Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ২ জন
আজকের পাঠক ১৭ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩২৭৬৪৫ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৪৭১৬ বার
+ - R Print

সূরা তালাক


সূরা তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ - ৬৫

১২ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
[ দমাময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা : এই সূরাটি মাদানী সূরার শ্রেণীর নবম সূরা। এই সূরাতে উম্মার সামাজিক ব্যবস্থার আলোচনা করা হয়েছে। সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং এ ব্যাপারে মহিলারা যেনো নির্যাতিত না হয় সে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করার প্রতি নির্দ্দেশ সম্বলিত। সমাজ জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারী পুরুষের পারস্পরিক যৌন জীবন। এই সূরা ও পরবর্তী সূরাতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কোন কোন অংশ আলোচনা করা হয়েছে। রাসুল (সা) বলেছেন; " আল্লাহ্‌র চক্ষে তার বিধানের সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় অংশ হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ।" পারিবারিক জীবনের ভিত্তি হচ্ছে বৈবাহিক জীবনের পবিত্রতা। কিন্তু মানুষের দুর্বলতা ও অক্ষমতা অনেক সময়েই এই জীবনের পবিত্রতাকে নষ্ট করে থাকে। কিন্তু মানুষের জীবনের উর্দ্ধে বৈবাহিক সম্পর্ক নয়। সে কারণেই এই সূরাতে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রশ্নটিকে উদ্ধত ধর্মহীনতার প্রশ্নের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ।

সার সংক্ষেপ : বিবাহ বিচ্ছেদের প্রাক্কালে মহিলাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে, উদ্ধত ধর্মহীনতাকে আল্লাহর নিকট শাস্তির যোগ্য [ ৬৫ : ১ - ১২ ] অপরাধ।


সূরা তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ - ৬৫

১২ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী
[ দমাময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


১। হে নবী ৫৫০৩ ! যখন তোমরা স্ত্রীদের তালাক দিতে চাইবে ৫৫০৪, তখন ইদ্দতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও ৫৫০৫, এবং [ নির্ভুল ভাবে ] ইদ্দতকাল গণনা করবে এবং তোমার প্রভু আল্লাহকে ভয় করবে ৫৫০৬। তাদেরকে তাদের বাসগৃহ থেকে বের করে দিও না। স্পষ্ট অশ্লীলতার অভিযোগ ব্যতীত তারাও যেনো বের না হয় ৫৫০৭। এগুলিই হচ্ছে আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা এবং যে আল্লাহ্‌র এই সীমারেখা লংঘন করে সে [ নিজের ]আত্মার প্রতি অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ্‌ এর পরে কোন উপায় করে দেবেন ৫৫০৮।

৫৫০৩। লক্ষ্য করুন এই আয়াতে নবীকে প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করা হয়েছে উম্মতের শিক্ষক ও প্রতিনিধি হিসেবে। এর পরে উম্মতের জন্য নির্দ্দেশ দান করা হয়েছে। অর্থাৎ, " হে নবী ! উম্মতকে বলিয়া দাও " বাক্যটি যার দ্বারা আল্লাহ্‌ সমগ্র মুসলিম সমাজকে সম্বোধন করেছেন।

৫৫০৪। হাদীসে আছে আল্লাহ্‌র বিধান সমূহের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ আল্লাহ্‌র চক্ষে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য। বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক সম্বন্ধে সাধারণ নির্দ্দেশ দেয়া হয়েছে [ ২ : ২২৮ - ২৩২, ২৩৬ -২৩৭ ; ২৪১ ] আয়াতে এবং [ ৪ : ৩৫ ] আয়াতে। দেখুন এসব আয়াত এবং তাদের টিকা সমূহ।

৫৫০৫। 'ইদ্দত ' মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে শব্দটি জড়িত। দেখুন যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে [ ২ : ২২৮ ] আয়াতে ও টিকা ২৫৪। সাধারণভাবে এর অর্থ হচেছ এক "নির্দ্দিষ্ট সময়কাল"।

৫৫০৬। 'ইদ্দত ' বা 'নির্দ্দিষ্ট সময়কাল " -কে নির্ধারণ করা হয়েছে, স্ত্রীর বা অজাত সন্তানের [ যদি থাকে] এবং প্রকৃতির যৌন বিধানের স্বার্থরক্ষার জন্য। আর এভাবেই সুশীল সমাজের প্রাথমিক বুনিয়াদ সৃষ্টি করা হয়েছে। অনেক তফসীরকারগণের মতে রজঃস্রাবকালে তালাক দেয়া বৈধ নয়। দেখুন [ ২ : ২২ ] আয়াত, অনুযায়ী বলা চলে যেহেতু সময়টি নারীর এক অপবিত্র অবস্থা এবং পুরুষের জন্য কাম্য নয়। সুতারাং স্বামী স্ত্রীর কোনও মতদ্বৈতকে সে সময়ে উত্থাপন করা উচিত নয়। বিবাহের ভিত্তি-ই হচ্ছে যৌন জীবন। সুতারাং বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ে দৃষ্টিদেয়া প্রয়োজন যে এর সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের যেনো অবমাননা না করা হয়। তাড়িত হয়ে যেনো কোনও কাজ করা না হয়। আবেগ তাড়িত অনুভূতি হচ্ছে পশুর অনুভূতি। মানুষ পশু থেকে উন্নত কারণ সে পরিচালিত হয় বিবেক দ্বারা। তালাকের ন্যায় অপছন্দের কাজের সময়ে প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহ্‌র ভয়ে ভীত হয়ে বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

৫৫০৭। বৈবাহিক জীবনে ইসলাম মহিলাদের অধিকারের মূল্যদান করে। স্বামীর সম্পত্তি, বাড়ী প্রতিটি বস্তুতেই তার অধিকার ন্যায়সঙ্গত। বাড়ী অর্থ শুধুমাত্র বাসস্থানই নয়; এর অর্থ সেই বাড়ী পরিচালনার যাবতীয় খরচ, নারীর নিজের ও সন্তানদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা পুরুষের কর্তব্য। এই খরচ শুধু যে দাম্পত্য জীবন কালেই পুরুষ বহন করবে তা নয়, 'ইদ্দত' চলা কালেও তাকে বহন করতে হবে। এখানে নারীকে বলা হয়েছে তারাও যেনো এ সময়কালে বাড়ী থেকে চলে না যায়। কারণ 'ইদ্দত' চলা কালেও সমঝোতার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে, কিন্তু দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকলে সকল কিছুই ভিন্নরূপ ধারণ করতে পারে।

৫৫০৮। বিবাহ বিচ্ছেদ অপেক্ষা সমঝোতা সকল সময়েই কাম্য এবং উপযুক্ত পরিবেশে তা সম্ভবও হয়। দুপক্ষেরই অভিযোগ একটি পারিবারিক সভাতে উপস্থাপন করতে হবে, যেখানে উভয়দলের পারিবারিক সদস্য উপস্থিত থাকবেন। দেখুন [ ৪ : ৩৫ ] আয়াত। পারস্পরিক দৈহিক আকর্ষণ মন্দার মুখে, বিবাহ বিচ্ছেদের বা তালাকের উচ্চারণ করা উচিত নয় [ টিকা ৩৫০৬ ]। যখন তা উচ্চারণ করা হবে তখন তার জন্য নির্দ্দিষ্ট সময়কাল থাকবে সমঝোতার জন্য। দেনমোহর শোধ করতে হবে, নারীর উপযুক্ত ভরণ পোষণের বন্দোবস্ত থাকবে হবে। সব কিছুই করতে হবে নারীর অধিকার ও সমতার ভিত্তিতে। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা করা প্রয়োজন। আবেগ বা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে করা যে কোনও কাজকে বাধা দান করতে হবে, যেনো কেহ ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়। "হয়তো আল্লাহ্‌ এর পর কোন উপায় করে দেবেন।"

২। এরূপে, যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তোমরা তাদের হয় ন্যায়সঙ্গত ভাবে ফেরত নেবে, ৫৫০৯, অথবা ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে। এবং তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী হিসেবে রাখবে। [ যেনো ] আল্লাহ্‌র সম্মুখে উপস্থিত এভাবে তারা সাক্ষ্য দেবে ৫৫১০। যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে ও শেষ বিচার দিবসকে বিশ্বাস করে, এটা হচ্ছে তার জন্য সর্তকবাণী। যারা আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তাদের জন্য নিষ্কৃতি পাওয়ার পথ করে দেবেন। ৫৫১১

৫৫০৯। দেখুন সূরা [ ২ : ২৩১ ] আয়াত। তালাক প্রক্রিয়ার সকল কিছুই যথাযথ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে এবং উভয়পক্ষের অধিকার ন্যায়ের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে।

৫৫১০। 'ইদ্দত' শেষ হওয়ার পূর্বে স্ত্রীকে পুণরায় গ্রহণ করতে পারে। আর যদি ইদ্দত শেষ হয়ে যায়, তবে তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী যথাযোগ্য মর্যদার সাথে বিদায় করতে হবে। সকল প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য, দুজন ন্যায়পরায়ণ লোক উভয় পক্ষ থেকে সাক্ষী হিসেবে কাজ করবেন, যেনো সমগ্র ব্যবস্থা স্বার্থপরতা ও অন্যায় দ্বারা সংঘটিত না হয়। প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হবে ন্যায় ও সত্যের উপরে ভিত্তি করে। কারণ বিবাহ ও তালাক হচ্ছে আমাদের সমাজ জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্বরূপ যা আমাদের পারিবারিক জীবনকে প্রভাবিত করে। সুতারাং বিবাহ এবং তালাক আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।

৫৫১১। বিবাহ বিচ্ছেদের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এতটাই তিক্ততার সৃষ্টি করে যে, খুব বিবেকবান ব্যক্তির মধ্যস্থতাও সব সময়ে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয় না। এ ক্ষেত্রেই আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে, " আল্লাহ্‌কে ভয় কর" এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় সঠিক সাক্ষ্য বা কার্যটি গ্রহণ করবে। এরূপ ক্ষেত্রে " তিনি তাদের জন্য নিস্কৃতি পাওয়ার পথ করে দেবেন।" অচেনা অজানা স্থান থেকে যা সে ধারণাও করে নাই সেখান থেকে সাহায্যের হাত প্রসারিত হবে। চরম,শত্রুতা বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হতে পারে। হয়তো বা শিশুর কান্না বা হাসি তিক্ত সম্পর্ককে পুণঃ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তিক্ততায় পরিপূর্ণ দুটি হৃদয় তাদের তিক্ততাকে দূর করতে পারে ইত্যাদি। আল্লাহ্‌র ই‌চছায় সাধারণ ঘটনার মাধ্যমে অসাধারণ কিছু ঘটে যেতে পারে। আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা আত্মাকে পরিবেশের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে শান্তির আলয়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম।

৩। তিনি তাকে ধারণাতীত [ উৎস ] থেকে জীবনোপকরণ দান করবেন। এবং কেউ যদি আল্লাহ্‌র উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে, তার জন্য আল্লাহ্‌-ই যথেষ্ট। আল্লাহ্‌ অবশ্যই স্বীয় ইচ্ছা পূর্ণ করবেন ৫৫১২। অবশ্যই, সব কিছুর জন্য আল্লাহ্‌ স্থির করেছেন নির্দ্দিষ্ট মাত্রা।

৫৫১২। পৃথিবীর কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশে আমরা মানসিক ভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ি। ক্রোধ, বিরক্তি, হতাশা আমাদের অধৈর্য্য করে তোলে। মনে হয় সমগ্র পৃথিবী আমাদের জন্য বৈরী। বন্ধু, আত্মীয়, পরিচিত পরিবেশ সব কিছু তখন অসহনীয় ও হৃদয়হীন। এরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ তাঁর উপরেই একমাত্র ভরসা করতে বলেছেন। মানুষ তো নিজের সম্বন্ধে অন্ধসম, সেতো তার নিজের দুর্বলতা এবং অক্ষমতা পরিমাপে অক্ষম। কিন্তু বিশ্ব বিধাতা সব জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ। তাঁর বিশ্বব্যপী কল্যাণকর পরিকল্পনার আমরা এক ক্ষুদ্র অংশ। এবং সেই পরিকল্পনা কার্যকর হবেই। তাঁর নিয়ম নীতি সব কিছু ন্যায় এবং নির্দ্দিষ্ট মাত্রাতে বর্তমান। সেখানে কোনও অনিয়ম কেহ লক্ষ্য করতে পারবে না।

৪। তোমাদের যে সব স্ত্রীদের ঋতুমতী হওয়ার বয়েস অতিক্রম করে গেছে, এবং যাদের ঋতু এখনও হয় নাই, যদি তাদের ইদ্দতকাল সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকে, তবে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস ৫৫১৩। আর গর্ভবতী নারীদের জন্য ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ্‌ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন। ৫৫১৪

৫৫১৩। দেখুন সূরা [ ২ : ২২৮ ] আয়াত। তালাকের পূর্বে স্ত্রীর 'ইদ্দত' বা বিচ্ছিন্ন থাকার মেয়াদ কাল বর্ণনা করা হয়েছিলো তিন রজঃস্রাব কাল। কিন্তু যে সব স্ত্রীলোকের ঋতুমতী হওয়ার আশা নাই বা সন্দেহ থাকে তাদের জন্য ক্যালেন্ডারের তিনমাস ধার্য করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাবে যে উক্ত নারীগণ অন্তঃস্বত্তা কি না। যদি তারা অন্তঃস্বত্তা হয় সে ক্ষেত্রে ইদ্দতকাল হবে বাচ্চা প্রসব না করা পর্যন্ত।

৫৫১৪। দেখুন উপরের টিকা নং ৫৫১১। এখানে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, যদি কেউ প্রকৃতই অন্তর থেকে আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায় ন্যায়ের জন্য কাজ করে এবং এ কারণে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে দ্বিধা বোধ করে না, সেরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র সাহায্য অবশ্যাম্ভবী। তার জীবনের সকল বাধা বিপত্তি দূর হয়ে যাবে। তার সকল বাধা-বিপত্তি সত্য ও সুন্দরের স্পর্শে বৃহত্তর ও কল্যাণকর রূপে পরিসমাপ্তি লাভ করবে। আমাদের প্রিয় নবীর জীবনের মাধ্যমেও আমরা এই সত্যকে প্রতিভাত দেখি বারে বারে।

৫। এই হলো আল্লাহ্‌র বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি প্রেরণ করেছেন। যদি কেউ আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার থেকে দুর্ভাগ্য দূর করে দেবেন ৫৫১৫; এবং পুরষ্কার বৃদ্ধি করে দেবেন।

৫৫১৫। বিশ্ব জুড়ে আল্লাহ্‌র যে আইন তা কোনও অসংলগ্ন বা অযৌক্তিক কিছু নয়।আল্লাহ্‌র আইন তাঁর প্রত্যাদেশ কোরাণের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। এই বিধান সমূহ মানুষের জাগতিক ও পারলৌকিক কল্যাণের জন্য নিবেদিত। যদি আমরা একান্তভাবে আল্লাহ্‌র হুকুম সমূহ মেনে চলতে পারি। আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার নিকট আত্মসর্মপন করতে পারি, তবে অচিরেই আমাদের সকল বাধা বিপত্তির অপসারণ ঘটবে। শুধু তাই-ই নয় আমাদের ব্যক্ত বা অব্যক্ত সকল মানসিক যন্ত্রণা দূরীভূত হয়ে যাবে। সুদক্ষ রাখাল যেরূপ তার মেষপালকে উর্বর শষ্যশ্যামল তৃণভূমির সন্ধান দানে এবং তথায় পরিচালিত করতে সক্ষম - আল্লাহ্‌ সেরূপ আমাদের মত অজ্ঞদের কল্যাণের পথে, মংগলের পথে পরিচালিত করতে সক্ষম। আল্লাহ্‌র পথে যত আমরা অগ্রসর হব, তত আমাদের চরিত্রে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, ন্যায়নীতির প্রকাশ ঘটবে, ফলে আত্মার মাঝে জন্ম নেবে অন্তর্দৃষ্টি, বিবেক ও দূরদর্শিতা। আল্লাহ্‌র এই পুরষ্কার চর্মচক্ষে দৃশ্যমান নয় কিন্তু যে তা লাভ করে সে অনুভব করে এর মূল্যমান। এ আত্মার এক অমূল্য সম্পদ

৬। তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যেরূপ জীবন যাপন কর, তাদেরও [ ইদ্দত কালে ] সেইরূপ জীবন ধারণের মান দিবে। সংকটে ফেলার জন্য তাদের উত্ত্যক্ত করবে না ৫৫১৬। যদি তারা গর্ভবতী হয়ে থাকে, তাহলে ৫৫১৭, সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে। এবং যদি তারা তোমাদের [ সন্তানদের ] স্তন্য পান করায়, তবে তাদের পারিশ্রমিক দেবে। [ সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে] তোমরা নিজেদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ভাবে পরস্পর পরামর্শ করবে। আর যদি তোমরা তা কষ্টকর মনে কর ৫৫১৮ তবে অন্য স্ত্রীলোক [ শিশুকে ] তার [ পিতার ] পক্ষে স্তন্য দান করবে ৫৫১৯।

৫৫১৬। দেখুন টিকা ৫৫০৭। মানুষ জন্মগত ভাবে স্বার্থপর। একজন স্বার্থপর লোক সাধারণভাবে মনে করতে পারে যে, প্রকৃত তালাকের পূর্বে, ইদ্দত পালন করার সময়ে, স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য সঠিক ভাবে পালনের প্রয়োজন নাই। সুতারাং সে ঔদ্ধত্য অহংকারে অসহায় নারীর প্রতি দুর্ব্যবহার করতে পারে এবং তার প্রাপ্য আহার ও বাসস্থানের সুবন্দোবস্ত নাও করতে পারে। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ঘোষণা করেছেন যে, পুরুষ তার নিজ জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী ইদ্দত পালনকারী নারীর ভরণপোষণ করবে, এমন তো হতে পারে যে, আল্লাহ্‌ হয়তো তাদের পূণর্মিলন ঘটিয়ে দেবেন। আর যদিও বা তাদের পূণর্মিলন নাও ঘটে, তবুও বিচ্ছেদ যেনো তিক্ততার সৃষ্টি না করে, সম্মানজনকভাবে হয় সেটাই আল্লাহ্‌র কাম্য।

৫৫১৭। 'ইদ্দত' পালনের সময় কালে যদি বুঝা যায় যে, নারী গর্ভবতী সে ক্ষেত্রে 'ইদ্দত ' পালনের সময় তিন মাসের পরিবর্তে সন্তানের জন্মদান পর্যন্ত বিলম্বিত হবে। নূতন অতিথির আগমন পিতা মাতার মধ্যে মিলনের বন্ধন গড়ে তুলতে সক্ষম হতেও পারে। মোট কথা সন্তান জন্মগ্রহণের পূর্বে চূড়ান্ত বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব নয়। আল্লাহ্‌ চান পুরুষ নারীর মাঝে পবিত্র বন্ধন যা বিবাহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তা যেনো হঠকারীতার মাধ্যমে ছিন্ন হয়ে না যায়। যদি সন্তান জন্মের পরও পিতামাতার মাঝে পূনঃ সর্ম্পক স্থাপন সম্ভব না হয়, নবজাতকের শুভ আগমনও যদি তাদের মাঝে তিক্ততা দূর করতে সক্ষম না হয়,তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও সন্তানের কল্যাণের জন্য মাতৃদুগ্ধ পান করার সম্পূর্ণ সময়টি পিতাকে মাতার ভরণপোষণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। এই দায়িত্ব হচ্ছে পিতার প্রতি আরোপিত কর্তব্য। তালাকপ্রাপ্ত নারী সন্তানকে দুগ্ধ পান করাতে বাধ্য নয়, যদি সে পান করায় তবে পারিশ্রমিক নিতে পারে। ব্যাপারটি হবে পরস্পরের সমঝোতার মাধ্যমে। তবে এ ব্যাপারে তাদের উভয়ের মনোভাব এমন হওয়া উচিত নয় যাতে সন্তান মাতৃদুগ্ধ হতে বঞ্চিত হয়।

৫৫১৮। "তোমরা যদি তা কষ্টকর মনে কর।" এই বাক্যটি ইংরেজীতে অনূদিত হয়েছে এ ভাবে, "If ye find yourself in difficulties ." মাতৃদুগ্ধ সন্তানকে না দেবার অনেক কারণই ঘটতে পারে যথাঃ দুগ্ধের অপ্রাচুর্য, বা মাতার অসুস্থতা অথবা পরিবেশ পরিস্থিতি ইত্যাদি।

৫৫১৯। অন্য নারী যদি মাতার পক্ষ থেকে নবজাতককে দুগ্ধ পান করায় সে ক্ষেত্রে, পিতা উক্ত নারীকে সে বাবদ উপযুক্ত পরিতোষক দান করবে -যতটা তাকে দান করতে হতো, শিশুর মাতাকে।

৭। সামর্থবান লোকেরা তাদের সামর্থ অনুযায়ী ব্যয় করবে। যার সম্পদ সীমিত, সে আল্লাহ্‌ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ্‌ কোন ব্যক্তিকে যে সামর্থ দিয়েছেন তার অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব তার উপরে চাপান না। আল্লাহ্‌ শীঘ্রই কষ্টের পর দিবেন স্বস্তি। ৫৫২০

৫৫২০। নবজাতকের মঙ্গলের জন্য তার স্বার্থরক্ষার জন্য, সন্তানের পিতা তার সামর্থ অনুযায়ী সন্তানের জন্য খরচ করবে। কারন পৃথিবীতে নূতন জীবনের আগমনের জন্য পিতা মাতা উভয়ই দায়ী। যেহেতু পিতা সংসারের অর্থকরী দায়িত্বের জন্য দায়বদ্ধ। সুতারাং নবজাতকের তত্বাবধানের ও প্রতিপালনের অর্থকরী দায়িত্ব পিতারই একক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে কারও ভীত হওয়া উচিত নয়। আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস রাখা প্রয়োজন। আল্লাহ্‌ বলেছেন যে, যদি আমরা আন্তরিক ভাবে আমাদের কর্তব্য কর্মে সততার সাথে নিবেদিত থাকি, তবে আল্লাহ্‌ আমাদের দায়িত্বের বোঝা হালকা করে দেবেন এবং আমাদের জন্য সমাধানের পথ উম্মুক্ত করে দেবেন। " আল্লাহ্‌ কষ্টের পরে দেবেন স্বস্তি " - জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র এই আশ্বাসবাণী কার্যকর হয়, যদি বান্দা তার নিয়তে এবং প্রচেষ্টাতে হয় আন্তরিক ও সৎ। এই-ই হচ্ছে জীবন পথের উপদেশ ও নির্দ্দেশ।

রুকু - ২

৮। কত সম্প্রদায় উদ্ধতভাবে আল্লাহ্‌র আদেশ ও রাসুলদের বিরুদ্ধাচারণ করেছিলো ৫৫২১। আমি কি তাদের নিকট থেকে হিসাব গ্রহণ করি নাই - কঠিন হিসাব ? এবং আমি তাদের উপরে আরোপ করেছিলাম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ৫৫২২।

৫৫২১। যুগে যুগে আল্লাহ্‌ ও তার রসুলগণকে অস্বীকার করার ফলে বিভিন্ন জাতির ভাগ্যে নেমে এসেছিলো মহা দুর্যোগ। তারা শুধু যে আল্লাহকেই অস্বীকার করতো তাই নয়, তারা আল্লাহ্‌র যে সব বিধান যা বিশ্ব প্রকৃতির আইন, যা আল্লাহ্‌ মানুষের কল্যাণের জন্য করেছেন, তাকেও তারা অস্বীকার করে। এসব বিধান সমূহে বর্ণিত আছে, মানুষের সাথে মানুষের আচরণ কিরূপ হওয়া উচিত, আত্মীয়, স্বজন, সামাজিক দায় দায়িত্ব প্রভৃতিতে দয়া, সহানুভূতি ও কর্তব্যের স্থান নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। পরিবারের প্রতি কর্তব্য, সন্তানের প্রতি দায়িত্ব,সম্বন্ধে বলা হয়েছে পূর্ববর্তী আয়াত সমূহে। ব্যক্তি জীবন পরিবার থেকেই শুরু হয়ে মানুষকে পরিচালিত করে সুখ শান্তি ও আত্মশুদ্ধির পথে। আদম সন্তান পৃথিবীর জীবন যাপনের মাধ্যমেই এই ধূলার ধরণীকে অতিক্রম করে আধ্যাত্মিক জীবনের প্রান্তে উপণীত হতে পারে। আধ্যাত্মিক জীবনের সাফল্য নির্ভর করে পার্থিব জীবনের সাফল্যের উপরে, পবিত্রতার উপরে। এই সাফল্যের মূল কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে বৈবাহিক জীবনের পবিত্রতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য। যে পারিবারিক জীবনে আল্লাহ্‌র বিধানকে অস্বীকার করে থাকে তার পারিবারিক জীবন ধ্বংস হতে বাধ্য। সে পারিবারিক জীবনের সুখ শান্তি থেকে শুধু যে বঞ্চিত হবে তাই-ই নয়, তার জন্য পরলোকের জীবনের সুখ শান্তিও অন্তর্হিত হবে। কারণ ইহকালের জীবনই হচ্ছে পরলোকের জীবনের শষ্যক্ষেত্র স্বরূপ। ইহকালের কর্মের ফল লাভ ঘটবে মৃত্যু পরপারের জীবনে। সুতারাং যারা বৈবাহিক জীবনে আল্লাহ্‌র বিধানকে অস্বীকার করে তাদের পরিণাম ভয়াবহ। এ কথা যে শুধুমাত্র ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য তাই নয়, এ কথা একটি জাতি বা যে কোনও সমাজের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। পাশ্চাত্য সভ্যতা উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করা সত্ত্বেও তাদের আধ্যাত্মিক জীবনে চরম শূণ্যতা লক্ষ্য করা যায় তার কারণ তারা পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে যত্নশীল নয়। প্রাচুর্য তাদের আধ্যাত্মিক জীবনে শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

৫৫২২। এখানে যে শাস্তির উল্লেখ করা হয়েছে, সে শাস্তি হচ্ছে পৃথিবীর জীবনের শাস্তি। পরলোকের শাস্তির উল্লেখ আছে নীচের ১০নং আয়াতে।

৯। অতঃপর তারা তাদের কৃতকর্মের মন্দ পরিণতি আস্বাদন করেছিলো। তাদের কৃতকর্মের শেষ ফলাফল হচ্ছে [ পরলোকের ] শাস্তি।

১০। আল্লাহ্‌ [ পরলোকে ] তাদের জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন ৫৫২৩। সুতারাং হে বোধশক্তিসম্পন্ন মানবকূল, যারা ঈমান এনেছ তারা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন উপদেশ ৫৫২৪

৫৫২৩। দেখুন উপরের টিকা।

৫৫২৪। যুগে যুগে আল্লাহ্‌ পৃথিবীতে তার হেদায়েতের আলো প্রেরণ করেছেন, সকল সৃষ্টির মাঝে, তার নিদর্শন বিদ্যমান, এর পরেও বিপথে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এর পরে যারা যায়, তাদের ওজর বা আপত্তি হচ্ছে ভ্রান্ত দেখুন পরবর্তী টিকা।

১১। একজন রসুল, যে তোমাদের নিকট আল্লাহ্‌র নিদর্শন সমূহ আবৃত্তি করে এবং ব্যাখ্যা করে, যেনো সে, যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তাদের অন্ধকারের অতল থেকে আলোতে নিয়ে আসতে পারে ৫৫২৫। এবং যে আল্লাহতে বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে, আল্লাহ্‌ তাকে বেহেশত দান করবেন, পাদদেশে যার নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। অবশ্যই আল্লাহ্‌ তাদের জন্য উত্তম জীবনোপকরণ দান করবেন।

৫৫২৫। অবিশ্বাসী ও পাপে নিমগ্ন আত্মা হচ্ছে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত আত্মা। কারণ এ সব আত্মাতে আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো প্রবেশ লাভ ঘটে নাই। এদের বর্ণনা পবিত্র কোরাণে এভাবে দান করা হয়েছে; "তাহাদের কর্ম গভীর সমুদ্র তলের অন্ধকার সদৃশ, যাহাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যাহার উর্দ্ধে মেঘপুঞ্জ, অন্ধকারপুঞ্জ স্তরের উপরে স্তর, এমনকি সে হাত বের করলে তা আদৌ দেখতে পাবে না। আল্লাহ্‌ যাকে' জ্যোতি দান করেন না, তার জন্য কোন জ্যোতি নাই। " [ ২৪ : ৪০ ]। আবার দেখুন আয়াত [ ২ : ২৫৭ ] যেখানে বলা হয়েছে, " যারা ঈমান আনে, আল্লাহ্‌ তাহাদের অভিভাবক তিনি তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোকে নিয়ে যান।" এই আলো হচ্ছে আত্মার আলো। ব্যক্তি যখন সৎপথে আল্লাহ্‌ প্রেমে নিবেদিত থাকে তখন সে এক অত্যাচার্য আত্মিক শক্তির অধিকার লাভ করে, যে শক্তি তার অন্তরে আলোর দীপ্তি দান করে। তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, অর্ন্তদৃষ্টি, বিচক্ষণতা প্রভৃতি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, সে ইহলোকে অতিক্রম করে পার্থিব দেহের ব্যবধানকে অতিক্রম করে, অপার্থিব ও অলৌকিক জীবনের সন্ধান লাভ করে। একেই বলা হয়েছে, "জ্যোতি"।

১২। তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি সপ্ত আকাশ ৫৫২৬ ও উহাদের তুল্য পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ৫৫২৭। উহাদের মধ্য দিয়ে তার [ সকল ] নির্দ্দেশ নেমে আসে ৫৫২৮। তোমরা যেনো বুঝতে পার সকল কিছুর উপরে আল্লাহ্‌ ক্ষমতাবান। এবং জ্ঞানে আল্লাহ্‌ সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।

৫৫২৬। "সপ্ত আকাশ " - আক্ষরিক অর্থে বোঝানো হয় আমাদের উর্দ্ধ আকাশের স্তর যা গ্রহ নক্ষত্রকে ধারণ করে। অনুরূপ আয়াতের জন্য দেখুন সূরা [ ২৩ : ১৭ ] আয়াত ও টিকা ২৮৭৬ এবং সুরা [ ৩৭ : ৬ ] আয়াতের টিকা ৪০৩৫ - ৩৬ ] প্রকৃত পক্ষে সপ্ত আকাশের ধারণা করা পৃথিবীর মানুষের পক্ষে অসম্ভব। মানুষ মহাশূন্যে হাবেল টেলিস্কোপ স্থাপন করে ও স্পেসশীপ প্রেরণ করে মহাকাশের সন্ধান লাভ করতে ব্যস্ত। এর ফলেই মানুষ বর্তমানে ধারণা করতে সক্ষম হয়েছে যে মহাকাশ সম্বন্ধে তার জ্ঞান কত অকিঞ্চিতকর। এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে তার অবস্থান মহাসমুদ্রের বেলাভূমিতে দাড়িয়ে নূড়ি কুড়ানোর সম। 'সাত' সংখ্যাটি এখানে অতিন্দ্রীয় এক প্রতীক গুপ্ত সংখ্যা, যার দ্বারা বিশালত্বের ধারণা দেয়া হয়েছে আবার একই সাথে এমন একটি সংখ্যাকে নির্দ্দেশ করা হয়েছে যা একটি সর্বোচ্চ পূর্ণ একক সংখ্যা এবং অবিভাজ্য।

৫৫২৭। এই আয়াতটির পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করা তখনই সম্ভব হবে যখন মানুষের বিজ্ঞানের জ্ঞানের পরিধি আরও ব্যাপ্তি লাভে সক্ষম হবে। আক্ষরিক অর্থে এর অর্থ হচ্ছে আকাশ ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর উপরিভাগও অনুরূপ স্তরে বিন্যস্ত।

৫৫২৮। "উহাদের মধ্যে দিয়ে নেমে আসে তাঁর নির্দ্দেশ" - অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবীতে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র আইন কার্যকর। আল্লাহ্‌র জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সকল কিছুকে বেষ্টন করে থাকে।