Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ০ জন
আজকের পাঠক ৭ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩৩১২৮২ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৬৬৭০ বার
+ - R Print

সূরা হাদীদ


সূরা হাদীদ বা লৌহ - ৫৭

২৯ আয়াত, ৪ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা : এ পর্যন্ত আমরা কোরাণের দশ ভাগের নয়ভাগ শেষ করেছি। কোরাণের সূরাগুলির ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, তাদের বিশৃঙ্খল ভাবে সাজানো হয় নাই। তাদের অবতীর্ণ হওয়ার সময়ের ক্রমপঞ্জি অনুযায়ী না সাজিয়ে বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সাজানো যুক্তিসঙ্গত হয়েছে। এ পর্যন্ত নূতন উম্মতের সৃষ্টি এবং তাদের আধ্যাত্মিক বিকাশের বিধান সমূহের বিবরণ বর্ণনা করা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট এক দশমাংশের বিবরণকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে দশটি সূরা এগুলি হচ্ছে সূরা নং ৫৭ নং থেকে ৬৬ পর্যন্ত। এই সূরাগুলি মদিনাতে অবতীর্ণ হয় এবং প্রত্যেকটি সূরাতে মুসলিম উম্মার সামাজিক জীবনের বিশেষ বিশেষ বিষয়ের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে সূরা নং ৬৭ থেকে সূরা নং ১১৪ পর্যন্ত যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গীতধর্মী। অর্থাৎ গানের ন্যায় ছোট্ট কবিতা। এগুলি প্রতিটিতেই আধ্যাত্মিক জীবনের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যার ভাষার সৌন্দর্য অতুলনীয়, যা অতীন্দ্রিয় সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।

বর্তমান সূরাটির বিষয়বস্তু হচ্ছে আধ্যাত্মিক জগতে - বিনয়ের বিপরীতে আত্মম্ভরিতা ও একগুঁয়ে অহংকারের অবস্থান। সাবধান করা হয়েছে যে, সংসার বিমুখতা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা নয়। মদিনাতে অবতীর্ণ এই সূরাটি সম্ভবতঃ মক্কা বিজয়ের পরে অবতীর্ণ হয় ৮ম হিজরীতে।

সার সংক্ষেপ : আল্লাহ্‌র ক্ষমতা ও জ্ঞান সর্ব কিছুকে পরিবৃত্ত করে রেখেছে। হৃদয়ের সন্দেহ ভয়, উদ্যমহীনতা ত্যাগ করে বিনয়, দান এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। পৃথিবীর কর্মজগত থেকে অবসর নেয়ার মধ্যে কোন আত্মিক মুক্তি নাই। [ ৫৭ : ১- ২৯ ]।

সূরা হাদীদ বা লৌহ - ৫৭

২৯ আয়াত, ৪ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


১। আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সকলেই আল্লাহ্‌র প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করে ৫২৭৫। নিশ্চয়ই তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

৫২৭৪। হাদীদ বা লৌহ। লোহা হচ্ছে মজবুত শক্ত ও স্থায়ীত্বের প্রতীক। লোহার প্রকৃত গুণাবলী ও উৎকর্ষতা এখানেই নিহিত। এই সূরার মূল বিষয়বস্তুকে এরই পটভূমিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রকৃত বিনয়, একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততা এবং দানের পটভূমিতে যার বিপরীত পটভূমি হচ্ছে সন্ন্যাস জীবন ও কৃপণতা। দেখুন নীচের আয়াত [ ৫৭ : ২৫ ]।

৫২৭৫। পূর্বের সূরার [ ৫৬: ৯৬ ] আয়াতের সাথে এই আয়াতকে সংযুক্ত করলে সমগ্র আয়াতটির গূঢ় অর্থ অনুধাবন করা যায়।

২। আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব তাঁরই অধীনে। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সকল কিছুর উপরে তিনি ক্ষমতাশালী।

৩। তিনিই আদি এবং তিনিই অন্ত। তিনি প্রকাশ্য এবং তিনিই গুপ্ত ৫২৭৬। সকল কিছুর পূর্ণ জ্ঞান তিনি রাখেন।

৫২৭৬। 'Batin' - এই শব্দটির ভাবধারা হচ্ছে "গুপ্ত " অর্থাৎ যা কিছু প্রকাশ্য তার বিপরীত। আল্লাহ্‌র নিদর্শন সর্বত্র বিদ্যমান। আমাদের সর্ব অবয়ব ভিতর ও বাহিরে সর্বত্র তাঁর নিদর্শন বিদ্যমান। সকল ভালো জিনিষের অভ্যন্তরে তাঁরই স্বাক্ষর নিহিত। এই আয়াতে আল্লাহ্‌র গুণাবলীকে জোড়ায় জোড়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। "প্রথম এবং শেষ " "ব্যক্ত এবং অব্যক্ত'' ; " ক্ষমতা এবং জ্ঞান" ; জীবন ও মৃত্যুর মালিক"; ইত্যাদি শব্দগুলি আল্লাহ্‌র গুণাবলী প্রকাশের জন্য জোড়ায় জোড়ায় ব্যবহার দ্বারা মানুষের জীবনের ক্ষুদ্রতা, নশ্বরতাকে তুলে ধরা হয়েছে। এ ভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে যে "জীবন বিমুখতা ও নম্রতা বা বিনয় " অমিতব্যয়িতা ও দান এক নয়।

৪। তিনিই আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবী ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন ৫২৭৭। এবং অতঃপর তিনি [ কর্তৃত্বের ] আসনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ৫৭৭৮। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যা কিছু প্রবেশ করে ও যা কিছু তা থেকে বের হয়, এবং আকাশ থেকে যা কিছু নামে ও যা কিছু আকাশে উত্থিত হয়, তিনি [ সব ] জানেন। তোমরা যেখানেই থাক না কেন - তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন ৫২৭৯। তোমরা যা কর, আল্লাহ্‌ ভালোভাবেই তা দেখেন।

৫২৭৭। "ছয় দিবসে আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।" - এই বিবরণ অন্যান্য আরও সূরাতে বিদ্যমান। যেমন দেখুন [ ৪১ : ৯ - ১২ ] ও এগুলির টিকা এবং [ ৭: ৫৪ ] আয়াত ও টিকা ১০৩৯। আরও দেখুন নিম্ন লিখিত আয়াত সমূহ [ ১০: ৩ ] ; [ ১১ : ৭ ] ; [ ২৫ : ৫৯ ] [৩২ : ৪ ]।

৫২৭৮। দেখুন [ ১০ : ৩ ] আয়াত ও টিকা ১৩৮৬। বাইবেলের বর্ণনার ন্যায় এ কথা বিশ্বাস করার কোনও যৌক্তিকতা নাই যে, আল্লাহ্‌ ছয় দিনে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে বিশ্রামে চলে যান। এই আয়াতটিকে এ ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়; সর্ব সৃষ্টির বাহ্যিক আকৃতি সৃষ্টি হয়েছে ছয় দিনে। কিন্তু আল্লাহ্‌র সৃষ্টি ক্ষমতা এখানেই থেমে যায় নাই। বিবর্তনের মাধ্যমে তা ক্রমান্বয়ে বিকাশ লাভ করছে। সর্ব সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মাঝে তিনি বিদ্যমান, তাঁর সৃষ্টি প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়। এভাবেই তিনি সর্বদা তাঁর আরশে বিদ্যমান। " অর্থাৎ পৃথিবীর সকল কিছুই আল্লাহ্‌র প্রবর্তিত আইন দ্বারা পরিচালিত হয় ; তিনি সর্বজ্ঞ।

৫২৭৯। আল্লাহ্‌ সর্বত্র বিদ্যমান। তিনি সময় ও স্থানের উর্দ্ধে। তবুও তিনি সকল স্থানে ও সকল সময়ে বিরাজমান। মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলেও তাঁর উপস্থিতি সর্বদা বিদ্যমান। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা। এই অনুভব যদি মানুষ আত্মার মাঝে ধারণ করতে পারে তবে তার পক্ষে কোনও পাপ কাজ করা অসম্ভব।

৫। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব তাঁরই অধীনে। আল্লাহ্‌র-ই দিকে সমস্ত বিষয় প্রত্যানীত হবে। ৫২৮০।

৬। তিনিই রাত্রিকে দিবসের সাথে মিলিয়ে দেন এবং দিবসকে রাত্রির সাথে মিলিত করেন। [ সকল ] হৃদয়ের গোপন কথা তিনি পরিপূর্ণ অবগত।

৫২৮০। দেখুন আয়াত [ ৫৭ : ২ ] যেখানে "আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব তারই অধীনে" বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র সর্বময় কর্তৃত্বকে প্রকাশ করার জন্য। সেই একই বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে বিমূর্ত ধারণাকে প্রকাশ করার জন্য। বলা হয়েছে যা বিমূর্ত বা অদৃশ্য যেমন মানুষের চিন্তার জগত, তার উপরেও আল্লাহ্‌ কর্তৃত্বশালী। - দৃশ্য বা অদৃশ্য সব কিছুই শেষ পর্যন্ত তার নিকট ফিরে যাবে। আল্লাহ্‌র জ্ঞান সর্ব বিষয়ে অবগত। মানুষের নিঃসঙ্গ চিন্তাধারা আল্লাহ্‌র জ্ঞানের বাইরে না।

৭। তোমরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহ্‌ তোমাদের যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা থেকে [ দানে ] ব্যয় কর ৫২৮১। নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং [ দানে ] ব্যয় করে - তাদের জন্য আছে মহা পুরষ্কার।

৫২৮১। পৃথিবীতে ক্ষমতা, প্রভাব -প্রতিপত্তি, অর্থ-সম্পদ, মেধা -মননশক্তি; প্রতিভা ; সব কিছুই আল্লাহ্‌র দান। যে কেউ আল্লাহ্‌র এই সব দানের যে কোন নেয়ামত লাভ করে থাকে; তার জন্য সেই নেয়ামতের দায়িত্ব ভারও অর্পিত হয়ে থাকে। আল্লাহ্‌ এই সব নেয়ামত দান করেন কারণ, মানুষ যাতে এ সবের ব্যবহারের মাধ্যমে  আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভে ধন্য হতে পারে। সৎ কাজে মানুষ উৎসাহী ও প্রতিযোগীতামূলক হবে, আর তাই-ই হচ্ছে প্রকৃত দান করা বা ব্যয় করা। আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের জন্য "ব্যয়" বা দান করাই হচ্ছে বিশ্বাস বা ঈমান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম। এই আয়াতে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহ্‌র আইন অনুযায়ী, যারা সৎকাজে ব্যয় করে তাদের জন্য আছে মহাপুরষ্কার।

৮। আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান না আনার তোমাদের কি কারণ থাকতে পারে ৫২৮২, এবং রসুল তোমাদেরকে তোমাদের প্রভুর প্রতি ঈমান আনার জন্য আহ্বান করছেন। [ অথচ ] আল্লাহ্‌ তো পূর্বেই তোমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন ৫২৮৩, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

৫২৮২। " আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনার তোমাদের কি কারণ থাকতে পারে ? " এই ছোট্ট বাক্যটির অন্তর্নিহিত ভাবধারা সূদূর প্রসারী এবং গভীর যা শুধুমাত্র চিন্তার মাধ্যমে অনুধাবন করা যায়। শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই বাক্যটির মূল ভাবার্থ হচ্ছে : " পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে চর্তুদিকে আল্লাহ্‌র এত নিদর্শন ছড়ানো আছে যে, তা দেখে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করাই অস্বাভাবিক ইত্যাদি। " একই রূপ বাক্যের প্রয়োগ করা হয়েছে আয়াত ১০।

৫২৮৩। এই অংগীকার' কে দুভাবে প্রকাশ করা যায়।

১) যখন কেউ আল্লাহ্‌র একত্ব ও কর্তৃত্বকে স্বীকার করে নেয় তখন পরোক্ষভাবে তার উপরে আল্লাহ্‌র সাধারণ হুকুম সমূহ মানার অপ্রকাশ্য বাধ্যবাধকতা থাকে যেমন আল্লাহ্‌র সেবা করা ও মনুষত্বের সেবা করা ইত্যাদি। দেখুন অংগীকার পূর্ণ করার ব্যাপারে আয়াত [ ৫ : ১ ] ও টিকা ৬৮২।

২) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানেরা রাসুলের (সা) সাথে অংগীকারে আবদ্ধ হন যে তারা আল্লাহ্‌র সেবায় নিয়োজিত থাকবেন এবং রাসুলের (সা) প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবেন। যেমন : আকাবা উপত্যকার অংগীকার [ দেখুন ৫ : ৭ ] আয়াত ও টিকা ৭০৫ ] এবং হুদায়বিয়া প্রান্তরে রাসুলের (সা) প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করার অংগীকার দেখুন [ ৪৮ : ১০ ] আয়াত ও টিকা ৪৮৭৭। এই চুক্তিদ্বয় ইহুদীদের সিনাই পর্বতে হযরত মুসার সাথে সম্পাদিত চুক্তির সাথে তুলনীয়। দেখুন [ ২ : ৬৩ ] আয়াত ও টিকা নং ৭৮। " আল্লাহ্‌ তোমাদের নিকট হইতে অংগীকার গ্রহণ করিয়াছেন।" এই বাক্যটি দ্বারা উপরের দুইটি অংগীকারকেই বোঝানো হয়।

৯। তিনিই একমাত্র, যিনি তাঁর বান্দাকে সুস্পষ্ট নিদর্শন প্রেরণ করেছেন ৫২৮৪, এবং যেনো তিনি তোমাদের অন্ধকারের অতল থেকে আলোতে পরিচালিত করতে পারেন। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমাদের প্রতি অসীম দয়াময় এবং করুণাময়।

৫২৮৪। "বান্দার প্রতি " এর দ্বারা রাসুল (সা) কে বোঝানো হয়েছে। তাঁর নিকট যে সব নিদর্শন প্রেরণ করা হয় সেগুলি হলো ১) কোরাণের আয়াত সমূহ এবং ২) রাসুলের (সা) জীবন ও কাজ। রাসুলের (সা ) জীবনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাঁর পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্যকে ব্যক্ত করেছেন।

১০। আল্লাহ্‌র রাস্তায় খরচ না করার কি কারণ তোমাদের থাকতে পারে ? অথচ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী আল্লাহ্‌রই অধিকারভূক্ত ৫২৮৫। যারা [ মক্কা ] বিজয়ের পূর্বে [ মুক্ত হস্তে ] ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে, এবং পরবর্তী সময়ে [ মক্কা বিজয়ের পরে ] যারা তা করেছে উভয়ে সমান নয় ৫২৮৬। তারা মর্যদায় শ্রেষ্ঠ তাদের অপেক্ষা যারা পরবর্তী কালে [ মুক্ত হস্তে ] ব্যয় করে এবং যুদ্ধ করে। কিন্তু আল্লাহ্‌ সকলের জন্যই উত্তম [ পুরষ্কারের ] প্রতিশ্রুতি দিতেছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ সে সম্বন্ধে সম্যক অবগত।

৫২৮৫। "আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী আল্লাহ্‌রই অধিকারভুক্ত।" দেখুন [ ৩ : ১৮০ ] আয়াত ও টিকা ৪৮৫। আরও দেখুন [৬ : ১৬৫ ] আয়াতের টিকা ৯৮৮ এবং [ ১৫ : ২৩ ] আয়াতের টিকা ১৯৬৪।

৫২৮৬। মক্কা বিজয়ের পরে মুসলমানেরা কোরাইশদের সর্ব ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং ইসলাম ধীরে ধীরে আরবের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বের সীমানায় অগ্রসর হয় এবং পৃথিবীতে মুসলমান তথা ইসলামের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলমানদের ত্যাগ তিতিক্ষা প্রদর্শন করতে হয়েছে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবে মক্কা বিজয়ের পূর্বে মুসলমানদের সংগ্রাম ও ত্যাগ ছিলো অত্যন্ত কঠিন ও বেদনাদায়ক। হত্যা, অত্যাচার ও নির্যাতন ছিলো তাদের নিত্য সঙ্গী। এই হচ্ছে আয়াতের পটভূমি। তবে এর আবেদন সার্বজনীন। যুগ কাল অতিক্রান্ত। যারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করে তারা সকল সময়েই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু যারা সফলতা লাভের পূর্বে অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করেও আল্লাহ্‌র রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করে থাকে তারা অধিক সম্মানীয় আল্লাহ্‌র চোখে।

রুকু - ২

১১। কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে ৫২৮৭ ? তার জমার খাতায় আল্লাহ্‌ তো বহুগুণ করে বৃদ্ধি করে দেবেন। এবং এ ব্যতীত তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরষ্কার।

৫২৮৭। দেখুন আয়াত [ ২ : ২৪৫ ] ও টিকা ২৭৬।

১২। সেদিন তুমি মুমিন পুরুষ ও নারীদের দেখবে যে, কিভাবে তাদের [ ঈমানের ] আলো তাদের সামনে ও তাদের ডানদিকে ছুটে চলেছে ৫২৮৮। [ তাদের প্রতি সম্ভাষণ হবে ] " আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ, [বেহেশতের ] বাগান যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। হ্যাঁ সেখানে তারা বাস করবে। অবশ্যই তা হবে সর্বোচ্চ সাফল্য। " ৫২৮৯।

৫২৮৮। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের অবস্থা এই আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। শেষ বিচারের দিনে গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে পূণ্যাত্মাদের জন্য থাকবে আলোর পথ প্রদর্শক যেনো তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে খুব সহজেই সক্ষম হয়। এই আলো বা নূর হচ্ছে তাদের ঈমানের এবং সৎকর্মের সম্ভবতঃ দক্ষিণ পার্শ্বের আলো দ্বারা সৎ কাজের আলোকে বোঝানো হয়েছে। কারণ যারা আল্লাহ্‌র আর্শীবাদ ধন্য হবে শুধু তারাই তাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে লাভ করবেন [ ৬৯: ১৯ - ২৪ ]।।

৫২৮৯। "সর্বোচ্চ সাফল্য" অর্থাৎ সর্বোচ্চ শান্তি। মানব আত্মা পার্থিব জীবনে রীপুর তারণে সর্বদা ব্যতিব্যস্ত থাকে। কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, দ্বেষ, অহংকার, আত্মগরিমা,ইত্যাদি তার সর্ব সত্তাকে ঘিরে থাকে। পার্থিব চাওয়া পাওয়া তার জীবনকে করে রাখে আচ্ছন্ন যার ফলে আত্মার মাঝে শান্তি অন্তর্হিত হয়ে যায়। সেদিন পূণ্যাত্মাদের আত্মা সকল চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা থেকে মুক্তি লাভ করে অপার শান্তির স্বাদ গ্রহণ করবে। " ইহাই মহাসাফল্য " এই হচ্ছে বেহেশতের অনুভূতি যা পার্থিব জীবনের সুখ ও শান্তির প্রতীক চিত্র দ্বারা অঙ্কিত করা হয়।

১৩। সেদিন মোনাফেক পুরুষরা ও মোনাফেক নারীরা মোমেনদের বলবে, " আমাদের জন্য অপেক্ষা কর। তোমাদের আলো থেকে আমাদের আলো ধার করতে দাও ৫২৯০। " [ তাদের ] বলা হবে : " তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও। তারপরে [ যেখান থেকে পার ] আলোর সন্ধান কর।" অতঃপর উভয়ের মাঝামাঝি স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর, যাতে একটি দরজা থাকবে। যার অভ্যন্তরে বরাবর থাকবে রহমত এবং বর্হিভাগ বরাবর থাকবে শাস্তি। ৫২৯১

৫২৯০। যারা পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র প্রদর্শিত পথে জীবন অতিবাহিত করেন পরলোকে তাদের ঈমান থেকে আল্লাহ্‌র নূর প্রতিফলিত হবে। তাদের ঈমান ও সৎকাজ তাদের জন্য হবে সেই অন্ধকারময় দিনে পথের দিশারী আলো। এ আলো হবে একান্তই ব্যক্তিগত যা অন্যকে ধার দেয়া সম্ভব হবে না বা অন্যের কাছ থেকে ধার করাও সম্ভব হবে না। বাইবেলে [ Matt 25: 1 – 13 ] সুন্দর রূপকের মাধ্যমে বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে। বর্ণনাটি এরূপ "When the foolish ones had let their lamps go out for want of oil, they asked to borrow oil from the wise ones, but the wise ones answered and said ," No so ; ...... but go ye rather to them that will, and buy for yourselves".

৫২৯১। এই প্রাচীরকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় : যেমন এই প্রাচীর হবে পাপী ও পূণ্যাত্মাদের ব্যক্তিসত্ত্বার পার্থক্যের প্রাচীর বা ভালো কাজ ও মন্দ কাজের তালিকা ভালোকে মন্দ থেকে পার্থক্য করে দেবে। প্রাচীরের মাঝে দরজা থাকবে যার দ্বারা বুঝানো হয়োছ যে, ভালো ও মন্দের মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হবে না। ফলে মন্দরা সেদিন বুঝতে সক্ষম হবে যে তাদের শত অন্যায় সত্বেও কল্যাণ বা আল্লাহ্‌র করুণা ও দয়া তাদের ধরা ছোঁয়ার সীমানার সম্পূর্ণ বাইরে নয়। যে শাস্তি সেদিন তাদের ঘিরে থাকবে তা হবে তাদের পাপের পরিণামে, কারণ তারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহকে প্রত্যাখান করেছিলো।

১৪। তারা ঈমানদারদের ডেকে বলবে, " আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না ৫২৯২ ?'' [ অন্যরা ] উত্তর দেবে, " হ্যাঁ সত্যি ছিলে ! কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদের প্রলোভনে প্ররোচিত করেছ। তোমরা [আমাদের ধ্বংস ] কামনা করেছিলে ; তোমরা [ আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতিতে] সন্দেহ করেছিলে; এবং তোমাদের [অলীক ] বাসনাগুলি তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিলো, যতক্ষণ না আল্লাহ্‌র হুকুম [ মৃত্যু ] পাঠানো হলো। আর মহাপ্রতারক তোমাদের প্রতারিত করেছিলো আল্লাহ্‌ সম্পর্কে। ৫২৯৩।

৫২৯২। পরলোক শেষ বিচারের দিনে পাপীরা যখন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে এবং মোমেন বান্দাদের সুবিধাজনক অবস্থানে দেখতে পাবে, তখন তারা মোমেনদের আত্মীয়তা বা সহকর্মী বা বন্ধুত্বের সম্পর্কের দাবী উত্থাপন করবে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে পৃথিবীতে এসব মন্দ ও পাপী লোকেরা নিজেদের অর্থনৈতিক সাফল্যে মোমেন বান্দাদের অবজ্ঞা করতো এবং একগুঁয়ে অবাধ্যভাবে মন্দের বা পাপের পথ অনুসরণ করতো। পাপীদের এই দাবীর উত্তর হ্‌চ্ছে নিম্নরূপ :

১) তোমরা স্ব ইচ্ছায় প্রলোভনের পথকে বেছে নিয়েছ।

২) পৃথিবীতে যখন তোমাদের হাতে ক্ষমতার দন্ড ছিলো তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে যা কল্যাণ ও মঙ্গল তাকে ধ্বংস করেছ অথবা ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছ।

৩) তোমাদের আল্লাহ্‌র প্রেরিত দূতদের দ্বারা বারে বারে সাবধান করা হয়েছে ; কিন্তু তোমরা আল্লাহ্‌র অস্তিত্বেই বিশ্বাসী ছিলে না ; ফলে তোমরা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও করুনা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছ এবং আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচার ও পরলোকের অস্তিত্বে বিশ্বাস কর নাই।

৪)তোমরা তোমাদের লালসাকে চরিতার্থ করেছ এবং সত্যকে প্রত্যাখান করেছ।

৫) তোমাদের বারে বারে সুযোগ দান করা হয়েছে ; কিন্তু তোমরা তোমাদের বিকৃত ও উম্মাদ কাজ থেকে কখনও বিরত হও নাই ; যতক্ষণ না মৃত্যু তোমাদের তা থেকে বিরত করেছে। এখন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার সময়, এখন তোমাদের জন্য সব কিছুই দেরী হয়ে গেছে।

৫২৯৩। 'মহাপ্রতারক' অর্থাৎ শয়তান। শয়তান মানুষের মনে নানা প্রলোভনের সৃষ্টি করে তাকে আল্লাহ্‌র রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দান করে। যেমন : শয়তানের কুমন্ত্রণাতে মানুষ আল্লাহ্‌র দয়া, করুণা এবং ভালোবাসা অনুধাবনের ব্যর্থ হয়। সে মানুষকে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহকে প্রত্যাখান করতে অনুপ্রাণীত করে; সে কুমন্ত্রণা দান করে যে আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচারকে সে প্রতিহত করতে সক্ষম।

১৫। আজকের দিনে তোমাদের নিকট থেকে অথবা যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছিলো তাদের নিকট থেকে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না। ৫২৯৪ আগুন হবে তোমাদের বাসস্থান। ইহাই তোমাদের যোগ্য স্থান, এবং তা অতি মন্দ আশ্রয়স্থল।

৫২৯৪। ইসলামের মূল বক্তব্য হচ্ছে ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব। কারও পাপের বোঝা কেউ বহন করবে না। কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না। সোনা, রূপা, অথবা প্রিয় জিনিষ কোরবানী কিছুই সে সময়ে গ্রহণীয় হবে না। শেষ বিচারের দিনে কোনও পাপের প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করা হবে না। এই আয়াতে "তোমাদের " ও "যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছিলো " এই দুই সম্বোধন একই ব্যক্তির প্রতি প্রযোজ্য কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে।

১৬। বিশ্বাসীদের জন্য কি সে সময় আসে নাই ৫২৯৫ যে, তাদের হৃদয় আল্লাহ্‌র স্মরণে ও যে সত্য [ তাদের ] নিকট অবতীর্ণ হয়েছে তার স্মরণে ভক্তি বিগলিত হয় ? পূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিলো তাদের মত যেনো তারা না হয় ৫২৯৬। বহু কাল অতিক্রান্ত হওয়ার ফলে তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিলো। কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই বিদ্রোহী সীমালঙ্ঘনকারী।

৫২৯৫। মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে বিপদে আল্লাহ্‌র স্মরণে বিপদমুক্তি চাওয়া এবং সুখের দিনে ; বিজয়ের দিনে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া ও অহংকার ও গর্ব প্রকাশ করা। কিন্তু সফলতা ও প্রাচুর্যের সময়েই আল্লাহ্‌র স্মরণ ও তাঁর বাণী অনুসরণ করা অধিক কর্তব্য।

৫২৯৬। এই আয়াতে যাদের উল্লেখ করা হয়েছে তারা রাসুলের ( সা) সমসাময়িক ইহুদী ও খৃষ্টান সম্প্রদায়। এই উভয় সম্প্রদায়কে আল্লাহ্‌ কিতাব প্রদান করেছিলেন, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তারা তাদের কিতাবকে বিকৃত করে ফেলে ফলে তাদের চরিত্র থেকে বিনয় অন্তর্হিত হয় এবং তারা হয়ে পড়ে উদ্ধত একগুঁয়ে ও অবাধ্য। তাদের আত্মা সত্যকে গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং তাদের হৃদয় পাথরের ন্যায় কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে দয়া বা মায়ার স্থান থাকে না; ফলে তারা সত্য, ন্যায়কে অবদমিত করে এবং জীবনের পবিত্রতা হারিয়ে ফেলে। যদিও আয়াতটিতে সমসামায়িক ইহুদী ও খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, কিন্তু এই আয়াতের শিক্ষা বিশ্বজনীন - যুগ কাল অতিক্রান্ত। ঈমান ও সৎকর্ম ব্যতীত কোন জাতিই তাদের নামের খ্যাতি দ্বারা আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচার থেকে রেহাই পাবে না। শুধুমাত্র "মুসলমান" এই নামের দ্বারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভ করা যাবে না। অনুগ্রহ লাভের একটাই মাপকাঠি - আর তা হচ্ছে ঈমান ও সৎকাজ। এই মাপকাঠি ব্যতীত, কোন সম্প্রদায় ও জাতি নামের দ্বারা সেখানে কোন বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করবে না। আল্লাহ্‌র দুনিয়ায় কোন অন্ধ ভাগ্য বলে কিছু নাই বা মন্দভাগ্য বলেও কিছু নাই। সকলেই সকলের কর্মের ফল ভোগ করবে এই হচ্ছে আল্লাহ্‌র আইন বা বিধান।

১৭। তোমরা [ সকলে ] জান আল্লাহ্‌ মৃত ধরিত্রীকে জীবন দান করেন ৫২৯৭। ইতিমধ্যে আমি নিদর্শনগুলি সুস্পষ্টরূপে তোমাদের দেখিয়েছি, যেনো তোমরা প্রজ্ঞাসম্পন্ন হতে পার।

৫২৯৭। বৃষ্টির ধারাতে শুষ্ক মাটি সিক্ত হয়ে মৃত মাটির পুণর্জীবন ঘটে বৃক্ষ তরুলতা সজীবতা ধারণ করে। এই উপমার সাহায্যে মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনকে উপস্থাপন করা হয়েছে। আধ্যাত্মিক ভাবে মৃত আত্মা, অথবা সম্প্রদায় বা জাতি বা উম্মত, যেই হোক না কেন আল্লাহ্‌র রহমত ও করুণাতে সিক্ত হয়ে শুষ্ক মাটির ন্যায় সজিবতা ধারণ করে এবং পুনর্জীবন লাভ করে। পাপী জনের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নাই। আল্লাহ্‌র নিদর্শন বা হেদায়েত বা প্রেরিত সত্য মানুষের মৃত আধ্যাত্মিক জগতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম। তবে আল্লাহ্‌র হেদায়েত গ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করার ইচ্ছা এবং বিনয় যা অনুপস্থিত থাকে কঠিন হয়ে পড়া হৃদয়ে যার উল্লেখ পূর্বের আয়াতে করা হয়েছে।

১৮। পুরুষ ও মহিলা যারা দান করে এবং আল্লাহকে সুন্দর ঋণ দেয় ৫২৯৮ [ তাদের জমার খাতায় ] তা বহুগুণ বৃদ্ধি করা হবে এবং [ এ ব্যতীত ] তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরষ্কার।

৫২৯৮। দেখুন [ ৫৭ : ১১ ] আয়াত এবং [ ২ : ২৪৫ ] আয়াত ও টিকা ২৭৬।

১৯। এবং যারা আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলে বিশ্বাস স্থাপন করে, তাদের প্রভুর চোখে তারাই হচ্ছে [ সত্যের প্রতি আন্তরিক] সিদ্দিক ৫২৯৯ এবং সত্যের সাক্ষী [শহীদ] ৫৩০০। তাদের জন্য আছে পুরষ্কার এবং আলো ৫৩০১। কিন্তু যারা আল্লাহকে প্রত্যাখান করে এবং আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে তারা হচ্ছে জাহান্নামের আগুনের অধিবাসী।

৫২৯৯। দেখুন আয়াত [ ৪ : ৬৯ ] ও টিকা ৫৮৬ ; যেখানে আধ্যাত্মিক জগতের বাসিন্দাদের চার শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন :

১) রসুলেরা যারা সত্যকে শিক্ষা দেন
২) সত্যনিষ্ঠ যারা সত্যকে প্রাণের থেকেও ভালোবাসেন। এরা হলেন সিদ্দিক যেমন রাসুলের ( সা) সাহাবীরা।

৩) সাক্ষ্যদাতা বা শহীদ যারা সত্যের ঝাঞা উত্তোলন করেন এবং

৪ ) পূণ্যাত্মা যারা ভালো কাজ করেন। [৫৭ : ১৮ ]।

এই আয়াতে রসুল, সিদ্দিক ও শহীদের উল্লেখ আছে এবং আয়াত ১৮ নং উল্লেখ আছে পূণ্যাত্মাদের যারা দানশীল এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করেন।

৫৩০০। শহীদ হচ্ছেন তারাই যারা সত্যের ঝান্ডা নির্ভয়ে নির্ভিকভাবে উত্তোলন করে রাখেন। সকল বাধা বিপত্তি ও বিপর্যয়ের মাঝেও তারা সত্যের ঝান্ডাকে অবদমিত হতে দেন নাই। শহীদ শুধুমাত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমেই অর্জন করতে হবে এ কথা সত্য নয়। কথায় আছে, " অসির থেকে মসী বেশী শক্তিশালী।" সেভাবেই লেখনীর মাধ্যমে, বক্তৃতা বা উপদেশের মাধ্যমে, কর্মের মাধ্যমে আলোচনার মাধ্যমে সত্যের বাণী প্রচার ও প্রসার করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সকল বাধা বিপত্তিকে এসব প্রচারকরা উপেক্ষা করেন। এরা সকলেই শহীদ শ্রেণীভূক্ত।

৫৩০১। লক্ষ্য করুন সিদ্দিক ও শহীদের আধ্যাত্মিক জগতে সর্বোচ্চ সম্মান দান করা হয়েছে। রসুলদের পরেই তাদের স্থান। আয়াত ১৮তে উল্লেখিত দানশীল পুরুষ ও রমনীদের ন্যায় তাঁদেরও পুরষ্কৃত করা হবে, তবে তাদের জন্য আরও রয়েছে - তাঁরা নিজেরাই হবেন আলোর উৎস। যে আলোতে শত শত মোমেন ব্যক্তি তাদের পথের নিশানা খুঁজে পাবে। অর্থাৎ তাঁদের কর্ম, তাদের চিন্তা শুধু যে তাঁদেরই নিজস্ব আধ্যাত্মিক জগতকে আলোকিত করবে তাই-ই নয় সেই আলোকে আল্লাহ্‌র নেক বান্দারা পথের নির্দ্দেশনা খুঁজে পাবে।

রুকু - ৩

২০। তোমরা [ সকলে ] জেনে রাখ, এই পৃথিবীর জীবন হচ্ছে খেলাধূলা ও আনন্দ ফুর্তির ৫৩০২, আড়ম্বর, পারস্পরিক অহংকার [ প্রদর্শন ] এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান -সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগীতা ব্যতীত আর কিছু নয়। এর উপমা ৫৩০৩ হচ্ছে বৃষ্টি, এবং যার দ্বারা উৎপন্ন শষ্য সম্ভার যা কৃষকদিগের [ হৃদয়ে ] আনন্দ দান করে ৫৩০৪। শীঘ্রই তা শুকিয়ে তুমি তা পীতবর্ণ ধারণ করতে দেখবে, অবশেষে তা শুকিয়ে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। [ পাপীদের জন্য ] পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং [ পূণ্যাত্মাদের জন্য] রয়েছে আল্লাহ্‌র নিকট থেকে ক্ষমা এবং [ তাঁর ] সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন তো ব্যক্তিগত জিনিষপত্রের ছলনা ব্যতীত কিছুই নয়। ৫৩০৫

৫৩০২। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৬ : ৩২ ] এবং টিকা ৮৫৫। এই আয়াতে সাধারণ মানুষের পার্থিব জীবনের উদ্দেশ্যকে আরও বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পার্থিব জীবনে মানুষ "ক্রীড়া কৌতুক " অর্থাৎ আনন্দ, ফুর্তিতে মেতে থাকে এবং পরলোকের চিন্তা ও মৃত্যুর ভাবনা সে একবারও ভাবে না। শুধু তাই-ই নয়, জীবনের বিভিন্ন সফলতাকে সে আত্মগরিমা ও অহংকারের বস্তুতে পরিণত করে। ক্ষমতার দম্ভ, সম্পদের অহংকার, সন্তানদের সফলতার কৃতিত্ব, প্রভৃতি সৌন্দর্যের অহংবোধ ইত্যাদি জীবনের বিভিন্ন বৈচিত্র তারা পরস্পর পরস্পরের নিকট অহংকারের ও গর্বের বিষয় ও প্রদর্শনের বস্তুরূপে উপস্থাপন করতে ভালোবাসে। এর ফলে মানুষ পৃথিবীর জীবনের সমস্তটাই ব্যয় করে থাকে সম্পদের সংগ্রহে এবং সঞ্চয়ে ; ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি লাভের পিছনে। এ ব্যাপারে একজন অন্যজনকে প্রতিদ্বন্দীরূপে কল্পনা করে। মানুষের এই স্বাভাবিক প্রবণতা সর্বযুগেই বিদ্যমান ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

৫৩০৩। দেখুন আয়াত [ ৩৯ : ২১ ] ও টিকা ৪২৭৩ ; যেখানে অনুরূপ উপমার উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই একই উপমা এখানে উত্থাপন করা হয়েছে তবে এর মাধ্যমে যে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে তা পূর্বের আয়াতের উপদেশ থেকে সামান্য আলাদা। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ পাপী, পূণ্যাত্মা সকলের জন্য সমান যেমন আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বৃষ্টিধারা, তা সমভাবে বর্ষিত হয়। ধনীর প্রাসাদে ও গরীবের কুড়েতে ; পূণ্যাত্মা ও পাপীর শষ্যক্ষেত্রেও সমভাবে বর্ষণ করে থাকে। কিন্তু মানুষ কি  ভাবে আল্লাহ্‌র নেয়ামত বৃষ্টিকে গ্রহণ করে ? ভালো কৃষক তার জমিকে উর্বরতা ও ফসলের বৃদ্ধির কাজে বৃষ্টির পানিকে ব্যবহার করে ফলে প্রচুর শষ্য ঘরে তুলতে সক্ষম হয়। অপরপক্ষে যে কৃষক বৃষ্টির পানিতে আগাছা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে - আগাছার সবুজ তাকে যতই মোহিত করুক না কেন - শেষ পর্যন্ত তা শুকিয়ে খড়ে পরিণত হবে এবং কৃষকের ঘরে কোন শষ্যই আসবে না। এই উপমার সাহায্যে মানুষের চেতনাতে আঘাত হানা হয়েছে যে যারা পার্থিব জীবনের চাকচিক্য, সম্পদ,ক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষণস্থায়ী বস্তু নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা আধ্যাত্মিক জীবনের কোনও ফসলই ঘরে তুলতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ তাদের জীবনে ঐ আগাছার বৃদ্ধির ন্যায় শুধুমাত্র গর্ব, অহংকারের ন্যায় পাপেরই জন্ম দেবে। প্রকৃত মুত্তাকীর গুণাবলী অর্জনে সহায়ক হবে না। ঐ আগাছার ন্যায় এক সময়ে তা শুকিয়ে পীতবর্ণ খড়ে পরিণত হবে - কোনও শষ্য উৎপন্ন করবে না। অর্থাৎ পরলোকের জীবনের জন্য কোনও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি অর্জন করবে না।

৫৩০৪। 'Kuffar' - আবৃত করা। এখানে অনুবাদ করা হয়েছে কৃষক, যেহেতু সে মাটি দ্বারা বীজকে ঢেকে দেয়। কিন্তু সাধারণ ভাবে শব্দটি দ্বারা সত্যকে প্রত্যাখানকারী বোঝানো হয়। এখানে উপমার মাধ্যমে এরূপ লোককেই বোঝানো হয়েছে।

৫৩০৫। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৩ : ১৮৫ ] ও টিকা ৪৯২ ] এই পার্থিব জীবনে মানুষ যা পাওয়ার জন্য দিন রাত্রি সাধনা করে যা নিয়ে সে দম্ভ ও অহংকার করে তা শয়তানের প্রতারণা ব্যতীত আর কিছু নয়। কারণ এসব বস্তু ক্ষণস্থায়ী। এদের স্থায়ীত্ব শুধুমাত্র পার্থিব জীবনেই। প্রকৃত স্থায়ী সম্পদ যা পরলোকেও বহন করে নেয়া যাবে তা হচ্ছে আল্লাহ্‌ নির্দ্দেশিত সৎ জীবন যাপন থেকে উদ্ভুদ গুণাবলী যা আত্মাকে করে সমৃদ্ধ ও আলোকিত।

২১। তোমরা অগ্রগামী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই [ শান্তিময় ] বেহেশত্‌ লাভের চেষ্টায়, যা প্রশস্ত করা হয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সমান ৫৩০৬, যা প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসুলে বিশ্বাস করে। ইহা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে ইহা দান করেন ৫৩০৭। আল্লাহ্‌ মহা অনুগ্রহের প্রভু।


৫৩০৬। দেখুন আয়াত [ ৩ : ১৩৩ ] ও টিকা ৪৫২।

৫৩০৭। "যাকে ইচ্ছা তিনি ইহা দান করেন।" আল্লাহ্‌র করুণা ও অনুগ্রহ সম্বন্ধে প্রকৃত ধারণা করা সাধারণ লোকের পক্ষে অসম্ভব। মানুষের তা ধারণারও বাইরে। আল্লাহ্‌র পবিত্র ই‌চছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী তা মানুষকে দান করা হয়, আর আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ও পরিকল্পনা তো সত্য ও ন্যায়েরই প্রতীক এবং অপার করুণায় বিধৌত।তার ইচ্ছাই হচ্ছে তার বিধান ।

২২। পৃথিবীতে অথবা তোমাদের আত্মার ৫৩০৮ উপরে এমন কোন বিপর্যয় পতিত হয় না, যা সংঘটনের পূর্বে কিতাবে লিখিত হয় নাই ৫৩০৯ আল্লাহ্‌র জন্য ইহা অতি সহজ।

৫৩০৮। "পৃথিবীতে ও তোমাদের আত্মার" - অর্থাৎ চলমান পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনা যা মানব সম্প্রদায়ের চিন্তা ও চেতনাকে প্রভাবিত করে। এসব দুঘর্টনা চোখে দেখা যায়। কিন্তু আর এক ধরণের দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় আছে যা বাহ্যিক নয়, যা মানুষের আধ্যাত্মিক জগতে ঘটতে পারে কিন্তু লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকে যা একান্তই ব্যক্তিগত। সাধারণ মানুষের কাছে উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব ঘটে স্রষ্টার বিচক্ষণ পরিকল্পনা অনুযায়ী। যদিও মানুষকে স্রষ্টা সীমিত আকারে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন, কিন্তু মানুষ তা প্রয়োগ করেও মানব সভ্যতায় পৃথিবীর অভিযাত্রার গতিমুখ পরিবর্তন করতে সক্ষম নয়। তা নির্দ্দিষ্ট পরিণতি যা স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত তার পানে অগ্রসর হবেই। কারণ সংঘটিত করিবার বহু পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে।

৫৩০৯। 'Bara' অর্থাৎ সংঘটিত করা বা স্রষ্টার ক্ষমতার প্রকাশ লাভ। দেখুন [ ২ : ১১৭ ] আয়াত [ ৬ : ৯৪ ] আয়াতের টিকা ৯১৬ এবং [] ৬ : ৯৮ ] আয়াতের টিকা ৯২৩।

২৩। ইহা এ জন্য যে, যা হারিয়ে ফেলেছ তার জন্য যেনো হতাশ না হও এবং তোমাদের যে অনুগ্রহ দান করা হয়েছে তার জন্য উল্লাসিত না হও। কারণ আল্লাহ্‌ ভালোবাসেন না উদ্ধত অহংকারীকে - ৫৩১০।

৫৩১০। পার্থিব জীবনের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য সবই অলীক বিষয়। কবি Kipling এর ভাষায়, "Both inpostors just the same"। যারা মুত্তাকী, যারা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরশীল তারা তাদের কাঙ্খিত বস্তু না পেলে বা তা অন্যের অধিকারে দেখলেও হতাশ গ্রস্থ হন না, বা তাদের অধিকারে কাঙ্খিত বস্তু থাকলেও উল্লসিত বা গর্বিত হন না। মোমেন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে লোভ করে না বা গর্ব করে না। যদি সে কোনরূপ সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হয়, তবে সে তা যার প্রয়োজন তাদের সাথে সমভাবে বন্টন করে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উপভোগ করে। শুধু নিজে একা সব ভোগ করে না। কারণ সে জানে এসবই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে দেয়া উপহার। সুতারাং অহংকার করার কিছুই নাই কারণ এতে তার নিজস্ব কোনও কৃতিত্ব নাই। আল্লাহ্‌ অহংকারীকে ভালোবাসেন না।

২৪। যারা কৃপণতা করে, এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দ্দেশ দেয় ৫৩১১। কেউ যদি [আল্লাহ্‌র রাস্তা থেকে] ফিরে যায় ৫৩১২, অবশ্যই আল্লাহ্‌ সকল অভাবমুক্ত,সকল প্রশংসার যোগ্য।

৫৩১১। লোভী এবং অহংকারীর কোন স্থান নাই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টিতে। লোভী ব্যক্তিদের আচরণ সমাজের জন্য প্রতারণামূলক ও ক্ষতিকর। কারণ লোভীরা সাধারণতঃ হয় স্বার্থপর এবং অপরের কল্যাণের জন্য ব্যয়ে হয় অত্যন্ত কৃপণ। তাদের এই আচরণ শুধু যে তাদের ক্ষতি করে তাই-ই নয়, সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির উপরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তারা যে আল্লাহ্‌র নেয়ামতকে শুধু মাত্র তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য কুক্ষিগত করে রাখে তাই-ই নয়, তাদের অতীব ক্ষতিকর উদাহরণ অপর লোকের মাঝেও দানের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

৫৩১২। আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য দানকে এই আয়াতে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কেউ স্বার্থপরের মত আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ সমূহকে একা ভোগ করার মানসে কুক্ষিগত করে রাখে, এবং লোভী হয় তবে তার দ্বারা সে নিজেরই ক্ষতি করে থাকে। তাদের কৃপণতার দ্বারা আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা ব্যহত হয় না। কারণ আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত। আল্লাহ্‌ তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁর অন্য দাসকে নিযুক্ত করেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র। তিনি তাঁর সৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণে অকৃপণ।

২৫। ইতিপূর্বেই আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহসহ আমার রাসুলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে প্রেরণ করেছি কিতাব এবং [ ন্যায়-অন্যায়ের ] দাঁড়িপাল্লা ৫৩১৩, যেনো মানুষ ন্যায়ের প্রতি অবিচল থাকে ৫৩১৪। এবং আমি প্রেরণ করেছি ৫৩১৫ লৌহ যার মধ্যে নিহিত আছে যুদ্ধের শক্তিশালী [ উপকরণ ] এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ। ইহা এই জন্য যে আল্লাহ্‌ যেনো পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে না দেখেও ৫৩১৬ তাঁকে এবং তাঁর রসুলকে সাহায্য করে ৫৩১৭। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ শক্তিমান ও পরাক্রমশালী ৫৩১৮।

৫৩১৩। মানুষের জন্য আল্লাহ্‌র তিনটি অনুগ্রহের উল্লেখ এখানে করা হয়েছে। সংক্ষেপে তা হচ্ছে, কিতাব, ন্যায়নীতি এবং লৌহ। এই শব্দগুলির মাধ্যমে প্রতীকের সাহায্যে আল্লাহ্‌র নেয়ামত বা অনুগ্রহকে প্রকাশ করা হয়েছে। আল্লাহ্‌র এই তিনটি অনুগ্রহ সুস্থ সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি। এর যে কোনও একটি দুর্বল হলে সমাজের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। এরা পরস্পর পরস্পরের সম্পুরক। ১)" নিদর্শনসমূহসহ রসুলগণ " প্রেরণ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ্‌ প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মানুষকে হেদায়েত করেছেন মানুষকে ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখিয়েছেন মানুষকে নৈতিক মূল্যবোধ শিখিয়েছেন। কিতাব হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশ সমূহ যা ভালো কাজের আদেশ দান করে ও মন্দ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দান করে। ২) "ন্যায়নীতি" - যা যে কোনও সুস্থ সমাজের অপরিহার্য অঙ্গ। ন্যায়নীতি ও সুবিচারের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেকের অধিকারকে সংরক্ষিত করা হয়। যার যা প্রাপ্য সে তাই লাভ করতে সক্ষম কোনওরূপ প্রতিকূলতা ব্যতীত। ৩) 'লৌহ ' হচ্ছে ন্যায়নীতি প্রয়োগের জন্য বা সমাজে ন্যায়ের সুপ্রতিষ্ঠার জন্য যে অস্ত্রের প্রয়োজন তারই প্রতীক। আইন প্রণয়ন নয়, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগই হচ্ছে সমাজে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। আর এই প্রয়োগের জন্য চাই অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত সুশিক্ষিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ন্যায়নীতি বা ন্যায় বিচারের তুলাদন্ড দেখুন [ ৪২ : ১৭] ও টিকা ৪৫৫০।

৫৩১৪। 'Anzala' বা দিয়াছি। এর অর্থ আল্লাহ্‌ মানুষের জন্য কিছু কিছু জিনিষ দিয়ে থাকেন এবং সে সব জিনিষ উপলব্ধি করা এবং প্রয়োগ করার মত ক্ষমতা তাদের মধ্যে প্রকাশ করে থাকেন।

৫৩১৫। লৌহ এমন একটি ধাতু যাতে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ নিহিত। লোহার ব্যবহার বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। যুদ্ধ এবং শান্তি সর্ববস্থাতেই লোহার ব্যবহার সুবিদিত। সভ্যতার অগ্রযাত্রার পুরোধায় লৌহের স্থান। যুদ্ধের সমরাস্ত্র থেকে, সভ্য সমাজে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লৌহকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লোহার সাথে অন্যান্য ধাতু সামান্য পরিমাণ মিশ্রীত করে স্টীল নামক শঙ্কর ধাতু সৃষ্টি করা হয়। লৌহ এবং স্টীল বর্তমান সমাজে শক্তি, ক্ষমতা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ও ন্যায়নীতি প্রয়োগের প্রতীক স্বরূপ। পৃথিবীতে উন্নত জাতি সমূহের উন্নতির সহায়ক হচ্ছে লৌহ এবং স্টীলের বহু বিধ ব্যবহার এবং এ সব যন্ত্রপাতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিক্রয়।

৫৩১৬। 'Bil-gaibi' - ইংরেজীতে অনুবাদ হয়েছে 'Unseen' এবং বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, "প্রত্যক্ষ না করিয়াও " এই শব্দটির ভাবধারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে [ ৩৫ : ১৮ ] আয়াতের টিকা ৩৯০২। প্রকৃত মোমেন ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও রাসুলের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকবে। অর্থাৎ কিতাব, ন্যায় ও সত্য যা হচ্ছে আল্লাহ্‌র হুকুম এবং রাসুলের প্রতি আনুগত্যের প্রতীক হচ্ছে ন্যায়ের প্রয়োগের প্রতি আন্তরিক ও অনুগত থাকা। মোমেন বান্দার জন্য শুধুমাত্র খোদাভীতি-ই কাজ করবে যদিও তা এই পৃথিবীতে দৃশ্যমান নয়।

৫৩১৭। " আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলকে সাহায্য করার " অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্‌র রাস্তায় সাহায্য করা, বা আল্লাহ্‌র আইনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা। যে ভাবে রাসুল (সা) আল্লাহ্‌র আইনকে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। আল্লাহ্‌ মানুষকে সুযোগ দান করেন যেনো মানুষ সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের মাধ্যমে চরিত্রের দৃঢ়তা ও আল্লাহ্‌র নিকট আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে। এটা শুধু মানুষকে আনুগত্য প্রকাশের সুযোগ দান করা মাত্র। কারণ এর পরেই বর্ণনা করা হয়েছে যে আল্লাহ্‌র কারও সাহায্যের প্রয়োজন নাই। আল্লাহ্‌ একাই তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম। আল্লাহ্‌ শক্তিমান ও পরাক্রমশালী।
৫৩১৮। দেখুন আয়াত [ ২২ : ৪০ ] ও টিকা ২৮১৮।

রুকু - ৪

২৬। এবং আমি প্রেরণ করেছিলাম নূহ্‌ এবং ইব্রাহীমকে এবং তাদের [ বংশধরদের ] মাঝে নবুয়ত ও প্রত্যাদেশের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠিত করি। তাদের মাঝে অনেকে ছিলো সঠিক পথে ৫৩১৯ কিন্তু অধিকাংশই ছিলো বিদ্রোহী ও সীমালংঘনকারী।

৫৩১৯। "অধিকাংশই ছিলো বিদ্রোহী ও সীমালংঘনকারী " - অর্থাৎ তাদের বংশধরদের কথা এখানে বলা হয়েছে। তাদের নিকট যে কিতাব প্রেরণ করা হয়েছিলো,কালের পরিক্রমায় তা তারা বিকৃত করে ফেলে এবং আল্লাহ্‌র পথ পরিত্যাগ করে নিজস্ব মনগড়া পথের অনুসরণ করে এভাবেই তারা সীমালঙ্ঘনকারীরূপে পরিচিতি লাভ করে।

২৭। অতঃপর আমি তাদের পশ্চাতে অনুগামী করেছিলাম আমার রাসুলগণকে এবং তাদের অনুগামী করে প্রেরণ করেছিলাম মরিয়মের পুত্র ঈসাকে এবং তাঁকে দান করেছিলাম  ইঞ্জিল। এবং তাঁর অনুসারীদের হৃদয়ে দিয়েছিলাম সহানুভূতি ও দয়া ৫৩২০। কিন্তু তারা তাদের জন্য যে সন্ন্যাসবাদের উদ্ভাবন করেছিলো আমি তা নির্দ্দেশ দিই নাই ৫৩২১। [ আমি শুধু আদেশ দিয়েছিলাম ] আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা। অথচ ইহাও তারা যথাযথভাবে পালন করে নাই ৫৩২২। তথাপি তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী তাদের আমি তাদের [ প্রাপ্য ] পুরষ্কার দান করেছিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই বিদ্রোহী ও সীমালংঘনকারী ;-
৫৩২০। হযরত ঈসার অনুসারীদের উপরে আদেশ ছিলো দয়া ও করুণার। আদেশ ছিলো " তারা [ শত্রুরা ] যদি ডান গালে চড় মারে, তবে বাম গাল পেতে দাও।" [ Matt 5 : 39 ] এরূপ দর্শন হচ্ছে সন্ন্যাসবাদের অপরিপূর্ণ দর্শন। তারা এর দ্বারা দয়া, ক্ষমা, প্রদর্শন করেন। নিজ কষ্ট ভোগের মাধ্যমে সহানুভূতি আকর্ষন করা। হযরত ঈসার ধর্মাদর্শনকে এ ভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে।

৫৩২১। সন্ন্যাসবাদ যা পৃথিবীর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিজেকে দূরে নিক্ষিপ্ত করে তার দ্বারা সংসারে ভালোকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ্‌র রাজত্বে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সাহস, অন্যায়কে প্রতিরোধ করা, মন্দকে অবদমিত করা এবং এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ়তা প্রদর্শন, ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে শৃঙ্খলা এবং ন্যায় ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করা। এর জন্য সত্যের সংগ্রামীদের সমাজে বসবাস করতে হবে। মানুষের সাথে মানুষের মিশ্রণের ফলে সত্যের সংগ্রামীরা সত্যের ঝান্ডা উত্তোলন করে মানুষকে তার তলে আহ্বান করতে পারেন যে সুযোগ সন্ন্যাসবাদে নাই। আর এ আয়াতে আল্লাহ্‌ পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, সন্ন্যাসবাদ তিনি মানুষের জন্য মনোনীত করেন নাই। মানুষকে দ্বীন অর্জন করতে হবে 'দুনিয়ার' মাধ্যমে। দুনিয়া ব্যতীত দ্বীন আল্লাহ্‌র নিকট মূল্যহীন।

৫৩২২। আল্লাহ্‌ অবশ্যই দাবী করেন যে, মানুষ শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের আনন্দ ফুর্তিতে জীবনের সবটা সময় ব্যয় করবে না। অবশ্যই সে অর্থহীন আমোদ প্রমোদ ত্যাগ করে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবে। এ কথার অর্থ এই নয় যে, সেও শোকাহত দিন যাপন করবে। অথবা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু নিরানন্দ অবিরত প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁর সকল সময় অতিবাহিত করবে। আল্লাহ্‌র রাস্তায় কাজ করতে বলা হয়েছে সমাজে অবস্থান করে, সমাজের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করবে। পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমেই আল্লাহ্‌র সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। প্রকৃত পক্ষে এই সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে সন্ন্যাসবাদে। সমাজের বৃহত্তর ও মহত্তর কল্যাণের জন্য সংগ্রামকে সন্ন্যাসবাদ দ্বারা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলের (সা) জীবনে প্রতিটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার জন্য

২৮। হে মুমিনগণ ! ৫৩২৫, আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, এবং তিনি তোমাদের প্রতি দান করবেন দ্বিগুণ করুণা ৫৩২৬। তিনি তোমাদের জন্য আলো দেবেন ৫৩২৭, যার সাহায্যে তোমরা [ তোমাদের রাস্তায় সোজা ] হেটে যেতে পারবে ; এবং তিনি তোমাদের [অতীতকে] ক্ষমা করে দেবেন ৫৩২৮। কারন আল্লাহ্‌ বারে বারে ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।

৫৩২৫। এই মুমিনগণ কারা ? এরা হলেন তারাই যাদের উল্লেখ করা হয়েছে পূর্ববর্তী আয়াতে। এরা হলেন খৃষ্টানদের মধ্যে এবং অন্যান্য কিতাবধারীরা যাদের সমবেত ভাবে বিশ্বাসী বা মোমেন বলে সম্বোধন করা হয়েছে তারা। এরা তাদের মৌলিক বিশ্বাসকে বা ধর্মের মূল নির্যাসকে পাপমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

৫৩২৬। উপরের টিকাতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে খৃষ্টান ও অন্যান্য কিতাবধারী জাতিদের প্রতি লক্ষ্য করে। তাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ দ্বিগুণ করা হবে। একভাগ অতীতের জন্য যেহেতু তারা তাদের জীবনে ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখেছিলেন; এবং অন্য ভাগ ভবিষ্যতের জন্য। কিতাবধারী জাতিদের মধ্যে এসব পূণ্যাত্মা লোকেরা যখন ইসলামের মাঝে আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশের পরিপূর্ণতার সন্ধান লাভ করেন, তখন তারা সানন্দে ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাদের পূর্ববর্তী পূণ্যকর্মও স্বীকৃতি লাভ করবে এবং নূতন উম্মতেও তারা সমভাবে গ্রহণীয় হবেন। এই-ই হচেছ তাদের জন্য দ্বিবিধ অনুগ্রহ।

মন্তব্য : মুসলমান ভ্রাতা যারা ইসলামের প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন তারাও এরূপ অনুগ্রহে ধন্য।

৫৩২৭। যেহেতু আয়াতটি কিতাবধারীদের এবং বিশেষভাবে খৃষ্টানদের সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে, সে কারণে হযরত ঈসা বা খৃষ্টের শেষ বাণীটি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। yet a little while is the the light with you , walk while ye have the light , lest darkness come upon you .... While ye have the light , belive in light ,that ye may be the children of light . These things spoke Jesus , and departed, and died hide himself from them.” [ Jhon xii 35 – 36]

হযরত ঈসা বা খৃষ্টের প্রচারিত সত্য শীঘ্রই অবলুপ্ত হয়ে যায়। তাঁর গীর্জা সমূহ অজ্ঞতার অন্ধকারে ঢেকে যায়। এরপরে আবার নূতন সূর্যের উদয় ঘটে। ইসলামের আলো দুনিয়াকে আলেকিত করে - যা ছিলো পূর্ণাঙ্গ। এই আয়াতের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে। দেখুন আয়াত [ ৫৭ : ১২ ] ও টিকা ৫২৮৮।

৫৩২৮। পূর্ববর্তী ধর্মে থাকাকালীন অজ্ঞতা বা ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, কোনও পাপ যদি অতীতে তারা করে থাকেন তবে এই আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন যে, তা তিনি ক্ষমা করে দেবেন। যেহেতু তাঁরা ইসলামের আলোকে স্বীকৃত দান করে পূর্বের ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে।

২৯। ইহা এ জন্য যে, কিতাবী লোকেরা যেনো জানতে পারে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের উপরে তাদের কোন ক্ষমতা নাই ৫৩২৯। ইহা এ জন্য যে, অনুগ্রহ [ সম্পূর্ণ ] আল্লাহ্‌রই হাতে,তিনি যাকে খুশী তাকে দান করেন। আল্লাহ্‌ অসীম অনুগ্রহের মালিক।

৫৩২৯। কোন জাতি, বা সম্প্রদায় বা শ্রেণী বা জনগণ যেনো মনে না করেন যে, আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভের তারাই একমাত্র ইজারাদার। তাদেরই একমাত্র হক্‌ আছে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহকে বিতরণ করার বা সুপারিশ করার বা কেড়ে নেবার। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ দেশ - কাল, জাতি, বা সম্প্রদায় মুক্ত। তা হচ্ছে ঐ অসীম নীল আকাশের মতই উদার, অসীম ও মুক্ত। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বিতরণের মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌ নিজে। কোনও ধর্মযাজক, বা পুরোহিত বা খৃষ্টানদের পোপ, বা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি কাউকে আল্লাহ্‌ তার অনুগ্রহের নিয়ন্ত্রণভার দেন নাই। আল্লাহ্‌ তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা বিবেচনা করেন কে তার অনুগ্রহ লাভের যোগ্য। আল্লাহ্‌র বৃহত্তর ও মহত্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তার অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। তাঁর অনুগ্রহের কোন সীমা - পরিসীমা নাই।

কোর-আনে আল্লাহ্‌ বলেছেন, " তোমরাই সে শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য ; যারা সৎ কাজে আদেশ দেবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে।" মানব জাতির মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য, আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের প্রয়োজন। শুধুমাত্র নাম সর্বস্ব মুসলমান হলে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভের যোগ্যতা অর্জন করা যায় না। মনে রাখতে হবে চারিত্রিক গুণাবলী হচ্ছে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ লাভের পূর্বশর্ত - যা লাভ করা যায় পরিপূর্ণ রূপে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা বা বিধানের কাছে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে।