন [ ৩৪ : ৩৪ ] আয়াত এবং [৪৩ : ২৩ ] আয়াত। আয়াত নং ৪৫ ও ৪৬ একসঙ্গে পড়তে হবে। দোযখবাসীদের বর্ণনায় বলা হয়েছে, পার্থিব জীবনে দোযখের অধিবাসীদের ছিলো অগাধ-অর্থ-সম্পদ যা তারা জনহিতকর কার্যে ব্যয় না করে নিজস্ব ভোগ বিলাস এবং লজ্জ্বাষ্কর পাপ কার্যে নিয়োজিত করে যে কারণে পরলোকের জীবনে তারা অপমানিত হচ্ছে।

৪৭। এবং তারা বলতো, " সে কি ! যখন আমরা মারা যাব এবং ধূলি ও অস্থিতে পরিণত হব ৫২৪৫ ; সত্যিই কি তখন আমাদের পুণরায় উত্থিত করা হবে ?

৪৮। " আমাদের এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের ?"

৫২৪৫। তারা পুনরুত্থান দিবসকে অবিশ্বাস করতো, এবং ব্যঙ্গ -বিদ্রূপ করতো। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে তারা বাস্তব সত্যের মুখোমুখি হবে।

৪৯। বল; " হ্যাঁ, পূর্ববর্তীদের ও পরবর্তীদের।

৫০। [ তাদের ] সকলকে অবশ্যই সমবেত করা হবে পূর্ব নির্ধারিত এক সুনির্দ্দিষ্ট দিনে মহামিলনের জন্য ৫২৪৬।

৫২৪৬। দেখুন [ ২ ৬ : ৩৮ ] আয়াত ও টিকা ৩১৫৯। "পূর্ব নির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট দিনে" এই বাক্যটি দ্বারা শেষ বিচারের দিনকে বোঝানো হয়েছে যে দিনের গাম্ভীর্য ও গুরুত্ব এই বাক্যটির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
৫১। " ওহে পাপীরা ! যারা [ সত্যকে ] মিথ্যা বলে জানতে, -

৫২। " তোমরা অবশ্যই যাক্কুম বৃক্ষের আস্বাদন গ্রহণ করবে ৫২৪৭।

৫২৪৭। যাক্কুম বৃক্ষ হচ্ছে অভিশপ্ত বৃক্ষ যার উল্লেখ আছে [ ১৭ : ৬০ ] আয়াতে ও টিকা ২২৫০। আরও দেখুন [ ৩৭: ৬২ ] ও টিকা ৪০৭২ ; এবং আয়াত [ ৪৪ : ৪৩ - ৪৬] ও টিকা ৪৭২২।

৫৩। " এবং উহা দ্বারা তোমরা তোমাদের উদর পূর্ণ করবে,

৫৪। "এবং উপরন্তু তোমরা ফুটন্ত পানি পান করবে;

৫৫। তীব্র ভাবে তৃষ্ণার্ত অসুস্থ উটের ন্যায় অবশ্যই তোমরা [ তা ] পান করবে ৫২৪৮।

৫২৪৮। পরলোকে ডানদিকের দলের আরাম-আয়েশের বর্ণনার বিপরীতে বামদিকের দলের দুঃখ দুর্দ্দশার চিত্রকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

৫৬। এরূপই হবে পরিশোধের দিনে তাদের আপ্যায়ন।

৫৭। আমিই তোমাদের সৃষ্টি করেছি ; তবে কেন তোমরা সত্যকে বিশ্বাস করছো না ? ৫২৪৯

৫২৪৯। পার্থিব জীবনের চাকচিক্য ও এর আকর্ষণে মানুষ পরলোকের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে; ভুলে যায় যে সেও জীব জগতের অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ন্যায় স্রষ্টার সৃষ্ট মানুষ বই আর কিছু নয়। অন্তর্দৃষ্টিহীন মানুষ মনে করে মানুষ সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় সেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে; কারণ বীর্যপাত ঘটে তারই শরীর থেকে। মানুষ যদি তার চিন্তার জগতকে সামান্য প্রসারিত করে তা হলেই বুঝতে পারবে যে এই বীর্য সৃষ্টি করতে সে অক্ষম। পরম করুণাময়ের তাঁর সৃষ্টিকে ধরে রাখার এক অপূর্ব কৌশল বই আর কিছু নয়। মানুষের এখানে কোনও কৃতিত্ব নাই। তবে কেন মানুষ প্রকৃত সত্যকে অনুধাবনের মাধ্যমে স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করে না এবং তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে না ?

৫৮। আচ্ছা তবে দেখ! যে বীর্য তোমরা পতন কর,-

৫৯। তোমরা কি তা সৃষ্টি কর না আমি তার স্রষ্টা ?

৬০। তোমাদের সকলের জন্য মৃত্যুর বিধান করেছি ৫২৫০। এবং [ এ ব্যাপারে ] আমাকে পরাভূত করা যাবে না,

৫২৫০। জন্ম ও মৃত্যুর মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌। পৃথিবীর সকল সৃষ্ট বস্তুর সৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহ্‌র দান, ঠিক সেরূপ মৃত্যুও হচ্ছে তাঁরই আইনের অধীনে হুকুম যা আমাদের সকলেরই শেষ পরিণতি, জন্ম, মৃত্যু ; সৃষ্টি ধ্বংস যা আমরা প্রত্যহ প্রত্যক্ষ করি তা যদি এক আল্লাহ্‌র সৃষ্টি হয়, তবে কেন মানুষ অনুধাবন করে না মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে, বিশ্বাস করে না পুনরুত্থানের ? সেদিন সৃষ্টি হবে এক নূতন পৃথিবী, যেখানে আত্মার অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটবে নূতন আঙ্গিকে। নশ্বর দেহের অশ্লীলতা, অরুচির দিক অন্তর্হিত হয়ে স্বর্গীয় অনুভবে আত্মা হবে ভাস্বর।

৬১। তোমাদের আকৃতির পরিবর্তন করতে এবং তোমাদের [পুনরায় ] সৃষ্টি করতে [ এমন আকৃতিতে ] যা তোমরা জান না। ৫২৫০-ক

৫২৫০-ক। এই আয়াতটির অনেক বাংলা অনুবাদে ও ইংরেজী অনুবাদে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজী অনুবাদ হচ্ছে;[ 56 : 61 ] From Changing your forms and creating you [ again ] in [ forms] that ye know not এবং সে ভাবেই বাংলা অনুবাদ বর্ণিত হয়েছে। দুটো অনুবাদেই এ কথার উল্লেখ আছে যে মানুষকে নূতন আকৃতিতে সৃষ্টি করা হবে পুনরুত্থানের দিনে। নশ্বর দেহ ত্যাগের মাধ্যমে অমর ও অবিনশ্বর আত্মা নূতন পৃথিবীতে নূতন আঙ্গিকে প্রবেশ লাভ করবে - তবে তার মাঝে পার্থিব জগতের সকল কর্মের অভিজ্ঞতা বিদ্যমান থাকবে।

৬২। তোমরা সৃষ্টির প্রথম আকৃতি সম্বন্ধে অবশ্যই জান তবে কেন তোমরা তাঁর বন্দনা কর না ?

৬৩। যে বীজ তোমরা বপন কর সে সম্বন্ধে চিন্তা করেছ কি ? ৫২৫১

৬৪। তোমরা কি তা অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি ?

৬৫। যদি আমি ইচ্ছা করতাম তবে তা পাউডারের ন্যায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে পারতাম,তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে।

৫২৫১। আল্লাহ্‌ আমাদের তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ভাবে আহ্বান করেছেন। মানুষের শারীরিক সৃষ্টিতত্বের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে ; এবং পরে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে প্রাকৃতিক সৃষ্টির প্রতি অর্থাৎ বিশ্ব প্রকৃতির সৃষ্টি রহস্যের [ যার অপর নাম বিজ্ঞান ] প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টার অকৃপণ জ্ঞানের ভান্ডার ; সৃষ্টি নৈপুন্য, সৃজনশীল ক্ষমতা বিদ্যমান - যার অনুভূতি মানুষের আত্মাকে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যে আপ্লুত করবে। এই [ ৫৬ : ৬২ ] আয়াতে "প্রথম সৃষ্টি" বাক্যটি দ্বারা বর্তমান পৃথিবী ও বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কারণ রোজ কেয়ামতে সারা বিশ্বব্রহ্মান্ড ও পৃথিবীকে এবং মানুষকে নূতন ভাবে নূতন আঙ্গিকে সৃষ্টি করা হবে। আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে,

১) তাঁর মঙ্গলময় ও কল্যাণকর ভূমিকার প্রতি ও [৫৬ : ৫৭]

২) সন্তান তৈরীতে আমাদের ভূমিকা ও বিশ্ব প্রকৃতিতে আমরা যা উৎপাদন করি ও নিয়ন্ত্রণ করি তাঁর দ্বারা।
[৫৬ : ৫৮-৭৩] এখানে তিনটি উদাহরণ দান করা হয়েছে।

১) যে বীজ আমরা মাটিতে বপন করি সেই বীজের অঙ্কুরোদ্গম থেকে শষ্য ক্ষেত বা মহীরূহতে পরিণত হওয়া সবই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি নৈপুন্যের স্বাক্ষর।

২) জীবন রক্ষাকারী পানি - যা আমরা পান করে থাকি। প্রকৃতিতে পানির সরবরাহ ব্যবস্থা, আল্লাহ্‌র সৃষ্টিতত্বের এক অপূর্ব কৌশল। যারা বিজ্ঞান পড়েছেন তারা জানেন, "পানি চক্রের " মাধ্যমে কি অপূর্ব নিয়ন্ত্রণে সারা বিশ্ব ভূবনে পরিষ্কার পানি সরবরাহ করা হয়।

৩) আগুনের প্রতি লক্ষ্য করতে বলা হয়েছে ; যে আগুন পানির মতই জীবন রক্ষাকারী পদার্থ ;যা আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার স্বাক্ষর দান করে।

এই তিনটি উদাহরণের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মানুষের পৃথিবীতে জীবন রক্ষা ও ধারণ করার জন্য যে তিনটি বস্তু সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ তাকেই এখানে উত্থাপন করা হয়েছে।

৬৬। [ বলবে : ] " আমরা অবশ্যই [ শুধোশুধি ] ঋণগ্রস্থ হয়েছি ; ৫২৫২

৬৭। " নিশ্চয়ই আমরা বঞ্চিত হয়ে পড়েছি [ আমাদের পরিশ্রমের ফসল থেকে ]।"

৫২৫২। খাদ্যের জন্য মানুষ, প্রাণী সকলেই উদ্ভিদ জগতের উপরে নির্ভরশীল। কৃষক জমিকে কর্ষণ করে, শষ্য বপন করে, পানি সেচ করে, আগাছা পরিষ্কার করে - তার আশা থাকে সময়ে সে উপযুক্ত পরিমাণে খাদ্য শষ্য লাভ করবে। কৃষকের এই পরিশ্রম ফসল উৎপাদনের পূর্বশর্ত সন্দেহ নাই, কিন্তু গভীর ভাবে চিন্তা করলে উপলব্ধি করা যায় যে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ও বীজের মাঝে ডি, এন, এর মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট ফসলের আগমন বার্তা ঘোষণা স্রষ্টার জ্ঞান ও সৃষ্টি নৈপুন্যের প্রকাশ। ধানের বীজ ধান, পাটের বীজ পাটই উৎপন্ন করবে - এতো আল্লাহ্‌রই জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই স্বাক্ষর।

৬৮। তোমরা যে পানি পান কর সে সম্বন্ধে কি [কখনও ] চিন্তা করেছ ?

৬৯। তোমরা কি তা [ বৃষ্টিরূপে ] মেঘ থেকে পতিত কর না আমি করি ?

৭০। যদি আমি ইচ্ছা করতাম তবে আমি তা লবণাক্ত ও বিস্বাদ করতে পারতাম ৫২৫৩ ; তারপরেও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর না ?

৫২৫৩। পৃথিবীর বিশাল পানির ভান্ডারের অধিকাংশ লবনাক্ত যা সমুদ্রের পানি যা পানের ও ব্যবহারের অযোগ্য। সুপেয় ও মিষ্টি পানির ভান্ডার স্থলভাগে বিরাজ করে। পানির এই দুই স্রোতধারা পাশাপাশি অবস্থান করে তবুও পরস্পর মিশে যায় না। পৃথিবীর স্থলভাগের পানি সরবরাহ আল্লাহ্‌ এক বিশেষ কৌশলে করে থাকেন, বিজ্ঞান যার নাম দিয়েছে " পানি চক্র "। স্থলভাগের মিষ্টি সুপেয় পানি নদীবাহিত হয়ে স্থল ভাগকে সিক্ত করে সমুদ্রে পতিত হয়ে লবনাক্ত হয়ে যায়, আবার সমুদ্রের লবনাক্ত পানি বায়ু শূন্য বাষ্প বা মিষ্টি পানি রূপে বাস্প হয়ে মেঘ আকারে স্থলভাগে প্রবেশ করে, বৃষ্টি আকারে স্থলভাগে ঝরে পড়ে এবং শুষ্ক খাল, বিল, পুকুর, নদী, প্রস্রবণকে সঞ্জিবীত করে, ভরিয়ে তোলে। দেখুন [ ২৫ : ৪৩ ] আয়াতের টিকা ৩১১১ - ২ এবং [৫৫ : ১৯ ] আয়াতের টিকা ৫১৮৫।

৭১। চিন্তা করে দেখেছ কি তোমরা যে আগুন জ্বালাও, সে সম্বন্ধে ?

৭২। তোমরা কি আগুনে দাহ্য গাছকে সৃষ্টি করেছ, না আমি তা উৎপন্ন করেছি ? ৫২৫৪

৫২৫৪। আগুনের সাথে বৃক্ষের অঙ্গাগী সম্পর্ক বিদ্যমান। সভ্যতার প্রথম সূচনা ঘটে শুষ্ক কাঠে ঘর্ষনের দ্বারা অগ্নির প্রজ্জ্বলন দ্বারা। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের জ্বালানী বিদ্যমান। তবে সাধারণ ভাবে দৈনন্দিক জীবনে আমরা আগুন দ্বারা কাঠকেই জ্বালানী হিসেবে কল্পনা করে থাকি। এমন কি পেট্রোল, কয়লা ইত্যাদি জ্বালানীরও সৃষ্টি হয়েছে বৃক্ষ থেকে। প্রাগ্‌ঐতিহাসিক যুগে পৃথিবীর ঘন উদ্ভিদ জগত ভূমিকম্পে মাটির অভ্যন্তরে তলিয়ে যায়। সেখানে মাটির প্রচন্ড তাপে ও চাপে এবং অক্সিজেনের অভাবে, তেল, গ্যাস ও কয়লাতে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে - বহু বছরের পরিক্রমায়। সবুজ গাছ থেকে অগ্নি উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে [ ৩৬: ৮০ ] ও টিকা নং ৪০২৬।

৭৩। [ আমার হস্তশিল্পের ] এটা এক স্মরণীয় নিদর্শন ৫২৫৫ এবং মরুভূমির অধিবাসীদের জন্য স্বস্তি ও সুখ স্বচ্ছন্দ্য ৫২৫৬।

৫২৫৫। প্রকৃতিতে 'আগুন ' হচ্ছে আল্লাহ্‌র সৃষ্টি নৈপুন্যের উপযুক্ত প্রতীক। আগুনের আবিষ্কার হচ্ছে সভ্যতার প্রথম সূচনা লগ্ন। সে ভাবে আগুনকে সভ্যতার প্রতীক চিহ্ন হিসেবে কল্পনা করা হয়। পার্থিব জীবনে আগুন হচ্ছে আরাম -আয়েশ এবং সুযোগ সুবিধার প্রতীক। আধ্যাত্মিক জীবনে পূণ্যাত্মাদের আধ্যাত্মিক আলোর প্রতীক এবং পাপীদের জন্য ধ্বংস ও শাস্তির প্রতীক বা দোযখের প্রতীক।

একই ভাবে 'বীজের অঙ্কুরোদ্গমকেও ' প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বীজকে বিদীর্ণ করে বীজের অন্ধকার থেকে ধরার আলোতে চারাগাছের যেরূপ আগমন ঘটে, আল্লাহ্‌র বাণীও তদ্রূপ অন্ধকারচ্ছন্ন আত্মার মাঝে আলোর বন্যার সৃষ্টি করে। দেখুন [ ৪৮ : ২৯ ] ও টিকা ৪৯১৭ ঠিক সেই একই রূপ ভাবে বৃষ্টির পানি ও নদীর পানি, যা পৃথিবীর জীবন রক্ষা করে, এদের উত্থাপন করা হয়েছে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে। দেখুন [ ১৮ : ৬০ ] আয়াত ও টিকা ২৪০৪ -৫।

৫২৫৬। দেখুন [ ২০ : ১০ ] আয়াত ও টিকা ২৫৪১ যেখানে হযরত মুসা মরুভুমির মাঝে যে অগ্নির সাক্ষাৎ লাভ করেন তার গুপ্ত রহস্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সাধারণ ভাবে দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমির মাঝে রাতের আঁধারে আলোর উপস্থিতি নির্দ্দেশ করে আগুন তথা মানুষের উপস্থিতি। পথভ্রান্ত, দিকভ্রান্ত পথিক তার অনুসরণ করে মানুষের বাসস্থানের সন্ধান লাভ করে প্রাণে রক্ষা পায় ও আরাম আয়েশ লাভ করে। এ ভাবেই আগুন বা আলো বা আলোর সংকেত পথভ্রান্ত পথিকের জীবন রক্ষা করে। বর্তমান যুগে নাবিকদের জন্য সমুদ্রের লাইট হাউজ, এবং এরোড্রামের বাতির সংকেত পাইলটদের জন্য ঠিক ঐ একই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়।

আগুন সম্বন্ধে রূপক বর্ণনা আছে [ ২ : ১৭- ১৮] আয়াতে ও টিকা নং ৩৮।

৭৪। অতএব, তুমি তোমার মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর ৫২৫৭।

৫২৫৭। আল্লাহ্‌র এই সব নিদর্শন প্রকৃতির মাঝে প্রত্যক্ষ দ্বারা এবং আধ্যাত্মিক জগতে তাদের প্রতীকধর্মী প্রয়োগ আত্মার মাঝে উপলব্ধির জন্য সকলকে আহ্বান করা হয়েছে। যদি মানুষ আল্লাহ্‌র মহিমাকে প্রকৃত পক্ষে অনুধাবন করতে চায়, তবে অবশ্যই আল্লাহ্‌র ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন করে আনুগত্য প্রকাশ করবে।

রুকু - ৩

৭৫। অধিকন্তু,আমি শপথ করছি অস্তগামী তারকারাজির, ৫২৫৮ -

৫২৫৮। "অস্তগামী তারকারাজির " - এই বাক্যটির গূঢ় অর্থ অত্যন্ত রহস্যপূর্ণ যা সম্পূর্ণ হৃদয়ঙ্গম করা বর্তমান বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ জ্ঞানকে একত্র করেও অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তিনটি ব্যাখ্যা এখানে প্রদান করা হলো :
১) দেখুন আয়াত [ ৫০ : ১ ] আয়াত ও টিকা ৫০৮৫। উজ্জ্বল নক্ষত্ররাজির অস্তাচল যাওয়াকে বিনয়ের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই অসীম, সর্বশক্তিমান,সর্বমঙ্গলময় আল্লাহ্‌র প্রতি নক্ষত্ররাজির বিনয়ে অবনত হওয়াকে অস্ত যাওয়ার প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে।

২) এই বাক্যটি দ্বারা রোজ কেয়ামতের দিনে সমস্ত নক্ষত্ররাজির ধ্বংসকে বোঝানো হয়েছে, যেদিন সকলের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

৩) পার্থিব সুন্দর ও উজ্জ্বল যে কোন বস্তুই যে কোন মূহুর্তে আমাদের দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যেতে পারে, যদিও তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় না। যেমন নক্ষত্র রাজি অস্ত চলে যায়।

৭৬। অবশ্যই ইহা এক মহা শপথ ৫২৫৯, যদি তোমরা জানতে, -

৫২৫৯। রাতের আকাশের নক্ষত্ররাজির সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে আবার রাত্রি শেষে তারা অন্তর্হিত হয়ে যায়। এই বিশাল নক্ষত্রজগত ও তার পরিক্রমা মানুষকে অসীম শক্তিশালী স্রষ্টার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অবশ্য তাদেরই স্মরণে আসবে যারা স্মরণ করতে চায়।

৭৭। ইহা নিশ্চয়ই মহা সম্মানীয় কুর-আন ৫২৬০

৫২৬০। আল্লাহ্‌র ক্ষমতা ও মাহাত্ম্য বিভিন্নভাবে বর্ণনা করার পরে এবারে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে কুর-আনের প্রতি। কোরাণ হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী যা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়। ১) 'Karim' বা ইহা মহা সম্মানীত। ২) 'Makrur' সুরক্ষিত কিতাব। অর্থাৎ এই কিতাবের পবিত্রতা সুরক্ষিত। [ ১৫ : ৯] আয়াত ও টিকা ১৯৪৪। ৩) যারা পূত পবিত্র তারা ব্যতীত আর কেহ স্পর্শ করবে না। এই পবিত্রতা হবে শারীরিক, মানসিক, চিন্তায়,নিয়ত বা উদ্দেশ্যে অর্থাৎ এক কথায় আত্মার পবিত্রতা। অর্থাৎ যখন মানুষ শারীরিক ও আত্মিক ভাবে পবিত্র থাকে শুধু তখনই মানুষ কুর-আনের বাণীর প্রকৃত অর্থ অনুধাবনে সক্ষম। ৪) এই কিতাব বিশ্ব জাহানের স্রষ্টার নিকট থেকে আগত। সুতারাং এর উপদেশ বিশ্বজনীন। সৃষ্টির সকলের জন্য প্রযোজ্য।

৭৮। যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে ৫২৬০-ক

৫২৬০-ক। সুরক্ষিত কিতাব দ্বারা লওহে মাহ্‌ফুজে বা সংরক্ষিত ফলক বুঝানো হয়েছে।

৭৯। যারা পূত-পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ স্পর্শ করবে না।

৮০। ইহা জগৎসমূহের প্রভুর নিকট থেকে [ প্রেরিত ] এক প্রত্যাদেশ।

৮১। তবুও কি তোমরা এই কুর-আনের বাণীকে অবহেলা করবে ? ৫২৬১

৫২৬১। উপরের আয়াতগুলির মাধ্যমে কোরাণের বিশ্বজনীন স্বীকৃতিকে ঘোষণা করা হয়েছে। যে গ্রন্থ মানুষের সমগ্র আধ্যাত্মিক জীবনকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে ও সুখ শান্তির পথে পরিচালিত করে লোকে কেন সে গ্রন্থ গ্রহণ করে না ? কেন তা তুচ্ছ বলে গণ্য করে ?

৮২। তোমরা কি একে মিথ্যা বলে ঘোষণা করাকেই তোমাদের জীবিকা বলে গ্রহণ করেছ ? ৫২৬২

৫২৬২। কুর-আনের বা আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশের সর্বাপেক্ষা জঘন্য শত্রু হচ্ছে কুর-আনের বাণী সম্বন্ধে মিথ্যারোপ করা। এই মিথ্যারোপকেই যারা অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নির্বাচন করে তারা কুর-আনের মূল বক্তব্যকে বিকৃত করে নিজেদের সুযোগ সুবিধা বা উপজীব্য করে নেয়। এরূপ ঘৃণ্য এবং দুর্নীতির আশ্রয়ের মাধ্যমে সে মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয় ও আত্মাকে কলুষিত করে।

৮৩। তবে কেন তোমরা [হস্তক্ষেপ ] কর না ৫২৬৩, যখন [মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির আত্মা ] তাঁর কণ্ঠে এসে উপস্থিত হয়, -

৫২৬৩। " তবে কেন তোমরা তা কর না।" এই বাক্যটির পুনরায় শুরু হয়েছে ৮৬ নং আয়াতে এবং শেষ হয়েছে ৮৭ নং আয়াতে।

৮৪। এবং তোমরা তখন [ অসহায়ভাবে ] তাকিয়ে থাক ৫২৬৪,-

৮৫। অথচ আমি তোমাদের চেয়েও তার [ মুমূর্ষ ব্যক্তির ] অধিক নিকটে থাকি, কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না,

৫২৬৪। মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির চারিপার্শ্বে তার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলে ঘিরে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্‌ সর্বসময়েই তাদের অপেক্ষা বহু নিকটে। আল্লাহ্‌ মানুষের জাগুলার শিরা থেকেও নিকটে অবস্থান করেন। দেখুন [ ৫০ : ১৬ ] আয়াত। আল্লাহ্‌র আর এক উপাধি হচ্ছে " সামীউল কারীম" বা সর্বদা সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী।

৮৬। যদি তোমরা কারও শাসনের অধীন না হও,তবে কেন তোমরা - ৫২৬৫

৫২৬৫। 'শাসনের অধীন ' দ্বারা বুঝানো হয়েছে ' আল্লাহ্‌র কর্তৃত্বাধীন না হও'। আয়াত নং ৮৩ তবে শব্দটি দ্বারা বাক্যের শুরু হয়েছিলো, তা এই আয়াতে [ ৮৬নং ] এসে পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে। মধ্যে আয়াত নং ৮৪ ও ৮৫ উপস্থাপন করা হয়েছে। দেখুন টিকা ৫২৬৩।

৮৭। আত্মাকে ফিরিয়ে আন না, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ৫২৬৬।

৫২৬৬। আয়াতগুলিকে সংক্ষেপে শব্দান্তরিত করলে নিম্নরূপ অর্থ প্রকাশ করে; " যদি তোমরা আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশে অবিশ্বাস কর, শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার কর, যদি দাবী কর তোমরা আল্লাহ্‌র কর্তৃত্বাধীন নও, তবে তোমরা কেন মৃত্যু পথযাত্রী লোকের প্রাণকে তার দেহের মাঝে পুণরায় ফিরিয়ে আনতে পার না ? তোমরা সমবেত ভাবে মৃত্যুপথযাত্রীকে ঘিরে থাক কিন্তু তার যন্ত্রণা লাঘব করার ক্ষমতা তোমাদের নাই। কিন্তু মনে রেখো তোমরা কেউই শেষ বিচার থেকে রক্ষা পাবে না। সেদিন প্রত্যেককে তাদের কর্মের হিসাব দিতে হবে। তোমাদের কর্মের দ্বারাই তোমাদের বিচার করা হবে।

৮৮। যদি সে আল্লাহ্‌র নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয় ৫২৬৭,

৫২৬৭। 'নৈকট্য প্রাপ্তদের ' জন্য দেখুন [ ৫৬: ১১ - ২৬] আয়াত।

৮৯। তাহলে তার জন্য রয়েছে বিশ্রাম,তৃপ্তি ৫২৬৮, এবং পরম আনন্দজনক বেহেশ্‌ত।

৫২৬৮। 'Raihan' - অর্থাৎ সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ যেমন বর্ণনা করা হয়েছে [ ৫৫ : ১২ ] আয়াতে। এই আয়াতে বর্ণনাটি প্রতীকধর্মী যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে পরিপূর্ণ প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি।
৯০। এবং সে যদি ডান হাতে [ আমলনামা প্রাপ্তদের ] একজন হয়, ৫২৬৯,

৫২৬৯। "ডানদিকের একজনের " জন্য দেখুন [ ৫৬: ২৭ - ৩৮ ] আয়াত।

৯১। তবে তার প্রতি ডান হাতের সঙ্গীদের পক্ষ থেকে থাকবে [ অভিবাদন ] " তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।" ৫২৭০

৫২৭০। উপরের আয়াতে [ ৫৬ : ২৬ ] আমাদের বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহ্‌র নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা তাদের সম্বোধন করা হবে 'সালাম' বা শান্তি শব্দটি দ্বারা। এখানে আমাদের বলা হয়েছে যে, ডানদিকের দলকেও এই শব্দটি দ্বারা সম্বোধন করা হবে। উভয় দলই বেহেশতের বাগানে পরিপূর্ণ প্রশান্তি ভোগ করবে। শুধু নৈকট্য প্রাপ্ত দলের সম্মান হবে অধিক।

৯২। যারা [ সত্যকে ] মিথ্যা বলে গ্রহণ করে ৫২৭১,যারা পাপ করে,

৫২৭১। "সত্য অস্বীকারকারী ও বিভ্রান্তদের " বর্ণনা আছে [ ৫৬ : ৫১ - ৫৫ ] আয়াতে।

৯৩। তাদের জন্য রয়েছে ফুটন্ত পানির আপ্যায়ন,

৯৪। এবং জাহান্নামের দহন।

৯৫। ইহা তো ধ্রুব সত্য ৫২৭২

৫২৭২। পরলোকের জীবন তো ধ্রুব সত্য। আত্মার অমরত্ব ও পরলোকে ইহলোকের কর্মের হিসাব প্রদান হচ্ছে বিশ্বাস বা ঈমানের মূল ভিত্তি। এই "বিশ্বাস" ব্যতীত পার্থিব জীবনে যে, অন্যায় ও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় তা সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।

৯৬। অতএব তুমি তোমার মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর ৫২৭৩।

৫২৭৩। দেখুন উপরের আয়াত [ ৫৬ : ৭৪ ]। যেখানে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও মাহাত্ম্য বর্ণনা শেষে এই আয়াতটি ছিলো উপসংহার। এখানে সেই একই সমাপ্তি টানা হয়েছে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশের বর্ণনা শেষে।