+
-
R
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : সূরা নং ৫৭ থেকে আরম্ভ করে যে দশটি সূরার শ্রেণী মদিনাতে অবতীর্ণ হয়েছিলো, বর্তমান সূরাটি হচ্ছে শ্রেণীটির সর্বশেষ সূরা। দেখুন ৫৭ নং সূরার ভূমিকা। এই সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের বিরুদ্ধাচারণ করা বা বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের অনিষ্ট ঘটতে পারে।
সূরাটির অবতীর্ণ কাল সম্বন্ধে বলা হয় যে তা হচ্ছে ৭ম হিজরীর যে কোন সময়ে।
সার সংক্ষেপ : নারীর প্রতি দুর্বলতার কারণে পুরুষ তার সামাজিক জীবনের কর্ম থেকে বিচ্যুত হবে না। পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমন্বিত জীবন যাপনের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পূণ্যাত্মাদের উপরে আল্লাহ্র আর্শীবাদ বর্ষিত হয় মন্দের পরিকল্পনা সত্বেও। [ ৬৬ : ১ - ১২ ]।
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৫৫২৯। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) প্রত্যহ নিয়মিত ভাবে আসরের পরে সকল বিবির কুশল জিজ্ঞাসার জন্য গমন করতেন। একদিন হযরত যয়নব (রা ) এর কাছে একটু বেশী সময় অতিবাহিত করলেন ও মধু পান করলেন। এতে হযরত আয়েশার মনে ঈর্ষার সৃষ্টি হলো এবং হযরত হাফসার (রা) সাথে পরামর্শ করে স্থির করলেন যে, হযরত যার কাছেই যাবেন তারা সকলেই একবাক্যে বলবেন যে, হযরত দুর্গন্ধযুক্ত কিছু পান করেছেন। রাসুল (সা) যখন বলবেন যে তিনি মধু পান করেছেন, তখন সেই বিবি বললেন যে হয়তো মৌমাছি দুর্গন্ধযুক্ত ফুলের মধু আহরণ করেছিলো। সে মতে রাসুলুল্লাহ্ (সা) একটি হালাল বস্তু অর্থাৎ মধুকে কসমের মাধ্যমে নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন। যয়নব মনঃক্ষুণ হবেন চিন্তা করে হযরত বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্যও বলে দিলেন। আয়াতটি নাজেল হওয়ার শানে নজুল হচ্ছে উপরে বর্ণিত ঘটনা।
রাসুলের (সা) পরিবার আর দশজন সাধারণ মানুষর পরিবারের মত নয়। রাসুলের (সা) স্ত্রীগণ হচ্ছেন পবিত্রতার প্রতীক। তাঁরা হবেন সাধারণ মহিলাদের তুলনায় মিতবাক ও সংযত। কারণ তাঁরা হচ্ছেন মুসলিম বিশ্বের মাতা স্বরূপ ; তারা হচ্ছেন সর্বকালের সর্বযুগের মুসলিম মহিলাদের আদর্শস্বরূপ। দেখুন [ ৩৩ : ২৮ ] আয়াতের টিকা নং ৩৭০০। হাজার হোক তারাও ছিলেন সাধারণ মানুষ। তাই সাধারণ নারীদের ন্যায় তাদের মনেও ঈর্ষার জন্ম নেয়, এবং তাঁরা তাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সম্বন্ধে বিস্মৃত হন। হযরত আয়েশার অবিচক্ষণতা আরেকবার হযরতের মনে দুঃখ দান করেছিলো [ দেখুন ২৪ : ১১ আয়াত ও টিকা ২৯৬২ ] এবং হযরতের জীবনে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিলো। যার ফলে হযরত কিছু দিনের জন্য সকল স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন। হযরত আবু বকরের কন্যা ছিলেন হযরত আয়েশা এবং হাফসা ছিলেন হযরত ওমরের কন্যা। আবু বকর ও ওমর উভয়েই ছিলেন হযরতের একান্ত প্রিয় সহচর। তাদের কন্যা হয়েও তারা সাধারণ নারীর ন্যায় অন্যায় আচরণ করেছিলেন এবং পরস্পরের মধ্যে গোপনীয় কথা যা বলতে হযরত নিষেধ করেছিলেন তা প্রকাশ করেছিলেন। ফলে হযরতের অন্তর দুঃখে পরিপূর্ণ হয়ে পড়লো কারণ হযরত (সা) ছিলেন পরিবারের জন্য প্রেম ও ভালোবাসার আদর্শ প্রতীক স্বরূপ।
হযরত যে মধু পান করবেন না বলে শপথ করেন তারই প্রেক্ষিতে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
৫৫৩০। দেখুন আয়াত [ ৩৩ : ২৮- ৩৪ ]। যেখানে রাসুলের (সা) স্ত্রীগণকে আল্লাহ্ মৃদু ভৎর্সনা করেছেন। যদি রাসুল অন্যান্য সাধারণ স্বামীর ন্যায় হতেন তবে তিনি পারিবারিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম হতেন না। কিন্তু তিনি সাধারণ স্বামী ছিলেন না। হালাল খাদ্য গ্রহণ না করার কসম রাসুলুল্লাহ্র (সা) জন্য শোভন নয়। এতে তাঁর উম্মতের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী প্রজন্ম মধুকে হারাম মনে করতে পারে। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁকে কসম ভঙ্গ করতে আদেশ দান করেছেন।
৫৫৩১। দেখুন [ ২ : ২২৪ ] আয়াত। যদি কসম বা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের দ্বারা কেহ সৎ কাজে অংশ গ্রহণ করে বা কোন অন্যায়কে প্রতিহত করে অথবা দুদলের মধ্যে শান্তি স্থাপন করে, সে ক্ষেত্রে কসম ভঙ্গ করা আল্লাহ্ মনোনীত করেন বা জায়েজ। অর্থাৎ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা ও ভঙ্গ করা নির্ভর করবে পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
৫৫৩২। কারা হযরতের গোপন কসমকে প্রকাশ করেছিলো সেটা মুসলিম উম্মার জন্য বড় কথা নয়। সে সম্বন্ধে কোরাণ শরীফে বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করে নাই। উপরের টিকা নং ৫৫২৯ এ ব্যাপারে পাঠককূলকে সাহায্য করবে। প্রকৃতপক্ষে, এরূপ তুচ্ছ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলোচনার প্রয়োজন নাই। আমাদের উচিত এই ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের যে মৌলিক নীতির প্রতি যে আদর্শ ও উপদেশের প্রতি আকর্ষণ করেছেন তার প্রতি দৃষ্টিপাত করা। গোপন কথাটি কি ছিলো সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে আদর্শগত দিক থেকে কসম ভঙ্গ করার কারণ। পরবর্তী আয়াত দেখুন।
৫৫৩৩। এই আয়াতগুলির নৈতিক উপদেশমালা নিম্নরূপ :
১ ) যদি কেউ তার গোপন কথা আমাদের নিকট প্রকাশ করে তবে তা কারও নিকট প্রকাশ করা উচিত নয়। এমন কি নিকটতম বন্ধুর নিকটও নয়।
২) যদি কেউ কারও গোপন কথা খুব নিকটতম বন্ধুর নিকটও প্রকাশ করে তবে আল্লাহ্র পরিকল্পনা হচ্ছে তিনি তা প্রকাশ করে দেবেন।
৩) গোপন কথা একবার প্রকাশ হলে আর গোপন থাকে না - তা প্রচারিত হয়ে পড়ে। যদি কেউ গোপন কথাটিকে প্রচারিত কথার সাথে তুলনা করে তবে দেখতে পাবে যে, সেক্ষেত্রে প্রচারিত কথাটি বহুলাংশে রঞ্জিত। প্রবাদবাক্য হচ্ছে, " কথার হাত পা গজানো।" যারা মানুষের গোপন কথাকে গোপন রাখে না তারা লজ্জাজনক অপরাধে অপরাধী। দেখুন পরবর্তী টিকা।
৫৫৩৪। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে আরও যে সব উপদেশ দেয়া হয়েছে সেগুলি নিম্নরূপ :
৫) যারা বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তারা যদি প্রকৃত-ই অনুতপ্ত হতে পারে, তবে অনুতাপের মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক নির্মলতা অর্জনে সক্ষম হবে।
৬) সহজ সরল স্বীকারোক্তি প্রকৃত অনুতাপের জন্য প্রয়োজন। যদি কেউ তা করে তবে সে নিজের স্বার্থের জন্য অবাধ্য হবে না। বিবেক তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবে।
৭) যদি সে প্রকৃত অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের চেষ্টা না করে পরস্পরের ভুলকে প্রশ্রয় দেয় তবে তাদের সাবধান করা হয়েছে এই বলে যে আধ্যাত্মিক জগতের সমস্ত শক্তি তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে।
৫৫৩৫। কোরাণের প্রতিটি আয়াতই দ্বৈর্থবোধক। একটি সমকালীন যা রাসুলের (সা) জীবনের ঘটনার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যটি সাধারণ যা যুগ কাল অতিক্রান্ত সর্ব কালে সর্বসাধারণের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ রাসুলের অনুরূপ অসুবিধায় সাধারণ লোকের জন্য কর্তব্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্বনবীর অনিষ্ট করার ক্ষমতা কারও নাই। জ্ঞানতঃ বা অজ্ঞানতবশতঃ কেউ হয়তো তার ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু তাঁর রক্ষাকর্তা স্বয়ং বিশ্বের মালিক রাব্বুল আলামিন, জিব্রাইল ফেরেশতা এবং সকল মোমেন সম্প্রদায়। অদৃশ্য শক্তি সর্বদা তাঁর নিরাপত্তাতে নিয়োজিত। দেখুন সূরা [ ৩৩ : ৫৬ ] আয়াত।
এই আয়াতটির সাধারণ উপদেশ হচ্ছে, পূণ্যাত্মা ব্যক্তিদের রক্ষা করে অদৃশ্য ঐশ্বরিক শক্তি। এই শক্তি তাদের সর্বদা ঘিরে থাকে। এই ঐশ্বরিক শক্তির নিকট মানুষের শক্তি ও ক্ষমতা ক্ষুদ্র ও নগণ্য।
৫৫৩৬। ৪ নং আয়াতে শুধুমাত্র হযরতের দুজন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো। এই আয়াতে [ ৫নং ] রাসুলের (সা) সমস্ত স্ত্রীদের উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণ নারীদের হতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক গুণ বেশী। কারণ তারা বিশ্ব মুসলিম উম্মার মাতা। সুতারাং তাঁরা যদি তাদের কর্তব্য পালনে অবহেলা করেন বা অপারগ হন তবে তা, হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিণাম। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ বিশ্ব মুসলিম উম্মার মাতাদের চারিত্রিক গুণাবলী কি হওয়া উচিত তা বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরেছেন।
সাধারণ উপদেশ বিশ্ব মুসলিম নারীদের জন্য যারা হবেন পূণ্যাত্মা।
৫৫৩৭। 'Saihat' -আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে যারা ধর্মীয় বিশ্বাস রক্ষার জন্য নিজের বাড়ী ও জন্মভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেন। যারা তীর্থযাত্রা করেন, যারা সিয়াম পালন করেন, যারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য জীবনের সাধারণ আরাম আয়েশকে পরিত্যাগ করেন। লক্ষ্য করুন এই আয়াতের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক গুণাবলীকে নিম্নক্রম অনুযায়ী বিন্যস্ত করা হয়েছে। এ সকল গুণাবলী সকল পূণ্যাত্মা মুসলিম রমনীর কুমারী, বিবাহিতা, বিধবা সকলের জন্য প্রযোজ্য।
৫৫৩৮। লক্ষ্য করুন কিভাবে কোরাণে রাসুলের (সা) দুজন স্ত্রীর দৃষ্টান্ত থেকে সকল স্ত্রীদের সম্বোধনের মাধ্যমে বিশ্বের সকল মোমেন নারীদের জন্য আদর্শ স্থাপন করা হয়েছে। এভাবেই বিশ্বের সকল পুরুষ সকল মহিলাদের জন্য আদর্শ স্থাপন করা হয়েছে। মোমেন পুরুষদের জন্য উপদেশ হচ্ছে, তারা নিজেদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করবে শুধু তাই নয়, তারা তাদের পরিবার ও নিকট জনকেও পাপ থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে কারণ পাপের পরিণতি ভয়াবহ।
৫৫৩৯। "যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর " - দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ২ : ২৪ ]। এই আগুনের ভয়াবহতা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে সাধারণ আগুনের দাহ্য পদার্থ হচ্ছে, কাঠ, কয়লা, অথবা অনুরূপ বস্তু। কিন্তু দোযখের যে আগুনের উল্লেখ এখানে করা হয়েছে তা হচ্ছে আধ্যাত্মিক আগুন। যে আগুনের দহন ক্ষমতা কল্পনা করাও মানুষের অসাধ্য। এই আগুনের ইন্ধন হবে পাপিষ্ঠ মানুষ ও সেই সব মানুষের আত্মা, পাপ করতে করতে যাদের আত্মা প্রস্তরের ন্যায় কঠিন রূপ ধারণ করেছে। অথবা সেই সব প্রস্তর মূর্তি অবিশ্বাসীরা যাদের উপাসনা করতো যারা ছিলো মিথ্যা ও অবিশ্বাসের প্রতীক।
৫৫৪০। দেখুন [ ৭৪ : ৩১ ] আয়াত। আমাদের ধারণায় ফেরেশতাদের আমরা কল্পনা করি পূত, পবিত্র, স্নিগ্ধ ও কোমল। কিন্তু এখানে দোযখের ফেরেশতাদের চিত্র অংকন করা হয়েছে বিপরীত ভাবে। প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণতা ও সৌন্দর্যের জন্য ন্যায়নীতি, সৌন্দর্য, বিশ্বস্ততা, শৃঙ্খলা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের বন্দোবস্ত থাকা প্রয়োজন। এই হচ্ছে সুশীল সমাজ জীবনের পরিপূর্ণ চিত্ররূপ। আল্লাহ্র দুনিয়াতে যেমন এর কোনও ব্যতিক্রম নাই। পরলোকের জীবনেও তেমনি কোন ব্যতিক্রম নাই। কারণ আল্লাহ্র এক উপাধি হচ্ছে ন্যায় বিচারক। ন্যায় ও করুণা, দয়া ও শুদ্ধিকরণ কোন বিপরীতমুখী ব্যবস্থা নয়। এরা পরস্পর সম্পূরক। পৃথিবীর জীবনে আমরা দেখি যদি কোন শাসক অন্যায়কারীকে শাস্তি দান না করেন তবে তিনি ন্যায় বিচারক নন। সুতারাং যিনি সর্বোচ্চ ন্যায়ের প্রতীক কখনও তিনি সর্বোচ্চ কঠোরও বৈকি। তার এই হুকুম যারা মান্য করেন তাদেরই বলা হয়েছে কঠোর স্বভাব ফেরেশতা।
৫৫৪১। কাফিরদের এই শাস্তি কোনও অন্যায় নয়। এ তাদের কৃতকর্মের ফল। ইচ্ছাকৃত ভাবে পাপের পথ অবলম্বন করার জন্য তারা এরূপ ফল লাভ করেছে।
সূরা তাহারীম
সূরা তাহারীম বা নিষিদ্ধ করা - ৬৬
১২ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা : সূরা নং ৫৭ থেকে আরম্ভ করে যে দশটি সূরার শ্রেণী মদিনাতে অবতীর্ণ হয়েছিলো, বর্তমান সূরাটি হচ্ছে শ্রেণীটির সর্বশেষ সূরা। দেখুন ৫৭ নং সূরার ভূমিকা। এই সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের বিরুদ্ধাচারণ করা বা বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের অনিষ্ট ঘটতে পারে।
সূরাটির অবতীর্ণ কাল সম্বন্ধে বলা হয় যে তা হচ্ছে ৭ম হিজরীর যে কোন সময়ে।
সার সংক্ষেপ : নারীর প্রতি দুর্বলতার কারণে পুরুষ তার সামাজিক জীবনের কর্ম থেকে বিচ্যুত হবে না। পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমন্বিত জীবন যাপনের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পূণ্যাত্মাদের উপরে আল্লাহ্র আর্শীবাদ বর্ষিত হয় মন্দের পরিকল্পনা সত্বেও। [ ৬৬ : ১ - ১২ ]।
সূরা তাহারীম বা নিষিদ্ধ করা - ৬৬
১২ আয়াত, ২ রুকু, মাদানী[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। হে নবী ! আল্লাহ্ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন, তুমি তা নিষিদ্ধ করছো কেন ৫৫২৯ ? তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি কামনা কর ৫৫৩০। কিন্তু আল্লাহ্ বারে বারে ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
৫৫২৯। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) প্রত্যহ নিয়মিত ভাবে আসরের পরে সকল বিবির কুশল জিজ্ঞাসার জন্য গমন করতেন। একদিন হযরত যয়নব (রা ) এর কাছে একটু বেশী সময় অতিবাহিত করলেন ও মধু পান করলেন। এতে হযরত আয়েশার মনে ঈর্ষার সৃষ্টি হলো এবং হযরত হাফসার (রা) সাথে পরামর্শ করে স্থির করলেন যে, হযরত যার কাছেই যাবেন তারা সকলেই একবাক্যে বলবেন যে, হযরত দুর্গন্ধযুক্ত কিছু পান করেছেন। রাসুল (সা) যখন বলবেন যে তিনি মধু পান করেছেন, তখন সেই বিবি বললেন যে হয়তো মৌমাছি দুর্গন্ধযুক্ত ফুলের মধু আহরণ করেছিলো। সে মতে রাসুলুল্লাহ্ (সা) একটি হালাল বস্তু অর্থাৎ মধুকে কসমের মাধ্যমে নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন। যয়নব মনঃক্ষুণ হবেন চিন্তা করে হযরত বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্যও বলে দিলেন। আয়াতটি নাজেল হওয়ার শানে নজুল হচ্ছে উপরে বর্ণিত ঘটনা।
রাসুলের (সা) পরিবার আর দশজন সাধারণ মানুষর পরিবারের মত নয়। রাসুলের (সা) স্ত্রীগণ হচ্ছেন পবিত্রতার প্রতীক। তাঁরা হবেন সাধারণ মহিলাদের তুলনায় মিতবাক ও সংযত। কারণ তাঁরা হচ্ছেন মুসলিম বিশ্বের মাতা স্বরূপ ; তারা হচ্ছেন সর্বকালের সর্বযুগের মুসলিম মহিলাদের আদর্শস্বরূপ। দেখুন [ ৩৩ : ২৮ ] আয়াতের টিকা নং ৩৭০০। হাজার হোক তারাও ছিলেন সাধারণ মানুষ। তাই সাধারণ নারীদের ন্যায় তাদের মনেও ঈর্ষার জন্ম নেয়, এবং তাঁরা তাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সম্বন্ধে বিস্মৃত হন। হযরত আয়েশার অবিচক্ষণতা আরেকবার হযরতের মনে দুঃখ দান করেছিলো [ দেখুন ২৪ : ১১ আয়াত ও টিকা ২৯৬২ ] এবং হযরতের জীবনে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিলো। যার ফলে হযরত কিছু দিনের জন্য সকল স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন। হযরত আবু বকরের কন্যা ছিলেন হযরত আয়েশা এবং হাফসা ছিলেন হযরত ওমরের কন্যা। আবু বকর ও ওমর উভয়েই ছিলেন হযরতের একান্ত প্রিয় সহচর। তাদের কন্যা হয়েও তারা সাধারণ নারীর ন্যায় অন্যায় আচরণ করেছিলেন এবং পরস্পরের মধ্যে গোপনীয় কথা যা বলতে হযরত নিষেধ করেছিলেন তা প্রকাশ করেছিলেন। ফলে হযরতের অন্তর দুঃখে পরিপূর্ণ হয়ে পড়লো কারণ হযরত (সা) ছিলেন পরিবারের জন্য প্রেম ও ভালোবাসার আদর্শ প্রতীক স্বরূপ।
হযরত যে মধু পান করবেন না বলে শপথ করেন তারই প্রেক্ষিতে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
৫৫৩০। দেখুন আয়াত [ ৩৩ : ২৮- ৩৪ ]। যেখানে রাসুলের (সা) স্ত্রীগণকে আল্লাহ্ মৃদু ভৎর্সনা করেছেন। যদি রাসুল অন্যান্য সাধারণ স্বামীর ন্যায় হতেন তবে তিনি পারিবারিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম হতেন না। কিন্তু তিনি সাধারণ স্বামী ছিলেন না। হালাল খাদ্য গ্রহণ না করার কসম রাসুলুল্লাহ্র (সা) জন্য শোভন নয়। এতে তাঁর উম্মতের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী প্রজন্ম মধুকে হারাম মনে করতে পারে। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁকে কসম ভঙ্গ করতে আদেশ দান করেছেন।
২। [ হে মানুষ ] ; ইতিমধ্যে আল্লাহ্ [ কোন কোন ক্ষেত্রে ] তোমাদের প্রতিজ্ঞা থেকে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন ৫৫৩১। আল্লাহ্ তোমাদের রক্ষাকর্তা, এবং তিনি সর্বজ্ঞ এবং প্রজ্ঞাময়।
৫৫৩১। দেখুন [ ২ : ২২৪ ] আয়াত। যদি কসম বা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের দ্বারা কেহ সৎ কাজে অংশ গ্রহণ করে বা কোন অন্যায়কে প্রতিহত করে অথবা দুদলের মধ্যে শান্তি স্থাপন করে, সে ক্ষেত্রে কসম ভঙ্গ করা আল্লাহ্ মনোনীত করেন বা জায়েজ। অর্থাৎ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা ও ভঙ্গ করা নির্ভর করবে পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
৩। নবী যখন গোপনে তার কোন এক পত্নীর নিকট বিষয়টি প্রকাশ করেছিলো ৫৫৩২, এবং সে আবার তা [ অন্যের নিকট ] প্রকাশ করেছিলো; তখন আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন। নবী [ সেই স্ত্রীকে ] কিছু অংশ জানালো ৫৫৩৩, এবং কিছু অংশ বর্জন করলো। যখন নবী তার স্ত্রীকে তা বললো, সে বলেছিলো, " কে আপনাকে ইহা অবহিত করলো? " নবী বলেছিলো, " আমাকে অবহিত করেছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত। "
৫৫৩২। কারা হযরতের গোপন কসমকে প্রকাশ করেছিলো সেটা মুসলিম উম্মার জন্য বড় কথা নয়। সে সম্বন্ধে কোরাণ শরীফে বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করে নাই। উপরের টিকা নং ৫৫২৯ এ ব্যাপারে পাঠককূলকে সাহায্য করবে। প্রকৃতপক্ষে, এরূপ তুচ্ছ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আলোচনার প্রয়োজন নাই। আমাদের উচিত এই ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের যে মৌলিক নীতির প্রতি যে আদর্শ ও উপদেশের প্রতি আকর্ষণ করেছেন তার প্রতি দৃষ্টিপাত করা। গোপন কথাটি কি ছিলো সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে আদর্শগত দিক থেকে কসম ভঙ্গ করার কারণ। পরবর্তী আয়াত দেখুন।
৫৫৩৩। এই আয়াতগুলির নৈতিক উপদেশমালা নিম্নরূপ :
১ ) যদি কেউ তার গোপন কথা আমাদের নিকট প্রকাশ করে তবে তা কারও নিকট প্রকাশ করা উচিত নয়। এমন কি নিকটতম বন্ধুর নিকটও নয়।
২) যদি কেউ কারও গোপন কথা খুব নিকটতম বন্ধুর নিকটও প্রকাশ করে তবে আল্লাহ্র পরিকল্পনা হচ্ছে তিনি তা প্রকাশ করে দেবেন।
৩) গোপন কথা একবার প্রকাশ হলে আর গোপন থাকে না - তা প্রচারিত হয়ে পড়ে। যদি কেউ গোপন কথাটিকে প্রচারিত কথার সাথে তুলনা করে তবে দেখতে পাবে যে, সেক্ষেত্রে প্রচারিত কথাটি বহুলাংশে রঞ্জিত। প্রবাদবাক্য হচ্ছে, " কথার হাত পা গজানো।" যারা মানুষের গোপন কথাকে গোপন রাখে না তারা লজ্জাজনক অপরাধে অপরাধী। দেখুন পরবর্তী টিকা।
৪। [ হে রসুলের বিবিদ্বয় ], যদি তোমরা উভয়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন কর তবে ভাল, কারণ তোমাদের হৃদয় তো এরূপ ঝুকে পড়েছে ৫৫৩৪। কিন্তু তোমরা যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অন্যকে সাহায্য কর, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তার রক্ষাকর্তা, এবং জিব্রাঈল, ও বিশ্বাসীদের মধ্যে [প্রত্যেক] মুমিন বান্দা এবং উপরন্তু ফেরেশতারা তার সাহায্যকারী ৫৫৩৫।
৫৫৩৪। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে আরও যে সব উপদেশ দেয়া হয়েছে সেগুলি নিম্নরূপ :
৫) যারা বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তারা যদি প্রকৃত-ই অনুতপ্ত হতে পারে, তবে অনুতাপের মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক নির্মলতা অর্জনে সক্ষম হবে।
৬) সহজ সরল স্বীকারোক্তি প্রকৃত অনুতাপের জন্য প্রয়োজন। যদি কেউ তা করে তবে সে নিজের স্বার্থের জন্য অবাধ্য হবে না। বিবেক তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবে।
৭) যদি সে প্রকৃত অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের চেষ্টা না করে পরস্পরের ভুলকে প্রশ্রয় দেয় তবে তাদের সাবধান করা হয়েছে এই বলে যে আধ্যাত্মিক জগতের সমস্ত শক্তি তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে।
৫৫৩৫। কোরাণের প্রতিটি আয়াতই দ্বৈর্থবোধক। একটি সমকালীন যা রাসুলের (সা) জীবনের ঘটনার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যটি সাধারণ যা যুগ কাল অতিক্রান্ত সর্ব কালে সর্বসাধারণের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ রাসুলের অনুরূপ অসুবিধায় সাধারণ লোকের জন্য কর্তব্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্বনবীর অনিষ্ট করার ক্ষমতা কারও নাই। জ্ঞানতঃ বা অজ্ঞানতবশতঃ কেউ হয়তো তার ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু তাঁর রক্ষাকর্তা স্বয়ং বিশ্বের মালিক রাব্বুল আলামিন, জিব্রাইল ফেরেশতা এবং সকল মোমেন সম্প্রদায়। অদৃশ্য শক্তি সর্বদা তাঁর নিরাপত্তাতে নিয়োজিত। দেখুন সূরা [ ৩৩ : ৫৬ ] আয়াত।
এই আয়াতটির সাধারণ উপদেশ হচ্ছে, পূণ্যাত্মা ব্যক্তিদের রক্ষা করে অদৃশ্য ঐশ্বরিক শক্তি। এই শক্তি তাদের সর্বদা ঘিরে থাকে। এই ঐশ্বরিক শক্তির নিকট মানুষের শক্তি ও ক্ষমতা ক্ষুদ্র ও নগণ্য।
৫। যদি নবী তোমাদের [ সকলকে ] পরিত্যাগ করে, ৫৫৩৬, তবে আল্লাহ্ তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে উৎকৃষ্টতর স্ত্রী দেবেন ; যারা হবে আত্মসমর্পনকারী, বিশ্বাসী,অনুগত, তাওবাকারী, [ বিনয়ী ] এবাদতকারী, যে [ ঈমানের জন্য ] হিজরত করে, এবং সীয়াম পালন করে ৫৫৩৭, - যারা পূর্বে বিবাহিতা এবং অবিবাহিতা কুমারী হবে।
৫৫৩৬। ৪ নং আয়াতে শুধুমাত্র হযরতের দুজন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো। এই আয়াতে [ ৫নং ] রাসুলের (সা) সমস্ত স্ত্রীদের উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণ নারীদের হতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক গুণ বেশী। কারণ তারা বিশ্ব মুসলিম উম্মার মাতা। সুতারাং তাঁরা যদি তাদের কর্তব্য পালনে অবহেলা করেন বা অপারগ হন তবে তা, হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিণাম। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ বিশ্ব মুসলিম উম্মার মাতাদের চারিত্রিক গুণাবলী কি হওয়া উচিত তা বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরেছেন।
সাধারণ উপদেশ বিশ্ব মুসলিম নারীদের জন্য যারা হবেন পূণ্যাত্মা।
৫৫৩৭। 'Saihat' -আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে যারা ধর্মীয় বিশ্বাস রক্ষার জন্য নিজের বাড়ী ও জন্মভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেন। যারা তীর্থযাত্রা করেন, যারা সিয়াম পালন করেন, যারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য জীবনের সাধারণ আরাম আয়েশকে পরিত্যাগ করেন। লক্ষ্য করুন এই আয়াতের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক গুণাবলীকে নিম্নক্রম অনুযায়ী বিন্যস্ত করা হয়েছে। এ সকল গুণাবলী সকল পূণ্যাত্মা মুসলিম রমনীর কুমারী, বিবাহিতা, বিধবা সকলের জন্য প্রযোজ্য।
৬। হে বিশ্বাসীগণ ! ৫৫৩৮। তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে অগ্নি থেকে রক্ষা কর যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর ৫৫৩৯। যাতে নিয়োজিত আছে নিমর্ম হৃদয় কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা ৫৫৪০। যারা আল্লাহ্র নিকট থেকে যে আদেশ লাভ করে তা অমান্য করে না। আর তাদের যে আদেশ দেয়া হয় তা যথাযথভাবে পালন করে।
৫৫৩৮। লক্ষ্য করুন কিভাবে কোরাণে রাসুলের (সা) দুজন স্ত্রীর দৃষ্টান্ত থেকে সকল স্ত্রীদের সম্বোধনের মাধ্যমে বিশ্বের সকল মোমেন নারীদের জন্য আদর্শ স্থাপন করা হয়েছে। এভাবেই বিশ্বের সকল পুরুষ সকল মহিলাদের জন্য আদর্শ স্থাপন করা হয়েছে। মোমেন পুরুষদের জন্য উপদেশ হচ্ছে, তারা নিজেদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করবে শুধু তাই নয়, তারা তাদের পরিবার ও নিকট জনকেও পাপ থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে কারণ পাপের পরিণতি ভয়াবহ।
৫৫৩৯। "যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর " - দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ২ : ২৪ ]। এই আগুনের ভয়াবহতা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে সাধারণ আগুনের দাহ্য পদার্থ হচ্ছে, কাঠ, কয়লা, অথবা অনুরূপ বস্তু। কিন্তু দোযখের যে আগুনের উল্লেখ এখানে করা হয়েছে তা হচ্ছে আধ্যাত্মিক আগুন। যে আগুনের দহন ক্ষমতা কল্পনা করাও মানুষের অসাধ্য। এই আগুনের ইন্ধন হবে পাপিষ্ঠ মানুষ ও সেই সব মানুষের আত্মা, পাপ করতে করতে যাদের আত্মা প্রস্তরের ন্যায় কঠিন রূপ ধারণ করেছে। অথবা সেই সব প্রস্তর মূর্তি অবিশ্বাসীরা যাদের উপাসনা করতো যারা ছিলো মিথ্যা ও অবিশ্বাসের প্রতীক।
৫৫৪০। দেখুন [ ৭৪ : ৩১ ] আয়াত। আমাদের ধারণায় ফেরেশতাদের আমরা কল্পনা করি পূত, পবিত্র, স্নিগ্ধ ও কোমল। কিন্তু এখানে দোযখের ফেরেশতাদের চিত্র অংকন করা হয়েছে বিপরীত ভাবে। প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণতা ও সৌন্দর্যের জন্য ন্যায়নীতি, সৌন্দর্য, বিশ্বস্ততা, শৃঙ্খলা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের বন্দোবস্ত থাকা প্রয়োজন। এই হচ্ছে সুশীল সমাজ জীবনের পরিপূর্ণ চিত্ররূপ। আল্লাহ্র দুনিয়াতে যেমন এর কোনও ব্যতিক্রম নাই। পরলোকের জীবনেও তেমনি কোন ব্যতিক্রম নাই। কারণ আল্লাহ্র এক উপাধি হচ্ছে ন্যায় বিচারক। ন্যায় ও করুণা, দয়া ও শুদ্ধিকরণ কোন বিপরীতমুখী ব্যবস্থা নয়। এরা পরস্পর সম্পূরক। পৃথিবীর জীবনে আমরা দেখি যদি কোন শাসক অন্যায়কারীকে শাস্তি দান না করেন তবে তিনি ন্যায় বিচারক নন। সুতারাং যিনি সর্বোচ্চ ন্যায়ের প্রতীক কখনও তিনি সর্বোচ্চ কঠোরও বৈকি। তার এই হুকুম যারা মান্য করেন তাদেরই বলা হয়েছে কঠোর স্বভাব ফেরেশতা।
৭। [ তারা বলবে ], হে অবিশ্বাসীরা ! আজকের দিনে তোমরা কোন অজুহাত তৈরী করো না। তোমরা যা করতে তোমাদের তারই প্রতিফল দেয়া হবে ৫৫৪১।
৫৫৪১। কাফিরদের এই শাস্তি কোনও অন্যায় নয়। এ তাদের কৃতকর্মের ফল। ইচ্ছাকৃত ভাবে পাপের পথ অবলম্বন করার জন্য তারা এরূপ ফল লাভ করেছে।
রুকু - ২
৫৫৪২। নারী ও পুরুষকে একক ভাবে ও সংঘবদ্ধভাবে নিন্দা জ্ঞাপনের পরে এই আয়াতে আহ্বান করা হয়েছে আলোর প্রতি। যে আলো পরলোকে পথ প্রদর্শন করবে। এ কথা সকলকে অনুভব করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে যে, যারা পৃথিবীতে মন্দ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে এবং পূণ্য কাজে আত্মনিয়োগ করে, তাদের সেই চেষ্টার ফললাভ ঘটে পরলোকেও।
৫৫৪৩। পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ কষ্টের জন্য মানুষ স্বয়ং দায়ী। মানুষ যখন প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয় ; হৃদয়ে বিরাজিত হিংসা, দ্বেষ, লোভ-লালসা ইত্যাদি বিভিন্ন রীপু সমূহ যখন প্রবল আকার ধারণ করে, তখন আত্মার মাঝে যন্ত্রণার উদ্ভব ঘটে। আল্লাহ্ এই আয়াতে বলেছেন যে, অতীতে আমাদের যাই দোষত্রুটি ঘটে থাকুক না কেন তাওবার মাধ্যমে এবং সৎকাজের দ্বারা আল্লাহ্ বান্দাকে পার্থিব দুঃখ কষ্ট থেকে এবং আত্মার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দান করবেন। প্রকৃত পক্ষে যারা প্রবৃত্তি বা রীপুর তাড়না থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে এবং অতীতের গুণাহ্ থেকে মাপ চেয়ে সৎকাজে আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ্ তাদের অন্তরকে বেহেশতি শান্তিতে ভরিয়ে দেন এবং আমরা আমাদের কৃতকর্মের দ্বারা যেসব বিপর্যয়ের শীকার হই তা থেকে আমাদের রক্ষা করেন।
৫৫৪৪। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৫৭ : ১২ ]। পাপ কর্ম ও প্রবৃত্তির তাড়না আত্মার বিশুদ্ধতাকে ও স্বচ্ছতাকে ঢেকে দেয়। ফলে আত্মার মাঝে আল্লাহ্র নূর প্রতিফলিত হতে বাঁধার সৃষ্টি করে। পাপের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়ার ফলে মুমিন বান্দাদের আত্মার মাঝে আল্লাহ্র নূর বা হেদায়েতের আলো প্রতিফলিত হয়, এবং দিনে দিনে তা বৃদ্ধি পেয়ে সফল পরিণতি ও পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হয়। পূণ্যাত্মারা তাদের এই সফল পরিণতিতেও সন্তুষ্ট থাকবেন না তারা তাদের মন্দ কর্মের ক্ষুদ্রতম কণার কালিমা থেকেও মুক্তির জন্য এবং আত্মিক পূর্ণতা লাভের জন্য আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করবেন। যখন বান্দার মনের এরূপ অবস্থা প্রাপ্ত হয়, তখন আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও করুণা তাদের সর্ব সত্তাকে বিধৌত করে এবং তারা পরিপূর্ণ পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হন।
৫৫৪৫। দেখুন আয়াত [ ৯ : ৭৩ ] যেখানে মোনাফেক ও কাফেরদের সম্বন্ধে একই ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে এই আয়াতে মন্দ ও দুষ্টের মানসিকতা সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। পূণ্যাত্মাদের সাহচর্যের সুযোগ দান সত্বেও এ সব পাপীরা তাদের পাপ কার্য থেকে বিরত থাকে না। যেহেতু এই সূরাটি প্রধানতঃ নারীদের সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, সে কারণে নীচের আয়াতে দুজন নারীর উদাহরণকে তুলে ধরা হয়েছে যারা পূণ্যাত্মাদের সাহচর্যেও নিজেদের সংশোধন করতে অক্ষম হয়েছিলো।
৫৫৪৬। পড়ুন নূহ্ নবীর কাহিনী সূরা [ ১১ : ৩৬ - ৪৮ ] আয়াতে। নূহ্ নবীর সময়ে পৃথিবী পাপ দ্বারা এতটাই পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো যে একে পরিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ্ প্রলয় ধ্বংসকারী বন্যা প্রেরণ করেন। [ ১১ : ৩৬ ] আয়াতে বলা হয়েছে যে, ''যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনও ঈমান আনবে না। সুতারাং তারা যা করে তার জন্য তুমি দুঃখিত হয়ো না।" কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁর নিজ পরিবারের মাঝেই পাপীরা অবস্থান করছিলো। স্ত্রী ব্যতীত,নূহ নবীর পুত্র যে ছিলো নির্বোধ ও কর্তব্য জ্ঞানহীন যার উল্লেখ আছে সূরা [ ১১ : ৪২ - ৪৬] আয়াতে। হতভাগ্য নূহ্ নবী তিনি তাঁর পুত্রকে শেষ রক্ষার জন্য আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করলেন, উল্লেখ করলেন যে, " হে আমার প্রতিপালক ! আমার পুত্র আমার পরিবারভূক্ত।" তাঁর প্রার্থনার উত্তরে আল্লাহ্ তাঁকে অবহিত করেন যে, " হে নূহ্ ! সে তো তোমার পরিবারভূক্ত নহে। সে অবশ্যই অসৎকর্মপরায়ণ। নূহ্ নবীর পরিবারের ন্যায় সংসারে অনেক পরিবার আছে যাদের অনুরূপ পুত্র এবং পুত্রের মাতা বিদ্যমান। নূহ্ নবীর স্ত্রী পূণ্যাত্মা নবীর যোগ্য স্ত্রী ছিলেন না। তার ফলে তিনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাপের পথে ধ্বংস হয়ে যান ইহকাল ও পরকালেও।
৫৫৪৭। লূতের স্ত্রীর উল্লেখ কোরাণে একাধিকবার করা হয়েছে। দেখুন সূরা [১১ : ৮১] আয়াত ও টিকা ১৫৭৭; এবং [ ৭ : ৮৩ ] আয়াত ও টিকা ১০৫১ ইত্যাদি। লূতের স্ত্রীর চারিপার্শ্বের পরিবেশ ছিলো আকণ্ঠ পাপে নিমগ্ন। সে নিজে এই পাপ কর্মকে নৈতিক ভাবে সমর্থন করতো এবং তার পূণ্যাত্মা স্বামীর অনুগামী হওয়ার পরির্বতে পাপীদের অনুসরণ ও সমর্থন করতো। সুতারাং অন্যান্য পাপীদের ন্যায় তারও ভাগ্যের সেই একই পরিণতি ঘটে। আল্লাহ্র রাজত্বে ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব হচ্ছে মূল নীতি।
৫৫৪৮।" তারা তাদের স্বামীদের প্রতি সত্যনিষ্ঠ ছিলো না।" এই বাক্যটির অর্থ এই নয় যে লূত এবং নূহের স্ত্রীরা ব্যাভিচারী ছিলেন। এই বাক্যটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, লূত ও নূহের প্রচারিত সত্যের সাথে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো। যদিও তাদের যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক গুণে গুণান্বিত ও পূণ্যাত্মা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার সুযোগ তারা লাভ করেছিলেন। তবুও তারা তাদের প্রচারিত সত্য ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণে অক্ষম হয়েছিলেন। ফলে নবী পত্মী হিসেবে তাদের সম্মান তাদের আল্লাহ্র শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে নাই। তারা পূণ্যাত্মা স্বামীর স্ত্রী এ দোহাই তাদের কার্যকরী পথ প্রদর্শণে ব্যর্থ ছিলো। অন্য সাধারণ পাপী স্ত্রীলোকের মত তাদেরও দোযখে নিক্ষিপ্ত করা হবে। এভাবেই আল্লাহ্ ব্যক্তিগত দায় দায়িত্বের উপরে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন এবং এদেরকে উদাহরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ্র রাজত্বে কেউ কারও পূণ্যের অংশীদার নয়, কেউ কারও পাপের শাস্তিও ভোগ করবে না। প্রত্যেকের দায়িত্ব হচ্ছে তার আত্মার পবিত্রতা রক্ষা করা।
৫৫৪৯। ফেরাউনের পত্মীর নাম সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে আছিয়া। যে চারজনের কথা বলা হয়ে থাকে সরাসরি বেহেশতে প্রবেশ লাভ করবেন আছিয়া তাদের অন্যতম। অন্য তিন জন্য হলেন বিবি মরিয়ম, হযরত ঈসার মাতা, বিবি খাদিজা (রা) হযরত মুহম্মদের (সা) স্ত্রী ; বিবি ফাতেমা, হযরত মুহম্মদের (সা) কন্যা। লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে আছিয়া ছিলেন পাপিষ্ঠ, অহংকারী, কাফের এবং পাপী ফেরাউনের স্ত্রী। কিন্তু তিনি আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যে এবং তাকওয়াতে আধ্যাত্মিক জগতে সর্বোচ্চ সম্মান লাভ করেন আল্লাহ্র নিকট। এটা ছিলো তাঁর আধ্যাত্মিক বিজয়। সম্ভবতঃ ফেরাউনের স্ত্রী যার উল্লেখ এই আয়াতে করা হয়েছে তিনিই হযরত মুসার জীবন রক্ষা করেছিলেন। দেখুন [ ২৮ : ৯ ] আয়াত। ফেরাউনের পাপের শাস্তি আছিয়াকে ভোগ করতে হবে না। এভাবেই ব্যক্তিগত দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণের মাধ্যমে।
৫৫৫০। ফেরাউন পত্মীর আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পনের অপূর্ব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই আয়াতের মাধ্যমে। পার্থিব সম্পদ, ক্ষমতা ও চাকচিক্যময় জীবনের পরিবর্তে এই পূণ্যাত্মা মহিলার লক্ষ্য ছিলো পরলোকের জীবনে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খা। ফেরাউনের প্রাসাদের আড়ম্বরও তাঁকে এ উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে নাই। প্রার্থনার মাধ্যমে সম্ভবতঃ তিনি আদর্শকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে 'শহীদ' হওয়ার জন্যও প্রস্তুত এই মনোভাবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
৫৫৫১। সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে থাকে যে, বিবি মরিয়মের পিতার নাম ছিলো ইমরান। আবার মরিয়ম ছিলেন হযরত ঈসার মাতা। দেখুন আয়াত [ ৩ : ৩৫ ] ও টিকা ৩৭৫। বিবি মরিয়ম ছিলেন পূত, পবিত্র পূণ্যাত্মা নারী, যদিও ইহুদীরা তাঁর সম্বন্ধে অপবাদ রটনা করে। [ দেখুন ১৯ : ২৭-২৮ ] আয়াত।
৫৫৫২। দেখুন [ ২১ : ৯১ ] বিবি মরিয়মের কুমারী অবস্থায় পুত্র সন্তানের জন্মের বিবরণের জন্য দেখুন [ ১৯: ১৬-২৯ ] আয়াত। সূরা [৩২ : ৯] আয়াতে আল্লাহ্ আদম সন্তানের সৃষ্টির বর্ণনা করেছেন নিম্নলিখিত ভাবে ; " পরে তিনি উহাকে করেছেন সুঠাম এবং উহাতে ফুঁকে দিয়েছেন তাঁর রুহু থেকে।" আদম সৃষ্টির বর্ণনাতেও অনুরূপ রুহু ফুঁকে দেয়ার উল্লেখ আছে দেখুন সূরা [ ১৫ : ২৯ ] আয়াত। সুতারাং কুমারী মরিয়মের গর্ভধারণ সম্বন্ধে যে রুহু ফুঁকে দেয়ার উল্লেখ আছে তা দ্বারা এ কথা ধারণা করা অবিমৃষ্যকারীতা যে আল্লাহ্ হযরত ঈসার পিতা ছিলেন। তাদের এই ধারণার সাথে গ্রীক পৌরাণিকের মিল খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তারা বলে এ্যাপোলোর পিতা ছিলেন দেবতা জিউস। মাতা ছিলেন ধরিত্রীর কন্যা। ঠিক সেই ভাবধারাই খৃষ্টানরা হযরত ঈসা সম্বন্ধে প্রচারে আগ্রহী।
৫৫৫৩। আয়াতটি শেষ করা হয়েছে বিবি মরিয়মের আধ্যাত্মিক গুণাবলীর বর্ণনা করে। মরিয়ম তাঁর বিশ্বস্ততা নিবেদন করেছিলেন ঈসা নবীর প্রতি ও তাঁর নিকট প্রেরিত আল্লাহ্র কিতাবের প্রতি। আল্লাহ্র বলেছেন যে, মরিয়ম ছিলেন সকল যুগের অনুগতদের অন্যতম। এখানে আরবীতে যে 'Qanitin' বা অনুগত শব্দটি আছে স্ত্রী লিংগের জন্য আরবীতে তা ব্যবহার হয় না। কিন্তু এখানে ব্যবহৃত হয়েছে এ কারণে যে পার্থিব জগতের বাইরে পরলোকের জীবনে লিঙ্গের কোনও আস্তিত্ব নাই। ইহলোকের জীবনে পুনঃ সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় সমাজ জীবনের শান্তি শৃঙ্খলার জন্য, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য উভয় লিঙ্গের সমন্বিত জীবনের প্রয়োজন আছে। তবে পার্থিব জীবনের শেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অনন্ত পরলোকের জীবনের শেষ পরিণতিতে সফল লাভ করা। পরলোকের জীবনে কোনও লিঙ্গের ভেদাভেদ নাই; সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক জীবনে সকলেই এক আদম সন্তান।
আল্লাহ্ [ ২১ : ৯১ - ৯২ ] আয়াতে বলেছেন, " এই যে তোমাদের জাতি - ইহা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমার এবাদত কর।" এই সূরাটি শেষ করা হয়েছে এই ভাবধারার মাধ্যমে যে, আধ্যাত্মিক জগতে নারী ও পুরুষ সম অধিকার ভূক্ত এবং বিবি মরিয়মের উদাহরণের মাধ্যমে তাঁকে সম্মানীত করার মাধ্যমে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে।
৮। হে বিশ্বাসীগণ ! ৫৫৪২। আন্তরিক অনুতাপের মাধ্যমে আল্লাহ্র দিকে ফিরে এসো; এই আশায় যে, তোমাদের প্রভু তোমাদের মন্দ কর্মগুলি মোচন করে দেবেন ৫৫৪৩, এবং তোমাদের প্রবেশ করাইবেন সেই বেহেশতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। রসুল এবং তাঁর সাথে যারা বিশ্বাসী, সেদিন আল্লাহ্ তাদের অপমানিত হতে দেবেন না। [ সেদিন ঈমানের ] জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও ডানদিকে ছুটতে থাকবে ৫৫৪৪, যখন তারা বলবে, "আমাদের প্রভু ! আমাদের জন্য আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর, এবং আমাদের জন্য ক্ষমা মঞ্জুর কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।"
৫৫৪২। নারী ও পুরুষকে একক ভাবে ও সংঘবদ্ধভাবে নিন্দা জ্ঞাপনের পরে এই আয়াতে আহ্বান করা হয়েছে আলোর প্রতি। যে আলো পরলোকে পথ প্রদর্শন করবে। এ কথা সকলকে অনুভব করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে যে, যারা পৃথিবীতে মন্দ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে এবং পূণ্য কাজে আত্মনিয়োগ করে, তাদের সেই চেষ্টার ফললাভ ঘটে পরলোকেও।
৫৫৪৩। পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ কষ্টের জন্য মানুষ স্বয়ং দায়ী। মানুষ যখন প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয় ; হৃদয়ে বিরাজিত হিংসা, দ্বেষ, লোভ-লালসা ইত্যাদি বিভিন্ন রীপু সমূহ যখন প্রবল আকার ধারণ করে, তখন আত্মার মাঝে যন্ত্রণার উদ্ভব ঘটে। আল্লাহ্ এই আয়াতে বলেছেন যে, অতীতে আমাদের যাই দোষত্রুটি ঘটে থাকুক না কেন তাওবার মাধ্যমে এবং সৎকাজের দ্বারা আল্লাহ্ বান্দাকে পার্থিব দুঃখ কষ্ট থেকে এবং আত্মার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দান করবেন। প্রকৃত পক্ষে যারা প্রবৃত্তি বা রীপুর তাড়না থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে এবং অতীতের গুণাহ্ থেকে মাপ চেয়ে সৎকাজে আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ্ তাদের অন্তরকে বেহেশতি শান্তিতে ভরিয়ে দেন এবং আমরা আমাদের কৃতকর্মের দ্বারা যেসব বিপর্যয়ের শীকার হই তা থেকে আমাদের রক্ষা করেন।
৫৫৪৪। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৫৭ : ১২ ]। পাপ কর্ম ও প্রবৃত্তির তাড়না আত্মার বিশুদ্ধতাকে ও স্বচ্ছতাকে ঢেকে দেয়। ফলে আত্মার মাঝে আল্লাহ্র নূর প্রতিফলিত হতে বাঁধার সৃষ্টি করে। পাপের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়ার ফলে মুমিন বান্দাদের আত্মার মাঝে আল্লাহ্র নূর বা হেদায়েতের আলো প্রতিফলিত হয়, এবং দিনে দিনে তা বৃদ্ধি পেয়ে সফল পরিণতি ও পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হয়। পূণ্যাত্মারা তাদের এই সফল পরিণতিতেও সন্তুষ্ট থাকবেন না তারা তাদের মন্দ কর্মের ক্ষুদ্রতম কণার কালিমা থেকেও মুক্তির জন্য এবং আত্মিক পূর্ণতা লাভের জন্য আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করবেন। যখন বান্দার মনের এরূপ অবস্থা প্রাপ্ত হয়, তখন আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও করুণা তাদের সর্ব সত্তাকে বিধৌত করে এবং তারা পরিপূর্ণ পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হন।
৯। হে নবী ! অবিশ্বাসী ও মোনাফেকদেরে বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম কর, এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হও। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম [ সত্যিই ] তা কত নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল ৫৫৪৫।
৫৫৪৫। দেখুন আয়াত [ ৯ : ৭৩ ] যেখানে মোনাফেক ও কাফেরদের সম্বন্ধে একই ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে এই আয়াতে মন্দ ও দুষ্টের মানসিকতা সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে। পূণ্যাত্মাদের সাহচর্যের সুযোগ দান সত্বেও এ সব পাপীরা তাদের পাপ কার্য থেকে বিরত থাকে না। যেহেতু এই সূরাটি প্রধানতঃ নারীদের সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে, সে কারণে নীচের আয়াতে দুজন নারীর উদাহরণকে তুলে ধরা হয়েছে যারা পূণ্যাত্মাদের সাহচর্যেও নিজেদের সংশোধন করতে অক্ষম হয়েছিলো।
১০। আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহের স্ত্রী ৫৫৪৬, ও লূতের স্ত্রীর ৫৫৪৭ দৃষ্টান্ত দিতেছেন। তারা ছিলো আমার পূণ্যাত্মা দুই বান্দার অধীনে। কিন্তু তারা তাদের [ স্বামীদের ] প্রতি সত্যনিষ্ঠ ছিলো না ৫৫৪৮। ফলে তারা তাদের কাজের দরুণ আল্লাহ্র নিকট কিছুই লাভ করতে পারে নাই। বরং তাদের বলা হয়েছিলো, " অন্য সকল প্রবেশকারীর সাথে আগুনে প্রবেশ কর।"
৫৫৪৬। পড়ুন নূহ্ নবীর কাহিনী সূরা [ ১১ : ৩৬ - ৪৮ ] আয়াতে। নূহ্ নবীর সময়ে পৃথিবী পাপ দ্বারা এতটাই পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো যে একে পরিশুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ্ প্রলয় ধ্বংসকারী বন্যা প্রেরণ করেন। [ ১১ : ৩৬ ] আয়াতে বলা হয়েছে যে, ''যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনও ঈমান আনবে না। সুতারাং তারা যা করে তার জন্য তুমি দুঃখিত হয়ো না।" কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁর নিজ পরিবারের মাঝেই পাপীরা অবস্থান করছিলো। স্ত্রী ব্যতীত,নূহ নবীর পুত্র যে ছিলো নির্বোধ ও কর্তব্য জ্ঞানহীন যার উল্লেখ আছে সূরা [ ১১ : ৪২ - ৪৬] আয়াতে। হতভাগ্য নূহ্ নবী তিনি তাঁর পুত্রকে শেষ রক্ষার জন্য আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করলেন, উল্লেখ করলেন যে, " হে আমার প্রতিপালক ! আমার পুত্র আমার পরিবারভূক্ত।" তাঁর প্রার্থনার উত্তরে আল্লাহ্ তাঁকে অবহিত করেন যে, " হে নূহ্ ! সে তো তোমার পরিবারভূক্ত নহে। সে অবশ্যই অসৎকর্মপরায়ণ। নূহ্ নবীর পরিবারের ন্যায় সংসারে অনেক পরিবার আছে যাদের অনুরূপ পুত্র এবং পুত্রের মাতা বিদ্যমান। নূহ্ নবীর স্ত্রী পূণ্যাত্মা নবীর যোগ্য স্ত্রী ছিলেন না। তার ফলে তিনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাপের পথে ধ্বংস হয়ে যান ইহকাল ও পরকালেও।
৫৫৪৭। লূতের স্ত্রীর উল্লেখ কোরাণে একাধিকবার করা হয়েছে। দেখুন সূরা [১১ : ৮১] আয়াত ও টিকা ১৫৭৭; এবং [ ৭ : ৮৩ ] আয়াত ও টিকা ১০৫১ ইত্যাদি। লূতের স্ত্রীর চারিপার্শ্বের পরিবেশ ছিলো আকণ্ঠ পাপে নিমগ্ন। সে নিজে এই পাপ কর্মকে নৈতিক ভাবে সমর্থন করতো এবং তার পূণ্যাত্মা স্বামীর অনুগামী হওয়ার পরির্বতে পাপীদের অনুসরণ ও সমর্থন করতো। সুতারাং অন্যান্য পাপীদের ন্যায় তারও ভাগ্যের সেই একই পরিণতি ঘটে। আল্লাহ্র রাজত্বে ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব হচ্ছে মূল নীতি।
৫৫৪৮।" তারা তাদের স্বামীদের প্রতি সত্যনিষ্ঠ ছিলো না।" এই বাক্যটির অর্থ এই নয় যে লূত এবং নূহের স্ত্রীরা ব্যাভিচারী ছিলেন। এই বাক্যটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, লূত ও নূহের প্রচারিত সত্যের সাথে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো। যদিও তাদের যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক গুণে গুণান্বিত ও পূণ্যাত্মা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার সুযোগ তারা লাভ করেছিলেন। তবুও তারা তাদের প্রচারিত সত্য ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণে অক্ষম হয়েছিলেন। ফলে নবী পত্মী হিসেবে তাদের সম্মান তাদের আল্লাহ্র শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে নাই। তারা পূণ্যাত্মা স্বামীর স্ত্রী এ দোহাই তাদের কার্যকরী পথ প্রদর্শণে ব্যর্থ ছিলো। অন্য সাধারণ পাপী স্ত্রীলোকের মত তাদেরও দোযখে নিক্ষিপ্ত করা হবে। এভাবেই আল্লাহ্ ব্যক্তিগত দায় দায়িত্বের উপরে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন এবং এদেরকে উদাহরণের মাধ্যমে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ্র রাজত্বে কেউ কারও পূণ্যের অংশীদার নয়, কেউ কারও পাপের শাস্তিও ভোগ করবে না। প্রত্যেকের দায়িত্ব হচ্ছে তার আত্মার পবিত্রতা রক্ষা করা।
১১। এবং মুমিনদের জন্য দিচ্ছেন ফিরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত ৫৫৪৯। দেখো, সে বলেছিলো, " হে আমার প্রভু ! তোমার সান্নিধ্যে জান্নাতে আমার জন্য একটি অট্টালিকা নির্মাণ করে দিও ৫৫৫০ এবং আমাকে রক্ষা কর ফেরাউন ও তার দুষ্কৃতি থেকে এবং আমাকে রক্ষা কর যারা পাপ করে তাদের নিকট থেকে।
৫৫৪৯। ফেরাউনের পত্মীর নাম সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে আছিয়া। যে চারজনের কথা বলা হয়ে থাকে সরাসরি বেহেশতে প্রবেশ লাভ করবেন আছিয়া তাদের অন্যতম। অন্য তিন জন্য হলেন বিবি মরিয়ম, হযরত ঈসার মাতা, বিবি খাদিজা (রা) হযরত মুহম্মদের (সা) স্ত্রী ; বিবি ফাতেমা, হযরত মুহম্মদের (সা) কন্যা। লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে আছিয়া ছিলেন পাপিষ্ঠ, অহংকারী, কাফের এবং পাপী ফেরাউনের স্ত্রী। কিন্তু তিনি আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যে এবং তাকওয়াতে আধ্যাত্মিক জগতে সর্বোচ্চ সম্মান লাভ করেন আল্লাহ্র নিকট। এটা ছিলো তাঁর আধ্যাত্মিক বিজয়। সম্ভবতঃ ফেরাউনের স্ত্রী যার উল্লেখ এই আয়াতে করা হয়েছে তিনিই হযরত মুসার জীবন রক্ষা করেছিলেন। দেখুন [ ২৮ : ৯ ] আয়াত। ফেরাউনের পাপের শাস্তি আছিয়াকে ভোগ করতে হবে না। এভাবেই ব্যক্তিগত দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণের মাধ্যমে।
৫৫৫০। ফেরাউন পত্মীর আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পনের অপূর্ব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই আয়াতের মাধ্যমে। পার্থিব সম্পদ, ক্ষমতা ও চাকচিক্যময় জীবনের পরিবর্তে এই পূণ্যাত্মা মহিলার লক্ষ্য ছিলো পরলোকের জীবনে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খা। ফেরাউনের প্রাসাদের আড়ম্বরও তাঁকে এ উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে নাই। প্রার্থনার মাধ্যমে সম্ভবতঃ তিনি আদর্শকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে 'শহীদ' হওয়ার জন্যও প্রস্তুত এই মনোভাবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
১২। এবং আরও দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ইমরান কন্যা মারইয়ামের ৫৫৫১, যে তার সতীত্ব্ রক্ষা করেছিলেন ; তখন আমি [ তার দেহে ] রুহু ফুঁকে দিয়েছিলাম ৫৫৫২; বস্তুতঃ সে তার প্রভুর বাণী এবং তার প্রত্যাদেশকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিলো; এবং সে ছিলো অনুগত [ বান্দাদের ] মধ্যে একজন ৫৫৫৩।
৫৫৫১। সাধারণ ভাবে বলা হয়েছে থাকে যে, বিবি মরিয়মের পিতার নাম ছিলো ইমরান। আবার মরিয়ম ছিলেন হযরত ঈসার মাতা। দেখুন আয়াত [ ৩ : ৩৫ ] ও টিকা ৩৭৫। বিবি মরিয়ম ছিলেন পূত, পবিত্র পূণ্যাত্মা নারী, যদিও ইহুদীরা তাঁর সম্বন্ধে অপবাদ রটনা করে। [ দেখুন ১৯ : ২৭-২৮ ] আয়াত।
৫৫৫২। দেখুন [ ২১ : ৯১ ] বিবি মরিয়মের কুমারী অবস্থায় পুত্র সন্তানের জন্মের বিবরণের জন্য দেখুন [ ১৯: ১৬-২৯ ] আয়াত। সূরা [৩২ : ৯] আয়াতে আল্লাহ্ আদম সন্তানের সৃষ্টির বর্ণনা করেছেন নিম্নলিখিত ভাবে ; " পরে তিনি উহাকে করেছেন সুঠাম এবং উহাতে ফুঁকে দিয়েছেন তাঁর রুহু থেকে।" আদম সৃষ্টির বর্ণনাতেও অনুরূপ রুহু ফুঁকে দেয়ার উল্লেখ আছে দেখুন সূরা [ ১৫ : ২৯ ] আয়াত। সুতারাং কুমারী মরিয়মের গর্ভধারণ সম্বন্ধে যে রুহু ফুঁকে দেয়ার উল্লেখ আছে তা দ্বারা এ কথা ধারণা করা অবিমৃষ্যকারীতা যে আল্লাহ্ হযরত ঈসার পিতা ছিলেন। তাদের এই ধারণার সাথে গ্রীক পৌরাণিকের মিল খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে তারা বলে এ্যাপোলোর পিতা ছিলেন দেবতা জিউস। মাতা ছিলেন ধরিত্রীর কন্যা। ঠিক সেই ভাবধারাই খৃষ্টানরা হযরত ঈসা সম্বন্ধে প্রচারে আগ্রহী।
৫৫৫৩। আয়াতটি শেষ করা হয়েছে বিবি মরিয়মের আধ্যাত্মিক গুণাবলীর বর্ণনা করে। মরিয়ম তাঁর বিশ্বস্ততা নিবেদন করেছিলেন ঈসা নবীর প্রতি ও তাঁর নিকট প্রেরিত আল্লাহ্র কিতাবের প্রতি। আল্লাহ্র বলেছেন যে, মরিয়ম ছিলেন সকল যুগের অনুগতদের অন্যতম। এখানে আরবীতে যে 'Qanitin' বা অনুগত শব্দটি আছে স্ত্রী লিংগের জন্য আরবীতে তা ব্যবহার হয় না। কিন্তু এখানে ব্যবহৃত হয়েছে এ কারণে যে পার্থিব জগতের বাইরে পরলোকের জীবনে লিঙ্গের কোনও আস্তিত্ব নাই। ইহলোকের জীবনে পুনঃ সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় সমাজ জীবনের শান্তি শৃঙ্খলার জন্য, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য উভয় লিঙ্গের সমন্বিত জীবনের প্রয়োজন আছে। তবে পার্থিব জীবনের শেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অনন্ত পরলোকের জীবনের শেষ পরিণতিতে সফল লাভ করা। পরলোকের জীবনে কোনও লিঙ্গের ভেদাভেদ নাই; সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক জীবনে সকলেই এক আদম সন্তান।
আল্লাহ্ [ ২১ : ৯১ - ৯২ ] আয়াতে বলেছেন, " এই যে তোমাদের জাতি - ইহা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমার এবাদত কর।" এই সূরাটি শেষ করা হয়েছে এই ভাবধারার মাধ্যমে যে, আধ্যাত্মিক জগতে নারী ও পুরুষ সম অধিকার ভূক্ত এবং বিবি মরিয়মের উদাহরণের মাধ্যমে তাঁকে সম্মানীত করার মাধ্যমে এই সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে।