Logo

খোঁজ করুন

পাঠক

অনলাইনে আছেন ১ জন
আজকের পাঠক ১৬ জন
সর্বমোট পাঠক ১৩২৯৯৯৬ জন
সূরা পাঠ হয়েছে ৬০৫৯৪৪ বার
+ - R Print

সূরা ইন্‌শিকাক্‌


সূরা ইন্‌শিকাক্‌ বা বিদীর্ণ হওয়া - ৮৪

২৫ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]

ভূমিকা ও সার সংক্ষেপ : ক্রম অনুযায়ী এই সূরাটি পূর্বোক্ত সূরার সমসাময়িক। বিষয়বস্তুর দিক থেকে এই সূরার বিষয়ের সাথে ৮১ নং ও ৮২ নং সূরার সামঞ্জস্য আছে। এই সূরাগুলির সাথে বর্তমান সূরাটির তুলনা করা যায়।

বর্তমান সূরাটি আরম্ভ করা হয়েছে কতিপয় মহাবিপর্যয়কারী ঘটনার বিবরণের মাধ্যমে। সেখানে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর বর্তমান রূপ বদলে যাবে এবং আল্লাহ্‌র ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতারাং নূতন পৃথিবী যা হবে অনন্তকাল স্থায়ী, সেই পৃথিবীর উপযোগী মুল্যবোধ সম্পন্ন হওয়ার জন্য প্রত্যেক মানুষের চেষ্টা করা উচিত।

সূরা ইন্‌শিকাক্‌ বা বিদীর্ণ হওয়া - ৮৪

২৫ আয়াত, ১ রুকু, মক্কী
[ দয়াময়, পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র নামে ]


১। যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, ৬০৩১

৬০৩১। চেনা জানা এই পৃথিবীর ধ্বংসের অর্থ হচ্ছে, নূতন ও স্থায়ী পৃথিবীর সৃষ্টির সূচনা। আর সেই সূচনা সংঘটিত হবে দুভাবে যার বিন্দুমাত্র ধারণা আমাদের জ্ঞান বা বুদ্ধির অগম্য। সূরা নং ৮২ ও ৮১ এর প্রারম্ভে পৃথিবী ধ্বংসের বিভিন্ন চিহ্নসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে এই সূরাতে দুটি চিহ্নের উল্লেখ করা হয়েছে :

১) আকাশ বিদির্ণ হয়ে যাবে এবং তার সব গুপ্ত রহস্য উদ্ভাসিত করে দেবে।

২) পৃথিবী আর গোল থাকবে না ; তা সম্প্রসারিত করে সমতলভূমিতে পরিণত করা হবে। পৃথিবীও তার অভ্যন্তরের সকল গুপ্ত রহস্য উদ্গীরণ করবে। দেখুন পরবর্তী টিকাসমূহ।

২। এবং ইহার প্রভুর [আদেশ ] পালন করবে, কেননা সে [ উহা ] মানতে বাধ্য ; - ৬০৩২

৬০৩২। অনাদি অনন্তকাল থেকে মানুষ মাথার উপরে নীল আকাশ দেখে থাকে যা থেকে তার ধারণা হয় যে, আকাশ হচ্ছে সুউচ্চ,পবিত্র, সীমাহীন, অনন্ত অসীম যা চিরদিন ব্যপী বিরাজমান, যা সৃষ্টি করা হয় নাই। এই আয়াতের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে, আকাশও সৃষ্ট পদার্থ এবং অস্থায়ী। আকাশের অস্তিত্ব ততক্ষণই থাকবে, যতক্ষণ স্রষ্টা তা রাখতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তার বেশী একমূহুর্তও আকাশের অস্তিত্ব বিরাজমান নয়। যে মূহুর্তে তা ভেঙ্গে ফেলার হুকুম হবে, সাথে সাথে সে হুকুম কার্যকর হবে এবং আকাশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং আকাশের সকল রহস্য উদ্ঘাটিত হয়ে পড়বে। সেটাই হবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।কারণ সকল সৃষ্ট পদার্থের সাধারণ নিয়ম হচ্ছে তারা স্রষ্টার হুকুম তৎক্ষণাত মানতে বাধ্য। যদি তা তাদের ধ্বংসের প্রতি আহ্বান করা হয়, তবুও তা অমান্য করার সাধ্য তাদের নাই।

৩। যখন পৃথিবীকে সমতল করা হবে, ৬০৩৩

৬০৩৩। পৃথিবীর আকার গোলাকার এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে গুপ্ত ভান্ডার যেমন মূল্যবান ধাতু ও খনিজ পদার্থ অথবা যুগ যুগান্তরের সমাহিত মানুষের মৃতদেহ আছে, সব সেদিন বাইরে উদগিরণ করে দেবে। পৃথিবীর মাটির অভ্যন্তরে যা কিছু আছে সবই সেদিন সে উগরিয়ে বের করে দেবে। নূতন পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক্কালে পৃথিবী তার আকার হারিয়ে ফেলবে এবং সমতল ভূমিতে পরিণত হবে।

৪। এবং [ পৃথিবী ] তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে এবং [ পরিষ্কার ও ] খালি হয়ে যাবে,

৫। এবং ইহার প্রভুর [ আদেশ ] পালন করবে ৬০৩৪ কারণ সে [উহা ] মানতে বাধ্য ; [তখন তোমরা পুণরত্থিত হবেই] ৬০৩৫

৬০৩৪। পৃথিবীর মাটি পচনশীল সকল বস্তুকে নিজ বক্ষে ধারণ করে যাতে আমাদের ধারণা হয় যে পৃথিবী কোন দিন ধ্বংস হবে না। কিন্তু নূতন ও স্থায়ী পৃথিবী সৃষ্টির প্রাক্কালে এই চেনা জানা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

৬০৩৫। পূর্বের আয়াতগুলি শর্তাধীন যার একটি সুনির্দ্দিষ্ট উত্তর থাকা প্রয়োজন। আর এই উত্তর হওয়া উচিত সূরা [ ৮২ : ৫ ] আয়াতের অনুরূপ অর্থাৎ মানুষের পুণরুত্থান ঘটবেই।

৬। হে মানুষ ! তুমি তোমার প্রভুর দিকে যাওয়ার জন্য অবশ্যই কঠোর সাধনা করে থাক ৬০৩৬ পরে তুমি তার সাথে মিলিত হবে।

৬০৩৬। পৃথিবীতে মানব জীবন হচ্ছে সংগ্রাম ও দুঃখ কষ্টের জীবন। তবে এ জীবন শেষে পরলোকের জীবনের জন্য শুভসংবাদ দেয়া হয়েছে তাদের জন্য, যারা জীবনটাকে শুধুমাত্র আনন্দ ফূর্তির স্রোতে ভাসিয়ে না দিয়ে সৎ জীবন যাপনের জন্য কঠোর সংগ্রাম করে থাকে। পৃথিবীর জীবনে সৎ ও ভালো লোক তাদের সততা ও নিষ্ঠার জন্য দুঃখ কষ্ট ভোগ করে, আর অসৎ ও দুষ্ট লোকেরা তাদের পাপের জন্য কষ্ট পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দুয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করা হবে। যারা আল্লাহ্‌র রাস্তায় জীবন যাপনের জন্য সারাটা জীবন দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন, তারা পরলোকের জীবনে আনন্দ স্রোতে ভাসবেন আর যারা পৃথিবীর জীবনটাকেই সর্বোচ্চ মনে করে আনন্দ ফুর্তিতে জীবনটাকে চিন্তাহীনভাবে অতিবাহিত করেছেন তারা সেদিন ক্রন্দন করবেন। প্রত্যেককে বিচার দিবসে আল্লাহ্‌র সম্মুখীন করা হবে বিচারের জন্য।

৭। যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, ৬০৩৭

৮। তার হিসাব -নিকাশ নেওয়া সহজ হয়ে যাবে।

৬০৩৭। 'দক্ষিণ হস্ত ' - এজন্য দেখুন সূরা [ ১৭ : ৭১ ] ও [ ৬৯ : ১৯ ] আয়াত। যাদের দক্ষিণ হস্তে আমলনামা দেয়া হবে তারা হচ্ছেন ভাগ্যবান ব্যক্তি। এরাই তারা যারা পৃথিবীর জীবনটাকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অতিবাহিত করেছেন। এদের হিসাব গ্রহণ করা হবে অত্যন্ত সহজ ভাবে। সমস্ত হিসাব গ্রহণের পরেও এদের যা প্রাপ্য তা থেকে বহুগুণ বেশী পুরষ্কার তাদের দেয়া হবে। এ সবই হবে আল্লাহ্‌র অসীম করুণার ফল।

৯। এবং সে তার স্বজনদের নিকট আনন্দের সাথে ফিরে যাবে। ৬০৩৮

৬০৩৮। ' স্বজনদিগের ' যদিও এই শব্দটির অর্থ নিজ প্রিয়জনরা,তবুও শব্দটি ব্যপক অর্থে গ্রহণ করতে হবে। ব্যপক অর্থে তা হবে সকল পূণ্যবান ভাই বোনেরা ; আধ্যাত্মিক ভাবে যারা একই পরিবার ভূক্ত। এই পূণ্যাত্মাদের মাঝে তার পূর্বের ও পরের সকলেই অন্তর্ভূক্ত।

১০। কিন্তু যার আমলনামা পিছনে পিঠে দেয়া হবে ৬০৩৯,

৬০৩৯। দেখুন সূরা []৬৯ : ২৫ ] আয়াত। যেখানে বলা হয়েছে পাপিষ্ঠদের 'আমলনামা ' তাদের বাম হস্তে দেয়া হবে। কিন্তু তাদের হাত বাঁধা থাকবে, মুক্ত থাকবে না। কারণ তাদের পাপ কাজই তাদের হস্তযুগলকে পৃষ্ঠদেশে বেঁধে রাখবে। সুতারাং পৃষ্ঠদেশে বাঁধা তাদের বা হাতই তাদের 'আমলনামা ' দেয়া হবে।

১১। সে ধ্বংসের জন্য কাঁদবে ৬০৪০

১২। সে জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।

৬০৪০। পাপিষ্ঠরা শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মৃত্যু কামনা করবে। কিন্তু তাদের অবস্থা হবে জীবনামৃত। সম্পূর্ণ সুস্থ সুন্দর জীবন নয়, আবার মৃতও নয় [ ২০ : ৭৪ ] দুয়ের মাঝামাঝি অবস্থা যে অবস্থা থেকে তাদের মুক্তি ঘটবে না।

১৩। সে তো তার স্বজনদের মধ্যে আনন্দে ছিলো। ৬০৪১

৬০৪১। পৃথিবীর জীবন থেকে পরলোকের জীবনে পাপীদের অবস্থানের সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে যাবে। পৃথিবীর জীবনের আত্ম-পরিতৃপ্তি ও আত্ম-গর্ব পরলোকের জীবনে তাদের জন্য দুঃখ কষ্ট বয়ে আনবে। তখন কান্না ও ক্ষুব্ধ আক্রোশ ব্যক্ত করা ব্যতীত আর কিছুই করার থাকবে না। দেখুন উপরের টিকা ৬০৩৬।

১৪। সে তো মনে করেছিলো, তাকে [ আমার ] নিকট ফিরে আসতে হবে না ৬০৪২

১৫। না, না ! নিশ্চয়ই তার প্রভু [ সর্বদা ] তার সম্বন্ধে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।

৬০৪২। পাপী ও দুবৃর্ত্ত লোকদের মাঝে এরূপ ধারণা বিদ্যমান থাকে যে পৃথিবীর জীবনই এ জীবনের শেষ। সুতারাং চিন্তা ভাবনাহীন উদ্দাম জীবনের স্রোতে তারা গা ভাসিয়ে দেয়, যে জীবনের কোন দায় দায়িত্ব তাদের নাই। কিন্তু তারা ভুলে যায় স্রষ্টা মানুষকে পৃথিবীর কর্মশালায় বিশাল দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। সে পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি। সুতারাং মানুষের প্রতিটি কাজ, কথা ও চিন্তার জন্য তার জবাবদিহিতা থাকবে আল্লাহ্‌র নিকট। সে ভুলে যায় যে প্রত্যেককে মৃত্যুর পরে আল্লাহ্‌র দরবারে নীত করা হবে এবং পৃথিবীর প্রতিটি কর্মের জবাবদিহিতার জন্য তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে, যারা এসব মনে রাখেন এবং আল্লাহ্‌র নির্দ্দের্শিত পথে জীবনযাপনের মাধ্যমে পরলোকে জবাবদিহিতার জন্য সদা সতর্ক থাকেন। তাঁরাই ইহকাল ও পরকাল উভয়কালে আত্মিক মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু যারা এই সত্যকে ভুলে যায় ও উদ্দাম জীবনযাপন করে এবং তাদের উপরে অর্পিত দায়িত্বকে অবজ্ঞা করে তাদের জন্যই পরলোকে আছে জাহান্নামের আগুন।

১৬। সুতারাং আমি শপথ করি ৬০৪৩, সূর্যাস্তের গোলাপী আভার ; ৬০৪৪

৬০৪৩। এখানে যে শপথগুলি করা হয়েছে তাদের শেষ উদ্দেশ্যকে বর্ণনা করা হয়েছে ১৯ নং আয়াতে যেখানে বলা হয়েছে, " নিশ্চয় তোমরা ধাপে ধাপে আরোহণ করবে।" এ জীবনের কোনও কিছুই স্থায়ী নয়। জীবনের এই অস্থায়ীশীলতাকে বুঝানো হয়েছে তিনটি দৃশ্যের উল্লেখের মাধ্যমে, যাদের শপথ করা হয়েছে। এই দৃশ্যগুলি মানুষ অনাদি অনন্তকাল থেকে পর্যবেক্ষণ করে আসছে,তবুও তারা ক্ষণস্থায়ী। স্বল্পকালীন তাদের অবস্থান, যেনো চোখের পলকে তারা অন্তর্হিত হয়ে যায়। দেখুন পরবর্তী টিকা সমূহ। পৃথিবীতে মানুষের জীবনও ঠিক তদ্রূপ ক্ষণস্থায়ী, দ্রুত ধাবমান দৃশ্যের ন্যায়। এ জীবন পরিপূর্ণতা ও স্থিতি লাভ করবে কবির ভাষায়, " হেথা নয়, হেথা নয়,অন্য কোন খানে।"

৬০৪৪। ১) সূর্যের অবস্থান হচ্ছে জীবনের এক বাস্তব সত্য। সূর্য জীবনের সাথে এতটাই ওতপ্রেতভাবে জড়িত থাকে যে, মানুষ সূর্যকে দেবতারূপে পূঁজা করার প্রয়াস পায়। প্রভাতের সূর্য, মধ্যাহ্নের সূর্য, সন্ধ্যাকাশের দিগন্তের শেষ সূর্য প্রতিটির প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দিক্‌চক্রবালে যখন দিবসের সূর্য অস্ত যায় তখন পশ্চিম আকাশ রংএর আলপনায় ভরে যায়, তবে তার স্থায়ীত্ব খুবই স্বল্প। প্রভাতে সূর্যদয় থেকে সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতি মূহুর্তে সূর্যের রূপ পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর দ্বারা সূর্যের ন্যায় শক্তিশালী বাস্তব সত্যের রূপের ক্ষণস্থায়ীত্বকে তুলে ধরা হয়েছে।

১৭। এবং রাত্রির এবং যারা নীড়ে ফেরে তাদের ৬০৪৫

৬০৪৫। ২) সাধারণভাবে আমরা বলে থাকি যে, চব্বিশ ঘণ্টার অর্দ্ধেক অর্থাৎ ১২ [ বার ] ঘন্টা দিন ও ১২ [ বার ] ঘন্টা রাত্রি। অবশ্য ঋতু ভেদে তা কম বেশী হয়। রাত্রির আগমনে পৃথিবীর সকল প্রাণী নিজ নিজ বাসস্থানে প্রত্যাগমন করে। মানুষ দিনমান কর্ম উপলক্ষে ইতঃস্তত বিচরণশীল হয়। নিশাগমনে সকলে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যার্পন করে থাকে। কিন্তু সকলেরই এই গৃহে অবস্থানের স্থায়ীত্ব খুবই স্বল্প। ঠিক সেরূপ হচ্ছে পৃথিবীতে আত্মার অবস্থান। পৃথিবীর স্বল্পকালীন জীবন, মৃত্যুর মাঝে শেষ হয়ে যায়। এর পরে শুরু হবে নূতন পৃথিবীতে নূতন জীবন।

১৮। এবং চন্দ্রের, যখন তা পূর্ণ হয়। ৬০৪৬

৬০৪৬। ৩) জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে সম্পূর্ণ পূর্ণচন্দ্রের স্থায়ীত্ব খুবই স্বল্পক্ষণ। যে মূহুর্তে তা পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়, তার পরের মূর্হুত থেকে তার ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। আবার অমাবস্যাতে চন্দ্রের ক্ষয় সম্পূর্ণ হয়ে,নূতন চাঁদের বৃদ্ধি শুরু হয়ে যায়। পৃথিবীর জীবনে মানুষের জীবনও তথৈবচ। এখানে কিছুই তার জন্য স্থায়ী নয়। শারীরিক ভাবে সে ক্রমান্বয়ে শৈশব,কৈশর, যৌবন, পৌরত্ব ও বার্দ্ধক্য ইত্যাদি ধাপ গুলি অতিক্রম করে। কোনও ধাপেই সে স্থায়ী হয় না। এ কথা যে শুধুমাত্র মানুষের স্থুল শারীরিক পরিবর্তনের জন্য প্রযোজ্য,তাই-ই নয়, একথা প্রযোজ্য মানুষের জ্ঞান,বুদ্ধি, বিবেক,প্রজ্ঞা,আধ্যাত্মিক সকল বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য। এগুলি কোনও এক স্থানে স্থির নয়।

১৯। অবশ্যই তোমরা ভ্রমণ করবে ধাপে ধাপে ৬০৪৭।

৬০৪৭। সূরা [ ৬৭ : ৩ ] আয়াতে 'Tibaqan' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে আকাশের স্তরকে বুঝানোর জন্য যা একটির উপরে একটি অবস্থান করবে। এই আয়াতে ঐ একই শব্দকে ব্যবহার করা হয়েছে মানুষের আধ্যাত্মিক জগতকে বুঝানোর জন্য যা ক্রমান্বয়ে ধাপে ধাপে উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। অর্থাৎ একদিনের চেষ্টায় আধ্যাত্মিক সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়

২০। তবে তাদের কি হয়েছে যে, তারা বিশ্বাস করবে না ? ৬০৪৮

৬০৪৮। একমাত্র মানুষের জন্যই আল্লাহ্‌ সর্বোচ্চ পরিণতি নির্ধারিত করেছেন। পৃথিবীর স্বল্পকালীন জীবনে মানুষ জানে না পৃথিবীর জীবনের পূর্বে সে কোথায় ছিলো, আবার মৃত্যুর পরে সে কোথায় যাবে। কোনও বিজ্ঞানই এর সঠিক জবাব দিতে সক্ষম নয়। এ ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় বিশ্বাসের উপরে নির্ভরশীল। ধর্ম আমাদের বলে যে পৃথিবীর জীবন হচ্ছে আত্মার একটি ধাপ বা ক্ষণস্থায়ী বাসস্থান। যার শেষ পরিণতি পরলোকের স্থায়ী জীবন। সুতারাং মানুষের উচিত আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশকে গ্রহণ করা এবং এরই অনুশীলনের মাধ্যমে, আধ্যাত্মিক জগতের উন্নতি সাধন করা। যদি সে তা না করে তবে বুঝতে হবে যে, তার ইচ্ছার মাঝে কোনও ত্রুটি আছে। লক্ষ্য করুন ১৯ নং আয়াতে মানুষকে দ্বিতীয় পুরুষ 'তোমরা' বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু [ ২০ : ২৪ ] নং আয়াতে মানুষকে তৃতীয় পুরুষ [ তাদের ] রূপে সম্বোধন করা হয়েছে। বুঝাতে চাওয়া হয়েছে যে, যারা আল্লাহ্‌র অনুশাসন না মেনে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তারা আল্লাহ্‌র নিকট নিজস্ব প্রিয়জন বলে প্রতীয়মান হয় না।

২১। যখন তাদের নিকট কুর-আন পাঠ করা হয় কেন তারা সেজ্‌দায় পতিত হয় না ? ৬০৪৯

৬০৪৯। 'সিজ্‌দা ' অর্থ ভক্তি সহকারে আল্লাহ্‌র প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

২২। উপরন্তু, অবিশ্বাসীরা [ ইহা ] প্রত্যাখান করে।

২৩। তারা [ তাদের অন্তরে ] যা গোপন করে, সে সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।

২৪। সুতারাং উহাদের ভয়াবহ শাস্তির খবর দাও,

২৫। তারা ব্যতীত, যারা বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে। তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরষ্কার ৬০৫০

৬০৫০। দেখুন [ ৪১ : ৮] আয়াত।