+
-
R
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সারসংক্ষেপ : এটি একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের প্রতি রাসুলের (সা) আন্তরিক আনুগত্যের সাথে এ সূরাটি সম্পৃক্ত। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন হযরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা)। তবুও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক অনুভূতির বাইরে ছিলেন না। আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যের গভীর আবেগ ও উদ্দীপনা থেকে ক্ষণ কালের জন্য তিনি সাময়িক ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা তাঁর ন্যায় সর্বোচ্চ মুল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের জন্য স্বাভাবিক ছিলো না। এই ভুলকে তিনি সানন্দে, সাগ্রহে সংশোধনে আগ্রহী ছিলেন।
একদিন রাসুল (সা) গভীর আন্তরিকতা নিয়ে কতিপয় ধনী মোশরেক কোরাইশ সরদারদের সাথে কোরাণের বাণী আলোচনা করছিলেন। তিনি যখন কোরাণের প্রত্যাদেশ সমূহ তাদের নিকট ব্যাখ্যা করছিলেন সে সময়ে আব্দুল্লা-ইবন- উমাই -ই মুকতাম নামক এক গরীব অন্ধ ব্যক্তি তাঁর নিকট ধর্মীয় উপদেশ যাঞা করেন। সম্ভ্রান্ত কোরাইশদের মজলিশের মাঝপথে এরূপ বাঁধা রাসুল (সা) পছন্দ করলেন না। সম্ভবত : রাসুলের (সা ) বিরক্ত মনোভাব অন্ধ বেচারীর অনুভূতিকে আহত করে। যে মহামানবের হৃদয় গরীব ও হতাভাগ্যদের জন্য সর্বদা সহানুভূতিতে আপ্লুত থাকতো, ক্ষণকালের এই বিভ্রান্তিতে আল্লাহ্ তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ নাজেল করেন। প্রত্যাদেশের আলোয় তার বিভ্রান্তি দূর হয়ে যায়, তিনি সাথে সাথে ইতঃস্তত না করে তা সর্ব সমক্ষে প্রকাশ করে দেন। আর এই প্রত্যাদেশ পবিত্র ধর্মীয় পুস্তকের অংশ হয়ে যায়, যার উল্লেখ আছে আয়াত [ ১৩ - ১৬ ]। এর পর থেকে রাসুল (সা) সর্বদা উক্ত ব্যক্তিকে উচ্চ সম্মান ও মর্যদা প্রদর্শন করতেন।
চলমান পৃথিবীতে এরূপ ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। রাসুলের (সা ) জীবনের মাধ্যমে এরূপ ঘটনার শাশ্বত সত্য নীতি সমূহের প্রত্যাদেশ পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রেরণ করা হয়। এই সূরা পুণরায় স্মরণ করিয়ে দেয় মানুষের প্রতি আল্লাহ্র করুণা, ইহকাল ও পরকালে ভালো ও মন্দ কাজের শেষ পরিণতি।
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
৫৯৫০। এখানে 'সে' দ্বারা রাসুলুল্লাহকে (সা) বুঝানো হয়েছে। রাসুলের (সা) ভ্রুকুঞ্চানো এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রেক্ষাপট সূরাটির ভূমিকাতে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সূরার আয়াতগুলির দ্বারা রাসুলের (সা) জীবনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ বিশ্ব মানবকে এই উপদেশ দিয়েছেন যে নৈতিক উৎকর্ষতা বা আধ্যাত্মিক পথের সাফল্য জাগতিক বিষয় বৈভব বা মান -সম্মান ও প্রভাব প্রতিপত্তির উপরে নির্ভরশীল নয়। দরিদ্র বা অন্ধ বা পঙ্গু বা সমাজে প্রতিপত্তিহীন ব্যক্তিও আল্লাহ্র উপদেশ গ্রহণে অধিক মনোযোগী হতে পারে ; বুদ্ধিমান, প্রতিভাবান, মানসিক দক্ষতাতে সমৃদ্ধ, সমাজে উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ অপেক্ষা। কারণ যারা আল্লাহ্র এ সব নেয়ামতে ধন্য হন বিশেষতঃ তাদের মাঝে অহংকার, গর্ব দেখা যায়। তাদের নিজস্ব ক্ষমতার উপরে আত্মবিশ্বাস আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীলতা নষ্ট করে দেয়। ফলে আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো ও তাদের আত্মার মাঝে এক পর্দা বা অন্তরালের সৃষ্টি হয়, যে দুর্ভেদ্দ দেয়াল ভেদ করে তাদের হৃদয়ে আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো পৌঁছায় না।
৫৯৫১। বাইরে সামাজিক অবস্থান থেকে কোন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক জগতের সমৃদ্ধি পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে গরীব অন্ধ ব্যক্তির হৃদয় হয়তো হেদায়েতের আলো ধারণ করার জন্য উম্মুখ হয়ে আছে। সুতারাং হেদায়েতের দ্বারা সে তার আধ্যাত্মিক জগতের সমৃদ্ধি সাধনে সক্ষম হবে যা উদ্ধত অহংকারী ধনী কোরাইশ নেতাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ্র নিকট পার্থিব ধন-সম্পদ, মান-মর্যদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, কোনও কিছুরই মুল্য নাই। আল্লাহ্র নিকট মূল্যবান হচ্ছে প্রকৃত হৃদয়, যে হৃদয় আল্লাহ্র ভালোবাসা হারানোর ভয়ে ভীত, আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের কাঙ্গাল। সেই তো সম্পদশালী, হৃদয় যার সমৃদ্ধ। এ কথা এই গরীব অন্ধ লোকটির জন্য সত্য ছিলো। পরবর্তীতে এই অন্ধ লোকটি একজন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন মুসলমানে রূপান্তরিত হন। মনে রাখতে হবে মানুষ বই পড়ে অর্থকরী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করা যায় আল্লাহ্র নিকট থেকে। এই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করার ক্ষমতা পৃথিবীতে আর কারও নাই। আল্লাহ্ ও আত্মার অনুভূতির মাঝের পর্দা যখন অর্ন্তহিত হয় তখনই হেদায়েতের আলো আত্মাকে করে আলোকিত, ফলে আত্মার মাঝে প্রজ্ঞার জন্ম নেয়। এই গরীব অন্ধ ব্যক্তি পরবর্তীতে মদিনার গভর্ণর নিযুক্ত হয়েছিলেন।
৫৯৫২। "যে নিজকে মনে করে স্বাবলম্বী" এই বাক্যটি দ্বারা মক্কার প্রভাবশালী কোরাইশ নেতাদের বুঝানো হয়েছে। এই মোশরেক প্রভাবশালী কোরাইশ নেতাদের মুসলিম ধর্মে দিক্ষীত করার জন্য আল্লাহ্র নবী ব্যগ্র হয়েছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, এর দ্বারা ইসলামের প্রচার ও প্রসারে দ্রুত গতি আনায়ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু পৃথিবীতে এটা সত্য যে, ইসলাম বা খৃষ্ট ধর্ম প্রথমে প্রসার লাভ করে দরিদ্র প্রভাব প্রতিপত্তিহীন, সরল -সোজা জনসাধারণের মাঝে। যারা শক্তিধর তারা কখনও কোনও নূতন ভাবধারাকে গ্রহণ করে না। তারা তখনই তা গ্রহণ করে যখন তা অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হয়। পৃথিবীর এই চিরন্তন সত্যকে এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
৫৯৫৩। আল্লাহ্র বাণী সকলের জন্য। যদি কেউ অন্ধ অহংকারে গর্বভরে মুখ ফিরিয়ে রাখে তবে তা ধর্ম প্রচারকের দোষ নয়। প্রচারকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী সর্বসাধারণের জন্য প্রচার করা। তিনি ধনী,গরীব সকলকে সমভাবে গ্রহণ করবেন।
৫৯৫৪। এখানে, " ভয় এবং শংকা ' শব্দটি দ্বারা গরীব লোকটির অন্তরের চিত্র আঁকা হয়েছে। তাঁর মনের অবস্থা ছিলো দ্বিবিধ। ১) তিনি ছিলেন বিনয়ী, নম্র, এবং আল্লাহ্র ভয়ে ভীত। কোন অহংকার বা উদ্ধতপনার স্থান তাঁর হৃদয়ে ছিলো না। ২) দরিদ্র ও অন্ধ হওয়ার কারণে তিনি থাকতেন ভীত, যে, এত মহান নবীর দরবারে তাঁর মত লোক কিভাবে প্রবেশ করবেন ? কিন্তু আল্লাহ্র অমিয় বাণী কোরাণ শেখার ঐকান্তিক ইচ্ছায় তিনি সকল শঙ্কা,দ্বিধা,ভয় ত্যাগ করে সাহসের সাথে রাসুলের (সা) দরবারে গমন করেন। যদিও মনে হয় তাঁর আগমন ঘটেছিলো অসময়ে, যে কারণে রাসুল (সা) বিরক্ত হয়েছিলেন, তবুও তা ছিলো যোগ্য সাহসের কাজ। কারণ তার অন্তরের বিশুদ্ধতাই ছিলো আল্লাহ্র কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য বিষয়।
উপদেশ : প্রতিটি মোমেন মুসলমানের এই সূরা ও উদাহরণের মাধ্যমে শেখার বিষয় হচ্ছে, বাইরের ভনিতা, বা পার্থিব কোন বস্তুই আত্মিক সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নাই। শুধু প্রয়োজন আল্লাহ্র ভালোবাসা হারানোর ভয়ে ভীত ব্যকুল হৃদয়। সেই হচ্ছে প্রকৃত মোমেন ও মুত্তাকী।
৫৯৫৫। "এই আচরণ" অর্থাৎ পূর্বোক্ত আয়াতের বর্ণিত আচরণ। আল্লাহ্ সম্পুর্ণ ঘটনাটিকে বলেছেন উপদেশ বাণী। কারণ আল্লাহ্র বাণীর অমিয় ধারা,ধনী গরীব, উচ্চ,নীচ বিদ্বান, মুর্খ সকলের জন্য সমভাবে প্রবাহিত। যদি কারও হৃদয় এই ধারাতে অবগাহনের জন্য ব্যকুল হয়, তবে তাঁকে আল্লাহ্ যোগ্য সম্মান দান করেন এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন।
৫৯৫৬। "কিতাবের পাতায় " অর্থাৎ পূর্ববর্তী সূরা সমূহ। যখন এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়, সে সময়ে মুসলমানদের হাতে সর্বমোট সূরার সংখ্যা ছিলো ৪২ থেকে ৪৫ টি। তবে সংখ্যার স্বল্পত্ব কোন ব্যাপার ছিলো না ; কারণ সূরাগুলি ছিলো আধ্যাত্মিক উপদেশে সমৃদ্ধ। সে সব উপদেশ এই সূরাটির জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। এই সূরাগুলি মুসলমানদের অন্তরের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলো। তা ছিলো তাদের হৃদয়ে উচ্চ ও মহিমান্বিত সর্বোচ্চ সম্মানের বস্তু। কারণ তা হচ্ছে আল্লাহ্র পবিত্র বাণী। ইসলামের প্রথম যুগে যারা আল্লাহ্র বাণী বা সূরা সমূহ লিখে রাখতেন তাঁরা ছিলেন পূণ্যাত্মা, ন্যায়বান ও সম্মানীয়। অনেকে বলেন যে, প্রাথমিক সূরাগুলি লেখার ও সংরক্ষণ করার সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করা হয় নাই। তাদের এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।
প্রথম ও তৃতীয় খলিফার সময়ে যে সংশোধনী আনা হয়, তা ছিলো কোরাণের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণের জন্য এবং সুবিন্যস্ত করার নিরাপদ কৌশল হিসেবে। কারণ সে সময়ে ইসলাম আরবের সীমান্ত অতিক্রম করে আরবীতে কথা বলেন না তাদের মাঝেও প্রসার লাভ করেছে। সুতারাং সেই বিশাল বিস্তৃতির মাঝে কোরাণের প্রচার ও প্রসারের জন্য সাবধানতার প্রয়োজন ছিলো বৈকি।
৫৯৫৭। দেখুন [ ৭৬ : ২ ] আয়াত ও টিকা ৫৮৩২। মানুষের সৃষ্টি হয়েছে প্রাণীর সৃষ্টির ন্যায় অতি নগন্য পদার্থ থেকে। কিন্তু মানুষ প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ। তার এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হচ্ছে আল্লাহ্ তাঁকে বিশেষ বুদ্ধিমত্তা ও বিশেষ বিশেষ মানসিক দক্ষতা দান করেছেন। তাঁর এই নশ্বর দেহের মাঝে বাস করে রূহু বা আত্মা। মানুষকে আল্লাহ্ ঐশ্বরিক অনুগ্রহ দান করেছেন, যে কারণে আল্লাহ্ তাঁকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন [ ২ : ৩০ ]। তাঁর আছে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, আধ্যাত্মিক জগত, ভালোবাসার ক্ষমতা, যে ভালোবাসাকে সে বিশ্ব মানবতার মাঝে সম্প্রসারিত করতে সক্ষম। সীমিত ভাবে হলেও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সে রাখে। প্রাকৃতিক শক্তিকে সে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে সক্ষম। সেই সাথে তাঁকে দেয়া হয়েছে বিচার ক্ষমতা বা বিবেক ফলে সে কখনও সীমা ছাড়িয়ে যায় না, সর্বদা মধ্য পথ অবলম্বন করে। এ ভাবেই মানব জীবনে চলার পথের যে বিভিন্ন ধারা তা মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছেন, " অতঃপর উহার জন্য পথ সহজ করে দেন।"
৫৯৫৮। দেখুন [ ২০ : ৫৫]। পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত জীবন শেষ মৃত্যু অবধারিত সত্য। মৃত্যু সর্বদা ভয়ংকর নয়। পূণ্যাত্মাদের জন্য তা আল্লাহ্র আশীর্বাদ স্বরূপ - কারণ নশ্বর দেহের পিঞ্জর মুক্ত হয়ে আত্মা পৃথিবীর অসম্পূর্ণতা ও শিক্ষানবীশকালের দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে এবং প্রকৃত সত্যের আলো, আত্মার মাঝে নূতন প্রভাতের সৃষ্টি করে। 'কবর ' এ অবস্থানের সময় হচ্ছে দৈহিক মৃত্যু ও অনন্ত জীবনে প্রবেশের পূর্বের সময়কাল পর্যন্ত যেখানে কাটানো হয়। অর্থাৎ মৃত্যুর পর থেকে রোজ হাশরের পূর্ব পর্যন্ত যে সময়কাল সেই মধ্যবর্তী সময়কাল। মুত্যুর পরে যে ভাবেই দেহকে সমাহিত করা হোক না কেন এই সময়কালকেই বলা হয়েছে, "কবরস্থ করেন।" এই মধ্যবর্তী সময়কাল হচ্ছে 'Barzakh' বা মধ্যবর্তী দেয়াল। দেখুন এ সম্বন্ধে [ ২৩ : ১০০ ] আয়াতের টিকা ২৯৪০।
৫৯৫৯। যদিও আল্লাহ্র অনুগ্রহ পূণ্যাত্মাদের জন্য আর্শীবাদ। কিন্তু যারা আধ্যাত্মিক ভাবে সমৃদ্ধি লাভ না করে, তারা আল্লাহ্র মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য অনুধাবনে অক্ষম হয়, ফলে আল্লাহ্র আদেশ লংঘন করে।
৫৯৬০। মানুষের আত্মার যে ইতিহাস তা বর্ণনার পর এবারে মানুষের দৈহিক ও পার্থিব জীবনের উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবীর জীবনে আমাদের প্রয়োজনের শেষ নাই। প্রাত্যহিক আরাম আয়েশের জন্য ও জীবন ধারণের জন্য বহু উপকরণের প্রয়োজন হয়। এই আয়াতের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপকরণের উল্লেখ করা হয়েছে আর তা হচ্ছে খাদ্য। আল্লাহ্র হুকুমে আকাশ ও পৃথিবী এক হয়ে শষ্য উৎপাদনের শক্তি যোগায় যা মানুষ ও মানুষের উপরে নির্ভরশীল পশুর খাদ্য। " ইহা তোমাদের ও তোমাদের গৃহ পালিত পশুদের ভোগের জন্য" [নীচের ৩২ নং আয়াত]। মানুষের একটিমাত্র প্রয়োজনীয় উপকরণ সম্বন্ধে চিন্তা করলে উপলব্ধি করা সম্ভব যে মানুষের কল্যাণের জন্য স্রষ্টার কি অফুরন্ত ভালোবাসা। মানুষের অফুরন্ত প্রয়োজন স্রষ্টা তাঁর সদয় তত্বাবধানের দ্বারা পূরণ করে থাকেন।
৫৯৬১। আকাশ থেকে বৃষ্টি পাত হয়ে মাটিকে করে সিক্ত ও উর্বর। ফলে নরম মাটি কর্ষণযোগ্য হয়। কর্ষিত ভেজা মাটিতে বীজ বপনের ফলে উর্বর মাটি প্রচুর খাদ্য উৎপাদন করে। যেমন : খাদ্যশস্য, রসালো ফল, শাকশব্জি, শুকনো ফল, তৈল উৎপাদনকারী বীজ ইত্যাদি। পরবর্তী আয়াতে দ্রাক্ষা শব্দটি দ্বারা লতানো ফলের সকল গাছকে বুঝানো হয়েছে, শাক্ সব্জি দ্বারা সকল পুষ্টিদায়ক উপকারী উদ্ভিদকে বুঝানো হয়েছে। যয়তুন বা জলপাই ও খজ্জুর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সেই সব ফলের সব গাছ যার ফলকে শুকিয়ে রাখা যায় ও যার থেকে তৈল উৎপাদন করা সম্ভব।
৫৯৬২। 'সেখানে ' শব্দটি দ্বারা পৃথিবী বা পৃথিবীর মাটিকে বুঝানো হয়েছে।
৫৯৬৩। টিকা নং ৫৯৬১ তে বর্ণিত শুধু খাদ্য উৎপাদনকারী উদ্ভিদও নয়, আল্লাহ্ আরও দান করেছেন নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত উদ্যানের উদ্ভিদ জগত, সুউচ্চ বৃক্ষ, যা সুস্বাদু ফল উৎপাদন করে থাকে বা অন্য প্রয়োজনীয় কাজে কাঠের ব্যবহার হয়। পশু জগতের জন্য দান করা হয়েছে বহু ধরণের ঘাস।
৫৯৬৪। এই একই আয়াত আবৃত্তি করা হয়েছে সূরা [ ৭৯: ৩৩ ] আয়াতে। সেখানে টিকা নং ৫৯৪০ তে ব্যপক আলোচনা করা হয়েছে।
৫৯৬৫। 'সাজ্জা ' এই শব্দটির আভিধানিক অর্থ মহানাদ, কিন্তু কোরাণ শরীফে এ শব্দটি কেয়ামত অর্থে ব্যবহৃত। কেয়ামত হচ্ছে শেষ বিচার সংঘটিত হওয়ার পূর্ব অবস্থা।
৫৯৬৬। যাদের পৃথিবীর জীবনে অত্যন্ত আপন বলে মনে হবে, কেয়ামতের বিভিষিকায় সেদিন কেউ কাউকে চিনতে পারবে না। কেউ কারও সাহাযার্থে এগিয়ে আসবে না। এমনকি সেদিন কেউ কারও দুঃখ, ব্যথা বা অপমানের সমবেদনা প্রকাশে আগ্রহী হবে না। কারণ প্রত্যেকেরই নিজ নিজ দুঃখ কষ্টের সীমা পরিসীমা থাকবে না। অপরপক্ষে যারা পূণ্যাত্মা তারা তাদের পূণ্যাত্মা পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ লাভ করবেন [৫২ : ২১ ] ; সেদিন পূণ্যাত্মাদের মুখ খুশী ও আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে [ ৮০ : ৩৮- ৩৯ ]।
৫৯৬৭। দেখুন [ ৭০ : ১০- ১৪ ] আয়াত। কোন বন্ধু বা সহৃদ সেদিন কারও সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসবে না। পাপীরা সেদিন নিজ দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নিজ পরিবারকে উৎসর্গ করতে দ্বিধা বোধ করবে না।
৫৯৬৮। এখানে পাপীদের বাহ্যিক বিবরণ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে তাদের মুখমন্ডল হবে ধূলিধূসর ও কালিমাতে আচ্ছন্ন। পূণ্যাত্মাদের উজ্জ্বল মুখমন্ডলের বিপরীতে পাপীদের ধূলায় ধূসরিত মুখমন্ডলকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার পূণ্যাত্মাদের হাস্যজ্জ্বল প্রফুল্ল মুখমন্ডলের বিপরীতে পাপীদের কালিমাতে আচ্ছন্ন মুখমন্ডলকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার অন্য ভাবে বলা যায় যে, পৃথিবীতে আল্লাহ্র বিধানসমূহ অস্বীকার করার ফলে পাপীদের মানসিক দক্ষতা সমূহ [ যেমন সত্যকে দেখার ক্ষমতা, শোনার ক্ষমতা, বলার ক্ষমতা ] শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় চাপা পড়ে যায়, ধূলি ধূসরিত হয়ে কোন জিনিষ চাপা পড়ার ন্যায়। পৃথিবীতে পাপীরা অন্যায় দ্বারা ন্যায়কে কালিমালিপ্ত করেছে সুতারাং সেদিন তারা পবিত্রতার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হবে। আর একটি তুলনা হতে পারে এই যে, যারা পৃথিবীর জীবনে নগন্য ও বিনয়ী; পৃথিবীর জীবন তাদের জন্য ধূলায় ধূসরিত বস্তুর ন্যায় ধূসর ও বিবর্ণ অপরপক্ষে পাপীদের পার্থিব জীবন হচ্ছে সূর্যের আলোর ন্যায় ঔজ্জ্বল্যে ভরা। কিন্তু বিচার দিবসে এই চিত্র যাবে সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবে পাল্টে।
সূরা আবাসা
সূরা আবাসা বা ভ্রুকুটি করা -৮০
৪২ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
ভূমিকা ও সারসংক্ষেপ : এটি একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা। আল্লাহ্র প্রত্যাদেশের প্রতি রাসুলের (সা) আন্তরিক আনুগত্যের সাথে এ সূরাটি সম্পৃক্ত। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন হযরত মুহম্মদ মুস্তফা (সা)। তবুও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক অনুভূতির বাইরে ছিলেন না। আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্যের গভীর আবেগ ও উদ্দীপনা থেকে ক্ষণ কালের জন্য তিনি সাময়িক ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা তাঁর ন্যায় সর্বোচ্চ মুল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের জন্য স্বাভাবিক ছিলো না। এই ভুলকে তিনি সানন্দে, সাগ্রহে সংশোধনে আগ্রহী ছিলেন।
একদিন রাসুল (সা) গভীর আন্তরিকতা নিয়ে কতিপয় ধনী মোশরেক কোরাইশ সরদারদের সাথে কোরাণের বাণী আলোচনা করছিলেন। তিনি যখন কোরাণের প্রত্যাদেশ সমূহ তাদের নিকট ব্যাখ্যা করছিলেন সে সময়ে আব্দুল্লা-ইবন- উমাই -ই মুকতাম নামক এক গরীব অন্ধ ব্যক্তি তাঁর নিকট ধর্মীয় উপদেশ যাঞা করেন। সম্ভ্রান্ত কোরাইশদের মজলিশের মাঝপথে এরূপ বাঁধা রাসুল (সা) পছন্দ করলেন না। সম্ভবত : রাসুলের (সা ) বিরক্ত মনোভাব অন্ধ বেচারীর অনুভূতিকে আহত করে। যে মহামানবের হৃদয় গরীব ও হতাভাগ্যদের জন্য সর্বদা সহানুভূতিতে আপ্লুত থাকতো, ক্ষণকালের এই বিভ্রান্তিতে আল্লাহ্ তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ নাজেল করেন। প্রত্যাদেশের আলোয় তার বিভ্রান্তি দূর হয়ে যায়, তিনি সাথে সাথে ইতঃস্তত না করে তা সর্ব সমক্ষে প্রকাশ করে দেন। আর এই প্রত্যাদেশ পবিত্র ধর্মীয় পুস্তকের অংশ হয়ে যায়, যার উল্লেখ আছে আয়াত [ ১৩ - ১৬ ]। এর পর থেকে রাসুল (সা) সর্বদা উক্ত ব্যক্তিকে উচ্চ সম্মান ও মর্যদা প্রদর্শন করতেন।
চলমান পৃথিবীতে এরূপ ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে। রাসুলের (সা ) জীবনের মাধ্যমে এরূপ ঘটনার শাশ্বত সত্য নীতি সমূহের প্রত্যাদেশ পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রেরণ করা হয়। এই সূরা পুণরায় স্মরণ করিয়ে দেয় মানুষের প্রতি আল্লাহ্র করুণা, ইহকাল ও পরকালে ভালো ও মন্দ কাজের শেষ পরিণতি।
সূরা আবাসা বা ভ্রুকুটি করা -৮০
৪২ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে ]
১। সে [ রসুল ] ভ্রুকুটি করলো এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, ৫৯৫০
২। কারণ তাঁর নিকট একটি অন্ধ লোক এসেছিলো।
২। কারণ তাঁর নিকট একটি অন্ধ লোক এসেছিলো।
৫৯৫০। এখানে 'সে' দ্বারা রাসুলুল্লাহকে (সা) বুঝানো হয়েছে। রাসুলের (সা) ভ্রুকুঞ্চানো এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রেক্ষাপট সূরাটির ভূমিকাতে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সূরার আয়াতগুলির দ্বারা রাসুলের (সা) জীবনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ বিশ্ব মানবকে এই উপদেশ দিয়েছেন যে নৈতিক উৎকর্ষতা বা আধ্যাত্মিক পথের সাফল্য জাগতিক বিষয় বৈভব বা মান -সম্মান ও প্রভাব প্রতিপত্তির উপরে নির্ভরশীল নয়। দরিদ্র বা অন্ধ বা পঙ্গু বা সমাজে প্রতিপত্তিহীন ব্যক্তিও আল্লাহ্র উপদেশ গ্রহণে অধিক মনোযোগী হতে পারে ; বুদ্ধিমান, প্রতিভাবান, মানসিক দক্ষতাতে সমৃদ্ধ, সমাজে উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ অপেক্ষা। কারণ যারা আল্লাহ্র এ সব নেয়ামতে ধন্য হন বিশেষতঃ তাদের মাঝে অহংকার, গর্ব দেখা যায়। তাদের নিজস্ব ক্ষমতার উপরে আত্মবিশ্বাস আল্লাহ্র উপরে নির্ভরশীলতা নষ্ট করে দেয়। ফলে আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো ও তাদের আত্মার মাঝে এক পর্দা বা অন্তরালের সৃষ্টি হয়, যে দুর্ভেদ্দ দেয়াল ভেদ করে তাদের হৃদয়ে আল্লাহ্র হেদায়েতের আলো পৌঁছায় না।
৩। কিন্তু তুমি কি ভাবে জানবে, হয়তো বা সে [ আধ্যাত্মিক ভাবে ] পরিশুদ্ধ হতে পারতো ? -
৪। অথবা হয়তো সে সতর্কবাণী গ্রহণ করতো, ফলে উপদেশ তার উপকারে আসতো ? ৫৯৫১
৪। অথবা হয়তো সে সতর্কবাণী গ্রহণ করতো, ফলে উপদেশ তার উপকারে আসতো ? ৫৯৫১
৫৯৫১। বাইরে সামাজিক অবস্থান থেকে কোন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক জগতের সমৃদ্ধি পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন যে গরীব অন্ধ ব্যক্তির হৃদয় হয়তো হেদায়েতের আলো ধারণ করার জন্য উম্মুখ হয়ে আছে। সুতারাং হেদায়েতের দ্বারা সে তার আধ্যাত্মিক জগতের সমৃদ্ধি সাধনে সক্ষম হবে যা উদ্ধত অহংকারী ধনী কোরাইশ নেতাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ্র নিকট পার্থিব ধন-সম্পদ, মান-মর্যদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, কোনও কিছুরই মুল্য নাই। আল্লাহ্র নিকট মূল্যবান হচ্ছে প্রকৃত হৃদয়, যে হৃদয় আল্লাহ্র ভালোবাসা হারানোর ভয়ে ভীত, আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের কাঙ্গাল। সেই তো সম্পদশালী, হৃদয় যার সমৃদ্ধ। এ কথা এই গরীব অন্ধ লোকটির জন্য সত্য ছিলো। পরবর্তীতে এই অন্ধ লোকটি একজন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন মুসলমানে রূপান্তরিত হন। মনে রাখতে হবে মানুষ বই পড়ে অর্থকরী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করা যায় আল্লাহ্র নিকট থেকে। এই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করার ক্ষমতা পৃথিবীতে আর কারও নাই। আল্লাহ্ ও আত্মার অনুভূতির মাঝের পর্দা যখন অর্ন্তহিত হয় তখনই হেদায়েতের আলো আত্মাকে করে আলোকিত, ফলে আত্মার মাঝে প্রজ্ঞার জন্ম নেয়। এই গরীব অন্ধ ব্যক্তি পরবর্তীতে মদিনার গভর্ণর নিযুক্ত হয়েছিলেন।
৫। পক্ষান্তরে যে নিজেকে মনে করে স্বাবলম্বী ৫৯৫২,
৬। তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছ,
৬। তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছ,
৫৯৫২। "যে নিজকে মনে করে স্বাবলম্বী" এই বাক্যটি দ্বারা মক্কার প্রভাবশালী কোরাইশ নেতাদের বুঝানো হয়েছে। এই মোশরেক প্রভাবশালী কোরাইশ নেতাদের মুসলিম ধর্মে দিক্ষীত করার জন্য আল্লাহ্র নবী ব্যগ্র হয়েছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, এর দ্বারা ইসলামের প্রচার ও প্রসারে দ্রুত গতি আনায়ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু পৃথিবীতে এটা সত্য যে, ইসলাম বা খৃষ্ট ধর্ম প্রথমে প্রসার লাভ করে দরিদ্র প্রভাব প্রতিপত্তিহীন, সরল -সোজা জনসাধারণের মাঝে। যারা শক্তিধর তারা কখনও কোনও নূতন ভাবধারাকে গ্রহণ করে না। তারা তখনই তা গ্রহণ করে যখন তা অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হয়। পৃথিবীর এই চিরন্তন সত্যকে এই আয়াতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
৭। যদিও সে নিজে [ আধ্যাত্মিক ভাবে ] পরিশুদ্ধ হতে না চায় [ তাতে ] তোমার কোন দোষ নাই ৫৯৫৩
৫৯৫৩। আল্লাহ্র বাণী সকলের জন্য। যদি কেউ অন্ধ অহংকারে গর্বভরে মুখ ফিরিয়ে রাখে তবে তা ধর্ম প্রচারকের দোষ নয়। প্রচারকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী সর্বসাধারণের জন্য প্রচার করা। তিনি ধনী,গরীব সকলকে সমভাবে গ্রহণ করবেন।
৮। কিন্তু যে আকুল আগ্রহে তোমার নিকটে ছুটে এলো,
৯। [ হৃদয়ে ] ভয় এবং শংকা নিয়ে ৫৯৫৪,
১০। তুমি তার প্রতি অমনোযোগী হলে।
৯। [ হৃদয়ে ] ভয় এবং শংকা নিয়ে ৫৯৫৪,
১০। তুমি তার প্রতি অমনোযোগী হলে।
৫৯৫৪। এখানে, " ভয় এবং শংকা ' শব্দটি দ্বারা গরীব লোকটির অন্তরের চিত্র আঁকা হয়েছে। তাঁর মনের অবস্থা ছিলো দ্বিবিধ। ১) তিনি ছিলেন বিনয়ী, নম্র, এবং আল্লাহ্র ভয়ে ভীত। কোন অহংকার বা উদ্ধতপনার স্থান তাঁর হৃদয়ে ছিলো না। ২) দরিদ্র ও অন্ধ হওয়ার কারণে তিনি থাকতেন ভীত, যে, এত মহান নবীর দরবারে তাঁর মত লোক কিভাবে প্রবেশ করবেন ? কিন্তু আল্লাহ্র অমিয় বাণী কোরাণ শেখার ঐকান্তিক ইচ্ছায় তিনি সকল শঙ্কা,দ্বিধা,ভয় ত্যাগ করে সাহসের সাথে রাসুলের (সা) দরবারে গমন করেন। যদিও মনে হয় তাঁর আগমন ঘটেছিলো অসময়ে, যে কারণে রাসুল (সা) বিরক্ত হয়েছিলেন, তবুও তা ছিলো যোগ্য সাহসের কাজ। কারণ তার অন্তরের বিশুদ্ধতাই ছিলো আল্লাহ্র কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য বিষয়।
উপদেশ : প্রতিটি মোমেন মুসলমানের এই সূরা ও উদাহরণের মাধ্যমে শেখার বিষয় হচ্ছে, বাইরের ভনিতা, বা পার্থিব কোন বস্তুই আত্মিক সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নাই। শুধু প্রয়োজন আল্লাহ্র ভালোবাসা হারানোর ভয়ে ভীত ব্যকুল হৃদয়। সেই হচ্ছে প্রকৃত মোমেন ও মুত্তাকী।
১১। না, এই আচরণ ঠিক নয়, নিশ্চয়ই ইহা এক উপদেশবাণী। ৫৯৫৫
১২। অতএব, যে ইচ্ছা করবে সে ইহা স্মরণ করবে।
১২। অতএব, যে ইচ্ছা করবে সে ইহা স্মরণ করবে।
৫৯৫৫। "এই আচরণ" অর্থাৎ পূর্বোক্ত আয়াতের বর্ণিত আচরণ। আল্লাহ্ সম্পুর্ণ ঘটনাটিকে বলেছেন উপদেশ বাণী। কারণ আল্লাহ্র বাণীর অমিয় ধারা,ধনী গরীব, উচ্চ,নীচ বিদ্বান, মুর্খ সকলের জন্য সমভাবে প্রবাহিত। যদি কারও হৃদয় এই ধারাতে অবগাহনের জন্য ব্যকুল হয়, তবে তাঁকে আল্লাহ্ যোগ্য সম্মান দান করেন এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন।
১৩। [ ইহা ৫৯৫৬ ] লিখিত আছে মহা সম্মানীয় কিতাবের পাতায়,
৫৯৫৬। "কিতাবের পাতায় " অর্থাৎ পূর্ববর্তী সূরা সমূহ। যখন এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়, সে সময়ে মুসলমানদের হাতে সর্বমোট সূরার সংখ্যা ছিলো ৪২ থেকে ৪৫ টি। তবে সংখ্যার স্বল্পত্ব কোন ব্যাপার ছিলো না ; কারণ সূরাগুলি ছিলো আধ্যাত্মিক উপদেশে সমৃদ্ধ। সে সব উপদেশ এই সূরাটির জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। এই সূরাগুলি মুসলমানদের অন্তরের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলো। তা ছিলো তাদের হৃদয়ে উচ্চ ও মহিমান্বিত সর্বোচ্চ সম্মানের বস্তু। কারণ তা হচ্ছে আল্লাহ্র পবিত্র বাণী। ইসলামের প্রথম যুগে যারা আল্লাহ্র বাণী বা সূরা সমূহ লিখে রাখতেন তাঁরা ছিলেন পূণ্যাত্মা, ন্যায়বান ও সম্মানীয়। অনেকে বলেন যে, প্রাথমিক সূরাগুলি লেখার ও সংরক্ষণ করার সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করা হয় নাই। তাদের এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।
প্রথম ও তৃতীয় খলিফার সময়ে যে সংশোধনী আনা হয়, তা ছিলো কোরাণের বিশুদ্ধতা সংরক্ষণের জন্য এবং সুবিন্যস্ত করার নিরাপদ কৌশল হিসেবে। কারণ সে সময়ে ইসলাম আরবের সীমান্ত অতিক্রম করে আরবীতে কথা বলেন না তাদের মাঝেও প্রসার লাভ করেছে। সুতারাং সেই বিশাল বিস্তৃতির মাঝে কোরাণের প্রচার ও প্রসারের জন্য সাবধানতার প্রয়োজন ছিলো বৈকি।
১৪। [ যা সম্মানে ] উন্নত, পূত পবিত্র,
১৫। [ লিখিত হয়েছে ] সেই লিপিকরদের দ্বারা,
১৬। যারা সম্মানীয় এবং পূণ্যবান ও ন্যায়বান।
১৭। দুর্ভাগ্য মানুষের ! কেন সে আল্লাহকে প্রত্যাখান করে ?
১৮। তিনি তাকে কোন বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন ?
১৯। এক বিন্দু বীর্য থেকে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন ৫৯৫৭, এবং তারপরে তাকে সঠিক অনুপাতে গঠন করেছেন,
১৫। [ লিখিত হয়েছে ] সেই লিপিকরদের দ্বারা,
১৬। যারা সম্মানীয় এবং পূণ্যবান ও ন্যায়বান।
১৭। দুর্ভাগ্য মানুষের ! কেন সে আল্লাহকে প্রত্যাখান করে ?
১৮। তিনি তাকে কোন বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন ?
১৯। এক বিন্দু বীর্য থেকে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন ৫৯৫৭, এবং তারপরে তাকে সঠিক অনুপাতে গঠন করেছেন,
৫৯৫৭। দেখুন [ ৭৬ : ২ ] আয়াত ও টিকা ৫৮৩২। মানুষের সৃষ্টি হয়েছে প্রাণীর সৃষ্টির ন্যায় অতি নগন্য পদার্থ থেকে। কিন্তু মানুষ প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ। তার এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হচ্ছে আল্লাহ্ তাঁকে বিশেষ বুদ্ধিমত্তা ও বিশেষ বিশেষ মানসিক দক্ষতা দান করেছেন। তাঁর এই নশ্বর দেহের মাঝে বাস করে রূহু বা আত্মা। মানুষকে আল্লাহ্ ঐশ্বরিক অনুগ্রহ দান করেছেন, যে কারণে আল্লাহ্ তাঁকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন [ ২ : ৩০ ]। তাঁর আছে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, আধ্যাত্মিক জগত, ভালোবাসার ক্ষমতা, যে ভালোবাসাকে সে বিশ্ব মানবতার মাঝে সম্প্রসারিত করতে সক্ষম। সীমিত ভাবে হলেও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সে রাখে। প্রাকৃতিক শক্তিকে সে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে সক্ষম। সেই সাথে তাঁকে দেয়া হয়েছে বিচার ক্ষমতা বা বিবেক ফলে সে কখনও সীমা ছাড়িয়ে যায় না, সর্বদা মধ্য পথ অবলম্বন করে। এ ভাবেই মানব জীবনে চলার পথের যে বিভিন্ন ধারা তা মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছেন, " অতঃপর উহার জন্য পথ সহজ করে দেন।"
২০। অতঃপর তার জন্য তার পথকে সহজ করে দিয়েছেন ;
২১। তৎপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরের মাঝে রেখে দেন ; ৫৯৫৮
২১। তৎপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরের মাঝে রেখে দেন ; ৫৯৫৮
৫৯৫৮। দেখুন [ ২০ : ৫৫]। পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত জীবন শেষ মৃত্যু অবধারিত সত্য। মৃত্যু সর্বদা ভয়ংকর নয়। পূণ্যাত্মাদের জন্য তা আল্লাহ্র আশীর্বাদ স্বরূপ - কারণ নশ্বর দেহের পিঞ্জর মুক্ত হয়ে আত্মা পৃথিবীর অসম্পূর্ণতা ও শিক্ষানবীশকালের দায়িত্ব মুক্ত হতে পারে এবং প্রকৃত সত্যের আলো, আত্মার মাঝে নূতন প্রভাতের সৃষ্টি করে। 'কবর ' এ অবস্থানের সময় হচ্ছে দৈহিক মৃত্যু ও অনন্ত জীবনে প্রবেশের পূর্বের সময়কাল পর্যন্ত যেখানে কাটানো হয়। অর্থাৎ মৃত্যুর পর থেকে রোজ হাশরের পূর্ব পর্যন্ত যে সময়কাল সেই মধ্যবর্তী সময়কাল। মুত্যুর পরে যে ভাবেই দেহকে সমাহিত করা হোক না কেন এই সময়কালকেই বলা হয়েছে, "কবরস্থ করেন।" এই মধ্যবর্তী সময়কাল হচ্ছে 'Barzakh' বা মধ্যবর্তী দেয়াল। দেখুন এ সম্বন্ধে [ ২৩ : ১০০ ] আয়াতের টিকা ২৯৪০।
২২। তারপরে যখন আল্লাহ্র ইচ্ছা,তিনি তাকে [ পুণরায় ] উত্থিত করবেন।
২৩। না কখনও না, আল্লাহ্ তাকে [ মানুষকে] যা আদেশ করেছেন, সে এখনও তা পুরোপুরি পালন করে নাই। ৫৯৫৯
২৩। না কখনও না, আল্লাহ্ তাকে [ মানুষকে] যা আদেশ করেছেন, সে এখনও তা পুরোপুরি পালন করে নাই। ৫৯৫৯
৫৯৫৯। যদিও আল্লাহ্র অনুগ্রহ পূণ্যাত্মাদের জন্য আর্শীবাদ। কিন্তু যারা আধ্যাত্মিক ভাবে সমৃদ্ধি লাভ না করে, তারা আল্লাহ্র মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য অনুধাবনে অক্ষম হয়, ফলে আল্লাহ্র আদেশ লংঘন করে।
২৪। মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক [ কি ভাবে আমি তা সরবরাহ করি ] ? ৫৯৬০
৫৯৬০। মানুষের আত্মার যে ইতিহাস তা বর্ণনার পর এবারে মানুষের দৈহিক ও পার্থিব জীবনের উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবীর জীবনে আমাদের প্রয়োজনের শেষ নাই। প্রাত্যহিক আরাম আয়েশের জন্য ও জীবন ধারণের জন্য বহু উপকরণের প্রয়োজন হয়। এই আয়াতের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপকরণের উল্লেখ করা হয়েছে আর তা হচ্ছে খাদ্য। আল্লাহ্র হুকুমে আকাশ ও পৃথিবী এক হয়ে শষ্য উৎপাদনের শক্তি যোগায় যা মানুষ ও মানুষের উপরে নির্ভরশীল পশুর খাদ্য। " ইহা তোমাদের ও তোমাদের গৃহ পালিত পশুদের ভোগের জন্য" [নীচের ৩২ নং আয়াত]। মানুষের একটিমাত্র প্রয়োজনীয় উপকরণ সম্বন্ধে চিন্তা করলে উপলব্ধি করা সম্ভব যে মানুষের কল্যাণের জন্য স্রষ্টার কি অফুরন্ত ভালোবাসা। মানুষের অফুরন্ত প্রয়োজন স্রষ্টা তাঁর সদয় তত্বাবধানের দ্বারা পূরণ করে থাকেন।
২৫। নিশ্চয়ই আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি
২৬। এবং ভূমিকে খন্ড খন্ড রূপে বিদীর্ণ করি ৫৯৬১,
২৬। এবং ভূমিকে খন্ড খন্ড রূপে বিদীর্ণ করি ৫৯৬১,
৫৯৬১। আকাশ থেকে বৃষ্টি পাত হয়ে মাটিকে করে সিক্ত ও উর্বর। ফলে নরম মাটি কর্ষণযোগ্য হয়। কর্ষিত ভেজা মাটিতে বীজ বপনের ফলে উর্বর মাটি প্রচুর খাদ্য উৎপাদন করে। যেমন : খাদ্যশস্য, রসালো ফল, শাকশব্জি, শুকনো ফল, তৈল উৎপাদনকারী বীজ ইত্যাদি। পরবর্তী আয়াতে দ্রাক্ষা শব্দটি দ্বারা লতানো ফলের সকল গাছকে বুঝানো হয়েছে, শাক্ সব্জি দ্বারা সকল পুষ্টিদায়ক উপকারী উদ্ভিদকে বুঝানো হয়েছে। যয়তুন বা জলপাই ও খজ্জুর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সেই সব ফলের সব গাছ যার ফলকে শুকিয়ে রাখা যায় ও যার থেকে তৈল উৎপাদন করা সম্ভব।
২৭। এবং সেখানে শষ্য উৎপন্ন করি, ৫৯৬২
৫৯৬২। 'সেখানে ' শব্দটি দ্বারা পৃথিবী বা পৃথিবীর মাটিকে বুঝানো হয়েছে।
২৮। এবং আঙ্গুর এবং পুষ্টিকর উদ্ভিদ,
২৯। জলপাই ও খেজুর
৩০। এবং চতুর্দ্দিক ঘেরা ঘন গাছের বাগান ৫৯৬৩,
২৯। জলপাই ও খেজুর
৩০। এবং চতুর্দ্দিক ঘেরা ঘন গাছের বাগান ৫৯৬৩,
৫৯৬৩। টিকা নং ৫৯৬১ তে বর্ণিত শুধু খাদ্য উৎপাদনকারী উদ্ভিদও নয়, আল্লাহ্ আরও দান করেছেন নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত উদ্যানের উদ্ভিদ জগত, সুউচ্চ বৃক্ষ, যা সুস্বাদু ফল উৎপাদন করে থাকে বা অন্য প্রয়োজনীয় কাজে কাঠের ব্যবহার হয়। পশু জগতের জন্য দান করা হয়েছে বহু ধরণের ঘাস।
৩১। এবং ফলমূল এবং তৃণলতা,
৩২। তোমাদের ও তোমাদের গৃহপালিত পশুদের সুবিধার জন্য ৫৯৬৪।
৩২। তোমাদের ও তোমাদের গৃহপালিত পশুদের সুবিধার জন্য ৫৯৬৪।
৫৯৬৪। এই একই আয়াত আবৃত্তি করা হয়েছে সূরা [ ৭৯: ৩৩ ] আয়াতে। সেখানে টিকা নং ৫৯৪০ তে ব্যপক আলোচনা করা হয়েছে।
৩৩। অবশেষে যখন কর্ণবিদীর্ণকারী [ শিঙ্গার ] ভীষণ আওয়াজ উপস্থিত হবে ৫৯৬৫,
৫৯৬৫। 'সাজ্জা ' এই শব্দটির আভিধানিক অর্থ মহানাদ, কিন্তু কোরাণ শরীফে এ শব্দটি কেয়ামত অর্থে ব্যবহৃত। কেয়ামত হচ্ছে শেষ বিচার সংঘটিত হওয়ার পূর্ব অবস্থা।
৩৪। সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভাই থেকে,
৩৫। এবং তার মাতা ও পিতা থেকে,
৩৬। এবং তার স্ত্রী এবং সন্তান -সন্ততি থেকে। ৫৯৬৬
৩৫। এবং তার মাতা ও পিতা থেকে,
৩৬। এবং তার স্ত্রী এবং সন্তান -সন্ততি থেকে। ৫৯৬৬
৫৯৬৬। যাদের পৃথিবীর জীবনে অত্যন্ত আপন বলে মনে হবে, কেয়ামতের বিভিষিকায় সেদিন কেউ কাউকে চিনতে পারবে না। কেউ কারও সাহাযার্থে এগিয়ে আসবে না। এমনকি সেদিন কেউ কারও দুঃখ, ব্যথা বা অপমানের সমবেদনা প্রকাশে আগ্রহী হবে না। কারণ প্রত্যেকেরই নিজ নিজ দুঃখ কষ্টের সীমা পরিসীমা থাকবে না। অপরপক্ষে যারা পূণ্যাত্মা তারা তাদের পূণ্যাত্মা পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ লাভ করবেন [৫২ : ২১ ] ; সেদিন পূণ্যাত্মাদের মুখ খুশী ও আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে [ ৮০ : ৩৮- ৩৯ ]।
৩৭। সেদিন প্রত্যেকে [নিজের সম্বন্ধে ] যথেষ্ট উদ্বিগ্ন থাকবে, [ ফলে ] তাকে অন্যদের সম্বন্ধে উদাসীন রাখবে ৫৯৬৭
৫৯৬৭। দেখুন [ ৭০ : ১০- ১৪ ] আয়াত। কোন বন্ধু বা সহৃদ সেদিন কারও সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসবে না। পাপীরা সেদিন নিজ দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নিজ পরিবারকে উৎসর্গ করতে দ্বিধা বোধ করবে না।
৩৮। কিছু মুখ সেদিন হবে উজ্জ্বল দীপ্তিময়,
৩৯। হাসিখুশী ও আনন্দময়।
৪০। এবং সেদিন অন্য মুখ হবে ধূলো ধূসরিত ৫৯৬৮;
৪১। তাদের আচ্ছন্ন করবে কালিমা।
৪২। এরূপই হবে আল্লাহকে প্রত্যাখানকারী ও পাপীদের অবস্থা।
৩৯। হাসিখুশী ও আনন্দময়।
৪০। এবং সেদিন অন্য মুখ হবে ধূলো ধূসরিত ৫৯৬৮;
৪১। তাদের আচ্ছন্ন করবে কালিমা।
৪২। এরূপই হবে আল্লাহকে প্রত্যাখানকারী ও পাপীদের অবস্থা।
৫৯৬৮। এখানে পাপীদের বাহ্যিক বিবরণ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে তাদের মুখমন্ডল হবে ধূলিধূসর ও কালিমাতে আচ্ছন্ন। পূণ্যাত্মাদের উজ্জ্বল মুখমন্ডলের বিপরীতে পাপীদের ধূলায় ধূসরিত মুখমন্ডলকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার পূণ্যাত্মাদের হাস্যজ্জ্বল প্রফুল্ল মুখমন্ডলের বিপরীতে পাপীদের কালিমাতে আচ্ছন্ন মুখমন্ডলকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার অন্য ভাবে বলা যায় যে, পৃথিবীতে আল্লাহ্র বিধানসমূহ অস্বীকার করার ফলে পাপীদের মানসিক দক্ষতা সমূহ [ যেমন সত্যকে দেখার ক্ষমতা, শোনার ক্ষমতা, বলার ক্ষমতা ] শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় চাপা পড়ে যায়, ধূলি ধূসরিত হয়ে কোন জিনিষ চাপা পড়ার ন্যায়। পৃথিবীতে পাপীরা অন্যায় দ্বারা ন্যায়কে কালিমালিপ্ত করেছে সুতারাং সেদিন তারা পবিত্রতার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হবে। আর একটি তুলনা হতে পারে এই যে, যারা পৃথিবীর জীবনে নগন্য ও বিনয়ী; পৃথিবীর জীবন তাদের জন্য ধূলায় ধূসরিত বস্তুর ন্যায় ধূসর ও বিবর্ণ অপরপক্ষে পাপীদের পার্থিব জীবন হচ্ছে সূর্যের আলোর ন্যায় ঔজ্জ্বল্যে ভরা। কিন্তু বিচার দিবসে এই চিত্র যাবে সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবে পাল্টে।