+
-
R
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এই সূরাটি একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা। এর সময়কাল সম্ভবতঃ সূরা কিয়ামত [ ৭৫ নং ] এর সমসাময়িক। দুটি সূরার বিষয়বস্তুর মাঝেও মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই সূরাতে সত্য প্রত্যাখানকারীদের প্রতি পরলোকের ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। " সত্য প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দূর্ভাগ্য" এই লাইনটি পঞ্চাশ আয়াতের এই সূরাতে দশবার পুণরাবৃত্তি করা হয়েছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি পাঁচটি আয়াতে একবার বলা হয়েছে সঙ্গীতের ধূয়ার মত।
[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৫৮৬৩। সূরাটির শুরু হয়েছে পাঁচটি বস্তুর প্রতি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে। শপথের এই বস্তুগুলি রূপক ধর্মী যা ৭নং আয়াতে বর্নিত স্বতন্ত্র বিশেষ ঘটনার প্রতি মনোযোগ আকষর্ণ করে। এই বিশেষ ঘটনাটি হচ্ছে শেষ বিচারের দিন, যা অবশ্যাম্ভবী। আমাদের সে দিনের জন্য সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
শপথের বস্তুগুলি পার্থিব। পার্থিব এই পাঁচটি রূপকের মাধ্যমে তিনটি অতীন্দ্রিয় ভাবধারাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বয়নশিল্পে তাঁতের বিভিন্ন রংয়ের সূতাগুলি যেরূপ পাশাপাশি অবস্থান করে, এই তিনটি অতীন্দ্রিয় ভাবধারাও সেরূপ পাশাপাশি বিরাজ করে, পাঁচটি শপথের বস্তুগুলির মাধ্যমে রূপকের সাহায্যে পাঁচটি ধাপে [ ৭৭ : ১ -৫ ] আয়াতে উপস্থাপন করা হয়েছে। যে তিনটি ভাবধারাকে উপস্থাপন করা হয়েছে তা নিম্নরূপ : ক) পৃথিবীতে বায়ুর বৈশিষ্ট্য, খ) আধ্যাত্মিক জগতে ফেরেশতাদের কর্তব্য দায়িত্ব এবং গ) পার্থিব জগতে রসুলদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যা আধ্যাত্মিক জগতের সাথে সমন্বিত। এই তিনটি ভাবধারাকে সংযুক্ত করা হয়েছে আল্লাহ্র কর্তৃত্বের সাথে।
রূপকের প্রকৃত অর্থ লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা দুঃসাধ্য, যা একমাত্র অনুভূতির মাধ্যমেই উপলব্ধি করা সম্ভব।
৫৮৬৪। প্রথম ভাবধারাটি যদি বায়ুর বৈশিষ্ট্য হয় তবে তার ব্যাখ্যা হবে পৃথিবীর জীবনে বায়ু এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ভূমিকাকে ধারাবাহিকভাবে এ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে :
১) [ ৭৭ : ১ ] ভূমির উর্বরতা ও সজীবতা নির্ভর করে বৃষ্টির উপরে। সেই বৃষ্টির শুভ আগমন বার্তা বহন করে আনে বাতাস। দেখুন [ ১৫ : ২২ ] ; [ ৩০ : ৪৮ ]।
২) [ ৭৭ : ২ ] যদিও বৃষ্টি বাহিত বাতাস আর্শীবাদ স্বরূপ, তবুও সর্বক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কালবৈশাখীর ঝড় এবং প্রচন্ড টর্নেডো মানুষের জন্য আর্শীবাদ নয় বরং দুঃখ দুর্দ্দশার কারণ [ ৫১ : ৪১ - ৪২ ]।
৩) [ ৭৭ : ৩ ] সঞ্চালনকারী বাতাস উদ্ভিদ জগতে বীজের বংশবিস্তারে বা সঞ্চালনে সাহায্য করে।
৪) [ ৭৭ : ৪ ] বিচ্ছিন্ন কারী বায়ু,অর্থাৎ যে বায়ু মেঘসমূহ বিচ্ছিন্ন করে সঞ্চালন করে বা পরিবেশকে আবর্জনামুক্ত করে পরিশুদ্ধ করে। অর্থাৎ পরিশুদ্ধকারী।
৫) [ ৭৭ :৫ ] বাতাস শব্দের স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করে ঠিক সেরূপ আল্লাহ্র রসুলগণ আল্লাহ্র বাণীকে মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেন।
এ সমস্ত জিনিষই আল্লাহ্র ক্ষমতা ও সেই সাথে তাঁর করুণাধারাকে প্রকাশ করে থাকে। আমাদের আল্লাহ্র করুণার উপরে নির্ভর করতে বলা হয়েছে ; আরও বলা হয়েছে যে, পরকালের বিচার অবশ্যই সংঘটিত হবে। এই আয়াতগুলির সাথে [ ৫১ : ১ - ৬ সূরা যারিয়াত ] আয়াতগুলির সদৃশ্য লক্ষ্য করুন।
৫৮৬৫। যদি দ্বিতীয় ভাবধারা, অর্থাৎ যদি বায়ু না হয়ে ফেরেশতা হয় তবে তার ব্যাখ্যা হবে নিম্নরূপ। ফেরেশতারা হচ্ছেন আল্লাহ্র হুকুম পালনকারী দাস - তাদের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন। তাঁদের কার্যকে নিম্নলিখিত ভাবে প্রকাশ করা যায় :
১) [ ৭৭ : ১ ] তাদের আগমন পৃথিবীর জন্য রহমত স্বরূপ,
২) [ ৭৭ : ২ ] তাঁরা অনেক সময়ে শাস্তি ও ধ্বংসের বারতা নিয়ে আসেন যেমন ঘটেছিলো লূতের সম্প্রদায়ের বেলাতে [ ১৫ : ৫৭ - ৬৬]।
৩) [ ৭৭ : ৩ ] তাঁরা আল্লাহ্র করুণাকে মানুষের মাঝে বিতরণ করেন ঠিক যেরূপ বাতাস বীজের বিস্তার ঘটায়।
৪) [ ৭৭ : ৪ ] তাঁরা মানুষের মাঝে ভালোকে মন্দ থেকে পার্থক্য বা বিচ্ছিন্ন করেন।
৫) [ ৭৭ : ৫ ] তারা হলেন আল্লাহ্র হুকুম সমূহ নবী রাসুলদের নিকট পৌঁছানোর মাধ্যমে বিশেষ। দেখুন উপরের টিকার ৫ নং বাক্য।
৫৮৬৬। তৃতীয় ভাবধারা : যদি বিষয়টি দ্বারা রসুলদের বুঝানো হয়, অথবা সেই সব প্রত্যাদেশ যা [ ৫ -৬] নং আয়াতের জন্য সার্থকভাবে রূপক হিসেবে প্রযোজ্য হবে তবে তা নিম্নরূপ :
১) [ ৭৭ : ১ ] নবী ও রসুলেরা একের পরে একজন ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীতে আগমন করেন। পৃথিবীর জন্য তাঁরা কল্যাণ স্বরূপ। কোরাণের আয়াত সমূহও ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী অবতীর্ণ করা হয়েছে। উভয়ক্ষেত্রে তা করা হয় মানুষের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির জন্য।
২) [ ৭৭ : ২ ] তাদের আগমন ছিলো পৃথিবীর অধঃপতিত মানবের মুক্তির জন্য। তারা পাপের সকল শাখা-প্রশাখা সমূলে উৎপাটিত করেন এবং সেখানে নূতন সমাজের পত্তন করেন ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে।
৩) [ ৭৭ : ৩ ] তাঁরা কাছে এবং দূরে সর্বত্র সত্যের বাণী নির্ভিক ভাবে প্রচার করেন।
৪) [ ৭৭ : ৪ ] তাঁদের শিক্ষার মাধ্যমেই বিশ্বাসীদের [ যারা আল্লাহ্র বিধান মানে ] পার্থক্য করা যায় অবিশ্বাসীদের [ যারা আল্লাহ্র বিধান মানেন না ] থেকে।
৫) [ ৭৭ : ৫ ] তারা আল্লাহ্র বাণী প্রচার করেন যার সাহায্যে বিশ্বাসীদের অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের পথ প্রদর্শন করা হয়েছে এবং মন্দ ও অন্যায়কারীদের সতর্ক করা হয়েছে।
৫৮৬৭। নক্ষত্রের আলো নির্বাপিত হবে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে তারারা অদৃশ্য হয়ে যাবে যেমন বলা হয়েছে সূরা [ ৮১ : ২ ] এবং [ ৮২ : ২ ] আয়াতে। আকাশ বিদির্ণ হয়ে যাবে যেমন বলা হয়েছে [ ৮২ : ১ ] এবং [ ৭৩ : ১৮ ] আয়াতে। পর্বত স্থানচ্যুত হয়ে ধূলায় পরিণত হবে যেমন বলা হয়েছে [ ৫৯ : ১৪ ] ; [ ৮১ : ৩ ] ইত্যাদি আয়াতে। অর্থাৎ পৃথিবীর অস্থিত্বের সাথে জড়িত আকাশ ও ভূমন্ডলের যে সব চিহ্ন বর্তমান সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
৫৮৬৮। এই বর্ণনা হচ্ছে পুণরুত্থান দিবসের বর্ণনা। সেদিন এই চেনা জানা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবীতে যুগে যুগে নবী ও রসুলদের প্রেরণ করা হয়েছিলো মানুষের হেদায়েতের জন্য। পুণরুত্থান দিবসে তাঁদের সকলকে একত্রিত করা হবে এবং বিচার সভায় আনায়ন করা হবে সাক্ষী হিসেবে যেনো তাদের প্রচারিত বাণীর প্রেক্ষাপটে পূণ্যাত্মাদের সনাক্ত ও পাপীদের অভিযুক্ত করা যায়।
৫৮৬৯। দেখুন [ ৩৭ : ২১ ] আয়াত ও টিকা ৪০৪৭। আরও দেখুন [ ৪৪ : ৪০ ] আয়াত ও টিকা ৪৭১৮। বিচার দিবস হচ্ছে শেষ বিচারের দিন, যেদিন পরলোকের অনন্ত জীবনের জন্য ভাগ্য নির্ধারিত হবে। সেদিন ভালোকে মন্দ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করা হবে। যারা পৃথিবীর জীবনে মিথ্যা ও অন্যায়ের মাধ্যমে সম্পদ ও ক্ষমতা হস্তগত করেছিলো, শেষ বিচারের দিনে তাদের সেই সম্পদ বা ক্ষমতা কোনও কাজেই আসবে না। এরই প্রেক্ষাপটে সঙ্গীতের ধূঁয়ার ন্যায় নীচের লাইনটি বারে বারে পুণরাবৃত্ত করা হয়েছে। লাইনটি হলো, " সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য হবে দুর্ভাগ্য।"
৫৮৭০। আল্লাহ্র আইন বা বিধান সর্বকালে সর্বযুগে অপরিবর্তনীয়। নূহ্ এর সম্প্রদায়ের জন্য যা ছিলো, আরবের আ'দ ও সামুদ সম্প্রদায়ের জন্যও ছিলো সেই একই বিধান। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি জ্ঞানে, গরিমায়, সভ্যতায়, পৃথিবীকে করেছে আলোকিত যেমনঃ ইজিপ্ট, মেসোপোটেমিয়া, সিন্ধু নদের সভ্যতা ইত্যাদি। যতদিন তারা তাদের সমাজ ব্যবস্থায় আল্লাহ্র বিধানের অর্থাৎ ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছে, ততদিন তারা জ্ঞানে, সভ্যতায় উন্নতির শীর্ষে বিরাজ করেছে। যখনই তারা সেই বিধান থেকে বিচ্যুত হয়েছে তখনই তাদের পতন ঘটেছে। পৃথিবীর বর্তমান প্রজন্ম যারা তাঁদের বিজ্ঞান ও সভ্যতার জন্য গর্বিত। যদি তারা আল্লাহ্র বিধান থেকে বিচ্যুত হয়, তবে তাদেরও ধ্বংস হবে অনিবার্য। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে আল্লাহ্র বিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ সত্য ও ন্যায়। অর্থাৎ তা সর্বদা ন্যায় ও সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। এভাবেই ন্যায় ও সত্য থেকে বিচ্যুতির ফলে পূর্ববর্তীরা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে।
৫৮৭১। দেখুন [ ৩২ : ৮ ] আয়াত ও টিকা ৩৬৩৮। মানুষ জানে পৃথিবীতে মানুষ অপেক্ষা ক্ষমতাধর আর কেহ নাই। সে কারণে তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, তার সৃষ্টি হয়েছে অত্যন্ত নগন্য ভাবে। তারপরেও পরবর্তীতে পৃথিবীতে সে শক্তিশালীরূপে উদ্ধত অহংকারীরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ভবিষ্যত পরলোকের জীবনকে অস্বীকার করে থাকে।
৫৮৭২। দেখুন [ ২৩ : ১৩ ] আয়াতের টিকা ২৮৭৩। মাতৃজঠরের নিরাপদ আশ্রয়ে শিশু ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপান্তরিত হয় এটা কি স্রষ্টার এক অপূর্ব সৃষ্টি রহস্য নয় ?
৫৮৭৩। এই নির্দ্দিষ্ট কালটি হচ্ছে নয়মাস দশদিন। শিশু জন্মের পূর্বে ও পরে শিশুর গঠন প্রক্রিয়াতে যে অপূর্ব সমন্বয় সাধন করা হয় তা স্রষ্টার জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই স্বাক্ষর। এ সব সাক্ষর অনুধাবন করেও কি আমরা স্রষ্টার প্রতি আমাদের ভক্তি, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অপারগতা প্রদর্শন করতে পারি ? মাতৃজঠরের স্রষ্টা অতি নিপুন ভাবে পরিমিত ভাবে মানব জীবনকে গঠন করে থাকেন। সামান্য ত্রুটিও তার পরবর্তী জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।
৫৮৭৪। মাতৃজঠরের মানব জীবন ও মাতৃজঠরের বাইরে পৃথিবীর জীবনকে রূপকের উপকরণ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। মাতৃজঠরের জীবনকে পৃথিবীর, " শিক্ষানবীশ কালের " সাথে তুলনা করা যায় - যা পরলোকের অনন্ত জীবনের প্রস্তুতি স্বরূপ। অথবা কবরের জীবনের সাথে মাতৃজঠরের জীবনকে তুলনা করা যায়। মাতৃজঠরের জীবন হচ্ছে পৃথিবীর সুস্থ জীবনের পূর্বশর্ত; ঠিক সেরূপ কবরের জীবন হচ্ছে পরলোকের অনন্ত জীবনের পূর্ব অবস্থা।
৫৮৭৫। কি অপূর্ব উপমা হচ্ছে এই আয়াত। পৃথিবীতে ভালো-মন্দ, জীবন -মৃত্যু,ধ্বংস -সৃষ্টি, আগুন -পানি, পাপ -পূণ্য পাশাপাশি বিরাজ করে। শুধু বিরাজ করে বললে ভুল বলা হবে একে অন্যকে অতিক্রম করে যেতে সর্বদা সচেষ্ট। "জীবিত" হচ্ছে যে কোন সৃষ্টি বা জীবনের প্রতীক, "মৃত " হচ্ছে যে কোন ধ্বংস বা মৃত্যুর প্রতীক। এই প্রতীকের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আল্লাহ্র রাজত্বের অত্যাচার্য ঘটনা প্রবাহের দিকে। অনুভব করতে বলা হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ঘটনা প্রবাহ কিভাবে স্ব স্ব অস্তিত্বে বিরাজমান থাকে ও একে অন্যকে অতিক্রম করে। ঠিক সে ভাবেই পৃথিবীর মানদন্ডে যারা দরিদ্র ও মান মর্যদাহীন,পরলোকের জীবনে তারাই হবেন মর্যাদার অধিকারী। ভিখারী লাভ করবে রাজার সম্মান আবার ফেরাউনের ন্যায় দোর্দ্দন্ড প্রতাপশালী নৃপতি হবে দোযখের অধিবাসী।
৫৮৭৬। দেখুন [ ১৬ : ১৫ ] আয়াতের টিকা ২০৩৮। পর্বতের উপমা বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে যেমন [ ১৩ : ৩ ] আয়াত। এই আয়াতে পর্বতকে বলা হয়েছে "উচ্চ এবং সুদৃঢ় "। সাধারণতঃ সুউচ্চ পর্বতমালা হয় কঠিন শিলাদ্বারা গঠিত। কিন্তু এই কঠিন শিলা ভেদ করেই সুপেয় পানির নহর ও ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। এক্ষেত্রে পর্বত হয় ঠিক যেন স্পঞ্জের মত যা পানি শোষণ করে রাখে এবং পানিকে ফিল্টারের কাগজের ন্যায় পরিশুদ্ধ করে, মিঠা পানি, নদী প্রবাহ ও প্রস্রবনের পানির ধারা বা স্রোতকে সঠিক রাখতে সক্ষম হয় কারণ হচ্ছে পর্বতের উচ্চতা। সুউচ্চ পর্বত থেকে পানি তার স্বাভাবিক ধর্মের কারণে নিম্নের সমতলভূমির দিকে প্রবাহিত হয় এবং পৃথিবীকে সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল ভূমিরূপে গড়ে তোলে। 'জুবাইদা' ক্যানেল' হচ্ছে মক্কার পানি সরবরাহের মূল ধারা। যারা মক্কার শুষ্ক তপ্ত উপত্যকা দেখেছেন এবং এই উপত্যকার চারিপার্শ্বের মিষ্টি পানির প্রস্রবন এবং 'জুবাইদা ক্যানেল' দেখেছেন তারা এই উপমাটির সঠিক তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারবেন।
তবে এই উপমা সকল দেশের জন্যই প্রযোজ্য যদিও তার তারতম্য ঘটতে পারে। এভাবেই আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার স্বাক্ষরকে ভাস্বর করা হয়েছে বিশ্ব মানবের সম্মুখে। যেখানে আল্লাহ্র ক্ষমতার এরূপ অত্যাচার্য স্বাক্ষর আমাদের চক্ষুর সম্মুখে বর্তমান, সেখানে কতটা অর্বাচীন হলে আমরা পরলোকের জীবন যে সম্বন্ধে আল্লাহ্ আমাদের যা বলেছেন, তা অস্বীকার করতে পারি।
৫৮৭৭। পৃথিবীতে যারা নিজেকে পাপে লিপ্ত রাখতো পরলোকের জীবনে তাদের পরিণতিকে এই আয়াত সমূহের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে তারা আগুন ব্যতীত অন্য কোনও ছায়ার সন্ধান লাভ করবে না। তারা যে অগ্নি ছায়ার সন্ধান লাভ করবে তা হবে তিন স্তর বিশিষ্ট -তাদের ডান দিকে বা দিকে ও উপর থেকে অর্থাৎ অগ্নিতপ্ত এ ছায়া তাদের সর্ব অঙ্গ আচ্ছাদিত করে ফেলবে। কিন্তু এ ছায়া তাদের দেহকে শীতল ও আরাম দেওয়ার পরিবর্তে আগুনের শিখার তপ্ত অনুভূতি দান করবে।
এই তিনটি স্তম্ভকে রূপক অর্থে এখানে তিনটি পাপের পরিণতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যে পাপ আত্মাকে মসীলিপ্ত করে আল্লাহ্র নূর প্রবেশের স্বচ্ছতাকে নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ্ মানুষকে বিভিন্ন মানসিক দক্ষতা বা গুণাবলী দান করেছেন। মানুষ তাদের এই গুণাবলীকে ধ্বংস করে নিজস্ব পাপ কাজের দরুন। মানুষ যখন আল্লাহ্ প্রদত্ত মানসিক দক্ষতাসমূহ পূণ্য কাজে ব্যয় না করে পাপ কাজে ব্যয় করে তখনই আত্মার উপরে প্রলেপ পড়ে, আত্মা ধীরে ধীরে মসীলিপ্ত হতে থাকে। এর ফলে
১) মানুষের জন্য ভালোবাসার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তা রূপান্তরিত হয় মানুষের প্রতি অবিশ্বাস ও ঘৃণাতে।
২) সত্যকে দেখার, বোঝার ও অনুধাবনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তা রূপান্তরিত হয় কুসংস্কার ও নির্বুদ্ধিতাতে।
৩) বিবেক বা আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি নষ্ট হয়ে তা পর্যবেশিত হয় পার্থিব লোভ এবং স্বার্থপরতায়। তাদের এই পাপ ধীরে ধীরে এতটাই বৃদ্ধি পায় যে তা স্তম্ভের ন্যায় বিশাল আকৃতি বিশিষ্ট হয়। তিনটি আগুনের স্তম্ভ হচ্ছে তাদের পাপের এই তিনটি পরিণতি। পার্থিব জীবনে যেরূপ বিভিন্ন জ্বালানী বিভিন্ন ধরণের অগ্নি ও তাপ উৎপাদন করে। জ্বালানীর ধর্ম অনুযায়ী তাপের তারতম্য ঘটে, ঠিক সেরূপই হচ্ছে পাপের বিভিন্নতার কারণে শাস্তির বিভিন্নতা যা তিন ধরণের স্তম্ভ রূপক অর্থে প্রকাশ করা হয়েছে।
৫৮৭৮। 'Qasr' অর্থ দুর্গ, বড় অট্টালিকা, প্রাসাদ। যদি 'Qasarat(-un)' এর বহুবচন 'Qasar' হিসেবে পড়া হয় তবে এর অর্থ হবে কাঠের স্তুপ যা আগুনের খোরাক। [Ibn Abbas abud Bukhari]। [মওলানা ইউসুফ আলী ] শেষ অর্থটির ধারণাটি অধিক প্রযোজ্য মনে করেন।
৫৮৭৯। আগুনের পীতবর্ণের স্ফুলিঙ্গ একটির পরে আর একটি উৎক্ষেপণ হবে, মনে হবে যেনো, পীতবর্ণের উটের সারি। যেনো একটির পরে একটি উট দ্রুত গমন করছে। এর দ্বারা দুধরণের উপমার উপস্থাপন করা হয়েছে। এর দ্বারা শুধু যে রং এর গতিকে উপস্থাপন করা হয়েছে তাই-ই নয়, আরও উপস্থাপন করা হয়েছে পার্থিব জগতের অহংকারকে যেমন বলা হয়েছে যে, " তোমারা তোমাদের পুষ্ট, স্বাস্থ্যবান, পীত বর্ণের উট শ্রেণী দর্শনে যে গর্ব বোধ করতে সে সমস্ত স্থায়ী কোনও কিছুই নয়। তারা হচ্ছে উড়ন্ত স্ফুলিঙ্গ শিখার ন্যায় অস্থায়ী। আত্মগর্বের এই স্ফুলিঙ্গ, পার্থিব জীবনে যতই আনন্দ দিক পরলোকের জীবনে তা স্থায়ী হবে না বরং দাহের যন্ত্রণা সৃষ্টি করবে। ধোঁয়ার স্তম্ভ ও স্ফুলিঙ্গের সাহায্যে কাল্পনিক কোনও কিছুর আকৃতি বুঝাতে চাওয়া হয়েছে।
৫৮৮০। পরলোকের সে জীবনে পাপীরা ভয়ে শঙ্কায় বোবা হয়ে যাবে, তাদের বাক্যস্ফুর্তি হবে না। তারা তাদের স্বপক্ষে উপস্থাপনের মত কোনও যুক্তির অবতারণা করতে পারবে না। তাদের কৃতকর্ম খুব সাধারণ ভাবেই তাদের বিপক্ষে কথা বলবে। তারা তাদের পাপ যথা : মিথ্যা উপাস্যের উপাসনাকে বৃথাই অস্বীকার করতে চেষ্টা করবে [ ৬: ২৩ ] ; কিন্তু তাদের জিহ্বা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দান করবে [ ২৪ : ২৪ ]।
৫৮৮১। আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হয়, প্রাথমিকভাবে " তোমাদিগকে " শব্দটি দ্বারা কোরাইশদের বুঝানো হয়েছে, যারা রাসুলের (সা) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলো। বলা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের সকল জ্ঞান ও কলাকৌশল প্রয়োগ করতে পার, কিন্তু তা সত্বেও তোমরা আল্লাহ্র পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে পারবে না। দেখুন পরবর্তী টিকা।
৫৮৮২। যে কোন কলা কৌশল যা রাসুলের (সা ) বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছিলো তা আল্লাহ্র সত্যের রিরুদ্ধেই প্রয়োগ করা হয়। যা আল্লাহ্ বা বিশ্বস্রষ্টার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণ করে তা কি কখনও কোনও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে ? কারও কি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্র পরিকল্পনা নস্যাৎ করার ক্ষমতা আছে? যদি থাকে তবে তারা তাদের সে ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। এই মনোবৃত্তি দ্বারা তারা শুধু তাদের নিজেদের ধ্বংসই ডেকে আনবে। মোশরেক আরবরা আল্লাহ্র বিরোধিতা করে সেই পাপই করেছিলো। এসব লোকের জন্য করুণা ব্যতীত অন্য কিছুই করার নাই। পরলোকে তাদের অবস্থান কোথায় হবে ? এদের অবস্থানকে স্মরণ করেই বলা হয়েছে, " সেই দিন দুভার্গ্য সত্য প্রত্যাখানকারীদের জন্য।"
রুকু - ২
৫৮৮৩। এই আয়াতটি পরলোকের জীবনে মুত্তাকীদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দের বর্ণনা করা হয়েছে যা পাপীদের অবস্থানের বিপরীত। মুত্তাকীদের জন্য যে ছায়া থাকবে তা তাদের স্নিগ্ধ শীতলতা দান করবে এবং জ্বলন্ত অগ্নি থেকে রক্ষা করবে। এখানে 'ছায়া' শব্দটি এবং 'প্রস্রবণ' শব্দটি, দুটোই রূপকধর্মী শব্দ। 'ছায়া' শব্দটি দ্বারা আল্লাহ্র আর্শীবাদের অনুভূতির ব্যাপ্তিকে বুঝানো হয়েছে; যা সর্বসত্ত্বাকে প্লাবিত করে ফেলবে। আল্লাহ্র ভালোবাসার 'প্রস্রবণ' হবে অফুরন্ত ও অক্ষয় যা মুত্তাকীদের পরলোকের জীবনকে করবে আপ্লুত।
৫৮৮৪। "ফলমূল" - দেখুন [ ৫৩ : ৭৩ ] আয়াতের টিকা ৪৬৭১।
৫৮৮৫। সৎ কর্মের পুরষ্কার ইহকাল এবং পরকাল উভয়কালেই বিদ্যমান। সৎকর্মশীলদের জীবন ইহকালে হয় শান্তিময় এবং পরকালে হয় অপার প্রশান্তিতে ভরপুর।
৫৮৮৬। "পানাহার কর " - পানাহার শব্দটি এখানে প্রতীকধর্মী। এর দ্বারা পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাসকে বুঝানো হয়েছে। মানুষকে পৃথিবীতে আল্লাহ্ তার নেয়ামতে ধন্য করেন। কেউ অর্থ বিত্ত, কেউ মান মর্যদায়, কেউ প্রভাব-প্রতিপত্তিতে, কেউ সৃষ্টিধর্মী প্রতিভা ইত্যাদিতে ধন্য হয়। আল্লাহ্র এ সব দানে মানুষে মানুষে, পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সম্ভবতঃ এর দ্বারা আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন। কে তাঁর নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করে থাকে। আর কে করে না। যারা নিজ রীপুকে সংযত করতে অক্ষম তারাই এসব নেয়ামতের অপব্যবহার দ্বারা পাপের পথে পরিচালিত হয়। আল্লাহ্র নেয়ামত তাদের করে তোলে লোভী, দুর্নীতিপরায়ণ, উচ্ছৃঙ্খল। কারণ, যে পূণ্যের জন্য বা ভালোর জন্য সাধনা করে সে সৎপথের সন্ধান লাভ করে। আবার যে পাপের পথে পা বাড়ায় সে ভোগবিলাসের পিছল পথে অতি দ্রুত নেমে যায়। আর ভোগ বিলাসের এই সময় খুবই স্বল্পস্থায়ী। এদেরকেই আল্লাহ্ অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন করতে বলেছেন। যদি তারা তা না করে তবে ইহজীবনের সৌভাগ্যে তাদের পরলোকের জীবনে ধ্বংস ডেকে আনবে।
৫৮৮৭। অর্থাৎ সেজদা কর শব্দটি প্রতীকধর্মী। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে বিনয়বনত হওয়া। অর্থাৎ বিনয়ের সাথে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খা পোষণ করা, সৎ জীবন যাপন করা এবং প্রার্থনার মাধ্যমেই তা করা যায়। যারা তা না করে তারা অনুকম্পার পাত্র কারণ তাদের জন্য শেষ বিচারের দিন হবে ভয়াবহ। মনে রাখতে হবে আল্লাহ্র এবাদতের পূর্ব শর্তই হচ্ছে সৎ জীবন যাপন করা।
৫৮৮৮। কুর-আন হচ্ছে সহজ সরল পথের ঠিকানা। কুরআনের মাধ্যমে আদম সন্তানের জন্য সহজ সরল পথের পথ নির্দ্দেশ প্রেরণ করা হয়েছে। তার পরেও যারা তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে থাকে, তবে তারা কার দেওয়া পথ নির্দ্দেশ গ্রহণ করবে ? অবশ্যই এই পথ নির্দ্দেশ হচ্ছে ইসলাম ও কোরাণ।
সূরা মুর্সালাত
সূরা মুর্সালাত বা যাদের অগ্রে প্রেরণ করা হয় - ৭৭
৫০ আয়াত, ২ রুকু, মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : এই সূরাটি একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা। এর সময়কাল সম্ভবতঃ সূরা কিয়ামত [ ৭৫ নং ] এর সমসাময়িক। দুটি সূরার বিষয়বস্তুর মাঝেও মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই সূরাতে সত্য প্রত্যাখানকারীদের প্রতি পরলোকের ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। " সত্য প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দূর্ভাগ্য" এই লাইনটি পঞ্চাশ আয়াতের এই সূরাতে দশবার পুণরাবৃত্তি করা হয়েছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি পাঁচটি আয়াতে একবার বলা হয়েছে সঙ্গীতের ধূয়ার মত।
সূরা মুর্সালাত বা যাদের অগ্রে প্রেরণ করা হয় - ৭৭
৫০ আয়াত, ২ রুকু, মক্কী[দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। শপথ, অগ্রে প্রেরণকারী [ বাতাসের ] ৫৮৬৩, যাদের [ মানুষের কল্যাণের জন্য ] একে একে পাঠানো হয়। ৫৮৬৪
৫৮৬৩। সূরাটির শুরু হয়েছে পাঁচটি বস্তুর প্রতি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে। শপথের এই বস্তুগুলি রূপক ধর্মী যা ৭নং আয়াতে বর্নিত স্বতন্ত্র বিশেষ ঘটনার প্রতি মনোযোগ আকষর্ণ করে। এই বিশেষ ঘটনাটি হচ্ছে শেষ বিচারের দিন, যা অবশ্যাম্ভবী। আমাদের সে দিনের জন্য সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
শপথের বস্তুগুলি পার্থিব। পার্থিব এই পাঁচটি রূপকের মাধ্যমে তিনটি অতীন্দ্রিয় ভাবধারাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। বয়নশিল্পে তাঁতের বিভিন্ন রংয়ের সূতাগুলি যেরূপ পাশাপাশি অবস্থান করে, এই তিনটি অতীন্দ্রিয় ভাবধারাও সেরূপ পাশাপাশি বিরাজ করে, পাঁচটি শপথের বস্তুগুলির মাধ্যমে রূপকের সাহায্যে পাঁচটি ধাপে [ ৭৭ : ১ -৫ ] আয়াতে উপস্থাপন করা হয়েছে। যে তিনটি ভাবধারাকে উপস্থাপন করা হয়েছে তা নিম্নরূপ : ক) পৃথিবীতে বায়ুর বৈশিষ্ট্য, খ) আধ্যাত্মিক জগতে ফেরেশতাদের কর্তব্য দায়িত্ব এবং গ) পার্থিব জগতে রসুলদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যা আধ্যাত্মিক জগতের সাথে সমন্বিত। এই তিনটি ভাবধারাকে সংযুক্ত করা হয়েছে আল্লাহ্র কর্তৃত্বের সাথে।
রূপকের প্রকৃত অর্থ লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা দুঃসাধ্য, যা একমাত্র অনুভূতির মাধ্যমেই উপলব্ধি করা সম্ভব।
৫৮৬৪। প্রথম ভাবধারাটি যদি বায়ুর বৈশিষ্ট্য হয় তবে তার ব্যাখ্যা হবে পৃথিবীর জীবনে বায়ু এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই ভূমিকাকে ধারাবাহিকভাবে এ ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে :
১) [ ৭৭ : ১ ] ভূমির উর্বরতা ও সজীবতা নির্ভর করে বৃষ্টির উপরে। সেই বৃষ্টির শুভ আগমন বার্তা বহন করে আনে বাতাস। দেখুন [ ১৫ : ২২ ] ; [ ৩০ : ৪৮ ]।
২) [ ৭৭ : ২ ] যদিও বৃষ্টি বাহিত বাতাস আর্শীবাদ স্বরূপ, তবুও সর্বক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কালবৈশাখীর ঝড় এবং প্রচন্ড টর্নেডো মানুষের জন্য আর্শীবাদ নয় বরং দুঃখ দুর্দ্দশার কারণ [ ৫১ : ৪১ - ৪২ ]।
৩) [ ৭৭ : ৩ ] সঞ্চালনকারী বাতাস উদ্ভিদ জগতে বীজের বংশবিস্তারে বা সঞ্চালনে সাহায্য করে।
৪) [ ৭৭ : ৪ ] বিচ্ছিন্ন কারী বায়ু,অর্থাৎ যে বায়ু মেঘসমূহ বিচ্ছিন্ন করে সঞ্চালন করে বা পরিবেশকে আবর্জনামুক্ত করে পরিশুদ্ধ করে। অর্থাৎ পরিশুদ্ধকারী।
৫) [ ৭৭ :৫ ] বাতাস শব্দের স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করে ঠিক সেরূপ আল্লাহ্র রসুলগণ আল্লাহ্র বাণীকে মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেন।
এ সমস্ত জিনিষই আল্লাহ্র ক্ষমতা ও সেই সাথে তাঁর করুণাধারাকে প্রকাশ করে থাকে। আমাদের আল্লাহ্র করুণার উপরে নির্ভর করতে বলা হয়েছে ; আরও বলা হয়েছে যে, পরকালের বিচার অবশ্যই সংঘটিত হবে। এই আয়াতগুলির সাথে [ ৫১ : ১ - ৬ সূরা যারিয়াত ] আয়াতগুলির সদৃশ্য লক্ষ্য করুন।
২। যা অতঃপর প্রলয়ংকারী ঝটিকা রূপে প্রবাহিত হয়; ৫৮৬৫
৫৮৬৫। যদি দ্বিতীয় ভাবধারা, অর্থাৎ যদি বায়ু না হয়ে ফেরেশতা হয় তবে তার ব্যাখ্যা হবে নিম্নরূপ। ফেরেশতারা হচ্ছেন আল্লাহ্র হুকুম পালনকারী দাস - তাদের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন। তাঁদের কার্যকে নিম্নলিখিত ভাবে প্রকাশ করা যায় :
১) [ ৭৭ : ১ ] তাদের আগমন পৃথিবীর জন্য রহমত স্বরূপ,
২) [ ৭৭ : ২ ] তাঁরা অনেক সময়ে শাস্তি ও ধ্বংসের বারতা নিয়ে আসেন যেমন ঘটেছিলো লূতের সম্প্রদায়ের বেলাতে [ ১৫ : ৫৭ - ৬৬]।
৩) [ ৭৭ : ৩ ] তাঁরা আল্লাহ্র করুণাকে মানুষের মাঝে বিতরণ করেন ঠিক যেরূপ বাতাস বীজের বিস্তার ঘটায়।
৪) [ ৭৭ : ৪ ] তাঁরা মানুষের মাঝে ভালোকে মন্দ থেকে পার্থক্য বা বিচ্ছিন্ন করেন।
৫) [ ৭৭ : ৫ ] তারা হলেন আল্লাহ্র হুকুম সমূহ নবী রাসুলদের নিকট পৌঁছানোর মাধ্যমে বিশেষ। দেখুন উপরের টিকার ৫ নং বাক্য।
৩। এবং [ বীজকে ] ছড়িয়ে দেয় দূর দূরান্তরে ;
৪। অতঃপর যা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে,
৫। অতঃপর দেশ-দেশান্তরে উপদেশ বিস্তার করে ৫৮৬৬
৬। সমর্থনের জন্য অথবা সতর্ক করার জন্য; -
৪। অতঃপর যা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে,
৫। অতঃপর দেশ-দেশান্তরে উপদেশ বিস্তার করে ৫৮৬৬
৬। সমর্থনের জন্য অথবা সতর্ক করার জন্য; -
৫৮৬৬। তৃতীয় ভাবধারা : যদি বিষয়টি দ্বারা রসুলদের বুঝানো হয়, অথবা সেই সব প্রত্যাদেশ যা [ ৫ -৬] নং আয়াতের জন্য সার্থকভাবে রূপক হিসেবে প্রযোজ্য হবে তবে তা নিম্নরূপ :
১) [ ৭৭ : ১ ] নবী ও রসুলেরা একের পরে একজন ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীতে আগমন করেন। পৃথিবীর জন্য তাঁরা কল্যাণ স্বরূপ। কোরাণের আয়াত সমূহও ধারাবাহিকভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী অবতীর্ণ করা হয়েছে। উভয়ক্ষেত্রে তা করা হয় মানুষের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির জন্য।
২) [ ৭৭ : ২ ] তাদের আগমন ছিলো পৃথিবীর অধঃপতিত মানবের মুক্তির জন্য। তারা পাপের সকল শাখা-প্রশাখা সমূলে উৎপাটিত করেন এবং সেখানে নূতন সমাজের পত্তন করেন ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে।
৩) [ ৭৭ : ৩ ] তাঁরা কাছে এবং দূরে সর্বত্র সত্যের বাণী নির্ভিক ভাবে প্রচার করেন।
৪) [ ৭৭ : ৪ ] তাঁদের শিক্ষার মাধ্যমেই বিশ্বাসীদের [ যারা আল্লাহ্র বিধান মানে ] পার্থক্য করা যায় অবিশ্বাসীদের [ যারা আল্লাহ্র বিধান মানেন না ] থেকে।
৫) [ ৭৭ : ৫ ] তারা আল্লাহ্র বাণী প্রচার করেন যার সাহায্যে বিশ্বাসীদের অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধনের পথ প্রদর্শন করা হয়েছে এবং মন্দ ও অন্যায়কারীদের সতর্ক করা হয়েছে।
৭। নিশ্চয়, তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ঘটবেই।
৮। অতঃপর যখন নক্ষত্ররাজির আলো ক্ষীণ হয়ে আসবে ৫৮৬৭;
৮। অতঃপর যখন নক্ষত্ররাজির আলো ক্ষীণ হয়ে আসবে ৫৮৬৭;
৫৮৬৭। নক্ষত্রের আলো নির্বাপিত হবে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে তারারা অদৃশ্য হয়ে যাবে যেমন বলা হয়েছে সূরা [ ৮১ : ২ ] এবং [ ৮২ : ২ ] আয়াতে। আকাশ বিদির্ণ হয়ে যাবে যেমন বলা হয়েছে [ ৮২ : ১ ] এবং [ ৭৩ : ১৮ ] আয়াতে। পর্বত স্থানচ্যুত হয়ে ধূলায় পরিণত হবে যেমন বলা হয়েছে [ ৫৯ : ১৪ ] ; [ ৮১ : ৩ ] ইত্যাদি আয়াতে। অর্থাৎ পৃথিবীর অস্থিত্বের সাথে জড়িত আকাশ ও ভূমন্ডলের যে সব চিহ্ন বর্তমান সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
৯। যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে ;
১০। যখন পর্বতমালা [ বাতাসে ] ধূলির ন্যায় বিক্ষিপ্ত হবে ;
১১। যখন রসুলদের [ সকলের হাজির হওয়ার জন্য ] সময়কে নির্ধারিত করা হবে ৫৮৬৮; -
১০। যখন পর্বতমালা [ বাতাসে ] ধূলির ন্যায় বিক্ষিপ্ত হবে ;
১১। যখন রসুলদের [ সকলের হাজির হওয়ার জন্য ] সময়কে নির্ধারিত করা হবে ৫৮৬৮; -
৫৮৬৮। এই বর্ণনা হচ্ছে পুণরুত্থান দিবসের বর্ণনা। সেদিন এই চেনা জানা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবীতে যুগে যুগে নবী ও রসুলদের প্রেরণ করা হয়েছিলো মানুষের হেদায়েতের জন্য। পুণরুত্থান দিবসে তাঁদের সকলকে একত্রিত করা হবে এবং বিচার সভায় আনায়ন করা হবে সাক্ষী হিসেবে যেনো তাদের প্রচারিত বাণীর প্রেক্ষাপটে পূণ্যাত্মাদের সনাক্ত ও পাপীদের অভিযুক্ত করা যায়।
১২। এই সমুদয় স্থগিত রাখা হয়েছে কোন [ অশুভ ] দিনের জন্য ?
১৩। বাছাই করার দিনের জন্য। ৫৮৬৯
১৩। বাছাই করার দিনের জন্য। ৫৮৬৯
৫৮৬৯। দেখুন [ ৩৭ : ২১ ] আয়াত ও টিকা ৪০৪৭। আরও দেখুন [ ৪৪ : ৪০ ] আয়াত ও টিকা ৪৭১৮। বিচার দিবস হচ্ছে শেষ বিচারের দিন, যেদিন পরলোকের অনন্ত জীবনের জন্য ভাগ্য নির্ধারিত হবে। সেদিন ভালোকে মন্দ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করা হবে। যারা পৃথিবীর জীবনে মিথ্যা ও অন্যায়ের মাধ্যমে সম্পদ ও ক্ষমতা হস্তগত করেছিলো, শেষ বিচারের দিনে তাদের সেই সম্পদ বা ক্ষমতা কোনও কাজেই আসবে না। এরই প্রেক্ষাপটে সঙ্গীতের ধূঁয়ার ন্যায় নীচের লাইনটি বারে বারে পুণরাবৃত্ত করা হয়েছে। লাইনটি হলো, " সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য হবে দুর্ভাগ্য।"
১৪। কি তোমাকে ব্যাখ্যা করবে যে বাছাই করার দিবস কি ?
১৫। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুভার্গ্য।
১৬। [ পাপের দরুণ ] আমি কি প্রাচীনকালের লোকদের ধ্বংস করি নাই ? ৫৮৭০
১৫। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুভার্গ্য।
১৬। [ পাপের দরুণ ] আমি কি প্রাচীনকালের লোকদের ধ্বংস করি নাই ? ৫৮৭০
৫৮৭০। আল্লাহ্র আইন বা বিধান সর্বকালে সর্বযুগে অপরিবর্তনীয়। নূহ্ এর সম্প্রদায়ের জন্য যা ছিলো, আরবের আ'দ ও সামুদ সম্প্রদায়ের জন্যও ছিলো সেই একই বিধান। পৃথিবীর ইতিহাস বলে, যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি জ্ঞানে, গরিমায়, সভ্যতায়, পৃথিবীকে করেছে আলোকিত যেমনঃ ইজিপ্ট, মেসোপোটেমিয়া, সিন্ধু নদের সভ্যতা ইত্যাদি। যতদিন তারা তাদের সমাজ ব্যবস্থায় আল্লাহ্র বিধানের অর্থাৎ ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছে, ততদিন তারা জ্ঞানে, সভ্যতায় উন্নতির শীর্ষে বিরাজ করেছে। যখনই তারা সেই বিধান থেকে বিচ্যুত হয়েছে তখনই তাদের পতন ঘটেছে। পৃথিবীর বর্তমান প্রজন্ম যারা তাঁদের বিজ্ঞান ও সভ্যতার জন্য গর্বিত। যদি তারা আল্লাহ্র বিধান থেকে বিচ্যুত হয়, তবে তাদেরও ধ্বংস হবে অনিবার্য। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে আল্লাহ্র বিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ সত্য ও ন্যায়। অর্থাৎ তা সর্বদা ন্যায় ও সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। এভাবেই ন্যায় ও সত্য থেকে বিচ্যুতির ফলে পূর্ববর্তীরা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে।
১৭। সুতারাং পরের [ প্রজন্মকেও ] আমি তাদের অনুসরণ করতে দেবো।
১৮। এভাবেই আমি পাপীদের সাথে ব্যবহার করে থাকি।
১৯। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
২০। আমি কি তোমাদের তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করি নাই ? ৫৮৭১
১৮। এভাবেই আমি পাপীদের সাথে ব্যবহার করে থাকি।
১৯। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
২০। আমি কি তোমাদের তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করি নাই ? ৫৮৭১
৫৮৭১। দেখুন [ ৩২ : ৮ ] আয়াত ও টিকা ৩৬৩৮। মানুষ জানে পৃথিবীতে মানুষ অপেক্ষা ক্ষমতাধর আর কেহ নাই। সে কারণে তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, তার সৃষ্টি হয়েছে অত্যন্ত নগন্য ভাবে। তারপরেও পরবর্তীতে পৃথিবীতে সে শক্তিশালীরূপে উদ্ধত অহংকারীরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ভবিষ্যত পরলোকের জীবনকে অস্বীকার করে থাকে।
২১। যা আমি নিরাপদ স্থানে মজবুত ভাবে স্থাপন করেছিলাম ; ৫৮৭২
৫৮৭২। দেখুন [ ২৩ : ১৩ ] আয়াতের টিকা ২৮৭৩। মাতৃজঠরের নিরাপদ আশ্রয়ে শিশু ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপান্তরিত হয় এটা কি স্রষ্টার এক অপূর্ব সৃষ্টি রহস্য নয় ?
২২। [ প্রয়োজনীয় ] এক নির্দ্দিষ্ট কাল পর্যন্ত ৫৮৭৩ ?
৫৮৭৩। এই নির্দ্দিষ্ট কালটি হচ্ছে নয়মাস দশদিন। শিশু জন্মের পূর্বে ও পরে শিশুর গঠন প্রক্রিয়াতে যে অপূর্ব সমন্বয় সাধন করা হয় তা স্রষ্টার জ্ঞান ও প্রজ্ঞারই স্বাক্ষর। এ সব সাক্ষর অনুধাবন করেও কি আমরা স্রষ্টার প্রতি আমাদের ভক্তি, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অপারগতা প্রদর্শন করতে পারি ? মাতৃজঠরের স্রষ্টা অতি নিপুন ভাবে পরিমিত ভাবে মানব জীবনকে গঠন করে থাকেন। সামান্য ত্রুটিও তার পরবর্তী জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।
২৩। যার [ প্রয়োজনের পরিমাণ ] আমিই স্থির করি ; নিশ্চয় আমি সর্বশ্রেষ্ঠ পরিমান নির্ধারণ-কর্তা। ৫৮৭৪
২৪। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
২৪। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
৫৮৭৪। মাতৃজঠরের মানব জীবন ও মাতৃজঠরের বাইরে পৃথিবীর জীবনকে রূপকের উপকরণ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। মাতৃজঠরের জীবনকে পৃথিবীর, " শিক্ষানবীশ কালের " সাথে তুলনা করা যায় - যা পরলোকের অনন্ত জীবনের প্রস্তুতি স্বরূপ। অথবা কবরের জীবনের সাথে মাতৃজঠরের জীবনকে তুলনা করা যায়। মাতৃজঠরের জীবন হচ্ছে পৃথিবীর সুস্থ জীবনের পূর্বশর্ত; ঠিক সেরূপ কবরের জীবন হচ্ছে পরলোকের অনন্ত জীবনের পূর্ব অবস্থা।
২৫। আমি কি ভূমিকে সৃষ্টি করি নাই ধারণকারী রূপে ;
২৬। জীবিত ও মৃতের জন্য ৫৮৭৫ ;
২৬। জীবিত ও মৃতের জন্য ৫৮৭৫ ;
৫৮৭৫। কি অপূর্ব উপমা হচ্ছে এই আয়াত। পৃথিবীতে ভালো-মন্দ, জীবন -মৃত্যু,ধ্বংস -সৃষ্টি, আগুন -পানি, পাপ -পূণ্য পাশাপাশি বিরাজ করে। শুধু বিরাজ করে বললে ভুল বলা হবে একে অন্যকে অতিক্রম করে যেতে সর্বদা সচেষ্ট। "জীবিত" হচ্ছে যে কোন সৃষ্টি বা জীবনের প্রতীক, "মৃত " হচ্ছে যে কোন ধ্বংস বা মৃত্যুর প্রতীক। এই প্রতীকের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে আল্লাহ্র রাজত্বের অত্যাচার্য ঘটনা প্রবাহের দিকে। অনুভব করতে বলা হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ঘটনা প্রবাহ কিভাবে স্ব স্ব অস্তিত্বে বিরাজমান থাকে ও একে অন্যকে অতিক্রম করে। ঠিক সে ভাবেই পৃথিবীর মানদন্ডে যারা দরিদ্র ও মান মর্যদাহীন,পরলোকের জীবনে তারাই হবেন মর্যাদার অধিকারী। ভিখারী লাভ করবে রাজার সম্মান আবার ফেরাউনের ন্যায় দোর্দ্দন্ড প্রতাপশালী নৃপতি হবে দোযখের অধিবাসী।
২৭। এবং সেখানে কি আমি সুদৃঢ় ও উচ্চ পর্বতমালা স্থাপন করি নাই, এবং তোমাদের জন্য সুপেয় [ ও স্বাস্থ্য সম্মত ] পানির বন্দোবস্ত ? ৫৮৭৬
২৮। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
২৮। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
৫৮৭৬। দেখুন [ ১৬ : ১৫ ] আয়াতের টিকা ২০৩৮। পর্বতের উপমা বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে যেমন [ ১৩ : ৩ ] আয়াত। এই আয়াতে পর্বতকে বলা হয়েছে "উচ্চ এবং সুদৃঢ় "। সাধারণতঃ সুউচ্চ পর্বতমালা হয় কঠিন শিলাদ্বারা গঠিত। কিন্তু এই কঠিন শিলা ভেদ করেই সুপেয় পানির নহর ও ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। এক্ষেত্রে পর্বত হয় ঠিক যেন স্পঞ্জের মত যা পানি শোষণ করে রাখে এবং পানিকে ফিল্টারের কাগজের ন্যায় পরিশুদ্ধ করে, মিঠা পানি, নদী প্রবাহ ও প্রস্রবনের পানির ধারা বা স্রোতকে সঠিক রাখতে সক্ষম হয় কারণ হচ্ছে পর্বতের উচ্চতা। সুউচ্চ পর্বত থেকে পানি তার স্বাভাবিক ধর্মের কারণে নিম্নের সমতলভূমির দিকে প্রবাহিত হয় এবং পৃথিবীকে সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামল ভূমিরূপে গড়ে তোলে। 'জুবাইদা' ক্যানেল' হচ্ছে মক্কার পানি সরবরাহের মূল ধারা। যারা মক্কার শুষ্ক তপ্ত উপত্যকা দেখেছেন এবং এই উপত্যকার চারিপার্শ্বের মিষ্টি পানির প্রস্রবন এবং 'জুবাইদা ক্যানেল' দেখেছেন তারা এই উপমাটির সঠিক তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারবেন।
তবে এই উপমা সকল দেশের জন্যই প্রযোজ্য যদিও তার তারতম্য ঘটতে পারে। এভাবেই আল্লাহ্র জ্ঞান ও প্রজ্ঞার স্বাক্ষরকে ভাস্বর করা হয়েছে বিশ্ব মানবের সম্মুখে। যেখানে আল্লাহ্র ক্ষমতার এরূপ অত্যাচার্য স্বাক্ষর আমাদের চক্ষুর সম্মুখে বর্তমান, সেখানে কতটা অর্বাচীন হলে আমরা পরলোকের জীবন যে সম্বন্ধে আল্লাহ্ আমাদের যা বলেছেন, তা অস্বীকার করতে পারি।
২৯। [ বলা হবে ] ; " তোমরা যা মিথ্যা বলে প্রত্যাখান করতে তার দিকে চল।
৩০। "চল, তিন স্তম্ভ বিশিষ্ট [ উড্ডীয়মান ধোঁয়ার ] ছায়ার দিকে ৫৮৭৭,
৩০। "চল, তিন স্তম্ভ বিশিষ্ট [ উড্ডীয়মান ধোঁয়ার ] ছায়ার দিকে ৫৮৭৭,
৫৮৭৭। পৃথিবীতে যারা নিজেকে পাপে লিপ্ত রাখতো পরলোকের জীবনে তাদের পরিণতিকে এই আয়াত সমূহের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে তারা আগুন ব্যতীত অন্য কোনও ছায়ার সন্ধান লাভ করবে না। তারা যে অগ্নি ছায়ার সন্ধান লাভ করবে তা হবে তিন স্তর বিশিষ্ট -তাদের ডান দিকে বা দিকে ও উপর থেকে অর্থাৎ অগ্নিতপ্ত এ ছায়া তাদের সর্ব অঙ্গ আচ্ছাদিত করে ফেলবে। কিন্তু এ ছায়া তাদের দেহকে শীতল ও আরাম দেওয়ার পরিবর্তে আগুনের শিখার তপ্ত অনুভূতি দান করবে।
এই তিনটি স্তম্ভকে রূপক অর্থে এখানে তিনটি পাপের পরিণতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যে পাপ আত্মাকে মসীলিপ্ত করে আল্লাহ্র নূর প্রবেশের স্বচ্ছতাকে নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ্ মানুষকে বিভিন্ন মানসিক দক্ষতা বা গুণাবলী দান করেছেন। মানুষ তাদের এই গুণাবলীকে ধ্বংস করে নিজস্ব পাপ কাজের দরুন। মানুষ যখন আল্লাহ্ প্রদত্ত মানসিক দক্ষতাসমূহ পূণ্য কাজে ব্যয় না করে পাপ কাজে ব্যয় করে তখনই আত্মার উপরে প্রলেপ পড়ে, আত্মা ধীরে ধীরে মসীলিপ্ত হতে থাকে। এর ফলে
১) মানুষের জন্য ভালোবাসার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তা রূপান্তরিত হয় মানুষের প্রতি অবিশ্বাস ও ঘৃণাতে।
২) সত্যকে দেখার, বোঝার ও অনুধাবনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তা রূপান্তরিত হয় কুসংস্কার ও নির্বুদ্ধিতাতে।
৩) বিবেক বা আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি নষ্ট হয়ে তা পর্যবেশিত হয় পার্থিব লোভ এবং স্বার্থপরতায়। তাদের এই পাপ ধীরে ধীরে এতটাই বৃদ্ধি পায় যে তা স্তম্ভের ন্যায় বিশাল আকৃতি বিশিষ্ট হয়। তিনটি আগুনের স্তম্ভ হচ্ছে তাদের পাপের এই তিনটি পরিণতি। পার্থিব জীবনে যেরূপ বিভিন্ন জ্বালানী বিভিন্ন ধরণের অগ্নি ও তাপ উৎপাদন করে। জ্বালানীর ধর্ম অনুযায়ী তাপের তারতম্য ঘটে, ঠিক সেরূপই হচ্ছে পাপের বিভিন্নতার কারণে শাস্তির বিভিন্নতা যা তিন ধরণের স্তম্ভ রূপক অর্থে প্রকাশ করা হয়েছে।
৩১। " যা কোন শীতল ছায়া দেয় না, এবং যা রক্ষা করে না প্রচন্ড অগ্নিশিখা থেকে।
৩২। " ইহা উৎক্ষিপ্ত করবে দুর্গের ন্যায় [ বিশাল ] অগ্নি স্ফুলিংগ, ৫৮৭৮
৩২। " ইহা উৎক্ষিপ্ত করবে দুর্গের ন্যায় [ বিশাল ] অগ্নি স্ফুলিংগ, ৫৮৭৮
৫৮৭৮। 'Qasr' অর্থ দুর্গ, বড় অট্টালিকা, প্রাসাদ। যদি 'Qasarat(-un)' এর বহুবচন 'Qasar' হিসেবে পড়া হয় তবে এর অর্থ হবে কাঠের স্তুপ যা আগুনের খোরাক। [Ibn Abbas abud Bukhari]। [মওলানা ইউসুফ আলী ] শেষ অর্থটির ধারণাটি অধিক প্রযোজ্য মনে করেন।
৩৩। " মনে হবে উহা হলুদ উটের সারি [ যারা দ্রুত বেগে চলেছে ]।" ৫৮৭৯
৩৪। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য। ;
৩৪। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য। ;
৫৮৭৯। আগুনের পীতবর্ণের স্ফুলিঙ্গ একটির পরে আর একটি উৎক্ষেপণ হবে, মনে হবে যেনো, পীতবর্ণের উটের সারি। যেনো একটির পরে একটি উট দ্রুত গমন করছে। এর দ্বারা দুধরণের উপমার উপস্থাপন করা হয়েছে। এর দ্বারা শুধু যে রং এর গতিকে উপস্থাপন করা হয়েছে তাই-ই নয়, আরও উপস্থাপন করা হয়েছে পার্থিব জগতের অহংকারকে যেমন বলা হয়েছে যে, " তোমারা তোমাদের পুষ্ট, স্বাস্থ্যবান, পীত বর্ণের উট শ্রেণী দর্শনে যে গর্ব বোধ করতে সে সমস্ত স্থায়ী কোনও কিছুই নয়। তারা হচ্ছে উড়ন্ত স্ফুলিঙ্গ শিখার ন্যায় অস্থায়ী। আত্মগর্বের এই স্ফুলিঙ্গ, পার্থিব জীবনে যতই আনন্দ দিক পরলোকের জীবনে তা স্থায়ী হবে না বরং দাহের যন্ত্রণা সৃষ্টি করবে। ধোঁয়ার স্তম্ভ ও স্ফুলিঙ্গের সাহায্যে কাল্পনিক কোনও কিছুর আকৃতি বুঝাতে চাওয়া হয়েছে।
৩৫। ইহা এমন একদিন যেদিন কারও বাক্যস্ফুর্তি হবে না। ৫৮৮০
৩৬। তাদের আবেদন করার অনুমতি দেয়া হবে না।
৩৭। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
৩৬। তাদের আবেদন করার অনুমতি দেয়া হবে না।
৩৭। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য।
৫৮৮০। পরলোকের সে জীবনে পাপীরা ভয়ে শঙ্কায় বোবা হয়ে যাবে, তাদের বাক্যস্ফুর্তি হবে না। তারা তাদের স্বপক্ষে উপস্থাপনের মত কোনও যুক্তির অবতারণা করতে পারবে না। তাদের কৃতকর্ম খুব সাধারণ ভাবেই তাদের বিপক্ষে কথা বলবে। তারা তাদের পাপ যথা : মিথ্যা উপাস্যের উপাসনাকে বৃথাই অস্বীকার করতে চেষ্টা করবে [ ৬: ২৩ ] ; কিন্তু তাদের জিহ্বা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দান করবে [ ২৪ : ২৪ ]।
৩৮। সেদিন হবে বাছাই করার দিন। তোমাদের ও [ তোমাদের ] পূর্বে যারা ছিলো তাদের সকলকে একত্র করবো। ৫৮৮১
৫৮৮১। আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হয়, প্রাথমিকভাবে " তোমাদিগকে " শব্দটি দ্বারা কোরাইশদের বুঝানো হয়েছে, যারা রাসুলের (সা) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলো। বলা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের সকল জ্ঞান ও কলাকৌশল প্রয়োগ করতে পার, কিন্তু তা সত্বেও তোমরা আল্লাহ্র পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে পারবে না। দেখুন পরবর্তী টিকা।
৩৯। এখন, যদি তোমাদের কোন অভিসন্ধি থাকে তবে তা আমার বিরুদ্ধে প্রয়োগ কর। ৫৮৮২।
৪০। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য। ;
৪০। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য। ;
৫৮৮২। যে কোন কলা কৌশল যা রাসুলের (সা ) বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছিলো তা আল্লাহ্র সত্যের রিরুদ্ধেই প্রয়োগ করা হয়। যা আল্লাহ্ বা বিশ্বস্রষ্টার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণ করে তা কি কখনও কোনও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে ? কারও কি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্র পরিকল্পনা নস্যাৎ করার ক্ষমতা আছে? যদি থাকে তবে তারা তাদের সে ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। এই মনোবৃত্তি দ্বারা তারা শুধু তাদের নিজেদের ধ্বংসই ডেকে আনবে। মোশরেক আরবরা আল্লাহ্র বিরোধিতা করে সেই পাপই করেছিলো। এসব লোকের জন্য করুণা ব্যতীত অন্য কিছুই করার নাই। পরলোকে তাদের অবস্থান কোথায় হবে ? এদের অবস্থানকে স্মরণ করেই বলা হয়েছে, " সেই দিন দুভার্গ্য সত্য প্রত্যাখানকারীদের জন্য।"
রুকু - ২
৪১। পূণ্যাত্মারা থাকবে [ সুশীতল ] ছায়াতে ও [ পানির ] প্রস্র্রবণের মধ্যে ৫৮৮৩
৫৮৮৩। এই আয়াতটি পরলোকের জীবনে মুত্তাকীদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দের বর্ণনা করা হয়েছে যা পাপীদের অবস্থানের বিপরীত। মুত্তাকীদের জন্য যে ছায়া থাকবে তা তাদের স্নিগ্ধ শীতলতা দান করবে এবং জ্বলন্ত অগ্নি থেকে রক্ষা করবে। এখানে 'ছায়া' শব্দটি এবং 'প্রস্রবণ' শব্দটি, দুটোই রূপকধর্মী শব্দ। 'ছায়া' শব্দটি দ্বারা আল্লাহ্র আর্শীবাদের অনুভূতির ব্যাপ্তিকে বুঝানো হয়েছে; যা সর্বসত্ত্বাকে প্লাবিত করে ফেলবে। আল্লাহ্র ভালোবাসার 'প্রস্রবণ' হবে অফুরন্ত ও অক্ষয় যা মুত্তাকীদের পরলোকের জীবনকে করবে আপ্লুত।
৪২। তাদের বাঞ্ছিত ফল সেথায় তারা লাভ করবে ৫৮৮৪।
৫৮৮৪। "ফলমূল" - দেখুন [ ৫৩ : ৭৩ ] আয়াতের টিকা ৪৬৭১।
৪৩। তোমরা যে [পূণ্য ] কাজ করেছ, তার জন্য [ পুরষ্কার স্বরূপ ] তোমরা প্রাণ ভরে আহার কর ও পান কর ৫৮৮৫।
৫৮৮৫। সৎ কর্মের পুরষ্কার ইহকাল এবং পরকাল উভয়কালেই বিদ্যমান। সৎকর্মশীলদের জীবন ইহকালে হয় শান্তিময় এবং পরকালে হয় অপার প্রশান্তিতে ভরপুর।
৪৪। যারা সৎ কাজ করে এ ভাবেই নিশ্চয়ই আমি তাদের পুরষ্কৃত করব।
৪৫। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য ;
৪৬। [ হে অন্যায়কারীরা ! ] কিছু সময়ের জন্য তোমরা পানাহার কর ও [ জীবনকে ] উপভোগ কর ৫৮৮৬। তোমরা তো অপরাধী।
৪৫। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য ;
৪৬। [ হে অন্যায়কারীরা ! ] কিছু সময়ের জন্য তোমরা পানাহার কর ও [ জীবনকে ] উপভোগ কর ৫৮৮৬। তোমরা তো অপরাধী।
৫৮৮৬। "পানাহার কর " - পানাহার শব্দটি এখানে প্রতীকধর্মী। এর দ্বারা পার্থিব জীবনের ভোগ বিলাসকে বুঝানো হয়েছে। মানুষকে পৃথিবীতে আল্লাহ্ তার নেয়ামতে ধন্য করেন। কেউ অর্থ বিত্ত, কেউ মান মর্যদায়, কেউ প্রভাব-প্রতিপত্তিতে, কেউ সৃষ্টিধর্মী প্রতিভা ইত্যাদিতে ধন্য হয়। আল্লাহ্র এ সব দানে মানুষে মানুষে, পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সম্ভবতঃ এর দ্বারা আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করেন। কে তাঁর নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করে থাকে। আর কে করে না। যারা নিজ রীপুকে সংযত করতে অক্ষম তারাই এসব নেয়ামতের অপব্যবহার দ্বারা পাপের পথে পরিচালিত হয়। আল্লাহ্র নেয়ামত তাদের করে তোলে লোভী, দুর্নীতিপরায়ণ, উচ্ছৃঙ্খল। কারণ, যে পূণ্যের জন্য বা ভালোর জন্য সাধনা করে সে সৎপথের সন্ধান লাভ করে। আবার যে পাপের পথে পা বাড়ায় সে ভোগবিলাসের পিছল পথে অতি দ্রুত নেমে যায়। আর ভোগ বিলাসের এই সময় খুবই স্বল্পস্থায়ী। এদেরকেই আল্লাহ্ অনুতাপের মাধ্যমে আত্মসংশোধন করতে বলেছেন। যদি তারা তা না করে তবে ইহজীবনের সৌভাগ্যে তাদের পরলোকের জীবনে ধ্বংস ডেকে আনবে।
৪৭। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য ;
৪৮। যখন তাদের বলা হয়, " আল্লাহ্কে সেজ্দা কর।" তারা তা করে না ৫৮৮৭
৪৮। যখন তাদের বলা হয়, " আল্লাহ্কে সেজ্দা কর।" তারা তা করে না ৫৮৮৭
৫৮৮৭। অর্থাৎ সেজদা কর শব্দটি প্রতীকধর্মী। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে বিনয়বনত হওয়া। অর্থাৎ বিনয়ের সাথে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খা পোষণ করা, সৎ জীবন যাপন করা এবং প্রার্থনার মাধ্যমেই তা করা যায়। যারা তা না করে তারা অনুকম্পার পাত্র কারণ তাদের জন্য শেষ বিচারের দিন হবে ভয়াবহ। মনে রাখতে হবে আল্লাহ্র এবাদতের পূর্ব শর্তই হচ্ছে সৎ জীবন যাপন করা।
৪৯। হায় ! সত্যকে প্রত্যাখানকারীদের জন্য সেদিন হবে দুর্ভাগ্য ;
৫০। সুতারাং উহার [ কুর-আনের ] পরিবর্তে আর কোন কথায় তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে ? ৫৮৮৮
৫০। সুতারাং উহার [ কুর-আনের ] পরিবর্তে আর কোন কথায় তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে ? ৫৮৮৮
৫৮৮৮। কুর-আন হচ্ছে সহজ সরল পথের ঠিকানা। কুরআনের মাধ্যমে আদম সন্তানের জন্য সহজ সরল পথের পথ নির্দ্দেশ প্রেরণ করা হয়েছে। তার পরেও যারা তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে থাকে, তবে তারা কার দেওয়া পথ নির্দ্দেশ গ্রহণ করবে ? অবশ্যই এই পথ নির্দ্দেশ হচ্ছে ইসলাম ও কোরাণ।