Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ২৫ জন
আজকের পাঠক ৫৭ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩৬৫৩৯৯ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬২৩০৬১ বার
+ - R Print

সূরা মুম্‌তাহিনা


সূরা মুম্‌তাহিনা বা যে মহিলাকে পরীক্ষা করা হবে - ৬০

১৩ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


ভূমিকা : মদিনায় অবতীর্ণ সূরা সমূহের যে দশটি সূরার শ্রেণীর উল্লেখ করা হয়েছে এটি হচ্ছে সেই শ্রেণীর চতুর্থ সূরা। এই শ্রেণীর প্রতিটি সূরা মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবন ব্যবস্থার বিশেষ বিশেষ দিকগুলি আলোচনা করেছে।

এই সূরাতে যে বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছে তা হচ্ছে, অবিশ্বাসী বা কাফেরদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক সম্ভব কি ? এ ব্যাপারে অবিশ্বাসীদের দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। একদল যারা তোমার ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য তোমাকে নির্যাতন করতে চায় এবং ধ্বংস করতে চায় ; অপরদল যাদের এরূপ কোনও অন্ধ বিদ্বেষ নাই। শেষোক্ত দলের জন্য আল্লাহ্‌র ক্ষমা ও করুণা লাভের সম্ভাবনা আছে। নারী ও অপর ধর্মে বিশ্বাসীদের বৈবাহিক সম্পর্কের উপরে আলোকপাত করা হয়েছে।

এই সূরার সময়কাল সম্বন্ধে বলা হয় যে, তা ছিলো হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি ভঙ্গের পর। দেখুন ৪৮ নং সূরার ভূমিকা। সম্ভবতঃ তা ছিলো ৮ম হিজরীতে - মক্কা বিজয়ের কিছু পুর্বে।

সার সংক্ষেপ : ধর্মের শত্রুরা তোমাকে ও তোমার বিশ্বাসকে ধ্বংস করতে উদগ্রীব। এরা তোমার ভালোবাসার পাওয়ার যোগ্য নয়। ইব্রাহীমের উদাহরণ অনুসরণ কর। যে সব অবিশ্বাসীরা তোমার প্রতি বিদ্বেষ ও আক্রোশ পোষণ না করে, তাদের সহানুভূতি ও ন্যায়ের সাথে ব্যবহার করবে। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক। [ ৬০ : ১ - ১৩ ]।

সূরা মুম্‌তাহিনা বা যে মহিলাকে পরীক্ষা করা হবে - ৬০

১৩ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


১। হে বিশ্বাসীগণ ! তোমাদের এবং আমার শত্রুদের, বন্ধু [ অথবা রক্ষাকর্তা ] হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমরা তাদের প্রতি [ তোমাদের ] ভালোবাসা নিবেদন কর ৫৪০৯ অথচ, তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তারা তা প্রত্যাখান করে, রসুলকে এবং তোমাদের [ মাতৃভূমি থেকে ] বহিষ্কার করেছে তার কারণ [ শুধুমাত্র ] এই যে, তোমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস স্থাপন কর ৫৪১০। যদি তোমরা আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে এবং আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বের হও, [ তবে তাদের বন্ধু হিসেবে নিও না ]। তোমরা তাদের সাথে গোপনে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব কর। তোমরা যা গোপন কর আর যা প্রকাশ কর, আমি তা খুব ভালোভাবেই জানি। এবং তোমাদের মধ্যে যে কেউ তা করে, সে তো সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়।

৫৪০৯। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট ছিলো, নিম্নরূপ : মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি চলাকালে হাবিব ইব্‌ন বালতা'আ নামে এক মোহাজের এই অভিযানের সংবাদ এক চিঠিতে গোপনে মক্কাবাসীদের জানিয়েছিলেন। তাঁর পরিবার পরিজন ছিলো মক্কায়। তিনি তার পরিবার পরিজনের নিরাপত্তার সম্পর্কে শংকিত হয়ে, তাদের নিরাপত্তা প্রার্থনা করে এ কাজ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ্‌ (সা) ওহী মারফত এ কথা জানতে পারেন এবং চিঠিটা উদ্ধার করেন। হাবিব (রা) তার অন্যায় স্বীকার করেন ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যেহেতু তার কর্মের উদ্দেশ্য অসৎ প্রণোদিত ছিলো না সে কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। এই ঘটনাটি ছিলো মক্কা বিজয়ের অল্প কিছু পূর্বের। এর আবেদন বিশ্বজনীন - যুগ কাল অতিক্রান্ত। যারা তোমার ও তোমার ধর্মের শত্রু, যারা তোমাকে ও তোমার ধর্মীয় বিশ্বাসকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের সাথে গোপনে অন্তরঙ্গতা প্রার্থনা করা উচিত নয়। এমন কাজ পরিবার পরিজনদের জন্যও করা উচিত নয় - কারণ এরূপ কর্ম দ্বারা সমগ্র সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা হয় হুমকির মুখে।

৫৪১০। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে হিজরতের পরে মদিনার মুসলিম সম্প্রদায়ের তৎকালীন অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। সময় কালটি ছিলো মক্কা বিজয়ের পূর্বে।

২। যদি তারা তোমাদের হাতে পায় ৫৪১১, তবে তারা তোমাদের সাথে শত্রুর মত ব্যবহার করবে, এবং তোমাদের ক্ষতি সাধনের জন্য তাদের হস্ত ও রসনাকে প্রসার করবে। তারা কামনা করে যে, তোমরাও সত্যকে প্রত্যাখান কর।

৫৪১১। যেখানে ধর্ম ও নিজ সম্প্রদায় বিপন্ন, সেখানে শত্রুদের সাথে যে কোনও সখ্যতা হচ্ছে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। নিজ জনগণের সাথে বিশ্বস্ততার প্রশ্নটি এখানে জড়িত। এরূপ ক্ষেত্রে শত্রু পক্ষের যে আচরণ তাই-ই এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে শত্রুরা তোমাকে স্বাগত জানাবে - বিড়াল যেভাবে ইদুরকে স্বাগত জানায়। এরূপ ক্ষেত্রে শত্রুরা যখন তোমাকে ও তোমার সম্প্রদায়কে নিজেদের আয়ত্বে আনতে সক্ষম হবে তখন কি ঘটে ? তখন তারা তাদের নিজ মূর্তি ধারণ করে। তাদের আচরণ তখন হয় ভয়াবহ। তারা শুধু যে তাদের জিহ্বা ও হাত দ্বারাই তোমাকে কষ্ট দেয় তাই-ই নয়।তাদের ঘৃণার প্রকাশ ঘটে এই বাক্য দ্বারা " নিজ সম্প্রদায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতক।" যদি তারা মিষ্ট কথা বা আচরণ দ্বারা এখন তোমার সাথে ষড়যন্ত্র করতে চায়, তবে তা হচ্ছে তোমাকে সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য এবং তোমাকে তাদের পাপের পথে পরিচালিত করার জন্য। তারা কখনও তোমার মিত্র নয়।

৩। শেষ বিচারের দিনে তোমাদের আত্মীয় -স্বজন এবং তোমাদের সন্তান সন্তুতি কোন উপকারে আসবে না ৫৪১২। আল্লাহ্‌ তোমাদের মধ্যে বিচার করে দেবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তা সুস্পষ্টভাবে দেখেন।

৫৪১২। এক অমোঘ সত্যকে এই আয়াতের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানানো হয়েছে। নিজ সম্প্রদায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকে কোন যুক্তির সাহায্যেই সমর্থন করা যাবে না। আত্মীয় -স্বজন, ও সন্তান -সন্ততি পরলোকে কোনও উপকারেই আসবে না। পরিবার -পরিজন বা সন্তান-সন্ততি সেদিন শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। সেদিন বিচারের ভার থাকবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র হাতে, যিনি বান্দার সর্ব গোপন ইচ্ছা ও কর্মের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জ্ঞাত।

৪। তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে [ অনুসরণের জন্য ] উত্তম আদর্শ ৫৪১৩। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলো, "তোমাদের সাথে, এবং তোমরা আল্লাহ্‌ ব্যতীত যাদের এবাদত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। আমরা তোমাদের [ ধর্মকে ] প্রত্যাখান করি; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরদিন শত্রুতা ও বিদ্বেষ বর্তমান থাকবে ; যতদিন না তোমরা একমাত্র আল্লাহ্‌র উপরে ঈমান আন ৫৪১৪। " তবে ব্যতিক্রম পিতার প্রতি ইব্রাহীমের উক্তি ; "আমি নিশ্চয়ই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো ৫৪১৫, যদিও আমি আল্লাহ্‌র তরফ থেকে তোমার জন্য [ শাস্তি এড়াবার ] কোন ক্ষমতা রাখি না।" [ তারা প্রার্থনা করেছিলো ] : " হে আমাদের প্রভু ! ৫৪১৬ আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি, এবং তোমার প্রতি আমরা অনুতাপের মাধ্যমে ফিরে যাই ; তোমার কাছেই [ আমাদের ] শেষ গন্তব্যস্থল।

৫৪১৩। দেখুন [ ৯ : ১১৪ ]। হযরত ইব্রাহীম ছিলেন দয়ালু ও তাঁর পিতা এবং সম্প্রদায়ের প্রতি অনুগত। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে এবং তাদের পাপের বিরুদ্ধে সাবধান করেন। কিন্তু তার বার বার সাবধান বাণী সত্বেও তারা যখন তাদের পাপ থেকে বিমুক্ত হলেন না, বরং তারা হলেন আল্লাহ্‌র প্রকাশ্য শত্রু। এরূপ ক্ষেত্রে হযরত ইব্রাহীম তাঁর পিতা ও সম্প্রদায়ের সাথে সকল সম্পর্ক -চ্ছেদ করেন এবং নিজ মাতৃভূমি ও স্বজন-পরিজন, ত্যাগ করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। "তাহার অনুসারী " ছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র লূত এবং অন্যান্য ধর্মাপরায়ণ বান্দা। যারা তাঁর সাথে নির্বাসনে গমন করেন।

৫৪১৪। যারা আল্লাহ্‌র শত্রু,তারা বিশ্বাসীদেরও শত্রু। এখানে আত্মীয়তার বন্ধন কোনও বড় কথা নয়। সুতারাং পূণ্যাত্মারা আল্লাহ্‌র শত্রুদের সাথে চিরজীবনের জন্য বন্ধন চ্ছেদ করবে, যতক্ষণ না তারা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্‌র রাস্তায় ফিরে আসে। সে ক্ষেত্রে তারা আল্লাহ্‌র ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভে সক্ষম হবে এবং মোমেন বান্দাদের ভালোবাসা ও ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে এভাবেই পাপীদের জন্যও সুযোগ আছে। দেখুন নীচের আয়াত ৭। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আমরা পাপী ও অবিশ্বাসীদের বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কাজ করার সুযোগ দান করবো না।

৫৪১৫। সূরা [ ৯: ১১৪ ] ও টিকা ১৩৬৫ এবং পূর্বের টিকা নং ৫৪১৩ দেখুন অনুরূপ তথ্যাদির জন্য। হযরত ইব্রাহীম তার পাপিষ্ঠ পিতার জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তাঁর এই আচরণ অবশ্যই নিন্দনীয় ছিলো না। কারণ এটা একটা বিশেষ ঘটনা। এই ঘটনাকে কেউ যেনো অনুসরণীয় ঘটনা বলে না ভাবে।যারা দুর্বল চরিত্রের অধিকারী তারা যেনো পাপীদের সাথে অন্তরঙ্গতার ফলে নিজেই পাপের ফাঁদে আটকা না পড়ে।

৫৪১৬। হযরত ইব্রাহীমের এই মুনাজাত আমাদের পথ নির্দ্দেশ দান করে থাকে যে, পৃথিবীতে এই জীবনে আমাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত। আমাদের সকল বিশ্বাস, সমর্পিত হবে শুধুমাত্র সর্ব শক্তিমান আল্লাহ্‌র প্রতি। আমাদের ও আমাদের পরিজনের রক্ষার জন্য আমরা কোনও অবস্থাতেই আল্লাহ্‌ ব্যতীত আল্লাহ্‌র শত্রুদের সাহায্য কামনা করবো না।

৫। "হে আমাদের প্রভু ! তুমি আমাদের অবিশ্বাসীদের পীড়নের পাত্র করো না ৫৪১৭; আমাদের ক্ষমা কর। হে আমাদের প্রভু ! তুমি তো মহাপরাক্রমশালী, প্র্‌জ্ঞাময়। ''

৫৪১৭। সূরা [ ৮ : ২৫ ] আয়াতের টিকা ১১৯৮ তে 'Fitnat' শব্দটির ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সূরা [ ২ : ১০২ ] আয়াতে হারুত ও মারুতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে হারুত ও মারুত ছিলেন পূণ্যাত্মা ও পাপীদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। যিনি পূণ্যাত্মা তিনি তাঁর সকল বিশ্বাস আল্লাহ্‌র উপরে ন্যস্ত করবেন। অপরপক্ষে যারা অবিশ্বাসী, তারা সর্বান্তকরণে আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরশীল হবে না - তারা পাপের পথে ও কুসংস্কারের বেড়াজালে মুক্তির পথ হাতড়ে বেড়াবে। এই আয়াতে আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করা হয়েছে যে : আমাদের ঈমান যেনো এতটা দুর্বল না হয় যাতে কাফেররা আমাদের আক্রমণ করে ধ্বংস করার জন্য প্রলুব্ধ হয়। আল্লাহ্‌ যেনো আমাদের এই দুর্বলতা থেকে রক্ষা করেন।

৬। তোমরা যারা আল্লাহ্‌ ও আখেরাতের [কল্যাণের ] প্রত্যাশা কর, নিশ্চয়ই তোমাদের অনুসরণের জন্য তাদের মধ্যে ৫৪১৮, রয়েছে উত্তম আদর্শ। কিন্তু কেউ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, অবশ্যই আল্লাহ্‌ সকল অভাবমুক্ত, সকল প্রশংসার যোগ্য ৫৪১৯।

৫৪১৮। "তাহাদের মধ্যে " - অর্থাৎ তাদের প্রার্থনা, আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরশীলতা এবং পাপ বা মন্দ থেকে দূরে অবস্থানের মধ্যে। এরা হলেন হযরত ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীরা।

৫৪১৯। যদি কেউ আল্লাহ্‌র বাণী বা আইন বা জীবন বিধানকে প্রত্যাখান করে, তবে ক্ষতি আল্লাহ্‌র নয়, তারই। আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। কারও এবাদত বা ত্যাগ বা প্রশংসায় তার প্রয়োজন নাই। আল্লাহ্‌ এ সবের বহু উর্দ্ধে। সমস্ত সৃষ্টিতে, বিশ্ব -ভূবনের অণু-পরমাণুতে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ছড়িয়ে আছে। যে তা উপলব্ধিতে সক্ষম, লাভ তারই। যে উপলব্ধি করে না ক্ষতি তারই। আল্লাহকে প্রশংসা করার মাধ্যমেই আত্মার মুক্তি ঘটে। আল্লাহ্‌ অভাবমুক্ত। আমাদের প্রশংসার তার প্রয়োজন নাই। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় : সুন্দর দৃশ্য বা প্রকৃতির অপরূপ রূপরাজি দর্শনে হৃদয়ে বিমল আনন্দের সৃষ্টি হয়, আত্মা হয় বিমোহিত, পরিতৃপ্ত, শান্ত। ব্যক্তির এই অনুভূতি দ্বারা প্রকৃতির কোনও উপকার হয় না - প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়ম ও সৌন্দর্যে ভাস্বর থাকে। উপকার যা তা ব্যক্তির নিজস্ব অনুভূতি। যে ব্যক্তি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে অক্ষম সে হতভাগ্য প্রকৃতি তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। ক্ষতিগ্রস্থ হয় অনুভূতিহীন ব্যক্তি। ঠিক সেরূপ হচ্ছে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্‌ প্রেম, পাপীদের বিরুদ্ধাচাণে আল্লাহ্‌র কোনও ক্ষতি নাই - অপরপক্ষে আল্লাহ্‌ প্রেমে পূণ্যাত্মাদের হৃদয় হয় আলোকিত, শান্ত, নিবিড় অনুভূতিতে আপ্লুত।

রুকু - ২

৭। যাদের সাথে তোমাদের [ এখন ] শত্রুতা আছে, সম্ভবতঃ আল্লাহ্‌ তোমাদের ও তাদের মধ্যে ভালোবাসা [ এবং বন্ধুত্ব ] স্থাপন করে দেবেন ৫৪২০। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ [সকল কিছুর উপরে ] শক্তিশালী এবং আল্লাহ্‌ বারে বারে ক্ষমাশীল, অসীম করুণাময়।

৫৪২০। ধর্মীয় বিভেদ, ঘৃণা, শত্রুতা, নির্যাতন ইত্যাদির উৎপত্তি অজ্ঞতা থেকে আবার অনেক ক্ষেত্রে অতি উৎসাহ আত্মার মাঝে এ সবের জন্ম দেয়। এই আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করলে এদের জন্য ক্ষমার সুযোগ দান করবেন এবং আল্লাহ্‌র রাস্তায় ডেকে নেবেন। ইসলামের ইতিহাসে এরূপ অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। হযরত ওমর (রা ) ছিলেন এরূপ এক ব্যক্তি যিনি ইসলামের অন্যতম প্রধান শত্রু থেকে ইসলামের অন্যতম প্রধান সেবকরূপে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি চার খলিফার মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয় - যার খেলাফতের জীবন ছিলো ইসলামের ইতিহাসে এক কর্মোজ্জ্বল, গৌরবমন্ডিত অধ্যায়।

৮। দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নাই এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করে নাই, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ্‌ তোমাদের নিষেধ করেন নাই ৫৪২১। আল্লাহ্‌ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।

৫৪২১। ইসলাম মানুষকে সহমর্মিতা শিক্ষা দেয় ; মানুষকে করে সংবেদশীল ও ন্যায় পরায়ণ। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সকলকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার দান করে, এই আয়াতটি বিশ্ব মানবাধিকারের এক অনন্য দলিল। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা, অধিকার ও ধর্মীয় বিশ্বাস বিঘ্নিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্মীয় বিশ্বাসের বিভেদের জন্য কাউকে তার ব্যক্তিগত অধিকারচ্যুত করা বা শত্রুতা করা ইসলামে বৈধ নয়। মুসলিম রাষ্ট্রে অন্য ধর্মালম্বীদের দয়া, সহানুভূতি ও সমতার ভিত্তিতে তাদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। ন্যায় বিচার সকলের জন্য হবে সমভাবে প্রযোজ্য। রাসুলের (সা) উদাহরণের মাধ্যমে কোরাণের এই আদেশকে প্রতিফলিত করা হয়েছে। মানুষ হিসেবে মানুষের সম অধিকার স্বীকৃত। এই হচ্ছে ইসলামে ন্যায়ের মানদন্ড। " আল্লাহ্‌ তো ন্যায়পরায়ণদিগকে ভালোবাসেন।"

৯। আল্লাহ্‌ কেবল তাদের সাথে [ বন্ধুত্ব ] করতে নিষেধ করেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং বহিষ্কারে যারা সাহায্য করেছে। তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে তারা তো পাপ করে।

১০। হে বিশ্বাসীগণ ! যখন তোমাদের নিকট মুমিন নারীগণ হিজরত করে আসে ৫৪২২, তাদের পরীক্ষা করে নেবে। আল্লাহ্‌ তাদের ঈমান সম্বন্ধে সবচেয়ে ভালো জানেন। যদি তোমরা নিশ্চিত হও যে ৫৪২৩, তারা মুমিন, তাহলে তাদের আর অবিশ্বাসীদের নিকট পাঠিও না। তারা অবিশ্বাসীদের জন্য বৈধ [ স্ত্রী ] নহে, এবং অবিশ্বাসীরা তাদের জন্য বৈধ [ স্বামী ] নহে। অবিশ্বাসীরা [ মোহর হিসেবে ] তাদের জন্য যা ব্যয় করেছে, তা তাদের পরিশোধ করো। অতঃপর যদি তোমরা মোহর আদায় করে তাদের বিবাহ কর, তোমাদের কোন দোষ হবে না ৫৪২৪। কিন্তু তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক ধরে রেখো না ৫৪২৫। তোমরা যা ব্যয় করেছে মোহর হিসেবে তা ফেরত চাইবে, এবং অবিশ্বাসীরা যা ব্যয় করেছে তারা তা ফেরত চাইবে। ইহাই আল্লাহ্‌র বিধান। তিনি তোমাদের মাঝে [ ন্যায়ের সাথে ] বিচার করে থাকেন এবং তিনি জ্ঞান এবং প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ।

৫৪২২। হুদায়বিয়ার সন্ধির জন্য দেখুন ৪৮নং সূরার ভূমিকার ৪র্থ অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর শর্ত। হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত অনুযায়ী স্বামী বা অন্য কোনও অভিভাবকের অধীনের কোনও স্ত্রীলোক যদি মক্কা থেকে পালিয়ে মদিনাতে গমন করে রাসুলের নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করে, তবে সন্ধির শর্ত অনুযায়ী রাসুল (সা) তার প্রার্থনা মঞ্জুর না করে তাঁকে পুণরায় তার অভিভাবকের নিকট মক্কায় ফেরত পাঠাতে বাধ্য থাকবেন। এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই মক্কার কোরাইশরা পুনঃপুনঃ তাদের সন্ধির শর্ত সমূহ ভঙ্গ করে থাকে। এরই প্রেক্ষাপটে মদিনার মুসলিমদের জন্য আল্লাহ্‌র পরবর্তী নির্দ্দেশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিলো। সে সময়ে অনেক মোশরেক মক্কাবাসীদের স্ত্রীরা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, ফলে তারা স্বামীগৃহে এবং সমাজে তাদের বিশ্বাসের জন্য নিগৃহীত হতেন। এদেরই কিছু মুসলিম নারী মক্কা থেকে পালিয়ে মদিনাতে এসে রাসুলের (সা) নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন। এই আয়াতের পরে এসব মহিলাদের মক্কাতে তাদের স্বামীদের নিকট ফেরত পাঠানো বৈধ নয়। কারণ মুসলিম মহিলার সাথে অমুসলিম ব্যক্তির বিবাহ বৈধ নয়। সুতারাং অমুসলিম স্বামী মুসলিম মহিলার অভিভাবক হতে পারে না। তখনই তাঁর স্বামী অভিভাবক হতে পারবেন যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন। এ সব মহিলাদের স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের দেয়া মোহরানা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বিক্ষুব্ধ হতে পারেন। আর্থিক ক্ষতির কারণে তারা যাতে খারাপ অনুভব না করেন সে কারণে তাদের আর্থিক ক্ষতিকে পরিশোধ করার বন্দোবস্ত করা হয়। এ সব অসহায় মুসলিম নারীদের এ ভাবেই মুসলমানদের আর্থিক খরচের বিনিময়ে রক্ষা করা হয়।

৫৪২৩। মহিলাদের মক্কাতে তাদের অভিভাবকদের নিকট ফেরত না পাঠানোর একটাই শর্ত, আর তা হচ্ছে তারা হবে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত। তারা যে প্রকৃতই মুসলিম তার প্রমাণ কি ? এমনও তো হতে পারে যে একজন অমুসলমান মহিলা তার অত্যাচারী স্বামীর কবল মুক্ত হওয়ার জন্য মিথ্যাচারের আশ্রয় গ্রহণ করছেন। তার মনোজগতের খবর জানবেন একমাত্র আল্লাহ্‌। যদি তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ হয় যে তিনি একজন প্রকৃত মুসলিম নারী, তবে মুসলমানদের কর্তব্য তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এই তদন্তের ভিত্তি অন্যান্য সংবাদের সাথে যে বিষয়গুলির সংযুক্তি ঘটবে তার উল্লেখ আছে নীচের আয়াত নং ১২ তে।

৫৪২৪। যেহেতু মুসলিম নারীর সাথে অমুসলমানের বিবাহ বৈধ নয়, সুতারাং তাদের কৃত বিবাহ চুক্তি বহাল থাকে না। এক্ষেত্রে তাদের পুনঃর্বিবাহে কোন আইনসঙ্গত বাধা নাই। দেখুন টিকা ৫৪২২।

৫৪২৫। বিশ্বাসী মুসলিম সমাজে অমুসলিম নারীর অবস্থান হবে প্রতিবন্ধী মানুষের ন্যায়। সমাজের কোন কল্যাণকর বা মঙ্গলজনক কাজে সে অবদান রাখতে হবে অক্ষম, তার জন্য সমাজ জীবনের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সাথে একাত্বতা বোধ করা অসম্ভব। আর সামাজিক একাত্বতা ব্যতীত সমাজে সে হয়ে পড়ে একা। এ সব নারীদের সাথে মুসলমানদের বিবাহ আর বৈধ থাকে না। তাদের মক্কাতে ফেরত পাঠাতে হবে এবং তাদের জন্য যে দেনমোহর খরচ করা হয়েছিলো, তা মক্কাতে যিনি তার অভিভাবক তিনি ফেরত দেবেন। মুসলিম নারী, যার কাফের স্বামী, তার জন্য দেনমোহরের যে বন্দোবস্ত করা হয়েছিলো, এ ব্যবস্থা ঠিক তার বিপরীত।

১১। আর যদি তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে কেহ তোমাদের পরিত্যাগ করে অবিশ্বাসীদের নিকট চলে যায় ৫৪২৬, অতঃপর [ অন্য পক্ষ থেকে কোন মহিলার আগমনের ] যদি সুযোগ হয়, তবে যাদের স্ত্রীরা পরিত্যাগ করে চলে গেছে, [ অবিশ্বাসীদের প্রাপ্য থেকে ] তাদের [ মোহরে ] তারা যা ব্যয় করেছে, তার সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করবে। তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছ।

৫৪২৬। মুসলমানদের স্ত্রী যদি কাফেরদের দিকে চলে যায়, তবে মুসলমান স্বামীদের মোহরানা ফেরত দেয়া কাফের জন্য ন্যায় কাজ। যেমন আল্লাহ্‌র বিধান হচ্ছে মুসলমানদের পক্ষ থেকে মুহাজির নারীদের কাফের স্বামীদের মোহরানা ফেরত দেয়া। কিন্তু কাফেররা মুসলমান স্বামীদের মোহরানা ফেরত দিত না, সেক্ষেত্রে যা করণীয় সেই নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে এই আয়াতে। সেখানে বলা হয়েছে : "তোমাদের যদি সুযোগ আসে" - তবে তোমরা [মুসলমানেরা] প্রতিশোধ গ্রহণ কর। তবে এই প্রতিশোধ হবে সমতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ তোমরা মুহাজির নারীদের দেয়া আটককৃত মোহরানা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমান স্বামীদেরকে তাদের ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণ দিয়ে দাও, যাদের স্ত্রী কাফেরদের সাথে মিলিত হয়েছে, যদি উভয় পক্ষের মোহরানা এক হয়, তবে এই উভয় পক্ষের মোহরানা কাটাকাটি হয়ে যাবে। যদি মোহরানার পরিমাণ অসম হয় তবে কাটাকাটির পরে যা বাকী থাকবে তা ব্যক্তিগত ভাবে দুই ব্যক্তির মধ্যে মিটমাট করা হবে। এরূপ ক্ষেত্রে বা যে সব মুসলমানের স্ত্রী কাফেরদের দিকে চলে গেছে এবং শর্তানুযায়ী কাফেররা মুসলমান স্বামীদের মোহরানা ফেরত দেয় নি, এরূপ ক্ষেত্রে এরপর মুসলমানেরা যে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করবে, এই যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বা 'রাজকোষ ' থেকেই মুসলমান স্বামীদের প্রাপ্য দিয়ে দিতে হবে। " তারা যাহা ব্যয় করেছে, তার সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে।"

১২। হে রসুল ৫৪২৭! বিশ্বাসী নারীগণ যখন তোমার নিকট এসে অঙ্গীকার [ বায়'আত ] করে এই মর্মে যে, তারা আল্লাহ্‌র সাথে কোন শরীক স্থির করবে না। তারা চুরি করবে না, ব্যাভিচার করবে না, নিজেদের সন্তান হত্যা করবে না, তারা কুৎসা রটনা করবে না, ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা বলবে না এবং তারা তোমাকে কোন ন্যায় কাজে অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়'আত গ্রহণ করবে, এবং আল্লাহ্‌র নিকট [ তাদের পাপের জন্য ] ক্ষমা প্রার্থনা করবে ৫৪২৮। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ বারে বারে ক্ষমাশীল, অসীম করুণাময়।

৫৪২৭। মক্কা থেকে আগত মহিলারা যারা মদিনাতে এসে ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী ছিলো, তাদের তদন্ত সাপেক্ষে ইসলাম গ্রহণে অনুমতি দান করা হয়েছে। পুরুষদের জন্য একই কথা প্রযোজ্য, তবে এই আয়াতে বিশেষভাবে মহিলাদের কথাই বলা হয়েছে, তার কারণ সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে টিকা নং ৫৪২২ এবং ৫৪২৩। যারা মক্কা থেকে পালিয়ে এসে ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। এগুলির ভিত্তি হবে নিম্নরূপ :

১) এক আল্লাহ্‌ ব্যতীত তারা আর অন্য কিছুর এবাদত করবে না ;

২) চুরি করবে না ;

৩) বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক রাখবে না ;

৪) নিজেদের সন্তান হত্যা করবে না ;

৫ ) পরনিন্দা, পরচর্চচা করবে না ;

৬) ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা বলবে না।

৭) সাধারণ ভাবে ইসলামের আইন সকল মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।

৬ নং শর্তের মধ্যেই সকল শর্ত অর্ন্তভূক্ত হয় এ কথা সত্য, তবুও বিশেষ বিশেষ বিষয়গুলি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। এ সব শর্তগুলি নিঃশর্তভাবে মানার মধ্যেই ইসলামের প্রাণ নিহিত। কারণ ইসলাম ধর্ম জীবনের ধর্ম যা, ধর্মীয়, পারিবারিক ও জাতীয় জীবনে একতা ও শৃঙ্খলার উপরে প্রতিষ্ঠিত। এর অর্থ এই নয় যে, তারা মানুষকে দাসে পরিণত করে। বরং ঈমান ও শৃঙ্খলা মানুষের আত্মার ও চিন্তার জগতের মুক্তি ঘটায়।

৫৪২৮। কেউ যদি তাদের অঙ্গীকারের ব্যাপারে আন্তরিক হয়, তবে তার জন্য ইসলামের দরজা উন্মুক্ত। গত জীবনে সে, যে পাপই করে থাকুক না কেন, তার জন্য আল্লাহ্‌র ক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত। রাসুলকে (সা) বলা হয়েছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে। অর্থাৎ প্রকৃত অনুতাপকারীকে আল্লাহ্‌ যদি তার পূর্বে কৃত সকল পাপ ক্ষমা করতে পারেন তবে মানুষ কেন পারবে না ?

১৩। হে বিশ্বাসীগণ! যে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্‌ রুষ্ট হয়েছেন, ৫৪২৯ তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। ইতিমধ্যে তারা পরলোক সম্বন্ধে নিরাশ হয়েছে, যেমন নিরাশ হয়েছে অবিশ্বাসীরা কবরস্থদের বিষয়ে ৫৪৩০।

৫৪২৯। এই সূরাটি আরম্ভ হয়েছিলো যে বিষয়বস্তু দিয়ে, সেই একই বিষয়বস্তু দিয়ে সূরাটি শেষ করা হয়েছে। যারা আল্লাহ্‌র আইন ভঙ্গ করে বা যারা সমাজের চোখে অপরাধী, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন, এবং আইনগত অধিকার সম্বন্ধে আলোচনা শেষে সূরাটি আরম্ভের বক্তব্যকে পুণরাবৃত্তি করে শেষ করা হয়েছে।

৫৪৩০। যারা কাফের, যারা স্রষ্টা ও পরকাল সম্বন্ধে বিশ্বাস করে না, তাদের মানসিক অবস্থাকে এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। অবিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে না মৃত্যু পরবর্তী জীবনে। তাদের ধারণা মৃত্যুর সাথে সাথে এই জীবনের অস্তিত্ব ও অনুভূতি শেষ হয়ে যাবে। যারা এই ধারণার বশবর্তী কি নিদারুণ অভিশপ্ত তাদের জীবন ? ভবিষ্যতের স্বপ্নেই মানুষ পারে বর্তমানকে সংযত করতে, বর্তমানের দুঃখ কষ্টকে জয় করতে এবং পরিশীলিত সুসংহত জীবন যাপন করতে। যার ভবিষ্যত নাই সে তো পশুর ন্যায়। সে শুধু বাঁচে বর্তমানে বাঁচার মধ্যে। তাদের জন্য অতীতের পাপের সংশোধনী নাই, ভবিষ্যতের কোনও সুখ স্বপ্ন নাই। এদের হচ্ছে অভিশপ্ত জীবন। এটা যে শুধু কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য তাই-ই নয়, এটা সেই সব কিতাবধারীদের জন্যও প্রযোজ্য যারা প্রকৃত ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে আল্লাহ্‌র সাথে শেরেকে এবং পাপে নিমগ্ন। কারণ তাদের এই শেরেকী ও পাপের জন্য তারা স্বর্গীয় ক্রোধে নিপতিত হবে। এরা যদিও বা পরকালের জীবনে বিশ্বাসী হয় তবে সে বিশ্বাস তাদের মনোজগতে শান্তির প্রলেপের পরিবর্তে শাস্তির ভয়ে আতঙ্কিত ও হতাশা বয়ে আনবে। কিন্তু যারা প্রকৃত পক্ষে এক আল্লাহ্‌ এবং আল্লাহ্‌র আইনে বিশ্বাসী তাদের অবস্থান হবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। তারা যদি এই পৃথিবীর জীবনে দুঃখ কষ্ট ভোগ করেনও তবুও তাদের এ বিশ্বাস থাকে যে, পরলোকের জীবনে তাদের জন্য আছে অমিয় শান্তি। সকল অন্যায় অবিচারের হবে সেদিন অবসান। পৃথিবীর জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী পরলোকের অনন্ত জীবনের তুলনায়। যে জীবনে সকল অবিচার অন্যায়ের অবসানে নূতন জীবনের সূচনা করা হবে।